হৃদয়ের দখিন দুয়ার পর্ব-২৬+২৭

0
361

#হৃদয়ের_দখিন_দুয়ার
#পর্ব-২৬
ঝিলিকের জীবন এখন আর দশ টা সাধারণ বিবাহিত মানুষের মতো। যে ব্যাপার টা নিয়ে আক্ষেপের শেষ ছিলো না সেটা এখন ঘুচেছে। ইশরাক নিজে থেকেই ও’কে কাছে টেনেছে। এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কিছুই হতে পারে না ঝিলিকের জীবনে। কতো মানুষ কতো কথা বলে ও’কে। মেয়েদের জীবনে সব চেয়ে বড় অলংকার নাকি সেল্ফ রেসপেক্ট। নিজের চেয়ে আপন আর কেউ হয় না। অথচ ঝিলিক সবসময় সবার আগে ইশরাক কে রেখেছে। কতো বড় বড় স্বপ্ন থাকে মানুষের জীবনে। অথচ ওর স্বপ্ন ছিলো ইশরাকের বউ হবার। ছুটির দিনে শাড়ি পরবে, খোপায় বেলী ফুলের মালা ঝুলিয়ে ইশরাকের হাত ধরে সোজা একটা রাস্তা নির্ভার হয়ে পাড়ি দিবে। শীতের দিনে যত্ন করে বানিয়ে খাওয়াবে ইশরাকের পছন্দের ভাপা, পুলি পিঠা। ঝিলিক কখনো কারোর মতন হতে চায় নি। ও সবসময় ই চেয়েছে নিজে যেমন আছে তেমন থাকতে।

ইশরাকের পরিবর্তন এসেছে একটু আধটু আবদার করলে এখন শোনে। খালার রান্না ছেড়ে ঝিলিকের ঝাল ঝাল রান্নাগুলো বিনা অভিযোগে খায়। শুধু মাঝেমধ্যে ঝিলিক কে মনে করিয়ে দেয়, এসব তোর করতে হবে না। তুই পড়াশোনায় মন দে।

ঝিলিক আজ শাড়ি পরেছে। বেগুনী রঙের সিল্কের শাড়িটা ও’কে নাতাশা পাঠিয়েছে। শাড়ি পরে চোখে একটু কাজল পরলো, ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক লাগিয়ে নিলো পিঙ্ক ভাব আনার জন্য। চুলগুলো খোলাই রাখলো। বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলো ইশরাকের। আজ ওর বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে। সেই যে একদিন বেড়াতে গিয়ে মন খারাপ হয়েছিল তারপর আর যাওয়া হয় নি।

ইশরাক আজ ফিরলো দেরি করে। ঝিলিক কে শাড়িতে দেখে কিছু বলল না। ঝিলিক বলল,

“তুমি বেশী টায়ার্ড? চলো বাইরে থেকে চা খেয়ে আসি। ”

ইশরাক ক্লান্ত ছিলো ভীষণ। তবুও আজ ঝিলিক কে না বলল না। ও’কে ঠিকঠাক সময় দেয়া হয় না ইশরাকের। ব্যস্ততা আসলে অজুহাত, শত ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় বের করা যায় যদি মানুষ টা প্রায়োরিটি লিস্টে থাকে।

রাস্তায় বেরিয়ে ঝিলিকের মন ভালো হয়ে গেল। এই বছর শীত কখন এলো আর কখন চলে গেল টেরও পেল না। বসন্ত চলছে এখন। ব্যস্ত শহর ঝিলিকের ভীষণ পছন্দের। চারদিকে কতো মানুষ। কেউ কারোর দিকে ফিরেও তাকায় না। তবুও একটা অদ্ভুত ভালোলাগা।

