হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব-৩৬+৩৭

0
2

#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_36

(কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ)

রোজ অফিসে যাওয়ার সময় মায়া কে সাথে নিয়ে অফিসে যায় আলভী। মায়া একা একা সারা দিন কি করবে বাড়িতে? বাড়িতে একা একা থাকলে কেঁদে
কে টে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলবে।

জার্মানিতে এসেছে পনেরো দিন হয়ে গেছে।
প্রতিদিনের মতো জগিং করে বাড়িতে ফিরে আসে আলভী। রুমে এসে দেখে মায়া এখনো ঘুমিয়ে আছে। দুজন গোছল করে একসাথেই ফজরের নামাজ আদায় করেছিল। বাহিরে একটু একটু আলো ফোটার পর আলভী জগিং করতে বেরিয়েছিল আর মায়া আবার ঘুমিয়েছে।

ফ্রেস হয়ে এসে মায়া কে টেনে ওঠায় ঘুম থেকে। উঠে ঝিম ধরে বসে রইলো মায়া। ঘুমে তাকাতে পারছে না এখন। আলভী কোলে তুলে ওয়াশরুমে রেখে আসে মায়া কে। রুমের একপাশে দেয়ালের বদলে পুরোটাই গ্লাস দেওয়া। গ্লাসের সামনে থেকে পর্দা সরিয়ে দিতেই পুরো রুম আলোকিত হয়ে যায় বাইরের আলোয়।

হেঁটে বেডের কাছে এসে দাঁড়ায়। বেড গুছিয়ে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসে।

আলভী নিচে নেমে আসতেই কলিং বেল বেজে ওঠে।
একজন কেয়ারটেকার এগিয়ে যায় ডোরের দিকে। ডোর খুলে দিতেই ভেতরে প্রবেশ করে মেরিনা।
আলভী মেরিনা কে দেখে কপাল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। এত সকাল সকাল মেরিনা এখানে কেন? সবে মাত্র সাত টা বাজে এখন।
আলভীর কাছে এসে দাঁড়ায় মেরিনা। হাসি মুখে বলে,

“কেমন আছো আলভী?”

“আলহামদুলিল্লাহ , আপনি?”

“ভালো।”

আলভী সোফার দিকে ইশারা করে বলে,

“বসুন।”

মেরিনা আলভীর সাথেই সোফায় বসে একটু দুরত্ব বজায় রেখে।
মেরিনা বলে,

“মায়া কোথায়? ওকে দেখছি না যে।”

“রুমে রয়েছে, আসছে।”

” তুমি হয়তো ভাবছো আমি এত সকাল সকাল এখানে কেন! আমি তো রাতেই আসতে চেয়েছিলাম তারপর আবার ভাবলাম এত রাতে এসে আর তোমাদের বিরক্ত করবো না তাই সকালের অপেক্ষায় ছিলাম।”

“কিছু হয়েছে?”

“সামনের ত্রিশ তারিখে আমার আর জেমি চৌধুরীর বিয়ে।”

আলভী খুশি হয়ে বলে,

“কনগ্রাচুলেশন।”

মেরিনা বিয়ের ইনভিটেশন কার্ড আলভীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

“আমাদের বিয়ের প্রথম ইনভাইট আমি তোমাদের দুজন কে করতে এসেছি। তোমরা দুজন কিন্তু অবশ্যই আসবে। তোমাদের দুজনের অপেক্ষায় থাকবো আমি।”

“ইনশা আল্লাহ অবশ্যই আসবো।”

“আসি তাহলে ভালো থেকো, আগামী কাল অফিসে দেখা হচ্ছে।”

“ব্রেকফাস্ট করে যাও।”

“নো থ্যাঙ্কস। জেমি অপেক্ষা করছে আমার জন্য।”

মেরিনা বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। আলভী বিয়ের কার্ডের উপর নজর বুলায়। মেরিনা বিয়ে করছে শুনে খুশিই লাগছে।
মায়া নিচে নেমে এসে আলভীর দিকে তাকায় তারপর আবার হাতে থাকা কার্ডের দিকে তাকায়।

“কিসের কার্ড এটা?”

আলভী মুখ তুলে মায়ার মুখের দিকে তাকায়। মায়া কে টেনে কোলের উপর বসিয়ে ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে বলে,

“মেরিনার বিয়ের কার্ড। আমাদের ইনভাইট করে গেল।”

“কখন এসেছিল?”

