হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব-৩৮+৩৯

0
593

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৮
আরাবী ঘুমোচ্ছে।কড়া ডোজের মেডিসিন খাওয়ার কারনে ইদানিং আরাবীর ভীষণ ঘুম পায়।জায়ান ওর পাশেই বসা ছিলো।এমন সময় ইফতির কণ্ঠস্বর পাওয়া গেল, ‘ ভাইয়া আছো?কথা ছিলো একটু।’

ইফতির গলার স্বরে উঠে দাড়ালো জায়ান।তারপর ধীর আওয়াজে বলে,’ হু! আসছি দারা।’

জায়ান আরাবীর গায়ে ভালোভাবে কাথা টেনে দিলো।তারপর ধীর পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসল।ইফতি জায়ানকে দেখেই বিচলিত কণ্ঠে বলে,’ ভাইয়া! জরুরি কথা বলবো।’

‘ হুম! বাগানেচল।আরাবী ঘুমোচ্ছে।আওয়াজে জেগে যেতে পারে।’

জায়ান আর ইফতি রুম থেকে সরে গিয়ে বাগানের নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে বসল।জায়ান শীতল গলায় প্রশ্ন করে,’ হ্যা বল। কি বলবি!’

‘ ভাইয়া সেদিন তোমায় বললাম নাহ।আমার এক ফ্রেন্ড ওই হাসপাতালের ডক্টর।সাথে ওর আম্মুও ডক্টর ওই একই হাসপাতালের।’

ইফতির কথায় জায়ান ভ্রু-কুচকালো। বলল, ‘ হ্যা তো?’

ইফতি বলল, ‘ আমি আমার সেই ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেছিলাম।সাথে আন্টির সাথেও।আন্টিকে বিষয়টা জানাতে উনি আমায় তারিখ’টা জিজ্ঞেস করেছিলো।আমিও বললাম।তারিখটা বলতেই কেমন যেন তিনি থমথমে হয়ে গিয়েছিলো।শুধু বলল তোমাকে নিয়ে যেন তার সাথে দেখা করি।আমার মন বলছে ভাইয়া।কিছু একটা ঘাপলা আছে।’

জায়ানের কোচকানোর ভ্রু-জোড়া আরও কুচকে আসে।কি এমন হলো?যে তারিখ বলতেই তাকে যেতে বলল।জায়ান বলল, ‘ ঠিকই বলছিস ইফতি।কিছু একটা তো সমস্যা অবশ্যই আছে।’

‘ এখন তুমি কবে যাবে?’
‘ তিনি আমায় কবে যেতে বলেছেন?’

ইফতি বলল,’ তুমি গেলেই নাকি হবে।’
‘আচ্ছা তাহলে কাল যাবো নেহ।’
‘ ওকে।তাহলে আমি আন্টিকে জানিয়ে দিবো নেহ।’
‘হুম দিস!’

——-
কোচিং শেষে নূর বাহিরে দাঁড়িয়ে ওর ক্লাসমেট একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।ফাহিম কোচিং-এর সকল কাজ শেষ করে বের হচ্ছিলো। গেটের সামনে নূরকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে ভ্রু-কুচকে আসে ওর।হঠাৎই রাগ উঠে গেলো ফাহিমের। ইদানিং নিজেকে নিজেই বুঝতে পারেনা ফাহিম।ওর কিযে হয়েছে।নূরকে অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেই ওর রাগ লাগে।এমনটা আরাবীর এক্সি’ডেন্ট হয়েছিলো সেদিন নূরের সাথে একটু একান্তভাবে কথা বলেছিলো।নূর ওকে শান্তনা দিয়েছিলো ওইদিন থেকেই নূরের প্রতি আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে ফাহিমের।এই অনুভূতির নাম কি দেবে ফাহিম জানে নাহ।এইযে ফাহিমের যে রাগ লাগছে নূরকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখে।এটা তো অহেতুক রাগ তাই নাহ?মনকে বুঝ দিচ্ছে ফাহিম।তাও মন কথা শুনলে তো? ফাহিম মনের কথা শুনেই এগিয়ে গেলো নূরের কাছে। কথার মাঝে হঠাৎ ফাহিমকে দেখে থেমে যায় নূর।আঁড়চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।ফাহিম থমথমে গলায় বলে,’ নূর,এদিকে আসো। ‘

