হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব-০২

0
2

#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_2

বাড়ির অনেকেই এখনো আলভী কে চিনতে পারেনি। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে, এই ছেলে টা কে ? বাড়িতে এসেছে কেন ?

আলভী ষোলো বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছিল, আর আঠারো বছরে দেশ। তখন ছিল শুকনো ছিমছাম গড়নের। গালে দাড়ির অস্তিত্বই ছিল না। ফর্সা ছিল তবে এখন কার মতো এতো উজ্জ্বল ফর্সা না। এত বেশি লম্বাও ছিল না তখন।

ছয় ফুটের বেশি লম্বা হবে হয়তো। গাল ভর্তি ঘন কালো চাপ দাঁড়ি। সিল্কি চুল গুলো স্টাইলিশ ভাবে কা টা। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রঙ। জিম করা বডি। বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী পুরুষ।
আগের আলভীর সাথে এই আলভীর কোনো মিল নেই।
এত গুলো বছর পর দেখে সহজে না চেনাটাই স্বাভাবিক। তার মধ্যে আবার ডিম ভেঙ্গে মাথা আর মুখে লেপ্টে গেছে। কুসুম ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে চেহারা বোঝা যাচ্ছে না সেরকম ভাবে।

জার্মানি যাওয়ার পর একটা দিন ও ভিডিও কলে কারো সাথে কথা বলেনি। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বাবার কাছে মেইল করতো। ফোনেও কথা বলতো না বাবা মায়ের সাথে।

মায়ের ইমোশনাল মেইল পাওয়ার পর দুটো পিক পাঠিয়েছিল শুধু। এই কারণেই আলতাফ মাহমুদ প্রথম দেখেই ছেলে কে চিনতে পেরে গেছেন। নয়তো উনিও বোধহয় সহজে চিনতেন না। বাকি সকলের মত ওনারো বেগ পেতে হতো ছেলে কে চিনতে।

আলভীর বাবা মা বাদে বাড়ির কেউ জানে না আজ আলভী বাড়িতে আসবে। তাই কেউ বুঝতে পারছে না ছেলেটা কে ?

ছেলে কে দেখেই দৌড়ে এগিয়ে আসেন আলভীর মা ঐশী রহমান। ছেলে কে জড়িয়ে ধরতে উদ্যত হতেই আলভী সামনে হাত দিয়ে বাধা দেয়।

_ স্টপ, ওয়াশরুম কোন দিকে আগে সেটা বলো।

ঐশী রহমান হাত উচু করে দেখিয়ে দেবেন তার আগে আলভী নিজেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় সেদিকে।
নিজের বাড়ির ওয়াশরুম কোন দিকে সেটাই ভুলে গিয়েছিল এত বছর বাইরে থেকে, এখন মনে পড়েছে।

_ ওই লোক টা কে আব্বু?

মায়ার কথা শুনে পেছন ফিরে তাকায় আলভী। বজ্জাত মেয়ে নিজের জামাই কেও চেনে না। আসার সাথে সাথেই দিলো মেজাজ টা বিগড়ে। ওকে এখনো যে ব্যাগ্রো থাবা দিয়ে অজ্ঞান করে দেয়নি সেটাই অনেক।
নেহাত এত গুলো বছর পর দেখে প্রেমে পড়েছে বলে , নয়তো আজ খবর ছিল মায়ার।

ওয়াশরুমে ঢুকেই ওয়াক ওয়াক শুরু করে। বমিও করে দেয় বোধহয়। একে তো কাঁচা ডিমের বিশ্রী গন্ধ সেই সাথে মাথা মুখ ডিম দিয়ে একাকার হয়ে গেছে। মুখে ঢুকেও গেছে একটু। বেচারা বাড়িতে আসার সাথে সাথেই বউয়ের কাছে স্পেশাল ওয়েলকাম পেলো। অন্যরা দেয় ফুল আর ওর বউ দিলো ডিম। কোনো ব্যাপার না , এই টুকু সহ্য করাই যায়। এত সুন্দর বউ টা কে তো আর মা রা যাবে না।

_ কি হলো আব্বু বলছো না কেনো লোক টা কে ? কাকে ধরে নিয়ে আসলে আবার ?

আলতাফ মাহমুদ গম্ভীর স্বরে বলেন,

_ ওটা আলভী।

আলভী নাম টা শুনতেই চমকে ওঠে মায়া। তড়িৎ গতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ওয়াশরুমের দিকে। ওটা আলভী ছিল ? সেই আলভী যার সাথে তেরো বছর আগে ওর বিয়ে হয়েছিল ? এটা আলভী ?
হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় বহু গুন। অস্থির হয় হৃদয়।

মায়ার সাথে সাথে বাড়ির বাকি সদস্যরাও চমকে উঠেছে আলতাফ মাহমুদ এর কথা শুনে। আলভী আজ বাড়িতে আসবে কই তারা তো কেউ জানতো না। দেশে এসেছে কবে ? আজকেই আসলো নাকি আরো আগে এসেছে ?
মায়ার মা মেহবুবা মেহের অবাক হয়ে বলেন,

_ আজ আলভী বাড়িতে আসবে আগে তো বললে না আলতাফ।

আলভীর দাদি বলেন,

_ কথা বলছো না কেন আলতাফ ? এটা আমাদের আলভী ?