“একটু আগেই।”

মায়া কার্ড টা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে।
আলভী মায়া কে আরেকটু চেপে ধরে বলে,

“চলো লং ড্রাইভে যাই।”

“কোথায়?”

“তুমি যেখানে যাবে।”

“আমি কি কিছু চিনি নাকি এখানকার?”

“আচ্ছা আমিই নিয়ে যাব আমার পছন্দের জায়গায়। এখন চলো খেয়ে নিই, খিদে পেয়েছে।”

মায়া আলভীর কোল থেকে নেমে দাড়ায়। কার্ড টা টিটেবিলের উপর রেখে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ওদের দুজনের জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে সব কিছু গুছিয়ে রাখা হয়েছে ডাইনিং রুমে।

আলভী মায়া কে নিজ হাতে খাইয়ে দেয় নিজেও খায়।

খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দুজনেই তৈরি হয়ে নেয়। মায়া লাইট পিঙ্ক আর হোয়াইট কম্বিনেশনের গাউন পড়ে হোয়াইট কালার হিজাব বেঁধেছে। আলভী হোয়াইট শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট পড়েছে।

দুজন এক সাথেই বাড়ি থেকে বের হয়। আলভী গ্যারেজ থেকে কার বের করে আনে। মায়া উঠে বসতেই কার ছুটে চলে অজানা গন্তব্যে।

কার অটো ড্রাইভিং মুডে দিয়ে মায়া কে টেনে আনে নিজের কাছে। মায়া ছটফট করে বলে,

“কি করছো ছাড়ো। এটা রাস্তা তোমার বেড রুম না।”

“চুমু খাওয়ার জন্য বেড রুমের প্রয়োজন হয় না মায়া পরী।”

“আমার এখন চুমু চাই না, ছাড়ো আমাকে।”

“তুমি না চাইলে কি হবে, আমি তো চাই।”

মায়ার কোনো কথা শোনে না আলভী। জোর করেই মায়ার অধর যুগল চেপে ধরে নিজের অধর জোড়া দিয়ে। কয়েক মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে বলে,

“ঘোরাঘুরি বাদ, চলো বাড়ি ফিরে যাই।”

মায়া কপাল ভ্রু কুঁচকে বলে,

“কেন? তুমি না বললে লং ড্রাইভে যাবে!”

“আর লং ড্রাইভ, আমার এখন আদর করতে ইচ্ছে করছে।”

মায়া আলভীর কাছ থেকে দূরে সরে এসে নিজের সিটে বসে আবার সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে,

“এমন কিছু করলে আগামী এক মাস তুমি আমার ধারে কাছেও আসবে না। ভদ্র লোকের মত যেখানে যেতে চেয়েছো সেখানে নিয়ে চলো।”

“বউ টা বাঙ্গালী হয়েও ব্রিটিশ দের মতোন আচরণ করে।”

মায়া কিছু না বলে বাইরের দিকে তাঁকিয়ে থাকে।
আলভী হতাশার শ্বাস ছেড়ে নিজে কার ড্রাইভ করতে করতে বলে,

“আজকে শুধু বাড়ি ফিরে নেই।”

মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।

“বাড়ি ফিরে কি করবে?”

“আদর।”

সুর ধরে টেনে টেনে বলে কথাটা। মায়া আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে,

“জিকির শুরু করেছে আদর আদর। আল্লাহর নাম টাও তো নিতে পারো।”

“ও আল্লাহ তোমার এই বান্দির মনে একটু দয়া মায়া দাও। জামাই কে শুধু ব্ল্যাকমেইল করে কথায় কথায়। আমার একটা কথাও শোনে না। খালি ভয় দেখায় আমাকে।”

বড় বড় চোখ করে তাকায় মায়া। বোঝাই যাচ্ছে আলভীর কথা শুনে সেই লেভেলের অবাক হয়েছে।
,
,
ঘুরে ফিরে মাঝরাতে বাড়ি ফিরে আসে দুজন।
ডিনার সেরেই এসেছে এখন শুধু ফ্রেস হয়ে শুতে পারলেই হয়, দুজনেই ভীষণ টায়ার্ড।
দুজনের সারা দিন আজ অনেক ভালো কে টে ছে।

