হৃদয়ে প্রণয়ের বাস পর্ব-১০

0
16

#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#পর্ব_১০
লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন

গরম ধোঁয়া উঠা চা। সাথে প্রিয় পুরুষ। মৃধা তাকিয়ে দেখল নিশীথের দিকে। ভেজা মুখচোখ সুন্দর দেখাচ্ছে। সাথে কপালে ঝুকে আসা ভেজা চুল। কেন জানি না এই রূপটা মৃধার মারাত্মক লাগল। হেসে শুধাল,

“ নিশীথ? তোকে কি সুন্দর দেখাচ্ছে রে। ইশশ! ”

নিশীথ ভ্রু কুঁচকাল। সরু চাহনিতে চাইল মৃধার দিকে। একটু আগেই সে গরম চা এনে মৃধার হাতে দিয়েছিল। তারপরই ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল সেরে বের হলো৷ অতঃপর মৃধার কথা শুনে বাঁকা হাসল সে। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

“আমাকে সবসময়ই সুন্দর দেখায় ডিয়ার। মেয়েরা ঠিক এভাবেই বেহায়ার মতো তাকিয়ে দেখে আমায় যেভাবে আপনি তাকিয়ে আছেন। আমি অবশ্য বিরক্ত হচ্ছি না, তুই চাইলে আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে তাকিয়ে আমায় দেখতে পারিস। আমার পুরো শরীরটাই দেখতে পারিস দোস্ত। নো সমস্যা!”

চায়ের কাপে চুমুক বসাতে বসাতে কথাটা শুনে মৃধা মুখ কুঁচকাল। শেষ কথাটায় বেশ রকমের অ’শ্লীল ইঙ্গিত পেয়ে মুখচোখের চাহনি মুহুর্তেই বদলে গেল। সে এতোটাও অশ্লীল হয়ে উঠেনি , এতোটাও গভীর ভাবে চিন্তা করেনি। শুধু নিশীথের মুখটা দেখতে সুন্দর লাগছিল বলে এতক্ষন তাকিয়ে ছিল। ভালো লাগছিল। কিন্তু ভালো লাগাটা নিশীথ রাখল কই? মৃধা নাক ফুলাল। নিজেকে বেহায়া বলায় দ্রুত রেগে গিয়ে উত্তর করল,

“ওয়েট, প্রথমত আমি বেহায়ার মতো দেখছি না তোকে। আমি সেসকল মেয়েদের মধ্যে নই যারা কখনো ছেলে না দেখতে পেয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, তোর পুরো শরীর দেখার প্রয়োজনীয়তা নেই। তোকে আমি ছোটকাল থেকেই দেখছি নিশীথ। তোর মুখ না শুধু, হাত- পা শরীর কোথায় কোনসময় পড়ে কাঁ’টাছেড়া দাগ করে রেখেছিস সব মুখস্থ বলা চলে। কাজেই এতকাল পরে সে একই ছেলেটার দিকে বেহায়ার মতে হা করে তাকিয়ে তার শরীর দেখার প্রয়োজনীয়তা আমার নেই।তাই বেহায়া বলতে এক হাজার বার ভাববি। ”

নিশীথ পুণরায় বাঁকা হাসল। পরণের শার্টটার উপরের দুটো বোতাম খুলতে খুলতে ভ্রু বাঁকিয়ে শুধাল,

“ সব মুখস্থ? তুই শিওর আমার শরীরের সব মুখস্থ তোর? না মানে, সব তো আর তোর জানার বা দেখার কথা না। ”

মৃধা থতমত খেল এই পর্যায়ে। নিশীথ তাকে এভাবে কথা ছুড়ছে, আগে কখনো এরকম কথা ছুড়েনি ভেবে বেচারী নুঁইয়ে গেল। সে ছিল ঝগড়ার মুডে অথচ নিশীথ বেচারা বিষয়টা কি বিচ্ছিরি দিকে ঘোরাচ্ছে। মৃধা উপায় না পেয়ে উত্তর করল না। নিশীথ ফের শুধাল,

“ কি হলো ম্যাম? উত্তর নেই যে? আমার শরীরের সব মুখস্থ আপনার? ”

মৃধা নিরসব স্বরে উত্তর করল এবারে,

“ তোর শরীরের সব আমি মুখস্থ করতে যাব কোন দুঃখে? জাস্ট কথার কথা বলেছি। ”

“ কেন বলবি কথার কথা। আমি বলেছি বলতে?”

