হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-০৫

0
121

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ৫

টানা পাঁচদিন পর ফারিসতার জ্বর কমলো। এই কদিনে জ্বর কমলেও মাথায় আঘাত পাওয়া জায়গাটায় এখনো ব্যথা আছে। সেদিন হসপিটাল থেকে আসার পর থেকে ফারিসতার ঘোরের মাঝে কেটেছে দিনগুলো এ ভেবে একটা মানুষের আকাশ পাতাল তফাৎ করা এমন নিখুঁত দুইটা ক্যারেক্টা কি করে হতে পারে৷ ও কি সেদিন জ্বরের ঘোরে ভুল দেখেছে নাকি মাথায় আঘাত পেয়ে মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে এসব ভেবে ভেবে এই কয়দিন পার করলো। আজকে ফারিসতার ভার্সিটির প্রথম ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে তাই এসব নিয়ে আর না ঘেঁটে মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলে দিলো। কিন্তু মনে মনে গালি দিতে ভুললো না তাজ নামক অজগর সাপকে। ফারিসতা মনে মনে পন করে রেখেছে যদি কোনো দিন সুযোগ হয় ওই দানবীয় মানবকে সায়েস্তা করার তাহলে সেই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করবে না।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ফারিসতা নাস্তা শেষ করে সেগুলো গুছিয়ে রেখে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলো। ফারজানা বেগম সকাল সকাল অফিসে চলে গিয়েছে যার জন্য ফারিসতা রেডি হয়ে বাসা তালা মেরে বেরিয়ে পরলো। বাসার নিচে আসতে চোখে পড়লো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ও পড়ছে। ফারিসতা এবার ভাবনায় পড়ে গেলো ছাতা আনতে আবার বাসায় যাবে নাকি এই অবস্থায় এই চলে যাবে। কিছুক্ষণ দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগে ইচ্ছে হলো না আবার উপরে যেয়ে ছাতা আনতে তাই একটা রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠে পড়লো। ফারিসতা উঠতে রিক্সা চলতে লাগলো আপন গতিতে।

রিক্সা যখন প্রায় ভার্সিটির কাছে চলে এসেছে তখন কতগুলো ছেলেপেলেকে মিলে দেখলো একজন বৃদ্ধাকে মারছে। রিক্সারওয়ালা ওই ছেলেপেলেদের অতিক্রম করে দ্রুত চলে যেতে নিবে তার আগে ফারিসতা জরুরি তলব দিয়ে বলে উঠলো মামা দাঁড়ান।

রিক্সাওয়ালা রিক্সা থামাতে ফারসিতা রিক্সা থেকে নেমে ওই ছেলেপেলেদের দিকে এগিয়ে গেলো। একটা বৃদ্ধাকে এভাবে মারতে দেখে ফারিসতা আশপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে পেলো আশপাশ দিয়ে যেই লোকরা যাচ্ছে তারা চুপচাপ চলে যাচ্ছে কেউ বাঁচাতে আসছে না তাকে তা দেখে ফারিসতা চোখমুখ লাল হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে বলে উঠলো মানুষ কতটা পাষান হলে এমনটা করতে পারে?

সবাই এই অন্যায় সহ্য করলেও ফারিসতা এ অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করার মেয়ে না। কি পেয়েছে এখনকার জেনারেশনের ছেলেপেলেরা? হাতে একটু ক্ষমতা আর দাপট থাকলে যা খুশি তাই করবে? এদের সবাই ভয় পেলেও ফারিসতা ভয় পায় না। ফারিসতা আর কোনো দিকে না তাকিয়ে চোখমুখ শক্ত করে সোজা ওই ছেলেগুলোর ভিতরে যেই ছেলেটা বৃদ্ধার কলার টেনে ধরে শাসাচ্ছিলো সেই ছেলেটাকে আকষ্মিক গায়ের জোর দিয়ে চর বসিয়ে দিলো গালে।
আকষ্মিক কোনো মেয়ের হাতে চর খেয়ে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সবাই এক সাথে ফারিসতার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কি হয়েছে ঠিক বুঝে উঠতে কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো সবার। পরক্ষণে বুঝে উঠটে যেই ছেলেটার গালে থাপ্পড় মেরেছে সাব্বির আগুন চোখে ফারিসতার দিকে তাকিয়ে নোংরা ভাষায় গালি দিয়ে রাগে ফুঁসে উঠে বলে উঠলো, কত বড় সা…..
ছেলেটার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে ফারিসতা সেই ছেলেটার গালে ফের থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠলো,

লজ্জা করে না রাস্তা ঘাটে গুন্ডামী করতে? হাতে একটু পাওয়ার আছে দেখে যা খুশি তাই করবি? এই তোদের ঘরে কি বাপ ভাই নেই? বাপের বয়সী একজন লোককে মারতে লজ্জা করে না? কি পয়েছিস তোরা?