‘ কেন স্যার?’
‘ একটু দরকার আছে।’
‘ বাট স্যার কোচিং-এর কথা তো কোচিং-এর মধ্যেই বলতে হয়।এখন তো কোচিং টাইম শেষ।তাই যা বলার কাল বলবেন।’

নূর ফাহিমকে মুখের উপর ঘুরিয়ে পেচিয়ে না করে দিলো। খুব সুক্ষভাবে অপমান যাকে বলে।ফাহিম দাঁতেদাঁত চিপল।রাগল ঝাড়ল পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার উপর।ফাহিম বলে, ‘ এই ছেলে?তোমার পড়ালেখা নেই?ক’টা বাজে?বাড়ি যাও না কেন?কোচিং-এর টেস্টে কি বাজে রেজাল্ট করেছ সেই খেয়াল আছে?’

ধমক খেয়ে ছেলেটা ভয় পেলো।তড়িঘড়ি করে চলে গেলো দ্রুত পায়ে।ফাহিম এইবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল নূরের দিকে।রাগি গলায় বলে,’ ওই ছেলের সাথে এতো কথা কিসের তোমার?’

নূরের একরোখা জবাব, ‘ তাতে আপনার কি?’
‘ নূর আমায় রাগিও নাহ।’
‘ আশ্চর্য! এখানে তো আপনি রেগে যাবেন এমন কিছুই হয়নি।অন্তত আমার চোখে তো পরছে নাহ।’

হাত চেপে ধরল ফাহিম নূরের।ব্যাথা পেলো নূর।তাও কিছু বলল নাহ।ফাহিম টেনে নূরকে নিয়ে কোচিং সেন্টার থেকে বেড়িয়ে আসল।তারপর বলে,’ তুমি আমাকে ইগনোর করছ কেন?’
‘ আপনাকে ইগনোর কোথায় করলাম স্যার? আপনিই তো সেদিন বলেছিলেন না কোচিং-এ যাতে আপনার সাথে ক্লাস বাদে।অহেতুক কথা যেন না বলি।’

নূরের সাথে কোচিং-এ প্রথম দেখার দিনের স্মৃতি মনে পরে গেলো ফাহিমের।মেজাজ খানিকটা ঠান্ডা হলো।মেয়েটা কি তবে অভিমান করেছে?সেদিনের ওর বলা কথার জন্যে?তবে ফাহিম যা করেছিলো তা নূরের ভালোর জন্যেই তো করেছিলো।ফাহিম ঠান্ডা গলায় বলল,’ আমি যা বলেছিলাম তোমার ভালোর জন্যেই তো বলেছিলাম।’
‘ তো?আমি তো আপনার কথাই মানছি।’

ফাহিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।তারপর হুট করে বললে, ‘ আচ্ছা সরি।’

চমকে গেলো নূর।ও কখনও ভাবতেই পারেনি ফাহিম ওকে এইভাবে হুট করে সরি বলবে।আসলে সত্যিই নূর অভিমান করেছিলো ফাহিমের সেদিনের ব্যবহারের কারনে।কিন্তু ফাহিমের এই একটা সরি বলাতেই যেন অভিমানের পাহাড় ধ্বসে পরে গেলো নূরের।নূরের চোখ ভরে উঠতে চাইল।তাও সামলে নিলো নূর নিজেকে।ধীর গলায় বলে, ‘ আমি বাসায় যাবো স্যার?’
‘ এতো অভিমান কিসের নূর?আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো।’ ফাহিমের সোজাসাপটা কথায়।

নূরের যেন চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম।ও তো কখনও এই লোকটাকে ভালোবাসার কথা বলেনি।অথবা এমনও কোন আঁচড়ন করেনি।যা দেখলেই লোকটা বুঝে যাবে ও লোকটাকে ভালোবাসে।তাহলে কিভাবে বুঝল লোকটা? নূরের অবাক হওয়া মুখশ্রী দেখে হাসল ফাহিম।তারপর বলে, ‘ অবাক হয়েছ তাই নাহ?যে আমি জানলাম কি করে?’

