হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব-৩০+৩১

0
1

#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_30 (স্পেশাল পর্ব)

[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]

বাড়ির বাইরে আসতে আসতে আলভী মাহিদ কে বলে,

“কিসের এত জরুরি তোর?”

“চলো গেলেই তো বুঝতে পারবে।”

“কোনো কিছু প্ল্যান করিসনি তো আবার?”

“প্ল্যান! কিসের প্ল্যান? কোনো প্ল্যান করিনি।”

মাহিদ আলভী কে নিয়ে এসে দাঁড়ায় বাগানে।
ওদের দুজনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন যুবক। যুবক টা কে চিনতে খুব একটা সময় লাগে না আলভীর।
সারপ্রাইজড হয়ে গেছে ওকে দেখে।
আলভী কে দেখে যুবক টা দুই হাত প্রসারিত করে হাসি মুখে বলে,

“সারপ্রাইজ বন্ধু।”

আলভী নিজেও দুই হাত প্রসারিত করে এগিয়ে গিয়ে নিজের স্কুল লাইফের বেস্ট ফ্রেন্ড কে জড়িয়ে ধরে।
খুশি হয়ে বলে,

“সত্যি সত্যিই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি বন্ধু। তুই না বললি আসবি না!”

“তোর বিয়ে আর আমি আসবো না সেটা কি হয়?”

“কবে আসলি?”

“রাতেই এসেছি?”

“ভাবী আর বাচ্চারা কোথায়?”

“ওরা কেউ আসেনি, আমি একাই এসেছি।”

“আমি তো ভেবেছিলাম সত্যি সত্যিই তুই আসবি না।”

“এত গুলো বছর পর তোর ফোন পেয়ে তো আমি শকড হয়ে গিয়েছিলাম। পরে যখন বললি তুই মায়া কে আবার বিয়ে করছিস তখন তো আরো বেশি শকড হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আসতে পারবো না তাই না করেছিলাম। কিন্তু কোনো ভাবেই নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। আমি তিন মাস বাংলাদেশে এসেছিলাম। এখন তো কোনো ভাবেই অফিস থেকে ছুটি দেবে না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এক সপ্তাহের জন্য ছুটি ম্যানেজ করেছি। তোকে বলিনি ভাবলাম সারপ্রাইজ দেব।”

“ভেতরে আয়।”

“বাকিরা কখন আসবে?”

“শাফিন আসতে পারবে না। রানা আর তাজ বিকেলে আসবে।”

“তোর কলেজের ফ্রেন্ডরা?”

“ওদের কারো নাম্বার বা ঠিকানা জোগাড় করতে পারিনি। ওরা তো ভাড়া থাকতো, কলেজ শেষ করে অন্য কোথাও চলে গেছে। আগের নাম্বার গুলোও নেই আমার কাছে।”

“ওহ চল বাড়ির সকলের সাথে দেখা করি।”

রিমন আলভীর সাথে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। রিমন কে দেখে বাড়ির সবাই খুশি হয়। স্কুলে পড়ার সময় রিমন প্রায় সময় আলভীর সাথে এই বাড়িতে আসতো। সেই সুবাদে বাড়ির সকলের সাথেই বেশ ভালো সক্ষতা আছে রিমনের।
,
,
আসরের নামাজ শেষ হতেই আলভী কে হলুদ লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়।
হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়ে সকল যুবকরা। আলভী তৈরি হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নেয়। হলুদ পাঞ্জাবিতে বেশ ভালো লাগছে দেখতে।
হৈ হৈ করে সবাই ছাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাহিদ হলুদের ডালা নিয়ে আসে। ডালার উপর লাল রঙের একটা নতুন গামছা ছিল। আলভীর নানা গামছা টার ভাঁজ খুলে আলভীর গলার দুই পাশ দিয়ে ঝুলিয়ে দেন।
আলভী নাক মুখ কুচকে গামছার দিকে তাকিয়ে রইলো।

“গলায় গামছা ঝুলিয়ে দিলে কেন?”

“নতুন জামাই নতুন গামছা ছাড়া জামাই জামাই ফিল আসবে নাকি? এখন না মনে হচ্ছে তুমি জামাই। এতক্ষণ তো সবাই কে একই রকম লাগছিল, বোঝাই যাচ্ছিল না কে জামাই!”

আলভী ভাব নিয়ে গামছাটার এক পাশ ওপর কাঁধের উপর তুলে দেয় প্যাচ দিয়ে।

“ভাইয়া চলো এখন দেরি হয়ে যাচ্ছে, মাগরিবের আজান দিয়ে দেবে আবার।”

“হুম।”

সবাই আগায় ছাদের দিকে। মাহির বাপ চাচা কে ডাকতে যায়। ওনারা বাড়ির বাইরে ডেকরেশনের ওখানে রয়েছেন।

মাহিদ কে থামিয়ে ডালার উপর থাকা ছোট বাটি থেকে একটু হলুদ হাতে তুলে নেয় সকলের অগোচরে। মাহিদ বলে,

“হলুদ নিলে কেন?”

আলভী মাহিদ এর কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে বলে,

“তোর বোন কে হলুদ লাগিয়ে আসছি তোরা যা।”

বলে পেছন থেকে মায়ার রুমের দিকে এগিয়ে আসে। মায়ার রুমের ভেতর থেকে মেয়েদের হু হা হাসির শব্দ ভেসে আসছে।
আলভী রুমের ডোরে নক করে। মেয়েদের হাঁসি বন্ধ হয়ে যায়। গলা খাঁকারি দিতেই সবাই বুঝতে পারে আলভী এসেছে। ডোর খুলে দেয় নাদিরা।
আলভী নাদিরার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,

“সবাই কে রুম থেকে বের হতে বলো।”

এক মিনিটের মধ্যে পুরো রুম খালি হয়ে যায়।
আলভী ভেতরে এসে ভেতর থেকে ডোর লক করে দেয়। মায়ার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। মায়া কে হলুদের জন্য সবুজ পেড়ে হলুদ রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে, মেকআপ এখনো বাকি। শুধু হলুদ রঙের শাড়িতেই অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।
মায়া আলভীর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে।
আলভী ধীর পায়ে মায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। বাম হাতে মায়ার কোমড় পেচিয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

“আর মাত্র এক রাতের অপেক্ষা মায়া পরী।”

মায়া লজ্জায় এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে,

“ছাড়ো, এখানে এসেছো কেনো এখন?”

