হৃদয়স্পশী মায়াবিনী পর্ব-১৫+১৬

0
121

#হৃদয়স্পশী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ১৫

নির্জন কোলাহহীন রাতে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফারিসতা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে লাগলো তাজের গাড়িতে উঠবে নাকি একা যাবে। দুটোর ভিতরে একটা বেছে নেওয়া যেনো ফারিসতার কাছে জীবনের সবচেয়ে জটিলতম একটা সিদ্ধান্ত ছিলো। না পারছিলো তাজকে বিশ্বাস করতে আর না পারছিলো সামনে একা এগোনোর সাহস করতে৷ সব শেষে তাজের বাজখাঁই গলায় হুমকি ধামকি খেয়ে তাজের গাড়িতে উঠতে গাড়ি সামনের মোরের কাছে আসতে দেখতে পেলো সেখানে নেই কোনো বখাটের আড্ডা এমনকি একটা কাক পাখিও নেই একদম নিরিবিলি কিন্তু এই লোক ওকে মিথ্যে কেনো বলল খুঁজে পেলো না ফারিসতা। তখন মনের মাঝে উকি দিলো অজানা আতঙ্ক। তাহলেকি খারাপ কোনো উদ্দেশ্যে এই লোক ওকে গাড়িতে উঠিয়েছে ভাবতে ফারিসতার বুক কেঁপে উঠলো। ফারিসতা আতঙ্কিত হয়ে চট করে তাজের দিকে তাকালো যে চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে। ফারিসতা তাজের দিকে তাকিয়ে তাজের মতিগতি বুঝতে চাইলো কিন্তু বুঝে উঠতে পারলো না মেয়েটা এতে যেনো ফারিসতার ভয় আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো। এই বলিষ্ঠ শরীরের অধিকারী মানবের সাথে ওর পক্ষে শক্তিতে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না ভাবতে ফারিসতার ভয় ক্রমশ বাড়তে লাগলো। ফারিসতা ফের তাজের ভাবভঙ্গি বোঝার জন্য শুকনো ঢোক গিলে শঙ্কিত লোচনে তাজকে অবলোকন করলো।

এদিকে ফারিসতার ভাব ভঙ্গি দেখে তাজ নিম্নাষ্ঠ কামড়ে ধরে স্মিত হাসলো। জেদি মেয়ের এই ভিতুশ্রী মুখটা দেখতে দারুণ লাগছে তাজের কাছে। মনে মনে ফারিসতাকে আশঙ্কাশ জর্জরিত হতে দেখে তাজের হাসি পেলেও সেই হাসিটা ঠোঁটের আড়ালে রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো কিছু করার হলে অনেক আগেই করে ফেলতাম সেই ক্ষমতা তাজ চৌধুরীর আছে। তোমার ঘাড়ের যে প্রতিটা রগ ত্যাড়া তা এতদিনে আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে। মোড়ের বখাটেদের কথা না বললে ত্যাড়ামো করে গাড়িতে উঠতে না তাই ওটা বলা। এলাকায় কারেন্ট নেই তাই রাস্তায় যেকোনো সময় অমন শেয়াল কুকুরের ক্ষপ্পড়ে পড়ে নিজের জীবনটাই শেষ করে দিবে। মেয়ে মানুষের এতটা দুঃসাহস না দেখানোই ভালো এতে নিজের এই ক্ষতি সেটা যদি আজকের পর ও বুঝতে না পরো তাহলে এটা তোমার সাহসীকতা না এটা তোমার বোকামি।

তাজের প্রতিটি কথা শ্রবণ হতে ফারিসতা যেনো এতক্ষণে জীবন ফিরে পেলো। আসলেইতো তাজ চৌধুরীর যেই ক্ষমতা সেখানে ওর কিছু করা তার
বা হাতের কাজ কিন্তু এই লোকটা সেটা না করে উল্টো রাস্তার বিপদের কথা ভেবে ওকে গাড়িতে উঠিয়েছে আর ও কত বাজে কিনা ভেবেছে ভাবতে ফারিসতা জ্বিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট জোড়া ভেজালো। এতক্ষণে আতঙ্কে জর্জরিত হয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। শুধু মাত্র আইসক্রিম খাওয়ার জন্য এতবড় বোকামি করার জন্য ফারিসতা আসলেই মিইয়ে গেলো। বুঝতে পারলো নিজের একরোখা স্বভাবের জন্য আজ কতবড় ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে। আজ খুব খারাপ কিছুও ঘটতে পারতো ওর সাথে ভাবতে ফারিসতার পুরো শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। এর ভিতরে হুট করে পুরো এলাকা কারেন্ট চলে আসলো। এতক্ষণ নিরিবিলি নিস্তব্ধতা আঁধারে ঢেকে থাকা শহরটা মুহূর্তে মাঝে ঝকঝকে আলোকিত হয়ে উঠলো। শরহ আলোকিত হলেও ফারিসতার মুখে নেমে আসলো ঘন-কালো অন্ধকার। ফারজানা বেগম বার বার করে বলেছে যেনো কারেন্ট আসার আগে বাসায় আসে সেখানে ও এখনো মাঝরাস্তায় ভাবতে ফারিসতার শুকিয়ে যাওয়া গলা আরো শুকিয়ে গেলো।

