#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_27
[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]
আলতাফ মাহমুদ রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যান। এই বজ্জাত ছেলে কি ভেবেছে? সে বউ ছাড়া থাকতে পারবে না? অবশ্যই পারবে থাকতে। বউ ছাড়া থাকা আহামরি কোনো কষ্ট না।
রুমে এসে ডোর লক না করেই লাইট অফ করে শুয়ে পড়েন। বউটা মায়া করে যদি রাতে ফিরে আসে, তাই ডোর খোলাই রাখলেন।
,
,
মা ছেলের সুখ দুঃখের আলাপ করতে করতে রাত এক’টা বেজে যায়। ঐশী রহমান এর চোখ মুখ ঘুমে ছোট হয়ে গেছে এখন।
আলভী বেড থেকে নেমে একটা বালিশ হাতে নিয়ে বলে,
“অনেক রাত হয়ে গেছে আম্মু ঘুমিয়ে পড়ো এখন।”
“তুমি বালিশ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”
“সোফায়।”
“সোফায় কেন?”
“ঘুমোনোর জন্য।”
“বেড থাকতে সোফায় ঘুমাবে কেন?”
“বেডে তুমি ঘুমাও।”
ঐশী রহমান কিছু সময় ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেন,
“বেড তো বড় আছে, তুমিও বেডেই ঘুমাও কষ্ট করে সোফায় ঘুমোতে হবে না।”
“সমস্যা হবে না আমার, তুমি শুয়ে পড়ো। ঘুমের ঘোরে আমি প্রচুর নড়াচড়া করি, লাথি টাথি লেগে যায় যদি ভুল করে।”
ঐশী রহমান ছেলের হাত থেকে বালিশ টা নিয়ে বেডের উপর রাখেন। মাঝখানে কোলবালিশ টা দিয়ে বলেন,
“দুজনের জায়গা দুই পাশে অনায়াসে হয়ে যাবে। আর যদি লাথি লাগে তাহলে লাগবে সমস্যা নেই। আমি আরাম করে বেডে ঘুমাব আর তুমি সোফায় ঘুমাবে এটা হয় নাকি?”
আলভী দুই কদম এগিয়ে এসে ওর মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“বুঝো কিন্তু, লাথি লেগে নিচে পড়ে বুড়ো বয়সে মাজার হাড় ভাঙ্গলে আমার দোষ নেই। আমার শ্রদ্ধেয় আব্বা জান কিন্তু আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না আমি তার বউয়ের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছি।”
ঐশী রহমান মুচকি হেসে বলেন,
“ছেলে হয়ে বাপের পেছনে কেনো পড়েছো এভাবে?”
“দেশে এসেছি পর থেকে সে বাপ হয়ে যে ছেলের পেছনে পড়েছে!”
“যেমন বাপ তার তেমন ছেলে, কারো থেকে কেউ কম না।”
“বাকি কথা আগামী কাল হবে এখন ঘুমাও।”
ফ্রেস হয়ে এসে শুয়ে পড়েন ঐশী রহমান। রুমের লাইট অফ করে দিয়ে আলভী নিজেও শুয়ে পড়ে।
মায়া কি করছে? ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি জেগে আছে?
মায়ার তো রাত জেগে থাকার অভ্যাস। নিশ্চই জেগে আছে। আলভী মাথা উচু করে মায়ের দিকে তাকায়। ঐশী রহমান ডান কাত হয়ে শুয়ে আছেন।
আলভী বাম কাত হয়ে ফোন হাতে নেয়। ফোন সাইলেন্ট মুড করে হোয়াটস অ্যাপ এ প্রবেশ করে। মায়ার ফোন অনলাইন দেখাচ্ছে।
ম্যাসেজ পাঠায়।
“মায়া পরী, ঘুমিয়ে পড়েছো?”
একটু পরেই রিপ্লাই আসে।
“না।”
“কি করছো?”
“শুয়ে শুয়ে ফেসবুক দেখছি।”
“এখনো ঘুমাওনি কেন?”
“ঘুম আসছে না।”
“আমি আসবো?”
“না।”
“আসি!”
“আসো।”
“সত্যি?”
“না।”
“কেন?”
“কেন আসবে?”
“তোমাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য।”
“দরকার নেই।”
“এত পাষাণ কেন তুমি?”
“কোথায়?”
“এই যে বিয়ের এত গুলো বছর পরেও আমাকে তোমার কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছ না।”
“বিয়ের পর এত গুলো বছর তুমি কোথায় ছিলে চান্দু?”
“শ্বশুরের সাথে মিলে প্রতি শোধ নিচ্ছো?”
“নাহ্।”
“এক ঘণ্টার জন্য আসি?”
“এক মিনিটের জন্যও না।”
“প্লিজ বউ এমন করে না।”
“আমি এমনই করবো।”
“তাহলে তুমি আসো।”
“কোথায়?”
“আমার রুমে।”
“খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।”
“তাহলে ছাদে আসো।”
“তুমি কোথায়?”
