হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব-২৯

0
3

#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_29

[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]

কল রিসিভ করে মহিদ। ওপাশ থেকে ভেসে আসে আলভীর গলার স্বর।

“কিরে সমন্ধী কোথায় তুই?”

“রাস্তায়?”

“রাস্তায় কি করছিস? মলের ভেতরে আয়।”

“ভাইয়ার সাথে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি আমি। তুমি মায়া কে নিয়ে খেয়ে বাকি সব কিছু কিনে তার পর আসো।”

“ড্রাইভার পাঠাতে হবে না তাহলে।”

“ফিরবে কিভাবে?”

“যেভাবেই ফিরি সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। রাখলাম তাহলে।”

কল কে টে আলভী মায়ার দিকে তাকায়। মায়া বলে,

“তিন জনেই চলে গেছে?”

“হ্যাঁ, এখন রেস্টুরেন্টে চলো, খেয়ে তারপর বাকি কেনাকা’টা করা যাবে।”
,
,
আলভী মায়া কে নিয়ে একটা লেকের সামনে চলে আসে। গাছের ছায়া, শীতল বাতাস, নিরিবিলি জায়গা এক কথায় অসাধারণ একটি পরিবেশ। খুব একটা মানুষ জন নেই, অল্প সংখ্যক মানুষ গাছের ছায়ায় বসে গা শীতল করছে বা প্রিয় মানুষের কাধে মাথা রেখে কথা বলছে।

পাশের ছোট একটা দোকান থেকে সিগারেট, লাইটার, একটা পানির বোতল আর কয়েক টা চুইংগাম কিনে নেয় আলভী। তারপর মায়ার হাত ধরে লেকের পাড়ে তৈরি করা কংক্রিট বেঞ্চ এর উপর বসে।
মায়া আলভীর হাতে থাকা সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বলে,

“সিগারেট কেনো খাও?”

“অভ্যাসের জন্য খাই।”

“এই বিষাক্ত ধোঁয়া উড়িয়ে কি শান্তি পাও?”

“অভ্যাস হয়ে গেছে, চাইলেও এখন খাওয়া বাদ দিতে পারি না।”

“খাবে না তুমি এই সব ছাইপাশ। গন্ধে বমি আসে আমার।”

“এই ঠোঁটে রোজ নিয়ম করে চুমু খাবে তাহলে আর সিগারেট খাব না।”

“হাত থেকে ফ্যালো সিগারেট।”

“তাহলে চুমু খাও।”

“পাগল হয়েছো নাকি?”

“হয় চুমু নয়তো সিগারেট দুটোর যে কোনো একটা লাগবেই এখন।”

“সিগারেট ই খাও তাহলে।”

“যাও বিয়ের পর থেকে আর খাব না।”

“মনে থাকে যেন।”

আলভী সিগারেট টা ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে আগুন ধরায়। মায়া নাক মুখ কুচকে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। আলভী বসা থেকে উঠে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। মায়া বসে থেকেই আলভীর দিকে তাকিয়ে থাকে। আলভী নিজেও মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

পর পর দুটো সিগারেট শেষ করে এগিয়ে এসে মায়ার পাশে বসে। কুলি করে দুটো চুইংগাম মুখে দেয়। একটা ছিঁড়ে মায়ার মুখে পুরে দেয়।
দুজনের মাঝখানের দূরত্ব কমায় আলভী। মায়ার শরীরের সাথে নিজের শরীর লাগিয়ে বসে। ডান হাত টা পেছনে দিয়ে মায়ার মাথা নিজের বুকের বাম পাশে ঠেকায়। মায়া মুখ তুলে আলভীর মুখের দিকে তাকায়। আলভী মৃদু হেসে বলে,

“তোমাকে সাথে এভাবে বসতে ইচ্ছে করছে।”

“আশে পাশে মানুষ জন আছে তো।”

“আমি কি অন্যের বউ নিয়ে বসে আছি নাকি? আমি আমার বউ নিয়ে বসে আছি।”

“মানুষ তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে দেখছে তো।”

“দেখুক আলভী তার মায়া পরী কে কতটা ভালোবাসে।”

