হৃদয়ে প্রণয়ের বাস পর্ব-১৩

0
14

#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#পর্ব_১৩
লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন

নিশীথের বাসা ছেড়ে মৃধা এসেছে আজ কয়েকদিন! মাঝে একবার নিশীথ রাগ রাগ ভাব নিয়ে স্বল্প কয়েক শব্দে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। অথচ মৃধা বেঁকে বসল। রাগে জেদে চোখমুখ লাল করে জবাবে শুধু এটুকুই বলেছিল,

“ নাটক করবি না নিশীথ! একদম নাটক করবি না। আমাকে তোরা গুঁটি বানালি তোদের খেলায়?আমার মূল্য এইটুকু? এতোটা অপমানিক আমি জীবনেও হইনি যতোটা এই ঘটনা জানাে পর থেকে লাগছে!”

নিশীথ কাটকাট গলায় বলল,

“ আমাকে কিছু এক্সপ্লেইন করার সুযোগটাই দিস নি মৃধা! আমারও কিছু বলার থাকতে পারে। ”

মৃধাও ফের বলল,

“ কিছুই শোনার নেই আমার। আমি তোকে সহ্য করতে পারছি না। কিচ্ছু সহ্য করতে পারছি। যত দ্রুত পারব ডিভোর্সের এপ্লাই করে আমি সবকিছু থেকে মুক্ত হবো। তারপর তোর সবকিছু থেকে দূরে যাব! সবকিছু থেকে! ”

সে কথাটুকু বলেই মৃধা কল রাখল। তারপর? তারপর আর নিশীথ যোগাযোগ করেনি। বরং এই কয়েকদিনে নিশীথের সাথে যতবার দেখা হয়েছে ততবারই নিশীথ রাগ নিয়ে চেয়ছিল তার দিকে।উপেক্ষা করে চলে গিয়েছে প্রতিবারই। মৃধা অবাক হয়! দোষ করল সে আর রাগও দেখাচ্ছে সে? উল্টো রাগ দেখানো তো উচিত মৃধার! মৃধা কি কিছু ভুল করেছে? নিশীথকে নিয়ে কি তার আরো ভাবা উচিত? মনে প্রশ্ন হয়, রাহি সেদিন কেন বলল তাকে অনেক আগে চেনে? অনেক আগে থেকে নিশীথ ভালোবাসত? রাহিও কি মিথ্যে বলেছিল? মৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশীথের কথা ভেবে। এইতো আজ বিকেলেই সে ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় দেখা মিলেছিল আবিরের সাথে। এমন নয় যে মৃধাই আবিরকে ডেকেছিল। তবুও আবিরকে দেখে উপেক্ষা করে চলে যাওয়ার সময় যখন আবির যেচে এসে কথা বলল তখন উত্তর না দিয়ে উপায় ছিল না। তাই দুয়েকটা কথা বলেছিল। ব্যস! তাতেই বোধহয় মৃধার ভুল হলো আরো একটা। রাগে জেদে নাক লাল করে নিশীথ তারই সামনে দিয়ে বাইক চালিয়ে চলে গেল আওয়াজ তুলে। আর তার একটু পরই খবর এল নিশীথ এক্সিডেন্ট করেছে। বেশি নয়,শুধু হাত ছিলে গেছে। খবরটা তাকে হৃদি দিয়েছে।তারপর থেকে বারংবার বন্ধুবান্ধবসহ নিবির নীলাদ্রীর থেকেও খবর নিয়েছে নিশীথের। তেমন গুরুতর আঘাত নয় জেনেও একবার মন চাইল নিশীথকে দেখে আসতে। আর সে দেখে আসার ইচ্ছেটা পূরণ হলো যখন নিশীথকে রাতের বেলায় দেখা গেল বাসার সামনের একটু দূরের মাঠটাতে। ব্যাডমিন্টন খেলছে। অথচ এই ছেলেটায় যে বিকালে আঘাত পেয়েছে, কে বলবে? মৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গুঁটিশুঁটি পায়ে পা চালিয়ে বাসা ছেড়ে নিচে গেল এই রাতেও। বাসার সামনে থাকা খেলার মাঠটায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দুয়েক পলক দেখল নিশীথকে। পরক্ষণেই চোখে চোখ পড়ল নিশীথেরও। দুইজনের দৃষ্টি মিলে যেতেই নিশীথ আচমকায় খেলা বাদ দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নিল। মৃধা ও নিশীথ এর মুখোমুখি গিয়ে বলে উঠল,