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খেল। ঝালে মুখ পুড়িয়ে তারপর খেল বেশী চিনি দেয়া চা। এরপর রিকশা করে গেল স্টারে। ঝিলিক অবশ্য যেতে চাইছিল না। ইশরাক ই আগ্রহ দেখালো। কেন যেন আজ ঝিলিক কে ওর খুশি দেখতে ইচ্ছে করলো। কেন! এই কেন’র উত্তর তো নেই। তবে কী ইশরাক বাঁধা পড়ছে ঝিলিকের কাছে। বৈবাহিক বন্ধন নাকি চিরন্তন। হবে হয়তো।

***
কথায় আছে এক দুয়ার বন্ধ হলে আল্লাহ মানুষের জন্য আরও দশটা দুয়ার খুলে দেয়। নাতাশা বহুদিন পর স্কুলের বন্ধুদের খুঁজে পেল ফেসবুক গ্রুপ থেকে। সবাই অনেক আন্তরিকতাও দেখালো। এমনও অনেক ক্লাশমেট ছিলো যাদের সঙ্গে ওর অল্প কথা হতো তারাও ওর সঙ্গে এসে এখন আলাপ করছে। এতে যে লাভ টা ওর হয়েছে সেটা হলো শাড়ির পেজে রিচ বেড়েছে। মেয়ে বন্ধুদের সাথে সাথে ছেলে বন্ধুরাও তাদের পরিবারের মানুষজনের জন্য শাড়ি নিলো।

এতদিন ওর পেজ থেকে ছয় সাত জন পরিচিত রা শাড়ি নিতো। বেশ কিছু অপরিচিত কাস্টমার কিভাবে এসে জুটেছে ও জানেনা। অনলাইন বিজনেসের এই প্রতিযোগিতায় নাতাশার এক্সপেক্টেশন ছিলো এক পার্সেন্ট। কিন্তু এই মাসে হিসেব করে দেখলো ওর উনসত্তর টার মতো শাড়ি বিক্রি হয়েছে। এবার ওর কনফিডেন্স পারদের মতো বাড়তে লাগলো।

এরমধ্যে আরেকটা কাজের সুযোগ এলো। প্রকৃতি জানালো ওর বন্ধুদের খাবারের ভীষণ সমস্যা হচ্ছে। ওরা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে, ফ্যামিলি ছাড়া। কম খরচে ভালো মানের খাবার খুঁজছে। নাতাশা যদি ইন্টেরেস্টেড হয় তাহলে রান্না করে দিতে পারে। নাতাশা এই সুযোগটাও লুফে নিলো। যত ব্যস্ত থাকবে ততো ভালো। তাছাড়া ও এখন একটা ব্যাপার শিখেছে জীবন খুব অনিশ্চিত। কাল কী হবে জানে না, কাল ওর কাছে আদৌ কোনো অপরচুনিটি থাকবে কী না সেটা নিয়েও সন্দিহান। তাই যখন যা সুযোগ আসবে সেটা লুফে নিবে। একটা সুন্দর নিশ্চিত জীবন মেয়েকে দেয়াই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

***
অর্ণব ঘরে বসেই অফিস করছে। ঠিক সকাল সাড়ে নয়টায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে। মিড মর্নিং এ বিশ মিনিটের যে সময় পায় তখন দ্রুত এসে সুপ্রীতির জন্য ফল কেটে গুছিয়ে রাখে। লাঞ্চ টাইমে বসে থাকে সুপ্রীতির পাশে। অর্ণব ইতিমধ্যে বউপাগল খেতাব পেয়ে গেছে। সুপ্রীতি এই পাগলামী ভীষণ উপভোগ করে। বাবা হবার জার্নি যে সহজ নয় সেটা অর্ণব প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। এটাই হওয়া উচিত। সন্তান তো দুজনেরই। কঠিন এই জার্নি যদি দুজনে মিলে না পাড়ি দেয় তবে ভালোবাসা সমান কী করে হবে।