দুজন একসাথেই শাওয়ার নেয়।

মায়া ভেজা চুল নিয়েই শুয়ে পড়তে চাইলেও আলভী শুতে দেয় না। হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে তারপর শুতে দেয়। ওর ছোট ছোট চুল গুলো ফ্যানের বাতাসেই শুকিয়ে গেছে। লাইট অফ করে মায়া কে বুকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপ হয়ে যায়।
_______________

আজ ত্রিশ তারিখ, মেরিনা আর জেমির বিয়ে। কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
মায়া আলভী সেন্টারের ভেতর প্রবেশ করে একে অপরের হাত ধরে।

বিয়ে পড়ানোর সময় হয়ে আসে। মেরিনার হাত ধরে ওর বাবা স্টেজে নিয়ে আসে মেরিনা কে।
মেরিনা আজ পশ্চিমা দের মতো করে বউ সেজেছে তবে ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে। সকলের নজর মেরিনার দিকে। মেরিনা জেমির দিকে একবার তাকিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সকলের দিকে তাকায়। সকলের সামনেই মায়া আলভী একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
দুজন কে ম্যাচিং ড্রেসে ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে। দুজন কে পাশাপাশি সব সময় সুন্দর লাগে। এরা দুজন একে অপরের জন্যই তৈরি।
মেরিনার আজও মনে হচ্ছে আলভী ওর হলে কি এমন ক্ষতি হতো!
এরকম ভাবা টাও এখন অন্যায়। দুজনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে জেমির দিকে তাকায় আবার।
এখন থেকে ওর সব ভাবনায় সব সময় জেমি থাকবে। ও যাকে ভালোবেসেছে তাকে না পেল, ওকে যে ভালোবেসেছে সে তো ওকে পাবে।

বিয়ে শেষ করে নয়টার পর পর মেরিনা জেমি আর ওদের পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসে আলভী মায়া।

শুভ ওদের দুজন কে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নিজের ফ্যামিলি নিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায়।

মায়া ফ্রেস হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মুখে ক্রিম লাগাচ্ছিল। আলভী এসে মায়ার পেছনে দাঁড়ায়। মায়ার উন্মুক্ত ঘাড়ে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে।
মায়া বিরক্তি ভঙ্গিতে ঘাড় ঘুরিয়ে আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোমার সমস্যা কি? সব সময় এমন করো কেন? দূরে সরো।”

আলভী দূরে সরে না, উল্টো মায়া কে জাপটে ধরে। মায়ার ঘাড়ে ঠোঁটে ছুঁইয়ে কানের লতিতে চুমু খায়। ফিসফিস করে বলে,

“বাবু চাই।”

“বাবুর নাম করে বার বার কাছে আসার বাহানা আমি কি বুঝি না নাকি?”

“এত বুজে কি হবে যদি হাসবেন্ডের মন বুঝতে না পারো!”

“সবই বুঝি আমি, এখন আমার ঘুম পেয়েছে ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”

আলভীর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বেডের দিকে আগায়। আলভী দ্রুত গিয়ে মায়ার জামার জিপার খুলে দেয়। মায়া ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,

“তুমি দিন দিন অশ্লীল হয়ে যাচ্ছ।”

“বউয়ের সাথে রোম্যান্স করলে যদি অশ্লীল হয়ে যাই তাহলে আমি অশ্লীলই। এখন বেশি কথা না বলে কাছে আসো আদর করি।”

মায়া কে টেনে নিজের উন্মুক্ত বুকের সাথে মিশিয়ে উঁচু করে বেডের দিকে আগায়।

চলবে………….

#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_37

(কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ)

সময় গড়ায়, দিন, সপ্তাহ, মাস পেরিয়ে যায়।
দেখতে দেখতে প্রায় তিন মাস হয়ে গেল মায়া জার্মানিতে এসেছে। আজকে রাত আটটায় মায়ার ফ্লাইট। এখন বিকেল সাড়ে তিন টা। সব কিছু প্যাকিং করা হয়েছে সকালেই। আলভী বড় বড় স্যুটকেস তিন টা ড্রইং রুমে এনে রাখে।
তারপর আবার রুমে ফিরে আসে। মায়া ওয়াশরুমে রয়েছে, শাওয়ার নিচ্ছে। আলভী নিজেও ওয়াশরুমের ভেতরে প্রবেশ করে।

শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে দুজন।
রোজকার মতন আলভী নিজেই মায়ার চুল গুলো মুছে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে দেয়। তারপর নিজের চুল গুলোও শুকিয়ে নেয়। মায়ার চুল গুলো ব্রাশ করে খোঁপা বেঁধে দেয় নিজেই। আগে খোঁপা বাঁধতে পারতো না, এখন শিখে গেছে।

যত্ন করে মায়ার চেহারায় ক্রিম লাগিয়ে দেয়। হাতে, গলায়, পায়ে লোশন দিয়ে দেয়। গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় নিজেই লাইট লিপস্টিক দিয়ে দেয়। আরেকটু ঝুঁকে ঠোঁট জোড়ায় বেশ অনেক গুলো চুমু খায়।
মায়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আলভীর দিকে। ওর ভেঙে চুরে কান্না আসছে। কান্না আটকে রাখার কারণে চোখ মুখ লাল হয়ে উঠছে আবার।

আলভী মায়া কে দার করায় তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আলভী কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ওঠে মায়া।
মায়া কাদলেও আলভী কাদতে পারছে না, ছেলেদের যে কাদতে নেই।

একে অপর কে জড়িয়ে ধরে রেখেই অনেক টা সময় পেরিয়ে যায়।
আলভীর ফোনে রিং বেজে ওঠে। মায়া কে জড়িয়ে ধরে রেখেই বেডের কাছে এগিয়ে এসে ফোন হাতে তুলে নেয়। শুভ কল করেছে, রিসিভ করে কানে ধরে বলে,

“বল।”

“কখন বের হবি?”

“পাঁচটায়।”

“পাঁচ টা বাজতে আর পঁচিশ মিনিট বাকি আছে।”

“ড্রইং রুমে স্যুটকেস রাখা আছে ওগুলো কারে তোল, আমরা আসছি একটু পর।”

“আচ্ছা।”

কল কে টে ফোন আবার বেডের উপর রেখে দেয়। আলভী হাত বাড়িয়ে টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু পেপার নেয় হাতে। বুক থেকে মায়ার মুখ তুলে দুই গাল মুছিয়ে দেয়। টিস্যু ফেলে দুই হাতে আগলে ধরে মায়ার মুখ।
মায়া হেঁচকি তুলতে তুলতে আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের মুখ আগলে ধরে রাখা আলভীর হাত দুটো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। চোখ দুটো দিয়ে ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
হাত দিয়ে আবারও গাল মুছিয়ে দেয় আলভী। মায়ার সারা মুখে অসংখ্য চুমু খায়। মায়ার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,

“কেঁদো না, তুমি কাঁদলে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না।”

মায়া কাদতে কাদতে বলে,

“তুমি চলো আমার সাথে।”

“যাব তো, নতুন অফিসের কাজ শেষ হতে আর আড়াই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। ওটা চালু হলেই আমি ফিরে যাব তোমার কাছে। তেরো বছর অপেক্ষা করতে পেরেছো, এখন তিন টা মাস পারবে না?”

মায়া আলভী কে জড়িয়ে ধরে বলে,

“তোমাকে ছাড়া তিন টা মিনিটও থাকতে পারি না এখন, তিন মাস কিভাবে থাকব?”

“চোখের পলকে তিন মাস পেরিয়ে গেছে, সামনের তিন মাসও চোখের পলকে পেরিয়ে যাবে। বাড়িতে তো সবাই আছে, আর কেঁদো না।”

“তুমি একা একা কিভাবে থাকবে?”

“একা একা থাকার অভ্যাস আছে আমার। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে রেডি হতে হবে দ্রুত আসো।”

মায়া কে উঁচু করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এনে দাঁড় করায়। আলমারির ভেতর থেকে মায়ার বোরকা হিজাব নেকাব বের করে দেয় আলভী নিজেই।
বোরকা টা পরিয়েও দেয় নিজেই। টিস্যু বক্স থেকে আবার টিস্যু এনে মায়ার সারা মুখ মুছিয়ে দেয়।
মায়া হিজাব বাঁধতে শুরু করে। আলভী আলমারি থেকে নিজের শার্ট প্যান্ট বের করে পড়ে নেয়।

