হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব-৩৪+৩৫

0
8

#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_34

(কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ)

এয়ারপোর্ট থেকে মায়ার হাত ধরেই বাইরে বেরিয়ে আসে আলভী। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে কয়েক দিন। সব শেষে আজ মায়া কে নিয়ে জার্মানিতে ফিরে এসেছে আলভী।
পার্কিং এ এসে নিজের কার টা দেখতে পায়। এদিক সেদিক নজর বুলায়, শুভ কোথায়?

কারের কাছে এগিয়ে আসে মায়ার হাত ধরে। কিছু সময় পেরিয়ে যায় কিন্তু শুভর দেখা নেই। কার রেখে গায়েব হয়ে গেছে নাকি? বির বির করে কয়েকটা গালি দেয় শুভ কে। এই ছেলে টা কাজের সময় উধাও হয়ে যায় শুধু। কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে এভাবে?
মায়া আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

“পা ব্যাথা করছে আমার।”

“মায়া পরী আর একটু কষ্ট করো শ*য়*তা*ন টা এখনই চলে আসবে।”

কারের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায় মায়া।
আলভী নিজের ফোন বের করে পকেট থেকে। ফ্রি ওয়াই ফাই কানেক্ট করে। তারপর হোয়াটস অ্যাপ থেকে শুভর ফোনে কল করবে ঠিক তখনই শুভ দৌঁড়ে আসে ওদের দুজনের সামনে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে,

“আসসালামু আলাইকুম স্যার, ভালো আছেন?”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ম্যাম আপনি কেমন আছেন?”

“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

আলভী রাগী স্বরে বলে,

“আজকে বাড়ি ফিরে নেই তারপর তোকে দেখাব মজা। কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলি শ য় তা ন?”

“তোদের দেরি হচ্ছে দেখে কফি খেতে গিয়েছিলাম।”

“সারা দিন শুধু খাই খাই।”

“তুই বোধহয় না খেয়েই থাকিস।”

“বাড়িতে নিয়ে যাবি নাকি রাস্তায়ই থাকতে হবে?”

কারের ডোর খুলে দেয় শুভ। মায়া কে আগে বসিয়ে তারপর আলভী বসে। শুভ স্যুটকেস টা ডিকিতে তুলে রেখে ড্রাইভিং সিটে বসে।

একটা ঘণ্টা পর গন্তব্যে এসে পৌঁছায় আলভী দের কার।
কার থেকে নেমে আসে সবাই। আলভী শুভর পেছনে দাঁড়িয়ে শুভর পাছায় লাথি দিয়ে বলে,

“তোর জন্য আমার বউ কে কষ্ট করতে হয়েছে।”

শুভ আলভীর পাছায় আরেক টা লাথি দিয়ে বলে,

“তোদের জন্য আমি রোদের মধ্যে দুই ঘণ্টা বসে ছিলাম। তোরা আসছিলি না দেখে কফি খেতে গিয়েছিলাম।”

আলভী আরেক লাথি দিয়ে বলে,

“এক নাম্বারের মিথ্যুক, এসির ঠান্ডা বাতাসে বসে বলছিস রোদের মধ্যে ছিলি!”

শুভ স্যুটকেস বের করে বাড়ির ভেতরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

“যা তোর সাথে ব্রেকআপ।”

মায়া শুধু দুজনের কাহিনী দেখছে তবে বুঝতে পারছে না কিছু। প্রথমে আপনি আপনি বলে কথা বললো দুজন, একটু পর থেকেই আবার তুই তুকারি করে কথা বলছে। এখন আবার একে অপরকে লাথি দিচ্ছে তাও আবার পাছায়।
আলভী মায়ার হাত ধরে বলে,

“ভেতরে চলো।”

বাড়ির দিকে তাকিয়ে দুজন ছেলে কে দেখতে পায় মায়া যারা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে ওদের দুজনের থেকে একটু দূরে, হয়তো ওকেই ওয়েলকাম করতে দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে আসতেই দুজনে মায়া কে ওয়েলকাম জানিয়ে ফুলের তোড়া মায়ার হাতে তুলে দেয়। এরা দুজন বোধহয় এই বাড়ি আর আলভীর কেয়ারটেকার।