“কেন?”
“এত রাতে ছাদে যেতে বলছো কেন? ছাদে বসে আছো নাকি?”
“ছাদে যেতে বলছি তোমাকে দেখবো তাই।”
“ছাদে গিয়ে দেখতে হবে কেন?”
“তাহলে রুমে আসি।”
“দেখার জন্য রুমে আসতে হবে?”
“তুমিও আসবে না, আমাকেও যেতে দেবে না তাহলে দেখবো কিভাবে?”
“ফোন আছে কি করতে?”
“ফোনে দেখে কি মন ভরবে মায়া পরী?”
“সকালে তো দেখবেই আবার।”
“সবে মাত্র দেড় টা বাজে, সকাল হতে এখনো অনেক দেরি আছে।”
“ঘুমিয়ে পড়ো, তাহলে দ্রুত সকাল হয়ে যাবে।”
“তোমাকে ছাড়া ঘুম আসছে না।”
মায়া ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে মুচকি হাসে। অদ্ভুত ভাবে অজকে ওরো ঘুম আসছে না। অন্য দিনের তুলনায় আজকে একটু বেশিই আলভী কে মনে পড়ছে।
বড় হওয়ার পর এমন একটা রাত পাড় হয়নি যেই রাতে আলভী কে ভেবে ভেবে বারো’টা এক’টা বাজেনি। প্রত্যেক রাতে আলভী কে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
“চুপ হয়ে গেলে কেন?”
“ঘুমাও।”
“ঘুম আসছে না।”
“চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো।”
“চোখ বন্ধ করলে তুমি এসে ডিস্টার্ব করো।”
“কিভাবে?”
“পরে বলবো।”
“এখন বললে কি সমস্যা?”
“কোনো সমস্যা নেই। তোমার যত গুলো পিক আছে সব গুলো আমাকে দাও।”
“এত পিক দিয়ে কি করবে?”
“দেখবো।”
“ঘুমাবে কখন তাহলে?”
“যেদিন তোমাকে এই বুকের উপর পাবো।”
“বদ লোক।”
“দাও না।”
“দিচ্ছি।”
গ্যালারিতে যত পিক ছিল তার অর্ধেক আলভীর ফোনে সেন্ড করে মায়া।
আলভী নিজেও নিজের কয়েক টা পিক মায়ার ফোনে সেন্ড করে।
তারপর লাস্ট ম্যাসেজ পাঠায়।
“ফোন রেখে ঘুমাও এখন, গুড নাইট সোনা।”
ম্যাসেজ দেখে আবারও মুচকি হাসে মায়া।
“গুড নাইট।”
আলভী মায়ার পিক গুলো জুম করে করে দেখতে থাকে।
_____________________________
রাতে দেরি করে ঘুমোনোর কারণে ঐশী রহমান এর ঘুম ভাঙ্গে একটু দেরিতে। জানালার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন বাইরে রোদ উঠে গেছে। পর্দা আর থাই গ্লাস ভেদ করে রোদের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। শোয়া থেকে উঠে ডোরের সামনে এসে দাঁড়ান। ডোর খোলার চেষ্টা করলে বুঝতে পারেন ডোর চাবি দিয়ে লক করা।
উল্টো ঘুরে ছেলের দিকে তাকান। আপনা আপনি মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ছেলে তার বড্ড চালক আর সেয়ানা। কাকে কিভাবে বাঁশ দিতে হবে খুব ভালো করেই জানে।
এগিয়ে এসে আলভী কে ডেকে তোলেন। আলভী শোয়া থেকে উঠে বসে। ফোন টা বুকের উপর থেকে কোলের উপর পড়ে। মায়ার পিক দেখতে দেখতে ফোন বুকের উপর রেখেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। চোখ বন্ধ রেখেই ঘুম জড়ানো গলায় বলে,
“কি হয়েছে?”
“সকাল হয়ে গেছে, ডোর খুলে দাও।”
জোর করে চোখ মেলে তাকায় জানালার দিকে। তারপর বেড থেকে নেমে ডোর খুলে দেয়। ঐশী রহমান চলে যেতেই ডোর ভিড়িয়ে দিয়ে আবার এসে শুয়ে পড়ে উপুর হয়ে।
দেশে আসার পর থেকে যত অনিয়ম করছে। রাতে দেরি করে ঘুমায়, সকালে বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে। সকালে জগিং করে না, এক্সারসাইজ করে না। খাওয়া দাওয়ার কন্ট্রোল নেই। তেল চর্বি মসলা যুক্ত খাবার খায়।
,
,
ঐশী রহমান রুমে এসে দেখেন আলতাফ মাহমুদ এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছেন। ডোর খোলা দেখে ভেবেছিলেন ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বেড়িয়েছেন।
বেডের কাছে এগিয়ে এসে আলতাফ মাহমুদ কে ডেকে ওঠান। আলতাফ মাহমুদ শোয়া থেকে উঠে বসে চোখ বন্ধ রেখেই বলেন,
“বদ ছেলে টা কি করছে এখন?”