“আমার পরী কে হলুদ লাগাতে।”

ডান হাতের মুঠোয় রাখা হলুদ মায়ার সম্মুখে উচু করে ধরে।
মায়ার গালে হলুদ লাগাতে নিলে মায়া থামিয়ে দিয়ে বলে,

“এমনিতেও ওরা সকাল থেকে খোঁচাচ্ছে আমাকে। এখন তুমি হলুদ লাগালে আরো খোঁচাবে।”

“কার কত বড় সাহস আমার বউ কে খোঁচায়!”

“ছাড়ো।”

আলভী মায়া কে বলে,

“তুমি হলুদ নাও হাতে।”

“কেন?”

“নিয়ে আমার গালে লাগিয়ে দাও।”

মায়া একটু হলুদ নিয়ে আলভীর গালে লাগিয়ে দেয়। হলুদ লাগানো গাল মায়ার গালের সাথে ঘষে মায়ার গালেও হলুদ লাগিয়ে দেয় আলভী।

“এখন এই হাতের টুকু কি করবো বউ?”

“ফেলে দাও।”

“উঁহু।”

“কি করবে তাহলে?”

“তোমাকে লাগাব।”

মায়া কে ছেড়ে দাঁড়ায়। মায়ার মাথা থেকে পা পর্যন্ত নজর বুলিয়ে নেয়। মায়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই শাড়ির একটা সেফটিপিন খুলে মায়ার পেটে-পিঠে হলুদ লেপ্টে দেয় আলভী। এরকম হওয়ায় জমে স্থির হয়ে গেছে মায়া। হলুদ লাগানো শেষ করে সেফটিপিন টা আবার আগের মতো করে লাগিয়ে দেয়।

“রাতে দেখা হচ্ছে আবার, এখন সুন্দর করে সেজে রেডি হয়ে বসে থাকো আমার অপেক্ষায়।”

“এখন কেনো তোমার অপেক্ষায় বসে থাকবো?”

“কারণ এখান থেকে তোমাকে আমিই ছাদে নিয়ে যাব।”

মায়া কিছু বলে না। আলভী ডোর খুলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
আলভী চলে যেতেই সবাই আবার রুমে চলে আসে। মায়ার গালে হলুদ দেখে নাদিরা বলে,

“ভাইয়া তো দেখছি হেব্বি চালক, সবার আগে হলুদ বউ কে হলুদ লাগিয়ে চলে গেল।”

মায়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে টুলের উপর বসে। এখন এদের খোঁচানো শুরু হয়ে যাবে আবার। যে যা খুশি বলুক, ও এক কান দিয়ে শুনবে অন্য কান দিয়ে বের করে দেবে।

ছাদে উঠে আসে আলভী। ওকে দেখে আলতাফ মাহমুদ বলেন,

“গায়ে হলুদ তোমার কিন্তু তুমি বাদে বাকি সবাই এখানে উপস্থিত হয়ে গেছে।”

আলভী বাপের দিকে তাকিয়ে থেকে স্টেজে গিয়ে উঠে বসে। প্রথমে সবাই ফটোশুট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তিন ভাই একসাথে বসে ফটো তোলে। রিমন কেও টেনে ওদের সাথে বসায়। আস্তে আস্তে সকলেই কম বেশি আলভীর সাথে ফটো তোলে।
এখন হলুদ লাগানোর পালা।
প্রথমে হলুদ লাগান নাহার বেগম। ওনাকেও আলভী হলুদ লাগিয়ে দেয়। নাহার বেগম হলুদ লাগানো শেষে ছাদ থেকে নেমে যান আস্তে আস্তে। আলভীর নানাও হলুদ লাগিয়ে দেন। সামসুন্নাহার বেগম কে ছাদে আসতে বললেও উনি ছাদে আসেননি। এখনো অহংকারে মাটিতে পা পড়তে চায় না ওনার। মায়া কথা বলতে গেলেও উনি কথা বলেননি সেজন্য আলভীও আর জোর করে ওনাকে নিয়ে আসেনি।

আলতাফ মাহমুদ, আহনাফ মাহমুদ ওনারাও দুই ভাই হলুদ লাগিয়ে দেন। তারপর আস্তে আস্তে সবাই লাগায়।
হলুদ নিয়ে রীতিমতো ছোট খাটো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে কে কাকে বেশি লাগাতে পারে সেটা নিয়ে।

হলুদ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলে সবাই শান্ত হয়ে যায়।
আলভী বির বির করে বলে,

“আরেকটু হলেই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে যাচ্ছিল।”

হুড়োহুড়ির মাঝেই মাগরিবের আজান হয়। ছেলেরা সবাই ছাদ থেকে নেমে চলে যায়।

মাগরিবের নামাজ শেষ হওয়ার পর মেয়েরা ছাদে আসতে শুরু করে।
ছেলেদের বাড়ির বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন আহনাফ মাহমুদ।

মায়া কে ছাদে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলভী মায়ার রুমে আসে। আলভী কে দেখেই সবাই সাইট হয়ে দাঁড়ায়।
আলভী মায়ার দিকে তাকায় পূর্ণদৃষ্টি মেলে। কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানোর জন্য মায়ার সৌন্দর্য আরো অনেক বেড়ে গেছে। চোখ ফেরানো দায় ওই মুখশ্রী থেকে। মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আলভী যেন শ্বাস নিতেই ভুলে গেছে।
আলভী কে এভাবে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে মায়ার বুকের ভেতর কম্পন সৃষ্টি হয়। নেশালো ওই দৃষ্টি যেন মায়া কে আলিঙ্গন করছে।
নাদিরা আলভীর মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে,

