হৃদয়ে প্রণয়ের বাস ২ পর্ব-০৭

0
1092

#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_০৭
লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন

নিশীথ দরজার সামনে গিয়ে টোকা দিল। বোনকে বুঝানোর উদ্দেশ্যে নরম গলায় ডাকও দিল,

“ রাহি? দরজাটা খোল একটু। ভাইয়া একটু কথা বলি? ”

ভেতরে বসে থাকা রাহি কান খাড়া করে শুনে। তখনও চোখ বয়ে পানি পড়ছে তার। নাক লাল হয়ে আছে। রাহি ভাইয়ের ডাকে জবাব না দিয়ে পারল না। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই নিশীথ হাসল। নরম ভাবে বলল,

“ এত কান্না? এতোটা কান্না কি ঐ গর্দভটার জন্যই? তুই ঐ গর্দভটার জন্য কান্নাও করছিস? ”

রাহি এবারে ফ্যালফ্যাল করে তাকাল ভাইয়ের দিকে। নিশীথ হাসল। রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

“ ওর জন্য কান্না করার প্রয়োজন নেই। এবার একটু ও কাঁদুক। তুই চিল কর বোন। আমি আছি সাথে হুহ?”

রাহি অস্ফুট স্বরে বলল,

“ ভাইয়া? ”

“ হু। ও আমার বন্ধু তো কি হয়েছে ও সত্যিই গর্দভ! আমি বলছি তো, দোষ ওরই। তুই কাঁদবি না। একদম কাঁদবি না। ও কেন আগে বলে নি? দোষ টা তো ওরই তাই না? ”

রাহি কান্না থামাল। বিস্ময় নিয়ে তাকাল। শুকনো ঢোক গিলে শুধাল,

” তুমিও জানো সব? তুমি, ভাবি লিয়ন ভাই সবাই প্ল্যান করে এসব করেছো? ”

“ একদম না, আমি মোটেও নেই। উল্টে আমি ওকে বোন দিতে নারাজ। ওর মতো গর্দভের কাঁধে বোনকে ছেড়ে দিয়ে শান্তিতে থাকতে পারব সারাজীবন? বল? তারচেয়ে আমি অন্য কারোর কাছে তোর বিয়ে দিব। ”

রাহি এবারে নাক ফুলাল। বলল,

“ বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ভাইয়া! ”

“ মজা করছি। তবে তুই ভুল বুঝছিস বোন। আমরা একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিলাম জাস্ট! লিয়নকে এতকাল কথাটা বলতে দিইনি তুই দেশে কবে ফিরবি তার অপেক্ষায়। যখন ফিরলি তখন লিয়ন একেবারে বিয়ের প্রস্তাবই রাখল তাও আমার কাছে। আমি বললাম তোর জম্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে। সে হিসেবে দোষীটা কি আমিই? তোদের দুইজনের কাছেই? ”

রাহির বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না। তবে ভাইয়ের কথা অবিশ্বাস ও করল না সে। একটু আগে লিয়নকে যেভাবে অবিশ্বাস করে এল ঠিক সেভাবেই নিশীথের কথাগুলো সে বিশ্বাস করে নিল৷ অবিশ্বাস্য স্বরে বলল,

“ লিয়ন ভাই সত্যিই ভালোবাসে আমায়? কবে থেকে? তুমি মিথ্যে বলছো না তো ভাইয়া? ”

নিশীথ মাথায় হাত রাখল। মুহুর্তেই বলে উঠল,

“ এই না! আমি তোর সাথে মিথ্যে বলেছি কখনো? বল? লিয়ন সত্যিই ভালোবাসে। তখন থেকেই! কিন্তু গর্দভ তো, তাই প্রকাশ করত না। আর আমি তো তোকে বলেছিলাম আমার বন্ধুকে তোকে দিবই বোন। বলেছিলাম না বল? ”

রাহি এবারে অল্প হাসে। সে কত আগে যখন রাহি সদ্য নতুন নতুন লিয়নের প্রেমে পড়েছিল তখনই নিশীথ বলেছিল এটা। অথচ এই সমস্ত কথা গুলো ভাবতেই রাহির মন ফুরফুরে হলো। বুক ধুকফুক করল। কেমন একটা অনুভূতি হলো। লিয়ন ভাই সত্যিই তাকে ভালোবাসে? সত্যিই? কিন্তু কত কত প্রশ্নের উত্তর নেই তার কাছে! এত প্রশ্নের উত্তর লিয়ন ভাই দিবে? রাহি যখন ভাবনায় ব্যস্ত ঠিক তখনই নিশীথ বলল,

“ এবার আমরা বাসায় ফিরি? তোদের দুইজনের রাগ অভিমান পরে মিটিয়ে নিস। আর শোন, লিওকে যত পারবি ঘুরাবি। লিও ও বুঝুক আমার বোনকে কষ্ট দেওয়ার ফল হুহ?”

