#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#সূচনা_পর্ব
#লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন
কবুল বলে বিয়ে সম্পন্ন হতেই বর হনহন করে বেরিয়ে গিয়েছে বাড়ি ছেড়ে। মৃধা নিষ্পলক চোখে কেবল বর রূপী নিশীথের চলে যাওয়াটাই দেখল। একটু আগেই তো নিশীথের সাথে মৃধার বিয়ে হয়েছে। একটা পবিত্র সম্পর্কে বাঁধা পড়েছে দুজনে। তবে স্বেচ্ছায় না। অনেকটা বাধ্য হয়েই দুইজনকে বিয়েটা করতে হয়েছে! বলা চলে মৃধাকে সমাজের কথার থেকে উদ্ধার করতেই নিশীথ এই বিয়েটা করেছে। তাও বাবার কথায়! মৃধার একমুহুর্তের জন্য নিজেকে অসহ্য মনে হলো এই ভেবে। যে মানুষটাকে সে ভালোবাসল গোপণে সে মানুষটা তাকে কখনো ভালোই বাসেনি। এইটুকু দুঃখ সে মানিয়ে নিয়েছিল সে কবেই। কিন্তু নিজের বিয়েতে বর প্রত্যাখান করেছে বলে সে মানুষটারই গলায় ঝুলে যাওয়াটা জঘন্য ! তার চেয়েও জঘন্য ঐ মানুষটার জীবনে নিজেকে সবসময় বোঝাস্বরূপ আবিষ্কার করাটা। যেমনটা এখন লাগছে তার। দুইজন সবসময় বন্ধুস্বরূপ হলেও নিজেকে নিশীথের জীবনে এই মুহুর্তে বোঝা ছাড়া আর কিছুই লাগছে না। মৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।ভাবল কিয়ৎক্ষন আগের ঘটা সবকিছু। নিয়মমতো আর পাঁচটা মেয়ের মতো মৃধার ও বিয়ে ছিল আজ। পাত্র ছিল আবির নামক এক যুবক। পেশায়, সৌন্দর্যে মৃধার সাথে বেশ মানানসই ছিল ছেলেটা। কিন্তু কোন এক অজানা কারণেই ছেলেটা বিয়ে করতে আসেনি আজ। ফোনে জানিয়েছে, সে এই বিয়েটা করতে পারবে না। তারপর? তারপর নিশীথের বাবা সেই মুহুর্তেই নিজের ছেলেকে বলির পাঠা স্বরূপ উপস্থাপন করলেন সবার সামনে। যার ফলস্বরূপ মৃধা আর নিশীথের বিয়েটা হলো। মৃধা আর নিশীথ দুইজনই অবশ্য বড় হয়েছে একসাথে। সমবয়সী দুজনে। পাশাপাশি বাড়ি! বন্ধুস্বরূপ হলেও কোন না কোন বিষয় নিয়ে সবসময়ই ঝগড়া হতো দুজনের। কিন্তু আজ ঝগড়া হলো না। মৃধা খুব করে জানে নিশীথ এই বিয়েটার প্রতি খুব বিরক্ত। বোধহয় মনে মনে বিশাল রাগ ও ফুসে রেখেছে। কিন্তু এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে মৃধার ও তো কিচ্ছু করার নেই। মৃধা চোখ বুঝে নিয়ে এত এত কথা ভাবতেই কান্না পেল। শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করতে নিতেই পাশ থেকে কেউ একজনের কন্ঠে শুনতে পেল,
“ একজন বিয়ে করতে আসেনি, আর আরেকজনকে যাও ধরে বেঁধে বিয়ে করাল তাও শুনছি নাকি ছেলেটার এই বিয়েতে মত ছিল না। জোরজবরদস্তি করেই ছেলেটাকে একপ্রকার রাজি করিয়েছে। নয়তো বলো? ছেলে কখনো রেগে টেগে এভাবে বিয়ের পর বেরিয়ে যায়? ”
মৃধা চোখ খুলে চাইল সেদিক পানে। চোখ টলমল করছে কেমন। কারণ এই কথাগুলো এই নিয়ে চারপাশে কয়েকবার শুনেছে সে। চারপাশে আজ তারই গুঞ্জন। তবে তার সহ্য হচ্ছে না। অসহ্য লাগছে। বোধহয় এতোটা অপমানিত এর আগে কখনোই লাগেনি আর। আজ লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে সব ছেড়ে কোথাও পালিয়ে যাক। যেখানে কেউ থাকবে না, কেউ কিছু বলবে না, কেউ দয়া দেখাবে না। মৃধা ঠোঁট চেপে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই আরেকজন বলল,
“মেয়েটার কপালটাই পোড়া বুঝলে। নয়তো এমন হয়? না জানি মেয়েটার পরবর্তী জীবন কেমন হয়!”
