#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_19
[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]
সামসুন্নাহার বেগম দমে না গিয়ে গলার স্বর চড়িয়ে বললেন,
“তুমি মিথ্যে কথা বলছো, মায়ার দোষ চাপা দেওয়ার জন্য।”
আলভী রাগে লাল হয়ে চোয়াল শক্ত করে, নানির দিকে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আজ যদি তুমি বুড়ো মানুষ না হতে, তাহলে এক আছাড়ে পেট ফাটিয়ে দিতাম তোমার। বয়স হয়েছে, গায়ের চামড়াও ঝুলে পড়েছে, কিন্তু মাথার ভেতরে এখনো শুধু শ য় তানি। নামাজ কালাম তো বোধহয় কখনো পড়োও না। আল্লাহর ভয়ও নেই মনে, অথচ মুখে ধর্মের বুলি ঝাড়ো। এক পা কবরে, আরেক পা জমিনে তবুও কুৎসা রটাও। মায়া কী করেছে তোমার? তোমার জমির পাকা ধানে মই দিয়েছে? ঘরের টাকা চুরি করে এনেছে? না কি তোমার সংসারে দখল নিতে চেয়েছে? কোনো টাই তো করেনি। তাহলে কেনো সব সময় মায়ার পেছনে লেগে থাকো? ইচ্ছে তো করছে তোমাকে কাচা চিবিয়ে খেতে। বুড়ো মানুষ বলে আজ বেঁচে গেলে, নয়তো খবর ছিল আজ।”
এতক্ষণ চুপ থাকা ঐশী রহমান কাঁপা গলায় বলেন,
“মা, তোমার সমস্যা কী বলো তো? এক কথা তোমাকে কতবার বলেছি, তবুও বোঝো না? তুমি মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি এসেছো ঘুরবে, ফিরবে, খাবে, গল্প করবে। অথচ তুমি মায়ার পেছনে লেগে সবার আনন্দ টুকু বিষিয়ে দিচ্ছো। এত মানুষের সামনে তুমি নিজেই নিজের সম্মান নষ্ট করছো এটা কি তোমার ভালো লাগছে? ভবিষ্যতে এদের সামনে মুখ দেখাবে কিভাবে?”
সামসুন্নাহার বেগম মাথা নিচু করে বসে রইলেন। উপরের রুমে যারা যারা ছিল আলভীর রাগী গলার স্বর শুনে সবাই নিচে নেমে এসেছে।
আলভী রাগে কাপছে। ওর নানি যে এতটা নিচে নামতে পারে দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি। কিভাবে পারলো ওর বউয়ের নামে এসব বলতে? মায়া কে অপছন্দ করে ঠিক আছে তাই বলে এসব বলবে? একজন মানুষের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তোলা ছোট খাটো কোনো কথা নাকি? ওর তো ইচ্ছে করছে ওর নানি কে ধরে মনের রাগ মিটিয়ে উদ্যম মাদ্যম দিতে। একে তো বুড়ো মানুষ তার উপর আবার নানি হয়। রাগ উঠলেও সেভাবে কিছু বলতে পারছে না।
ঘুরে দাঁড়ায় নানার দিকে তাকিয়ে।
“এই বুড়ি কে কিছু করার আগেই আমার চোখের সামনে থেকে সরাও। আর তোমার ছোট নাতনীও যেন আমার চোখের সামনে না আসে।”
আলভীর মুখে শেষের কথা গুলো শুনে সবাই লিরার দিকে তাকায়। এই বজ্জাত মেয়ে টা আবার কি করেছে? লিরা মাথা নিচু করে বড় বোনের পেছনে দাঁড়ায়। সবাই এভাবে তাকাচ্ছে কেন? আর আলভী এমন কথা বললো কেন? সেদিনের পর ওতো কিছু বলেনি মায়া কে। আলভী কেও তো কিছু বলেনি।
লিরার বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে লিরার দিকে। দেখে মনে হচ্ছে ওই চোখ দুটো দিয়েই ভস্ম করে দেবে এখনই। শুকনো ঢোঁক গিলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