হঠাৎ একটা পানির বোতল তাজ বড়িয়ে দিতে চমকে ভাবনার ছেদ ঘটলো ফারিসতার। ফারিসতা আরো চোখে একবার তাজের দিকে তাকিয়ে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে শুকনো গলা ভেজালো। এর ভিতরে বাসার সামনে গড়ি আসতে ফারিসতা তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো গাড়ি থামান।

ফারিসতার কথায় তাজ ব্রেক কশতে আরফিদের বাসার সামনে গড়ি থামতে তাজ বিস্মিত হলো। তাজ কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো এই বাসায়?

ফারিসতা মিনমিন গলায় বলল জ.. জি….

তাজ কিছুক্ষণ ফারিসতার শুকনো মুখ অবলোকন করে ছোট করে বলল, যাও….

তাজের বলতে দেরি ফারিসতার তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে এক ছুটে বাসার ভিতরে চলে যেতে দেড়ি হলো না। তাজ ফারিসতার যাওয়ার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে নিজেও গড়ি থেকে নেমে গেলো।

এদিকে ফারিসতা তড়িঘড়ি করে লিফটে উঠে লিফটের বাটন প্রেস করতে যাবে তখন দেখলো তাজ ও আসছে। তাজকে আসতে দেখে ফারিসতার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। তাজ লিফটে ওঠার আগে যাতে দরজা বন্ধ হয়ে যায় এই জন্য ফারিসতা তড়িঘড়ি করে লিফটের সেকেন্ড ফ্লোরের বাটন চাপতে যেয়ে ভুল বসত সিক্স বাটন প্রেস করে দিলো যেটা ও খেয়াল ও করলো না কারণ ওর নজর ছিলো তাজের দিকে যাতে তাজ আসার আগে চলে যেতে পারে কিন্তু ফারিসতাকে একরাশ হতাশ করে দিয়ে লিফটের দরজা আটকানো আগে তাজ লিফটে উঠে গেলো। তাজ উঠতে ফারিসতার মনে আবার আতঙ্ক সৃষ্টি হলো এই লোক ওর পিছু কেনো নিয়েছে, কি উদ্দেশ্যে হ্যাত ত্যান আরো কত কি ভাবতে ফারিসতার খেয়াল আসলো এটা আরফিদের বাসা তাহলে ওনার আসাটা স্বাভাবিক ভাবতে ফারিসতা যেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে যাবে তখন খেয়াল হলো লিফট দোতলায় না থেমে উপরে উঠে যাচ্ছে তা দেখে চোখ গোল গোল করে ফারিসতা দ্রুত যেয়ে আবার বাটন প্রেস করতে লাগলো কিন্তু ইতিমধ্যে লিফট দোতলা ছাড়িয়ে গিয়েছে। জানে এখন হাজার বার বাটন প্রেস করেও লাভ নেই কিন্তু আজ একটার পর একটা আতঙ্কের শিকার হয়ে মেয়েটার মাথা থেকে এটা যেনো বেরিয়ে গেলো। ফারিসতা লাগাতরে বাটন প্রেস করেই যাচ্ছে তা দেখে তাজ ভ্রু কুঁচকে ফারিসতার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

বাটন প্রেস করতে করতে কি লিফট নষ্ট করার ধান্দা আটছো? লিফট অলরেডি ফোর্থ ফ্লোরে উঠে গিয়েছে চোখে দেখো না?

তাজের এমন কথায় ফারিসতার ইচ্ছে করলো চিৎকার দিয়ে বলতে শা*লা তোর জন্য সব হয়েছে আর আমাকে বলছিস চোখে দেখি না। তুই চোখে দেখস না তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী চোখে দেখে না। ফুঁসে উঠে মনে মনে কথাগুলো বললেও সামনাসামনি বলার সাহস হলো না। এমনি আজ অনেক ঝামেলা করেছে আর ঝামেলায় জড়াতে চায় না এই ভেবে লিফট সিক্স ফ্লোরে ওঠার অপেক্ষা করতে লাগলো এর ভিতরে আচমকা বিকট একটা শব্দ হয়ে সবকিছু ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গিয়ে লিফট থেমে যেতে ফারিসতার আত্মা শুদ্ধ উড়ে গেলো। ফারিসতা দিক বেদিক ভুলে চিৎকার দিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিকে ঝাপটে ধরলো। থরথরিয়ে কেঁপে উঠলো অস্বাভাবিক ভাবে পুরো শরীর। নিঃশ্বাস টাও যেনো আঁটকে আসছে ক্রমশ।