“ঘুমাচ্ছে।”
“ছেলের কথা শুনে তুমি আমাকে ছেড়ে ছেলের কাছে চলে গেলে! আমার থেকে ছেলে বড় হয়ে গেল?”
“কি ছোট বড় মাপ করতে শুরু করেছো? উঠে ফ্রেস হও, অফিসে যাবে না?”
“সারা রাত ঘুমোতে পারিনি, আজকে অফিসে গেলে ঘুমিয়েই পাড় করতে হবে সারা দিন।”
“ছেলের সাথে পারবে না তাহলে লাগতে যাও কেন?”
“কে জানতো বজ্জাত ছেলে টা আমার বউ কেই কেড়ে নেবে।”
“তুমি শেখাচ্ছ, ছেলেও শিখছে।”
“আজকে রাতে ওর রুমে যাবে না তুমি।”
“ফালতু কথা বন্ধ করে ওঠো এখন।”
“সাড়ে সাত টা বাজলে ডেকে দিও, আর একটু ঘুমাই।”
বলেই শুয়ে পড়েন আলতাফ মাহমুদ।
,
,
আলভীর ঘুম ভাঙ্গে মায়ার ডাকে, তবে চোখ মেলে তাকায় না।
আলভী ভাবছে স্বপ্ন দেখছে তাই চুপ করে শুয়ে আছে।
“এতক্ষণ ধরে ডাকছি কথা কানে যাচ্ছে না? ঘুমিয়ে আছো নাকি ঢং ধরে আছো?”
মায়ার কর্কশ গলার স্বর শুনে চোখ মেলে তাকায় আলভী। চোখের সামনে মায়া কে দেখে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে,
“তুমি!”
“ক’টা বাজে? খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে, ওঠো এখন।”
“ক’টা বাজে?”
“দেড় টা।”
“দেড় টা?”
“হ্যাঁ।”
শোয়া থেকে উঠে বসে আলভী। দুই পা ঝুলিয়ে দেয় বেড থেকে। দুই হাতে চোখ ডলে ভালো ভাবে তাকায় মায়ার দিকে। মায়া কে দেখতে একদম স্নিগ্ধ লাগছে। মাত্রই শাওয়ার নিয়েছে বোধহয়।
“তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।”
“কেন?”
“তোমার সাথে খাবে তাই।”
“তুমি অপেক্ষা করছো না?”
“না।”
“কেন?”
“কারণ আমি এগারোটার পর খেয়েছি, এখন আর খাব না। উঠে ফ্রেস হয়ে নীচে আসো।”
বলেই চলে যাওয়ার জন্য ডোরের দিকে পা বাড়ায়। আলভী একটানে মায়া কে নিজের কোলের উপর বসিয়ে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।
মায়া ছটফট করে বলে,
“কি করছো ছাড়ো।”
“কাছে আসলেই শুধু পালাই পালাই।”
“কি বলেছিলাম ভুলে গেছো?”
“হ্যাঁ।”
“হেব্বি শ য় তান তো তুমি।”
“আজকে জানতে পারলে?”
“না।”
“ভালো লাগে না।”
“কেন?”
“তুমি কাছে আসো না তাই।”
“জড়িয়ে ধরে রেখে বলছো কাছে আসি না! আম্মুর কথা শুনে তোমাকে ডাকতে আসাই ভুল হয়েছে আমার।”
“শাশুরি মা তোমাকে পাঠিয়েছে?”
“শুধু পাঠিয়েছে, আসবো না বলেছি বলে চোখ গরম করে তাকিয়েছিল। ধমক ও দিয়েছে একটা।”
“একমাত্র শাশুরি মা আমাকে বুঝতে পারে।”
“আর কেউ বুঝতে পারে না?”
“বুঝতে পারলে কি বউ কে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতো নাকি? আছি আর কয় দিন, তার মধ্যে আরো নয় দিন বউ ছাড়া থাকতে হবে। বউ কে কাছেই পাব মাত্র এক সপ্তাহ।”
“আহারে দুঃখ।”
“বউ হয়েও জামাইয়ের দুঃখ বোঝো না, এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি।”
মায়া আলভীর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।
“দ্রুত ফ্রেস হয়ে আসো আমি গেলাম।”
বলেই মায়া বেরিয়ে যায়। আলভী বসা থেকে উঠে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে।
,
,
সোফায় বসে মানতাসা কে খাইয়ে দিচ্ছে মায়া। আলভী খাওয়া শেষ করে এসে মানতাসার পাশে বসে। নাহার বেগম নিজেও এসে বসেন পাশের সোফায়। ঐশী রহমান নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যান বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। ওনার এখন ঘুম পাচ্ছে। মেহবুবা মেহের নিজেও রুমের দিকে এগিয়ে যান। আলভী কে দেখেই মানতাসা বসা থেকে উঠে আলভীর কোলে বসে। খুশি হয়ে ডেকে ওঠে,
“ছোত আব্বু।”
“হুম আম্মা।”
“খাওয়া সেস?”
