#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#পর্ব_০৬
লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন
মৃধার প্রিয় পুরুষ তাকে অবহেলায় রেখে প্রেমিকার সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছে বিষয়টা ভেবে প্রথমে গুরুত্ব দিতে না চাইলেও মন বারবার কেবল সে কথাটাই ভাবল। ক্ষণে ক্ষণে বিষন্নতায় মন মলিন হলো৷ অথচ বাইরে দেখাল সে এতে একটুও দুঃখ পায়নি। একটুও কষ্ট পায়নি। বাকি বন্ধুদের মতোই সেও এই খবরটা পেয়ে উচ্ছ্বাসিত এমনই ভান করল। কারণ বন্ধুদের কেউই তো জানে না মৃধা আর নিশীথের এই বিয়েটার কথা। অবশ্য বিয়েটা যখন আবিরের সাথে হওয়ার কথা ছিল তখনও মৃধা বন্ধুদের কাউকে জানায়নি। এমনকি ইনভাইট পর্যন্ত করেনি কাউকে। শুধু মা বাবার কথায় বিয়েটা নামমাত্র করতে রাজি হয়েছিল সে। নিশীথদের অবশ্য ইনভাইট করা হয়েছিল প্রতিবেশি বলে। এইছাড়া বন্ধুবান্ধব কেউই তো জানত না মৃধার বিয়ে সম্বন্ধের।তাই নিশীথের সাথে এক্সিডেন্টলি বিয়েটা সম্পর্কেও কেউ জানে না। মৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ঘন্টা দুয়েক বন্ধুদের সাথে হেসেখেলে চলতে চলতে অবশেষে নিজেকে ক্লান্ত অনুভব হলো মৃধার।আর বোধহয় অভিনয় করা সম্ভব নয়। এই ভেবে চাপাশ্বাস ফেলে বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে জানাল,
“ আজ উঠি?বাড়ি যাব। তোরা থাক কেমন?”
মৃধার কথা অবশ্য মানা হলো না। পাশে বসা অতি কাছের বান্ধবী হৃদি আর নিহা ছাড়ল না তাকে। মুহুর্তেই বলে উঠল,
“এত তাড়াতাড়ি কবে বাড়ি ফিরেছিস তুই?ক্লাস মিস দিয়েছি৷ কোথায় মজা করব আর তুই কিনা চলে যাবি এত তাড়াতাড়ি?”
মৃধা নিরসভাবে তাকাল। উত্তরে বলল,
“ আজ ভালো লাগছে না দোস্ত। আরেকদিন আমরা ক্লাস মিস দিব। কেমন? ”
অবশেষে মানল তারা। মৃধাকে ওরা ছাড়তেই মৃধা গুঁটিগুঁটি পায়ে ক্যাম্পাস ছাড়ল। রাস্তার ধারে রিক্সার জন্য কয়েক মুহুুর্ত দাঁড়িয়ে থাকতেই চোখে পড়ল লিয়নসহ আরো কয়েকজনকেই৷ তার দিকেই তাকিয়ে হাসছে। লিয়ন তাদেরই ক্লাসমেইট, অপরদিকে নিশীথের কাছের বন্ধু।আর লিয়নের সাথে যারা আছে তারাও মৃধা আর নিশীথের সমবয়সীই। মৃধা অপ্রস্তুত বোধ করল। এভাবে তাকিয়ে বন্ধু সম্পর্কের কয়েকটা ছেলে হাসাহাসি করছে বিষয়টায় অন্যদিন হলে হয়তো সে রাগারাগি করে ওদের কথা শুনাতে দুবারও ভাবত না। কিন্তু আজ ব্যাতিক্রম! মনে সন্দেহ জাগল কেমন। সন্দেহী মন মুহুর্তেই সতর্ক করল যে, হাসছে কেন ওরা? কিছু কি জেনে গেছে বিয়ে টিয়ে নিয়ে ? নিশীথ কি কিছু বলে টলে দিয়েছে নাকি? মৃধা তা ভাবতেই লিয়ন এগিয়ে এল। ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে হাত এগিয়ে বলে উঠল,
“ কংগ্রাচুলেশন ভাবি। আমার বন্ধু কোথায়? আজ আসল না যে?”
