হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব-৪২+৪৩

0
540

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪২
গাঢ় বেগুনি রংয়ের সুন্দর একটা গোল জামা পরেছে নূর।সাথে হালকা পাতলা একটু সাজগোজ করে নিয়েছে।ফাহিম আসবে বলে কথা।নূর মনের আনন্দে নেচে-কুঁদে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসল।উদ্দেশ্য নিচে বসারঘরে যাওয়া।নূর নিচে এসে দেখে ফাহিম এসে পরেছে।এবং বেশ ভদ্রলোকদের মতো বসে আছে।হাতে তার চায়ের কাপ।একটু পর পর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।নূর গিয়ে আরাবীর পিছনে দাঁড়াল।ফাহিম একবার নূরকে চোখের পলক দেখে নিয়ে আবার নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসল।মেয়েটাকে সুন্দর লাগছে।ফাহিম নিজের দৃষ্টি সংযত রাখার চেষ্টা করছে।কারন এখানে পরিবারের সবাই বসে।কিন্তু বেহা’য়া মন মানলে তো?সেই চোখ বার বার নূরের দিকে চলে যাচ্ছে।আর এই সুযোগেরই সৎ ব্যবহার করলো নূর।ফাহিম সবার সাথে কথা বলার ফাঁকে নূরের দিকে তাকাতেই নূর সবার অগোচরে খুব কৌশলে ফাহিমকে চোখ মেরে দিল।সাথে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখাতে ভুললো নাহ।ফাহিম সবেই চায়ের কাপে মুখ দিচ্ছিল।নূরের এহেন কান্ডে চা ফাহিমের নাকে মুখে উঠে গেল।কাশতে লাগল ফাহিম।সাথি বেগম দ্রুত এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল ফাহিমকে।ফাহিম তা দ্রুত পান করে নিল।সাথি বেগিম চিন্তিত কন্ঠে বললেন, ‘ ঠিক আছো তুমি বাবা?’

গলা খাকারি দিল ফাহিম।আঁড়চোখে আবারও নূরের দিকে তাকাল।মেয়েটা হাসছে।এই মেয়েটা হাড়ে হাড়ে বজ্জা’ত।কিভাবে ওকে সবার সামনে নাস্তানাবুদ করল।ফাহিম দৃষ্টি সরিয়ে এনে বলে, ‘ জি আন্টি।ঠিক আছি আমি।’

একটু থেমে আবারও বলে,’ একটু ওয়াশরুমে যেতাম আরকি।’
সাথি বেগম বলেন,’ হ্যা হ্যা বাবা। নূর তোমায় দেখিয়ে দিবে।তুমি যাও ওর সাথে যাও।’

সাথি বেগম নূরকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘নূর যাও ফাহিমকে নিয়ে যাও।’
‘ আচ্ছা আম্মু।’

ফাহিম উঠে দাঁড়ালো।নূর বলল,’ আসুন আমার সাথে।’

নূর আগে আগে যাচ্ছে।ফাহিম পিছে পিছে।সবার থেকে দূরে যেতেই ফাহিম আশপাশ ভালোভাবে পরখ করে নিল।নাহ কেউ নেই।সবাই বসার ঘরে আড্ডায় ব্যস্ত।এই সুযোগে ফাহিম নূরের হাত শক্ত করে ধরল।নূর একটু চমকালো।কিছু বলবে তার আগেই ফাহিম ওকে টেনেটুনে পাশেই একটা রুমে নিয়ে গেল।খুব দ্রুততার সাথে দরজাটাও আটকে দিল।নূর হকচকিয়ে বলে, ‘ কি হয়েছে?কি করছেন?’

ফাহিম চোখ ছোটো ছোটো করে তাকাল।তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,’ ওখানে সবার সামনে এমন করলে কেন?’
‘ কি করেছি আমি?’ ইনোসেন্ট একটা ভাব নিয়ে বলল নূর।যেন সে কিছুই করেনি।একেবারে ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে নাহ।ফাহিম মাথার পিছনে হাত বুলাল।ঠোঁট কামড়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে।হুট করে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের নিকট নিয়ে আসল।আচমকা এমন করায় ভয় পেয়ে গেল নূর।চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল ফাহিমের দিকে।পলক ঝাপ্টে কাঁপা গলায় বলে, ‘ কি কর..করছেন?’