“হুম, তুমি পেছনে পড়েছো কেন আম্মা? তুমিও দ্রুত খাওয়া শেষ করো।”
“মজা না।”
“মজা না?”
“নাহ্।”
দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বলে। আলভী মানতাসা কে কোলের উপর দার করিয়ে মানতাসার নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে বলে,
” কি মজা লাগে তোমার কাছে?”
“চকলেট।”
“চকলেট মজা?”
“হুম, কুব মজা।”
“এত চকলেট এনে দিলে তোমার আম্মু আমাকে
মা/র/বে।”
“মাব্বে না।”
“কেন?”
“তুমি বলো মানুষ।”
“আমি বড় মানুষ তাই আমাকে মা র বে না?”
“হুম।”
“বিকেলে চকলেট এনে দেব এখন তোমার এই মজাদার খিচুড়ি খাওয়া শেষ করো।”
“মজা না।”
“মজা।”
“ইট্টুও না।”
মানতাসা কে বুকের মধ্যে চেপে ধরে হেসে ওঠে।
এতক্ষণ দুজনের কথা শুনছিল মায়া। সোফার পাশে দাঁড়িয়ে সানজিদাও দুজনের কথা শুনছে।
সানজিদা সোফায় বসতে বসতে বলে,
“মানতাসা খাওয়া শেষ করো দ্রুত। তুমি খিচুড়ি খেতে চেয়েছো খিচুড়ি রান্না করে দিয়েছি এখন এত বাহানা কেন?”
“কাব না পচা লাগে।”
“মা’র খাবে তাহলে।”
“ছোত আব্বু আম্মু বকা।”
“আম্মু বকা দেয়?”
“হুম।”
“আম্মু কে বকা দেব?”
“দাও।”
আলভী সানজিদার দিকে তাকায়। জোর পূর্বক চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটিয়ে বলে,
“ভয় পান না আপনি? আমার আম্মা কে বকা দেন কেন? আর একবার বকা দিলে ভূ তের ঘরে আটকে রাখবো।”
আলভীর কথা শুনে মায়া আর সানজিদা ফিক করে হেসে ওঠে।
মানতাসা মা আর ফুপির মুখের দিকে তাকিয়ে আবার আলভীর মুখের দিকে তাকায়।
“ওলা ভয় পায়না।”
মানতাসার কথা শুনে দুজনের হাসি আরো বেড়ে যায়। আলভীর হাসি পেলেও কষ্ট করে হাসি চেপে রাখে।
গলার স্বর চড়াও করে বলে,
“ধমক।”
ওর ধমক শুনে কেউ ভয় তো পাই ই না উল্টো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার জোগাড়।
“আম্মা এরা দুজন ভয় পায় না আমাদের। এদের হাসি দেখে তো এখন উল্টো আমারই ভয় করছে। দুজনের উপর ভূ ত প্রে’ত ভর করেছে কিনা কে জানে। চলো আমরা এখান থেকে পালাই। না হলে দেখা যাবে দুজন আমাদের ঘাড় মটকে দিয়েছে।”
বলেই মানতাসা কে কোলে নিয়ে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। মায়া আর সানজিদা হাসতে হাসতে সোফার উপরেই শুয়ে পড়েছে।
নাহার বেগম নিজেও হাসতে হাসতে কুটিকুটি।
মায়া আক্তার এসে দুজনের সামনে দাঁড়ায় কপাল ভ্রু কুঁচকে।
“কি হয়েছে এভাবে হাসছো কেন দুজন? ভূ ত টু ত ধরলো নাকি? ও দাদি কবিরাজ ডাকো।”
মায়া আক্তার দাদির দিকে তাকিয়ে দেখে দাদিও হাসতে হাসতে শেষ। আগের চেয়েও বেশি কপাল ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“পাগল হয়েছো নাকি তিন জন? এভাবে হাসছো কেন পাগলের মতন?”
দাদি হাসি বন্ধ করে বলেন,
“আরেকটু আগে তুই এখানে আসতি তাহলে হাসতে হাসতে এতক্ষণে তুই পরপারে পাড়ি জমাইতি। তোর যা হাসি, একবার শুরু হলে তো বন্ধই হতে চায় না। দম বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তোর হাসি বন্ধ হয় না।”
“কি হয়েছে বলো তো।”
“পরে শুনবি এখন চল আমার সাথে।”
দাদির পেছন পেছন দাদির রুমের দিকে এগিয়ে যায় মায়া আক্তার।
মায়া হাসি বন্ধ করে উঠে বসে। হাতের খিচুড়ি সোফায় লেগে গেছে। খিচুড়ির বাটি টা হাতে নিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করে। হাত আর বাটি ধুয়ে ছোট একটা কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে এসে সোফায় লেগে থাকা খিচুড়ি পরিষ্কার করে।
,
,
সন্ধ্যার পর বাড়ির সবাই উপস্থিত হয় ড্রইং রুমে।
বিয়ে নিয়েই প্ল্যান হচ্ছে। আত্মীয় স্বজনদের ইনভাইট করতে হবে। বিয়ের আয়োজন কমিউনিটি সেন্টারে করতে চাইলেও এখন আবার বাড়িতে করতে চাইছে সবাই। বিয়ের কেনা কা/টা করতে হবে। জুয়েলারী আগেই গড়িয়ে রেখেছেন ঐশী রহমান এর মেহবুবা মেহের। তাই জুয়েলারির কোনো ঝামেলায় এখন যেতে হবে না।
সানজিদা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“মায়া বিয়ের দিন শাড়ি পড়বে নাকি লেহেঙ্গা পড়বে?”