“এভাবে দেখতে থাকলে তো রাত পাড় হয়ে যাবে।”

আলভী স্বাভাবিক হয়।
এগিয়ে এসে মায়ার এক হাত মুঠো করে ধরে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়। পুরোটা সময় ক্যামেরা বন্দী করে মাহিদ।

ছাদে এসে মায়া কে স্টেজের উপর বসানো হয়। আলভী নিজেও বসে মায়ার পাশে।
দুজনের ফটোশুট হয়। একের পর এক ক্যামেরা ক্লিক হতেই থাকে।

দুজন দুজন কে মিষ্টি, পায়েস, আর সাজিয়ে রাখা ফল তুলে খাওয়ায়। দুজন হাতে হলুদ নিয়ে দুজনের গালে ছোঁয়ায়। প্রতিটা মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দী হয়।

আলভী মানতাসা কে নিজের কোলে নেয়। একটু একটু করে সাজিয়ে রাখা খাবার গুলো তুলে তুলে খাওয়ায়। খাওয়ানো শেষ করে একটু হলুদ নিয়ে মানতাসার দুই গালে লাগিয়ে দেয়। মায়া নিজেও মানতাসা কে খাইয়ে দিয়ে হলুদ লাগায়।
আলভী মানতাসা কে বলে,

“আম্মা তুমি আমাকে খাওয়াবে না? হলুদ লাগাবে না?”

“লাগাবো তো।”

“তাহলে লাগাও।”

মানতাসা অদক্ষ হাতে মিষ্টি, পায়েস, ফল তুলে খাওয়ায় আলভী কে। মায়া কে খাওয়াতে গিয়ে পায়েস মায়ার থুতনিতে লেপ্টে দেয়। লেপ্টে দিয়েই হা হা করে হাসতে শুরু করে। ওর সাথে সাথে বাকি সবাইও হেসে ওঠে। আলভী টিস্যু দিয়ে মুছে দেয় মায়ার থুতনি।
আবারো অদক্ষ হাতে হলুদ তুলে নিয়ে আলভী আর মায়ার গালে লেপ্টে দেয়।

স্টেজ থেকে নেমে আসে আলভী। মানতাসা মায়ার পাশেই বসে রইলো।
আলভী একটা চেয়ার নিয়ে স্টেজের এক পাশে বসে পায়ের উপর পা তুলে। অপলক তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে। একটু পর পর মায়া নিজেও তাকাচ্ছে আলভীর দিকে।

বড়রা আগে হলুদ লাগিয়ে নিচে চলে যায়। মাহির আর মাহিদও মায়া কে হলুদ লাগায়।

মেয়েদের খায়ানো, হলুদ লাগানো, ফটো তোলা সব কিছু শেষ হতে হতে এশার আজান হয়ে যায়।

ছাদ থেকে নেমে যায় সবাই।
মায়া কে মায়ার রুমে নিয়ে যায় ওর কাজিন বোনরা।
আলভী ড্রইং রুমে এসে দাঁড়ায়। ঐশী রহমান নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আলভী মায়ের পেছন পেছন মায়ের রুমে আসে।
ছেলে কে পেছন পেছন আসতে দেখে কপাল ভ্রু কুঁচকে তাকান ঐশী রহমান।

“কিছু বলবে?”

“আজকে রাতে তুমি মায়ার সাথে ঘুমাবে। অন্য কেউ যেন মায়ার সাথে না শোয়। এখন গিয়ে ওকে ফ্রেস করিয়ে খাবার খাইয়ে ঘুমোতে বলো। মনে রেখো অন্য কেউ যেন ওর সাথে না শোয়। তুমিই ঘুমাবে ওর সাথে।”

ছেলের কথা শুনে কোনো প্রশ্ন করেন না ঐশী রহমান। মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলেন,

“আচ্ছা।”

আলভী রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। ঐশী রহমান নিজের কাজ শেষ করে ডাইনিং টেবিলের কাছে এগিয়ে আসেন। মায়ার জন্য খাবার বেড়ে নিয়ে মায়ার রুমের দিকে এগিয়ে যান। মেহবুবা মেহের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখন।
,
,
এশার নামাজের পর ছেলে পেলে সব ছাদে উঠে আসে।
রিমন আলতাফ মাহমুদ এর আহনাফ মাহমুদ কে জরুরি কথা বলবে বলে ছাদে ডেকে নিয়ে এসেছে।
ছাদে আগে থেকেই ছোটরা সবাই উপস্থিত রয়েছে। আলভীর নানা, মায়ার দুই নানা সবাই রয়েছে শুধু মামারা আর খালুরা কেউ নেই।

আলতাফ মাহমুদ রিমনের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“বলো কি বলবে?”

“আমি না তো আলভী বলবে।”

আলভী বাপ শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে।

“কি বলবে বলো।”

“কই আমি তো কিছু বলবো না।”

“তাহলে ডাকতে বলেছো কেন?”

আলভী রিমনের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ওই তোকে আমি বলেছি ডাকতে?”

“ডাকতে তো বলিসনি, শুধু বলেছিস নিয়ে আসতে তাই আমি নিয়ে এসেছি।”

দুই ভাই বিরক্ত হয়ে গেটের দিকে এগিয়ে যান। গেটে তালা ঝুলতে দেখে আলতাফ মাহমুদ বলেন,

“গেটে তালা দিয়েছে কে? তালা খুলে দাও।”

আলভী ওষ্ঠদয় আগের চেয়েও চওড়া করে বলে,

“ছাদ থেকে যেতে পারবে না এখন। নাচতে হবে এখন, আমার বিয়ে আর তুমি নাচবে না তাতো হতে পারে না।”

আলতাফ মাহমুদ বড় বড় চোখ করে ছেলের পানে তাকিয়ে থাকেন কিছু সময়। তারপর অবাক স্বরে বলেন,

“আমি নাচবো? তাও এই বয়সে এসে?”

