#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_21
[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]
আলভী মায়ার সামনে এসে বসে বেডে। মায়া মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
আলভী মায়ার গালে হাত রেখে জোর করে নিজের দিকে ফেরায়। আলভীর হাত ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে আবার অন্য দিকে তাকায়।
“এত তেজ কেন? ছোঁয়ার আগেই ছ্যাঁত করে ওঠে।”
মায়া রেগে তাকায়। আলভী চোখ মুখ কাচুমাচু করে ইনোসেন্ট ছেলের মতন বলে,
“এভাবে তাকিও না ভয় লাগে।”
“আপনি কোন মাটি দিয়ে তৈরি বলুন তো।”
“তুমি আর আমি সেম মাটি দিয়ে তৈরি।”
“সরুন আমার সামনে থেকে।”
আলভী বেডের উপর উঠে দাঁড়ায়। মায়া আলভীর দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।
আলভী হেঁটে এসে মায়ার পেছনে বসে দুই পা ভাঁজ করে। এক টানে মায়া কে কোলের উপর তুলে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে। এবার পারলে কোল থেকে ওঠ।
হঠাৎ এমন হওয়ায় হকচকিয়ে যায় মায়া। দ্রুত আলভীর হাত সরিয়ে দিয়ে দূরে সরে আসার চেষ্টা করে।
“সামনে থেকে সরতে বলেছো সরে গেছি। এখন চুপ চাপ বসে থাকবে নয়তো আমি প্রতি শোধ নেব।”
ছটফট বন্ধ করে শান্ত হয়ে যায় মায়া।
অবাক কন্ঠে বলে,
“কিসের প্রতি শোধ?”
“গত রাতে তুমি আমাকে কা মড় দিয়েছিলে। এখন বেশি লাফালাফি করলে আমিও তোমাকে কা মড় দেব।”
“সুধে আসলে দুটো দিয়ে ছেড়ে দিন আমাকে।”
“আমি তো একটা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি যখন দুটো চাইছো তাহলে দুটোই দেই।”
“হ্যাঁ দিন আর ছাড়ুন আমাকে।”
দাঁত বের করে হাসে আলভী। চোখ রাখে মায়ার ফর্সা নরম কোমল ঘাড়ের দিকে।
বেশি দেরি না করে মায়ার ঘাড়ে মুখ গুজে দেয়। মায়ার পুরো শরীর ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। মায়ার সাথে সাথে আলভীর পুরো শরীর নড়ে ওঠে।
প্রথমে আলতো এক কা মড় বসায়। তারপর আলতো চুমু খায়। ঘাড়ে মুখ গুজে রেখেই বলে,
“তোমার গায়ের ঘ্রাণ তো মারাত্মক। নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে।”
ততক্ষণে মায়ার লাফালাফি শুরু হয়ে গেছে আলভীর কাছ থেকে ছোটার জন্য। আলভী যেই শক্ত করে ধরেছে তাতে কারো বাপের মুরোদ হবে না আলভীর কাছ থেকে মায়া কে টেনে আলাদা করার।
“শ য় তা ন লোক কা মড় দেওয়ার কথা বলে কি করছেন আপনি? হাতে কা মড় দিতে চেয়ে ঘাড়ে
কা ম ড় দিলেন কেন?”
মায়ার ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে গালে চুমু খায়। মুখ সরিয়ে নেয় মায়া।
“আমি কি এক বারও বলেছি হাতে কা মড় দেব? আর ”
“আর কি?”
“কিছু না।”
“ছাড়ুন আমাকে।”
“বাপ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।”
কটমট করে আলভীর মুখের দিকে দেখার চেষ্টা করে মায়া। আলভী আবার মায়ার গালে চুমু খায়।
,
,
আলতাফ মাহমুদ মায়ার রুমে আসেন। রুমের কোথাও মায়া নেই। ডাকাডাকি করে করিডোরে এসে দাঁড়ান।
মানতাসা দাদার ডাক শুনে ছোট ছোট পায়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
আলতাফ মাহমুদ হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নেন মানতাসা কে।
“তোমার ফুপ্পি কোথায় দাদু?”
হাত দিয়ে আলভীর রুম দেখিয়ে দেয়।
“মায়া ওই রুমে?”
মাথা নাড়ায় মানতাসা।
“তুমি যেতে দেখেছো?”
“ছোট আব্বু ধোলে নিয়ে গেচে।”
“আলভী জোর করে ধরে নিয়ে গেছে?”