“বলি একটা বোঝে আরেক টা।”

“তুমি কি বলেছো বুঝতে পেরেছি আমি। অন্যের কামাই খাই যে তাদের দেখে লজ্জা পেতে হবে! নাকি আমি এখানে অশ্লীল কার্যকলাপ করছি! কিছুই করছি না জাস্ট বউ কে নিয়ে হাওয়া খাচ্ছি।”

মায়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। আলভী মায়ার চোখ দেখেই বুঝতে পারছে মায়া মনে মনে কি ভাবছে।

“আমাকে বকাবকি না করে দুটো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলো। তোমার মুখ দিয়ে তো মিষ্টি মিষ্টি কথা বের হতেই চায় না। সব সময় করলার মতন তেতো তেতো কথা বের করো।”

মায়া তেঁতে উঠে বলে,

“আমি করলার মতন তেতো তেতো কথা বলি?”

“এই যে এখনই তো বলছো। যেমন তেতো তেমন ঝাঁঝ। ইস্ কেমন যে লাগে অন্তরের ভেতর।”

“নাটক কম করো।”

“ভুল বললে।”

“মানে?”

“বলতে হবে নাটক কম করো পিও।”

“আমাকে এখানে নিয়ে আসলে কেন?”

“তোমার সাথে প্রেম করার জন্য। বাড়িতে তো দুই টা সেকেন্ড কাছে পাই না তাই এখানে নিয়ে এসেছি।”

“হেব্বি চালক তো তুমি।”

“চালাক না হলে এই দুনিয়ায় চলা কঠিন।”

“ঘুম পাচ্ছে বাড়িতে যাব।”

“বুক টা পেতে রেখেছি কার জন্য? এখানে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাও।”

“সত্যি সত্যিই ঘুম পেয়েছে আমার।”

“আমিও সিরিসলিই বলেছি।”

একটু চুপ থেকে বলে,

“আমার মীরজাফর চাচা শশুর টা কি করছে এখন? আমার কাছ থেকে আমার বউ কে দূরে সরাতে চেয়েছিল না, আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। এখন আমি তো তার রাতের ঘুমই হারাম করে দিয়েছি। আর আমি তো আমার বউ কেই নিয়েই বসে, কিন্তু।”

“কিন্তু কি?”

“কিন্তু কিছু না, আসো প্রেম করি।”

“কিভাবে?”

“আসলেই তো, মানুষ প্রেম করে কিভাবে? প্রেম করতে গেলে কি কি করতে হয় বলতে হয়?”

“আমি প্রেম করেছি নাকি যে জানবো?”

“তাও ঠিক। আচ্ছা যারা প্রেম করে আমি তাদের জিজ্ঞেস করে আসি কিভাবে প্রেম করতে হয়।”

“মাথার তার ছিঁড়ে গেছে?”

“ছিঁড়েছে তো আগেই এখন জোড়া লাগানোর চেষ্টায় আছি।”

“ছাড়ো আমাকে?”

“ছাড়ার জন্য ধরেছি নাকি?”

“তো কিসের জন্য ধরেছো?”

“সারা জীবন ধরে রাখার জন্য ধরেছি। আর একটা কথা, তুমি কি খেয়াল করেছো? তুমি কিন্তু আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করো এখন।”

মায়া আলভীর চোখে চোখ রেখে বলে,

“ছোট বেলায়ও তো তুমি বলেই সম্বোধন করতাম। বড় হয়ে কল্পনার তুমির সাথেও তো তুমি সম্বোধন করেই কথা বলতাম। ওই কয়েক দিন তো রাগের কারণে আপনি বলে সম্বোধন করেছি।”

“কল্পনায় তুমি আমার সাথে কথা বলতে?”