বাঁকা হেসে ফাহিম বলে, ‘ কেন তুমি যা করছিলে?’
‘ কি করেছি আমি?’ ভয়ে ভয়ে বলে নূর।
‘ তখন যা তুমি ওখানে করছিলে।দূর থেকে ইশারা দিচ্ছিলে।আর সেটাই আমি প্রেক্টেকেলি এখন তোমাকে করে দেখাবো।’
‘ দেখুন এমন কিছুই নাহ।’
‘ কিছুই নাহ?’
‘ নাহ।’
‘ আমি তো জানি অনেক কিছু।’
‘ কি অনেক কিছু?’
‘ দেখবে?’
‘ নাহ।’
‘ আমি তো দেখাব।’

বলতে বলতেই ফাহিম ঝুকে আসল নূরের কাছে।চোখ বন্ধ করে নিল নূর।ফাহিম নূরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ‘ তুমি যে আমায় ঠোঁটের ইশারায় চুমু দেখালে।এখন তাই আমি তোমায় চুমু খাবো।’
‘ নাহহহহ!’ চিৎকার করে উঠল নূর।

ফাহিম দ্রুত নূরের মুখ চেপে ধরল।আতংকিত গলায় বলে, ‘কি করছ?সবাই শুনবে।’
‘ উম।’
‘ ওহ সরি।’

ফাহিমের নূরের মুখের থেকে হাত সরিয়ে দিল।ফাহিম হাত সরাতেই নূর জোড়ে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস নিল।তারপর বলে, ‘আ..আপনি যে এতো অস’ভ্য তা তো আগে জানতাম নাহ।অস’ভ্য কোথাকার।’

নূরের বলার ধরন দেখে হেসে দিল ফাহিম।হাসি থামাতেই বলে,’ এইটুকুইতে আমাকে অস’ভ্য উপাধি দিয়ে দিলে?এখনও তো তোমার সাথে আরও কতো কি করা বাকি।’
‘ ক…কি করবেন?’

বাঁকা হেসে ফাহিম বলে,’ সেটা নাহয় বিয়ের পরেই দেখাব।’
নূরকে চোখ মেরে সরে আসল ফাহিম।নূরের মুখশ্রী জুড়ে লালাভ আভা ছড়িয়ে পরল।মাথা নুইয়ে মুঁচকি হাসল ও।
‘ লজ্জা পেলে সুন্দর লাগে।’

কথাটা কানে এসে পৌছাতেই নূর দ্রুত চোখ তুলে তাকায়।কিন্তু তার আগেই ফাহিম দরজা খুলে চলে গিয়েছে।নূরও কয়েক মিনিট স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।পর পর ছুট লাগাল বসারঘরের দিকে।
***
রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে জিহাদ সাহেব,লিপি বেগম,আর ফাহিম যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিলো।তাদের শতো বলেও থাকার জন্যে রাজি করানো গেলো নাহ।ওনারা যেতেই সবাই টুকাটাকি কথাবার্তা বলে যার যার রুমে ঘুমাতো চলে গেল।সবাই যেতেই জায়ান এইবার আরাবীকে কোলে তুলে নিয়েই ঘরে আসল।আরাবী সোফায় বসিয়ে দিয়ে বিছানা করে নিল।তারপর আরাবীকে আবারও কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল।আরাবীকে ফ্রেস করিয়ে নিয়ে বিছানায় রেখে আসল।তারপর নিজেও ফ্রেস হয়ে আসল জায়ান।রুমের লাইট নিভিয়ে আরাবীর পাশে গা এলিয়ে দিল।সাথে সাথে বুকের উপর নরম দেহের অস্তিত্ব টের পেয়ে হাসল জায়ান।দুহাতে আঁকড়ে ধরে আরাবীর দেহটা জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে।প্রশ্ন করল,’ ঘুমাও নি যে?’
‘ বিকেলে ঘুমালাম নাহ কতোক্ষন?অনেক্ষন ঘুমিয়েছি।ঘুমটা ভালো হয়েছে।তাই এখন ঘুম আসছে নাহ।’ বলল আরাবী।