“জ্বি আব্বা প্লাস চাচা শশুর মশাই।”

আলভীর এমন কথা শুনে হা হা করে হেসে ওঠে সবাই।
আলতাফ মাহমুদ কর্কশ স্বরে বলেন,

“নাচবো না আমি, গেট খোলো।”

“শুধু তুমি না তো, আমার শশুর মশাইও নাচবে আমাদের সাথে।”

আহনাফ মাহমুদ বলেন,

“আবার আমাকে টানছ কেনো মাঝ খানে? আমি কোনো নাচ ফাঁচ করতে পারি না। আলতাফ নাচতে পারে ওকে নাচাও আমি গেলাম।”

“বড় ভাই হয়ে ছোট ভাই কে ফাঁসিয়ে কোথায় পালাতে চাইছো তুমি?”

“তুই ছোট বেলা থেকে অনেক জ্বালিয়েছিস, জোর করে নাচিয়েছিস আমাকে। এখন তোর ছেলে এসে গেছে নাচানোর জন্য। ছাড় আমার হাত।”

আহনাফ মাহমুদ ছোট ভাইয়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেন। আলতাফ মাহমুদ বড় ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর ওনাদের দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই।
আলতাফ মাহমুদ ছোট বেলায় আলভীর চেয়ে বেশি দুষ্ট ছিলেন। বড় ভাই কে অনেক জ্বালিয়েছেন তিনি। সব সময় বড় ভাইয়ের পেছনে লেগেছেন। এত দিনও বড় ভাইয়ের পেছনে লেগেছেন। এখন ছেলে বাড়িতে আসার পর থেকে ছেলের পেছনে লাগেন তাই বড় ভাইয়ের পেছনে লাগার সময় পান না।

“মাহিদ গান চালু কর, আজকে বাপ আর শ্বশুরের সাথে উরাধুরা নাচবো।”

আহনাফ মাহমুদ আলভীর দিকে তাকিয়ে বলেন,

“এই বয়সে এসে নাচলে হাড়ের জোড়া খুলে যাবে আমার।”

“সমস্যা নেই, হসপিটাল থেকে আবার জোড়া দিয়ে নিয়ে আসবো।”

“বড় দুই ভাই ছোট বেলায় বেশি আদর ভালোবাসা পেয়ে বাদর হয়ে গেছো।”

“এখানে বড় ভাই আবার কি দোষ করলো?”

অবাক স্বরে বলে আলভী। মাহিদ বলে,

“ভাইয়াও নিজের বিয়েতে দুজন কে নাচিয়েছিল।”

আলভী আগের চেয়েও অবাক হয়ে বলে,

“সত্যি।”

“হ্যাঁ।”

“তাহলে আমার বিয়েতে ডবল টাইম নাচতে হবে। প্লে কর লুঙ্গি ডান্স গান।”

মাহিদ মিউজিক বক্সে গান প্লে করে দেয়। গানের সাথে সাথে হৈ হৈ করে ওঠে সবাই।

“মুঁছোঁ কো থোড়া রাউন্ড ঘুমাকে
আন্না কে জ্যায়সে চশমা লাগাকে
কোকোনাট মে লস্সি মিলाके
আয়া যাও সারে মুড বনাকে

অল দ্য রজনী ফ্যানস…
ডোন্ট মিস দ্য চান্স…
অল দ্য রজনী ফ্যানস…
ডোন্ট মিস দ্য চান্স…

লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স”

বাপ, শ্বশুর আর নানাদের মাঝখানে নিয়ে উরাধুরা নাচতে শুরু করে সবাই।
যখনই লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স বলে আলভী নিজের গলায় থাকা গামছা টা মেলে দিয়ে বাবার পেছন দিক থেকে সামনের দিকে ধরে লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স বলে লাফাতে শুরু করে।
প্রথমে না না করলেও ছেলেদের আর গানের তালে পড়ে নিজেরাও নাচতে শুরু করেছেন লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স।

গান শেষ হতে হতে সবাই হাঁপিয়ে উঠেছে।
ভালো ভাবে দম নেওয়ার আগেই একজন গিয়ে অন্য গান প্লে করে। গান প্লে হওয়ার সাথে সাথেই বেশির ভাগ যুবক সিটি বাজায়। কয়েক জন গান শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
গান অফ করে সকলের দিকে তাকিয়ে ছেলে টা বলে,

“হাসাহাসি বাদ দিয়ে সবাই নাচো।”

আবার গান প্লে করে।

চিকন চাকন মান্জা দোলে
গানের তালে তালে
হায় হায় গানের তালে তালে,
হাসি দিলে,ঠোল পড়ে
তোমার দু’টি গালে।

চুপি চুপি ডাকো তুমি
কাছে আসো না,
আসলে তুমি আমায়
ভালোবাসনা।

তুমি জ্বালাইয়া গেলা মনের আগুন
নিভাইয়া গেলা না।

তুমি জ্বালাইয়া গেলা মনের আগুন
নিভাইয়া গেলা না।

একেক জনের মাজা দুলানো দেখে আলভী সহ আরো কয়েক জন হাসতে হাসতে বসে পড়েছে নিচে।

গান অর্ধেক হতেই বন্ধ করে দেয় আরেক জন। তারপর তৃতীয় গান প্লে করে।

“আজ এই রাতে তুমি আমারি সাথে,
আলো আঁধারে হাত রাখো এই হাতে।
মন দিয়ে যাও তুমি মন নিয়ে যাও,
মন দিয়ে যাও তুমি মন নিয়ে যাও।”

গানের সাথে সাথে নাচতে নাচতে আলভী বলে,

“আগামী কাল রাতে তুমি আমারি সাথে,
আলো আঁধারে ভাসবে প্রেমের সাগরে।”

চলবে…………..