নূর জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই ফাহিম আবার বলে, ‘ আমি তোমার চোখ পড়তে পারি নূর।তোমার চোখে আমি স্পষ্ট আমার জন্যে ভালোবাসা দেখতে পাই।’

নূরের বুক ভাড় হয়ে আসল কষ্টে।লোকটা বুঝে যে ও লোকটাকে ভালোবাসে। তাও ওকে এতোটা অবহেলা করে।কেন করে?কেন এতো কষ্ট দেয় ওকে?নূর ধরা গলায় বলে, ‘ জেনেশুনে তাও তো কষ্ট দেন আমাকে।’

‘ আমায় বিয়ে করবে নূর?’

এইবারের চমকে যেন নূরের হার্ট এ’ট্যাক হয়ে যাবে।এটা কি বলল ফাহিম?সত্যিই কি বিয়ের কথা বলল ওকে? নাকি ও ভুল শুনল? ওর মাথা খারাপ হলো নাকি লোকটার মাথা খারাপ হলো? নূর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘ আপনি ঠিক আছেন?কিসব বলছেন আপনি?’

ফাহিমের সরল গলায় জবাব,’ চলো বিয়ে করে ফেলি নূর।তুমি তো আমায় ভালোবাসো তাই নাহ?প্রমিস করছি বিয়ের পর একটুও অবহেলা করবো নাহ।’

‘ কিন্তু আমায় তো আপনি ভালোবাসেন নাহ।ভালোবাসেন? সত্যি সত্যি উত্তর দিবেন।’
‘ নাহ ভালোবাসি নাহ।’

তাচ্ছিল্য হাসল নূর।ফাহিম ওকে ভালোবাসে না সেটা নূর ভালোভাবেই জানে।নূর তাচ্ছিল্যভরা কণ্ঠে বলে,’ যেহেতু আমায় ভালোবাসেন নাহ।সেখানে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে নাহ।আমি আপনাকে ভালোবাসি ঠিকই।কিন্তু যে আমায় ভালোবাসে নাহ।তাকে বিয়ে আমি করব নাহ। আমাকে দয়া দেখাতে হবে নাহ।আমি কারও দয়ার পাত্রি হতে চাই নাহ।’
‘ আমি তোমায় ভালোবাসি না ঠিকই নূর।তবে সত্যি বলছি আমি তোমাকে মন থেকে আমার স্ত্রীর রূপে চাইছি।আমি তোমাকে দয়া করছি নাহ নূর।’
‘ প্লিজ আপনি থামুন। আমি আর কিছু শুনতে চাই নাহ।’

বলেই নূর চলে যেতে নিতেই ফাহিম ওর হাত টেনে ধরে।গম্ভীর স্বরে বলে, ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি নাহ ঠিকই। তবে তুমি আশেপাশে থাকলে আমার ভালোলাগে।তোমার জন্যে মনের মাঝে আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে নূর।ভালোলাগে তোমার কথা শুনতে।এখন এটাকে আমি কি বলব আমি জানি নাহ।তবে আমি এটুকু জানি আমি তোমার সাথেই সারাজীবন ভালো থাকবো নূর। তুমি শুধু একটু মানিয়ে নিও।’