আলভী আবার তাকায় নানির দিকে। আগের মতোই রাগী তেজি স্বরে বলে,
“নিজের নাতনী কে যদি এতোই ভালোবাসো তাহলে নিজের জামাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে নিজের কাছেই রেখে দাও সারা জীবন। তবুও অন্যের সংসারে আগুন লাগাতে আসবে না।”
ড্রইং রুমে বসে থাকা কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই চুপ চাপ বসে আছে, দাঁড়িয়ে আছে।
আলভী মায়ার দিকে তাকায়। মায়ার ফর্সা নাক, গাল, চোখের এরিয়া লাল হয়ে গেছে। দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে শ্রাবণধারা। রাগে মাহিরের চোখ মুখও লাল হয়ে আছে।
আলভী মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“ওঠো।”
মায়া ওঠেও না, আলভীর দিকে তাকায়ও না।
আলভী হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“সোফা থেকে ওঠো।”
মায়া তবুও কিছু বলে না। আলভীর চড়ে যাওয়া মেজাজ আরো চড়ে যায়। জোড়ে ধমক দিয়ে বলে,
“ওঠ, কি বলছি কানে যাচ্ছে না?”
আলভীর ধমকে ড্রইং রুমের সবাই কেঁপে ওঠে। সামসুন্নাহার বেগম ভয় পেয়ে জড়সড় হয়ে জান।
মায়া শব্দ করে কেঁদে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আলভী মায়ার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন সরে দাঁড়ায়।
আলভী লাল চোখে লিরার দিকে একবার তাকায়।
রুমে এসে ধারাম করে ডোর লাগায় আলভী। এত জোড়ে শব্দ হয় যে মনে হচ্ছে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলো। ভয় পেয়ে আবার কেঁপে ওঠে মায়া। নিচে থাকা সকলেই স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে এত জোড়ে লাগানো ডোরের শব্দ।
আলভী মায়া কে টেনে এনে বেডের উপর বসায়। টিস্যু হাতে নিয়ে মায়ার চোখ-গাল মুছিয়ে দেয়।
পানির বোতল হাতে নিয়ে পানি খাওয়ায়। তারপর আগের মতোই রাগী স্বরে বলে,
“আমি কিছু বললেই তো চ্যাটাং চ্যাটাং করে কথা বলো। মুখ খোলার আগেই উত্তর রেডি করে রাখো। তাহলে এখন কি হয়েছিল? ওই বুড়ি যখন এত কিছু বললো উত্তর দিলে না কেন? তখন মুখের মধ্যে সুপার গ্লু লাগানো ছিল?”
মায়া বলে না কিছু।
“বুড়ি যখন এত বড় মিথ্যে কথা বললো সকলের সামনে তখন বুড়ির চুল টেনে ছিঁড়লে না কেন? মানুষের কথা শুনে এমন চুপ করে থাকো বলেই তো তারা কথা বলার সুযোগ পায়।”
“একবার দুবার বললে কি এদের লজ্জা হয়? কত বার বলবো? একবার ছেড়ে দুবার কিছু বললেই তো সবাই হৈহৈ করে বেয়াদব উপাধি দিয়ে দেয়। বাবা মা শিক্ষা দিতে পারেনি সেই কথাও বলে। কি করবো তাহলে?”
“কথায় কাজ না হলে হাত দিয়ে দিবে, হাত দিয়ে কাজ না হলে খু ন করে ফেলবে। পরের টা আমি দেখে নেবো।”
“কি দেখবেন? আমার বদলে আপনি জেল খেটে দেখবেন কেমন লাগে?”
