#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_১৩
লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন
নিশীথ বাসায় ফিরল তার একটুখানি পরই৷ অথচ সে একটুখানি সময়ও মৃধার কাছে মনে হলে যেন অনেকটা সময়। নাক মুখ ফুলিয়ে বলে উঠল,
” এতক্ষন লাগল আসতে? ”
নিশীথ ঠোঁট গোল করে শ্বাস টানল যেন। এগিয়ে এসে মৃধাকে আলতো করে জড়িয়ে চুমু বসাল কপালে। পরমুহুর্তেই মৃধার পেটে বাম হাতটা রেখে মৃদু স্বরে বলল,
“ নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় রিস্কটা নিয়ে নিয়েছি মৃধা। আজ থেকে ও জম্মানো অব্দি যতগুলো দিন যাবে আমি ঠিক মতো শান্তিতে ঘুমাতে পারব না।আমার কেমন অস্থির অস্থির লাগছে এখন থেকেই। তোকে হারানোর ভয় হচ্ছে! ”
মৃধা চাপাশ্বাস টেনে নিশীথের গলা জড়িয়ে ধরল। বুকে মাথা রেখে বলে উঠল,
” একটা নতুন প্রাণ, নতুন কারোর আগমণ! তার আগমণের মুহুর্তে বারবার এগুলা বললে সে মন খারাপ করবে নিশীথ। তার উপর সে আমাদের ক্ষুদেটা! তুই তো ওর বাবা হবি নাকি? ওর সামনেই বারবার এসব বলে ওর মন উদাস করছিস না?”
নিশীথ এই পর্যায়ে গম্ভীর হয়ে কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল। পরমুহুর্তে কি বুঝে ঝুঁকে নিচু হয়ে মৃধার পেটে হাত রাখল। মৃধার পরনে থাকা কামিজটা উঠিয়ে পেটে চুমু বসিয়ে বলল,
“বাবা স্যরি, আপনার মন উদাস করার জন্য। আর বলব না হুহ?আটনার আম্মু যতটুকু খুশি আপনার আগমণে আপনার আব্বুও খুশি। আপনি মন খারাপ করবেন না কিন্তু। আপনার আব্বু সত্যিই খুশি। ”
মৃধক হেসে ফেলল। নিশীথ যেভাবে বলছে মনে হচ্ছে বাচ্চাটা সত্যি সত্যিই বুঝি ওর কথা শুনে মন খারাট করেছের।সত্যি সত্যিই বুঝি ওর কথা গুলো শুনতে পাচ্ছে। মৃধা খিলখিলিয়ে হাসে। নিশীথে চুল টেনে ধরে বলে,
“ গর্দভ! ও তোর কথা শুনতে পাচ্ছে নাকি?”
“ ও শুনতে না পেলেও তুই তো পাচ্ছিস । তুই ওকে বলে দিবি যে যাতে মন খারাপ না করে কথা গুলো শুনে। ”
মৃধা হেসে বলে,
“ এই কথা গুলো শুনতে পায়নি যখন তাহলে ওই কথা গুলোই বা কিভাবে শুনবে? আর মনই খারাপ কিভাবে করবে বল? তোর বুদ্ধি আসলেই লোপ পেয়েছে।”
নিশীথ অসহায়ের মতো তাকায়। খাটের এক কোণায় বসে কাছে টানল মৃধাকেও। অসহায়,ক্লান্ত স্বরে বলল,
” আমার জায়গায় তুমি থাকলে শুধু বুদ্ধি লোপ পেত না, এতক্ষনে কেঁদেকেঁটে ভাসিয়ে ফেলতে। ”
মৃধা না বুঝে বলল
“ কেন? ”
নিশীথ দীর্ঘশ্বাস টেনে বলে উঠে,
“ চোখ বুঝ, ভাব কখনো কোন একটা সময় আসল যখন আমি নেই। পৃথিবী থেকেই হারিয়ে গেলাম কোন একটা দিন। ভাব। ”
মৃধা চোখ বুঝল। ভাবলও। অথচ আৎকে উঠল মুহুর্তেই। নিশীথকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে চোখ খিচল সঙ্গে সঙ্গেই। অস্থির ভাবে বলে উঠে,
“ এমনটা কখনোই না হোক। কখনোই না। তোকে ছাড়া বেঁচে থাকাই অসম্ভব নিশীথ। ”
নিশীথ হাসে। মৃধার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
” আর আমার ক্ষেত্রে কি তোকে ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব?”
মৃধা অনেকটা সময় চুপ থেকে জড়িয়ে রাখে নিশীথকে। পরমুহুর্তেি মাথা তুলে তাকায়। শান্ত স্বরে, শান্ত ভাবে তাকিয়ে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে,
” কিছু হবে না। এই দেখ, আমার তো এখনো কোন অসুবিধা দেখা যাচ্ছে না। অন্যদের তো প্র্যাগ্নেন্সির শুরু থেকেই সমস্যা দেখা যায় তাই না? আমার ধারণা আমার কিছুই হবে না।তুই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস নিশীথ। আমি তো সাহসী মেয়ে। অতো অল্পে ভয় পাই না আমি।তুই দেখিস, আমরা ঠিক আমাদের পিচ্চিকে বড় করব, গুঁটি গুঁটি পায়ে হাঁটা শিখাবো,কথা বলতে শিখাবো। অনেক অনেক আদর করব ওকে হু?”