ফুল হাতে আলভীর সাথে ভেতরে প্রবেশ করে মায়া।
ওদের বাড়ির চেয়ে অনেক বড় এই বাড়িটা। আলভী একা থাকার জন্য এত বড় বাড়ি কিনেছে!
ড্রইং রুম টা অনেক বড় আর সুন্দর। সব কিছুই লাইট কালার যার ফলে সব কিছু আরো বেশি সুন্দর লাগছে।

আলভী সাথে বেড রুমে এসে দাঁড়ায়। বেড রুম টা পরিপাটি, গোছানো আর মন শান্ত করে দেওয়ার মতো সুন্দর।

“বোরকা হিজাব খুলে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও ভালো লাগবে তাহলে।”

“হুম।”

মায়া হাতের ফুল গুলো রেখে বোরকা হিজাব খুলে রাখে। স্যুটকেস খুলে নিজের ড্রেস বের করে। আলভী আলমারি থেকে টাওয়েল বের করে দেয়।
মায়া ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। আলভী গায়ের শার্ট খুলে বাস্কেটে রাখে, হাতের ঘড়ি টাও খুলে জায়গা মতো রাখে। তারপর ডিভানের উপর বসে। পকেট থেকে ফোন বের করে বাংলাদেশে কল করে বাবার ফোনে। রিসিভ হতেই কথা শুরু করে জানায় ভালো ভাবেই পৌঁছেছে দুজন, কোনো সমস্যা হয়নি। পরে আবার কল করবে বলে লাইন বিচ্ছিন্ন করে ফোন চার্জে লাগায়।

ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে দুজনেই শুয়ে পড়ে। লম্বা জার্নিতে দুজনেই ভীষণ ক্লান্ত হয়ে আছে। এখন লম্বা ঘুম আর লম্বা বিশ্রামের দরকার।
___________

সারা বিকেল আর রাত ঘুমিয়েছে দুজন।
পরের দিন ভোর পাঁচটায় ঘুম ভাঙ্গে দুজনের।
আলভীর বুকের উষ্ণ ওমে আদুরে বিড়াল ছানার মতো নিজেকে গুটিয়ে নেয় মায়া। আলভী নিজেও আগলে নেয় নিজের মায়া পরী কে।
মায়ার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় ডাকে আলভী।

“মায়া পরী।”

“হুম।”

“সকাল হয়ে গেছে।”

“হোক।”

“আজ অফিসে যেতে হবে আমাকে।”

“আজকে না গেলে হয় না?”

“না গেলে যদি হতো তাহলে তো আসতামই না।”

মায়া আলভীর বুক থেকে মুখ তুলে আলভীর মুখের দিকে তাকায়। ডিম লাইটের আলোয় স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে আলভীর চেহারা।

“আর ত্রিশ মিনিট।”

“আচ্ছা।”

পুনরায় আলভীর বুকে মুখ গুঁজে দেয় মায়া। কাচুমাচু হয়ে আলভীর সাথে মিশে আছে, পারলে বোধহয় আলভীর বুকের ভেতরেই ডুকে যেত।
আলভী যদি মায়া কে রেখে আসতো কিভাবে থাকতো মায়া? আলভী কে ছেড়ে কেঁদে কেঁদেই তো বোধহয়
ম রে যেত। আলভী মায়ার প্রতি যতটা আসক্ত তার চেয়ে অনেক বেশি আসক্ত হয়ে গেছে মায়া আলভীর প্রতি। আলভী কে ছাড়া একটা সেকেন্ড কল্পনা করতে পারে না এখন।

আলভী চিত হয়ে শুয়ে মায়া কে নিজের বুকের উপর তুলে নেয়। মায়ার লম্বা লম্বা খোলা চুল গুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিতে দিতে আলভী বলে,

“তুমি আমার সাথে অফিসে যাবে?”

মায়া মুখ তুলে তাকায়। তারপর উপর নিচ মাথা নাড়ায়, যাবে।
আলভী মায়া কে বুকের উপর রেখেই শোয়া থেকে উঠে বসে। মায়া আলভীর কোলে বসে দুই পা দিয়ে আলভীর কোমড় পেচিয়ে ধরে। দুই হাতে পেঁচিয়ে ধরে গলা।
আলভী মায়া কে কোলে নিয়েই বেড থেকে নেমে দাড়ায়। ওর গলা জড়িয়ে ধরে আর কোমর পেচিয়ে ধরে ঝুলে থাকে মায়া।

“ফ্রেস হয়ে নাও, চলো জগিং করে আসি।”