দুজন একসাথেই তৈরি হয়।

মায়ার ফোন, পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট আলভী মায়ার হ্যান্ড ব্যাগে ভরে দেয়। মায়া কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রুম থেকে বের হয়। ঘাড় ঘুরিয়ে রুমের ভেতরে তাকায় মায়া। তিন মাস এই রুমে ছিল আলভীর সাথে, রুমের প্রতিও ভীষণ মায়া জমে গেছে। টুপ টাপ আবারও চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে।
হাতে থাকা টিস্যু পেপার দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে নিচে নেমে আসে। ড্রইং রুমে কেয়ারটেকার দুজন, শুভ আর শুভর ফ্যামিলি ওদের অপেক্ষায় বসে আছে। সবাই একসাথে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে।

কেয়ারটেকার দুজন আর শুভর বউ বাচ্চার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আলভীর সাথে কারে উঠে বসে মায়া। শুভ ড্রাইভিং সিটে বসে। মায়া আরেক বার বাড়িটার দিকে তাকায়। নিজের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় যেমন কান্না আসছিল এখনও তেমন কান্না আসছে। ওদের দুজনের সবচেয়ে সুন্দর একান্ত সময় গুলো কে টে ছে এই বাড়িতে। দুজনের ভালোবাসা, খুনসুঁটি গুলো স্মৃতি হয়ে যাবে এখন।

কার স্টার্ট দিয়ে ছুটে চলে এয়ারপোর্টের দিকে। এক ঘন্টা সময় লাগবে এয়ারপোর্টে পৌঁছোতে।
আলভী এক হাতে মায়া কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রাখে। মায়া এক হাতে আলভীর কোমড় পেচিয়ে ধরে অন্য হাতে আলভীর হাত শক্ত করে ধরে রাখে।
আলভী একটু পর পর মায়ার মাথায় চুমু খায়, গাল ঠেকিয়ে রাখে। মায়া এখন আর কাদঁছে না। চুপ চাপ আলভীর বুকে ঘাপটি মে রে আছে।
,
,
এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছেছে কিছুক্ষণ আগেই।
ইমিগ্রেশনের জন্য এখন ভেতরে আগাতে হবে। মায়া আলভী কে ছাড়ছে না। শক্ত করে যে জড়িয়ে ধরেছে তো ধরেছেই, কোনো ভাবেই ছাড়ছে না। ইমিগ্রেশনের সময় ঘনিয়ে আসছে। সবাই এগিয়ে যাচ্ছে ভেতরের দিকে।
আলভী মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে থেমে থেমে বলে,

“মায়া পরী শান্ত হও। দেরি হয়ে যাচ্ছে ভেতরে যেতে হবে। তিন মাসই তো, দেখবে চোখের পলকে পেরিয়ে গেছে। শান্ত হও আর ভেতরে যাও।”

মায়া দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,

“আমার এখনই দম বন্ধ হয়ে আসছে, তোমাকে ছাড়া তিন মাস আমি কিভাবে থাকবো?”

“বাড়িতে সবাই আছে তো। ভার্সিটি যাওয়া আসা করবে, কোথা দিয়ে দিন পেরিয়ে যাবে তুমি বুঝতেই পারবে না।”

অনেক বোঝানোর পর আলভী কে ছেড়ে দেয় মায়া। প্যান্টের পকেট থেকে টিস্যু পেপার বের করে মায়ার নেকাব একটু তুলে চোখ গাল মুছিয়ে দেয় আলভী। নতুন টিস্যু পেপার মায়ার হাতে দেয়। হ্যান্ড ব্যাগ থেকে মায়ার পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট বের করে মায়ার হাতে দেয়। হ্যান্ড ব্যাগ টা নিজেই মায়ার কাধে ঝুলিয়ে দেয়। ট্রলি মায়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভেতরের দিকে পাঠিয়ে দেয়।
এগিয়ে যেতে যেতে বেশ কয়েক বার পেছন ফিরে তাকায় মায়া। আলভী মুখে মাস্ক আর চোখে সানগ্লাস পড়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
দুদিনেই দুজনের দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যায়।