সুপ্রীতির সামনে বেশ কয়েক রকমের ভর্তা। আচারি মাংস, বেগুনের টক ঝাল। সব রান্না স্বপ্না করে পাঠিয়েছেন। একদিন পর পর ই এটাসেটা করে পাঠায়। প্রকৃতির কাছে শুনলো স্বপ্না ছোট কাঁথা সেলাই করছেন। সুপ্রীতির মন ভরে যায়। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে মা’কে ফোন করে বলতে, মা তুমি অন্যরকম ভালো। আমার ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে মনে যা অভিমান আছে সব ভুলে যাই।

সুপ্রীতি অর্ণবের অপেক্ষা করছে। অর্ণব শাওয়ার নিতে গেছে। বের হলে একসঙ্গে খাবে। অর্ণবের ফোন টা ওর কাছে রাখা। একটা জরুরী কল আসবে, ও’কে যেন ডেকে দেয়া হয় সেজন্য রেখে গেছে। ফোনে একটা টেক্সট আসলো। স্ক্রিনে নাম্বার টা দেখাচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট এসেছে। একটা ফটো পাঠানো হয়েছে। সুপ্রীতি কিছু একটা ভেবে টেক্সট ওপেন করলো। আরও একবার ওর আর ইশরাকের ছবি অর্ণব কে পাঠিয়েছে। এবার অন্য একটা নাম্বার থেকে। সুপ্রীতি তাকিয়ে রইলো ছবিটার দিকে। সেদিন ছিলো ইশরাকের জন্মদিন। সারা মুখে কেক মাখানো ইশরাকের। সুপ্রীতি ইশরাক কে জড়িয়ে ধরে তাকিয়ে আছে ক্যামেরার দিকে। ব্যক্তিগত এই ছবি ইশরাকের কাছে থাকাই সম্ভব শুধু। ইশরাক!

বিশ্বাস, অবিশ্বাসের অদৃশ্য বলয়ে আটকে থাকে সুপ্রীতি।

***
“হ্যালো নাতাশা। ”

নাতাশা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো। নীল টিশার্ট পরা, এক গোছা এলোমেলো চুলের এই লোকটাকে ও ঘটনাচক্রে চিনেছে। এই লোক সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট পরিচিত মুখ। থ্রিলার লেখক, এর বাইরে আরেকটা পরিচয় আছে। কিন্তু সে নাতাশাকে কী করে চিনলো। নাতাশা একবার লোকটার দিকে তাকালো, আরেকবার পালকের দিকে তাকালো। লোকটা পালকের সঙ্গে ইশারায় কথা বলছে, পালক হাসছে তাতে।

নাতাশা জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি আমাকে কিভাবে চিনেন?”

“সরি। চিনিনা তো। ”

“তাহলে জানলেন কী করে আমি নাতাশা। ‘

“আমি পালক কে চিনি। ফেসবুকে দেখেছি। ওর ছবি তুমি তুলে দাও? তোমার ছবি তোলার হাত খারাপ। ”

“আমাকে কেন স্টক করছেন?”

“উঁহু তোমাকে স্টক করছি না। কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়েছে। আমি কী পালক কে একটু কোলে নিতে পারি?”

“না। পালক অপরিচিত কারোর কোলে যায় না। ”

রুবাব হাত বাড়ালো। পালক দ্বিধান্বিত চোখে একবার মা’কে দেখলো। তারপর হাত বাড়িয়ে দিলো রুবাবের দিকে। রুবাব নাতাশার দিকে তাকিয়ে এভারেস্ট জয়ী হাসি দিলো।

নাতাশা অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে।

চলবে….

সাবিকুন নাহার নিপা

#হৃদয়ের_দখিন_দুয়ার
#পর্ব-২৭
“তোমার কী মনে হয়? এই কাজ টা কে করতে পারে?”

