হৃদয়ের দখিন দুয়ার পর্ব-৩০

0
225

#হৃদয়ের_দখিন_দুয়ার
#পর্ব-৩০
ফাহাদ ছোট থেকে একরকম জীবন দেখেছে। অভাববোধ ছিলো না কখনো, কিন্তু বাবা সবসময় সঞ্চয় শিখিয়েছেন। মাথার উপরের ছাদটুকু নিশ্চিত করার জন্য একটু একটু করে সঞ্চয় করেছেন। ইকরার ভাষায় যেটাকে বলে মিডল ক্লাস মেন্টালিটি। ফাহাদ এখনো বেরোতে পারে নি সেটা থেকে। যথেষ্ট উপার্জন করা সত্যেও ফাহাদ কে হাত খুলে টাকা খরচের প্রয়োজন পড়ে নি কখনো। এখন পড়ছে। দুজনের সংসারে বিশাল খরচ। ইকরার প্রতি মাসে শপিং করতে হয়। ব্র‍্যান্ডেড জিনিসপত্র কিনে ফেলে। যেটা পছন্দ হয় সেটা নিয়ে নেয়। দামের কথা চিন্তা করে না। এদিকে ফাহাদের ইচ্ছে ছিলো শহরে এক টুকরো জমি কিনবে। সেই হিসেবমতো জমাচ্ছিল। এখন আর সেটা হচ্ছে না। উল্টো খরচ হচ্ছে খুব। ইকরা খুব বেহিসেবী। ফাহাদ হিসেব করে চলতে বলায় খুব ভাব দেখিয়ে বলল,

“এক্সকিউজ মি ফাহাদ! তুমি আগে থেকে আমাকে জানতে না? শোনো, আমার লাইফস্টাইল এমন জেনেই কিন্তু তুমি আমাকে বিয়ে করেছিলে। এখন চেঞ্জ হতে বোলো না। ”

ফাহাদ ইতস্তত করে বলল,

“না আসলে রান্নাঘরের ঝুড়িতে দেখলাম কয়েক স্লাইস পিজ্জা ফেলে দেয়া। এভাবে তো খাবারের অপচয় হয় তাই বললাম। ”

“হলে হোক অপচয়। বাসী খাবার খেয়ে হেলথ নষ্ট করব না। আর ফাহাদ শোনো, প্রতিবার তোমার আমার তর্ক হয় এইসব খাবার দাবার নিয়ে। মানে ব্যাপার টা এমন যে খাওয়া ছাড়া আর কিছু নেই তোমার জগতে। ”

ফাহাদ লজ্জা পেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে, আচ্ছা সরি। এই টপিকে আর কথা বলব না।

এরচেয়েও ভয়ংকর একটা ব্যাপার মাঝেমধ্যে ঘটে। কোনো বিষয় নিয়ে তর্ক হলেই ইকরা ফাহাদ কে বলে, অন্যঘরে ঘুমাতে। ওর ম্যুড অফ থাকলে কোনোভাবেই ফাহাদের সঙ্গে বেড শেয়ার করবে না। এই ব্যাপার টা ফাহাদের ইগোতে লাগে। খুব রাগও হয়। কিন্তু সেই রাগ টা হজম করে ফেলে। কখনো কখনো হজম করতে না পারলে দেয়ালে কয়েকটা ঘুষি মেরে নিজেকে শান্ত করে।

ফাহাদ বুঝতে পারছে বাকী জীবন ইকরার সঙ্গে কাটাতে হলে ওর অনেক কিছু সহ্য করে নিতে হবে। ইকরাকে শোধরানো হয়তো সম্ভব না, তারচেয়ে নিজের সহ্যশক্তি বাড়িয়ে নেয়া ভালো। তবুও মাঝেমধ্যে ভাবে ইকরাকে যদি কোনোদিকে ব্যস্ত করা যায়। বেশ কমাস বাসায় আরাম করে এখন আর কোথাও ইন্টারভিউ দিতেও যাচ্ছে না। ফাহাদের হঠাৎ মনে হলো যদি একটা বাচ্চা নিয়ে ফেলা যায় তাহলে হয়তো ইকরা একটু বাধ্য মেয়ে হবে। বাঙালি মেয়েরা বাচ্চার জন্য সব পারে। ইকরাও হয়তো লাইফস্টাইল চেঞ্জ করে ফেলবে।

****
ঝিলিক কে এখন লক্ষি বউ বলা যায়। সব কাজ সামলে নেয়। দুপুরে কী রান্না হবে, রাতে কী রান্না হবে। ব্রেকফাস্টে প্রতিদিন একই রকম খাবার যেন নাহয় এসবের দিকে খুব খেয়াল রাখে। সব টাই ইশরাকের জন্য। সবসময় চেষ্টা থাকে বাড়তি যত্নের। ইশরাক কে জোর করে টিফিন বক্স ভরে খাবার দিয়ে দেয়। ইশরাক প্রথম কয়েকদিন বারন করলেও এরপর অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে ইশরাক প্রায় ই মনে করিয়ে দেয় যে ঝিলিকের পড়াশোনা ভুললে চলবে না। গ্রাজুয়েশন ভালো করেই শেষ করতে হবে।