মৃধা অসহায় চাহনিতে চাইল। দাঁতে দাঁত চেপে৷ বলে উঠল,

“ ভুল হইছে ভাই, মাফ করে দে আমায়। ”

“ তোর এই ভুল দ্বারা তো সাংঘাতিক কিছুও ঘটতে পারত! ধর আমার ফিউচার বউ শুনতে পেল যে আমার শরীরের সব অন্য মেয়ের মুখস্থ৷ তাহলে তো সে ভেবে ফেলত আমি নির্ঘাত তোর সাথে…”

বাকিটুকু বলতে দিল না নিশীথকে। মৃদু চিৎকার দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

“ চুপ। তুই কথা বলবি না। কার সাথে মিশে এসব কথাবার্তা শিখেছিস হুহ?”

নিশীথ হাসল। ভেজা চুল গুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে নিয়ে মৃধার দিকে এগিয়ে এসে বলল,

“ তোর সাথে। পাশে তুই থাকলে আজকাল এমনিতেই কথাবার্তা, কাজকর্ম কেমন কেমন হয়ে যাচ্ছে। আমি তো নিজেই অবাক! কিছু করেছিস নাকি আমার উপর বল? ”

“ কি করব? ”

নিশীথ হাসল। পরণের শার্টটার একটা বোতাম ছুটে গিয়েছে দেখে পুরো শার্টটাই খুলে বসল মৃধার সামনে। ঠোঁট এলিয়ে দুটো শার্ট হাতে তুলে নিয়ে বলল,

“ সেটা তো তুই জানবি। আচ্ছা বল, এই শার্টটা পরব নাকি ঐ শার্টটা?”

মৃধা এতক্ষন চায়ের কাপের দিকেই চেয়ে ছিল। এবারে তাকাল।তাকাতে তাকাতেই শুধাতে লাগল,

“ কোথায় যা…”

পরমুহুর্তেই চাহনি বিস্ময়ে রূপ নিল নিশীথকে খালি গায়ে নিজের একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। মৃধার কান গরম হয়ে এল যেন। লজ্জ্বায় অস্বস্তিতে লালাভ হয়ে উঠল মুখ। পরক্ষনেই দৃষ্টি ফিরিয়ে লজ্জা লুকাল সে। মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে উঠল,

“ তুই বের হ ভাই। তোর নির্লজ্জ্বতার মাত্রা দেখে আমি বিস্মিত। বের হ এক্ষুনি….”

নিশীথ বের হলো না। বরং আরেকটু নির্লজ্জ্বতার পরিচয় দিয়ে ঝুঁকে এল মৃধার দিকে। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

“ তোরই তো বর। নির্লজ্জতা আর কোথায় দেখাবে বল? ”

আকস্মিক কথায় মৃধা তাজ্জব বনে গেল। কি নির্লজ্জ! নিশীথের এই রূপও কখনো দেখতে হবে ভেবেছিল সে?এই নিশীথ যে এভাবে তার সামনে শার্ট খুলে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে জানা ছিল? ছিঃ ছিঃ! কি লজ্জা। মৃধা নজর ঘুরাল। শুধাল,

“ বের হ বেয়াদব।তোকে সুন্দর দেখাচ্ছিল ভেজা মুখে। তাই বলেছিলাম। অন্য কোন মিনিং বের করিস না সে কথার। ”

নিশীথ একই ভাবে ঝুঁকে থেকেই হেসে শুধাল,

“ অন্য কোন মিনিং? কেমন মিনিং? ”

মৃধা এবারে রাগ নিয়ে চাইল। রাগে নিশীথের গলায় দুই হাত চেপে ধরে বলল,

“ তুই যা শুরু করেছিস বেশি বেশি হচ্ছে এবার। তোর প্রেমিকা তোর ছ্যাঁচড়ামো শুনলে নির্ঘাত দড়িতে ঝু’লাবে তোকে। ”

পরক্ষনেই কথাটা শেষ করে একপ্রকার ধাক্কা দিল নিশীথকে। এতোটা কাছে এভাবে ঝুঁকে থাকাতে এতক্ষন যেন প্রাণ যাই যাই অবস্থা হয়ছিল তার। অবশেষে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। দ্রুত লাফ মেরে বিছানা ছেড়ে উঠতে নিতেই নিশীথ শার্ট পরে নিল। যেতে যেতে বলল,

“ আমরা আজ বের হবো। তৈরি হয়ে নিস কেমন? আমার লাইফের একজন স্পেশাল মানুষের সাথে দেখা করাব৷ ”

মৃধক বোধহয় বুঝে গেল সে স্পেশাল মানুষটা কে। বলল,

“ রাহি? ”

উত্তর এল,

“ হ্যাঁ। ”

মৃধা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এতক্ষনকার লজ্জায় লাল হয়ে আসা, অস্বস্তিতে ডুবে মরা সব অনুভূতি এক মুহুর্তেই ফ্যাকাশে ঠেকল। হৃদয় জুড়ে আবারও সে একই বিষন্ন অনুভূতি।

.