এদিকে হঠাৎ ফারিসতাকে এমন ঝাপটে ধরতে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো তাজ। মুহূর্তে মাঝে থমকে গেলো ছেলেটা। অনুভব করলো ওকে ঝাপটে ধরা মেয়েটা ওকে এতটাই শক্ত করে ধরে আছে যেনো পারলে ওর বুকের ভিতরে ঢুকে যাবে। হঠাৎ একটা মেয়ের এমন ঘনিষ্ঠ স্পর্শে ২৯ বছরের একটা যুবকের ভিতরে হুট করে সবকিছু এলোমেলো করে দিলো। শক্ত বলিষ্ঠ দেহে এমন কোমন তুলতুলে মেয়েলী স্পর্শে পাথর হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। মুহূর্তে মাঝে কেমন যেনো একটা ঘোরের মাঝে আঁটকে গেলো ছেলেটা। বুঝতে চাইলো নিজেকে নিজে যে একটা মেয়ে এতো কাছে আসায় ওর মনে ঠিক কিসের বাসনা উকি দিচ্ছে। কোনো খারাপ বাসনা নাকি অন্য কিছু। তাজ নিজেকে নিজে জাজ করে উপলব্ধি করলো ওর ভিতরে হিংস্র পশুর মতো বাসনা কাজ করছে না কিন্তু কিছু একটা ফিল করছে। যেই ফিলের মাঝে নেই কোনো খারাপ বাসনা। যেনো মনে হচ্ছে ওর পাথর হৃদয়ের মাঝে হুট করে এক স্নিগ্ধ ফুলের জন্ম হয়েছে। যেই ফুলটাকে ওর চাই, খুব যত্নে আগলে রাখতে যেনো সেই ফুলের গায়ে এক টুকরো দাগ ও না লাগতে পারে।

তাজের ভাবনার ছেদ ঘটলো ওর বুকের সাথে লেপ্টে থাকা মেয়েটার অস্বাভাবিক ভাবে কম্পনে। প্রথমে ভেবেছিলো হয়তো তখন ওভাবে শব্দ হওয়ায় ভয় পেয়েছে তাই কাঁপছে কিন্তু শরীরের অস্বাভাবিক গতিতে কম্পন অনুভব করতে তাজ কিছু একটা আন্দাজ করে দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের ফ্লাস অন করে সেটা ফারিসতার দিকে তাক করলো। বুঝতে বেশি সময় লাগলো না ফারিসতার নিক্টোফোবিয়ার সমস্যা আছে। যারা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার যেখানে এক টুকরো আলোর দিশা থাকে না এমন অন্ধকারে অতিমাত্রায় ভয় পায় তাদের নিক্টোফোবিয়ার সমস্যা থেকে থাকে সাধারণত। তাই তাজ দ্রুত ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে ফারিসতার গালে মৃদু চাপর দিতে দিতে বলে উঠলো,

রিল্যাক্স কিছু হয়নি এই যে আলো আছে। নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করো। আমি আছি কিছু হবে না। শুনতে পারছো আমার কথা? এই মেয়ে এ বলে তাজ লাগাতরে ফারিতার গালে মৃদু চাপর দিয়ে ফারিসতাকে ডাকতে লাগলো কিন্তু ফারিসতার কোনো রেসস্পন্স পাওয়া গেলো না মেয়েটা অস্বাভাবিক ভাবে কাপছে নিঃশ্বাস ও তুলছে না তা দেখে তাজ দ্রুত ফারিসতাকে নিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বসিয়ে বলতে লাগলো শ্বাস নেওয়ার ট্রাই করতে। সামনের দিকে হালকা ঝুঁকে বসাতে ফারিসতার উদ্বিগ্ন শরীর একটু রিল্যাক্স হতে একটু একটু করে শ্বাস নিতে সক্ষম হলো। এভাবে অনেকটা সময় পর প্রপারলি শ্বাস নিতে সক্ষম হলেও শরীর একদম দূর্বল হয়ে গিয়ে নিজের শরীরের সবটুকু ভার ছেড়ে দিয়ে নিশ্চুপে লেপ্টে রইলো তাজের বুকের সাথে।

ফারিসতাকে স্বাভাবিক ভাবে স্বাস নিতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তাজ। পরক্ষণে ফারিসতার শরীরে ভার ছেড়ে দিতে বুঝলো যে শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে তাই তাজ আর ফারিসতাকে না ডেকে অতি সপ্তপর্ণে বাহুডোর আগলে রেখে ফোন লাগালো আরফিকে। প্রথমবার রিং হয়ে ফোন কেটে গিয়ে দ্বিতীয় বার ও কেটে গেলো তৃতীয় বার ফোন রিসিভ হতে তাজ ধমকে বলে উঠলো,

ফোন ধরতে এত সময় লাগলো কেনো? কখন থেকে ফোন করছি?

ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে তাজের এমন বাজখাঁই গলায় ধমক খেয়ে আরফি কান থেকে ফোন সরিয়ে চেক করে দেখলো আরো দুটি মিসকল উঠে আছে তাজের। মাত্র দুইটা কল দিয়েছে এতেই এমন ধমকাচ্ছে ভাবতে আরফি চোখমুখ খিচে বিড়বিড় করে বলল এর নাকের দগায় থাকা রাগ কি কোনোদিন কমবে না? কথাটা বিড়বিড় করে বললেও আরফি গলা পরিষ্কার করে বলে উঠলো ফোনের কাছে ছিলাম না কি বলবি বল?

লিফটের কি হয়েছে? লিফট বন্ধ কেনো?

তাজের কথার আগামাথা না বুঝতে পেরে আরফি বলে উঠলো কোন লিফট? কাদের লিফট?

আরফির এমন প্রশ্নে তাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, তোর কাছে লিফটের কথা আক্স করেছি তাহলে নিশ্চই অন্য বাড়ির লিফটের কথা তোকে আক্স করবো না।

তাজের এমন চিবানো কথায় আরফি ঢোক গিলে বলল, বুঝতে পেরেছি তুই কোথায় বাসার নিচে? ঝড়ের জন্য কোন তাড় নাকি ছিড়ে গিয়েছে যার জন্য কারেন্ট নেই। সব ঠিক করে কারেন্ট দিয়েছিলো বাট তাড়ে সমস্যা হওয়ায় আবার কারেন্ট চলে গিয়েছে। লাইন ঠিক করছে আধাঘন্টা লাগবে। তুই নিচে থাক আমি আসছি এ বলে আরফি বের হতে উদ্যত হতে তাজ ধমকে বলে উঠলো,

কথা না বুঝে তোর এই এক লাইন বেশি বুঝে অতিমাত্রায় বকবকানি করার স্বভাব চিরতরের জন্য ঘুচিয়ে দিবো শা*লা। আমি লিফটের ভিতরে আঁটকে আছি। পাঁচ মিনিটের ভিতরে কারেন্ট না আসলে তোর কি অবস্থা করবো আমি নিজেও জানিনা এ বলে খট করে ফোন কেটে দিলো।

তাজ এভাবে ফোন কেটে দেওয়ায় আরফির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। এতো তাড়াতাড়ি ও এখন কি করে লাইন ঠিক করাবে? ভাবতে আরফি তড়িঘড়ি করে ফোন লাগিয়ে কাউকে বলল দ্রুত লাইন ঠিক করতে। বলা যায় না সময় মত কারেন্ট না আসলে সত্যি সত্যি তাজ ওর হাল বেহাল করে ছাড়বে ভাবতে আরফি ঢোক গিললো।

পাঁচ মিনিটের জায়গায় দশ মিনিট পর কারেন্ট আসলো। কারেন্ট আসতে তাৎক্ষণিক লিফট সিক্স ফ্লোরে পৌঁছাতে তাজ তাকালো ওর বাহুডোরের সাথে মিশে থাকা দুর্বল মায়াবিনীর দিকে। যার দুর্বল চোখ দুটো আলতো করে বন্ধ করা। শরীরের যেই অবস্থা এতে মনে হয়না নিজে উঠতে পারবে তবুও তাজ গালে মৃদু চাপর দিয়ে এই মেয়ে বলে ডাকতে লক্ষ করলো ফারিসতা জ্ঞান হারিয়েছে। ফারিসতাকে সেন্সলেস হয়ে যেতে দেখে তাজ আর কিছু না ভেবে ফারিসতাকে আলতো করে কোলে তুলে নিলো।
তাজ ফারিসতাকে কোলে নিয়ে লিফট থেকে বের হতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরফির চোখজোড়া সহসা কপালে উঠে গেলো।

বোয়াল মাছের মতো হা করে না থেকে সামনে থেকে সর।

তাজের কথাস আরফির হুঁশ আসতে চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো, এই তাজ এ কি করেছিস তুই? ওঁকে কি তুলে এনেছিস?

আরফির আজাইরা প্রশ্ন তাজ এবার ধমকে বলে উঠলো সরবি সামনে থেকে?

তাজের ধমকে আরফি বিস্মিত হয়ে পাশে সরতে তাজ ফারিসতাকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করতে আমেনা বেগম আর আদরিবা ছুটে এসে বিচলিত হয়ে বলতে লাগলো ফারিসতার কি হয়েছে?