ফাহিম অতোটা মনের কথা ব্যক্ত করতে পারে নাহ।তবে যেটুকু পারল মনের কথা সবটা বলে দিলো নূরকে।নূর আর পারল না নিজেকে ধরে রাখত। এতোটা অপেক্ষার পালা এইবার শেষ হয়েই গেলো তবে।নূর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। নূরকে কাঁদতে দেখে ভড়কে যায় ফাহিম।কি করবে দিশা পাচ্ছে না।চারপাশে তাকাল ফাহিম।দেখল কেউ আছে নাকি! না কেউ নেই।নিশ্চিত হতেই নূরকে বুকে টেনে নেয় নূর।নূর ফাহিমের একটুখানি ছোঁয়া পেতেই।আরো সিটিয়ে যায় ফাহিমের কাছে।ফাহিম আলতো হাতে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।নরম গলায় বলে,’ কেঁদো না নূর।আমায় হাতটা একবার ধরো বিশ্বাস করে।ওয়াদা করলাম তোমার এই হাত আমি কোনদিন ছাড়বো না।আজীবন এইভাবেই আমার বুকের মাঝেই আগলে রাখব।’

#চলবে_________

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৯
চিন্তিত আরাবী বসে আছে।নজর জায়ানের দিকে।এই লোকটা হুটহাট সময় অসময়ে যে কোথায় কোথায় চলে যায়,ভেবে পায় না আরাবী।এইযে এখন সেজে গুজে তৈরি হচ্ছে লোকটা।কোথায় যাবে বলেও না আরাবীকে।আরাবী তীক্ষ্ণ চোখে জায়ানকে পর্যবেক্ষন করে নিয়ে বলল, ‘ কি ব্যাপার বলুন তো।ইদানিং আপনি এমন সেজে গুজে হুট হাট কোথায় চলে যান?’

শরীরে পারফিউম দিচ্ছিল জায়ান।আরাবীর কথায় হালকা হাসল।একটু সময় নিয়ে আরাবীর কাছে গিয়ে বসল।বলল, ‘তুমি বুঝি আমায় সন্দেহ করছ?’

জায়ানের হঠাৎ এমন একটা কথায় থতমত খেয়ে যায় আরাবী।জায়ান কি তবে ওর কথায় কষ্ট পেয়েছে?যে ওকে এই কথাটা বলল।ওতো এরকম কিছু ভাবেইনি।ও তো খুব ভালোভাবেই জানে এই লোকটা ওকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে।লোকটার চোখের দিক তাকালেই আরাবী নিজের জন্যে অসীম ভালোবাসা দেখতে পায়।সেখানে এসব তো ও স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না।আরাবী ছোট্টো কণ্ঠে বলে, ‘ ছিঃ ছিঃ আপনি এসব কি বলছেন?আমি এমন কিছু ভাবব কেন?আমি মোটেও আপনাকে সন্দেহ করছি না।’

আরাবীর কথা শুনল জায়ান।তবে কিছু বলল নাহ।আরাবী চোখ তুলে তাকাল জায়ানের দিক।জায়ান এইবার কোমলভাবে স্পর্শ করল আরাবীর গাল।কেঁপে উঠল আরাবী। আজ ঠিক কতোদিন পর জায়ানের এই অন্যরকম শীহরণ জাগিয়ে তোলা স্পর্শ পেলো আরাবী।ওর এক্সি’ডেন্ট হওয়ার পর থেকে তো লোকটা ঠিকঠাকভাবে ওর কাছেও ঘেষে না।সে নাকি ভয় পায়।তার হাতপা লেগে যদি আরাবী ভয় পায়?কতো বলে কয়ে যে জায়ানের নিকট গিয়ে ঘুমোয় আরাবী।ওদিকে আরাবীকে দূরে রেখে যে লোকটা নিজেও ঘুমোয় নাহ।সারারাত ছটফট করে।তাই আরাবী জায়ানের কোন নিষেধাজ্ঞা মানে নাহ।নিশ্চুপভাবে জায়ানের বুকে লেপ্টে যায়।জায়ান নিজেও যে এতে শান্তি পায় আরাবী জানে।মুঁচকি হাসল আরাবী।ওকে হাসতে দেখে জায়ান প্রশ্ন করল,’ হাসছ যে?’