ফের ফারিসতার হাতে চর খেয়ে সাব্বির সহ বাকি সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। যেখানে এলাকার কেউ ওদের সাথে চোখ তুলে কথা বলতে গেলে দুই বার ভাবে সেখানে এই মেয়ে পর পর দুইটা থাপ্পড় মেরেছে ভাবা যায়? পরক্ষণে নিজেদের সামলে আরেকটা ছেলে ক্ষেপে বলে উঠলো,

একদম আমাদের জ্ঞান দিতে আসবি না ভালোয় ভালোয় বলছি এখনো সময় আছে এখান থেকে কেটে পর আর নাহলে….

আর নাহলে কি করবি? ছেলেটার মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে ছেলেটার দিকে দু কদম এগিয়ে গিয়ে ঝাঁজালো গলায় বলে উঠলো ফারিসতা।

হঠাৎ ফারিসতাকে এমন এগোতে দেখে দু কদম পিছিয়ে গেলো ছেলেটে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা যে আস্ত একটা জল্লাদ তা এতক্ষণে বুঝতে কারো বাকি রইলো না। ফারিসতার এমন রনচন্ডী রূপ দেখে ছেলেটা ঢোক গিলো।
তখন পিছ থেকে সাব্বির রাগে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো আমরা এতোগুলো ছেলে মিলে তোর কি হাল করতে পারি তার কোনো ধারণা আছে তোর?

কথাটা বলতে দেরি সাব্বিরের গালে ফের চড় পড়তে দেড়ি হলো না। পর পর তিন বার মেয়েটার হাতে চর খেয়ে বিষ্ফরিত হলো সাব্বির তার উপরে ফারিসতা সাব্বিরের কলার টেনে ধরে বলে উঠলো তোর এই হুমকিতে ভয় পাই আমি? একেবারে সব কটার হাত-পা ভেঙে এখানে ফেলে রেখে যাবো কথাটা বলে সাব্বিরকে ধাক্কা মেরে দূরে ঠেলে দিলো। ফারিসতার ধাক্কায় পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিলো ছেলেটা। বিষ্ফরিত নয়নে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটকে অবলোকন করলো। মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে আসলো কে এই জল্লাদ মেয়ে?

অবস্থা বেগতিক দেখে ছেলেগুলোর মধ্যে একজন পিছিয়ে যেয়ে কাউকে ফোন লাগালো৷ ইতিমধ্যে খেয়াল আসলো ওরা যাকে মারছিলো সে ফাক বুঝে পালিয়েছে। লোকটা হাত ছাড়া হওয়াতে ভয়ে ঢোক গিলে ছেলেটা ফোন করতে লাগলো কাউকে। দুইবার কল করার পর তৃতীয়বার কল রিসিভ করতে ছেলেটা সংক্ষেপে সব খুলে বলতে ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি কর্কশ গলায় হুকুম ছুড়লো ওটাকে ধরে বেঁধে ক্লাবে নিয়ে যা আমি আসছি এ বলে খট করে ফোন কেটে দিলো।

————
বৃদ্ধার ভেসে এক লোক তাজদের ফলো করছিলো বেশ কয়েকদিন ধরে বিষয়টা জানতে পেরে তাজের রক্ত টকবগ করে উঠলো। বিষয়টা জানতে পেরে ওর সাঙ্গপাঙ্গদের হুঙ্কার ছেড়ে হুকুম দেয় এক ঘন্টার ভিতরে ওই লোককে খুঁজে মুখ থেকে কথা বের করতে। তাজের হুকুম পেয়ে ছেলেপেলেরা বেরিয়ে গেলো ওই লোককে ধরে কথা বের করার জন্য। কিছুক্ষণের ভিতরে ধরেও ফেলে। মুখ থেকে কথা বের করছিলো না তাই উত্তম ক্যালানি দিচ্ছিলো তখন একটা মেয়ে এসে ওদের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে এমনকি ওই মেয়ের জন্য ওই লোক হাত ছাড়া ও হয়ে গিয়েছে সব শুনে তাজের ক্ষ্যাপাটে মেজাজ আরো ক্ষেপে গেলো।

তাজ ফোন কাটতে আরফি চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো দোস্ত ওটা কি আসলেই মেয়ে নাকি জীন ভূত ছিলো? এতদিন শুনে এসেছি জীন বলতে কিছু একটা আছে আর এখন সচক্ষে দেখবো। আমি শিওর ওটা জীন। কোনো মেয়ের অন্তত এই কলিজা এখনো হয়নি যে তাজ চৌধুরীর লোকদের গায়ে হাত তুলবে।