এদের এতো এতো প্রশ্ন তাজ বিরক্ত হলেও সেটা প্রকাশ না করে ছোট করে বলল, কারেন্ট চলে যাওয়ায় লিফটের ভিতরে আটকা পড়ে গিয়েছিলো। নিক্টোফোবিয়ার প্রবলেম আছে তাই অন্ধকারে অতিমাত্রায় ভয় পাওয়ার জন্য সেন্সলেস হয়ে পড়েছে।

তাজের কথায় আমেনা বেগম বিচলিত হয়ে বলে উঠলো তুমি ওঁকে গেস্ট রুমে শুইয়ে দেও বাবা আমি দেখছি। আদরিবা তুমি যেয়ে ফারজানা আপাকে ডেকে নিয়ে আসো।

মায়ের কথায় আদরিবা তড়িঘড়ি করে ফারজানা বেগমকে ডাকার জন্য বেরিয়ে গেলো। এদিকে তাজ ফারিসতাকে আলতো করে বেডে শুয়ে দিয়ে পার্লস চেক করে দেখলো ধীর গতিতে চলছে।
এর ভিতরে ফারজানা বেগম হুমড়ি খেয়ে রুমে প্রবেশ করে মেয়েকে অচেতন অবস্থায় দেখে অস্থির হয়ে পড়লেন। ফারজানা বেগমের অস্থিরতা দেখে তাজ তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
শ্বাসকষ্ট ওঠায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে টেনশনের কিছু নেই জ্ঞান ফিরে আসবে।

তাজের কথায় ফারজানা বেগম একটু শান্ত হলো তা দেখে তাজ ফের বলল, চোখমুখ হালকা পানি ছিটিয়ে দিন ঠিক হয়ে যাবে এ বলে এক পলক ফারিসতার অচেতন মুখের দিকে তাকিয়ে আরফিকে নিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

#চলবে?

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ১৬

ওই মেয়ে তোদের বাসায় উঠেছে আমাকে বলিসনি কেনো?

তাজের ছোড়া প্রশ্নে আরফি ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো কোন মেয়ে?

ওই মেয়েটা…

আরে বাবা কোন মেয়েটা?

ফারিসতা….

তাজের এবারের কথায় আরফি চোখ গোল গোল করে বলে উঠলো তুই কি কখনো বলেছিলি ফারিসতার আপডেট তোকে দিতে যে বলবো? আমার তো মনে হয়না বলেছিস। বায় দা বে দোস্ত মনে হচ্ছে না তুই ফারিসতার জন্য একটু বেশি ভাবছিস? তার মানে পাপনের কথা সত্যি তুই ফারিসতার প্রেমে পড়েছিস।

আরফির কথায় তাজ কোনো বিলম্ব না করে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো প্রেম কাকে বলে আমি জানিনা কিন্তু ওই মেয়ের প্রতি কেমন একটা উইকনেস কাজ করে। এর নাম কি আমার জানা নেই।

তাজের সহসা শিকারোক্তিতে আরফির চোখ কাপালে উঠে গেলো। ওরা আগে থেকে টের পেয়েছে ফারিসতার প্রতি তাজের কিছু একটা অনুভূতি আছে কিন্তু সেটা যে এক কথায় শিকার করে নিবে ছেলেটা কল্পনা ও করেনি। অবশ্য কোনো জিনিস নিয়ে বিলম্ব করার ছেলে তাজ না যা বলার সরাসরি এই বলে দেওয়া যেনো জন্মগত স্বভাব। আরফি উৎসাহ নিয়ে তাজের দিকে তাকিয়ে বলল বিয়ে করবি ফারিসতাকে?

আরফির এহেন প্রশ্ন তাজ বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো। সবে মনের এক কোনে ওই মেয়ের প্রতি উইকনেস কাজ করছে এখনো ওর জানা নেই এই উইকনেস এর ঠিক কি করণ আর এই ছেলে বিয়ে পর্যন্ত চলে গিয়েছে।

তাজের কুঁচকানো মুখের দিকে তাকিয়ে আরফি বুঝতে পারলো ও একটু বেশি সামনে এগিয়ে গিয়েছে। তবুও আরফি হার না মেনে হামি দেওয়ার ভান করে বলে উঠলো,

চোখমুখ কুঁচকে লাভ নেই এমনিও ফারিসতা তোকে বিয়ে করবে না।

আরফির এবারের কথায় তাজ ভ্রু বাকিয়ে বলে উঠলো হোয়াই?

সব সময় বলস আমার নাকি মাথা মোটা। এখন তো দেখছি আমার চেয়েও তুই বেশি মাথা মোটা। ফারিসতা যেই মেয়ে এতো কিছুর পর ও তোর মনে হয় ফারিসতা তোকে বিয়ে করবে? ফারিসতার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে মেয়েটাকে যেই পরিমাণ ধমকেছিস তারপর ও ওই মেয়ে তোকে বিয়ে করবে তো দূরের কথা উল্টো ওৎ পেতে আছে কখন এর প্রতিশোধ নিবে। যেই জেদি মেয়েরে বাবা কাউকে পরোয়া করে না।

আরফির বলা প্রতিটা কথা শুনলো তাজ কিন্তু এতে ওর ভিতর কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না উল্টো বাঁকা হেঁসে তাজ বলে উঠলো তাজ চৌধুরী যেটা একবার চায় সেটা আদায় করে ছাড়ে।

***
কাক ভোর সকালে হাতের ভাঁজে হকিস্টিক নিয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছিলো তাজ।
আর তিফাজ চৌধুরী সবে মসজিদ থেকে নামাজ আদায় করে ফুরফুরে মনে গেট পেরিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করতে ফুরফুরে মনটা চট করে শক্ত কাঠ হয়ে গেলো। তিনি চোয়াল শক্ত করে তাজের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

ভোরের আলো ফোঁটার আগে তোমার গুন্ডামী করা শুরু হয়ে গিয়েছে?