“হ্যাঁ।”
মায়া রাগী চোখে আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আলভী এক কদম এগিয়ে এসে মায়া কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
“তখন এত জোড়ে ধমক দেওয়ার জন্য সরি। ভালো ভাবে কিছু বললে শোনো না কেন?”
“ছোঁবেন না আমাকে, দূরে সরুন।”
আলভী ছাড়ে তো নাই উল্টো আরো শক্ত করে ধরে।
“আজকের পর কেউ কিছু বললে তার গুষ্টির পিন্ডি চটকে দিয়ে আসবে, সে যেই হোক না কেনো শুধু আমি বাদে।”
,
,
ঐশী রহমান কিছু না বলে কিচেনে চলে আসেন। ঝরঝর করে কেঁদে ওঠেন। ওনার পেছন পেছন মেহবুবা মেহেরও কিচেনে চলে এসেছেন। তিনি ঐশী রহমান কে সান্তনা দিয়ে বলেন,
“তুমি কেনো কাদঁছো ঐশী? ভুল তো তুমি করোনি তাহলে তুমি কেনো কাদবে? কান্না বন্ধ করো।”
“মাফ করবেন আপা। আমার মায়ের জন্য মায়া কে এত কষ্ট পেতে হলো। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি মা এমন কিছু করবে বা বলবে।”
মেহবুবা মেহের ঐশী রহমান এর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেন,
“পা গ ল মেয়ে এভাবে কেনো কাদঁছো? মাফ চাইতে হবে না। তোমার মা কে পরে বুঝিয়ে বলে দিও পরে যেন এমন কাজ আর না করে। মাহিদ, মাহির আর তোমার ভাইয়া ভীষণ ক্ষেপে আছে।”
“সবাই কে আমি আজকেই পাঠিয়ে দেব এই বাড়ি থেকে। এটাও বলে দেব ওনারা যেন আর কোনো দিন এই বাড়িতে না আসে।”
“পা গ ল হয়েছো নাকি তুমি? ওনারা এমনিতেও আগামী কাল চলে যেতে চাইছে এখন আর এমন কিছু বলবে না তুমি।”
লিরার বাবা ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“যাও ব্যাগ গুছিয়ে নাও আর সবাই কে বলো ব্যাগ গুছিয়ে নিতে। দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে সবাই আমার সামনে আসবে। দশ মিনিটের বেশি সময় লাগলে সবাই কে রেখেই চলে যাব আমি।”
আলতাফ মাহমুদ কিছু বললেন না। রাগে ওনার মস্তিষ্ক টগবগ করে ফুটছে। কত বড় সাহস ওনার বাড়িতে এসে ওনার ছেলের বউ এর চরিত্র নিয়ে কথা বলে। আলতাফ মাহমুদ ঐশী রহমান কে বিয়ে করার প্রথম দিক থেকেই শাশুরি মা কে সেরকম পছন্দ করেন না তার এমন স্বভাবের জন্য। সব সময় অন্যকে নিয়ে সমালোচনা করা, খুত ধরা, খোটা দিয়ে কথা বলা সহ আরো অনেক খারাপ অভ্যাস ওনার মধ্যে ছিল এখনো আছে। এর আগে আলতাফ মাহমুদ নিজে শাশুরি মা কে সাবধান করে দিয়েছিলেন যেন দ্বিতীয় বার মায়া কে কিছু বলার সাহস না করে। কিন্তু এবারেও এসে এমন কিছুই করলেন। এই মহিলা জীবনেও শুধরাবে না।
আহনাফ মাহমুদ গম্ভীর স্বরে বলেন,
“এখন কেউ যেতে পারবেন না। আগামী কাল যাবেন সবাই।”
লিরার বাবা মাথা নিচু করে বলেন,
“মাফ করবেন বেয়াই।”
“এরকম কথা বলবেন না।”
“আর থাকা সম্ভব না। যদি ভাগ্য নিয়ে আসে তাহলে আবার কোনো একদিন আসবো। আজকে যেতে দিন।”