“জানিনা। ”

“যে করছে সে চাইছে তুমি স্ট্রেসে থাকো।”

সুপ্রীতি মনে মনে বলল, ইশরাক তো এমন ছিলো না। হয়তো এখন এমন হয়েছে। পরিস্থিতি মানুষ কে আমূল পরিবর্তন করে। অর্ণব আবারও বলল,

“সুপ্রীতি, ইশরাকের সঙ্গে তোমার লাস্ট কবে কথা হয়েছে। ”

“আমাদের এঙ্গেজমেন্ট এর তিন সপ্তাহ আগে। ”

“বিয়ের পর আর কথা হয় নি তো। ”

“না অর্ণব। সত্যি বলছি। ”

“আমি বিশ্বাস করছি তোমাকে। প্লিজ সুপ্রীতি তুমি স্ট্রেস নিও না। জাস্ট জানার জন্য জিজ্ঞেস করা। ”

সুপ্রীতি ঠোঁট ভেজালো। অর্ণব ব্যাপার টা সহজভাবে নিচ্ছে বলে ও এখনো ঠিক আছে। ঠিক একই জায়গায় অন্য কেউ থাকলে ব্যাপার টা অন্যরকম হতো। তবুও সুপ্রীতি সহজ হতে পারছে না। কোনো হাজবেন্ডের ই এই ব্যাপার টা ভালো লাগবে না। এক্স বয়ফ্রেন্ড এর সঙ্গে ক্লোজ ফটো মেনে নেয়া সহজ কোনো ব্যাপারও না। সুপ্রীতির সবচেয়ে বেশী অস্বস্তি হচ্ছে এই বিষয়ে অর্ণবের সঙ্গে কথা বলতে। অর্ণব কিছু একটা ভাবছে। সুপ্রীতিকে বলল,

“সুপ্রীতি, ইশরাক কী আমাকে চিনে?”

সুপ্রীতি মাথা নেড়ে না বলল। একটু ভেবে বলল,

“চেনার কথা নয়। নাতাশা আপু সম্ভবত সেরকম কিছু বলে নি। ”

“আচ্ছা। ”

“আমি কী আপুকে এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করব?”

“একদম না। এই ব্যাপার টা একদম ই পাত্তা দেব না আমরা। যত বেশী গুরুত্ব দেব, ততবেশী প্রভাব ফেলবে আমাদের জীবনে। আমি ধরেই নিচ্ছি যে এরকম অসংখ্য ছবি আরও আসবে। কারণ আমার তরফ থেকে রিয়েকশন না পাওয়া পর্যন্ত এটা চলতে থাকবে। ”

সুপ্রীতি অর্ণবের কথায় সায় দিলেও ওর ভালো লাগছে না। ব্যাপার টা স্টপ হোক এবার।

***
নাতাশা সেদিন রুবাব কে দেখে অবাক হলো। তারচেয়ে বেশী অবাক হলো পালকের খুশি হওয়া দেখে। সেদিনের চকলেট দেয়া লোকটা যে রুবাব সেটা বুঝলো, কিন্তু ও’কে কেন ফলো করছে। রুবাব নাতাশার সঙ্গে পরিস্কার করে কথাও বলে নি। পালক কে টেডি আর চকলেট কিনে দেবার সময় কঠিন গলায় বলেছিল,

“আমার মেয়ের এসবের দরকার নেই। প্লিজ এগুলো কিনে দিবেন না। ”

রুবাব স্বাভাবিক গলায় জবাব দিয়েছিল,

“প্লিজ বলার দরকার নেই নাতাশা। তোমাকে দিচ্ছি না তো। অবশ্য অনেক মায়েরাই আছে যারা মেয়ের চকলেট খেয়ে ফেলে। ”

নাতাশা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হয়েছে। পালক কে নিয়ে ফেরার পথে দেখলো মেয়ের মুখ হাসি হাসি। বাচ্চারা সহজেই বুঝতে পারে ভালোবাসা ব্যাপার টা। অপরিচিত একটা লোক, আদর করে একটা চকলেট দিয়েই মেয়ের মন জয় করে নিলো। এই ব্যাপার টা ভেবে নাতাশা একটু বিরক্ত হচ্ছিলো।