মৃধা ফ্যালফ্যাল করে তাকাল। তার মানে এই বিচ্ছুবাহিনী জেনে গেছে তাদের বিয়ের কথাটা? আর এই নিয়েই এতক্ষন হাসি ঠাট্টা করছিল? ছিঃ ছিঃ! মৃধার লজ্জা হচ্ছে এবারে। তবুও মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলল,
“ কিসের ভাবি? তোর কোন ভাইয়ের বিয়ে করা বউ আমি? আশ্চর্য! বন্ধু হই তোর আমি। ”
লিয়ন আবারও হেসে উঠল। উত্তরে মাথা চুলকে শুধাল,
“ শুধু বন্ধু? বন্ধুর বউ ও তো হোন ভাবি। ”
মৃধা অসহায় অনুভব করল। ছিঃ ছিঃ! বন্ধু সম্পর্কীয় কারোর কোন কথায়র বদলে এভাবে অসহায় অনুভব করাটা লজ্জাজনক। মৃধা মুহুর্তেই সাহস নিয়ে চাইল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ কে বলেছে তোদের? ”
লিয়ন ফের শুধাল,
” বিয়ে করে সংসার করে ফেলবেন আর আমরা আমজনতা জানব না ভেবে থাকলে তে ভুল করছেন ভাবিসাহেবা । ”
বারবার লিয়নের ঢং করে ভাবি ডাকাটা অসহ্য লাগল এবার মৃধার কাছে। রাগ দেখাতে গিয়েও পরমুহুর্তে শান্তস্বরে বোঝানোর ন্যায় বলল,
“ লিও শোন।”
লিয়ন ফের কৌতুক স্বরে বলল,
” বলুন ভাবিসাহেবা।”
মৃধা এবারে রাগল। গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,,
”মজা করবি না লিও। সিরিয়াসলি বলছি আমি, শোন কথা। ”
মৃধার রাগ রাগ কথা শুনে এবারে বোকার মতো চাইল লিয়ন। কি আশ্চর্য! মৃধা রাগে ঠিক, তবে এভাবে রেগে গম্ভীর গম্ভীর কন্ঠে কখনো কথা বলে নি। যখন অত্যাধিক সিরিয়াস হয়ে যায় তখনই এমন করে। লিয়নও তাই আর মজা না করে সুন্দরভাবে মেনে নিল। শুধাল,
“ বল।”
মৃধা এবারে চাপাশ্বাস ফেলল। মৃদু আওয়াজ তুলে বলতে লাগল,
“ আমার আর নিশীথের বিয়েটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হয়নি লিও। অনেকটা বাধ্য হয়েই নিশীথ বিয়েটা করেছে বুঝলি? তাই এই বিয়েটা আধো টিকবে কিনা শিওর না আমরা। এইজন্য এই সম্পর্কে আর কাউকে বলবি না প্লিজ! অনুরোধ করছি। বললে কিন্তু তোর সাথে আমার ফ্রেন্ডশীপ ফিনিশ। ”
লিয়ন যেন শুনে অবাক হলো।চোখ গোল গোল করে বোকার মতো শুধাল,
“ টিকবে না কেন?”
মৃধা এবারর দাঁতে দাঁত চাপল৷ সব বলেও যদিও শেষে জিজ্ঞেস করা হয় টিকবে না কেন তাহলে এমনই হওয়া উচিত বোধহয়।মৃধা শুধাল,
“ তুই এখনও মজা করছিস লিও? তুই নিশীথের ক্লোজ ফ্রেন্ড! কেন টিকবে না তা সম্পর্কে তুই আমার চাইতেও ভালো জানিস।”
লিয়ন বোকার মতো তাকাল। সে আসলেই মজা করেনি। আর ভালো জানে মানে? কেন টিকবে না এই সম্পর্কে তো সে বিন্দুমাত্রও জানে না। উল্টো কেন টিকবে তা বললে নাহয় সে জানত। কারণ মৃধার আর আবিরের বিয়েটা আটকাতে নিশীথকে লিয়ন সবার আগে সাহায্য করেছে। সাথে তাদের ছেলেদের পুরো বন্ধুমহল। মৃধার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ছেলেটার কেমন ছন্নছাড়া দশা হয়েছিল সেটা ও তারা বন্ধুরা সবাই দেখেছিল। পাশে থেকেছিল। তাহলে?তাদের বন্ধু এত এত কষ্ট করে যে মেয়েটাকে বিয়ে করল তার সাথে কিনা বিয়ে টিকবে না? বিষয়টা ভেবেই মন খারাপ হলো লিয়নের। মৃদু স্বরে বলল,
“ ছেলেদের মধ্যে সবাই এই বিষয়ে জানে মৃধা। ”
মৃধা অবাক হলো। সে তো কাউকে বলেনি। তাহলে? অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“ কে বলেছে? তুই ? ”
লিয়ন ভ্রু কুঁচকে উত্তর দিল,
“ আমি কেন বলব? আপনার বরই বলেছে। ”
মৃধা পরপর আবারও অবাক হলো। নিশীথ? নিশীথ কেন বলবে? আশ্চর্য! শুধাল,
“ নিশীথ?”