মৃধা শুকনো ঢোক গিলে বারংবার কান্না সামলালো। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে এপাশ ওপাশ চাইল। ঠিক তখনই সামনে উপস্থিত হলেন নিশীথের বাবা মাহমুদ সাহেব। মাথায় হাত বুলিয়ে শুধালেন,
“ মন খারাপ নাকি তোর আম্মাজান? কান্নাকাটি করবি না একদম। নিশীথ এক্ষুনিই আসবে। আমরা একসাথে ও বাড়ি যাব হুহ? তুই এবাড়ি-ওবাড়ি যখন খুশি যাওয়া আসা করতে পারবি। দুই মিনিটও লাগবে না বুঝলি?আমার তো মনে হয় তোর সুবিধাই হলো এতে আম্মা। ”
মৃধা মৃদু হাসল। মন খারাপ সরিয়ে চঞ্চল স্বরে বলল,
“দুই মিনিটও লাগবে না আমার। একদৌড়ে ও বাড়ি যাব, এক দৌড়ে এ বাড়ি আসব। জাস্ট এক মিনিটই যথেষ্ট। বুঝলে?”
মাহমুদ সাহেব হাসলেন। বললেন,
“ বুঝলাম। এখন একটু চমৎকার হেসে উদ্ধার করুন আম্মাজান। আপনাকে মনমরা দেখতে ভাল্লাগে না। ”
মৃধা হাসল আবারও। দাঁত বের করেই হাসল। কিছু মানুষের সামনে হাসতে হয়। ভালো না থাকলেও ভালো থাকতে হয়। নয়তো সে মানুষগুলো কষ্ট পায়। এই যেমন তার মাহমুদ আঙ্কেল! ছোটবেলা থেকেই কতোটা আদর-ভালোবাসা তাকে দিয়েছে। ছোটবেলায় সে কান্না করবে বলে নিশীথের চাইতেও বেশি বেশিই চকলেট দিত মেয়েটাকে। নিশীথের আগে কোলে তুলত আদুরে সে ছোট্ট মৃধাটাকেই। নিশীথ সে কি রাগ করত এই নিয়ে। মৃধার হাসি আসল বাচ্চা নিশীথের রাগ ভেবে। পরমুহুর্তেই বলে ফেলল,
“ যদি তোমার ছেলের সাথে আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তবুও কিন্তু আগের মতোই ভালোবাসবে আঙ্কেল। কখনো পাল্টাবে না হুহ? ”
মাহমুদ সাহেব ভাবুক স্বরে বলল,
“তোর কেন মনে হলো তোদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে?”
“ কারণ একসাথে অনেককাল থাকার মতো আমাদের মাঝে কোন রিজন নেই আঙ্কেল। হয়তো দেখা যাবে আমরা দুইজনে একঘরে সংসার করতে গিয়ে মা’রপিট করে হাত পা ভেঙ্গে বসে থাকব নয়তো মাথা ফাটিয়ে বসে থাকব। ”
মাহমুদ সাহেব হেসে উঠলেন উচ্চ আওয়াজে। হাসতে হাসতেই বললেন,
“আচ্ছা আচ্ছা, আর তখন নাহয় তোদের নিয়ে হসপিটাল দৌড়ানোর দায়িত্বটা আমার হুহ?”