মায়া দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,

“আমি যাব না তুমি যাও। আমি এমনিতেই চিকন আছি আর চিকন হতে চাই না।”

“তাহলে শুয়ে থাকো, আমি জগিং করে আসি।”

“আচ্ছা।”

মায়া কে আবার শুইয়ে দেয় আলভী। মায়ার ললাটে অধর ছুঁইয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে আলভী। ফ্রেস হয়ে ড্রইং রুমে আসে। কিচেনে প্রবেশ করে একটা হাফ লিটারের পানির বোতল বের করে।
সু কেবিনেট থেকে সুজ পরে পানির বোতল টা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় জগিং করতে।
,
,
নয়টার সময় তৈরি হয়ে নাস্তা সেরে মায়া কে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে আলভী। শুভ কার নিয়ে অপেক্ষা করছে ওদের দুজনের জন্য।

কারের পেছনে উঠে বসে দুজন। কার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্যেশ্যে।

শুভ আলভীর পিএ প্লাস ভার্সিটি ফ্রেন্ড। দুজনেই বাংলাদেশের হওয়ায় বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তারপর আস্তে আস্তে দুজনের সম্পর্ক আরো ভালো হয়। আলভী বিজনেস শুরু করার আগেই শুভ কে বলেছিল শুভ ওর সাথে কাজ করবে কি না! যদি করে তাহলে আলভী শুভ কে অন্য সব অফিসের তুলনায় ভালো স্যালারি দেবে। শুভও ভেবে চিন্তে রাজি হয়েছিল। অফিসে দুজন বস আর পিএ, অফিসে শুভ আলভী কে স্যার আর আপনি আপনি বলে কথা বলে। অফিসের বাইরে দুজনেই তুই তুই করে কথা তো বলেই সাথে শত্রুর মতন মারামারিও করে।
শুভ বিয়ে করেছে, দুজন ছেলে মেয়ে আছে। আলভীর বাড়ির পাশেই শুভর নিজের বাড়ি, বউ বাচ্চার সাথে সেখানেই থাকে।
আলভী বিয়েতে শুভর পুরো ফ্যামিলি কে ইনভাইট করেছিল তবে কাজের চাপে শুভর বিয়ে খেতে যাওয়া হয়নি।

অফিসের সামনে এসে দাঁড়ায় কার। একজন গার্ড কারের ডোর খুলে দেয়। মায়া কে নিয়ে বের হয় আলভী। সম্মানসূচক হাত তুলে স্যালুট করে আলভী কে। আলভী আর মায়া ভেতরের দিকে এগিয়ে যায়। শুভ কার পার্ক করে রেখে ওদের পেছন পেছন আসে।
আলভীর সাথে মেয়ে তার উপর আবার মায়ার পরনে বোরকা হিজাব,সবাই তাঁকিয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে। আলভী সকলের দিকে নজর দিতেই সবাই নিজেদের নজর সরিয়ে কাজে মনোযোগ দেয়।

আলভী মায়া কে নিয়ে নিজের কেবিনে আসে। চেয়ার টেনে মায়া কে নিজের পাশে বসায়।

শুভ কয়েক টা ফাইলস এনে আলভী কে দেখাচ্ছিল এর মধ্যে কেবিনের ডোর নক হয়। তিন জনেই ডোরের দিকে তাকায়, আলভী অনুমতি দিতেই ভেতরে প্রবেশ করে একটি মেয়ে।
মায়া মেয়েটির দিকে তাকায়, পরনে ওয়েস্টার্ন ড্রেস, তবে মার্জিত। কাঁধের নিচ অব্দি থাকা চুল গুলো খোলা রয়েছে। দেখতে বলিউড নায়িকাদের মতো, লম্বাও সেরকমই। গা থেকে রূপ সৌন্দর্য যেন ঠিকরে পড়ছে।
এই মেয়েটার কথাই বোধহয় বলেছিল আলভী।
এই মেয়েটার কাছে মায়ার সৌন্দর্য কিছুই না।

“হাই আলভী।”

“হ্যালো।”

“কেমন আছো?”

“ভালো, আপনি কেমন আছেন?”

“ভালো। ও তোমার ওয়াইফ?”

