হৃদয়ে প্রণয়ের বাস পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
14

#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#অন্তিম_পর্ব
#লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন

“ বিয়ে হয়েছে অনেকদিন! অথচ আজও বাসর করতে পারিনি আমি। কি হতভাগা কপাল আমার! ”

আকস্মিক কথাটা শুনে মৃধার কান গরম হলো। উষ্ণ হাওয়ায় নাক মুখ উষ্ণ হয়ে এল। তাকিয়ে দেখল কথাটা একটু দূরে লিয়নকে শোনাচ্ছে নিশীথ। মৃধা শুকনো ঢোক গিলল। সেদিনের নিশীথের উন্মাদময় চুমুর পর থেকেই এই কয়েকদিন নিশীথ জ্বালিয়ে মারছে। হুটহাট ঠোঁটে, গালে, মুখে, গলায় চুমু দিচ্ছে আর লজ্জায় ফেলছে। ঘুমানোর সময় জড়িয়ে নিচ্ছে, সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখেচোখে চুমু দিয়ে সকালে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। মৃধা নিশীথের হুটহাট চুম্বনে মোটামুটি অভ্যস্থ হয়ে নিলেও এই কথাটায় লজ্জা পেল। তবুও লজ্জা ডেকে রাহির সাথে কথা বলে গেল। কাল রাতেই রাহির ফ্লাইট। লিয়ন সেদিন রাহিকে সময় দিবে বলেও অবশেষে রাহিকে হতাশ করেছিল। সেদিনও আসেনি। অবশেষে রাহির চলে যাওয়ার আগের দিনটাই সময় দিল রাহিকে। মাঝে দুপুরে মৃধা আর নিশীথও এল রেস্টুরেন্টে। নিশীথ আর লিয়ন একটু দূরেই দাঁড়ানো এখন। তাই কথাটা রাহি শুনল না। মৃধা বলল,

“ ওখানে সব ছেড়ে যেতে ভালো লাগবে রাহি? ”

রাহি হাসল। সে হাসিটায় কতোটা বেদনা জড়িয়ে ছিল তা হয়তো সে নিজেই জানে না। উত্তরে বলল,

” সব ছেড়ে? এখানে আমার আছেও বা কি ?”

কথাটা রাহি হেসে হেসে বললেও মৃধার কষ্ট হলো। সত্যিই তো! আছেই বা কি।বারো বছর বয়স থেকে একটা মেয়ে বেড়ে উঠছে হোস্টেলে। মৃধার বুক ভার হলো। রাহির হাতটা চেপে ধরে বলল,

“ তোমার ভাইয়া আছে, আমি আছি, নিবির আছে, নীলাদ্রী আছে। ”

“ হু, আছো তো। তাই তো তোমাদের এতোটা ভালোবাসি। ”

মৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলে,

“ আমি আঙ্কেলকে মানিয়ে নিব। তোমায় বাসায় নিয়ে যাবো। আমরা একসাথে এক পরিবারে থাকব একটা সময়।দেখো? ”

“ তা তো কখনোই সম্ভব নয় ভাবি। বাবা আমায় মানে না। মায়ের কৃতকর্মের শাস্তিটা আমাকেই দিয়েছেন আব্বু।আমি তোমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করব।সত্যি বলতে প্রথম প্রথম মানাতে তো আমারও অনেকটা কষ্ট হবে। তোমাদের অনেক ভালোবাসি তো। ”

“ আমরাও তোমায় অনেকটা ভালোবাসি রাহি। মন খারাপ করবে না। ”

রাহি হেসে উত্তর করল,

“ মন খারাপ কেন করব। ভালোবাসা আমার কপালে জুটে না। ছোট থেকেই আমি যাদের খুব বেশি ভালোবেসেছি তারা কেউই আমায় ভালোবাসেনি ভাবি। না বাবা, না মা, আর না তো..”

শেষের শব্দটা রাহি ইচ্ছে করেই উচ্চারণ করল না। মৃধা ভ্রু কুঁচকে বলল,

“ আর নাহ তো?”

রাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,

“ কিছু না৷ ”

মৃধা আচমকাই জিজ্ঞেস করল,

“ তুমি কি কাউকে ভালোবাসতে রাহি? মানে আগে কখনো প্রেম ভেঙ্গেছে তোমার? ”

রাহি হাসল। বলল,

“ প্রেমই তো হলো না ভাবি। শুধু তাকে দেখি, অনুভব করি আর ভালোবেসে যাচ্ছি। অথচ তার মনে আজও এইটুকু জায়গা করতে পারলাম না। কি নিষ্ঠুর! ”

“ কে সে? ”

“ দুদিন পর এমনিতেই তাকে ভুলার চেষ্টা চালাতে হবে ভাবি। ”

মৃধা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

“ কেন?”

রাহি মলিন হেসে বলল,

“ সে আমায় কেবল আজকে দিনটা সময় দিচ্ছে। তারপর তাকে ভুলে যাওয়ার শর্ত দিয়েছে। আর কখনোই আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারব না আজকে পর। ”

মৃধা বিস্ময় নিয়ে চাইল এবারে লিয়নের দিকে। মুহুর্তেই বলল,

“ লিও? তুমি লিওকে ভালোবাসো রাহি? ”

.

সেই সকাল থেকে রাত পুরোটা সময় আজ রাহির জন্য রেখেছে লিয়ন। মাঝখানে দুপুরে নিশীথ আর মৃধাও এসেছিল। একটু আগে রাহির থেকে বিদায় নিয়ে ফিরেও গেল। লিয়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোতে বেরোতে বলল,

“ আর কিছু খাবে রাহি? ”

“ না না। ”

“ আচ্ছা। ”

বলেই রিক্সা ডাকল। রাহিকে উঠার জন্য বলে তাকাল রাহির পানে। রাহি আজ শাড়ি পরেছে। হালকা গোলাপি রংয়ের শাড়ি৷ সিম্পল সাজ! কেন জানি না লিয়নের কাছে অপূর্ব লাগছে এই মেয়েটাকে আজ। না চাইতেও তাই বারবার চোখ কেবল রাহির দিকেই যাচ্ছে। রাহি সে দৃষ্টি খেয়াল করলে বুঝতে পারত সে দৃষ্টিতে লুকিয়ে আছে কতোটা প্রেমিকসত্ত্বা, কতোটা প্রেম! অথচ রাহি সে দৃষ্টিতে চোখই রাখল না। উঠে বসল রিক্সায়। পরমুহুর্তে লিয়নের পানে তাকাতে লিয়ন অপ্রস্তুত হয়ে নজর সরাল। দ্রুত উঠে বসল রিক্সার অপর কিনারায়৷ তারপর রিক্সাটা ছুটে বেড়াল শহরের অলিতে গলিতে। পুরো বিকালটা তারা নিরবে শহরই ঘুরল। এরপর অনেকটা দূর গন্তব্যের পর রিক্সা থামল একটা নদীর কিনারায়৷ লিয়ন নিজেই ভাড়া মিটিয়ে হাত বাড়াল রাহির পানে। বলল,

“ নামো। ”

রাহি বিস্ময় নিয়ে চাইল। লিয়ন হাত বাড়িয়েছে?প্রথমে বিশ্বাসযোগ্য নাহলেও পরমুহুর্তেই হাতে হাত রাখল। সুন্দরভাবে নেমে পড়ে বলল,

“ আর কিছু মুহুর্ত আপনার সাথে লিয়ন ভাই। এই কিছু মুহুর্তের জন্য আমার প্রেমিক হবেন? ভালোবাসার মানুষ হবেন? ”

লিয়ন চাপাশ্বাস ফেলে উত্তর দিল,

“ হলাম। ”

রাহি বিস্ময় নিয়ে তাকাল আবারও। নদীর কিনারায় গিয়ে বসল দুজনেই। সন্ধ্যার অপরূপ দৃশ্যটা দেখতে দেখতে রাহি বলল,

“ লিয়ন ভাই?”

“বলো। ”

“ আমার কপালে একটা চুমু দেওয়া যায়? এইটুকুই শেষ আবদার! আমি এইটুকু স্মৃতি নিয়ে আজীবন বেঁচে থাকতে পারব। ”

লিয়ন তাকাল। কথা এড়িয়ে বলল,

“ হ্ হু?নৌকা চড়বে রাহি? এসো,তোমায় নদী ঘুরিয়ে দেখাই। ”

রাহি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল। শুধাল,

“ এড়িয়ে গেলেন? ”

লিয়ন উত্তর দিল না। এর পরের সময়টা তারা নৌকাতে কাঁটাল। পুরোটা নদী ঘুরল। শীতকাল। তাই ঠান্ডাও লাগছে অনেকটা। তবুও অনেকটা সময় কাঁটিয়ে লিয়ন একটা শাপলা তুলল নদীর কিনারা থেকে। রাহির কানে গুঁজে দিয়ে বলল,