তিফাজ চৌধুরীর কথায় তাজ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো, এক ডায়লগ আর কত দিবে? এবার অন্তত এই ডায়লগ চেঞ্জ করে নতুন কিছু বলো। আম সো বোরিং ফর ইউর সেইম ডায়লগ এভরিডে….

ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড মাই সিচুয়েশন লাইক ইউ?

আই ডোন্ট নিড টু আন্ডারস্ট্যান্ড এ বলে তাজ পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে তিফাজ চৌধুরী তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে উঠলো,

তা এই সকাল সকাল কয় জনের মাথা ফা/টা/তে যাচ্ছো? বেয়াদব ছেলে।

বেশি না চারজনের। মাথা ফা/টি/য়ে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিবো ফ্রী তে ট্রিটমেন্ট করিয়ে দিও।

তাজের কথায় তিফাজ চৌধুরী চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো অসভ্য ছেলে মজা করছো আমার সাথে? ভুলে যেও না আজ তোমার ডিউটি আছে। ডিউটির টাইম যেনো এক মিনিটও এদিক ওদিক না হয় এটা মাথায় রেখো এ বলে রাগে ক্ষোবে হনহনিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো তিনি।

তাজ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বাইক নিয়ে ছুটলো নিজের গন্তব্যে। গন্তব্যে কাছে এসে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে চোয়াল শক্ত করে বাইক থেকে নেমে সামনের ভাঙাচোরা একটা ঘরের দরজায় হাতের উল্টো পাশ দিয়ে ঠকঠক শব্দ তুলল তাজ। যদিও এই ভাঙাচোরা নরবরে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকা ওর এক সেকেন্ডের ব্যাপার তবে সেটা না করে দরজায় নক করলো।

অনেকটা সময় পর ঘুম ঘুম চোখে একজন দরজা খুলতে খুলতে বেজায় বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো কোল শা*লা এই সকাল সকাল ঘুম ভাঙাতে এ…. আর কিছু বলার আগে সজোরে বুকে তীব্র আঘাতে ছিটকে দূরে যেয়ে ম/দে/র কাঁচের বোতল গুলোর উপরে পড়তে ঝনঝনিয়ে বোতল গুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়ে লোকটার সারা শরীরে বিধে যেতে লোকটার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে আসলো ব্যথার্ত আর্তনাদ।

হঠাৎ এমন বিকট শব্দে পাশের রুম থেকে তিনজন হুমড়ি খেয়ে সামনের রুমে আসতে ওদের ভিতরে একজনের এই অবস্থা দেখে তার কাছে যেতো নিবে তখন তাজের দিকে চোখ যেতে সহসা তিন জনের পা জোড়া থেমে গেলো। তিনজনের ভিতরে একজনের মুখ থেকে কাঁপা কাঁপা শব্দে বেড়িয়ে আসলো ত…তাজ ভা… আর কিছু বলার সুযোগ হলো না এর ভিতরে তাজ তিনজনকে হকিস্টিক দিয়ে এলোপাতাড়ি এক এক জনকে মা/র/তে লাগলো। কেউ বোঝার সুযোগ ও পেলো না তাঁরা কেনো মার খাচ্ছে। এক এক জনে মা/র খেয়ে শরীরের এক এক জায়গা জখম হয়ে ব্যথায় আর্তনাদ করতে লাগলো।

তাজ নিজের সমস্ত রাগ ক্ষোব মিটিয়ে পাশে থাকা কাঠের চেয়ারটা টেনে চারজনের সামনে বসে হুকুম ছুড়লো ওঠ…

তাজের ছোড়া হুকুমে এক একজন শরীরের সব ব্যথা ভুলে ভয়ে একজন আরেকজনকে টেনে টুনে এক সাথে গোল হয়ে বসতে তাজ সবাইকে অবলোকন করে বাঁকা বলে উঠলো,

আইসক্রিম খাওয়ার শখ মিটেছে?

তাজের ছোড়া প্রশ্নে এক একজন আশ্চর্য বনে গিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো যা অর্থ এই কথার মানে কেউ বুঝতে পেরেছে কিনা। কিন্তু তাজের ভয়ে কথার মানে না বুঝে সবাই বোকার মাতো দুই দিকে মাথা দুলালো তা দেখে তাজ হাতে থাকা হকিস্টিক ঘুরাতে ঘুরাতে নিরেট স্বরে বলে উঠলো এখনো মেটেনি?