এমনি মেজাজ তুঙ্গে উঠে ছিলো তার উপরে আরফির এমন আজাইরা কথা শুনে তাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো তোর মুখ দিয়ে যদি আর একটা আজাইরা কথা বের হয় তাহলে এমন জায়গায় মারবো দ্বিতীয়বার শব্দ উচ্চারণ করার সুযোগ পাবি না।

তাজের এমন হুমকিতে আরফি ঠোঁটের উপরে হাত দিয়ে শুধালো এই যে চুপ আর একটা কথাও বলবো না কথাটা বলে মনে মনে বলে উঠলো শা*লা সারাক্ষণ হুমকি দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। ভালো কথা বললেও এর মেজাজ তুঙ্গে উঠে থাকে। তোর কপালে যেনো ওই জীন ভূতনী মেয়েই জোটে তোকে সোজা করার জন্য।

উঠবি নাকি রেখে চলে যাবো?

তাজের কথায় ভাবনার ছেদ ঘটলো আরফির। ভাবনা থেকে বের হয়ে কথার মানে বুঝতে না পেরে বলে উঠলো, কোথায় যাবো?

আরফির এমন অবুজ প্রশ্ন তাজ বিরক্ত নিয়ে খ্যাক করে বলে উঠলো ওই জীন ভূতের সাথে তোকে বিয়ে করাতে যাবো।

তাজের কথায় দু কদম পিছিয়ে গিয়ে আরফি বলে উঠলো অসম্ভব…..

তাজের বিরক্ত এবার আকাশ ছুই ছুইয়ে গিয়ে ঠেকলো। আর কোনো কথা না বলে বাইক স্টার্ট দিতে যাবে তার আগে আরফি দৌড়ে বাইকের পিছে উঠে বলে উঠলো,

শা*লা পাষান আমাকে এই জায়গায় একা রেখে যাচ্ছিস। যেই কাজের জন্য এখানে এসেছি তার কিছুইতো হলো না মাত্রইতো আসলাম।

আরফির কথার কোনো প্রতিত্তোর করলো না তাজ। নীরবে শা শা করে বাইক নিয়ে ফিরে যাচ্ছে আবার আগের গন্তব্যে। একটা জরুরি কাজে তাজ আর আরফি ঢাকার ছেড়ে কিছুটা দূরে এক জায়গায় এসেছে। এখানে এসে পৌঁছানোর মাত্রই ছেলেপেলের থেকে ওই কথা শুনে আবার ব্যাক করলো। যেহেতু ঢাকা ছেড়ে কিছুটা দূরে চলে এসেছিলো তাই ঢাকা ওদের গন্তব্যে পৌঁছাতে তিন ঘন্টা লেগে গেলো। তিন ঘন্টা পর ক্লাবে পৌঁছাতে তাজের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়লো ছেলেপেলেগুলো। তাজ সবার দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলে উঠলো ঘাস খেয়ে বড় হয়েছিস সবকয়টায় যে একটা মেয়ের সাথে পারিস না উল্টো সেই মায়ের হাতে মার খেয়েছিস।

তাজের কথায় সাব্বির ঠোঁট উল্টো বলে উঠলো ভাই এর আগে কখনো মেয়েলি কেসে জড়াইনি। আপনি এইতো করা করে হুকুম দিয়েছিলেন কোনো মেয়ের গায়ে হাত না তুলতে তাই বুঝে উঠতে পারিনি কি করবো৷

সাব্বিরের কথায় কোনো প্রতিত্তোর না করে তাজ প্রশ্ন ছুড়লো কোথায় ওই মেয়ে?

আপাতত আপনার কেবিনে আছে। এই প্রথম মেয়েলি কেইস নিয়ে বিপাকে পড়ে গিয়েছিলাম তাই বুঝতে পারছিলাম না কেথায় রাখবো সেই জন্য আপনার কেবিনে রেখেছি।

সাব্বিরের কথায় তাজ রেগে বলে উঠলো হোয়াট?

তাজকে রাগতে দেখে সাব্বির তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো, ভাই কোনো প্রবলেম হবে না ওই মেয়ে এখনও জ্ঞানে নেই।

সাব্বিরের কথায় তাজ চোখমুখ কুঁচকে ব্যাক্কলের দল বলে কেবিনের দিকে হাঁটা দিলো। পিছু পিছু আরফিও গেলো।

তাজরা যেতে সাব্বির গালে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো পর পর তিনটা থাপ্পড় ও খেলায় আমি সাথে ভাইর ঝারিগুলো ও আমি একা খেলাম।

তাজ ওর কেবিনের কাছে এসে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতে চমকে উঠলো। এমন কিছু দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুুত ছিলো না ছেলেটা।

এদিকে তাজের মতো আরফিও চমকে চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো। নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। বার কয়েক হাত দিয়ে চোখ কচলানো ইতিমধ্যে শেষ কিন্তু না চোখে ভুল দেখছে না।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