“ তোমায় সুন্দর দেখাচ্ছে রাহি। ”

রাহি উত্তর করল না। নিশ্চুপে উপভোগ করল। তারপর নৌকাভ্রমন শেষে যখন হোস্টেলে পৌঁছাল তারা তখন রাত আটটা। রাহি চলে যাওয়ার মুহুর্তেই লিয়ন আচমকা তার হাত ধরল। পরমুহুর্তে মুখ আগলে ধরে আলতো চুমু দিল কপালে। বলল,

“ নিজের খেয়াল রেখো রাহি। নিজের যত্ন করো। ও দেশে নিজের সুন্দর জীবনটাকে গুঁছিয়ে নিও। আর? আর আমায় ভুলে যেও। ভালো থেকো। ”

কথাটুকু বলেই পিঁছু ঘুরল লিয়ন। রাহি ফ্যালফ্যাল চাহনিতে চেয়ে থাকল। এটাই শেষ দেখা! এটাই শেষ কথোপকোতন। রাহির চোখ টলমল করল। তীব্র বিষাদে বুক জ্বালা হলো। নিঃশ্বাস নেওয়টাই যেন হয়ে উঠল দুঃসাধ্য!

.

রাহিকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এল নিশীথ, মৃধা আর নিবির, নিলাদ্রী। মৃধার পরনে লাল টকটকে একটা শাড়ি। সুন্দর দেখাচ্ছে। নিশীথ দুয়েকবার বারণ করেছিল শাড়ি পরে বের হতে। তবুও মৃধা শাড়ি পড়েই বের হলো। নিশীথ বোনের চলে যাওয়াতে উদাস হয়ে এই বিষয়ে আর মাথা ঘামাল না। রাহিকে পৌঁছো দিয়ে যখন ওরা বাসায় ফিরল তখন রাত দুটো। মৃধা ক্লান্ত শরীরে চেঞ্জ না করেই সেভাবে শুঁয়ে পড়ল।কম্বল জড়িয়ে নিল শরীরে। নিশীথ ফ্রেস হয়ে আসল তার একটু পর। টানটান করে শুঁয়ে মৃধার চেয়ে কম্বল টেনে আনল নিজের শরীরেও। গম্ভীর গলায় বলল,

“ রাহিটা চলে গেল। যাওয়ার সময় বোধহয় ও আব্বুকে একটাবার হলেও দেখতে চেয়েছিল! ”

মৃধা ফ্যালফ্যাল করে তাকাল। রাহির জন্য হুটহাটই তার দুঃখ হয়৷ কান্না পায়। তবে এই মুহুর্তে সে মন খারাপ দেখাল না। নিশীথের মন খারাপ দূর করতে বলল,

“আঙ্কেলকে আমি বুঝিয়ে নিব। একটু সময় দে। ঠিকই বুঝাব যে রাহি আঙ্কেলেরই মেয়ে।”

নিশীথের কান্না পাচ্ছে কেমন। এই প্রথম বোনের জন্য তার এতোটা কান্না পাচ্ছে। অথচ কাঁদতে পারছে না।চোখ লালচে দেখাচ্ছে। মৃধা তা দেখে লজ্জা ভুলে আলতো করে জড়িয়ে ধরল নিশীথকে। বলল,

“ তোর কি কান্না পাচ্ছে নিশীথ? ”

নিশীথ তাকাল। বলল,

“ ও আমার এইটুকু বোন ছিল মৃধা। কত্ত ছোট্ট! অথচ ও জীবনে কতকিছু ফেইস করল। কতকিছু! কখনোই কিছু পেল না। অবশেষে সব ছেড়ে কতদূরে চলে গেল ও৷ আমার আজ আচমকাই কান্না পাচ্ছে। সে বাচ্চাদের মতো করে। কি হতো যদি আমার বোনটারও স্বাভাবিক একটা পরিবার হতো? বাবা মা থাকত? ”

মৃধা এবার হুট করেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নিশীথকে। মুখটা তার নিশীথের গলার কাছে। মৃধা লাজ লজ্জা ভুলে নিশীথের মন খারাপ ভুলাতে দুটো চুমু খেল নিশীথের গলায়। শেষে থুতনিতে চুমু দিয়ে বলল,