আলভী বলে,
“বিয়ের দিন শাড়ি পড়বে। আর রিসেপশন পার্টিতে লেহেঙ্গা।”
আলভীর কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকায়। আলভী ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে আছে।
ঐশী রহমান মায়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“কি রঙের লেহেঙ্গা আর শাড়ি পড়বে?”
মায়া আলভীর দিকে তাকায়। আলভী নিজেও মায়ার দিকে তাকায়। আর বাকি সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে।
আলভী পুনরায় ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে বলে,
“যেই কালারে মায়া কে বেশি মানাবে সেই কলারই কেনা হবে। এখানে লাল, নীল, কালো, সাদা কোনো ব্যাপার না।”
চলবে…………….
#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_28
[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]
আলতাফ মাহমুদ আজ সোফায় বসে আছেন রুমে না গিয়ে। আলভীও সোফায় বসে আছে। ঐশী রহমান ডাইনিং রুমে বসে আছেন। মেহবুবা মেহের ঐশী রহমান এর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“এখানে বসে আছো কেন, ঘুমাবে না?”
“হ্যাঁ, আপনি যান আমি একটু পর যাচ্ছি।”
মেহবুবা মেহের ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে নিজেদের রুমের দিকে এগিয়ে যান। যাওয়ার সময় সোফায় বসে থাকা দুই বাপ ছেলের দিকে তাকান।
দুজন এভাবে বসে আছে কেন? কেউ কারো সাথে তো কথাও বলছে না।
প্রায় দশ মিনিট পর ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে আসেন ঐশী রহমান। হাসবেন্ড আর ছেলে এখনো সোফায় বসে আছে।
মা কে দেখেই সোফা ছেড়ে উঠে দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে মায়ের হাত চেপে ধরে আলভী। তারপর টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে নিজের রুমের দিকে।
আলতাফ মাহমুদ সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে ঐশী রহমান এর হাত টেনে ধরে থামিয়ে দেন।
“তোমার মায়ের হাত ছাড়ো আলভী।”
আলভী বাবার হাত থেকে মায়ের হাত ছাড়িয়ে নেয়।
“এই কে আপনি? এই বাড়িতে কিভাবে প্রবেশ করলেন?
আবার অভদ্রের মতন আমার মায়ের হাত টেনে ধরছেন। যান নিজের কাজে।”
হতভম্ভ আলতাফ মাহমুদ। ঐশী রহমান মুচকি মুচকি হাসছেন হাসবেন্ডের মুখ দেখে। আচ্ছা জব্দ হচ্ছে লোক টা। দেশে আসার পর থেকে ছেলে টা কে অনেক কথা শুনিয়েছে। দেখ এখন কেমন লাগে।
আলভী পুনরায় ঐশী রহমান কে টেনে নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
“আম্মু কোথা থেকে কে এসে তোমার হাত টেনে ধরছে, তুমি কিছু বললে না কেন?”
“তোমার আব্বুর মুখ টা দেখো একবার, কিভাবে তাঁকিয়ে আছে।”
আলভী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। তারপর দ্রুত মাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।
ডোর লক করতে করতে বলে,
“ওই রুমে তুমি যাবেই না আর।”
ঐশী রহমান হাসতে হাসতে বেডের উপর বসে পড়েন। আলভী নিজেও হাসতে হাসতে মায়ের পাশে এসে বসে।
আলভী হাসতে হাসতে বলে,
“আমাকে চ্যালেঞ্জ করে, আমি যে তারই ছেলে সেটা হয়তো ভুলে গিয়েছিল।”
“তুমি বললে না “এই কে আপনি” তখন তোমার আব্বুর মুখ টা দেখার মতন হয়েছিল।”
“আমার কাজ ছিল আব্বু কে হতভম্ভ করা আর সেটাই হয়েছে। কি রিয়াকশন দেবে সেটাই বুঝতে পারেনি, নড়া চড়া করতেও ভুলে গেছে বোধহয়।”
“ছেলে হয়ে বাপ কেই চিনতে পারোনি, আবার অভদ্র বলেছো বেচারা আর কি রিয়াকশন দেখাবে!”