“কোনো কথা শুনতে চাই না আমি, আপনারা আজকে যাচ্ছেন না।”
আলভীর নানা সোফা ছেড়ে উঠে এসে আহনাফ মাহমুদের পাশে বসেন। আহনাফ মাহমুদের দুই হাত ধরে অপরাধীর ন্যায় বলেন,
“মাফ করবেন বাবা, অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে।”
আহনাফ মাহমুদ আলভীর নানার হাত ধরে বলেন,
“এভাবে বলবেন না, আপনি আমার বাবার বয়সী।”
“এখানে আর থাকতে পারবো না বাবা, সেই মুখ নেই আমাদের। আপনি আর থাকার জন্য বলবেন না।”
“তাহলে অন্তত খাবার খেয়ে জান সবাই। রান্না প্রায় হয়েই এসেছে বোধহয়।”
“আচ্ছা।”
আলভীর নানা স্ত্রীর দিকে আগুন চোখে তাকান। একবার বাড়ি ফিরতে পারলে হয়, তারপর এই বুড়ি কে গরম তেলে ভাজবেন। জীবনে আজ অব্দি কারো সামনে কখনো মাথা নিচু করতে হয়নি। কারো কাছে মাফ চাইতে হয়নি আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত। এই বুড়ির কথার জন্য পুরো বাড়ির মানুষের মাথা নিচু হয়ে গেছে।
মেয়ে টা কেও ছোট হতে হলো শশুর বাড়ির মানুষ গুলোর সামনে। কাদতে কাদতে কিভাবে চলে গেল রান্না ঘরে। বাড়ির কেউ কিছু না বললেও আলতাফ মাহমুদ কিছু না কিছু ঠিকই বলবেন ঐশী রহমান কে। মায়া মেয়েটাও কিভাবে বাবার কাছে ধমক খেলো। ছোট বেলা থেকেই মেয়ে মানুষের কত কথা শুনে বড় হয়েছে। রাগে ওনার ইচ্ছে করছে সামসুন্নাহার বেগম কে এখানেই মে রে পুঁতে রেখে যেতে। এই শ য় তা নের কারখানা কে বাড়ি বয়ে নিয়ে গিয়ে কি করবেন?রাইটার সানা শেখ। গল্প টি আগে আগে পড়তে সানা শেখ পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন সবাই। তাহলে পরবর্তী পার্ট পোষ্ট করার সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন।
লিরার বাবা সোফা ছেড়ে উঠে লিরা কে টেনে নিয়ে গেস্ট রুমে আসেন। সবাই তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে দেখে কেউ কিছু বলে না।
“বল আলভী কে কি বলেছিস তুই?”
লিরা ভয়ে আতঙ্কে জড়ানো গলায় বলে,
“আ আমি কিছু বলিনি আলভী কে।”
শক্ত হাতে আদরের মেয়ের গালে চড় বসান সাথে সাথেই।
“বেয়াদপ মেয়ে, আলভী তোর ছোট না বড়? তোর বড় বোন আলভী কে ভাইয়া বলে ডাকে তুই কেনো নাম ধরে ডাকিস? এখানে আসার পর থেকে তোর চাল চলন শুধু দেখছিলাম। অন্যের বাড়ি তাই কিছু না বলে চুপ ছিলাম। দাদি নাতনী মিলে কি প্ল্যান করেছিলি বল।”
লিরা কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে।
চুপ থাকতে দেখে রাগ সামলাতে না পেরে অপর গালেও চড় বসিয়ে দেন।
“আজকে বাড়ি ফিরে নেই তারপর তোর ব্যবস্থা করবো। আদরে আদরে শ য় তা ন তৈরি হয়েছিস তাইনা? কাঁচা কঞ্চি দিয়ে মে রে তোর শ য় তা ন দূর করবো।
চলবে…………….