“ ও ফিরবে তো। ফিরলে দেখিস ও একটা নতুন পরিবার পাবে,বাবা পাবে, ভাই পাবে, বোন পাবে। সব পাবে। আমি কথা দিচ্ছি নিশীথ তুই তোর বোনকে হারাবি না। ”

আচমকা এত কাছে মৃধাকে পেয়ে আর ওর মেয়েলি অধরের ছোঁয়া পেয়ে নিশীথের কেমন কেমন লাগল। এই ঠান্ডায়ও উষ্ণ অনুভূত হলো শরীর। শুকনো ঢোক গিলল তৎক্ষনাৎ। নিজেকে সংযত রেখে বলল,

“ দূরে যা মৃধা,মন উদাস। ”

বোকা মৃধা ভাবল নিশীথ তাকে মন খারাপে সঙ্গী করবে না দেখে বলল। জেদ করে বলল,

“ যাব না, কি করলে মন ভালো হবে তোর বল? ”

“দূরে যা, ভালো হবে না মৃধা। ”

মৃধা এবারেও গেল না।নিশীথের এতোটা মন খারাপে ছাড়তে চাইল না। অপর দিকে নিশীথ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে গলা শুকনো বোধ করল। গমগমে স্বরে বলল,

“ জ্বালাচ্ছিস? আমি কন্ট্রোল হারালে কিন্তু তোরই ক্ষতি হবে। ”

মৃধা নিশীথের পানে চেয়ে বলল,

“ কি করলাম? শুধু জিজ্ঞেস করলাম কি করলে মন ভালো হবে তোর।আচ্ছা? চা করে আনি তোর জন্য?”

নিশীথ হাসল এবারে। তারই তো বউ ভেবে নিজেকে আর দূরে রাখার চেষ্টা করল না। মন খারাপ ভুলে হেসে বলল,

“ প্রয়োজন নেই, ভালোবাসলেই হবে।”

মৃধা বোকার মতো আওড়াল,

“ ভালোবাসি তো। সে কিশোরী কাল থেকে তোকে ভালোবেসে আসছি নিশীথ। কিন্তু বলা হয়নি কখনো। এবার হাস একটু।”

“ আরেকটু ভালো করে ভালোবাস৷ নয়তো মন ভালো হবে না। ”

কথাটা বলেই দুইহাতে জড়িয়ে নিল মৃধাকে। মৃধা ফ্যালফ্যাল করে তাকাল। আচমকা কি যেন ভেবে বসল মন। মুহুর্তেই ঢোক গিলল। নিশীথ তখনো তার মুখে তাকিয়ে। ওর নরম গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে উঠল,

“ তুই কাছে এলেই আজকাল আমার কেমন লাগে। তুই কাছে থাকলেই গলা শুকিয়ে আসে৷ তুই আমায় এতোটা কেন আকৃষ্ট করিস? কি জানিস তুই? ”

কাঁপা স্বরে মৃধা উত্তর করল,

” আ্ আমি? ”

নিশীথ মৃধার মুখে চেয়ে আবারও বলল,

“তোকে লাল শাড়িতে সুন্দর দেখাচ্ছে। খুব বেশিই। এই সাজে বাইরে গেলি কেন হুহ?”

মৃধা শুকনো গলায় বলল,

“ এমনিই! ভাবলাম ভাবি হিসেবে ননদকে পৌঁছে দিতে যাচ্ছি। তাই শাড়ি পরে গিয়েছি।”

“ খুব ভাবি হয়ে গিয়েছিস না? ”

মৃধা উত্তর দিল না। নিশীথ মৃধার চুলগুলো কপালে এলোমেলো করে দিতে দিতে বলে উঠল,

” তুই আমার কাছে আসলি কেন? জড়িয়ে ধরলি কেন? চুমু দিলি কেন? এখন আমার এই সাজ এলোমেলো করতে ইচ্ছে করছে। কি করব বল? ”

মৃধা বুঝতে পারছে এর পরের ঘটনা কি হতে যাচ্ছে। তাও অস্ফুট স্বরে শুধাল,

“ হ্ হু?”