“হ্যাঁ। মায়া উনি এই কোম্পানির একজন শেয়ার হোল্ডার মিস মেরিনা।”

মায়া মিষ্টি হেসে মেরিনা কে হাই বলে। মেরিনা মুখে জোর পূর্বক হাসি ফুটিয়ে মায়ার সাথে দুটো বাক্য বিনিময় করে।
মেরিনা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মায়ার মুখের দিকে। এই মায়ার মধ্যে কি আছে যা ওর মধ্যে নেই! রূপ সৌন্দর্যই কি সব কিছু নাকি ভাগ্য টাই বড় কথা! বেস্ট কিছু পেতে আসলেও ভাগ্য লাগে যা মেরিনার নেই, ছিল না কখনো।

একটু পর পর মায়ার চোখের পলক ফেলা টা মেরিনার ভালো লাগে। বুকে ব্যাথা করলেও এই দৃশ্য দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। মায়া মেয়ে টা অনেক বেশিই কিউট আর মায়াময়। গভীর চোখ দুটোতে শুধুই মায়া রয়েছে। তাকালেই কেমন মায়া ধরে যাচ্ছে। এই মায়াময় আঁখি যুগল বোধহয় আলভী কে মায়ায় বেঁধেছিল।
মায়া কে দেখে এখন আবার হিংসে হচ্ছে মেরিনার, ওর চোখ দুটো কেনো মায়ার চোখের মতো মায়াময় নয়? ওর চোখ দুটো যদি মায়ার চোখের মতো মায়াময় হতো তাহলে তো আলভী ওর হতো নাকি তাও হতো না?

চলবে……………

#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_35

(কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ)

মেরিনা আলভীর দিকে তাকিয়ে বলে,

“আসছি তাহলে, মিটিং রুমে দেখা হচ্ছে।”

“ওকে।”

মেরিনা আলভীর কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের কেবিনে আসে। আগে মেরিনার বাবা অফিসে আসলেও এখন মেরিনা আসে। ওর বাবার দায়িত্ব এখন মেরিনার।

মেরিনা ফোন হাতে নিয়ে ডায়াল লিস্ট থেকে একটা নাম্বার খোঁজে। হয়তো অনেক নিচে পড়ে গেছে নাম্বার টা।
প্রায় দুই মিনিট পর নাম্বার টা খুঁজে পায়।
একবার রিং হয়ে কে টে যায় রিসিভ হয় না। দ্বিতীয় বার কল করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে আবার ডায়াল করে আর সাথে সাথেই রিসিভ হয়।

ফোনে স্পিকার দিয়ে মুখের সামনে ধরে রাখে ফোন। ফোনের অপর পাশ থেকে ভেসে আসে গমগমে পুরুষালি গলার স্বর,

“হেই মেরিনা কেমন আছো?”

“ভালো।”

“এত গুলো দিন পর আমার কথা মনে পড়ল?”

মেরিনা বলে না কিছু। ফোনের অপর পাশ থেকে বলে,

“কিছু বলবে? বলার থাকলে বলে ফেলো।”

“বলার ছিল কিছু।”

“আমি তো শোনার জন্যই অপেক্ষায় আছি।”

“আপনি আপনার ফ্যামিলি নিয়ে রাতে আমাদের বাড়িতে আসুন।”

অপর পাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ আসে না। হয়তো মেরিনার কথা শুনে বাক্যহারা হয়ে গেছে।

“কথা বলছেন না কেনো মিস্টার চৌধুরী?”

“আপনি আমার ফ্যামিলি কে ইনভাইট করছেন?”

“হ্যাঁ।”

“কিন্তু কেন?”

“আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি। আপনার ফ্যামিলি কে নিয়ে রাতে আমাদের বাড়িতে এসে বিয়ের ডেট ফিক্সড করে যাবেন। আমি এই মাসেই বিয়ে করতে চাই।”

“সত্যি?”

“একদম।”

“তাহলে রাতেই বউ সেজে অপেক্ষা করো, একে বারে তুলে নিয়ে যাব আমার বাড়ি।”

“ভালো থাকবেন, রাতে দেখা হচ্ছে তাহলে।”

লাইন বিচ্ছিন্ন করে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় মেরিনা।
হুট করে কি হয়েছে কে জানে! ওরো এখন বউ সাঁজতে ইচ্ছে করছে, আলভীর জন্য সাঁজতে পারেনি তো কি হয়েছে? অন্য কারো জন্য সাজবে। আলভী কে দেখিয়ে দেবে, আলভী কে ছাড়া মেরিনাও সুখে থাকতে জানে অন্য কারো সাথে।
,
,
অফিস থেকে বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বিকেল সাড়ে পাঁচ টা যায় আলভী আর মায়ার। ওদের দুজন কে বাড়িতে রেখে শুভ নিজের বাড়িতে চলে যায়।