নিশীথ এবারে হাসল। মৃধার সামনে বারবার এসব বলে মেয়েটার মন খারাপ বাড়াচ্ছে ভেবব সিদ্ধান্ত নিল আর এসব বলবে না। ভুলিয়ে রাখবে, আনন্দে রাখবে। নিশীথ হেসে মৃধার কোমড় জড়িয়ে ধরে। কাঁধে আদ্র চুমু এঁকে জানায়,
“ হু, বাচ্চার মাকেও আদর করব। ”
মৃধা হেসে উঠে। নিশীথের দিকে ফিরে নিশীথের গালে চুমু দিয়ে মজা করে বলে,
“বাচ্চার বাবাকে ও চুমু দিয়ে আদর করব। আমি আবার খুবই দয়ালু মানুষ। ”
” তাই নাকি? ”
“ অবশ্যই তাই। আমি কি মিথ্যে কথা বলি কখনো? তোর আমাকে মিথ্যেবাদী মনে হয় নিশীথ? ”
নিশীথ হাসে। ঠোঁট এলিয়ে উত্তর দেয়,
” একদমই না। আপনি তো সত্যবাদী মৃধা। মিথ্যে বলতেই পারেন না। ”
মৃধা যেন খুব খুশি হলো এই বানোয়াট প্রশংসায়। নিশীথের গলা জড়িয়ে সোজাসুজি বসল। আহ্লাদী স্বরে নিশীথের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ নিশীথ! আমরা বাচ্চার নাম কি রাখব বল তো…?”
নিশীথ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে,
“ কি রাখব? ”
“ তোকেই তো জিজ্ঞেস করলাম। ”
নিশীথ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। এখনোও বাচ্চাই পৃথিবীতে জম্মাল না আর ইনি বাচ্চার নাম নিয়ে পড়ে গেছেন এখনই। নিশীথ ঠোঁট গোল করে শ্বাম ছাড়ে। বলে উঠে,
” সময় করে ভাবব। আপাতত বিকালে আমরা ডক্টরের কাছে যাব। ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী সবসময় চলতে হবে নয়তো কিন্তু আমি রেগে যাব মৃধা। মা হতে চেয়েছিস সে বিষয়ে তোকে অনুমতি দিয়েছি, রিস্ক নিচ্ছি কিন্তু আবোল তাবোল কাজকর্ম করলে কিন্তু খারাপ হবে। ”
মৃধাও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা ঝাকাল। মুহুর্তেই বলে উঠল,
” ঠিকাছে, ডক্টর যা বলবে তাই মানব। অবাধ্যতা করব না।”
নিশীথ মৃধার গাল টেনে ধরে। গালের পরপর দুবার চুমু এঁকে বলে উঠে,
” এইতো! ভালো। ”
.
রাহি বেশ সময় নিয়েই সাঁজগোজ করল। পরনে লাল টকটকে একটা শাড়ি। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া আছে। কপালে ছোট্ট টিপ। আয়নায় নিজেকে এক পলক দেখে নিয়েই হাসল আলতো। মোবাইলের ক্যামেরায় নিজেই নিজের একটা ছবি তুলে নিয়ে পাঠাল একান্ত কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে। ম্যাসেজে লিখল,
“ আপনার না হওয়া বউ আপনার স্যরি বলা দেখে মুগ্ধ হয়েছে। তাই নিজে নিজেই বউ সেঁজেছে লিয়ন ভাই। এবার বলুন, বউ বউ লাগছে তো তাকে? ”
লিয়ন ম্যাসেজটা আর ছবিটা সিন করল প্রায় পনেরো মিনিট পর। এই পনেরো মিনিটই রাহি ছটফট করে কাঁটিয়েছেে।ফোস করে শ্বাস ফেলে যখনই মোবাইলটা রাখতে যাবে তখনই ওপাশ থেকে রিপ্লাই এল,
” না হওয়া বউ? বউ তো কত আগেই হয়েছেন ম্যাম। শুধু আপনার আব্বাজানের জন্য বউ ডাকার অধিকার পাচ্ছি না। বউকে আদর করার সুযোগ পাচ্ছি না। আপনার কি মনে হয়? আমার প্রতি ভীষণ অন্যায় হয়ে যাচ্ছে না বলুন? ”
রাহি হাসে এবারে। পরপরই মোবাইলে কল এল। ভিডিও কল। রাহি উশখুশ করে কল রিসভড করতেই লিয়ন তাকায় তার মুখপানে। বলে,
“ এভাবে সাঁজগোজ করে বউ বউ সেঁজে ছবি পাঠালে তো আমার এবার অন্য কিছু করতে মন চাইবে রাহি। আমি জানি তুমি তার অনুমতি দিবে না আমায়, সুতারায় এসব করে আমার মাথা নষ্ট করবে না। মনে থাকবে এরপর? ”
রাহি অবাক হয়। কষ্টও পেল যেন। এতোটা সাঁজ যার জন্য সেই খুশি হলো না? বরং গম্ভীর ভাবে এসব বলছে? বলল,
” মাথা নষ্ট করেছি? ”
” অবশ্যই। মাথা নষ্ট করে যদি কিছু করে ফেলি দোষ দিবে না তো? ”
রাহির বোকার মতো জিজ্ঞেস করল,
“ কি করবেন?”
লিয়ন বাঁকা হাসে। ফিসফিস স্বরে বলে উঠে,
“ তোমার এই সুন্দর সাঁজটা নষ্ট করতে মন চাইছে। করব নষ্ট? দিবে অনুমতি? ”
রাহির কান গরম হয়ে উঠে। গাল হয়ে উঠে রক্তিম লাল। মুহুর্তেই কল রেখে মোবাইলটা চেপে রাখল বালিশের নিচে। ছিঃ ছিঃ! কিসব আবোলতাবোল বলে রাহিকে লজ্জায় ফেলল লিয়ন? রাহি চোখ বুঝে। লজ্জায়, দুঃখে তার এই মুহুর্তে মরে যেতে মন চাইছে যেন।
#চলবে..