আরাবীর কথার পরিপেক্ষিতে দুষ্টু হেসে জায়ান বলে,’ এতোদিন পর স্বামির আদর ভালোবাসা পেয়েছ।ঘুম তো ভালো হবেই।’

আরাবী জায়ানের বুকে আলতো হাতে আঘা’ত করে করল।মুখ ফুলিয়ে বলে, ‘ অস’ভ্য লোক।’

শব্দ করে হেসে দিল জায়ান।আরাবী তা দেখল চেয়ে চেয়ে।পলক ঝাপ্টালো না একটুও।নির্নিমেষ দৃষ্টি তাক করে রাখল জায়ানের দিকে।আরাবী সেই দৃষ্টি লক্ষ্য করে হাসি থামাল জায়ান।নরম চোখে চেয়ে বলে, ‘ কি দেখছ?’
‘ আপনাকে!’ সরল গলায় বলল আরাবী।’
‘ আমাকে?’
‘ হুম,এভাবে আর কারো সামনে আপনি হাসবেন নাহ।’

ভ্রু-কুচকালো জায়ান আরাবীর এমন কথায়।প্রশ্ন করে,’ কেন?কি হয়েছে?’
‘ কিছু না শুধু হাসবেন নাহ।’
‘ আরেহ বাবা কারনটা তো বলবে।’

জায়ানের বুকে মুখ গুজে দিল আরাবী।তরতরিয়ে বলে উঠল,’ এইভাবে হাসলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে।ভয়ংকর সুন্দর যাকে বলে।এইযে আপনার হাসি দেখেই তো আমার বুকে চিনচিনে ব্যথা হয়।এই ব্যথাটা আমার ভীষণ ভালোলাগে।তাই আমি চাই আপনি কারো সামনে এইভাবে হাসবেন নাহ।আর কেউ যেন এই ব্যথার উপলব্ধি না করতে পারে।’

আরাবীর আবেগঘন কথায় মন জুড়িয়ে যায় জায়ানের।আরাবীর মাথায় হাত রেখে নম্র গলায় বলে,’ হাসব নাহ।কখনও হাসব নাহ।আমার কাঠগোলাপ যা অপছন্দ করে তা আমি কখনই করব নাহ।’

জায়ানের কথায় ঘুম ঘুম চোখেই হাসে আরাবী।জায়ানের বুকে মাথা রাখলেই যেন শান্তিতে চোখ বুজে আসে আরাবীর।জায়ানের আলতো হাতে চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দেয়।ঘুম না এসে উপায় আছে।আরাবীও ঘুমিয়ে পরল।জায়ান মৃদ্যু হাসল ঘুমন্ত আরাবীকে দেখে।আরাবীর এলোমেলো চুলগুলো আঙুলের সাহায্যে গুছিয়ে দিল।আরাবীর কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিল।এই মেয়েটা তার জন্যে যে কি সেটা ও কাউকে বলে বুজাতে পারবে নাহ।জায়ান মৃদ্যু কন্ঠে বলে উঠল,’তোমার মনের সকল আশাআমি পূরন করব কাঠগোলাপ।জানি এতে তুমি কষ্ট পাবে।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।এটা আমার করতেই হবে।তৈরি থাকো জান।খুব শীঘ্রই সকল সত্যি সম্মুখীন হবে তুমি।তবে চিন্তা করো না।এই আমি সবসময় তোমার কাছে ছিলাম,আছি,থাকব।ভালোবাসি জান। অনেক ভালোবাসি।আই লাভ ইউ।’