মৃধা হাসল। তারপর অনেকটা সময় এভাবেই কাঁটল। মাহমুদ সাহেব পুরোটা সময়ই মৃধার সাথে কথা বলে বলে ভুলিয়ে রাখতে চাইলেন। যেন একটু থেকে একটু একা হলেই মেয়েটা মন খারাপে চোখ ভিজাবে। আর যায় হোক, মাহমুদ সাহেব এই মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখেছেন সবটা সময়। মনে মনে এই মেয়েটাকে পুত্রবধু করার ইচ্ছে যে কতকাল ধরে পুষে এসেছেন! কিন্তু অবশেষে যখন মৃধার বিয়েটা অন্য কারোর সাথে হয়ে যাচ্ছিল ভীষণ মন খারাপও হয়েছিল। তবে উপরওয়ালা যা করেন বোধহয় ভালোর জন্যই করেন। নয়তো এই মিষ্টিমতো মেয়েটাকে তিনি পুত্রবধূ করতেন কি করে? মাহমুদ সাহেব মনে মনে খুশি ছেলেকে বিয়ে করিয়ে। তবে সে খুশি পরমুহুর্তেই পরিণত হলো ছেলের প্রতি রাগে।কারণ নিশীথ তাকে আসবে বললেও আসেনি। অবশেষে ছেলের প্রতি চাপা রাগ নিয়ে শুধু মৃধাকে নিয়েই তিনি বাড়ি ফিরলেন। মাহমুদ সাহেব অবশ্য খুব আশা নিয়ে ছিলেন, ছেলে আর ছেলের বউ দুজনকেই একসাথে ঘরে তুলবে। কিন্তু পূরণ হলো কোথায়? ইচ্ছে ছিল পুত্রবধূকে নিজের বাসায় সুন্দর করে আয়োজন করে অভিনন্দন জানাবে বাসায় প্রবেশের সময়। কিন্তু তাও হলো না।কারণ নিশীথের আম্মু ও এই বিয়েটায় খুশি হননি। অবশেষে বাধ্য হয়ে মৃধাকে বিনা আয়োজনেই বাসায় প্রবেশ করানো হলো। মৃধা অবশ্য এতে মন খারাপ করল না। এটাই তো স্বাভাবিক! এমনকি মৃধা পাঁচ দশটা বধূর মতো আসার সময় কান্নাও করেনি। পুরোটা সময় স্বাভাবিক, শান্ত থেকেছে শুধু।
.
মৃধা এ বাড়িতেই এসেই শান্ত থাকল পুরোটা সময়। বিয়ের সাঁজ পাল্টে নিয়ে কিছুটা সময় নিশীথের ছোটভাই নিবির আর ছোটবোন নিলাদ্রীর সাথে কথা বলেছে। মৃধার সাথে অবশ্য এই দুইজনের ভাব আজ নতুন নয়।সবসময়েরই। যাক! অন্তত নিবির আর নীলাদ্রী রেগে নেই এটা ভেবে মৃধা স্বস্তি পেল। কিন্তু সে স্বস্তিও বেশক্ষন টিকল না। কিছুটা সময় যেতেই নিবির আর নীলাদ্রী তাকে নিশীথের ঘরে বসিয়ে চলে গেল। মৃধা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। চোখে পড়ল খাটের উপরে অবহেলায় পড়ে থাকা দুটো টকটকে গোলাপ। কে রাখল? নীলাদ্রী আর নিবির? মৃধা বুঝে উঠল না। আবারও একবার পুরো রুমটা দেখল। এর আগেও বেশ কয়েকবার সে এসেছে এই ঘরে।অন্যসময় অগোছালো থাকলেও আজ বেশ গোছালো। বোধহয় নীলাদ্রীই গুঁছিয়েছে। মৃধা হাসল। ঘড়ির দিকে চেয়ে বুঝল রাত এগারোটা। অথচ এখনো নিশীথ আসেনি? আশ্চর্য!ছেলেটা বাইরে কি করছে এতক্ষন? মৃধার মন খারাপ হলো। সে জানে নিশীথ এই বিয়েটার জন্য রাগ করেই বাসায় ফিরছে নাহ! এই বিয়েটায় যে নিশীথের মাও খুব একটা খুশি হয়েছে তা নয়। মৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই মুহুর্তে নিজেকে যেন এই পরিবারের বোঝা বোঝা লাগছে তার।দমবন্ধ লাগছে। বাস্তবতাকে অসহ্য লাগছে। সে কখনো কি ভেবেছিল সে নিশীথের গলায় বোঝাস্বরূপ ঝুলে পড়বে? ভাবেনি! মৃধা ঠোঁট চেপে কথাগুলো ভাবতেই নিঃশব্দে রুমে এল নিশীথ। এক নজর চাইল মৃধার পানে। মেয়েটার সাঁজ সাধারণ। পরণে লাল সুতির শাড়ি। চুলগুলো বেনুনি করা। বিয়ের ভারী সাঁজ মুঁছে চোখের নিচে হালকা কাজল টাই চোখে পড়ছে শুধু! তবুও এই সাধারণ সাঁজেই বোধহয় নিশীথের কাছে মেয়টিকে অপরূপ বোধ হলো। তাই তো দ্রুত নজর সরাল। মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,