“হুম।”
“আচ্ছা তুমি তোমার আম্মুর কাছে যাও, আমি একটু পর এসে তোমাকে নিয়ে যাব।”
মানতাসা কোল থেকে নেমে রুমে চলে যায়।
আলতাফ মাহমুদ ছেলের রুমের সামনে এসে দাঁড়ান। ইতস্তত বোধ হলেও হাত উঁচিয়ে ডোর নক করেন।
“মায়া।”
মায়া কিছু বলার আগেই আলভী বলে,
“মায়া এই রুমে নেই। আমাকে ডিস্টার্ব না করে, সঠিক রুমে গিয়ে খোঁজ চালান দয়া করে।”
আলভীর কথা শেষ হতেই মায়া গলা ছেড়ে বলে,
“মিথ্যে কথা, আমি এই রুমের ভেতরেই আছি ছোট আব্বু।”
“বাইরে আয় কথা আছে তোর সাথে।”
“তোমার ছেলে বের হতে দেয় না।”
“আলভী মায়া কে বাইরে আসতে দাও।”
আলভী বিরক্তি মাখা চোখ মুখে ডোরের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখনই আসতে হলো? আর মায়া কে ডাকছে কেন? মায়ার সাথে কি দরকার?
“মায়া।”
“ছাড়ুন।”
“বাপ টার কি লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই ? ছেলের কাছ থেকে ছেলের বউ কে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে।”
“লজ্জা সরম তো আপনার নেই।”
“এই বয়সে লজ্জা সরম থাকতেও নেই।”
“আলভী মায়া কে বাইরে আসতে দাও।”
হাতের বাঁধন আলগা করে আলভী। মায়া লাফিয়ে কোল থেকে নেমে দাড়ায় নিচে।
“এমন ভাবে নামছো মনে হচ্ছে এতক্ষণ আগুনের উপর বসে ছিলে।”
“আগুন না, আস্ত একটা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উপর বসে ছিলাম এতক্ষণ।”
চেপে ধরে রাখায় মায়ার হাত পা ব্যাথা হয়ে গেছে।
আলভী বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। হেঁটে এগিয়ে যায় ড্রেসিং টেবিলের কাছে। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে রুমের চাবি টা বের করে হাতের মুঠোয় পুরে ডোরের সামনে এসে দাঁড়ায়। ডোর খুলে মায়া কে বের হতে না দিয়ে নিজেই বাইরে বেরিয়ে এসে বাহির থেকে ডোর লক করে দেয় চাবি দিয়ে।
ভেতর থেকে মায়া হা করে বন্ধ ডোরের দিকে তাকিয়ে আছে। কি হলো এটা? ওকে বের না করে নিজেই বেরিয়ে গেল!
আলতাফ মাহমুদ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বন্ধ ডোরের দিকে তাকান।
“মায়া কে রুমের মধ্যে আটকে রাখলে কেন? তোমার সাথে তো কোনো কথা নেই আমার, আমি মায়ার সাথে কথা বলবো।”
“মায়ার সাথে তোমার কি কথা আছে? যা বলার আমাকে বলো, আমি মায়া কে বলে দেব।”
“তোমার কাছেই যদি বলা যেত তাহলে আর মায়া কে ডাকবো কেন?”
“শ য় তা নি শিখিয়ে দেওয়ার জন্য।”
আলতাফ মাহমুদ বড় বড় চোখ করে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
“কি বললে তুমি?”
“আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে মায়া কে তুমি উস্কানি দাও। ওর পেছনে কলকাঠি তুমি নাড়ো। তুমিই মায়া কে বুদ্ধি দাও। তুমি কিছু তো একটা নিশ্চই করো।”
“পা গ লের মতন কি সব বলছো? আমি কেন এসব করতে যাব?”
“আমাকে জব্দ করার জন্য, শাস্তি দেওয়ার জন্য প্ল্যান করে এসব করছো দুজন। মায়ার চোখ বলে এক কথা, আর মুখ বলে আরেক কথা। এর পেছনে তুমিই আছো আমি নিশ্চিত।”
“পা গ লের মতন কথা বলবে না।”
“সত্যি কথা বললেই পা গ ল হয়ে যায়। আজ কাল সত্যি কথার ভাত নাই।”
“ডোর খুলে মায়া কে বাইরে বের করো।”
“এই জন্মে কি দাদা হওয়ার ইচ্ছে নেই তোমার?”
“কেনো থাকবে না?”