তাজের এমন শান্ত নিরেট স্বরে সবাই হকচকিয়ে বলে উঠলো মিটেছে ভাই মিটেছে…

তাজ সবার হকচকানো মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে গুড বলে তাকালো নিজের হাতে থাকা চকচকে কালো ঘড়ির দিকে। ঘড়ির কাটা সবে সাতটায় যেয়ে ছুতে তাজ চেয়ার ছেড়ে উঠে শান্ত গলায় হুমকির শুরে বলল,

এখন বাজে সাতটা তোদের হাতে সময় আছে তিন ঘন্টা। এই তিন ঘন্টার মধ্যে নিজেদের ট্রিটমেন্ট করিয়ে ঠিক দশটার আগে ভার্সিটির সামনে যেয়ে দাঁড়াবি। কাল রাতে যেই মেয়েকে হ্যাড়াস করেছিস সেই মায়ের পায়ের কাছে পড়ে সবকয়টায় ক্ষমা চাবি। আমার কথার একটু এদিক ওদিক হলে তোদের সাথে কি ঘটবে সেটা নিজেরাই ভেবে নে এই কাথা বলে তাজ ঠিক যেভাবে আসলে সেভাবেই চলে গেলো।

তাজ যেতে এতক্ষণে সবার মাথায় ঢুকলো ওরা আসলে কিসের জন্য মার খেয়েছে। সামান্য একটা মেয়েকে হ্যাড়াস করার জন্য কেউ এভাবে মারে? আরেকটু হলে শরীর থেকে যেনো জানটাই বের করে নিয়ে যেতো। এই জীবনে বেঁচে থাকলে আজকের মারের কথা মনে থাকলে কোনো মেয়েকে হ্যাড়াস করবে না কথাগুলো ভাবতে কালকে রাতের কথা মনে হতে এক একজন ভয়ে চুপসে গেলো কালকের ওই মেয়েতো মানুষ এই না। একজন ভূতের কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইবে? একজন ভূতের কাছে ক্ষমা চাইতে গেলো আদো বেঁচে ফিরতে পারবে? ভাবতে সবার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো কিন্তু ওই ভূতের চেয়েও ভয়ানক কেউ ওদের হুমকি দেওয়া এই দানবীয় শক্তি অধিকারী ব্যাক্তি। ওই ভূতের কাছ থেকে কোনো রকম বেঁচে ফিরতে পারলেও এই ভয়ানক মানবের কথা একটু এদিক হলে কি হলে নিজেদের কি হবে ভাবতে এক একজন শঙ্কিত হলো সেই সাথে তাজ যাওয়ার পর নিজেদের শরীরের সব ক্ষতি গুলো ব্যথায় টগবগিয়ে উঠলো। এক একজন আর্তনাদ কারে মেঝেতে শুয়ে পড়লো।

*****
ভর্সিটির সামনে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মাটিয়ে ফারিসতা কয়েক কদম এগোতে আচমকা চারটা ছেলে হুমড়ি খেয়ে পায়ের কাছে পড়তে ভড়কে গেলো মেয়েটা। ফারিসতা লাফিয়ে উঠে কয়েক কদম পিছিয়ে যেতে ছেলেগুলো ফের ফারিসতার পায়ের কাছে যেয়ে ক্ষমা চাইতে লাগলো। আকস্মিক ছেলেগুলোর কাজে ফারিসতার ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। পরক্ষণে ছেলেগুলোর মুখ স্পষ্ট হতে ফারিসতা চমকে উঠলো। কাল রাতে ওকে হ্যাড়াস করতে চাওয়া সেই চারজন যেচে ওর কাছে ক্ষমা কেনো চাচ্ছে সেই সাথে চারজনের অবস্থা নাজেহাল। হাত-পা, গাল, নাক সহ শরীরের আরো বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ দেখে ফারিসতার মুখ অটোমেটি হা হয়ে গেলো। এক রাতের ভিতরে এদের এভাবে কে মারলো? আর ওর কাছেই বা কেনো যেচে এসে ক্ষমা চাচ্ছে ফারিসতার মাথায় আসলো না। ফারিসতা ফের দু কদম পিছিয়ে গিয়ে চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠলো কি করছেন কি সড়ুন আমার সামনে থেকে।

লোকগুলো তো সড়লো না এই উল্টো ফারিসতার পা ধরে ক্ষমা চাইতে লাগলো তা দেখে ফারিসতা রাগে এবার ফেটে পড়ে বলে উঠলো পা ছাড় আর নাহলে শরীরে যেটুকু শক্তি নিয়ে এখানে এসেছিস সেটাও ঘুচিয়ে দিবো বা*

লোকগুলো ও নাছোড়বান্দা দরকার হলে মার খাবে তবুও ক্ষমা না পেয়ে এখান থেকে এক পাও নড়বে না। ক্ষমা না পেয়ে এখান থেকে এক পা নড়া মানে নিজেদের জানটা তাজ চৌধুরীর হাতে সপে দেওয়া।