.

রাহি, নিশীথ আর মৃধা সেদিন রাতেই বাসায় ফিরল। সুন্দর ভাবে আয়োজন করে রাহিকে বাসায় নেওয়াও হলো। অথচ রাহির সারাটা রাত ঘুম হলো না।ছটফট করে করেই পুরোটা রাত কাঁটাল সে। অবশেষে ভোরবেলাতেই লিয়নের সেই আগের পুরাতন নাম্বারটা থেকে কল এল। রাহি এই নাম্বারটা খুব ভালো করেই চিনে। বুকের অদ্ভুত হৃদস্পন্দন নিয়ে কল রিসিভড করল রাহি। ওপাশ থেকে শুনল,

“রাহি? আমি মিথ্যে বলছি না রাহি। সত্যিই ভালোবাসি। প্লিজ, প্লিজ আর একটা বার সুযোগ দাও। আমায় এক্সপ্লেইন করার সুযোগ টা তো দাও রাহি। ”

রাহি চোখ বুঝল। চোখ টলমল করল এবারেও। মুহুর্তেই কল রেখে ফোনটা বালিশ চাপা দিয়ে রাখল। বিরবিরিয়ে বলল,

“ আপনি আমার হৃদয়ের সে অনুভূতি যাকে আমি এতকাল তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে চাইতাম লিয়ন ভাই। আপনাকে পাওয়া যে এতোটাই সহজ তা যদি আগে জানতাম লিয়ন ভাই! উহ! এই সুখ সওয়ার আগে মরণ কেন হলো না আমার লিয়ন ভাই? আমার অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে। হৃদয়ে প্রশান্তি বইছে। আপনি বোধহয় ধারণাও করতে পারবেন না আপনার সামান্য ভালোবাসি বলাটাই আমাকে কতোটা খুশি করতে পারর! ”

.

ভোর রাত! নিশীথ এক নজরে চেয়ে আছে মৃধার দিকে।গুঁটিশুঁটি মেরে তার বুকেই লেপ্টে ঘুমোচ্ছে মেয়েটা। নিশীথ শুকনো ঢোক গিলে। এলোমেলো চুলগুলো কানের পিঠে সরিয়ে চুম্বন আঁকল মৃধার কপালে। পরমুহুর্তেই থুতনিতে চুমু দিল। মৃধার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে ঠোঁটজোড়া নিয়ে গেল মৃধার গলদেশে। ফর্সা গলায় উষ্ণ স্পর্শে বারকয়েক চুম্বন এঁকে পরমুহুর্তেই কাঁমড় বসাল। মৃধা মুখ কুঁচকাল। ঘুমের মধ্যেই বলে উঠল,

“ আহ্ নিশীথ! ”

নিশীথ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। কানের লতিতে ঠোঁট ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে বলে উঠল,

“ বলো জান.. ”

মৃধা চোখ মেলে তাকাল। নিশীথের চাহনিতে তাকিয়েই যা বুঝার তা বোধহয় বুঝে গেল যেন সে। তবুও জিজ্ঞেস করল,

“ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আশ্চর্য? ”

নিশীথ বাঁকা হাসে। মৃধার অবস্থান দেখিয়ে বলে উঠল,

“ এভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমালে না তাকিয়ে কি করব? অবশ্য তুই বললে অন্য কিছুও করতে পারি। করব? ”

মৃধা সরু চোখে চাইল। নিশীথের বুকে লেপ্টে আছে দেখে সরে এল মুহুর্তেই। বলল,

“ থাপ্পড় খাস নি কতদিন? ”