রুমে এসে দুজনেই ফ্রেস হয়ে নেয়।
মায়া ভেজা চুল গুলো না শুকিয়েই বেডে উঠে শুয়ে পড়ে। আলভী মায়ার কাছে এসে ওকে টেনে তুলে বসায়। এলোমেলো চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে মায়ার চেহারায় ক্রিম লাগিয়ে দেয়।
কোলে তুলে এনে ডিভানের উপর বসিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল গুলো শুকিয়ে দেয় নিজেই। তারপর চুল গুলো ব্রাশ করে বেঁধে দেয় উঁচু করে।

মায়ার ভালো লাগে আলভীর এই কেয়ার গুলো। বিয়ের পর থেকে মায়া নিজের হাতে চুল ব্রাশ করে না, মুখে ক্রিম লাগায় না, চুল গুলো শুকায়ও না। সেই ছোট বেলার মতন এলোমেলো হয়ে থাকে। আলভী নিজেই পরিপাটি করে নেয় নিজ দায়িত্বে। মায়া রুমও এলোমেলো করে রেখে দেয়, আলভী নিজেই রুম গোছায় রুম। আলভী কে বিরক্ত করার একটা চান্সও মিস করে না মায়া কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে কোনো ভাবেই আলভী কে বিরক্ত করতে সক্ষম হয় না মায়া।
এই ব্যাটা চুপ চাপ সব কিছু মুখ বুজে বিনা বাক্যে মেনে নেয়।

আলভী নিজের চুল গুলো শুকিয়ে ব্রাশ করে নেয়।
একটু পরেই রুমের ডোর নক হয়, আলভী ডোর খুলে কফির মগ দুটো হাতে নিয়ে রুমের ভেতরে চলে আসে।
মায়া আলভীর দিকে তাকিয়ে বলে,

“আমরা কেউ তো কফি চাইনি, তাহলে কফি দিয়ে গেল কেন?”

“ওরা জানে আমি কখন কি খাই, তাই আলাদা করে বলতে হয় না।”

মায়া ঠোঁট দুটো গোল করে “ওওও” বলে।

আলভী একটা কফির মগ মায়ার হাতে দেয়। তারপর মায়ার পাশে বসে বাম হাতে মায়ার কোমড় পেচিয়ে ধরে কফির মগে চুমুক দেয়।

কফি খাওয়া শেষ করে বাংলাদেশে কল করে মায়া।

মেয়ের কল পেয়ে খুশি হয়ে রিসিভ করেন আহনাফ মাহমুদ।
বাবার মুখ দেখতেই মায়ার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। মনের জমানো কথা গুলো কেমন যেন দলা পাকিয়ে যায়।
আহনাফ মাহমুদ ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে হাসি মুখে বলেন,

“কেমন আছিস মা? আলভী কোথায়?”

আলভী আবার মায়ার সাথে ঘেঁষে বসে ফোনের স্ক্রিনে তাকায়।
মায়া ধরা গলায় বলে,

“ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“আম্মু কোথায়?”

মেহবুবা মেহের স্বামীর হাত থেকে ফোন নিয়ে মুখের সামনে ধরেন। মা কে দেখেই মায়ার দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
মেয়ের চোখে পানি দেখে মেহবুবা মেহের এর চোখেও পানি চলে আসে।
কান্না চেপে রাখতে না পেরে কেঁদেই দেয় মায়া।
মায়ার হাত থেকে ফোন নেয় আলভী। মায়া কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করে। ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে বলে,

“তোমাদের কথা মনে করে আর একটু পর পর কাঁদে।”

“আমাদের ছেড়ে তো দূরে কোথাও কখনো থাকেনি।”

“মাত্র তিন মাস, তার পর তো আবার ফিরেই যাবে।”

“ফিরে আসার পরেও দেখবে আবার কাদঁছে।”

“এখন আবার তুমি কাদঁছো কেন?”