“তাহলে আমার বউ টা কে কুবুদ্ধি দেওয়া বন্ধ করো এখন। আর যাও গিয়ে বিশ্রাম নাও।”
আলতাফ মাহমুদ এর আর কোনো কথা না শুনে ঠেলে ওনাকে রুমের সামনে থেকে সরিয়ে সিঁড়ির কাছে রেখে আসে।
ঘুরে এসে রুমের ডোর খুলে ভেতরে এসে আবার ডোর লক করে দেয় চাবি দিয়ে। এই জন্মে আর এই রুমের বাইরে বের হতে পারবে না। আলতাফ মাহমুদ বন্ধ ডোরের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে নিচে নেমে আসেন।
আলভীর সাথে চেঁচামেচি শুরু করে মায়া।
আলভী সটান দাঁড়িয়ে চুপ চাপ মায়ার সব কথা শোনে।
“হাঁপিয়ে গেছো নিশ্চই, নাও পানি খাও।”
পানির বোতল তুলে মায়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়।
মায়া বোতল টা হাতে নিয়ে ঢক ঢক করে কয়েক ঢোঁক পানি খায়।
“আহারে সোনা আমার, গলা টা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। এর পর থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করার সময় পানির বোতল হাতে রাখবে।”
“আপনার মতো বজ্জাত শ য় তা ন লোক এই দুনিয়ায় আর একটাও নেই।”
“ভুল বললে সোনা, বলো আমার মতো ভালো একটা বর এই দুনিয়ায় দ্বিতীয় টা নেই। তুমি এত চিৎকার চেঁচামেচি করলে অথচ আমি টু শব্দ অব্দি করিনি। উল্টো তোমাকে পানি খাওয়ালাম।”
“পানি খাইয়ে খোটা দিচ্ছেন?”
“একদম না, নিজের প্রশংসা করলাম।”
মায়া কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়। এই লোকের সাথে খ্যাচ খ্যাচ করে কোনো লাভ নেই। এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। রেগে গিয়েও তো ওকে রুম থেকে বের করে দিতে পারে।
আলভী গায়ের টিশার্ট খুলে সোফার উপরে ছুঁড়ে দেয়। উন্মুক্ত হয় ফর্সা শরীর। মায়া চোখ সরিয়ে নেয়। রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে বেডের উপর।
মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“দাঁড়িয়ে না থেকে বেডে উঠে শুয়ে ঘুমাও। রাতে তো ঘুমোতে পারেনি ঠিক ভাবে।”
“আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, আপনি নিজের চিন্তা করুন।”
শোয়া থেকে উঠে আসে আলভী। মায়ার হাত থেকে পানির বোতল টা নিয়ে রেখে দেয়। কোনো কথা না বলে পুনরায় মায়া কে পাঁজা কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দেয়। মায়া উঠে আসতে গেলে আলভী ওর মুখের উপর ঝুঁকে এসে বলে,
“এখান থেকে উঠলে এমন কিছু হবে যার জন্য তুমি মোটেও প্রস্তুত নয়।”
“কি কি করবেন আপনি?”
“বোঝার মতো বয়স হয়েছে তোমার তাই না বোঝার ভান করবে না সোনা।”
কথা শেষ করে মুচকি হাসে। মায়ার চোখ মুখের উপর ফুঁ দিয়ে বেডে উঠে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ে।
মায়া চুপ চাপ শুয়ে রইলো।
কতটা সময় পেরিয়ে গেছে মায়ার জানা নেই। পাশ থেকে আলভীর ভারী শ্বাস ফেলার শব্দ আসছে। ঘাড় ঘুরিয়ে আলভীর দিকে তাকায়। ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে। শোয়া থেকে উঠে বসে। এখন ওর মোটেও ঘুম আসছে না। চোখ পড়ে আলভীর বাম হাতের উপর। রাতে রাগের মাথায় হাত টায় কা মড় দিয়ে কি অবস্থা করেছে। এখনো নীল নীল হয়ে রয়েছে জায়গা টুকু। ফর্সা হাতে দাগ স্পষ্ট হয়ে রয়েছে। মায়া হলো মায়ার। এভাবে কা মড় দিয়ে মোটেও ঠিক করেনি। তাকায় কপালের দিকে, দেওয়ালের সাথে বারি খাইয়ে কপাল টাও ফুলিয়ে দিয়েছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত আলভীর মুখের দিকে।
চলবে…………..
(ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক কমেন্ট করবেন সবাই। পরবর্তী পার্ট আগে আগে পেতে সানা শেখ • নীল লেখায় চাপ দিয়ে পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন সবাই)