লোকগুলোর কাজে ফারিসতা এবার বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তখন কোথা থেকে ছুটে এসে সাব্বির দাঁড়ালো ওদের সামনে। এতদিন পর সাব্বিরকে দেখে ফারিসতা ভ্রু কুঁচকে সাব্বিরের দিকে তাকাতে সাব্বির দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলে উঠলো আসসালামু আলাইকুম ভা… না মানে আপু।

সাব্বিরের সালাম সহ আপু সম্মোধনে ফারিসতার চোখ জোড়া কপালে উঠে গেলো। যে ছেলে ওকে সেদিন তুই সম্মোধন করেছে যেনো পারলে ওকে চিবিয়ে খায় আর আজ সেই ছেলের মুখে আপু সম্মোধন ঠিক হজম করতে পারলো না ফারিসতা। ফারিসতা চোখ মারবেলের মতো গোল গোল করে সাব্বিরের দিকে তাকাতে সাব্বির ফের দাঁত কেলিয়ে হেঁসে নিচে পড়ে থাকা চারজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো তোরা যা এখন।

নিচে পড়ে থাকা ছেলেগুলো ভীত কণ্ঠে বলে উঠলো ক্ষমা না নিয়ে এখান থেকে গেলে ভাই আমাদের জানে মে/রে ফেলবে।

ছেলেগুলোর কথা ফারিসতার কর্ণগোচর হতে ফারিসতা সন্দিহান হয়ে বলে উঠলো ভাই জানে মা/র/বে মানে? এই তোদের এখানে কে পাঠিয়েছে?

ফারিসতার সন্দিহান নজর দেখে সাব্বির দ্রুত বলে উঠলো কোনো ভাই না কোনো ভাই না এই তোরা যাবি এখান থেকে? চোয়ক গরম করে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে সাব্বির কিছু একটা ইশারা করতে ছেলেগুলো শুরশুর করে সেখান থেকে চলে গেলো। ছেলেগুলো যেতে ফারিসতা সন্দিহান হয়ে সাব্বিরের দিকে দু কদম এগিয়ে গিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো,
ঘটনা কি?

ফারিসতার এমন দু কদম এগিয়ে আসতে সাব্বির দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,

ক..কিসের ঘটনা? ওরা আপনায় বিরক্ত করছিলো তাই এখানে এসেছি। আ..আপমি ক্লাসে যান না দেরি হয়ে যাবে আমি যাই কেমন এ বলে সাব্বির যেতে উদ্যত হতে ফারিসতা আঁটকে দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

কাহিনি কি সত্যি করে বলতো? সেদিন পারলে তো আমাকে গিলে খাচ্ছিলি আজ এতো সম্মান দিয়ে কথা বলছিস। তোর আসল মতলব কি ভালোয় ভালোয় সত্যি করে বল কথাগুলো বলে ফারিসতা নিজে হাত ওলোট পালট করে দেখতে দেখতে ফের বলে উঠলো আমি আবার সুন্দর কশিয়ে থাপ্পড় দিতে জানি বুঝলি এবার তুই কি করবি সেটা ভেবে বল।

ফারিসতার এমন হুমকিতে সাব্বিরের ইচ্ছে করলো এই জল্লাদ বেয়াদব মেয়েটাকে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় দিতে কিন্তু এই মেয়েকে থাপ্পড় দিবে তো দূরের কথা এই মেয়ের গায়ে একটা ফুলের টোকা লাগলেও ওর গর্দান যাবে ভাবতে সাব্বির নিজের রাগটা গিলে ফলে মুখে টেনে হিচরে হাসি টেনে অপ্রস্তুত গলায় বলে উঠলো স..সত্যি কোনো মতলব নেই।

সাব্বিরকে সত্যি বলতে না দেখে ফারিসতা ফুঁসে উঠে সাব্বিরের দিকে তেড়ে যেতে নিবে তখন দূর থেকে রাশফিয়া ডেকে বলে উঠলো এই ফারু ওখানে কি করছিস? জলদি আয় ক্লাসে লেট হয়ে যাচ্ছে।

রাশফিয়ার কণ্ঠে শুনে ফারিসতা ঘাড় ঘুরিয়ে রাসফিয়াকে দেখে নিয়ে ফের সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো তোকে তো পরে দেখে নিবো এ বলে হনহনিয়ে চলে গেলো।

ফারিসতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সাব্বির মুখ ভোঁতা তাকিয়ে রইলো। যেই জল্লাদ মেয়েটার সাথে ওর সম্পর্ক সাপে আর নেউলের আর সেই কিনা তাজ এই মেয়ের দায়িত্ব ওর হাতে দিয়েছে যাতে এই মেয়ের গায়ে ফুলের টোকাও না লাগে। এই মেয়ে কথায় কথায় ওকে যেই হুমকি দেয় সামনে কি হবে ভাবতে সাব্বিরের মুখটা বিতৃষ্ণা ভোরে গেলো।

#চলবে?

#ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং…🥰