#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_20
[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]
রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসে আলভী। কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলের কাছে এগিয়ে আসে। মেড মায়া আর মেহবুবা মেহের সকলের জন্য খাবার বাড়ছেন। আলভী শাশুরি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে দাও।”
মেহবুবা মেহের আলভীর দিকে তাকান।
“আমার আর মায়ার জন্য খাবার বেড়ে দাও।”
মেহবুবা মেহের কিছু না বলে দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে দেন। আলভী প্লেট দুটো হাতে তুলে নেয়। উল্টো ঘুরে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“মায়া আক্তার এক জগ পানি নিয়ে আসো।”
মায়া ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা পানি ভর্তি জগ টা নিয়ে আলভীর পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে।
আলভী কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। মায়া চলে যেতে পারে তাই বাইরে থেকে ডোর লক করে রেখে গিয়েছিল।
“ডোর খোলো।”
ডোর খুলে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে মেড মায়া।
প্লেট দুটো বেডের উপর রেখে মায়ার হাত থেকে জগ নিয়ে ভেতর থেকে ডোর লক করে দেয় আলভী।
জগ রেখে মায়ার সামনে দাঁড়ায়।
“যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো।”
“আমি আমার রুমে যাব।”
“তো এটা কার রুম?”
“আপনার।”
“আমি কার?”
মায়া চোখ তুলে আলভীর মুখের দিকে তাকায়। চোখ নামিয়ে নিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
“আমার আমি টাই যখন তোমার তখন এই রুম টাও নিশ্চই তোমার।”
“না আপনি আমার, আর না এই রুম আমার।”
“আমিও তোমার, এই রুম টাও তোমার, আর আমার সব কিছুই তোমার। এখন ওঠো হাত মুখ ধুয়ে আসো খিদে পেয়েছে।”
“আপনাকে খেতে নিষেধ করেছি আমি?”
“বউ না খেয়ে থাকলে আমি কিভাবে খাবো?”
মায়া কে উঠছে না দেখে আবার বলে,
“আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে মায়া। ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে না ওঠো।”
মায়ার হাত ধরে টেনে বেড থেকে নামিয়ে দার করায় আলভী। তারপর হাত ধরে টেনেই ওয়াশরুমে নিয়ে আসে। ওয়াশরুমে এসে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থাকে মায়া। আলভী হাতে পানি নিয়ে মায়ার মুখ ধুইয়ে দিতে শুরু করে।
“আরে কি করছেন? ভিজিয়ে দিচ্ছেন কেন?”
“ভালো ভাবে বলছি শুনছো না কেন?”
“সরুন।”
আলভী কে সরিয়ে দিয়ে মায়া নিজেই হাত মুখ ধুয়ে নেয়। শ য় তা ন লোক দিল জামা টা ভিজিয়ে।
রুমে এসে বেলকনি থেকে টাওয়েল এনে মায়ার দিকে বাড়িয়ে ধরে আলভী।
“হাত মুখ মুছে নাও।”
“লাগবে না।”
“এমন ঘাড় ত্যাড়া কবে থেকে হয়েছো বলো তো! কথায় কথায় ত্যাড়ামি।”
মায়া কিছু বলার আগে আলভী নিজেই মায়ার হাত মুখ
মুছিয়ে দেয় জোর করে। টাওয়েল সোফার উপর ছুঁড়ে দিয়ে মায়া কে পাঁজা কোলে তুলে বেডে বসিয়ে দেয়। খাবার ভর্তি একটা প্লেট মায়ার সামনে দিয়ে অন্য টা নিজে সামনে নিয়ে বসে। মায়া বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আলভীর মুখের দিকে।
প্লেট থেকে একটা চিংড়ি মাছ তুলে আলভী নিজে এক কা মড় খায় । তারপর মায়ার চোয়াল চেপে ধরে বাকি টা মায়ার মুখের ভেতর পুরে দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়।
“খাওয়া শুরু করো বউ।”
আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মুখের মাছ টুকু চিবুতে শুরু করে মায়া।
আলভী কয়েক লোকমা ভাত খাওয়ার পরেও দেখে মায়া এখনো নিজের প্লেটে হাত দেয়নি। ভাত মাখিয়ে পুনরায় মায়ার চোয়াল চেপে ধরে মুখের মধ্যে ভাত পুরে দেয়। আবার ভাত মাখতে মাখতে বলে,
“হাত দিয়ে খাবে না, আমার হাতে খাবে বললেই হয় এভাবে চুপ চাপ বসে আছো কেন?”