মেহবুবা মেহের এর হাত থেকে ফোন নেন আহনাফ মাহমুদ। ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে বলেন,

“গত কাল সারা রাত কেঁদেছে, আজকেও সারা দিন একটু পর পর নাকি কেঁদেছে। মায়ার সাথে কথাও বলেছে কয়েক বার তার পরেও কেঁদেছে। এখন আবার কাদঁছে।”

আলভী কিছু না বলে ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে রইলো। এপাশে মেয়ে কাদঁছে অপর পাশে মা কাদঁছে।
ঐশী রহমানও ছেলের জন্য একটু পর পর কাদছেন। তেরো বছর পর ছেলে কে কাছে পেয়েছিলেন, এক মাস বারো দিন থেকেই চলে এসেছে আবার। শুধু মাত্র মায়ার ভিসা আর টিকেটের জন্য বারো দিন বেশি থেকেছে। নাহলে এই বারো দিন বেশিও থাকা হতো না।

অল্প কথা বলে কল কে টে দেয় আলভী।
ফোন রেখে মায়ার মুখোমুখি হয়ে বসে। মায়ার মুখ আগলে ধরে বলে,

“এভাবে কাদতে হয়?”

“বাড়ির সকলের কথা ভীষণ মনে পড়ছে।”

“তিন মাসই তো।”

“তখন তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকব?”

“সামনের বোর্ড মিটিং এ সকলের সাথে কথা বলবো। যত দ্রুত সম্ভব এখানের সব কিছুর দায়িত্ব শুভ কে দিয়ে আমিও বাংলাদেশে ফিরে যাব তোমার কাছে। এখানে তখন বছরে দুই তিন বার আসবো শুধু কয়েক দিনের জন্য। এখন কান্না বন্ধ করো।”
_______________

জার্মানিতে এসেছে আজ আজ পঞ্চম দিন।
আলভীর বাড়িতে আজ জাঁকজমক পূর্ণ বিরাট বড় পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। পার্টিতে আমন্ত্রিত হয়েছে আলভীর বিজনেস পার্টনার সহ আরো অনেক বিজনেস ম্যানরা সাথে ওর অফিসের সকল স্টাফ।

সন্ধ্যার মধ্যে সকল অতিথিরা এসে উপস্থিত হয়েছে আলভীর বাড়ির হল রুমে।

অতিথিরা আলভীর ওয়াইফ কে দেখতে চাইলে আলভী সবাই কে ওয়েট করতে বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে। নিজের রুমে এসে দেখে মায়া চুপ চাপ বসে আছে। মায়ার পাশে বসে আছে শুভর ওয়াইফ। মায়ার পরনে হোয়াইট বার্বি গাউন। সাথে অফ হোয়াইট হিজাব বাঁধা। মায়া কে দেখতে আজ পুরোপুরি পরীর মতোই লাগছে। মায়ার দিক থেকে চোখ ফেরানো দায়।

আলভী মায়ার হাত ধরে দাঁড় করায়। গাউনের ভারে মায়া ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারছে না। এর আগে এত ভারী ড্রেস কখনো পড়েনি। একে তো ভারী গাউন তার উপর পড়েছে হিল। আস্তে আস্তে হেঁটে সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়ায় দুজন। নীচ থেকে সবাই তাঁকিয়ে আছে দুজনের দিকে। আজ আলভীর গায়ে হোয়াইট স্যুট প্যান্ট। মায়া নিচে থাকা সকলের দিকে একবার তাকায়। অনেক মেয়ের ড্রেস অনেক খোলামেলা।
হাতে গোনা কয়েকজন বাঙ্গালী তাছাড়া বাকি সবাই জার্মান নাগরিক নয়তো অন্য দেশের।

আলভীর হাত ধরে ধীর পায়ে হেঁটে নিচে নেমে আসে মায়া।
আলভী সকলের সাথে পরিচয় করায় মায়ার। অনেকে মায়ার সাথে টুকটাক কথা বলে। ইচ্ছে না থাকলেও কথা বলে মায়া।

এত অপরিচিত মানুষের মধ্যে অস্বস্তি ফিল হচ্ছে মায়ার। তার মধ্যে মেয়ে গুলোর ড্রেস কেমন, আবার অনেক ছেলে ওর দিকে তাকাচ্ছে একটু পর পর। আলভী বুঝতে পারে মায়ার অবস্থা।

পার্টি শেষ হতে হতে রাত বারোটা বেজে যায়। এগারোটার পর থেকেই গেস্টরা চলে যেতে শুরু করেছিল। বারোটার মধ্যে সবাই চলে যায়। আলভী সকল কে বিদায় দিয়ে মায়ার কাছে আসে।

মায়া সোফায় বসে পড়েছে পায়ের ব্যাথায়। হিল খুলে নিজের পা দুটো দেখছে। আলভী আসায় গাউন ছেড়ে আলভীর মুখের দিকে তাকায়।

আলভী মায়ার পায়ের কাছে বসে গাউন উঁচু করে পায়ের দিকে তাকায়। পা দুটো লাল হয়ে গেছে।

“অনেক ব্যাথা করছে?”