“ হু!আমরা তোদের বিয়ের দিন সবাই মিলে আরামে রেস্টুরেন্টে দাওয়াতও খেয়েছি। তাও নিশীথ সহ!”
মৃধা বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে তাকাল। তারপর শুধু বিরবির করে এটাই বলল,
“ অবিশ্বাস্য!”
তারপর পরপরই নিশীথকে কল দিল জানার জন্য। অথচ নিশীথ কল তুলল না। মৃধা হতাশ হয়ে ফোন রেখে দিয়ে রিক্সা পেতেই লিয়নের থেকে বিদায় নিয়ে রিক্সায় উঠল। তারপর খানিকটা পথ যাওয়ার পরই হঠাৎ দেখা মিলল নিশীথ আর রাহির। রাস্তার কিনার ঘেষে পাশাপাশি হাঁটছে। মৃধা ভ্রু কুঁচকে চাইল। তারপর রিক্সাটা নিশীথদের ক্রস করে চলে যেতে যেতেই চোখে পড়ল রাহির হাতে আইসক্রিম। রাহি এই শীতেও বেশ উপভোগ করে আইসক্রিম খাচ্ছে। আর নিশীথ তা দেখে হেসে আলতো করে বেণুনি ধরে চুল টেনে দিল। রাহি মেয়েটা বোধহয় তাতে রেগে গিয়ে চোখমুখ লাল করে ফেলল। মৃধা অবাক হলো। প্রেমিকার চুলও টেনে দেয় প্রেমিকরা? রাগানোর জন্য? বাহ! সুন্দর তো!কি কিউট! অথচ এই কিউট ব্যাপারটা তার সাথে ঘটল না কখনো ভেবে কষ্ট হলো। পরমুহুর্তেই সিদ্ধান্ত নিল নিশীথদের দিকে আর তাকাবে না সে। তাই চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফেলল। তারপর গন্তব্যে পৌঁছাতেই রিক্সা ছেড়ে নেমে পড়ল। ভাড়া মিটিয়ে চাইলে সামনে থাকা মুখোমুখি দুটো বিল্ডিং এ। মৃধা বুঝে উঠল না কোনটায় যাবে। নিজের বাসায়? নাকি নিশীথের বাসায়? আসার সময় দেখা দৃশ্যে নিশীথের বাসায় যাওয়ার ইচ্ছেটা ক্ষীণ হয়ছে। তবুও কি বুঝে সেদিকে এগোল। বাসায় গিয়ে নিশীথের মায়ের সম্মুখীন হতেই বলল,
“ আন্টি? নিশীথের কি একটা কাজ আছে। তাই আমায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। ”
আচমকা মিথ্যেটা সে কেন বলল নিজেও জানে না। তবুও বলল। তারপর নিশীথের মায়ের সাথে কয়েকটা কথা বলে রুমে গিয়ে দরজা লক করল। ব্যাগটা ছুড়ে মারল ফ্লোরে। রাগ হচ্ছে তার। বোধহয় কষ্টও হচ্ছে। নিজেকে এই মুহুর্তে বড্ড বেশিই অসহ্য লাগছে। এতক্ষন ধরে জমিয়ে রাখা সব রাগ উগড়ে উঠছে যেন। তাই তো হাতের ঘড়িটাও খুলে ছুড়ে ফেলল ফ্লোরে এককোণে। মুহুর্তেই ঘড়ির কাঁচটা ভেঙ্গে গেল। ইশশ!কত প্রিয় ছিল ঘড়িটা তার। মৃধা পরমুহৃর্তে নাকমুখ লাল করে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেল। পানির ধারায় নিজেকে ভিজিয়ে নিয়ে সাথে মিশাল চোখের নোনা পানির ধারা। অথচ এই চার দেওয়ালের বাইরে সে কতোটা স্বাভাবিক ছিল তাই না?
.