মায়া কিছু না বলে নিজের প্লেটের দিকে তাকায়। এত খাবার কিভাবে খাবে?
আলভী আবার ভাত তুলে ধরে মায়ার মুখের সামনে।
“আমার হাত আছে।”
“তো খাচ্ছো না কেন তাহলে?”
“এই যে খাচ্ছি এখন।”
মায়া নিজের হাতে খেতে শুরু করে।
আলভী আর কথা না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
খেতে খেতে মায়ার মুখের দিকে তাকায়। মায়া মাথা নিচু করে চুপ চাপ খেয়ে চলেছে। মায়ার ভাবমূর্তি এমন যে, ও ব্যতীত আর কেউ নেই এই রুমে। ওর সামনে যে আস্ত একটা মানুষ বসে আছে সেদিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। গল্পের রাইটার সানা শেখ। পরবর্তী পার্ট আগে আগে পড়তে সানা শেখ • পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন সবাই।
,
,
আলভীর নানার বাড়ির সবাই রেডি হয়ে ড্রইং রুমে এসে দাঁড়িয়েছে। সামসুন্নাহার বেগমের মধ্যে সেরকম কোনো ভাবান্তর নেই এখনো। লজ্জায় অপমানে তার ছেলে মেয়ে সহ সবাই নুইয়ে গেছে আর তিনি এখনো শিনা টান টান করে দাঁড়িয়ে আছেন।
আলভীর নানা সবাই কে দাঁড়াতে বলে আলভীর রুমের দিকে এগিয়ে আসেন। ডোর নক করতেই ভেতর থেকে আলভীর গলার স্বর শোনা যায়।
“নানা ভাই আমি এসেছি।”
আলভী মায়ার দিকে তাকায়। মায়া বেডের উপর গুটিয়ে বসে আছে চুপ চাপ।
বেড থেকে নেমে ডোর খুলে দেয়।
“কোথায় যাচ্ছো?”
“চলে যাচ্ছি।”
“আজকেই? আগামী কাল না যাওয়ার কথা ছিল।”
“মায়া কোথায়?”
“ভেতরে আসো।”
ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন মায়া মাথা নিচু করে বসে আছে। নাম ধরে ডাক দিতেই মুখ তুলে তাকায়। চোখ মুখ এখনো ফোলা ফোলা। মায়া কে দেখলে ওনার ভীষণ মায়া হয় সেই প্রথম থেকেই। আগে যখনই মেয়ের বাড়িতে আসতেন তখনই দেখতেন মায়া মলিন মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে, চুপ চাপ এক কোণায় বসে আছে। মেয়েটা মাঝে মধ্যে হাসতো, হাসলে কি সুন্দর যে দেখায় বলার বাইরে। রাইটার সানা শেখ।
“মায়া আমরা চলে যাচ্ছি পারলে তোমার এই বুড়ো নানা কে মাফ করে দিও। আমাদের জন্য তোমাকে এত কথা শুনতে হলো, কষ্ট পেতে হলো। আগে যা হয়েছে ভুলে যাও, নতুন করে সব কিছু শুরু করো। তখন তুমিও ছোট ছিলে, আলভীও ছোট ছিল। ভুল টা ছিল তোমাদের পরিবারের। ভুল আলভীর ও ছিল এটা সত্যি কথা। আলভী যখন সব কিছু ঠিক করতে চাইছে ওকে একটা সুযোগ দাও। এভাবে আর জেদ ধরে থেকো না।”
মায়া শোনে সব কথা কিন্তু বলে না কিছু। একবার শুধু আলভীর দিকে তাকায়। আলভী ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
“আমার সাথে একটু নিচে আসো।”
মায়া তাঁকিয়ে রইলো মুখের দিকে।
“একটু দরকার আছে, দুই মিনিট সময় দিলেই হবে।”
মায়া বেড থেকে নেমে দাড়ায়। ওড়না ঠিক করে নেয়। তিন জন একসাথে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসে। মায়া কে সামসুন্নাহার বেগমের সামনে দাঁড় করান আলভীর নানা।
“সব কিছুর জন্য মায়ার কাছে মাফ চাও।”
