#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_1
যেদিন আট বছরের মায়া কে ষোলো বছরের আলভীর সাথে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় ওই দিনই আলভী রাগে ক্ষোভে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফুপুর বাড়িতে গিয়ে ওঠে।
তারপর আর নিজের বাড়িতে মনের ভুলেও পা রাখেনি।
বাবা মায়ের সামনেও আর যায়নি।
বাবা মা দেখা করতে আসলেও দেখা করতো না।
ফুপুর বাড়িতে থেকেই ইন্টার মিডিয়েট পড়া শেষ করে। পড়াশোনার সব খরচ ওর বাবা আলতাফ মাহমুদ দেন।
একটা মাত্র ছেলে না দিয়ে উপায় কি। কোটি কোটি টাকা কার জন্য জমিয়েছেন তিনি ? একমাত্র ছেলের জন্যই তো।
বাবার টাকা দিয়েই জার্মানি চলে গিয়েছিল আঠারো বছর বয়সে। বাকি পড়াশোনা সেখানেই শেষ করেছে। দেশ থেকে বাবার টাকা নিয়ে জার্মানিতে শেয়ারে বিজনেস শুরু করেছে এখন।
আজ আলভী ঊনত্রিশ বছরের যুবক। দীর্ঘ এগারো বছর পর আজ দেশে ফিরছে বাবা মায়ের জোরাজুরিতে। শুধু যে বাবা মায়ের জোরাজুরিতে দেশে ফিরছে তা নয়, আরো দুটো কারণ আছে ১. মায়া কে ডিভোর্স দেবে। ২. নিজে পছন্দ করে দ্বিতীয় বিয়ে করবে।
এই দুটো প্রস্তাব ও ওর বাবা মা দুজনেই দিয়েছে ওকে। আলভী ও মেনে নিয়েছে বাবা মায়ের এই প্রস্তাব।
মায়া কে ওর কোন কালেই পছন্দ ছিল না। চাচাতো বোন হওয়ার দরুন ছোট থেকে চোখের সামনে সহ্য করতে হয়েছে সব সময়। বাপ চাচার মাথায় কিসের কি ভূ ত উঠেছিল কে জানে ? জোর করে ধরে বিয়ে করিয়ে দিলো সবচেয়ে অপছন্দের মেয়ে মায়ার সাথে।
সুন্দরী একটা গার্লফ্রেন্ড ছিল। ওর বিয়ের কথা শুনে সেদিনই গার্লফ্রেন্ড ব্রেকআপ করে আরেক ছেলের সাথে চলে গেছে। আহা কি দুঃখ। আজ হয়তো ওর সেই প্রথম প্রেম , প্রথম গার্লফ্রেন্ড অন্য কোন ছেলের তিন চার বাচ্চার মা হয়ে গেছে। আহা এই দুঃখ আলভী কোথায় রাখবে ?
আলভীর দুঃখ রাখার জায়গা এই দুনিয়ায় নেই।
এয়ারপোর্টে থেকে বেরিয়ে দেখে ড্রাইভার আর ওর বাবা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে ওর জন্য।
কোন কথা না বলে চুপ চাপ গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
দীর্ঘ তেরো বছর পর আজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।
তেরো বছর পর মায়া কে দেখবে আজ। নিশ্চই এই মেয়ে এখনো আগের মতোই হ্যাংলা পাতলা রোগা পটকা ঝুলঝুলে রয়ে গেছে।
ছোট বেলায় খাবার খেতে চাইতো না। দুই তিন জন চেপে ধরার পর খাবার গেলাতো হতো মায়া কে। গিলতে চাইতো না উগরে ফেলে দিতো মুখের খাবার। পুরোনো কথা ভাবতেই গা গুলিয়ে ওঠে আলভীর। ছিঃ কি বিশ্রী দেখতে লাগতো তখন মায়া কে। দেখলেই বমি চলে আসতো। খাবার মুখে পুরে দিয়ে মুখ চেপে ধরে রাখতে হতো, তাহলেই খাবার গিলতো মায়া। পরনের পোশাক একটু সময়ের মধ্যেই নোংরা করে ফেলতো। একটু কিছু হলেই গলা ছেড়ে কেঁদে কে টে পুরো বাড়ি মাথায় তুলতো। পানি পেলেই সেই পানি ফ্লোরে ফেলে ল্যাটা দিয়ে বসে থাকতো পানির উপর। সর্দি লাগতো দুদিন পর পর। নাক মুখের কি হাল করে যে রাখতো। ছিঃ ছিঃ।
এখনো এই মেয়ে বোধহয় আগের মতোই রয়ে গেছে।
শরীর ঝাঁকি দিয়ে সোজা হয়ে বসে আলভী।
বাড়িতে ফিরে আগে মায়া কে তালাক দেবে তার পরেই আলভী শান্তি পাবে। এই মেয়ের জন্য এত বছরেও আলভী শান্তি পায়নি। খা চ্চু ন্নি মেয়ে একটা।
এগারো বছর আগে রেখে যাওয়া নিজের মাতৃভূমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে। অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে ঢাকা শহরের। এখন আর আগের মতো নেই।
,
,
বাড়ির দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই কোথা থেকে যেন একটা ডিম এসে সোজা আলভীর মাথার উপর ভেঙ্গে যায়। হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে যায় আলভী সাথে ওর বাবা আলতাফ মাহমুদ।
আলভী বোঝার চেষ্টা করে ওর মাথা আর মুখের উপর এমন আঠালো গন্ধ যুক্ত কি পড়ল ? সানগ্লাস সরিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই দেখে ভাঙ্গা ডিম পায়ের নিচে পড়ে আছে। আর ওর পুরো মুখ শার্ট ডিম দিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
নিজের এমন অবস্থা দেখেই চিৎকার করে ওঠে। ওর এক চিৎকারে সবাই এসে হাজির হয় ড্রইং রুমে।
আলভী সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে অতি মাত্রায় সুন্দরী এক রমণী কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। দেখা মাত্রই আলভীর নজর আটকায় মেয়েটার দিকে। মিডিয়াম হাইট ,গোলগাল ফর্সা, গাল দুটো রসগোল্লার মতো ফোলা ফোলা।
আলভী বির বির করে বলে,
_ এই মেয়েকেই বিয়ে করবো আমি। একদম আমার মনের মতো এই মেয়েটা কে দেখতে। আমার কল্পনার রাজকন্যা।
পাশ থেকে একজন জোরে মেয়ে টা কে ধমক দিয়ে বলে,
_ মায়া কি করলি এটা ? কার মাথায় ডিম ভাঙ্গলি গাধী ?
মায়া বলে,
_ আমি তো ভাইয়ার দিকে ছুঁড়ে ছিলাম। মাঝখানে কোথা থেকে এই লম্বা চওড়া খাম্বা লোকটা এসে দাঁড়িয়ে গেলো। আমার কোন দোষ নেই, সব দোষ এই লোকের। সে কেন সামনে এসে দাঁড়াল ?
আলভী হতভম্ভ হয়ে বড় বড় চোখ করে মায়ার দিকে তাকায়। এই মেয়েটা মায়া ? যাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য এত দূরে আসলো, আর এসেই তার প্রেমেই পড়ল আবার ? কি আশ্চর্য ! এই মায়া তো আগের থেকেও বজ্জাত হয়ে গেছে দেখা যায়। ওর মাথায় ডিম ভেঙ্গে আবার ওরই দোষ দিচ্ছে।
চলবে……..