মৃধা ফেরার প্রায় মিনিট বিশের মধ্যেই বাসায় ফিরল নিশীথ। মায়ের থেকে মৃধার সম্পর্কে জেনে নিয়ে মৃধার উদ্দেশ্যে নিজের রুমেই আসল। দরজা আটকানো দেখে হাসল। নিজের রুমের দরজার লক খোলা তার কাছে দুঃসাধ্য নয়। নিশীথ কয়েক সেকেন্ডে দরজাটা খুলে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা মৃধার ব্যাগ আর ভাঙ্গা ঘড়িটা। রুমের বাকি সব ঠিকঠাক। নিশীথ এই ভেবে হাসল যে মৃধা তার জিনিসের উপর রাগ দেখায়নি। পরক্ষণে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। অপেক্ষায় থাকল কবে মৃধা ওয়াশরুম ছেড়ে বের হয় আর রাগে লাল হওয়া মুখটা দেখায়।অথচ নিশীথের ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে মৃধা বেরই হলো না। ঘন্টা দুয়েক পরেও যখন পানির আওয়াজ বন্ধ হলো না তখন নিশীথই এগিয়ে গেল।দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
“ মৃধার বাচ্চা মৃধা! বাসার পানির ট্যাঙ্ক কি খালি করার চিন্তা আছে তোর? ”
ভেতরে মৃধা তখনও নিরবে কাঁদছিল। চোখমুখ লাল হয়ে আছে।এই ঠান্ডায় এতক্ষন যাবৎ গোসল সেরে শরীরও ঠান্ডা হয়ে আছে।নিশীথের কথা শুনেই যখন টনক নড়ল তখন শুধাল,
“ আমি তো দরজা লক করেছিলাম। তুই তাহলে? ”
ওপাশ থেকে উত্তর এল,
“ তুই চাইলে ওয়াশরুমের দরজাও আনলক করতে পারি। করব? ”
মৃধা মুখ কুঁচকে সঙ্গে সঙ্গে বলল,
” ছিঃ! ”
“ তাহলে বের হচ্ছিস না কেন? ”
মৃধা এবার উত্তর দিল না আর। তারপর কতক্ষন পরই তোয়ালে দিয়ে চুল মুঁছতে মুঁছতে বের হলো। নিশীথকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তস্বরে বলল,
“ এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ”
নিশীথ তাকাল মৃধার পানে। চোখমুখে লালচে আভা। নাকের অগ্রভাগেও লালচে আভা। ঠোঁটজোড়া বোধহয় ঠান্ডায় কাঁপছে। নিশীথ চাপাশ্বাস ফেলল। চোখমুখের অবস্থা দেখেই বুঝল মেয়েটা কেঁদেছে। নিশীথ অবাক হলো। আজীবন মৃধাকে রাগতে দেখেছে সে। কিন্তু কাঁদল কেন? সামান্য বিয়ের কথাটা সবাইকে বলেছে বলে নিশ্চয় মৃধা কাঁদবে না? নিশীথ বুঝে উঠল না। পরমুহুর্তেই মৃধাকে রাগাতে বলল,
“দীর্ঘ দুই ঘন্টা পর অবশেষে তোর গোসল শেষ হলো? ”
মৃধা রাগল না। উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে জিজ্ঞেস করল,
“ মানে? ”
নিশীথ ফের বলল,
“ এতক্ষন যে আমার বাসার পানি সব অপচয় করলি তুই জানিস পানির মূল্য কত? কত মানুষ পানি না পেয়ে হাহাকার করছে? আর তুই? ”
মৃধা হাতের ভেজা কাপড় গুলো নিয়ে বেলকনিতে যেতে যেতে শান্ত স্বরে বলল,
“ অপচয় করলে করছি। ”
নিশীথ যেতে দিল না মৃধাকে। উল্টো সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“ তুই বললেই হলো নাকি? মাসে মাসে পুরো বাসার পানির বিল দিতে হয় বেয়াদব। ”
মৃধা মুখোমুখি তাকাল। নিশীথকে এই মুহুর্তে তার বিরক্ত লাগছে।এতোটা বিরক্ত লাগছে যে রাগে নিশীথের গালে থাপ্পড় বসাতে ইচ্ছে হচ্ছে। অথচ সে তা করল না। শীতল স্বরে জানাল,
“ সর নিশীথ। ”
নিশীথ ত্যাড়ামো করে বলল,
” সরব না। ”
“আমার ভালো লাগছে না। সর প্লিজ!”
