#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_০২
লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন
“ নিশীথ? একটু আগে যে মেয়েটা আসল সে মেয়েটা সুন্দর না দেখতে? তোর সাথে অনেক মানাবে কিন্তু৷ কথা বলব? ”
খাবার টেবিলে রাহি, নিবির নীলাদ্রী সবার খাওয়াই যখন শেষ পর্যায়ে তখনই নিশীথকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে মৃধা ভ্রু নাচিয়ে চোখ টিপল। দুপুরের উদ্দেশ্যে লিয়ন চলে যাওয়র পরই খুব হালকা রান্নাবান্না করেছে মৃধা। বোকা রাহি ঘুম ছেড়ে উঠল একটু আগেই। জানতেই পারল না তার প্রিয় পুরুষটি এসে তার কপালে ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে কবে চলে গেল। রাহি মৃধার কথা শুনে হাসে। নিশীথ তখন ত্যাড়া চাহনিতে মৃধার দিকে একবার তাকাল।একটু আগে যে মেয়েটা এসেছিল সে মেয়েটাকে নিশীথ চেনে না। কোনদিনও দেখেও নি। তবে মৃধার থেকে জানতে পেরেছে মেয়েটা লিয়নের ফ্ল্যাটের মানে এই ফ্ল্যাটটার পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে। পরিচিত হতে এসেছিল শুধু তাদের সাথে। নিশীথ এবারে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। মৃধাকে রাগাতে উত্তরে বলল,
“ হু মেয়ে তো সত্যিই সুন্দর দোস্ত৷যা যা, কথা বলে আয় তো। কি বলিস রাহি, নিলু, নিবির? তোদের নতুন ভাবি হলে খারাপ কি বল? ”
মৃধার মুখ চুপসে গেল।রাগ নিয়ে মুখ লাল করে চাইল নিশীথের দিকে। খাবার খাওয়া থামিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে উঠল,
“ বাহ বাহ! মেয়ে দেখেই মনে হচ্ছে তোর মাথা ঘুরিয়ে গিয়েছে।”
নিশীথ হাসল। আচমকা আলতো করে পা ছোঁয়াল মৃধার পায়ে। ভাইবোনের সামনেই বলে বসল,
“ আমার মাথা চব্বিশঘন্টাই ঘুরায়। তার জন্য অন্য মেয়ে দেখার প্রয়োজন পড়ে না৷ আপনাকে দেখলেই তো আমার হুশ থাকে না ম্যাম। ”
মুহুর্তেই খাবার টেবিলে বসা প্রত্যেকে হাসিতে ফেটে পড়ল। রাহি লাজুক হেসে শুধাল,
“ ভাবি? রাগ করো না, রাগ করো না। আমার ভাই সত্যিই তোমায় ছাড়া অন্য কারোর দিকে তাকায় না৷ সত্যিই। ”
নিশীথ সঙ্গ দিয়ে বলল,
“ একদম একদম! তোর ভাই একদম লয়্যাল পার্সন! অথচ এই মৃধার বাচ্চা মৃধা শুধু শুধুই দোষারোপ করে। ”
মৃধা মুখ ভেঙ্গাল। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“ এতই যদি লয়্যাল হতি তাহলে তাকালি কেন মেয়েটার দিকে? ”
নিশীথ মৃধাকে আরো রাগাতে বলে উঠল,
“ তাকালাম আরকি। সুন্দরী মেয়েদের দিকে ছেলেরা না তাকালে পাপ হয় জানিস না? ”
মৃধা রাগে ফুলছে। রাহি, নিবির,নিশীথ আর নীলাদ্রী সবারই তখন খাওয়া শেষ। সবাই যখন খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়াল তখনই মৃধা রাগে দুঃখে ভাতের সাথে কাঁচা মরিচ চিবালো। ঝালে চোখে পানি চলে এল যেন। টকটকে চোখ নিয়ে বলল,
“ হু, যত পাপ তো কেবল তোরই হয়৷ ফিমেইল কলিগের বাসায় না গেলে পাপ হয়, সুন্দরী মেয়েদের দিকে না তাকালে পাপ হয়! খালি আমার বেলাতেই সব পুণ্য হয় তোর!”