,
,
আলতাফ মাহমুদ এখনো আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছেন। বউয়ের হাত ধরেছে বলে শেষ পর্যন্ত অভদ্র হয়ে গেলেন? বউয়ের হাত ধরলে যদি অভদ্র হয়, তাহলে অন্যের হাত ধরলে কি হবে?
ঘুরে দাঁড়িয়ে সোফায় এসে বসেন আবার।
এখনো ছেলের বলা কথা গুলো কানে বাজছে। ছেলে হয়ে বাপ কে বললো “এই কে আপনি?”
এত এত টাকা পয়সা খরচ করে এ কেমন ছেলে কে বড় করলেন তিনি। বাপের কাছ থেকে মা কে কেড়ে নেয়। বাপ কে বলে “এই কে আপনি”, আবার বলে কিনা অভদ্র। তিনি অভদ্র? বজ্জাত ছেলে।
সেন্টার টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে আসেন। আজকে রাতেও ঘুম হবে না। এর প্রতি শোধ তো তিনি নেবেনোই। ছাড়বেন না এই বদ ছেলে কে। পাই টু পাই হিসেব করে প্রতি শোধ নেবেন।
___________________________
সকালের নাস্তা সেরে বাড়ির বড়রা বাদে বাকি পাঁচ জন তৈরি হচ্ছে শপিং মলে যাওয়ার জন্য। যত টা সম্ভব আজকেই শপিং করে নিয়ে আসবে।
আলভী তৈরি হয়ে মায়ার রুমে আসে। মায়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হিজাব বাঁধছে।
“হয়েছে তোমার?”
মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে আলভীর দিকে তাকায়।
“আর একটু।”
“মুখ ঢেকে যাবে কিন্তু।”
“হ্যাঁ, ঢেকেই যাব।”
হিজাব বাঁধা শেষ হতেই আলভী মায়ার পেছনে এসে দাঁড়ায়। মায়া কে নিজের বুকের সাথে ঠেকিয়ে ফোন আনলক করে।
“হাসি দিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকাও।”
মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ তুলে আলভীর মুখের দিকে তাকায়। আলভী নিজেও মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্ত টা ক্যামেরা বন্দী করে আলভী। তারপর ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। চোখ দুটো বড় বড় করে বলে,
“ওয়াও, দেখো কত সুন্দর হয়েছে পিক টা।”
মায়া ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। আসলেই অনেক সুন্দর হয়েছে পিক টা। একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনের ঠোঁটেই হাসি আছে।
“এবার ফোনের দিকে তাকাও।”
“এত পিক তুলতে হবে কেন?”
“আমাদের দুজনের একসাথে কোনো পিক আছে? বেশি কথা না বলে আমি যা বলছি তা করো।”
“আছে তো।”
“কোথায়?”
“ফটো এলবামে।”
“ওই ন্যাং টা কালের পিক?”
ফিক করে হেসে ওঠে মায়া। কোনো রকমে হাসি চেপে বলে,
“ওগুলো ন্যাং টা কালের পিক?”
“তো?”
“এলবামে তো কারো ড্রেস ছাড়া পিক দেখলাম আজ অব্দি।”
“তোমার মাইন্ড এত খারাপ কেন? ন্যাং টা কালের পিক বলেই কি ন্যাং টা থাকতে হবে?”
“থাকতে হবে না?”
আলভী বাম হাতে মায়ার মাথা ধরে দ্রুত গতিতে মায়ার ওষ্ঠ জোড়ায় আলতো চুমু খায়।
“বেশি কথা না বলে সামনের দিকে তাকাও।”
“তুমি কিন্তু নিজের কথা রাখছো না।”
“আমি নিজের মুখ দিয়ে একবারও বলিনি আমি আমার বউয়ের কাছ থেকে দূরে থাকবো বা আদর সোহাগ করবো না। যারা এমন কথা বলেছে এটা তাদের ব্যাপার আমার না।”
“পল্টি বাজ লোক একটা।”
“সে তুমি যাই বলো।”
মায়া কথা না বলে আলভীর কথা মতো সামনের দিকে তাকায় হাসি মুখে। পিক তোলা শেষ হতেই কটমট করে তাকিয়ে বলে,
“সরো আমার পেছন থেকে।”
পেছন থেকে সরে পাশে এসে দাঁড়ায় আলভী। মায়া একবার তাকিয়ে নিকাব বাঁধতে শুরু করে।
আলভী পিক গুলো দেখতে শুরু করে। একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা পিক টা ওয়ালপেপারে সেভ করে। এই পিক টা একটু বেশিই সুন্দর হয়েছে।
ফোন পকেটে ভরে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নেয়। মায়ার নিকাব বাঁধা শেষ হতেই ওকে নিয়ে নিচে নেমে আসে। মাহির, মাহিদ আর সানজিদা তৈরি হয়ে সোফায় বসে আছে ওদের দুজনের জন্য।
“ভাইয়ারা এসে গেছে চলো এখন।”
মাহিদ এর কথা শুনে সোফায় বসে থাকা সকলে ওদের দুজনের দিকে তাকায়।