“এমন সংয়ের মতো সেঁজে কি দেখছিস আমার ঘরে? ”
মৃধা মাথা ঘুরিয়ে চাইল তৎক্ষনাৎ। নিশীথের পরনে টাউজার আর হুডি।হাতে খাবারের প্লেট। মুখে মৃদু বিরক্তির ছাপও। বোধহয় কিছুটা রাগও ফুটে আছে! অন্যসময় হলে মৃধা ফটাফট মুখের উপর উত্তর দিয়ে নিশীথের বেহাল অবস্থা করত। কিন্তু আজ উত্তর আসল না মুখে। কি বলবে বুঝেও পেল না। তবুও অপ্রস্তুত স্বরে একটু পর বলল,
”এমনিই,দেখছিলাম তোর ঘরটা কেমন। ”
নিশীথ কপাল কুঁচকাল বিরক্তি নিয়েই। শুধাল,
“ যেন তুই এর আগে আমার ঘর দেখিসনি? এই, এক মিনিট! তুই কি এই ঘরটা তোর অধীনে নিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিস নাকি? তাহলে শুন, এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেল। এই ঘরটা আমার,আমারই থাকবে। তোকে জাস্ট দয়া করে থাকতে দিব এই আরকি। ”
মৃধা এবারে স্থিরভাবে চাইল। দয়া?হ্যাঁ দয়াই তো। এই যেমন নিশীথ দয়া করে তাকে বিয়েটা করল। তেমনই দয়া করে থাকতেও দিবে। মৃধা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মনের কথাটা শুধাল,
“দয়া করে যেমন বিয়েটা করলি তেমন দয়া করে থাকতে দিবি এই তো? সমস্যা নেই! মানিয়ে নিব। মৃধা সব পারে। বুঝলি? তাছাড়া সারাজীবন তো আর থাকছি না আমি তোর ঘরে। অল্প কয়েকদিন।”
নিশীথ ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,
“মানে? ”
মৃধা হাসল। বলল,
“মানে তুইতো জাস্ট আমাকে পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতেই বিয়েটা করলি। তো আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে তাই না?সারাজীবন নিশ্চয় তোর ঘাড়ে বোঝাস্বরূপ পড়ে থাকব না আমি? খুব শীঘ্রই ডিভোর্স করে আলাদা হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর তো তোর আর আমার পথ আলাদাই। সেটাই বললাম গাঁধা!”
নিশীথের ফর্সা নাক হঠাৎ লাল দেখাল। চোয়াল বোধহয় শক্ত হয়ে এল। নিশীথ কি রেগে গেল তবে? মৃধা বুঝে উঠল না। নিশীথ হাতের প্লেটটা আওয়াজ করে টেবিলে রেখেই শুধাল,
“ তারপর? ”
মৃধা বোকার মতো বলল,
“তারপর আর কি?”
নিশীথ কাঠকাঠ স্বরে শুনাল এবার,
“মানে তারপর কাকে বিয়ে করবি?ঐ আবিরকে নাকি আবার অন্য কোন ছেলেকে?”
মৃধা বেশ বুঝল নিশীথ যে আবিরকে নিয়ে খোঁচা দিল। হতাশ শ্বাস ফেলে বলল,
“ সফট কর্নারে আঘাত করবি না নিশীথ! ”
নিশীথ এবারে কথা ঘুরাল,
“ খেয়ে নে। আম্মু পাঠিয়েছে। ”
মৃধা মেনে নিল। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে বলল,
“ তুই খেয়েছিস?”