#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_31 (বিবাহ স্পেশাল পর্ব)

[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]

ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে আলভী। ফজরের নামাজ আদায় করে জগিং করে বাড়িতে ফিরে আসে ভাই আর বন্ধুদের সাথে। ফ্রেস হয়ে মায়ার রুমের সামনে আসে। আলভী মায়ার রুমে প্রবেশ করতে চাইলেও কেউ করতে দিচ্ছে না। আলভীর রাগ কে কেউ পরোয়া করছে না আজ। সকলের একটাই কথা একে বারে বিয়ের পর বউয়ের মুখ দেখবে তার আগে না।

বাধ্য হয়েই আলভী নিজের রুমে ফিরে যায় আলভী।

আলতাফ মাহমুদ আর আহনাফ মাহমুদ খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেন। ছেলেরা রাতে এমন নাচ নাচিয়েছে যে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারছেন না। পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে সাথে পা দুটো ভীষণ ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন বাঁশ দিয়ে ইচ্ছে মতন পিটিয়েছে দুই ভাই কে।

ড্রইং রুমে এসে দেখে দুই ভাইয়ের শ্বশুরেরা সোফায় বসে আছেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেলে দুলে হেঁটে এগিয়ে এসে সোফায় বসেন দুই ভাই।
আলতাফ মাহমুদ নিজের শশুর আর ভাইয়ের শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“আপনাদের কি অবস্থা? নাতির বিয়েতে কেমন ইনজয় করলেন?”

মায়ার নানা বলে,

“আর ইনজয়! ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারছি না এখন। মনে হচ্ছে হাড়ের জোড়া জারি সব ছুটে গেছে, হাঁটতে নিলেই খুলে পড়ে যাবে।”

আলভী সোফার দিকে এগিয়ে আসার সময় নানা শ্বশুরের কথা গুলো শুনতে পায়। আগাতে আগাতে বলে,

“নাচলেনোই তো না, নাচার আগেই জোরা জারি ছুটে যাচ্ছে? আজকে আর এক ঘন্টা নাচলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। চলো বয়েজ আর এক ঘন্টা নাচার সুযোগ এখনো আছে।”

আলভীর নানা বলে,

“আস্তাগফিরুল্লাহ, আজ শুক্র বার জুমার দিন। এসব নাচানাচির কথা আর নাচানোর কথা বলো না নানা ভাই।”

“জুমার নামাজের এখনো অনেক দেরি।”

“বাপের জন্মে গত কালের আগে নেচে টেচে দেখিনি কখনো। এক পা কবরে চলে গেছে আর তুমি এখনো নাচাতে চাইছ? আর নাচতে পারবো না, নাচার সখও নেই।”

মায়ার নানা বলে,

“রাতে শেষে যে লুঙ্গি ডান্স গানে নাচলো সবাই তখন কোন বাদরে যেন আমার পাঞ্জাবি ধরে লুঙ্গি ডান্স দিতে গিয়ে পাঞ্জাবির এক পাশ ছিঁড়ে দিয়েছে। পাঞ্জাবি ধরে কেনো লুঙ্গি ডান্স দিতে হবে?”

আলভীর নানা বলে,

“আরে রাখেন আপনার এক পাশ। কোন বাঁদরেরা যেন লুঙ্গি ডান্স গানে পাঞ্জাবি ধরে নাচতে নাচতে আমার পাঞ্জাবির দুই পাশই টানাটানি করতে করতে ছিঁড়ে দিয়েছে। নতুন পাঞ্জাবির জিন্দেগি একজন রফাদফা করে দিয়েছে।”

মায়ার ছোট নানা বলে,

“আরে রাখেন আপনাদের দুজনের পাশ ছেড়াছেড়ি। কে কে যেন আমার পুরো পাঞ্জাবিই ছিঁড়ে নিয়েছে।”

আলতাফ মাহমুদ বলেন,

“আপনাদের গুলো তো তাও অন্য কেউ ছিঁড়েছে আর আমার পাঞ্জাবি তো আমার নিজের ছেলেই ছিঁড়ে দিয়েছে নাচতে নাচতে।”

বাবার কথা শুনে দাঁত বের করে হাসে আলভী।
আলতাফ মাহমুদ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“নির্লজ্জের মতন আবার হাসছে।”

আহনাফ মাহমুদ বলেন,

“বড় শ য় তা ন টা কোথায়? যত নষ্টের মূল সব বড়টা। ওই পাঞ্জাবি ছেঁড়ার জো ধরিয়েছিল।”

মাহির মেয়ে কে কোলে নিয়ে সোফার দিকে এগিয়ে আসছিল। আসার সময় বাবার কথা গুলো শুনতে পায়। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য বলে,

“তুমি বলেছিলে তোমার গরম লাগছে তাই আমি পাঞ্জাবি খুলে দিয়ে তোমাকে সাহায্য করেছিলাম। এখন আমি কি জানতাম নাকি সবাই আমাকে অনুসরণ করবে?”

“সিরিয়াসলি! পাঞ্জাবি খুলেছিলে তুমি?”

রাতে নাচতে নাচতে অস্থির হয়ে আহনাফ মাহমুদ মাহির কে বলেছিল, “আমার গরম করছে এখন, আমি নিচে যাব গেট খুলে দিতে বলো।”

মাহির কোনো কথা না বলে নাচতে নাচতে বাবার পাঞ্জাবির দুই পাশ দুই হাত দিয়ে ধরে এক টানে গলা অব্দি ছিঁড়ে দেয়।
ছেঁড়া পাঞ্জাবির দুই পাশ ধরে “হেই লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স।” আহনাফ মাহমুদ ছেলের কান্ডে হতভম্ভ, বিস্ময়ে বিমূঢ়, বাক্য হারা। মাহির কে কপি করে একে অপরের পাঞ্জাবি ছিঁড়েছে। শেষে বুড়ো দের ও ছাড়েনি। তাদের তিন জনের পাঞ্জাবিও ছিঁড়ে দিয়েছে।