মায়া ব্ল্যাক বোরকা হিজাব পড়েছে আলভীর কিনে দেওয়া গুলো থেকেই। আলভীও ব্ল্যাক প্যান্ট আর অফ হোয়াইট শার্ট পড়েছে। সানগ্লাস টা শার্টের সামনে ঝুলিয়ে রাখা। দুই হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে রেখেছে। চুল গুলো স্পাইক করার কারণে কপালের ক্ষত টুকু দেখা যাচ্ছে এখন। বিয়ের আগে এই দাগ মিশলেই হয়। না মিশলে বউয়ের দেওয়া আঘাত নিয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে।
মানতাসা কে কোলে তুলে নেয় আলভী। তারপর পাঁচ জন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।
,
,
শপিং মলে এসে সানজিদা, মাহির আর মাহিদ
মায়া আর আলভী কে একা ছেড়ে অন্য পাশে যায় নিজেদের ড্রেস দেখার।
আলভী মায়া কে সাথে নিয়ে এসে দাঁড়ায় লেহেঙ্গার শপে।
“দেখো কোনটা ভালো লাগে।”
মায়া লেহেঙ্গা গুলোর দিকে তাকিয়ে আবার আলভীর মুখের দিকে তাকায়। আস্তে আস্তে বলে,
“তুমি দেখো।”
“তুমি পড়বে তুমি চুজ করো।”
“তুমি দেখবে তুমি চুজ করো।”
মায়ার কথা শুনে আলভীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। একটু ঝুঁকে মুখ টা মায়ার কানের কাছে এনে বলে,
“আমি শুধু দেখবো না তো।”
মায়া কপাল ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আর কি করবে?”
“সেটা পরে বলবো।”
“এখন বললে কি সমস্যা?”
“সমস্যা নেই কিন্তু আমি পরেই বলবো।”
মায়া আর কিছু না বলে লেহেঙ্গা গুলোর দিকে তাকায়। আলভী নিজেও তাকায় লেহেঙ্গা গুলোর দিকে।
মায়ার চোখ অনুসরণ করে আলভীর নজর আটকায় একটা মেরুন কালার লেহেঙ্গার দিকে। এগিয়ে এসে দাঁড়ায় লেহেঙ্গা টার সামনে।
সেল্স বয় কে ডেকে লেহেঙ্গা টা নামাতে বলে।
ছেলেটা লেহেঙ্গা নামিয়ে দেয়, তারপর হাসি মুখে বলে,
” বছর আমাদের শপের সব চেয়ে বেশি সেল হওয়া লেহেঙ্গা এটাই। আর সব চেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এটাই লাস্ট পিস।”
আলভী লেহেঙ্গা টা দেখতে দেখতে বলে,
“সব শপের মানুষরা এই একই কথা বলে।”
ছেলে টা হেসে বলে,
“না স্যার আমি সত্যি বলছি। গত কালকেও এই সেম লেহেঙ্গা তিন টা বিক্রি হয়েছে।”
“আমি বিয়ে করবো বলে কি এখন সবাই বিয়ে করছে নাকি?”
লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ায় মায়া। ছেলেটা আবারো হেসে বলে,
“হবে হয়তো স্যার।”
আলভী মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“লেহেঙ্গা ট্রায়াল দিয়ে আসো।”
মায়া আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখন এই বোরকার উপর দিয়ে লেহেঙ্গা ট্রায়াল দেবে?
আলভী লেহেঙ্গা এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে মায়া কে টেনে নিয়ে ট্রায়াল রুমে ঢুকে যায়।
সেল্স বয় টা হা করে তাকিয়ে থাকে বন্ধ হয়ে যাওয়া ডোরের দিকে।
অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রায়াল দেওয়া হয়ে যায়। ঠিক মতোই হয়েছে।
লেহেঙ্গা সেল্স বয়ের হাতে দিয়ে এটাই প্যাকেট করে দিতে বলে আলভী।
সেল্স বয় কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
“এমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই, এটা আমার বউ।”
ছেলে টা হেসে বলে,
“এরকম কিছু না স্যার, অন্যরা তো গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ঢুকে যায় ভেতরে। তারপর ঘণ্টা খানিক পর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। আমি তো অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে এত দ্রুত ট্রায়াল দেওয়া হয়ে গেছে দেখে।”
“সারা দিন যদি ট্রায়াল রুমেই বসে থাকি তাহলে বাকি সব দেখবো কখন?”
“আর কিছু লাগবে না স্যার?”
“শাড়ি লাগবে?”
আলভী নিজের পছন্দের একটা অফ হোয়াইট গর্জিয়াস শাড়ি চুজ করে। মায়া কে দেখালে মায়ারও পছন্দ হয় শাড়ি টা।
শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে দোপাট্টা নেয়।
শপের ছেলেটা আলভীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“স্যার আপনারা চাইলে দোপাট্টায় নাম লিখিয়েও নিতে পারেন।”
“এটাতে নাম লেখানো যায়?”