চোখ নামিয়ে নেয় মায়া। আলভীর বুকের সাথে গাল ঠেকিয়ে মৃদু স্বরে বলে,

“অসংখ্য বার, শত শত রাত জেগে, দিনের বেলায় গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে, ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়ে।”

“তাহলে তো আমাকে তোমার কুচিকুচি করে কে টে ফেলা উচিত।”

“এত অপেক্ষার পর পেয়েছি তোমাকে, কুচিকুচি করে যদি কে’টেই ফেলি তাহলে আবার পাব কোথায়? আমার অপেক্ষারা যে অনন্ত হয়ে যাবে তখন।”

আর একটা কথাও বলে না আলভী। বাম হাতে শুধু মায়া কে পেঁচিয়ে ধরে বসে রইলো। এই কথা গুলোর মধ্যে যেন কি ছিল!
,
,
মাগরিবের পর মায়া কে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে আলভী। দুপুরের পর থেকে এই সন্ধ্যা অব্দি মায়া কে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে শুধু। কসমেটিকস্ কেনার কথা থাকলেও কেনেনি। আগামী কাল নয়তো আগামী পরশু যাবে আবার।

দুজন কে খালি হাতে ফিরতে দেখে মাহিদ বলে,

“কসমেটিকস্ কোথায়?”

“কসমেটিকস্ আগামী কাল কিনবো।”

” তাহলে সারা দিন কোথায় ছিলে দুজন?”

“গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি।”

মায়া সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায়। আলতাফ মাহমুদ সোফার দিকে এগিয়ে আসছেন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে। আলভী ওনাকে দেখে বলে,

“আব্বু ও

কথা শেষ করার আগেই আলভী কে থামিয়ে দেন আলতাফ মাহমুদ।
অবাক হওয়ার ভান ধরে বলেন,

“এই কে আপনি? আমাকে আব্বু ডাকছেন কেন?
পা গ ল হয়েছেন নাকি? এই বাড়িতে কিভাবে প্রবেশ করলেন? বাড়ি কোথায় আপনার? যান নিজের বাড়িতে যান।”

সোফায় বসে থাকা সকলে অবাক হয়ে দুই বাপ ছেলের দিকে তাকাতাকি করছে। মায়াও দাঁড়িয়ে গেছে।
আলভী স্বাভাবিক ভাবেই বলে,

“সরি চাচা শশুর মশাই। আপনাকে দেখতে হুবহু আমার মীরজাফর বাপের মতন, তাই ভুল করে আব্বু ডেকে ফেলেছি। আমার মীরজাফর বাপের সাথে যদি আপনার দেখা হয় তাহলে তাকে বলবেন আমার কথা আছে তার সাথে। এখন আসছি বাই।”

বলেই শিস বাজাতে বাজাতে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। আলতাফ মাহমুদ হা করে তাকিয়ে আছেন সিঁড়ির দিকে।
বাকি সবাই হতভম্ভ হয়ে তাঁকিয়ে আছে আলভীর যাওয়ার পথে। কেউ বুঝতে পারছে না দুই বাপ ব্যাটা এমন অদ্ভুত ভাবে অদ্ভুত কথা বললো কেন!
ঐশী রহমান অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসছেন।
যেমন বাপ তেমন ছেলে। হয়েছে না এবার, বাপ কে চাচা শশুর বানিয়ে দিয়েছে।
আলতাফ মাহমুদ এর মুখ দেখেই ফিক করে হেসে ওঠেন ঐশী রহমান। কোনো ভাবেই আর হাসি চেপে রাখতে পারছেন না আলতাফ মাহমুদ এর রিয়াকশন দেখে। সবাই ঐশী রহমান এর দিকে তাকায়। ঐশী রহমান সোফা ছেড়ে উঠে দ্রুত কিচেনে চলে আসেন।
হাসি কন্ট্রোল করতে না পেরে হা হা করে হেসে ওঠেন।

বাড়ির সবাই হা হয়ে তাকিয়ে রইলো কিচেনের দিকে।
______________________

আলভী দের বাড়ি টা কাঁচা ফুল আর বাহারি রঙের লাইট দিয়ে সাঁজানো হয়েছে। বাড়িতে গমগমে পরিবেশ, মানুষের হৈ চৈ। বিয়ে উপলক্ষে অনেক আত্মীয় স্বজন চলে এসেছে গত কাল সকালেই। বাকিরা আগামী কাল সকালে আসবে।