#চলবে__________

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৩
এখন পুরোপুরি সুস্থ আরাবী।নিজের সব কাজ নিজেই কর‍তে পারে।কোন সমস্যা হয় নাহ।তাই জায়ানও আজ দুদিন হয়েছে অফিস জয়েন করেছে।অবশ্য যেতে চায়নি।আরাবীই ঠেলেঠুলে পাঠিয়েছে।কতো আর ঘরে বসে থাকবে? জিহাদ সাহেব,মিহান সাহেব তো বয়স্ক মানুষ।বেচারা ইফতির উপরেই প্রেসার পরে যায় বেশি।আর তাছাড়া আলিফা আর ইফতির নতুন নতুন প্রেম।কয়েকদিন পর বিয়েও হবে।অথচ ওর কারনে তারা ঠিকঠাকমতো যে একে-অপরের সাথে একটু ফোনালাপও করতে পারে না তা বেশ বুঝে আরাবী।আলিফা মেয়েটা যতোই নিজের মন খারাপ লুকিয়ে রাখুক।আরাবী ঠিকই বুঝে যায়।আরাবী আজ ভার্সিটি যাবে।কতোদিন হয়েছে যায় নাহ। বাড়িতেই জায়ান সব নোটসগুলো এনে দেয়।আবার আলিফাও মাঝে মাঝে এসে ওকে হেল্প করে।
ভার্সিটিতে এসে দেখে আলিফা আগেই দাঁড়িয়ে ভার্সিটর বড় মেহগনি গাছের নিচে।আরাবী এগিয়ে গেলো আলিফার কাছে।আলিফা ওকে দেখেই জড়িয়ে ধরল।ক্ষানিকটা সময় পর আরাবীকে ছেড়ে দিয়ে বলে,’ কেমন আছিস তুই?’
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোর কি খবর?’
‘ আমিও ভালো আছি।তোর শরীরের অবস্থা কেমন?এখনও কোথায় ব্যথা ট্যথা আছে নাকি?’
‘ নাহ নেই।তাই তো উনি আমায় আসতে দিলেন ভার্সিটিতে।নাহলে তো বিছানা থেকেও নামতে দেয় নাহ।’
‘ বাহ বাহ কত্তো প্রেম,কত্তো ভালোবাসা।’

আরাবী চোখ ছোটো ছোটো করে তাকাল।বলল,’ ওহ?আমার সময় এমন করছিস।তুই মনে হয় ধোঁয়া তুলসীপাতা। ইফতি ভাইয়ার সাথে মনে হয় অন্য মেয়ে প্রেম করে।’

জিভ কাটল আলিফা।বলল,’ আরেহ কি বলছিস।এমন কিছুই নাহ।’
‘ কেমন কিছু তা আমি ভালোভাবেই জানি।দুজনে যে বিয়ের জন্যে পাগল হয়ে গিয়েছ তা খুব ভালোভাবেই জানি।’ তিপ্পনি কাটল আরাবী।

আরাবীর কথায় তেতে উঠল আলিফা।বলে,’ নিজের কি হ্যা?নিজে তো বিয়ে করে দিব্বি জামাই নিয়ে সুখে আছ।আমি যে তোমার বেষ্টফ্রেন্ড আমার কথা একটু ভাবিস তুই?’
‘ ভাবি না কে বলল?আমিই তো সবচেয়ে বেশি ভাবি।’
‘ কি ভাবিস তুই?’
‘ এইযে তুই যেন ইফতি ভাইয়ার সাথে ভালোভাবে প্রেম করতে পারিস তাই তো নিজের বরকে ঠেলেঠুলে অফিসে পাঠালাম।’ বলল আরাবী।

আলিফা এইবার চুপ করে রইল।আরাবী বলে,’ আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।তাই উনাকে বলব যাতে খুব শীঘ্রই তোদের বিয়ের ডেইট ফিক্স করেন।খুব তাড়াতাড়িই তোদের বাড়িতে যাবো আমরা।তৈরি থাকিস।’