রাতের ঘটনা স্মরণ হতেই মাহির একটু হাসে। তারপর আর কিছু না বলে ছোট ভাইয়ের পাশে বসে। মানতাসা দ্রুত বাবার কোল থেকে নেমে আলভীর কোলে চলে আসে।
মায়া আক্তার সকলের জন্য চা কফি নিয়ে আসে।
,
,
বর আর কনে কে গোছল করানোর পালা।
গোছল করানোর কথা শুনেই বরাবরের মতো তেঁতে ওঠে আলভী। সকলের দিকে তাকিয়ে কাঠ কাঠ স্বরে বলে,

“আবার আরেক নিয়ম বের করেছো সবাই গোছল করানোর! বিয়ের দিন বর বউ কে গোছল করিয়ে দিতে হয় এটা নিয়ম? যত্তসব আজাইরা নিয়ম। হাত পা নেই নাকি আমাদের? নাকি এখনো ছয় মাসের বাচ্চা যে গোছল করিয়ে দিতে হবে? যার যার গোছল সে সে করবে কেউ কোনো গোছল করাবে না। এই সব উল্টা পাল্টা নিয়মের কথা যেন আর না শুনি। কি এক নিয়ম চালু করিয়ে রেখেছে গোছল করাতে হবে।”

শেষের কথা গুলো বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় আলভী।

ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে থাকা সকলে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েক জন বয়স্ক মানুষ একটু রাগারাগি করেন আলভীর এমন কথা শুনে। ছেলে টা বিয়ের কোনো নিয়ম কানুন পালন করতে দিচ্ছে না। সব কিছুতেই কেমন করছে। এখন কার ছেলে মেয়ে গুলো সব আগের দিনের একটা নিয়মও পালন করে না করতে দেয়ও না। মেহবুবা মেহের আর ঐশী রহমান কোনো রকমে তাদের শান্ত করিয়ে গোছল করে তৈরি হয়ে নিতে বলেন সকল কে।

সাড়ে বারোটার পর পর গোছল করে সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি পাজামা পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে আলভী। ওর গা থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি আতরের ঘ্রাণ। দেখতে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি স্নিগ্ধ, কোমল, ফ্রেস লাগছে।
সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বাড়ির সব পুরুষ কে ডাকে মসজিদে যাওয়ার জন্য আর মহিলাদের বলে ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করার জন্য।

মাহিদ সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলে,

“রাতে শ য় তা নের মতো নেচে গেয়ে পুরো বাড়ি কাপিয়ে এখন হুজুর সেজেছে।”

আলভী সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে নামতে নামতে বলে,

“রাতে শ য় তা নের সাথে শ য় তান হয়ে শয়তান কে আনন্দ দিয়েছি। এখন মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে শ য় তান কে ছ্যাঁকা দেব।”

“তুমি তো দেখা যায় আমার থেকেও বড়

মাঝ পথে থামিয়ে দেয় আলভী।

“মোটেও উল্টা পাল্টা কথা বলবি না এখন। আমি ভালো হয়ে গেছি একটু আগে, আর কখনো কোনো দিন গান বাজিয়ে নাচবো না, কাউকে নাচাবো না।”

এত টুকু বলে একটু থামে। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই হাত তুলে বলে,

“হে আল্লাহ জীবনে অনেক গুনাহ আর পাপ করেছি আজকের এই পবিত্র জুমার দিনের উসিলায় আর আমার বিয়ে উপলক্ষে আমাকে মাফ করে দাও আর আমাদের উপর রহমত বর্ষিত করো আমীন।”

আলভীর সাথে সাথে মাহিদও আমীন বলে।
অনেকেই আলভীর বলা কথা গুলো শুনেছে। তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ হাসছে কথা গুলো শুনে আবার কেউ কেউ আমীন বলেছে।

আলভী তাড়া দিয়ে সকল কে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় জুমার নামাজ আদায় করার জন্য।
,
,
মায়া নিজেই একা একা গোছল করতে চাইলেও মায়ার নানি, মামী সকলের কথায় মেহবুবা মেহের মায়া কে গোছল করান। গোছল করানো বলতে শুধু সাবান মেখে হাত পা ঘষে দেন। চুলে শ্যাম্পু করে দেন। গায়ে পানি ঢেলে দেন।
গোছল করাতে করাতে মেহবুবা মেহের এর চোখ দুটো পানিতে টুইটুম্বর হয়ে যায়। মায়া বাড়িতেই থাকবে তার পরেও কেনো যেনো ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছেন। মায়ের মুখ দেখে মায়ার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে । মেহবুবা মেহের মায়া কে ড্রেস চেঞ্জ করতে বলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসেন।

পাঁচ মিনিট পর মায়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে ওযু করে।
মেহবুবা মেহের নিজেও ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করতে যান। রুমে যারা যারা ছিল সবাই কে নিয়ে গেছেন। মায়ার নামাজ শেষ হলে ওকে খাইয়ে বিয়ের জন্য তৈরি করা হবে।
,
,
মায়ার ফুপু আনজারা নিজ হাতে মায়া কে খাইয়ে দেন।
তার ছেলে মেয়ে কেউ দেশে নেই। পড়াশোনা আর জবের সূত্রে দুজনেই দেশের বাইরে। বিয়েতে আসতে চাইলেও দুজনের একজনও আসতে পারেনি।

পার্লার থেকে মেকআপ আর্টিস্ট আসে মায়া কে সাজানোর জন্য।

খাওয়া শেষ করে ফ্রেস হয়ে এসে বসে মায়া।
পার্লারের মেয়ে টা রুমের ভিড় কমাতে বললে দুজন বাদে বাকি সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আলভী আগেই মেকআপ প্যাকেজ চুজ করে রেখেছে তাই মায়া কে আলাদা করে আর চুজ করতে হয় না।

শাড়ি পড়িয়ে মেকআপ শেষ করে হিজাব বেঁধে দেয়। হিজাব বাঁধার পর মায়ার চেহারায় অন্যরকম এক সৌন্দর্য, দীপ্তি, নূর ছড়িয়ে পড়ে।
হাতের গলার জুয়েলারী গুলো পড়িয়ে দেয়। মাথায় দোপাট্টা দিতেই সম্পুর্ণ বউ বউ লাগে মায়া কে।

সব শেষে মেয়েটা মায়া কে আয়নার সামনে দাঁড় করায়। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে তাঁকিয়ে থাকে মায়া। এটা আসলেই মায়া নিজে!
মেয়ে টা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

“সব কিছু ঠিক আছে ম্যাম?”