অসময়ে সুপ্রীতির কল দেখে নাতাশা একটু অবাক হলো। কল ধরে বলল,

“কেমন আছিস? আমিও ভাবছিলাম তোর কথা। অনেক কথা জমে আছে। ”

“আপু অর্ণবের হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটা ফটো পাঠিয়েছে। ”

নাতাশা স্থির হয়ে বসে রইলো খানিকক্ষন। ভয়ার্ত গলায় বলল,

“অর্ণব জানে। ও এগুলো নরমাল ভাবেই নিচ্ছে৷ কিন্তু আমি ইরিটেট হচ্ছি। ”

নাতাশা অস্ফুটস্বরে বলল,

“হবার কথা। ”

“আপু এসব বন্ধ হওয়া উচিত। ”

“আমি কী করব সুপ্রীতি?”

“ইশরাকের সাথে কথা বলো। ”

“ইশরাক করছে? শিওর তুই?”

“ও ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারছি না। প্লিজ স্টপ দিজ বুল*শিট। ”

“আচ্ছা আমি ইশরাকের সাথে কথা বলব। ”

নাতাশার আর নিজের কথা বলা হলো না।

***
ইকরা একদিকে যেমন রিপিট কাস্টমার হারিয়েছে তেমনি কিছু নতুন কাস্টমার পেয়েছেও। এতে খানিকটা স্বস্তিবোধ করলো। আপাতত চাকরির চিন্তা বাদ দিয়ে বিজনেস নিয়ে প্ল্যান করতে লাগলো। ফাহাদের সঙ্গে ওর ভাইব ম্যাচ হতে সময় লাগছে। এটা অবশ্য স্বাভাবিক, ফাহাদ ওর মিডলক্লাস মেন্টালিটি থেকে বেরোতে পারছে না। রুবাবেরও এই সমস্যা ছিলো, তবে জেদ ছিলো প্রচুর। ফাহাদের সেই সমস্যা নেই। ইকরাকে খুব মেনে চলে। ইকরা যেটা বলে শেষ পর্যন্ত সেটাই মেনে নেয়।

ইদানীং ফাহাদের অফিসের পরিবেশ খুব খারাপ যাচ্ছে। সেদিন রশিদ ভাইও বললেন, ফাহাদ প্ল্যান বি ভেবে রাখো। এরা তোমাকে প্রচুর পেইন দিবে। ফাহাদ এসব ভেবে আরও বেশী আপসেট হচ্ছে। এদিকে সাংসারিক খরচে স্যালারির সব টাকা গচ্চা যাচ্ছে। আগে বিভিন্ন প্রোজেক্ট থেকে কমিশন পেতো, এখন সেটাও বন্ধ হবার পথে।

রাতে খেতে বসে ফাহাদের মুখ টা উজ্জ্বল হলো। আজ ভাত রান্না হয়েছে। সঙ্গে চিকেন দোপেয়াজা আর বেগুন ভাজা। ফাহাদ একটু বেশী করে খেল। ইকরাকে বলল,

“দারুণ রেঁধেছ কিন্তু। ”

ইকরা নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“মা পাঠিয়েছে। খেতে ইচ্ছে করলো, তাই কল করে বলেছিলাম। ”

ফাহাদ শুকনো গলায় বলল,

“আচ্ছা। ”

“আমি তো আগেই বলেছিলাম যে রান্নাবান্নায় আমার ইন্টেরেস্ট নেই। তোমার যদি প্রয়োজন হয় তবে একজন রান্নার লোক রেখে দিতে পারো। ”