নিশীথ মৃধাকে সরতে দিল না। একটানে কোমড়ে চেপে নিজের সাথে চেপে ধরল। মুখ ডুবাল মৃধার গলায়। ঠোঁট নেড়ে ওভাবেই বলে উঠল,

“ উহ্! ভালোবাসা হয়নি বহুদিন! তোকে ভালোবাসলে সুখ সুখ লাগে। ভালোবাসতে দে, তারপর তোর শত থাপ্পড় খেতেও রাজি আমি। ”

মৃধা তখন চোখ বুঝে নিল। নিশীথের ঠোঁটের স্পর্শ আর উষ্ণ নিঃশ্বাস গলদেশে স্পর্শ করতেই শিউরে শিউরে উঠল। কোন ভাবে বলল,

“ জেগে জেগে কি এসবই ভাবছিলি আমার দিকে তাকিয়ে? তোর মনে এত খারাপ চিন্তাভাবনা সবসময়? ”

নিশীথ হাসে ঠোঁট এলিয়ে। তার সুখের মাঝে সুখ খুঁজতে ব্যস্ত হয় মুহুর্তেই। ফিসফিসিয়ে বলতে লাগল,

“ বউকে ভালোবাসার কথা ভাবা খারাপ চিন্তাভাবনার অন্তর্ভুক্ত? কে বলল তোকে
বউকে ভালোবাসা কত বেশি ভালো কাজ! তুই জানিস না? ”

মৃধা চোখ বুঝে হাসল মৃদু। বলল,

“ জানি বলেই তোর ডাকে সাড়া দিলাম। নাহলে আমার কাছে ঘেষলেও এক থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দিতাম।”

নিশীথ হাসে।মৃধার দিকে চেয়ে বলল,

“ ভাগ্যিস! থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দিচ্ছিস না! নয়তো মানুষ তোকে বলত দাঁত নেই ওয়ালা বরের বউ! ”

.

সকাল হলো। মৃধক সদ্যই গোসল সেরে বের হলো। পরনে লাল রাঙ্গা একটা শাড়ি পরেছে। সাথে ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। যার জলগুলে ছুঁয়ে ছুুঁয়ে পড়ছে মৃধার ফর্সা কোমড়েই। নিশীথে তা মনোযোগ দিয়েই দেখল যখন মৃধা কাপড় মেলে দিচ্ছিল বেলকনিতে। নিশীথের তখন মুখে ব্রাশ। দাঁত ব্রাশ করা কম্প্লিট করার আগেই বউয়ের অপরূপ দেখে শুকনো ঢোক গিলে সে। দ্রুত উঠে গিয়ে মুখ ধুঁয়ে এসেই দাঁড়াল মৃধার সামনে। মৃধা যখন ভ্রু কুঁচকাল প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তখনই নিশীথ বলল,

“ তুই এত সুন্দর হতে গেলি কেন সুখ? নাকি ইচ্ছে করেই আমার মাথা ঘুরিয়ে দিস? কোনটা? ”

মৃধা ফ্যালফ্যাল করে তাকাল নিশীথের দৃষ্টির দিকে। বলল,

“ কি আশ্চর্য! তুই আবারো এভাবে চেয়ে আছিস কেন? আবার তোর মাথায় কি ঘুরছে? ”

নিশীথ উত্তরে হাসল। মৃধার কোমড় আঁকড়ে ধরে বলল,

“ তুই সুখ! আমার পুরো মাথাটাতেই কেবল তুই ঘুরিস। ”

মৃধা নিজের কোমড় থেকে নিশীথের হাত ছাড়াল। সরে গিয়ে বলল,

“ সর নিশীথ। সকাল সকাল এসব কি আচরণ করছিস? ”

নিশীথ ফাঁটা বেলুনের মতো চেয়ে বলল,

“এভাবে সরিয়ে দিলি? ”

মৃধা চলে যেতে যেতে বলল,

” তো কি তোকে কোলে নিয়ে আদর করব আমি? সুযোগ ফেলেই যে ছুঁই ছুঁই স্বভাবটা করিস এরজন্য তোকে মারিনি এটাই তো অনেক! ”

নিশীথ হতাশ হয়ে গোলগোল চোখে চেয়ে থাকল। বিরবির করে বলল,

“ পাষন্ড বউ আমার। বরের ফিলিংস বুঝে না! ”

#চলবে…..