মায়া মাথা নাড়ায়। মেয়েটা নিজের সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আলভী আগেই পেমেন্ট করে দিয়েছিল।
মেয়েটা বেরিয়ে যেতেই সবাই হুড়মুড় করে ভেতরে প্রবেশ করে।
শীতল মায়ার পাশে দাঁড়িয়ে নিচু কন্ঠে বলে,

“ভাইয়া তো আজকে তোর দিক থেকে চোখ সরাতেই পারবে না মায়া। তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে না আবার কানা হয়ে যায়।”

মায়া শীতলের দিকে তাকিয়ে বলে,

“কানা কেনো হবে?”

“তোর রূপের আগুনে চোখ ঝলসেও যেতে পারে। এখন সোজা হয়ে দাড়া কয়েক টা পিক তুলে ভাইয়ার কাছে পাঠাই।”

নাদিরা সহ আরো কয়েক জন মেয়ে শীতল কে বাঁধা দিয়ে বলে,

“এখন মোটেও ভাইয়ার কাছে বউয়ের পিক পাঠানো যাবে না। বউ কে একে বারে স্টেজেই দেখবে। এখনই যদি দেখে ফেলে তাহলে তখন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকবে নাকি?”
,
,
আলভীও বর সেজে রেডি। ওকে কেউ সাহায্য করেনি আলভী নিজেই একা একা রেডি হয়েছে।
রেডি হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে বেডে বসে থাকা মাহিদ এর দিকে তাকায়। বাকি সব ছেলেরা খাওয়ার ওখানে রয়েছে। আলভী মাহিদ কে বলে,

“কেমন লাগছে আমাকে?”

“হ্যান্ডসাম।”

“তোর বোন দুই চার দশ মিনিট হা করে তাকিয়ে থাকবে না?”

“আমি তো আর বোন নই যে বলে দেব।”

“কখন যাব?”

“কোথায়?”

“বিয়ে করতে কখন যাব শা লা?”

“এমন ভাবে বলছো যেন এই জন্মে আর বিয়ে করোনি।”

ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে হেয়ার ব্রাশ টা তুলে মাহিদ এর গায়ে ছুঁড়ে মা রে আলভী।

“শা লা আগামী দশ বছরেও তুই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারবি না।”

“শকুনের দোয়ায় গরু ম রে না।”

মাহিদ এর দিকে তেড়ে আসে আলভী। মাহিদ বেড থেকে নেমে, দে দৌড়। ওকে আর পায় কে!

আলভী নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে বাসর ঘর যারা সাজাবে তাদের কল করে। সকালে আসার কথা ছিল অথচ এখনো আসছে না। ত্রিশ মিনিট ত্রিশ মিনিট করতে করতে বিকেল হয়ে গেল।
কল রিসিভ হতেই আলভী বলে,

“আপনারা কোথায়? এই বছরে কি বাসর ঘরে বাসর করার সৌভাগ্য হবে আমার?”

“সরি স্যার আমরা এসেই পড়েছি আর পাঁচ মিনিট। সাদা ফুল গুলো আসতে একটু লেট হয়েছে তাই জন্য। রাগ করবেন না স্যার আমরা চলেই এসেছি।”

“হুম তারাতারি আসুন রাখছি।”

কল কেটে আয়নার দিকে আবার তাকাতেই রুমে প্রবেশ করেন আলতাফ মাহমুদ, আহনাফ মাহমুদ সহ আরো অনেক গুরু জনেরা।
আলতাফ মাহমুদ ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“হয়েছে তোমার? কাজী সাহেব তাড়াহুড়ো করছেন।”

“হ্যাঁ হয়েছে অনেক আগেই।”

“তাহলে চলো এখন।”

আলভী বাবার সামনে এসে দাঁড়ায়। ঝুঁকে বাবার হাত দুটো ধরে নিজের মাথার উপর রেখে বলে,

“দোয়া করো আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের উপর নেয়ামত, রহমত, বরকত দান করেন। আর কোনো দিন যেন আমার জন্য কাউকে কষ্ট পেতে না হয়। তোমাদের মেয়ে কে যেন সারা জীবন হাসি খুশি ভালো রাখতে পারি। আমাদের আগামী পথচলা যেন সহজ আরো সুন্দর হয়। আগামী দিন গুলোতে তোমাদের কাউকে যেন আমার জন্য দুঃখ পেতে না হয়। সব কিছুর জন্য দোয়া করো।”

আলতাফ মাহমুদ ছেলের মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে ছেলে কে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর বলেন,

“আমি সব সময় দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন তোমাদের ভালো রাখেন, তোমাদের মনের নেক আশা পূরণ করেন। আল্লাহ তায়ালা সব সময় তোমাদের সবাই কে ভালো রাখেন, হাসি, খুশি, সুখে রাখেন এই দোয়াই করি।”

সকলের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে ডোরের দিকে আগায় আলভী। ডোরের সামনে আসতেই বিয়ের গেট ধরে রুমের ডোরের সামনে দাঁড়ায় মেয়েরা।
আলভী কপাল ভ্রু কুঁচকে বলে,

“এসব কি? রুমের সামনে বাঁশ ধরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো সবাই?”