ফাহাদ কিছু বলল না। ইউনিভার্সিটি তে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকতো। তখন বুয়ার রান্না খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা এতো তিক্ত হয়েছে যে ইকরার পশ খাবারগুলো খেয়ে মুখ পঁচিয়ে ফেলেও বুয়ার রান্না খাবার কথা ভাবতে পারে না। ইদানীং প্রায় ই ফাহাদের কল্পনায় খাবারের ছবি ভেসে উঠে। নারকেল বাটা দিয়ে অল্প মশলায় কাতলা মাছের একটা ঝোল টাইপ রান্না নাতাশা করতো। কোথায় শিখেছিল কে জানে! সেই মাছের আইটেম দিয়ে দুই প্লেট ভাত শেষ করে ফেলতো ফাহাদ। মায়ের রান্নার কথাও মনে পড়ে। লম্বা করে আলু কেটে হালকা হলুদ লবনে ভেজে মাছের একটা প্রিপারেশন করতো মা। সেটার কথাও মনে পড়ে।

ফাহাদ কে ইকরা আরেকবার মনে করিয়ে দেয় জিমে যাবার কথা। ভাত খাবে মাসে একবার, যত পারা যায় কার্ব এড়িয়ে চলতে হবে। কিন্তু ফাহাদের মন পড়ে থাকে নাতাশা আর মায়ের সুস্বাদু খাবারে।

***
ইকরাকে করা প্রতিজ্ঞা ভেঙে ফাহাদ সেই সপ্তাহের শুক্রবার বাড়ি চলে গেল। বাবা যথারীতি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। মা ছেলেকে পেয়ে খুশি। তিনি কাঁদলেনও খুব। কতোদিন অপেক্ষায় ছিলেন একটা ফোন কলের। ফাহাদ কেন এমন হয়ে গেল। ফাহাদ মা’কে বলল,

“মা বেশী করে ঝাল দিয়ে আলু ভর্তা করো, সঙ্গে একটু ঘন ডাল। পারলে একটু রসুন ভর্তা। ”

মা বুঝলেন স্টাইলিশ বউ ছেলেকে এসব খেতে দেয় না। মাছ, মাংস খেয়ে অরুচি ধরেছে ছেলের। আদুরে গলায় প্রশ্ন করেন,

“ডাল, ভর্তা খাবি? আর কিছু না?”

ফাহাদ কাতলা মাছের সেই ঝোলের কথা বলতে গিয়েও থেমে যায়। বলে,

“আর কিছু লাগবে না। ”

মায়ের রান্না করার সময়টাতে ঘরটা ঘুরে দেখে। বারান্দায় অবহেলায় পড়ে আছে পালকের সাইকেল টা। নাতাশার প্রতি তীব্র ক্ষোভে প্রায় ভুলতে বসেছিল পালক কে। আজ মনে পড়লো, বুকের ভেতর টা একটু কেমন করেও উঠলো। অথচ কতোগুলো মাস গেল পালকের খোঁজ নেয়া হয় না। ঝিলিকের ওই ঘটনার সময় দেখেছিল একটু। ফাহাদ তখনই নাতাশাকে কল দেয়। নাতাশা কল রিসিভ করে না। ফাহাদ মায়ের নাম্বার থেকে কল দেয়। এবার নাতাশা রিসিভ করে।

“হ্যালো নাতাশা, আমি পালক কে দেখতে চাই। ”

নাতাশা গম্ভীর গলায় বলে,

“আমি চাই না পালক তোমাকে দেখুক। ”

“নাটকীয় কথাবার্তা আমার সঙ্গে বলবে না। তোমার হালচাল জানার জন্য কল করি নি। পালক আমার মেয়ে সেটা মনে করিয়ে দিতে হবে না নিশ্চয়ই। ”

“এতদিন পর কেন মনে পড়লো। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ভুলে গেছ। যাইহোক, আমি চাই আমার মেয়ে তোমাকে ভুলে যাক। ”

ফাহাদের ভীষণ রাগ হয়। নাতাশা এই গলায় কেন ওর সঙ্গে কথা বলে। কেন বলবে! এইরকম জেদ দেখিয়েছিল বলেই ওদের দুজনের পথ আলাদা হয়ে গেছিলো।

চলবে…..