আগামী কাল শুক্র বার আলভী আর মায়ার আবার বিয়ে। মাঝখানের এই কয়েক দিন আলভী কে নিজের ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয়নি মায়া। আলভী মায়া কে কাছ থেকে দেখলেও ছুঁতে পারেনি আর। বেচারার আফসোসের শেষ নেই।

মেহেন্দী আর হলুদের অনুষ্ঠান আলভী করতে দেবে না।
আলভীর কথা, এগুলোতে কেনো অনুষ্ঠান করতে হবে? এগুলো করার কোনো নিয়ম আছে নাকি? শুধু মায়া কে মেহেদী দিলেই হবে আলভী নিজে মেহেদী দেবে না।
আর হলুদের অনুষ্ঠান তো একে বারেই করতে দেবে না সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

ওর জেদের সাথে কেউ পারছে না গত দুদিন ধরে।

এখন বেলা এগারোটা বাজে। মায়া কে মেহেদী দিয়ে দেওয়ার জন্য পার্লার থেকে দুজন মেয়ে এসেছে।
মায়া কে মায়ার রুম থেকে বের হতেই দিচ্ছে না আলভী। বাড়িতে অনেক ছেলে পেলে এসেছে তাদের সামনে আসতে দেবে না কিছুতেই।
মায়ার মামাতো বোন জিজ্ঞেস করেছিল কেনো নিচে যাবে না । তখন সকলের সামনে আলভী বলেছিল,

“নিচে গেলে বোরকা হিজাব পড়ে তারপর যাবে নয়তো যাবে না।”

পরবর্তীতে আর কেউ টু শব্দ অব্দি করেনি।

মেয়ে দুজন কে মায়ার রুমে নিয়ে আসে আলভী আর মাহিদ। রুমে মায়ার কাজিন বোনরা ভিড় জমিয়ে রেখেছে। মাহিদ ভিড় কমিয়ে দেয়।

মেয়ে দুজন আলভী আর মায়া কে মেহেদী ডিজাইন দেখিয়ে বলে,

“কোন ডিজাইন টা দেব চুজ করুন আপনারা।”

মায়া আলভীর মুখের দিকে তাকায়। মায়া চোখ দিয়ে বোঝায় আলভী কে চুজ করার জন্য।
আলভী হাত আর পায়ের জন্য ডিজাইন সিলেক্ট করে দেয়।
একজন মেয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

“ম্যাম আপনি হাত পা ধুয়ে ফ্রেস হয়ে এসে বসুন একে বারে।”

মায়া ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে প্রবেশ করে।
মাহিরের ডাক শুনে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মাহিদ। আলভী আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে।

মায়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। হাত পা মুছে বেডে উঠে বসে। মেয়ে দুজন মায়ার দুই হাতে একসাথে মেহেদী পড়িয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যত হয়।

আলভী দুজন কে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“এক মিনিট।”

তিন জনেই আলভীর দিকে তাকায়। আলভী হাত পেতে একটা মেহেদী চায়।
তারপর মেয়ে দুজন কে মায়ার সামনে থেকে সরে বসতে বলে। মেয়ে দুজন সরে যেতেই আলভী মায়ার সামনে বসে। মেহেদী টা মায়ার হাতে দিয়ে নিজের ডান হাত টা মায়ার সামনে বালিশের উপর রাখে। তারপর বলে,

“মেহেদী দিয়ে দাও।”

“তুমি না বললে দেবে না।”

“আমার বিয়ে এখন আমি মেহেদী না দিলে বোঝা যাবে নাকি আমি যে বর? সুন্দর করে এখানে লেখো মায়া পরীর বর।”

মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়ে দুজন আর ওর কাজিন বোন দের দিকে তাকায়। সবাই ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছে।

“কি হলো লেখো।”

মায়া ডান হাতের তালুতে সুন্দর করে লিখে দেয়
“মায়া পরীর বর”।

লেখা শেষ হতেই উঠে দাঁড়ায় আলভী। মেয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ওর হাতে সুন্দর করে লিখে দেবেন আলভীর বউ।”