_ হ্যাঁ, ও আজ আসবে সেটা আমি গত রাতে জানতে পেরেছি। তোমাদের কাউকে বলিনি কারণ বাড়িতে আসলে তো দেখতেই পাবে।

_ কি মনে করে এত গুলো বছর পর দেশে আসলো ?

_ বড় ভাই যা বলেছিল তার জন্য।

_ এত গুলো বছর এত বুঝিয়েও দেশে আনা গেলো না আর এই কথা শোনার সাথে সাথেই চলে এলো !

_ হুম।

_ ভালোই হয়েছে আমার নাতনী টা মুক্তি পাবে।

দাদির কথা শুনে মায়ার শুকনো মুখ আরো শুকিয়ে যায়। কি থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা বলছে দাদি ? আলভী কি ওকে ডি ভো র্স দেওয়ার জন্য এত গুলো বছর পর ফিরে এসেছে ? সেটাই হবে হয়তো। তিন দিন আগে বাড়ির সবাই মিলে কি নিয়ে যেন আলোচনা করলো। মায়া সেখানে ছিল বলে ওকে জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সেদিন হয়তো এমন কিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছিল। রাইটার সানা শেখ। আগে আগে গল্পটি পড়তে সানা শেখ পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন তাহলে পরবর্তী পার্ট পোষ্ট করার সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন।

“মায়া আলভিনা” বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান। বড় ভাই “মাহির মায়ান”, ছোট ভাই “মাহিদ মায়াজ”। বাবা “আহনাফ মাহমুদ”, মা “মেহবুবা মেহের”।

“আলভী আহমেদ” বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ছোট একটা বোন ছিল চার বছর বয়সে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে। বাবা “আলতাফ মাহমুদ”, মা “ঐশী রহমান”।

মায়ার বাবা আহনাফ মাহমুদ বাড়ির বড় ছেলে। মেজো মায়ার ফুপু “আনজারা”আর ছোট আলভীর বাবা আলতাফ মাহমুদ।
মায়ার দাদা মা রা গেছেন অনেক বছর আগে।
বাড়ি আর ব্যবসা দুই ভাই আর বড় ছেলে মাহির সামলায়। মাহিদ অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট, বয়স তেইশ বছর।
সবার বড় মাহির, তারপর আলভী ,তারপর মাহিদ আর সবার ছোট মায়া।

মায়া অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট, বয়স একুশ।
ছোট ভাইয়ের পেছনে ডিম নিয়ে ধাওয়া করেছিল। ধরতে না পেরে ছুঁড়ে মে রে ছিল। আর ছুঁড়ে দিতেই হঠাৎ আলভী সামনে চলে আসে আর ফলস্বরূপ ডিম টা ওর মাথার উপরেই পড়ে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে আলভী। পুরো ড্রইং রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। কেউ কিছু বলছে না সবাই চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে। আলভীর পায়ের শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকায় সবাই। কালো প্যান্ট পরনে, উদাম গা। শার্ট খুলে ওয়াশরুমে রেখেই চলে এসেছে। হাত মুখ মাথা চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে এসেছে বোধহয়। চুল থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে ফর্সা উদাম গায়ে।
লজ্জা শরম নেই নাকি ? এত গুলো মানুষের সামনে উদাম গায়ে চলে এসেছে। বিদেশে থেকে নির্লজ্জ্ব হয়ে এসেছে বোধহয়। এমনিতেও এই ছেলে জন্ম থেকেই নির্লজ্জ্ব প্রো ম্যাক্স। এর লজ্জা সরম কোন দিন ছিল না আর এখনো হয়নি বোধহয়।

আলভীর দাদি নাহার ইসলাম কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই আলভী বলে,

_ আমি শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে আসছি তারপর কথা হবে। আমি কোন রুমে থাকবো এখন ?

ঐশী রহমান বলেন,

_ তোমার আগের রুমেই।

সুটকেস টা হাতে নিয়ে সিঁড়ির দিকে আগায় আলভী। মায়া কে ক্রস করার সময় আস্তে আস্তে বলে,

_ বজ্জাত মাইয়া আসার সাথে সাথেই দিলি মাথায় ডিম ভা ই ঙ্গা, সেই সঙ্গে মেজাজ টা দিলি বিগ্রাইয়া।

চোখ দুটো বড় বড় করে আলভীর দিকে তাকায় মায়া। এত গুলো বছর বিদেশে থেকে এই ভাষায় কথা বলছে ?

ততক্ষণে আলভী সিঁড়ির উপর উঠে গেছে।
উপস্থিত সবাই হা করে তাকিয়ে দেখছে ওর চলে যাওয়া।

চলবে…………..