বিয়ের কথা শুনে লজ্জা পেল আলিফা।প্রতিত্তরে মুঁচকি হাসল। তা দেখে আরাবী বলে,’ ইস,লজ্জায় টমেটো হয়ে গেল একদম।’
‘ তুই বুঝি লজ্জা পাসনি?জায়ান ভাইয়াকে দেখে তো পারলে লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যাস।’ আরাবীকে খোটা দিতে পেরে গর্বে বুক ফুলে গেল আলিফার।
‘ আর তুই বুঝি তা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছিস?’
‘ আমি কেন লুকিয়ে দেখতে যাব?চোখের সামনেই তো সব ঘটেছে।’
‘ হয়েছে চুপ কর।’

তুই বান্ধবী এইভাবে খুনশুটি করে ভার্সিটির সময়টুক পার করল।ভার্সিটি ছুটি হতেই দুজনেই বাড়ি ফিরে যায়।বাসায় এসে দেখে আরাবী বাড়িতে বেশ তোড়জোড় করে আয়োজন চলছে।কি হচ্ছে ব্যাপারটা বুঝল না আরাবী।তাই সোজা রান্না ঘরের দিকে এগোলে।দু শাশুড়ি মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে।রান্না ঘরে যেতেই দেখে তারা খাবারের বেশ জমজমাট আয়োজন করছেন।আরাবী সাথি বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘ আজ এতো আয়োজন কিসের মা?মানে আজ কি কোন বিশেষ দিন?’
সাথি বেগম ইলিশ মাছ ভাজছিলেন।ছেলের বউয়ের প্রশ্ন শুনে তিনি হেসে বলেন, ‘ না কোন বিশেষ দিন নাহ।তোমার ফুপা শশুড় আসছেন আমেরিকা থেকে।অনেক বছর হয়েছে তিনি আসেন নাহ।অনেক বছর মানে অনেক।মিথিলা আপা আর অহনা তো সেই জন্যেই আমেরিকা ব্যাক করেছিল।মূলত তোমার বাবাই আপাকে বলেছিল তারা যেন ভাইয়াকে নিয়েই আবার এই বাড়িতে আসেন।জানো তো একটা বিষয় মিথিলা আপা যেমনই হোক ভাইয়া কিন্তু অনেক ভালো।একদম খাটি মনের মানুষ।’

সাথি বেগমের কথায় বেশ ভালো লাগল আরাবীর।সাথি বেগম যেহেতু বলেছেন তাহলে নিশ্চয়ই ভালো মনের মানুষ হবে লোকটা।আরাবী হাসিমুখে বলে,’ মা আমি কোন হেল্প করব?’

মিলি বেগম দ্রুত পায়ে ওর কাছে এসে বলে,’ কোন হেল্প লাগবে না তোমার। তুমি যাও রেস্ট কর।’
‘ টানা কতোদিন রেস্ট করেছি সেই হিসেব করেছেন আপনারা?আর কতো কাকিমা।ভারি কোন কাজ করব না তো।এইতো হালকা পাতলা কিছু হেল্প করি।’

দুজন হার মানলেন আরাবীর কাছে।মিলি বেগম বলেন, ‘ লেবুগুলো কেটে শরবত বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দেও।তারপর গেস্টরুম দুটোতে গিয়ে দেখে আসো একটু ঠিকঠাকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে কিনা।’
‘ আচ্ছা কাকিমা।’

আরাবী মিলি বেগমের কথা মতো কাজ করতে চলে গেল।শরবত বানানোর কাজ শেষ করে আরাবী গেলো গেস্টরুমের পরিষ্কারের কাজ কতোটুক হয়েছে তা দেখার জন্যে।গিয়ে দেখল কাজ প্রায় শেষ তাও আরেকটু বলে কয়ে সবাইকে দ্রুত কাজ শেষ কর‍তে বলল আরাবী।সব কাজ শেষ করে আবার রান্নাঘরে ফিরে আসল।বলল,’ সব কাজ শেষ আম্মু,কাকিমা।আর কিছু বাকি আছে?যা আমি কর‍তে পারব?’
‘ নাহ, আর কিছু বাকি নেই।এইবার তুমি যাও ফ্রেস হয়ে আস।তোমার বাবা,কাকা,জায়ান আর ইফতি বোধহয় এখনই এসে পরবে।’