কথাগুলো বলেই ঝালে হাপাতে লাগল। ঠোঁট লালচে হয়ে এসেছে। কোমল ঠোঁটজোড়া ফাঁকা রেখে হাঁপাতে হাপাতেই টলমল চোখে বলল,
“ আমার তোকে অসহ্য লাগছে নিশীথ। আমার চোখের সামনে সর৷ এক্ষুনি সর। ”
নিবির, নীলাদ্রী আর রাহি ভাই-ভাবির ঝগড়ায় না থেকে বরং তাদের স্পেস দিয়ে চলে গেল এবারে। নিশীথ হাসল। রাগে লাল হয়ে থাকা মৃধার দিকে চেয়ে তার হাসি পাচ্ছে। পরমুহুর্তেই চোখ গেল ঝালে লালচে হয়ে উঠা ঠোঁটজোড়ায়। মৃদু ফাঁক হয় আছে। ইশশ! নিশীথ বহু কষ্টে লোভ সামলাল ঠোঁট জোড়া দখলের। শুকনো ঢোক গিলে শুধাল,
“ তা কি করে হয় জান!সরলে চলবে না। তোমার রাগ না কমালে শান্তি লাগবে না আমার। ”
মৃধা রেগে থাকাল।ফের বলল
“ তুই এক্ষুনি যাবি। ”
“ যাব না। ”
“ ভালো। আমি যাচ্ছি। ”
কথাটুকু বলেই মৃধা হাত ধুঁয়ে উঠল। ওখান থেকে কয়েক পা এগিয়ে চলে যেতে নিলেই আচমকা হাতে টান অনুভব হলো। আর সে টানেই নিশীথ তাকে নিয়ে এল একটা রুমে। বাসাটা তিনরুমের। তারই মধ্যে এই রুমটা একটা। নিশীথ যখন দরজা আটকে তাকে দরজার সাথে চেপে ধরল ঠিক তখনই মৃধা ঝাঝাল স্বরে বলল,
“ আমায় টেনে এনেছিস কেন? ”
নিশীথ মোহিত নয়নে চাইল। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“ কারণ তুমি হাপাচ্ছো। আর.. ”
“ আর?
নিশীথ এবারে ওর ঠোঁট দিকে চাইল। মৃধা এখনও ঝালে হাপচ্ছেে।চোখ লালচে ঠেকছে। উফ! কে বলেছিল ঝাল খেতে?নিশীথ শুধাল,
“ আর তোমার ঠোঁটজোড়া লোভনীয় লাগছে জান। লোভ সামলাতে পারছি না। তুই তো জানিস আমি তোর বেলায় কতোটা লোভী!”
” নিশ..”
বাকিটা মৃধা বলতে পারল না। তার আগেই মৃধার ঠোঁটজোড়া নিশীথের আয়ত্ত্বে গেল। লালচে হয়ে উঠা নরম ঠোঁটজোড়া মুহুর্তেই পিস্ট হলো নিশীথের পুরু ঠোঁটজোড়ার কাছে। মৃধা হার মানতে চাইল না। রাগে দুঃখে নিশীথকে ছাড়াতে চেয়ে ইচ্ছেমতো কিল ঘুষি বসাল নিশীথের বুকে ঘাড়ে। নিশীথ বেচারা এক পর্যায়ে মৃধাকে ছেড়ে দিয়েই বলল,
“ কি ডাই’নিরে তুই! ঘুষি কি আর বাকি রেখেছিস দিতে? না আর আর কয়টা দিবি?”
মৃধা তখনো সমানে হাপাচ্ছে।আগে হাপাচ্ছিল ঝালের তাড়নায় আর এখন আস্ত এক নিশীথের অত্যাচারে। নিশীথ সেদিক পানে তাকিয়ে আবারও বেসামাল হতে নিল।মৃধার ঠোঁটজোড়া তখনও আকর্ষনীয় ঠেকছিল, নিশীথকে টানছিল। কিন্তু নিশীথ পরমুহুর্তেই শুকনো ঢোক গিলে দূরে এসে দাঁড়াল৷ বিরবির করে বলল,
“ নিজেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করে যে আমার পাগল পাগল লাগে। আবার ঢং করে জিজ্ঞেস করবে যে, সব জায়গা কি তোর বেডরুম? ”
মৃধা রাগে ক্ষোভে বিরক্ত হয়ে তাকাল। অসন্তোষ স্বরে বলল,
” নিশীথের বাচ্চা নিশীথ! এক থা’প্প’ড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিব। একটু আগে অন্য একটা মেয়েকে ওদের ভাবি বানানোর কথা বলে এখন আমাকে টেনে এনে এসব করছিস কোন সাহসে? ”
“ অন্য কোন মেয়ের সাথে তো করছি না। তোর সাথেই তো…”
মৃধা রেগে তাকাল। বলল,
“ এটা তোর বাসা? এখানে এসব করতে এসেছিস তুই? স্থান কালের জ্ঞান হারিয়েছিস? ”
নিশীথ দরজা খুলে চলে যেতে নিল এবারে। পরমুহৃর্তেই কি বুঝে মৃধার কানে কানে বলল,
“ না, কিন্তু বউ যদি স্থান কাল সব জায়গায় আমার হুশ নষ্ট করে আমি কি করব? কে বলেছিল ঝাল খেয়ে ঠোঁট লাল করতে? আর ওভাবে হাপাতে? আমি বলেছিলাম? আমায় পাগল বানিয় নিজে আরামে ঘুরবি এটা আমি মেনে নিব? ”
কথাটুকু বলেই নিশীথ বেরিয় গেল। মৃধা হা হয়ে চেয়ে থাকল। হাতটা নিজে নিজেই গেল ঠোঁটের উপরে।
.