“আপনারা যেমন চাইবেন আমরা সেরকম ভাবেই তৈরি করে নাম লিখে দিতে পারবো। তবে একটু সময় লাগবে।”
“আচ্ছা তাহলে এটার মতোই সেম ডিজাইন থাকবে শুধু নাম টা লিখে দিলেই হবে।”
“ওকে স্যার, নাম?”
“আমার নাম আলভী ওর নাম মায়া।”
“আলভীর বউ লিখবো স্যার?”
“না, আলভীর মায়া পরী।”
ছেলেটা আবারো আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই যাবত যত গুলো দোপট্টায় নাম লিখিয়েছে সব গুলোতেই অমুকের বউ তমুকের বউ লিখেছে। এই প্রথম কেউ বউ বাদ দিয়ে অন্য কিছু লিখতে বললো।
,
,
কেনা কা’টা শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে যায়।
সবে মাত্র সকলের ড্রেস, আর জুতা কেনা শেষ হয়েছে, কসমেটিকস্ কেনা এখনো বাকি রয়েছে।
মানতাসা বাড়িতে যাওয়ার জন্য কান্না কা’টি শুরু করে দিয়েছে। বেচারীর ঘুম পেয়েছে এখন। মাহির আর আলভী কাঁধের উপর ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু মানতাসা এভাবে ঘুমোবে না। ও বাড়িতে গিয়ে বেডে শুয়ে আরাম করে ঘুমাবে।
বার বার বাইশ বাইশ বলছে। বালিশে শুয়ে ঘুমাবে।
মাহির আলভীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি আর সানজিদা বাড়িতে ফিরে যাই, তোরা বাকি কেনাকা’টা শেষ করে আয়।”
“আমরাও ফিরে যাই এখন, আগামী কাল নাহয় মায়া কে নিয়ে আবার আসবো।”
“যাবি আবার আসবি, তোরা আয় আমরা যাচ্ছি। প্যাকেট গুলো তুই আর মাহিদ কারে তুলে দে আমি ড্রাইভার কে পাঠিয়ে দেব।”
বড় ভাইয়ের কথা অনুযায়ী তাই করে আলভী।
মায়া আলভীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার খিদে পেয়েছে আমি বাড়িতে যাব।”
আলভী অনুভব করে ওর নিজেরও খিদে পেয়েছে। সেই সকালে খেয়ে এসেছিল দুটো ব্রেড আর ডিম, এখন দুপুর হয়ে গেছে।
মাহিদ গিয়ে বসে ড্রাইভিং সিটে।
মাহির বলে,
“তুই ওখানে বসলি কেন? তুই ওদের দুজনের সাথে থাক।”
“তুমি ভাবীর সাথে পেছনে বসো আমি ড্রাইভ করছি। ভাইয়া আর মায়া এখন লাঞ্চ করবে আমি ওদের দুজনের মধ্যে থেকে কি করবো?”
সানজিদা বলে,
“দেখেছো তোমার চেয়ে তোমার ছোট ভাইয়ের মাথায় বেশি বুদ্ধি।”
মাহির পেছনে বসতে বসতে বলে,
“ওর মতন অকাজ গুলো তো আমি করিনি তাই এরকম বুদ্ধি আমার মাথায় নেই।”
ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকায় মাহিদ। কপাল ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কি অকাজ করেছি আমি?”
“কি ভেবেছিস আমি কিছু জানি না?”
“কি জানো?”
মাহির গম্ভীর স্বরে বলে,
“তুই কখন কবে কাকে নিয়ে কোথায় যাস সবই জানা আছে আমার। উদ্যম ক্যালানি খাওয়ার আগে ভালো হয়ে যা নয়তো তোর কপালে শনি আছে বলে রাখলাম।”
মাহিদ দ্রুত সামনে ঘুরে বসে। হার্ট বিট বেড়ে গেছে। হাত পা মৃদু কাপতে শুরু করেছে। সানজিদা মাহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি বলছো ক্লিয়ার করে বলো তো।”
“বাড়ি ফিরে বলবো। ওই শ য় তা ন কার স্টার্ট দে।”
“তুমি চালাও আমার হাত পা কাপছে।”
“এখনই? আব্বু কে তো এখনো কিছু বলিইনি।”
কার স্টার্ট দিয়ে বলে,
“প্লিজ ভাইয়া আব্বু কে কিছু বলবে না।”
“আমার কথা শুনবি তাহলে কিছু বলবো না।”
মাহিদ মনে মনে বলে,
“দুই ভাই মিলে পেয়েছে টা কি? সমান তালে ব্ল্যাকমেইল করেই যায় একজনের পর একজন। আমি মানুষ একটা, দুজনের কথা কিভাবে শুনবো?”
মাহিদ এর ফোনে রিং বেজে ওঠে। ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে আলভীর নাম জ্বলজ্বল করছে। বির বির করে বলে,
“শ য় তানের নাম নিতে নিতে শ য় তান হাজির। সরি
শ য় তানের কল এসে হাজির।”
চলবে……….