নিশীথ ত্যাড়া চাহনিতে চাইল। পরমুহুর্তেই গম্ভীর স্বরে জানান দিল,
“ জেনে তোর কাজ নেই। ”
“ আরেহ, অবশ্যই আমার জানা উচিত। বল,খেয়েছিস তুই?”
নিশীথ হাসল এবারে। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
“ টিপিক্যাল ওয়াইফদের মতো স্বামীর খোঁজখবর নিচ্ছিস? কেয়ার দেখাচ্ছিস আমায় ? কিন্তু তোর মতে তো আমরা টিপিক্যাল হাজব্যান্ড ওয়াইফদের মতো কখনোই হতো পারবো না মৃধা। তাহলে তো তোর আর আমার মাঝে স্বামী স্ত্রী টাইপ কিছু হবে ও না কখনো।একটা সময় পর তোর আর আমার পথ আলাদাই। সো তুই প্লিজ এসব টিপিক্যাল স্ত্রীদের মতো কেয়ারটা তোর আবিরকে দেখাস। হুহ? আমাকে না। ”
কথাগুলো বলেই হনহন করে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল নিশীথ। মৃধা হতবিহ্বল নজরে চেয়ে থাকল। এই ছেলের সমস্যা কি? কথায় কথায় এমন রাগসহিত জবাব দিচ্ছে কেন? আশ্চর্য!
.
মৃধা খাওয়া শেষ করল একটু সময় নিয়েই। অপরদিকে নিশীথ ওয়াশরুম থেকে এসেই খাটের এককোণ দখল করে শুঁয়ে পড়েছে। মৃধা খাওয়া শেষ করে বুঝে উঠল না কোথায় ঘুমাবে।নিশীথকে কি জিজ্ঞেস করবে একবার?ভেবে বারকয়েক চাইল নিশীথের দিকে। কপালে হাত রেখে সোজা হয়ে শুঁয়ে আছে সে। বোধহয় ঘুমিয়েও গেছে। বিরক্ত করাটা উচিত হবে না ভেবে পা বাড়াল বেলকনির দিকে। বাইরের শীতল হাওয়া তখন বেলকনিতে যেন উপছে আসছে। ঠান্ডায় জমে যাওয়ার অবস্থা।উপায়ন্তুর না পেয়ে বেলকনির দড়িতে ঝুলে থাকা নিশীথের একটা ফুলহাতা টিশার্টই জড়াল নিজের শরীরে। তারপর ফ্লোরে পাতা মাদুরটায় বসে দেওয়ালে হেলান দিল আরাম করে। অতঃপর আকাশপানে তাকিয়ে থাকল মুগ্ধ চাহনিতে।আজকের আকাশটা সত্যিই উজ্জ্বল!
.
মৃধার ঘুম ভাঙ্গল মাঝরাতে। চারপাশে শুনশান নিরবতা। রুমেও তখন আবছা আলো। সে আবছা আলোতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করল বিছানার এককোণে। পরনে তখনও নিশীথের ফুলহাতা টিশার্টটা। সাথে হালকা একটা চাদর শরীরে টানা। মৃধা ভাবুক হলো। তার যতদূর মনে পড়ে সে বেলকনিতে বসে আকাশ দেখছিল। তারপর? তারপর হয়তো চোখ লেগে এসেছিল। কিন্তু বিছানায় কে আনল? নিশীথ? ছিঃ! নিশীথ কেন আনবে? মৃধা নিজের ভাবনাকে দামাচাপা দিতে কানে এল নিশীথের গলা। বেলকনি থেকেই! একটু জোরে জোরেই কলে কারোর সাথে কথা বলছে যেন।অথচ এতক্ষন কি সুন্দর নীরব ছিল সবটা। মৃধা ছোটশ্বাস ফেলে উঠে পা বাড়াল সেদিকেই। বেলকনির দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল নিশীথকে। ফোনের অপরপ্রান্তে মেয়েটিকে নিশীথ দুই তিনবার রাহি বলে সম্বোধন করেছে। হ্যাঁ, রাহিকে মৃধা চেনে। মৃধা আর নিশীথদের জুনিয়র। নিশীথকে পছন্দ করত সেটা জানে মৃধা। কিন্তু ওরা কি রিলেশনে গেছে? আর যদি রিলেশনে নাই থাকে তাহলে মাঝরাতে কেন কথা বলবে দুইজনে?
চলবে……..