সামসুন্নাহার বেগম কিছু না বলে সরে জান।
“কি বলছি কথা কানে যাচ্ছে না? মাফ চাও মায়ার কাছে।”
সামসুন্নাহার বেগম কিছু না বলে গেটের দিকে এগিয়ে জান। কিছুতেই এত গুলো মানুষের সামনে এই মেয়ের কাছে মাফ চাইবেন না। মায়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আলভী গলা ছেড়ে বলে,
“বুড়ো বয়সে এখনো মনের মধ্যে শ য় তা নি আর অহংকারে পরিপূর্ণ। বাঁচবে আর কয় দিন, ম রা র আগে তওবা করে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিও। নামাজ কালাম পড়ে দ্বীনের পথে এসো। বেঁচে থাকতে যা করছো কবরেও জায়গা হবে কিনা আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। মানুষের নামে গীবত গাওয়া, সমালোচনা করা, মিথ্যা দোষারোপ করা, চরিত্র নিয়ে কথা বলা ছেড়ে দিও এখনো সময় আছে।”
সামসুন্নাহার বেগম বাড়ি থেকে বেরিয়ে জান।
আস্তে আস্তে সবাই বেরিয়ে যায় বাড়ির থেকে। ঐশী রহমান বাবার কাছে এগিয়ে আসেন।
“মা’রে মাফ করে দিও, আমরা তোমার মাথা নিচু করে দিলাম পুরো বাড়ির মানুষের সামনে। যদি কোনো দিন আমাকে দেখার ইচ্ছে জাগে তাহলে জেও আমার বাড়িতে।”
“তুমি আবার এসো।”
“সেই মুখ তোমার মা রাখেনি আর। ভালো থেকো সকলের খেয়াল রেখো।”
ঐশী রহমান এর চোখ দুটো টলমল করে ওঠে।
“নানা ভাই এদিকে আসো।”
আলভী এগিয়ে আসে নানার কাছে।
বাইরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলেন,
“মায়া কে বেশি চাপ দিও না, ওকে একটু সময় দাও।অনেক দিনের ক্ষত তো শুকাতে একটু সময় লাগবে। তোমার মায়ের কাছে যা শুনলাম তাতে আমি এটাই বুঝতে পারলাম তোমার অনুপস্থিতে ওকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। এটা বাংলাদেশ, এখান কার কিছু সংখ্যক মানুষদের স্বভাবই অন্য কে খোঁচা দিয়ে, কষ্ট দিয়ে কথা বলা। এসব করে হয়তো এরা পৈশাচিক আনন্দ পায়। জোর যবরদস্তি কিছু না করে আস্তে আস্তে ঠান্ডা মাথায় ওকে বোঝাও।”
“আমার কোনো কথা শুনতেই চায় না। আমার সামনেও আসতে চায় না।”
“তাহলে তুমি কিছু না বলে মায়ার কথা গুলো শোনার চেষ্টা করো। ওর অভিযোগ, অভিমান, কষ্ট গুলো বোঝার চেষ্টা করো। ওর মন হালকা করার চেষ্টা করো। মন হালকা হলেই মন নরম হবে।”
কথা বলতে বলতে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান।
সব শ য় তা নের কারখানা এক গাড়িতে উঠে বসেছে।
গাড়ি বেরিয়ে যায় বাড়ির গেট পেরিয়ে।
বাড়ির সবাই ড্রইং রুমে এসে বসে। মায়া নিজের রুমে চলে যেতে চাইলেও আহনাফ মাহমুদ যেতে দেননি। আলভী এসে বসতেই তিনি আলভীর মুখের দিকে তাকান। বাকি সবাই ও আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আলভী কপাল ভ্রু কুঁচকে সকলের দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নেয়। এভাবে তাঁকিয়ে আছে কেনো সবাই? মায়া মাথা নিচু করে বসে আছে।
আহনাফ মাহমুদ আলভী কে বলেন,
“গত রাতে মায়া সত্যি সত্যিই তোমার রুমে ছিল?”