মাথা নিচু করে আরাবী বলে, ‘এমনি।’

জায়ান আরেকটু কাছ ঘেষে বসে আরাবীর।আরাবী কাঁপছে,সাথে কাঁপছে ওর হৃদয়।নিশ্বাস হয়েছে জোড়াল।বুকটা কেমন ধড়ফড় করছে।জায়ান আরাবী সেই তিরতির মরে কম্পয়মান ওষ্ঠজোড়া দেখে শুকনো ঢোক গিলল।আজ কতোদিন হলো ওই অধরজোড়ার সুধাপাণ করতে পারে না জায়ান।শতো ইচ্ছে থাকলেও নিজেকে সংযত করে রাখে।তবে আজ পারছে নাহ।জায়ান ধীর স্বরে বলে, ‘ আরাবী তোমায় আজ যদি একটুখানি ছুঁয়ে দেই।তুমি কি রাগ করবে?’

জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিলো আরাবী।মাথা নিচু করে লাজুক হাসল।আরাবী কাছে এগিয়ে এসে আরাবীর জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরল।জায়ান আরাবীর সম্মতি পেয়ে মুঁচকি হাসল। আরাবীর মাথার পিছনে হাত গলিয়ে দিয়ে চুলগুলো মুঠিতে পুরে আরাবীর মাথাটা উপর দিকে উঠাল।আরাবী চোখ বন্ধ করে আছে।জায়ান আলতো করে চুমু খেল আরাবীর ঠোঁটজোড়ায়।দীর্ঘদিন পর স্বামির সোহাগটুকু পেয়ে সর্বাঙ্গ ঝংকার তুলে উঠল।জায়ান আরাবীর এই কম্পনে যেন পাগল হয়ে গেলো।পাগলের মতো হামলে পরল আরাবীর অধরজোড়ার উপর।এতোদিনের তৃষ্ণা মিটাতে লাগল প্রেয়সীর ঠোঁটের সুধাপাণ করে।আরাবীও স্বামির ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে।আজ কতোদিন পর লোকটার উষ্ণ স্পর্শগুলো পাচ্ছে।দীর্ঘ চুম্বনের পর সরে আসে জায়ান।আরাবী চোখ বন্ধ করে জায়ানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে রাখল। জায়ান নরম গলায় বলে, ‘ আ’ম সরি আরাবী।আসলে এতোদিন পর…..!’

‘ চুপ করুন।’ আরাবী ফিসফিস করে বলল।তারপর মাথা উঠিয়ে তাকাল জায়ানের দিকে।জায়ান স্পষ্ট আজ আরাবীর চোখে নেশা দেখতে পাচ্ছে।আরাবী যে আজ ওকে চাইছে তা জায়ান খুব ভালোভাবেই জানে।জায়ানের নিজেরও মন চাইছে আজ মেয়েটাকে খুব করে ভালোবাসতে।কিন্তু মেয়েটা অসুস্থ।হাতটা যাও ঠিক হয়েছে পা’টা এখনও ঠিক হয়নি।যদি ব্যাথা পায়।ভয় হয় জায়ানের।জায়ান মনকে শক্ত করে। সরে আসতে চায় আরাবীর কাছ থেকে।তবে যেতে পারে না। তবে যায় জায়ান।তাকিয়ে দেখে আরাবী ওর শার্টটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রেখেছে।মাথা নিচু করে আছে আরাবী।জায়ান ঢোকের পর ঢোক গিলল।এই মেয়েটা কেন বুঝছে না।ও এমন করলে জায়ানও নিজেকে সামলাতে পারবে নাহ।জায়ান ধীরে বলে, ‘আরাবী তুমি….!’