“ তুই এমন একটা ভাব করছিস যেন আমি দোষী। দোষটা আসলে তুই করেছিস নিশীথ।”

নিশীথ রাগ দেখিয়ে তাকাল। উত্তরে জবাব দিল,

“ হ্যাঁ আমি করেছি। তো? ”

“ তারমানে শুধু চ্যালেঞ্জ জেতার জন্যই এই বিয়েটা? ঐদিন রাহি যে বলল ও আমায় অনেক আগ থেকে চেনে! ওসব? ”

নিশীথ সরাসরি উত্তর দিল না। বলল,

“ সব জেনেও যে কিছুই না জানার ভান করে তাকে কিছু বলার নেই আমার। ”

মৃধা গলার স্বর দৃঢ় করে বলে উঠল,

“ তুই আমায় কিছু বলিসনি। ”

নিশীথ তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল। বলল,

“ বলার সময় দেওয়া হয়েছে আমায়? নাকি জানার আগ্রহ ছিল তোর? তুই মুখের উপরে বলে দিয়েছিস তুই ডিভোর্সের এপ্লাই করবি। আমাকে অসহ্য লাগছে, আমার সবকিছুই অসহ্য লাগছে। আবার ঐ আবিরের সাথে দেখাও করিস। দারুণ না? ”

মৃধা উল্টো প্রশ্ন ছুড়ল,

“ আমার মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে তোদের দুইজনকে আমাকে বিয়ে করার চ্যালেঞ্জই নিতে হলো কেন? আমি তো আবিরকে আগে চিনতামও না। তাহলে? ”

নিশীথ ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

“ তোর আবিরকে জিজ্ঞেস করিসনি ওটা?না করলে করে নিস। ওহ আচ্ছা, এখন কি বাসার নিচে ঐ আবিরের জন্যই দাঁড়িয়ে আছিস নাকি? ”

“ হুম, আবির তো আমার প্রেমিক। তোর সাথে ডিভোর্স্টটা হলেই ওকে বিয়ে করব। তাই! ”

নিশীথের মেজাজটা যেন আরো চটল। এক হাতে মৃধার চোয়ার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ মে’রে ফেলব! জাস্ট মে’রে ফেলব বলে দিলাম। আমার থেকে দূরে থাকছিস, ডিভোর্সের কথা বারবার বলেছিস মেনে নিয়েছি। কিন্তু ঐ আবিরের সাথে কিছু করতে গেলে জানে মে’রে দিব মৃধা!”

মৃধা অবাক হলো। নিশীথের এতোটা রাগ হবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি। এতোটা রাগ হওয়ার কারণই বা কি? গাল এতোটা চেপে রেখেছে যে ব্যাথা হচ্ছে। মৃধা কোনরকমে ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,

“ ছাড়, ব্যাথা পাচ্ছি। ”

নিশীথের রাগে শরীর কাঁপছে। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“ ব্যাথা পাওয়ার জন্যই তো ধরেছি এভাবে। ”

মৃধা ব্যাথায় অস্ফুট স্বরে ফের বলল,

“ ছা ড়। ”

নিশীথ তখন রাগে জেদে চোখ বন্ধ করে নিল। একইভাবে মৃধার গালটা চেপে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ বল আবিরের সাথে আর যোগাযোগ করবি না। ”

মৃধার এবারে কান্না এল। চোখ টলমল করল। তার ব্যাথা লাগছে।নিশীথকে বলার পরও একইভাবে গাল চেপে আছেে।বিষয়টা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে তার। কান্না আটকানো স্বরেই নিশীথের কথায় তাল মেলাল,