“হ্যাঁ।”
“সারা রাত ছিল?”
“হ্যাঁ।”
মাহিদ বলে,
“ভাইয়া তুমি না বললে তোমার রুমে পরী গিয়েছিল রাতে। তাহলে মায়া কখন গেল?”
“পরী চলে যাওয়ার পর আমি ব্যাথা পেয়ে তোমাদের সবাই কে ডেকেছিলাম কিন্তু কেউ শুনতে পাওনি আমার কথা। মায়া শুনতে পেয়ে গিয়েছিল রুমে। তারপর আমার সাথেই ছিল, সেজন্যই তো ওই দুষ্ট পরী দ্বিতীয় বার আর আসার সাহস পায়নি।”
মায়া আলভীর মুখের দিকে তাকায়। কত সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে যে মিথ্যে কথা বলে এই লোক টা। কেউ বুঝতেই পারবে না সত্যি বলছে নাকি মিথ্যে বলছে।
“আমি রুমে যাই এখন?”
“যা।”
মায়া সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। দ্রুত পায়ে সিঁড়ির কাছে এগিয়ে যায়। পেছন পেছন আলভী নিজেও দ্রুত এগিয়ে যায়। করিডোরে এসে মায়া কে ধরে জোর করে নিজের রুমে নিয়ে আসে।
মায়া রেগে তাকায় আলভীর মুখের দিকে।
“এখানে নিয়ে আসলেন কেন আমাকে?”
“আজ থেকে তুমি এই রুমে আমার সাথে আমার কাছে থাকবে।”
“থাকবো না আমি।”
“থাকতেই হবে।”
“সকলের সামনে মিথ্যে কেনো বললেন?”
“মিথ্যে কোথায় বললাম? তুমি তো গত রাতে সারা রাত আমার সাথেই ছিলে।”
“ছিলাম সেটা তো আমিও জানি। সবাই কে ডেকেছেন এটা মিথ্যে কথা ছিল না? পরী এসে মে/রে/ছে এটা মিথ্যে কথা না?”
“তো কি বলবো? আমার বউ আমাকে মে রে ছে, আমি বউয়ের ধাক্কা খেয়ে চিৎপটাং হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। বউ কা ম ড় দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছে। আমাকে
পা গ ল মনে হয় তোমার? বউয়ের হাতে মা/র খেয়েছি বলে নিজের মান ইজ্জত নিজেই পাঞ্চার করবো এত গুলো মানুষের সামনে?”
মায়া কিছু না বলে বেডের উপর উঠে বসে রইলো।
আলভী আকাশের দিকে তাকিয়ে বির বির করে বলে,
“আমার কেনো মনে হচ্ছে আমার বউ কে আমার বাপ উস্কানি দেয়। বউয়ের পেছনে কলকাঠি আমার বাপে নাড়ে। আমার বাপে কিছু তো একটা নিশ্চই করে।”
চলবে………….