“হুম।”

“রুমে চলো।”

মায়া আলভীর হাত ধরে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। আলভী মায়া কে পাঁজা কোলে তুলে নেয়।

“হেঁটেই যেতে পারব আমি।”

“হাঁটতে হবে না।”

মায়া কে নিয়ে রুমে আসে। নিজেই মায়ার হিজাব খুলে দেয়। হালকা ড্রেস এনে ডিভানের উপর রাখে তারপর মায়ার গাউন খুলতে সাহায্য করে। পড়তে এক কামলা, খুলতে এক কামলা লাগে।

গাউন খুলে কটনের সফট একটা ফ্রক গায়ে জড়ায় মায়া। আলভী নিজের স্যুট খুলতে খুলতে বলে,

“হাত মুখ ধুয়ে আসো।”

দুজনেই ফ্রেস হয়।
মায়া বেডে উঠে শুয়ে পড়ে। আলভী অলিভ অয়েল এর বোতল নিয়ে বেডে বসে মায়ার পায়ের কাছে। হাতের তালুতে অয়েল নিয়ে মায়ার পা দুটো নিজের কোলের উপর তুলে নেয় ম্যাসাজ করার জন্য। মায়ার চোখ লেগে এসেছিল, পায়ে ছোঁয়া পেতেই ফট করে চোখ মেলে তাকায়। দ্রুত পা সরিয়ে নিয়ে বলে,

“কি করছো তুমি? পায়ে হাত দিচ্ছ কেন?”

“ম্যাসেজ করলে ব্যাথা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে, পা দাও এখন।”

“ম্যাসাজ করতে হবে না, ব্যাথা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।”

“বেশি কথা না বলে পা দাও।”

নিজেই মায়ার পা দুটো টেনে সোজা করে কোলের উপর তুলে নেয় আবার। তারপর ম্যাসাজ করতে শুরু করে। মায়া কিছু না বলে আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ম্যাসাজ করায় আরাম লাগছে এখন।
আলভী খেয়াল করে মায়ার দুই পায়ের দুই আঙ্গুলে ফোসকা পড়ে গেছে হিল পড়ে থেকে।
বিয়ের সময় যেই হিল গুলো পড়েছিল সেগুলো পড়ে তো ফোসকা পড়েনি এভাবে, তাহলে এগুলো পড়ে এমন পা ব্যাথা হয়েছে কেনো আর ফোসকা পড়েছে কেন? কয়েক সেকেন্ডেই কারণ উদঘাটন করে ফেলে আলভী।

কিছু সময় পর আলভী মায়ার মুখের দিকে তাকায়। দেখে মায়া একদৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আলভী কপাল ভ্রু নাচিয়ে বলে,

“আসবো?”

মায়া কপাল ভ্রু কুঁচকে বলে,

“কোথায়?”

“আদর করতে।”

বলেই হাসে আলভী। মায়া পাশ থেকে আলভীর বালিশ টা তুলে নিজের মুখ ঢেকে নেয়। দুই হাতে বালিশ টা জড়িয়ে ধরে বলে,

“আদর লাগবে না আজ।”

আলভী অলিভ অয়েল এর বোতলের ছিপি লাগিয়ে নিচে রেখে দেয়। তারপর মায়ার মুখের উপর থেকে টেনে বালিশ টা সরিয়ে নিয়ে নিজেই মায়ার উপর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। মায়ার ঘাড়ে মুখ গুজে বলে,

“বালিশ কে জড়িয়ে না ধরে আমাকে জড়িয়ে ধরো। তুমি বালিশ জড়িয়ে ধরলে আমার ভীষণ হিংসে হয়। ওদের জন্য তুমি মাঝে মধ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরো না। ব্যাটা দের কালকেই এই রুম ছাড়া করবো আমি। তখন ওদের না পেয়ে বাধ্য হয়ে আমাকেই জড়িয়ে ধরবে প্রতিবার।”

চলবে…………..