“ করব না। ”

“ কখনো আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা মুখে আনবি না। ডিভোর্সের কথা তো দূর! ”

মৃধা এবারেও তাল মেলাল,

“ আনব না। ”

” এখন আমার সাথে চুপচাপ বাসায় যাবি। ”

মৃধা এবারে তাল মেলাল না। বিপরীতে উত্তর করল,

“ না। ”

নিশীথ চোখ মেলল ধুম করেই। লাল টকটকে চোখে চেয়ে বলে উঠল,

“ যাবি! যাবি বল। ”

মৃধার আচমকা কি হলো কিজানি নিশীথের চোখের দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,

“ যাব। ”

নিশীথ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল এবারে।মৃধার গাল ছেড়ে আলতো করে হাত বুলাল লাল হয়ে যাওয়া গালটায়। ফোন বের করে নীলাদ্রীকে কল করে কিছু বলেই আচমকা কোলে তুলল মৃধাকে। তারপর পা চালিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠল,

“ যা যা বলে এগুলা মনে না রাখলে খুব খারাপ। ফিউচারে এই ভুলগুলো করলে কিন্তু আমি একটুও ছাড় দিব না। ”

মৃধা এবারে সত্যিই কেঁদে ফেলল। রাগে অভিমানে আর একটা শব্দও বের করল না মুখ দিয়ে। নিশীথ হাসল আড়ালে। পা চালিয়ে দ্রুত বাসায় যেতেই নীলাদ্রী দরজা খুলল। সবাই খাওয়ার পরই নিশীথ বেরিয়েছিল। এতক্ষনে সবাই ঘুমিয়ে গেছে, ড্রয়িং রুমও ফাঁকা। নিশীথ নীলাদ্রীকে দরজা অফ করর ঘুমিয়ে যেতে বলেই নিজের ঘরে গেল। মৃধাকে নামিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

“ কি ওজন তুই! কি খাস এত? ”

মৃধক এবারেও কথা বলল না। তার কান্না পাচ্ছে অযথাই কান্না পাচ্ছে জেনেও সে কাঁদছেে। কান্না থামাতে পারছে না। নিশীথ এবারে তার দিকে ঝুঁকল। লাল হয়ে উঠা দু-গালে বার কয়েক হাত বুলাল আবারও। পরমুহুর্তেই পুরু ঠোঁটজোড়া বারকয়েক ছোঁয়াল মৃধার দু-গালে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে দুইগালে হাত রেখে বলল,

“বেশি ব্যাথা পেয়েছিস সুখ? ”

মৃধা ফ্যালফ্যাল করে চাইল। সুখ নামটা তার পিচ্চিকালের নাম। নিশীথও ছোটকালে তাকে সুখই ডাকত। কিন্তু এতকাল পর এই নামটা শুনে আবেগ ভেসে এল। উত্তর না দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকল অনেকটাক্ষন। নিশীথ এবারে সম্মুখেই হাসল। উত্তরে বলল,

“ আমায় আর কখনো ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করবি না তো? ”

মৃধা এবারেও উত্তর করল না। নিশীথ হতাশ হলো। বলল,

“ আচ্ছা স্যরি! আর করব না এমন। আর কাঁদিস না। আমার কাঁটা জায়গায় একটু ঔষুধ লাগিয়ে দে তো। ”

কথাটা বলেই পরনের সোয়াটার টা খুলে নিল নিশীথ। বাম হাতের চিলে যাওয়া অংশটা মৃধার দিকে এগিয়ে দিয়েই এগিয়ে দিল ঔষুধটাও। মৃধা চোখ গোল গোল করে তাকাল। চিলে যাওয়া অংশে আলতো হাতে ঔষুধ লাগাতে লাগাতেই নরম স্বরে বলল,

“ নিশীথ? ”

“ হু। ”

“ এক্সিডেন্ট কি করে হলো তোর? বাইক চালানোর সময় কি চোখ মাথায় রাখিস? ”

“ নাহ তো, মন আপনার কাছে ছিল তাই। ”

#চলবে….