নিশীথ মুখ গুঁজল মৃধার গলায়। আকুতি নিয়ে প্রশ্ন করল,

“ তুই কি আজ আমার হবি সুখ? ”

মৃধা চোখ বুঝে নিল।নিশীথের স্পর্শে শিহরণ জাগছে। মৃদু কম্পনে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। তবুও না বুঝার ভান ধরে বলল,

“ তোর তো। ”

“ আমি কি তোকে ভালোবাসতে পারি? তুই কি প্রস্তুত আমার হতে? আমি কি তোর সাজ এলো…”

মৃধা অযুহাত খুঁজছিল। গলা শুঁকিয়ে আসছে তার। নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে হয়ে আসছে। কি অসম্ভব গাঢ় অনুভূতি। নিশীথ যখন নিজের সমস্ত নিয়ন্ত্রন হারাতে নিল তখন আচমকাই মৃধা অযুহাত দিয়ে মিনমিনে স্বরে বলল,

“ ঘুম আসছে আমার। ”

নিশীথের রাগ হলো এবারে। হুট করেই মৃধাকে ছেড়ে দিয়ে দূরত্ব টানল। শুধাল,

“ আর কতোটা সহ্য করব। কতোটা অত্যাচার করে শান্তি পাবি? ”

মৃধা শুকনো ঢোক গিলে শুধাল,

“ কি অত্যাচার করেছি? ”

” এই যে মাঝেমাঝে শাড়ি পরে ঘুরঘুর করিস আমার সামনে। আমার সাথে একসাথে ঘুমাস। কখনো বা জড়িয়ে ধরছিস ঘুমের মধ্যে৷ কখনো বা ঘুমের মধ্যে আমার গায়ে হাত পা তুলে দিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিস। আর আমি ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর তোকে চেয়ে চেয়ে দেখি আর কপাল চাপড়ে মরি।এই যে এখন শাড়ি পরে ঘুমাবি। ঘুমের মধ্যে তো তোর শাড়ি এদিক ওদিক হলেই কিন্ত… ”

বাকিটা বলতে না দিয়েই মৃধা বলে উঠল,

“ ভালো হচ্ছে না কিন্তু নিশীথের বাচ্চা নিশীথ। ”

নিশীথ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,

“ খারাপটা কি হবে?”

মৃধা এবার গলা চে’পে ধরল বলল,

“মে’রে দিব জাস্ট!”

“ মে’রেই তো দিয়েছিস। সেই কবে, কোনক্ষনে! কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই ম’রে যাব।আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে বোধহয় আর কিছুটা সময় পর। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। এতোটা অসুস্থ লাগছে আমার!”

মৃধা ফ্যালফ্যাল করে তাকাল এবারে। আরেকটু পাশ ঘেষে হাত দিয়ে নিশীথের কপাল গলা পরখ করল। জ্বর আসল কিনা? নরম গলায় জিজ্ঞেস করল,

“ জ্বর তো আসে নি। অসুস্থ লাগছে বেশি তোর? কেমন লাগছে?”

নিশীথ ফের জড়িয়ে ধরল মৃধাকে। কানের কাছে ফিশফিশ করে বলল,

“তোকে যদি তোর প্রিয় বিরিয়ানি সামনে রেখে নানা ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে বুঝাই এটা তোরই জন্য।শুধুমাত্র তোরই জন্য। কিন্তু শেষ মুহুর্তে অযুহাত দিয়ে না দিয়ে কেড়ে নিই কেমন লাগবে বল? আমার এখন এমন লাগছে। ”

” কিন্তু আমি তো সত্যিই তোর। সবসময়ের জন্য। ”

নিশীথ কানের লতিতে চুমু এঁকে শুধাল,

“ হু, আমরই তো তুই। কি আমার না? ”

মৃধা চোখ বুঝল। অযুহাতে বুঝি আর লাভ হবে না বুঝে নিয়ে আড়ষ্ট স্বরে জবাব দিল,

“ হু। ”

“ করে নিই তাহলে আমার করে? ”

মৃধা এবারে আর উত্তর করতে পারল না। গাল লালচে হয়ে এল। কান দিয়ে উষ্ণ ধোঁয়া উড়ছে যেন। আচমকা লজ্জা লুকোতে মুখ লুকাল প্রিয় পুরুষটির বুকেই। আর সেই লজ্জা লুকানো মুখটিকেই নিশীথ সম্মতি হিসেবে নিল। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে আগলে নিল তার সুখকে। তারপর? তারপর ভেসে গেল অজানা প্রেম জোয়ারে। দুইজন দুইজনের সংস্পর্শে পাড়ি জমাল সুন্দর একটি প্রণয়গল্পে!

#সমাপ্ত…