“গেট ধরেছি।”

“এটা কে গেট ধরা বলে? রুমের সামনে বাঁশ ধরে গেট ধরেছি বলছো!”

“পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে এখান থেকে বের হন নয়তো বিয়ে করতে হবে না।”

“আস্তাগফিরুল্লাহ, বাসি বিয়েতে পঞ্চাশ হাজার টাকা? পা গ লে ধরেছে নাকি আমাকে? পাঁচ টাকা দিচ্ছি গিয়ে চকলেট কিনে খাও।”

“এহ্ বিদেশ থেকে ফকির এসেছে। বিয়েতে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে পারবে অথচ গেটে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে পারবে না।”

“বিয়ের খরচ আমার আব্বাজান করেছে আমি না।”

“তো আপনি এত বছর বিদেশ থেকে কি করেছেন?”

“আবার বিয়ে করতে এসেছি।”
হাসতে না চাইলেও আলভীর কথা শুনে হেসে ওঠে সবাই।

আলভী মাহিদ এর দিকে হাত বাড়ায়। মাহিদ বড়সড় একটা খাম আলভীর হাতে দেয়। আলভী মেয়ে গুলোর দিকে বাড়িয়ে দেয় খাম টা। বেশ মোটা সোটা একটা খাম। মায়ার ছোট মামাতো বোন বলে,

“কি আছে এটাতে?”

“টাকা।”

“কত?”

“গুণে দেখো। দেখেছো এখানে কত গুলো টাকা? গুনতে গুনতে রাত পেরিয়ে যাবে তোমাদের।”

“এটার ভেতরে টাকা নেই, নিশ্চই কাগজ কেটে ভরে রেখেছেন নাহলে এতো মোটা কেনো খাম?”

“আল্লাহর কসম এটার ভেতরে টাকাই আছে। যারা গেট ধরবে তাদের জন্য আমি নিজে ব্যাংকে গিয়ে নতুন চকচকে ফ্রেস নোট নিয়ে এসেছিলাম। এই টাকা গুলোর মধ্যে একটা ভাঁজ ও পড়েনি।”

মুরুব্বিদের কথায় খাম টা নিয়ে গেট ছেড়ে দেয় মেয়েরা। সবাই এগিয়ে যায় নিচের দিকে।

মেয়ে গুলো গেস্ট রুমে আসে খুশি মনে। নিশ্চই এক দেড় লাখ টাকা আছে।।
গেস্ট রুমে এসে খাম ছিঁড়ে তো মেয়ে গুলোর মুখের রঙ পাল্টে যায়। বিশ টাকার নোট শুধু। মনে হচ্ছে আট দশ হাজার টাকা হবে।

মায়ার ছোট মামার মেয়ে বলে,

“এভাবে ঠকিয়ে চলে গেল?”

শীতল এসে ওদের কথা শুনে বলে,

“মিষ্টি, শরবত, জুস কিছুই তো খাওয়াসনি তবুও যে এত গুলো টাকা দিয়েছে সেটাই তো বেশি। আমি হলে তো বিশ টাকা দিয়ে আর এক টা টাকাও দিতাম না।”

“মেয়ে পক্ষ হয়ে তুমি এমন কথা কিভাবে বলছো? ওহ সরি তুমি তো আবার পক্ষ বদল করে ছেলে পক্ষে নাম লিখিয়েছ।”

“বেশি কথা না বলে আয় আম্মু ডাকছে তোকে।”
_______

মায়ার হাত ধরে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছেন আহনাফ মাহমুদ। স্টেজের উপর থেকে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আলভী। মায়া নিজেও চোখ তুলে স্টেজের উপর দাঁড়িয়ে থাকা আলভীর দিকে তাকায়। সাথে সাথেই আবার চোখ নামিয়ে নেয় লজ্জায়। গত কাল থেকে ওর ভীষণ লজ্জা করছে।
সিঁড়ির কাছে আসতেই আলভী হাত বাড়িয়ে মায়ার হাত ধরে। আলভীর হাত ধরে উপরে উঠে চেয়ারে বসে মায়া। মায়ার পাশে বসে আলভী।

বড়রা কাজী সাহেব কে নিয়ে স্টেজে উঠে আসেন।
মায়ার সামনে টেবিলের উপর রেজিস্ট্রি পেপার রেখে মায়া কে সই করতে বলা হয়। মেয়ের হাতে কলম তুলে দেন আহনাফ মাহমুদ। কলম টা অন্য সব সাধারণ কলমের মতো না।
সই করার সময় থরথর করে কাঁপতে শুরু করে মায়ার হাত। স্টেজের উপর থাকা সবাই মায়া কে শান্ত হয়ে সই করতে বলে। নার্ভাস নেসের কারণে এভাবে হাত কাপছে। সোজা একটা দাগও দিতে পারছে না কম্পনের কারণে। আলভী মায়ার পিঠে হাত রাখে। মৃদু ভাবে আঙ্গুল গুলো নাড়ায় পিঠে। নিচু স্বরে বলে,

“এত কাপছ কেন? নরমাল হও, লম্বা শ্বাস শ্বাস নিয়ে শান্ত হয়ে সই করো। এখানে তো আমরাই সবাই। নার্ভাস হইও না রিল্যাক্স।

এখন কেনো এভাবে হাত কাপছে জানা নেই মায়ার। আলভীর কথায় লম্বা শ্বাস শ্বাস টেনে নিয়ে একটু থেমে সই করে। তবুও এখনো হাত কাপছে।

আলভী কে সই করতে বলার সাথে সাথেই সই করে দেয়।
তারপর মৌখিক ভাবে আবারো বিয়ে পড়ানো হয় দুজনের। কবুল বলতে গিয়েও মায়ার কন্ঠস্বর কাপছিল। মায়ার কাপতে থাকা একটা হাত আলভীর হাতের মুঠোয়। মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে আলভীর মুখের দিকে তাকায়। আলভী চোখের ইশারায় রিল্যাক্স থাকতে বলে আবারো।

চলবে…………..