নিবির, নীলাদ্রী একটু আগেই বাসায় ফিরে গিয়েছে। রাহি এসেছে থেকেই সবার সাথে বেশ হাসিখুশিই থাকল। মৃধা অবশ্য এতে খুশিই হলো। অতঃপর সে খুশিটা বাড়াতে নিশীথ,মৃধা আর রাহি একসাথেই বের হলো রাহির জন্য কিছু কেনাকাটা উদ্দেশ্যে। তারপর এত এত কিছু কিনতে কিনতে আচমকাই সম্মুখীন হলো লিয়নের সাথে। রাহি বিস্ময় নিয়ে চাইল। লিয়নকে আগের থেকেও অনেকটা সুদর্শন দেখাচ্ছে। পরনে কালো রাঙ্গা শার্ট। হাতা গুলো ফোল্ড করা। রাহি প্রথম দেখাতেই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকল। পরক্ষণেই সবকিছু মনে করে দ্রুত নজর সরাল। প্রতিজ্ঞা করল এই মানুষটার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা সে কখনোই বলবে না। চিরতরে ভুলে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল পাঁচ বছর আগে। আর কখনো যোগাযোগ না করার শর্তও তো দিয়েছিল লিয়ন। রাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে৷ লিয়নকে দেখে অন্য পাশে চলে যেতে নিতেই মৃধা বলে উঠল,
“ এই লিও? লিও, এদিকে আয়।”
লিয়ন তাকাল। মৃধাকে দেখেই এগিয়ে এল দ্রুত। রাহি এবারে উশখুশ করল। লিয়নের মুখোমুখি না থাকতে চেয়ে মৃধাকে ফিসফিসিয়ে বলল,
“ ভাবি? অসুস্থ লাগছে আমার। আমরা এখন বাসায় যাই ভাবি? চলো না। ”
লিয়ন তাকিয়ে রইল রাহির দিকে। কতোটা সুন্দর এই মেয়েটা। অথচ পাঁচটা বছর আগে সে সাহস করে তাকাতে পারত না। একটাবার বলতে পারত না এই মেয়েটাকে সে কতোটা ভালোবাসত। লিয়ন চাপাশ্বাস ফেলে। রাহি তার দিকে একবারও তাকিয়ে দেখল না দেখে মনে মনে দুঃখও হলো। কেন তাকাল না? রাহির মনে কি আর তার জন্য প্রেম নেই আর তাহলে? লিয়ন হতাশ স্বরে শুধাল,
“ রাহি? দেশে ফিরেছো অবশেষে? ”
রাহি এবারে চাইল। বিনিময়ে মুহুর্তেই হাসি উপহার দিল। হেসে হেসে শুধাল,
“ হ্যাঁ লিয়ন ভাই। ভাগ্যিস ফিরলাম, নাহলে তো আপনার বিয়েটা মিস করে যেতাম। দাওয়াত দিবেন না আমায়? ”
লিয়ন আশা করেনি তার বিয়ের খবরে এতোটা খুশি হবে রাহি। অপ্রস্তুত স্বরে জানাল,
“ হু, হু। অবশ্যই দিব। ”
“ যাক খুশি হলাম। তা এখানে কি বিয়ের কেনাকাটার জন্য এলেন লিয়ন ভাই? ”
লিয়ন মূলত এসেছিল রাহিরা আসবে জেনেই।তাই আবারো অপ্রস্তুত স্বরে জানাল,
“ না, না। ”
মৃধা লিয়নের হাতের শপিং ব্যাগটা খেয়াল করেই বলল,
“ কি না, না করছিস? ঐ তো তোর হাতে শপিং ব্যাগ। কার জন্য কিনলি শুনি? ”
লিয়ন এবারও কোনরকমে উত্তর করল,
“ মানে ওর জন্য। ”
মৃধা হেসে শুধাল,
“ বউয়ের জন্য? ”
লিয়ন মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল। রাহি এবারে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনে মনে বলল,
“ লিয়ন ভাই? আপনি আমার চাওয়া সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি যাকে আমি এত ভালোবেসেও পাব না। ইশশ! কতোটা ভালোবাসেন মেয়েটাকে! কতোটা চান তাই না? একটাবার যদি আমায় ভালোবাসতেন লিয়ন ভাই! আমি পৃথিবীর সবটুকু দিয়ে আপনাকে ভালোবাসতাম। সবটুকু দিয়ে। ”
অথচ মুখে বলল,
“ কনগ্রাচুলেশন লিয়ন ভাই। শুনেছি আপনার বউ দেখতে অনেক সুন্দরী! ”
কথাটা বলাই হাত বাড়াল। লিয়ন হেসে হাত মিলাল৷ উত্তরে বলল,
“ হ্যাঁ! সে সত্যিই সুন্দরী। ”
#চলবে….
( কেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)