“ না সরলে কি করবি? ”
মৃধা আবারও তাকাল। কিছু কিছু সময় একা থাকাটা জরুরী। নিশীথ বুঝতে পারছে মৃধা তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবুও ইচ্ছে করেই যে ত্যাড়ামো দেখাচ্ছে তা বুঝতে পেরে মৃধা মৃদু শ্বাস ফেলল। স্থির সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকল। নিশীথ উত্তর না পেয়ে ফের বলল,
“ তোকে ফোনে না পেয়ে তোর আম্মু কল করেছিল আরো আধঘন্টা আগে। তোর খোঁজ করছিল।”
মৃধা শান্তস্বরে উত্তর দিল,
“ পরে কথা বলে নিব আমি। ”
কথাটুকু বলেই মৃধা নিশীথকে পার করে বেলকনিতে গেল। ভেজা কাপড় গুলো মেলে দিয়ে রুমে আসতেই নিশীথ শুধাল,
“ আগে আগে বাসায় চলে এসেছিস কেন? ”
মৃধা এই পর্যায়ে রাগ দমাতে পারল না। উত্তরে মুহুর্তেই দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিল,
“ মন চেয়েছে তাই। ”
“ তোর মন চাইলেই তুই সব করতে পারবি এমনটা কোথায় লিখা আছে?”
মৃধার এবারেও রাগ হলো। তাচ্ছিল্য নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,
“ তো আমি কি এখন তোর মন যা চাইবে তাই করব? টিপিক্যাল স্বামী স্ত্রীর মতো?”
নিশীথ কপাল কুঁচকে তাকাল। সে নিজে বারংবার টিপিক্যাল স্বামী স্ত্রী কথাটা টেনেছে। এখন মৃধাও তাই শুনাল। রাগ হলেও শান্তভাবে জিজ্ঞেস করল,
“ তো কার কথা মতো চলবি? তোর আবিরের? ”
এই পর্যায়ে বোধহয় মৃধা আসলেই মেজাজ হারাল। তীক্ষ্ণ চাহনিতে চেয়ে বলতে লাগল,
“মেজাজ খারাপ করবি না নিশীথ। সবসময় আবির আবির করিস কেন? আবির কি করেছে?আর হ্যাঁ, তুই যে রাহি বলতে অন্ধ! কই! আমি তো রাহি রাহি করছি না একবার ও। করেছি? ”
নিশীথ এ পর্যায়ে বাঁকা হাসল। মৃধার রাগের কারণ কিছুটা হলেও বুঝতে পেরে ভ্রু বাঁকিয়ে শুধাল,
“ বাহ বাহ! তুই একেবারে রাহি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিস বন্ধু? ”
” পৌঁছাতে হয় না। বেহায়ারা মতো যেখানে সেখানে প্রেম প্রেম ঢং দেখালে সবাই এমনিতেই খবর পায়। ”
কথাটুকু বলেই মৃধা রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। নিশীথ ও পেছন পেছন গিয়ে মৃধার সামনে দাঁড়াল। মৃধার দিকে স্থির চাহনি ফেলে আবারও চাইল। লালচে আভা নাকে আর গালে। গোলগাল মুখে তা সুন্দর দেখাচ্ছে। ঠোঁটগুলো কাঁপছে কেমন। ইচ্ছে হলো পুরু ঠোঁটজোড়া দিয়ে আবদ্ধ করে নিতে ঠোঁটজোড়া। পরমুহুর্তেই মনকে মানাল। তাকাল নাকের দিকে। সবচেয়ে সুন্দর দেখাচ্ছে যেন নাকটাই। রাগে লাল হয়ে ফুলছে এই মুহুর্তে। নিশীথ হেসে এক হাত দিয়ে মৃধার নাকটা ছুঁয়ে দিল। মুহুর্তেই নাকটা প্রচন্ড ঠান্ডা মনে হলো। পরক্ষণেই বুঝল এতোটা সময় পানিতে থাকার দরুণ এই অবস্থা। নিশীথ হেসে বলে উঠল,
“ রাহি আমার কে হয় জানিস মৃধা? ”
নাকে নিশীথের ছোঁয়া পাওয়া মাত্রই তীক্ষ্ণ চাহনিতে চাইল মৃধা। তাচ্ছিল্য নিয়ে শুধাল,
“ জানতে চাইছি না আমি। জানার প্রয়োজনবোধও করছি না। ”
নিশীথ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল এবারে৷ তারপর আচমকাই নিজের দমিয়ে রাখা ইচ্ছেকে দমাতে ব্যর্থ হয়ে ঝুঁকে গেল মৃধার দিকে। পুরু ঠোঁটজোড়ার উষ্ণ স্পর্শ মৃধার নাকের অগ্রভাগে এঁকেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। পরমুহুর্তেই বলল,
“ তোর নাকটা এত ঠান্ডা হয়ে আছে মৃধা! তাই একটু উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে দিলাম।”
কথাটুকু বলেই নিশীথ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বেরিয়ে গেল। অপরদিকে মৃধা তখনও বিস্ময় নিয়ে নাকে হাত দিয়ে চেয়ে রইল। কি হলো এটা?
#চলবে….