জায়ানকে থামিয়ে দিলো আরাবী।হাশফাশ করছে মেয়েটা। ও তো মেয়ে কি করে মুখ ফুটে এই কথা বলবে।যে আজ ও চাইছে নিজের স্বামির ভালোবাসা।আরাবী লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।থেমে থেমে বলে, ‘ আ..আপনি।প্লিজ এভাবে…মানে আমি….!’

জায়ান হাত টেনে আরাবীকে বুকে টেনে নিলো।মেয়েটা যেহেতু আজ এতো করে ওকে চাইছে। তো ও নিজেও আর দূরে থাকবে না।জায়ান আরাবীর কানে ফিসফিস করে বলে, ‘ স্বামির সোহাগ এতো করে চাইছো।সেটা মুখ ফুটে বলতে এতো সমস্যা কিসের?’

লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল আরাবীর।লোকটার এই লাগামছাড়া কথাবার্তা কোনদিনও বন্ধ হবে নাহ।জায়ান আরাবীকে বুক থেকে সরিয়ে দিলো।তারপর ধীরে আরাবীকে বিছানায় সুইয়ে দিলো।আরাবী নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে জায়ানের দিকে।জায়ান নেশাক্ত চোখে আরাবীর সর্বদেহে চোখ বুলাচ্ছে।আরাবীর আকর্ষনীয় নারিদেহের বাঁক স্পষ্ট ফুটে উঠেছে শাড়ির প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে।জায়ান হাত রাখল শার্টের বোতামে আস্তে আস্তে খুলে শার্টটা ছুড়ে ফেলে দিলো।আরাবী জায়ানের উন্মুক্ত দেহ দেখে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। লোকটার আকর্ষনীয় সুদর্শন শরীরটা ওকে ভীষনভাবে টানে।জায়ান আরাবীর দেহের উপর নিজের শরীরটা এলিয়ে দিলো।তবে পুরো ভাড় ছাড়ল নাহ।মেয়েটা যদি ব্যাথা পায়।মুখ নামিয়ে আনল আরাবীর কানের কাছে। নেশাক্ত গলায় বলে, ‘ তুমি জানো তুমি বৃষ্টিস্নাত কাঠ গোলাপের মতোই অনন্য অসাধারণ একজন।যাকে আমি আমার হৃদয়ের রানির আসনে বসিয়েছি।আমার রানি আজ আমার ভালোবাসায় সিক্ত হতে চেয়েছে।আমি কি করে তাকে ফিরিয়ে দেই?আজ আমি না হয় তোমাতেই বিলীন হয়ে যাই।’

আরাবী এক ঝটকায় এসে জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে জায়ানকে কাছে টেনে আনল।তারপর মুখ গুজে দিলো জায়ানের কাধে।জায়ান আলত হাসল।মেয়েটা এতো লজ্জাবতী।জায়ান একটুখানি বেষামাল কথা বললেই লজ্জাবতী লতার ন্যায় গুটিয়ে যায়।জায়ান আরাবীর কানের পিঠে চুমু এঁকে দিলো।তারপর চুমু খেলো আরাবীর গালে।জায়ান কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,’ বৃষ্টি যেভাবে কাঠ গোলাপকে ছুয়ে দেয়। আমিও তোমাকে সেভাবেই কাছে টেনে নেব।’

আরাবীও লাজুক গলায় প্রতিত্তরে বলে, ‘ আপনার কাঠগোলাপ আপনার অপেক্ষায়।আপনার প্রেমের বৃষ্টিতে তাকে সিক্ত করে দিন।’