ঝিলিকের এখন আবার মন চাইছে পড়াশোনা সব ছেড়েছুড়ে পুরোদস্তর সংসারী বউ হতে। মাঝখানে চাকরি করবে, অফিসে যাবে এরকম চিন্তা এসেছিল মাথায়। এখন ভাবছে ধ্যাৎ কী হবে এতো কষ্ট করে। চাকরি করলে তখন দেখা যাবে ইশরাকের অযত্ন হচ্ছে। এরচেয়ে এখন যেমন আছে তেমন ই ভালো। আরও একটু সময় গেলে ইশরাক কে বলবে একটা ছোট্ট বাবুর কথা। বাচ্চাকাচ্চা ওর যে কতো ভালো লাগে!

রাতে খাওয়ার সময় ঝিলিক দেখলো ইশরাক একটু অন্যমনস্ক। খেতেও পারলো না বেশীকিছু। খাবার নাড়াচাড়া করছিল। ঝিলিক জিজ্ঞেস করলো,

“কী হইছে তোমার? রান্না মজা হয় নি। ”

“উঁহু। খুব মজা। ”

“তাহলে খাচ্ছ না যে ঠিক করে। ”

“তেমন কিছু না। ভালো লাগছে না। ”

“অফিসের স্ট্রেস?”

“হু। ”

ঝিলিক খাওয়া শেষ হবার পর ঘরে এসে ইশরাকের কপালে ম্যাসাজ করে দিলো। ইশরাক অস্বস্তিবোধ করছে। নাতাশার কথাগুলো বারবার কানে বাজছে। সুপ্রীতির মুখ টা মনে পড়ছে বারবার। কষ্ট পাচ্ছে খুব। ইশরাকের বিশ্বাস করতে মন চায় না যে কাজ টা ঝিলিক করছে। ঝিলিক সুপ্রীতির হাজবেন্ডের নাম্বার কোত্থেকে পাবে। তারপর মনে পড়ে যে নাতাশাকে দেখতে ও সুপ্রীতিদের বাসায় গিয়েছিল।

ইশরাক ঝিলিক কে ডাকে।

“ঝিলিক একটা সত্যি কথা বলবি?”

“হু। কি কথা?”

“তুই আমাকে কতটা ভালোবাসিস?”

“অনেক। অনেক এর পরিমাণ টা তুমি আন্দাজও করতে পারবি না। ”

“আর সুপ্রীতিকে কতটা ঘৃনা করিস?”

ঝিলিক ইতস্তত বোধ করে। সুপ্রীতিকে ঘৃনা! ঘৃনা বোধহয় করে না। তবে অপছন্দ করে খুব। ভাবীর অনেকগুলো কাজিন ছিলো। অনেক সুন্দরী, স্টাইলিশ দের মধ্যে একমাত্র চমক যেন ওই মেয়েটার ছিলো। কেন যেন সবার ও’কেই পছন্দ ছিলো। অথচ ওর হাবভাব ছিলো অন্যরকম। কাউকে এটেনশন দিতো না। একসময় ওর পছন্দ আর ঝিলিকের পছন্দ মিলে গেল। অথচ ইশরাকের অন্যরকম চাহনী, বেহায়া দৃষ্টি দেখে ঝিলিক বলে দিয়েছিল ও ইশরাক কে ভালোবাসে। তবুও সুপ্রীতি ইশরাক কে ভালোবাসলো। সুপ্রীতিকে অপছন্দ করার বোধহয় এই একটাই কারণ ছিলো।

ঝিলিক শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“এখন আর ঘৃনা করি না তো। হঠাৎ জানতে চাইলে?”

ইশরাক উঠে বসলো। ঝিলিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমাদের কিছু ছবি সুপ্রীতির হাজবেন্ড কে পাঠাচ্ছে কেউ একজন। ছবিগুলো আপত্তিকর না। সম্পর্ক থাকাকালীন কিছু সুইট মেমোরি ক্যাপচার করা হয়েছিলো। আমার ল্যাপটপে সেই ছবি আছে। প্রাইভেসি মেইনটেইন করার প্রয়োজন মনে হয় নি। ”

ঝিলিক তাকিয়ে আছে স্থির চোখে। ও এখনো বুঝতে পারছে না ইশরাক ও’কে কী বলতে চাইছে।

ইশরাক আবারও বলল,

“ঝিলিক ওই ছবিগুলো তুই পাঠাস নি তো?”

ঝিলিক বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। মাথা নেড়ে না বলল। ইশরাক অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে ইশরাক কে ওর অচেনা মানুষ মনে হচ্ছে। যার কথা সারাক্ষণ ভাবে, যে জড়িয়ে না রাখলে ঘুম আসে না সেই ইশরাক আর এই ইশরাক এক না।

“সত্যি বল ঝিলিক। ”

“সত্যি বলছি, তুমি আমাকে কোনোদিন ই চিনলে না। চিনতেই পারলে না। ”

চলবে…..