জ্বরের দরুণ মৃধার চোখমুখ জ্বলছে অল্প। তবুও নিশীথের সাথে ছুটে এল রেস্টুরেন্টে। কারণ রাহির সাথে দেখা হবে,কথা বলবে। মৃধার ইচ্ছে ছিল না। তবুও আসল। মুখের উপর না বললে যদি নিশীথ তার দুর্বলতা জেনে বসে? ছিঃ ছিঃ! লজ্জাজনক ঠেকবে৷ তাই তো ছুটে এল। রাহিকে দেখেই হাত বাড়িয়ে শুধাল,

“ রাহি? আমি তোমায় অনেক আগ থেকে চিনি। আমাদের ফ্রেন্ড সম্পর্কীয় একটা ছেলের প্রেমিকা বলে কথা হুহ!”

মৃধা রাহিকে যতদিন চেনে রাহি মৃধাকে তার আরো অনেকদিন আগে থেকেই চেনে। তবে সরাসরি পরিচয় হয়নি কখনো।এই প্রথম যাও পরিচিত হওয়ার সুযোগ হলো এমন একটা কথায় রাহি থতমত খেল। নিশীথের দিকে চেয়ে মুখ ফুলিয়ে বলে উঠল,

“ ভাইয়া! তুমি এখনো সবটা বলোনি ভাবিকে? না বলেই দেখা করতে নিয়ে এসেছো? কি ফাজিল তুমি। ”

নিশীথ বোকাবোকা হাসল বোনের দিকে চেয়ে।বলল,

“ তোরা তোরা পরিচয় হবি ভেবে বলিনি। আর বললে তো উনার কষ্টটা আরেকটু সময় পর্যন্ত দেখতে পারতাম না তাই।”

মৃধা এবারে বোকার মতো চেয়ে থাকল। প্রেমিককে ভাইয়া বলে কোন পাগল? নাহ! রাহি মেয়েটা পাগল হবে কেন?দেখে তে সুস্থ মনে হয়। মৃধা ঘটনার আগামাথা না বুঝে প্রশ্নবোধন চাহনি ফেলে তাকাল। রাহিকে অনেকটাক্ষন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল।ততক্ষনে রাহি নিশীথকে উদ্দেশ্য করে শুধাল,

“তোমরা ছেলেরাই এমন। মেয়েদের দুর্বলতা জানতে পারলেই সুযোগ বুঝে কষ্ট দাও। কি নির্দয় তোমরা! ”

“ নির্দয়? নির্দয় হলে দুদিনের কষ্ট দেখে কি তোর সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসতাম?গুনে গুণে একমাস কষ্ট দিতাম। যেমনটা ও দিয়েছে একমাস ধরে আবির আবির করে। ”

রাহি হাসল। বলল,

“ কিন্তু তুমি তো হতে দিলে না আবির ভাইয়ার সাথে বিয়েটা। ”

ঠিক তখনই নিশীথের ফোনে ম্যাসেজ এল।নীলাদ্রী নিবিরও আসবে তাই। বলল,

“ নিলু, নিবির আসবে কলেজ থেকেে।বাইে দাঁড়িয়ে আছে, আনছি আমি হুহ?”

রাহি উত্তর দিল,

“ যাও যাও।”

অতঃপর নিশীথ বের হয়ে গেল। এই পুরো ঘটনাটায় মৃধা ছিল নিরব দর্শক। কিছুই বুঝল না। মাথায় কিছুই ডুকল না। শুধু বোকার মতো রাহির দিকে চেয়ে আছে। রাহি হাসল। এবারে বলল,

“ আমি ভাইয়ার প্রেমিকা নই ভাবি। তুমি যেভাবে দেখছো আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমি তোমার ননদ হই। ”

মৃধা অস্পষ্ট স্বরে বলল,

“ হু?”

রাহি ফের হেসে বলল,

“ তুমি আমায় কবে থেকে চিনো? ”

মৃধা অপ্রস্তুত স্বরে উত্তর দিল,

“ এইতো কয়েকমাস। যখন থেকে ভার্সিটিতে পড়ো..”

রাহি এবারেও হাসল। উত্তরে বলতে লাগল,

“ আমি তোমায় অনেক আগে থেকে চিনি। যখন আমি ক্লাস এইটে উঠলাম। প্রেম সম্পর্কীয় কথাবার্তা একটুআধটু বুঝতাম তখন। তখন ভাইয়া তোমার ছবি দেখিয়েছিল। জানিয়েছিল এটা আমার ফিউচার ভাবি।তারপর বাস্তবে দেখলাম ভার্সিটিতে উঠার পরই। কিন্তু কথা বলা হয়ে উঠেনি আর তোমার সাথে। ”

মৃধার চোখ বড়বড় হয়ে এল। বিস্ময়ে রাহির দিকে চেয়ে থাকল। কি আবোল তাবোল কথাবার্তা! কিছুই তো মিলছে না।

#চলবে…..