#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#পর্ব_১৫
লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে প্রিয় মানুষের ঘুমন্ত মুখটা দেখে হাসল নিশীথ। বাচ্চার মতো ঘুমোচ্ছে মেয়েটা। চুলগুলো ফর্সা মুখটায় এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। ঠোঁটটা শুষ্ক ঠেকছে।নিশীথের ইচ্ছে হলো মৃধার ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে শুষ্ক থেকে সিক্ত করতে। অথচ পরমুহুর্তেই ইচ্ছে বদল করে মাথা ঝুঁকিয়ে পরপর দুবার চুমু দিল মৃধার ফুলো গালগুলোতে। পরমুহুর্তে মৃধার গলার দিকটায় তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলল। অবাধ্য ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে মুখ এগিয়ে নিল মৃধার গলার কাছটায়। দুই হাতে মৃধার মুখ আগলে ধরে মৃধার গলার বামদিকটায় দৃঢ় চুমু এঁকে দিতেই মৃধা নড়েচড়ে উঠল নিশীথের অল্পস্বল্প দাঁড়ির সংঘর্ষে। মুখ কুঁচকে নিয়ে চোখজোড়া খুলতেই নিশীথ হাসল। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“ শুভ সকাল সুখ। শুভ সূচনা! কথা দিচ্ছি, আজকের পর সবটা ভিন্ন হবে, সবটাই! আজকের পর নো কম্প্রোমাইজ ম্যাম! ”
মৃধা বুঝে উঠল না পুরোটা কথা। তখনো আলতো ঘুমে সে। নিশীথ ফের মুখ ডুবাল মৃধার গলায়। সফেদ ফর্সা আর মসৃন গলাটায় আলতো চুমু দিয়ে বাঁকা হাসল। পরপরই ঘুমঘুম চোখে চেয়ে থাকা মৃধার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে তীক্ষ্ণ কামড় বসাল সে একই জায়গাতেই। তৎক্ষনাৎ মৃধা লাফ দিয়ে উঠল। কামড় দেওয়া জায়গাটায় হাত বুলিয়ে অগ্নিচোখে বলে উঠল,
“ তুই আমায় কামড় দিলি নিশীথ? তুই আমায়..”
নিশীথ হতাশ হয়ে চাইল। এইভাবে ক্ষেপে যাবে এইটা তার ধারণায় ছিল না। সে তো রোমান্টিক মুডে ছিল। অথচ তার বউ সে মুডের বারোটা বাজিয়ে রেগে রণমূর্তি হয়ে গেল। উল্টো তাকে কথা শুনাচ্ছে। মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল নিশীথ। কপাল চাপড়িয়ে বলল,
“ ভুল হয়েছে! আমার সত্যিই ভুল হয়েছে। আমার উচিত হয়নি তোর মতো গর্দভকে বিয়ে করা। ”
মৃধা ফের রাগ নিয়ে চাইল। ফুসে উঠে বলল,
“ কি বললি? ”
” কিছু না। ”
“ বলেছিস! ”
নিশীথ উঠে দাঁড়াল। মৃধার দিকে না চেয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
“ বলেছি তোর দিকে তাকালে উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলতে মন চায়। তুইতো আবার বাচ্চা মেয়ে। কিছু করে ফেললে রেগে যাবি। তাই আমার থেকে দূরে থাকবি এবার থেকে।”
মৃধার মন খারাপ হলো। দূরে থাকতে বলল কেন? আর আনলই বা কেন তাহলে? মুখ মলিন করে শুধাল,
“ আমি আসতে চেয়েছি? ”
নিশীথ মৃধার পানো চেয়ে ভ্রু বাঁকাল। বলল,
” না, তুই কেন আসতে চাইবি। অপরাধ হয়ো যাবে না? ”
মৃধা অভিমান নিয়ে বলল,
“ এনেছিস কেন? আমি তো চলে গিয়েছিলাম। ”
নিশীথ ঝুঁকে গেল বিছানায় বসে থাকা মৃধার দিকে। দুই হাত মৃধার দুইপাশে রেখে মৃধার মুখের দিকে চেয়ে উত্তর করল,
“ কারণ আপনাকে আমি বহুকষ্টে পেয়েছি। হাতছাড়া করার রিস্ক নিতে পারব না। ”
মৃধা মুখ ভেঙ্গিয়ে শুধাল,
“ ঢং! ”
“ ঢং কাহাকে বলে বুঝাব। জাস্ট ওয়েট! ”
কথাটুকু বলেই নিশীথ সরে গেল। মৃধা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে উঠে গেল। পা চালিয়ে রুম ছেড়ে কিচেনে যেতেই দেখা মিলল নিশীথের মায়ের সাথে। মৃধাকে দেখেই বলল,
“ আমি তো নিলুর কাছে একটু আগে শুনলাম তুমি এসেছো। তো, কেমন আছো?”