অবাক হলো আরাবী শুনে। জায়ানও যে তাদের এয়ারপোর্টে গিয়ে রিসিভ করতে যাবে তা তো বলেনি আরাবীকে। এমনকি যে তার ফুপা আসবে এটাও জানায়নি।যাক অতোশতো ভাবল নাহ আরাবী।মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলে দিল।তারপর ফ্রেস হতে চলে গেল।বাড়িতে মেহমান আসবে তাই সুন্দর দেখে একটা বেবি পিংক কালারের জামদানি শাড়ি পরল ফ্রেস হয়ে।কানে,গলায়,হাতে স্বর্ণের গহনা পরে নিল।চুলগুলো বেনি করে নিল আরাবী।এমন সময় রুমে প্রবেশ করল জায়ান।আরাবী আয়নায় জায়ানকে দেখেই উঠে দাঁড়াল।জায়ান খেয়াল করেনি আরাবীকে। আরাবী কাছে যেতেই ওকে দেখে থমকে যায় জায়ান।পরক্ষনে মুঁচকি হেসে বলে,’ ভীষণ সুন্দর লাগছে।’
‘ ধন্যবাদ।’ লাজুক হেসে বলে আরাবী

তারপর জায়ানের গায়ের কোট খুলতে সাহায্য করল। জায়ান বলে,’ আজ ভার্সিটির দিন কেমন কাটল।’

আরাবী হেসে দিয়ে বলে,’ ক্লাস করলাম কোথায়?আজ দু বান্ধবী চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছি।’
‘ এইজন্যেই কি তোমাকে আমি ভার্সিটি যাওয়ার পারমিশন দিয়েছি?’
‘ আহ, এমন করছেন কেন?আজ কতোদিন পর ভার্সিটিতে গেলাম।তাই আড্ডা দিয়েই দিন কাটিয়েছি।’ নিজের দোষ ঢাকতে তা বুঝার জন্যে বুঝালো আরাবী
‘ হয়েছে আর বলতে হবে নাহ।’
‘ হুম যান ফ্রেস হয়ে আসুন।’
‘ ফুপা এসেছে।’ আচমকা বলল জায়ান।

আরাবী মুঁচকি হেসে বলে, ‘ শুনেছি আমি।মা বলেছেন।আপনি কি মনে করেছেন আপনি না বললে মনে হয় আমি জানতে পারব নাহ।’

বলেই আরাবী আলমারির দিক চলল জায়ানের জামা কাপড় বের করে দিবে বলে।তার আগেই জায়ানের শীতল কন্ঠের ডাকে থেমে গেল।
‘ আরাবী?’
‘ হুঁ!’
‘ যদি কোনদিন এমন কোন সত্যের সম্মুখীন হও তুমি।যা তুমি কখনও কল্পনাও করোনি।তাহলে কি করবে তুমি?’

জায়ানের হঠাৎ এমন গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথাগুলো শুনে থমকে গেল আরাবী।হঠাৎ জায়ান এমন একটা কেন বলল?কি এমন কারন? আরাবী বেশ ঠান্ডা গলায় বলে,’ হঠাৎ এসব বলার মানে কি? কেন আপনি এমন কথা বলছেন?’

জায়ান থমথমে গলায় বলে, ‘ আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দেও। ‘
‘ কিছুই করব নাহ।হয়তো কষ্ট হবে।কিন্তু ভেঙে পরবো নাহ। আর বাদ বাকি রইল যা হবার হবে।আপনি আছেন তো।’

জায়ানের মনটা শান্ত হলো আরাবীর কথায়।আরাবী কাছে গিয়ে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,’ হুম।আমি আছি তোমার কাছে পাশে সবসময়, আজীবন।’
‘ আমি জানি।’

#চলবে_________
ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।