জায়ান আরাবীর গলার ভাজে মুখ গুজে দিলো।উষ্ণ চুমুর বর্ষনে সিক্ত করে তুলল আরাবীকে।জায়ানের ভালোবাসায় মাতাল আরাবী।খামছে ধরল জায়ানের পিঠ।এতে যেন জায়ানের ভালোবাসার তীব্রতা আরো বেড়ে গেলো।চুমুতে চুমুতে ভড়িয়ে তুলল আরাবীকে।আজ অনেকদিন পর প্রেমের বর্ষনে দুজন দুজনের সাথে সিক্ত হতে লাগল।ভালোবাসার নদীতে ভাসতে
লাগল দুজনেই।
______________
মিসেস হোসনে আরা রোজির সামনে বসে আছে জায়ান।হোসনে আরা রোজি হলেন একজন গাইনী বিষেষজ্ঞ ডক্টর।তিনিই হলেন ইফতির ফ্রেন্ডের মা।যে জায়ানের সাথে পার্সসোনালি দেখা কর‍তে চেয়েছেন।জায়ান গম্ভীর কণ্ঠে তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ মিসেস হোসনে আরা রোজি আমি কি জানতে পারি ঠিক কি কারন যে আপনি আমায় এতো পার্সসোনালভাবে ডেকেছেন।’