মৃধা অপ্রস্তুত বোধ করল। এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে রাতে চলে এসেছে বিষয়টা কেমন জানি লাগল তার। তবুও উত্তরে বলল,
“ ভালো, ভালো আন্টি। আপনি কেমন আছেন? আমি কিছু করে দিই আন্টি? সব কাজ তো আপনিই করছেন। ”
নিশীথের মা উত্তর দিল। মৃদু হেসে মৃধাকে দিল চা বানাতে। মৃধাও খুশি হলো। মনোযোগ দিয়ে চা বানাতে লাগল। মাঝেমাঝে কথাও বলছে। কিন্তু হঠাৎই নিশীথের মায়ের চোখে পড়ল মৃধার গলায় থাকায় লালচে দাগটা।তারপর উশখুশ করে অপ্রস্তুত স্বরে বলে উঠলেন,
“ ওড়নাটা মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে রেখো মৃধা। সুন্দর লাগবে তাহলে। ”
মৃধা কথাগুলো শুনে তাকাতেই ঐনি বোকা বোকা হাসলেন৷ আবারো কাচুমাচু করে বললেন,
“ ইয়ে মানে বাড়ির বউ হিসেবে সুন্দর লাগবে তোমায়। ”
মৃধা অবাক হলো। নিশীথের মক তার সাথে এভাবে আগে কখনো কথা বলেনি। সবসময় একটা দূরত্ব টেনে কথা বলত। কিন্তু আজ হয়েছে কি? বুঝে না উঠেই ওড়নাটা ঘোমটা হিসেবে দিল। চা বানিয়ে এক কাপ দি মাহমুদ সাহেবকে। আর দুই কাপ হাতে গেল নীলাদ্রীর ঘরে। নিবির নীলাদ্রী দুইজনেই আছে সেখানে। মৃধা দুইজনকেই কাপ দুটো এগিয়ে দিয়ে ভাব নিয়ে বলল,
“নে, তাড়াতাড়ি টেস্ট করে বলতো কেমন হয়েছে ?”
নীলাদ্রী হাসল। ঠোঁট টিপে হেসে নিবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ আমি জানি কালরাতে ভাইয়ার কোলে কোন একটা বড়বাচ্চা দেখেছিলাম ছোটভাইয়া। বাচ্চাটার নাম হয়তো মৃধা আপুর নামের সাথে মিলে গেছে বুঝলে? ”
মুহুর্তেই নিবির নীলাদ্রী দুইজনেই হেসে উঠল। মৃধা লজ্জায় লাল হলো। গালে রক্তিম আভা ফুটে উঠতেই মেকি রাগ দেখিয়ে নীলাদ্রীর দিকে তেড়ে গেল। আর তখনই ওড়না দিয়ে রাখা ঘোমটাটা পড়ে গেল। দৃশ্যমান হলো গলাটাও। ব্যস! এবারেই চোখে পড়ল নীলাদ্রীর বাঁকা চাহনিও। মুখ টিপে হেসে ফের বলল,
“ তোমার গলায় কি হয়েছে মৃধা আপু? ঠান্ডায় লাল হয়ে গিয়েছে বুঝি? ”
ব্যস আরেকদফা হাসি! মৃধা সন্দেহী ভাবনায় ভাবল। রান্নাঘরেও কয়েকবার নিশীথের মাকে গলায় তাকাতে দেখেছে সে কিন্তু কিছুই বুঝে উঠে নি। এখন আবার নীলাদ্রীর কথা শুনে বোকা বনে গেল। গলায় হাত দিয়ে বলল,
“ ঠান্ডায় কি করে লাল হয়? তোর মাথা কি গেছে নিলু? ”
এবারে নিবির বলল,
“ ও ভুল বলেছে আপু। আসলে তোমার গলায় বোধহয় কিছু কামড় দিয়েছে। দাগ বসে গেছে একদম! ”
ব্যস। আবারও হাসি। মৃধা এবারে বুঝে গেল যেন সবটা। মুহুর্তেই মুখ নামিয়ে হেঁটে গেল নিজের ঘরে। জলদি করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলা দেখল। লালচে দাগটা পরখ করে নিয়ে রাগে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে ডাকল,