মেয়ে দুজন মাথা নাড়ায়।

“ডোর টা ভেতর থেকে লক করে দাও শীতল। কেউ এসে যেন ডিস্টার্ব করতে না পারে।”

আলভী রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মায়ার মামাতো বোন শীতল ডোর লক করে দেয় ভেতর থেকে।

বিয়েতে লিরা বাদে আলভীর নানার বাড়ির সবাই এসেছে আজ ভোরে। আলভীর নানি সামসুন্নাহার বেগম এবার একদম চুপ হয়ে আছেন। ভুলেও আলভীর সামনে বা মায়ার সামনে যাচ্ছেন না।

আলভী নিচে নেমে আসতেই আলভীর আর মায়ার সব কাজিন বোনরা আলভী কে ঘেরাও করে ধরে।
সকলের একটাই দাবি হলুদের অনুষ্ঠান করতে দিতে হবে। ছোটদের সাথে বেশ কয়েক জন বড়রাও যুক্ত হয়েছে এই দাবি তে।

আলভী সকলের দিকে নজর বুলায়। ওর বাপ চাচা সবাই আছে এখানেই। ওনাদের কেও ডেকে নিয়ে এসেছে আলভী কে বোঝানোর জন্য।
আলভী স্বাভাবিক স্বরে বলে,

“হলুদের অনুষ্ঠান করতেই হবে এমন কোনো নিয়ম রীতি আছে? তাহলে এই অনুষ্ঠান নিয়ে এত দাবি কেনো সকলের? হলুদের অনুষ্ঠান না করলে কি কিছু হবে?”

সকলের মধ্যে থেকে একজন বলে,

“নিয়ম রীতি নেই। হলুদের অনুষ্ঠান শুধু মাত্র আনন্দের জন্য করা হবে।”

“অন্য ভাবেও তো আনন্দ করা যাবে।”

“হলুদের অনুষ্ঠান নিয়ে এত আপত্তি কেনো তোমার?”

“হলুদের অনুষ্ঠানে হলুদ দেওয়ার নামে ছেলে মেয়ে উভয়েই হুড়োহুড়ি করে মায়া কে হলুদ লাগবে যা আমি কিছুতেই হতে দেব না। আর হলুদের অনুষ্ঠানের নাম করে এই মেয়ে ওই ছেলে কে হলুদ লাগাবে, ওই ছেলে আবার আরেক মেয়ে কে লাগাবে। এ ওকে, সে তাকে , এ ওর ঘাড়ে, সে তার পেটে এভাবে নোং/রামি শুরু হয়ে যাবে।”

“এমন কথা বলছো কেন? এরকম কিছুই হবে না।”

“এরকম টাই হয়। তিন দিন আগে যে আমার কলেজ লাইফের বন্ধুর বোনের বিয়েতে গিয়েছিলাম আমি, সেখানে এসবই হয়েছিল। আচরণ সীমার বাইরে চলে যায়, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। হলুদের নাম করে নোং/রামি শুরু হয়। কেউ ইচ্ছে করেই করে, আবার কারো সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়ে যায়।”

“এখানে এরকম কিছুই হবে না। কোনো ছেলে হলুদ লাগাবে না কোনো মেয়েকে, শুধু মেয়েরাই মেয়েদের লাগাবে। কোনো ছেলে কে ওখানে যেতেই দেব না। শুধু মেয়েরাই থাকবে ছাদে। তুমি প্লীজ আর না করো না।”

বাড়ির সবাই আলভী কে বোঝায় সাথে এটাও বলে কোনো ছেলে ছাদের উপর যাবে না হলুদ লাগানোর সময়। আলভী কেও কোনো মেয়ে হলুদ লাগাবে না। আলভী কে ছেলেরা লাগাবে আর মায়া কে মেয়েরা লাগাবে।
অনেক বোঝানোর পর অবশেষে আলভী রাজি হয়ে যায়।

মুহূর্তেই আবার হৈ হৈ শুরু হয়ে যায়। মাহিদ আলভী কে টেনে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে ইমারজেন্সি কথা বলার জন্য।

চলবে…………..