নড়েচড়ে বসলেন মিসেস রোজি।চোখের চশমাটা ঠিক করে নিয়ে ধীর গলায় বলে, ‘ আমি যেটা বলব মন দিয়ে শুনবেন।আমি সব কিছু সোজাসাপটা বলব।কোন বাজে কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাইছি না আপনার।’
‘জি বলুন।’
‘ ৫ জুন ২০০০ সাল রাত্রির দেঢ়টা বাজে একজন মহিলাকে আমার কাছে আনা হলো।তিনি তখন প্রসব বেদনায় ছটফট করছিলেন।আমি দ্রুত তাকে এডমিট করে নিলাম।যে লোকটা তাকে এনেছিল তাকে জিজ্ঞেস করলাম সে কি হয় পেসেন্টের।তিনি জানালেন তিনি নাকি পেসেন্টের বাড়িতে কাজ করেন।আমি আরও ফ্যামিলি মেম্বারদের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন পেসেন্টের হাজবেন্ড আসছে।আমি বেশি কিছু ভাবলাম নাহ দ্রুত পেসেন্টের কাছে গেলাম।কারন পেসেন্টের অবস্থা তখন ভীষণ খারাপ।আমি তার ডেলিভারি করালাম।ফুটফুটে একটা মেয়ে বাবুর জন্ম দিলো সে।কিন্তু আফসোস তাকে বাঁচাতে পারলাম নাহ আমি।নিজের বাচ্চাকে সহি সালামতে দুনিয়াতে আনতে পারলেও।তাকে চলে যেতে হলো দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে।আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে বাহিরে আসতেই দেখলাম একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে।বুঝলাম এটাই হয়তো মহিলাটির হাজবেন্ড।কিন্তু ব্যাক্তিটির কাছে গিয়ে দেখলাম এ আর কেউ না আমারই বন্ধু।ও বাংলাদেশ থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করে হায়ার এডুকেশনের জন্যে আমেরিকায় চলে গিয়েছিল।আমি অবাক হয়ে গেলাম।ও নিজেও আমায় দেখে বেশ অবাক হয়েছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম সে এখানে কেন?ও নিজেও আমায় জানাল ওর স্ত্রীর নাকি এই হাসপাতালে ভর্তি।আমি বুঝলাম আমি যেই আন্দাজ করলাম তাই ঠিক।আমি ওর কোলে ওর মেয়েকে দিয়ে জানালাম যে এটাই ওর সন্তান। যে সদ্য জন্ম নিয়েছে।ওর চোখে মুখে আমি বাবা হবাএ সামান্যতম খুশি দেখলাম নাহ।আরও বেশি আশ্চর্য হলাম।যখন আমি হতাশ গলায় বললাম যে ওর স্ত্রী আর নেই।ও এতে কষ্ট পাবে তো দূর।ও চেহারা দেখে বুঝলাম ও এতে যেন খুশিই হয়েছে।হাসপাতাল তখন নিরিবিলি।এই নিরিবিলি হাসপাতালে ওই পাষাণ ব্যাক্তিটার কথায় যেন বজ্রপাত হলো।ও যা বলল তা আজ পর্যন্ত কোন সন্তানের বাবাকে আমি বলতে শুনলাম নাহ।ও আমার হাত ধরে বলে ওই বাচ্চাটাকে মেরে ফেলার জন্যে।এতে নাকি ও আমায় মোটা অংকের টাকা দিবে।আমি রাজি হলাম না।ও আমায় আমাদের বন্ধুত্বের দোহাই দিল।আমায় ও অনেক টাকার অফার দিল।আমি নিজেও অপরাধি তখন আমি টাকার নেশায় অন্ধ হয়ে গেলাম।লোভে পরে রাজি হয়ে গেলাম।একজন ছেলেকে টাকা দিয়ে ওই সদ্যজাত জন্মানো মেয়েটাকে কোন আর্বজনার স্তুপে ফেলে দিয়ে আসতে বললাম।কুকুর শিয়ালরা এসে মেরে ফেলবেই নেহ ওই বাচ্চাকে।আমার বন্ধু ওর স্ত্রীর মরা লা’শ নিয়ে চলে গেলো।সব ব্যবস্থা আমিই করে দিলাম।হাসপাতাল থেকে সকল ডিটেইলস সব মুছে দিলাম।তবে তার কিছু ঘন্টা পর আমি শান্তিতে থাকতে পারলাম নাহ।অনুশোচনায় আমার হৃদয় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।কারন তখন আমিও যে দুমাসের গর্ভবতী ছিলাম।আমি কি করে পারলাম এমনটা করতে।আমি পাগলের মতো ছুটে গেলাম ওই ছেলের কাছে।যাকে ওই বাচ্চাটাকে দিয়েছিলাম যাতে ও ফেলে দিয়ে আসে।ওই ছেলে আমায় জানাল ওই বাচ্চাটাকে নাকি কোন ভদ্রলোক রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে চলে গিয়েছে।শুনে বেশ অবাক হলাম।সাথে খুশিও।যাক বাচ্চাটা তাহলে বেঁচে তো আছে।আমি পরেরদিনই আমার বন্ধুর কাছে গেলাম।ওকে সব টাকা ফিরিয়ে দিলাম।কিন্তু ওকে বললাম নাহ ওর মেয়ে বেঁচে আছে।কারন ও যদি এটা জানতে পারে তাহলে বাচ্চাটাকে ও আবার মারার চেষ্টা করবে।আমি আর ওর সাথে বেশি কথা বললাম নাহ।চলে আসলাম ওখান থেকে।কিন্তু তবুও আমার অপরাধবোধ যেন আমার প্রতিমুহূর্তে গিলেগিলে খাচ্ছিল।২৩ টা বছর, ২৩ টা বছর আমি যন্ত্রনায় ছটফট করেছি।তবে আমি জানতাম না উপরওয়ালা আমায় প্রয়েশ্চিত্ত করার জন্যে একটা সুযোগ দিবেন।ইফতি আমায় যখন এই বিষয়ে জানাল তখন আমি ওকে তারিখটা জিজ্ঞেস করতেই আমি পুরোপুরি সিউর হয়ে গেলাম।তাই তো তোমার সাথে দেখা করার জন্যে ছটফট করছিলাম।আজ তোমায় সব জানালাম আমার মনটা হালকা হলো।এখন শুধু একবার ওই বাচ্চা মেয়েটাকে আমি একটু দেখতে চাই।ওর কাছে ক্ষমা চাইবো আমি।’

সবটা মন দিয়ে শুনল জায়ান।তবে বেশি কিছু বলল নাহ।কিন্তু ওর মনের ভীতর কি চলছে তা কেউ বুঝবে না।জায়ান শুধু শান্ত কণ্ঠে বলল, ‘ আপনার বন্ধুর নামটা জানতে পারি?’

‘ জি অবশ্যই।ওর নাম হলো রাশেদ শেখ।’

#চলবে________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।