“ নিশীথের বাচ্চা নিশীথ.. ”
নিশীথ তাকাল। মৃধা বলে উঠল,
“কি করেছিস কি নিশীথ? তুই…
তুই একটা বেয়াদব! ”
নিশীথ কিছু না জেনেই বলল,
“ কি করেছি? আশ্চর্য! ”
মৃধা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠল,
“ তুই আমার গলায় লাল দাগ করে দিয়েছিস। ”
নিশীথ বুঝল। কথাটা শুনেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। পা এগিয়ে মৃধার সামনে গিয়ে ভদ্র হওয়ার ভান ধরে বলল,
“ তাই নাকি? কোথায় দেখি? ”
মৃধক রেগে গেল। বলে উঠল,
“ সাধু সাজবি না, তুই মনে হয় জানিস না? ”
নিশীথ কিছুই জানে না এমন ভান করে বলল,
“ কি জানি? ”
” গলায় যে কামড় দিলি। দাগ পড়ে গিয়েছে। সবাই দেখে নিয়েছে।এমনকি আন্টিও। তুই দাগটা ফেলেই আমায়.. ”
নিশীথের পেট ফেটে হাসি এল। বাকি কথাটা না শুনেই লালচে দাগ হয়ে যাওয়া জায়গাটায় হাত বুলিয়ে বলল,
“ আয়, আরেকটু দাগ করে দিই। তাহলে সুন্দর দেখাবে। ”
মৃধা ক্ষেপে গিয়ে বলল,
“ নিশীথের বাচ্চা নিশীথ! ”
“ খারাপ কি বললাম আমি? নববিবাহিত বউ হিসেবে তোকে একটা কামড়ে মানাচ্ছে না। এদিকে আয়। নববিবাহিত বর হিসেবে দুয়েকটা চুমু দিয়ে দিই। ”
মৃধা মুখ কুঁচকাল। বলল,
“ ছিঃ! কার থেকে শিখেছিস এসব ফ্লার্টিং?”
“ ফ্লার্টিং না তো, সত্যিই চুমু দিব। এদিকে আয়।”
“ আমি কি তোর কথা মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চুমু নিব ভাবছিস? ”
নিশীথ হাসল। এক হাতে মৃধার কোমড়টা আঁকড়ে ধরে দ্রুত টানল নিজের দিকে। একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে অল্প ঝুঁকে গেল মৃধার পানে। মৃধার পাতলা ঠোঁটজোড়ার দিকে কিয়ৎক্ষন চেয়ে থেকে ঠোঁট বাঁকিয়ে শুধাল,
“ জ্বী নাহ, কিন্তু আমিও চুমু না দিয়ে হাত পা গুঁটিয়ে বসে থাকব ভাবলে ভুল ভাবছেন ম্যাম।”
মৃধা শুনল ঠিকই। কিন্তু উত্তর দেওয়ার সুযোগটা আর মিলল না তার। তার আগেই মৃধার পাতলা মিহি ঠোঁটজোড়া দখলে নিয়ে নিল নিশীথ। শুষ্ক ঠোঁটজোড়া সিক্ত করতে ব্যস্ত হয়েই কাটিয়ে দিল অনেকটাক্ষন। যেন নিজের ধ্যান জ্ঞান সব ভুলে বসেছে। অপর পাশে মৃধা ছাড় পাওয়ার অপেক্ষায় ছটফট করল।অবশেষে যখন ছাড় ফেল তখন সমানে হাপিয়ে যাচ্ছে সে। ঠোঁটজোড়া নেড়ে হাপাতে হাপাতে বলতে নিল,
“ তু্্ তুই একটা অভদ..”
অথচ এবারেও সে কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারল না। নিশীথ আবারও দখলে নিল ঠোঁটজোড়া। অধরজোড় নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে সিক্ত করে তুলে অবশেষে বলল,
“ তোর কাছে আমি অভদ্রই হতে চাই। ভদ্র হয়ে লাভ কি সুখ! ”
#চলবে..