আটটার পর আলভী চোখ মুছতে মুছতে এয়ারপোর্টের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। পার্কিং এ দাঁড়িয়ে আছে শুভ। শুভ কে দেখে সানগ্লাস আবার পড়ে নেয় আলভী। শুভ কারের ডোর খুলে দেয়, আলভী মুখে কিছু না বলে হাত দিয়ে পেছনের ডোর খুলে দিতে বলে। শুভ পেছনের ডোর খুলে দিতেই কোনো কথা না বলে সোজা কারে উঠে বসে আলভী।
শুভ নিজেও কিছু না বলে ড্রাইভিং সিটে বসে কার স্টার্ট দেয়।
আলভী মাহিরের ফোনে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয় “মায়ার ফ্লাইট টেকঅফ করেছে।”
প্লেন ফ্লাই করার পরেই আলভী এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে এসেছে। যতক্ষণ মায়া এই দেশের মাটিতে ছিল ততক্ষণ আলভী আগের মতোই দাঁড়িয়ে ছিল। প্লেন ফ্লাই করার পরেই বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
,
,
কার গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
আলভী কার থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে এসে ডোর লক করে দেয়। মায়া হীন রুমের চারো দিকে নজর বুলিয়ে হাটু মুড়ে বসে পড়ে ফ্লোরে। এতক্ষণ ধরে আটকে রাখা কান্না এখন আর কোনো ভাবেই আটকে রাখতে পারে না। মায়ার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে দুই হাতে মুখ ঢেকে ঝরঝর করে কেঁদে ওঠে। আজকের মতো এত কষ্ট এই জীবনে বোধহয় আর অনুভব হয়নি। এত কষ্ট হচ্ছে যে ওর জান বেরিয়ে যেতে চাইছে। ভেতর টা ফেটে যাচ্ছে, অনেক কষ্টে এতক্ষণ নিজেকে শান্ত রেখেছিল শুভর সামনে।
_____________________

দুপুর এক টার পর নিজের পরিবারের সাথে দেখা হয় মায়ার। মাহির, মাহিদ, আলতাফ মাহমুদ, আহনাফ মাহমুদ এসেছে মায়া কে নেয়ার জন্য। মায়া এগিয়ে এসে বাবা কে জড়িয়ে ধরে।
কে কেমন আছে জিজ্ঞেস করে। কুশল বিনিময় শেষ হতেই মাহিরের ফোনে রিং বেজে ওঠে।

আলভী ভিডিও কল করেছে। মাহির কল রিসিভ করে ফোন মুখের সামনে ধরে।
ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে আলভীর শুকনো মলিন মুখ।
আলভী বলে,

“মায়া পৌঁছেছে?”

“হ্যাঁ, মাত্র আসলো আমাদের কাছে।”

“ওর কাছে দাও।”

মায়ার কাছে ফোন দেয় মাহির। মায়া ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে আলভীর শুকনো মলিন চেহারা দেখতে পায়।
মায়ার চোখ দুটো পানিতে টুইটুম্বর হয়ে যায়।
আলভী মায়ার চোখ দুটো দেখেই বুঝতে পারছে একটু আগেও মায়া কেঁদেছে, এখন আবার কেঁদে দেবে।
আলভী জড়ানো গলায় বলে,

“কেমন আছো?”

মায়া কিছু না বলে ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে থাকে। আলভী আবার বলে,

“খারাপ লাগছে?”

মায়া একটা কথাও বলতে পারে না, শুধু দুদিকে মাথা নাড়ায়, খারাপ লাগছে না।
ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে কেঁদে ওঠে মায়া। আলভী কল কে টে দেয়। মাহির বোনের হাত থেকে ফোন নিয়ে এক হাতে বোন কে আগলে ধরে এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার জন্য আগায়। সাথে বাকি তিন জন আগায়।
আলভী ম্যাসেজ পাঠিয়েছে, বাড়িতে গিয়ে ফ্রেস হয়ে মায়া কে কল করতে বলেছে।

আলভী বেড থেকে নেমে দাড়ায়। সারা রাত ঘুমোতে পারেনি। চোখ বন্ধ করলেই এয়ারপোর্টের দৃশ্য টুকু চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এত দিনের কা টা নো স্মৃতি গুলো ভেসে উঠছে। গা ম্যাজম্যাজ করছে এক রাতেই। একটুও ভালো লাগছে না। মায়ার কান্না দেখে ওরো কান্না আসছে।

অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বসে ছিল এতক্ষণ।
শুভ আসে আলভীর রুমে। আজকে একটু দ্রুত অফিসে যেতে হবে। শুভ আলভীর অফিসের ব্যাগ হাতে নিয়ে আলভীর সাথে রুম থেকে বেরিয়ে যায় অফিসে যাওয়ার জন্য।
,
,
মায়া দের বাড়ির মেন গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে কার। সিঁড়ির উপর মেহবুবা মেহের দাঁড়িয়ে আছেন মেয়ের অপেক্ষায়। কার ভেতরে প্রবেশ করতে দেখেই সিঁড়ি থেকে নিচে নেমে আসেন।
একে একে সবাই বেরিয়ে আসে কারের ভেতর থেকে।
মায়া মাকে দেখেই দ্রুত এসে জড়িয়ে ধরে।
কারের শব্দ পেয়ে বাড়ির ভেতর থেকে বাকিরাও বেরিয়ে আসে।

বাইরে দাঁড়িয়েই সকলের সাথে কথা বলে। মানতাসা কে কোলে তুলে নিয়ে সকলের সাথে ভেতরে প্রবেশ করে মায়া। সোফায় এসে বসে সবাই। মায়া আক্তার মায়ার জন্য শরবত বানিয়ে নিয়ে আসে। শরবত খেয়ে সকলের সাথে আরো কিছু সময় কা টি য়ে রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
রুমে এসে বোরকা হিজাব খুলে শুয়ে পড়ে বেডে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে এখন।

মেহবুবা মেহের মায়া কে ডেকে বলেন,

“ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে শুয়ে থাক।”

“ভালো লাগছে না আম্মু , পরে খাব। তোমরা সবাই খেয়ে ওঠো।”

“তোকে রেখে কেউ খাবে? তুই উঠে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়, আমি তোর জন্য রুমে খাবার নিয়ে আসছি।”

ক্লান্ত মায়া উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে বলে,

“এক ঘন্টা পর নিচে যাব, এখন একটু শুয়ে থাকি।”

মেহবুবা মেহের বসে রইলেন মেয়ের পাশে। হাত বাড়িয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।

মায়ার ফোন বেজে ওঠে। মেহবুবা মেহের মায়ার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখেন আলভী হোয়াটস অ্যাপ এ কল করেছে।
ফোন মায়ার হাতে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান।

মায়া কল রিসিভ করে।
দুজনের মুখ শুকনো মলিন। কেউ কোনো কথা না বলে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়ার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
অল্প কিছু সময় পাড় হতেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে শুরু করে। আলভী ফোনের স্ক্রিনে হাত বুলায় কিন্তু মায়া কে ছুঁতে পারে না, আর না পারে মায়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিতে।

আলভীর চোখ বেয়েও পানি গড়িয়ে পড়ে। টেবিলের উপর ফোন রেখে টিস্যু দিয়ে দ্রুত চোখের পানি মুছে নেয়। লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে পানি খায়। তারপর আবার ফোন মুখের সামনে ধরে।
মায়ার কান্না বেড়ে গেছে। আলভী নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করে বলে,

“একা একা না থেকে সকলের মাঝে বসে থাকো তাহলে ভালো লাগবে।”

মায়া বলে না কিছু।

“শোয়া থেকে ওঠো, উঠে ফ্রেস হয়ে খাবার খাও। খেয়ে সকলের সাথে সময় কা টাও। এভাবে একা একা থাকলে কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

মায়া তবুও কিছু বলে না। আলভী টিস্যু দিয়ে আবার চোখ মুছে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

“আমার মিটিং আছে। পরে কল করবো আবার। উঠে ফ্রেস হয়ে খাবার খাও। আবার কল করে যেন না দেখি এভাবে শুয়ে আছো একা একা। যাও মায়া পরী, কাঁদে না আর। তুমি কাঁদলে কিন্তু আমিও কেঁদে দেব। পুরো ফ্যামিলি কে কাছে পেয়েও কাদঁছো আর আমি এখানে একা একা থেকেও কাদঁছি না।”

মায়া কান্না গিলে থেমে থেমে বলে,

“কাদঁছো না তাহলে চোখ মুখ এমন কেন?”

“বউয়ের কান্না দেখে কি আমি হাসবো?”

“চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি তোমার কাছ থেকে এসেছি। আমার মনে হচ্ছে কয়েক বছর ধরে তোমার কাছ থেকে দূরে রয়েছি।”

“সকলের কাছে গিয়ে বসো তাহলে আর এমন মনে হবে না। রাখছি, মিটিং শেষ করে কল করবো আবার।”

আলভী কল কে টে দেয়। মায়া ফোনের ওয়ালপেপারে থাকা আলভীর ফটোর দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে। দুই চোখ বেয়ে ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে আবার। কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে, অস্থির লাগছে। বার বার আলভীর কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। প্রিয় মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকা এত কষ্টদায়ক কেন?
_____________________

শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে নীচে নেমে আসে মায়া। ওকে দেখে সবাই ওর দিকে তাকায়। ওর জন্য এখনো না খেয়ে বসে আছে সবাই। (রাইটার সানা শেখ। গল্পের পরবর্তী পার্ট আগে আগে পড়তে সানা শেখ পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন তাহলে পরবর্তী পার্ট পোষ্ট করার সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন)

সকলের সাথে ডাইনিং টেবিলে খাবার খেতে বসে মায়।
খাবার মুখে দেওয়ার সময় মনে পড়ে আলভী সকালে খেয়েছে? জিজ্ঞেস তো করলো না খেয়েছে নাকি! খায়নি বোধহয়, খেলে চোখ মুখ অমন শুঁকনো শুঁকনো লাগতো না।
মায়ার গলা দিয়ে আর খাবার নামতে চায় না।
মেহবুবা মেহের মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

“রান্না ভালো হয়নি?”

মায়া ভাত মুখে পুরে বলে,

“না, রান্না মজা হয়েছে।”

“খাচ্ছিস না কেনো তাহলে?”

“এত রাস্তা জার্নি করেছি তো তাই ভালো লাগছে না। ঘুম পাচ্ছে এখন, সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।”

“খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমা তাহলে ভালো লাগবে।”

“হুম।”

প্লেটের অর্ধেক খাবার খেয়ে আর খায় না মায়া। হাত ধুয়ে পানি খেয়ে সোফায় এসে বসে মানতাসার পাশে। মানতাসা মাংস খাচ্ছে ছোট ছোট দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে। হাতের মুঠোয় থাকা মাংসের টুকরো মায়ার মুখের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

“কাও।”

“আমি তো খেয়েই আসলাম, তুমি খাও এখন।”

“ছোত আব্বু কই? নিয়ে আতো নি?” (নিয়ে আসো নি)

“তোমার ছোট আব্বু ক’দিন পর আসবে।”

“কেন?”

“ছোট আব্বুর কাজ আছে যে তাই।”

“ছোত আব্বুল কতা মনে পলে।” (ছোট আব্বুর কথা মনে পড়ে)

কথা গুলো শেষ হতেই মানতাসার চোখ দুটো পানিতে টুইটুম্বর হয়ে যায়। মায়া কোলে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরে মানতাসা কে। সানজিদা বলে,

“ভাইয়ার কথা বলতে গিয়েই ওই কয়েক দিন কেঁদে ভাসিয়েছে। এখনো বলতে বলতে কেঁদে দেয়। এখন তোমার ভাইয়ার কাছে গেলেও বার বার বলে “আব্বু ছোট আব্বুর কাছে যাব। আমাকে ছোট আব্বুর কাছে নিয়ে চলো।” তোমাকেও অত বার মনে করে না যত বার ভাইয়ার কথা মনে করে কাঁদে।”

মায়া মনে মনে বলে, ও যাদু জানে ভাবী, কিভাবে নিজের মায়ায় আটকে রাখতে হয় খুব ভালো করেই জানে। ওর চোখে মুখে যাদু আছে, ও পুরোটাই যাদু।”

তারপর মুখ ফুটে বলে,

“তাইতো দেখেছি এত দিন। কল করলেই ছোট আব্বুর কাছে দাও, ছোট আব্বুর কাছে দাও। কথা বলতে বলতেই কেঁদে দিত কোলে যাওয়ার জন্য। অথচ আমার সাথে দুই মিনিট কথা বলেনি।”

নাহার বেগম খাওয়া শেষ করে এসে মায়ার পাশে বসতে বসতে বলেন,

“আমার নাতির আদর সোহাগ খেতে খেতে দেখছি মোটা হয়ে গেছিস।”

দাদির কথা শুনে লজ্জা পায় মায়া। তবুও দমে না গিয়ে বলে,

“তোমার নাতির আদর সোহাগ খেয়ে মোটা হইনি দাদু। তোমার নাতির টাকায় খেয়ে খেয়ে মোটা হয়ে গেছি।”

“আমার নাতির টাকায় তাহলে বরকত আছে, এত কাল খেয়ে তো মোটা হোসনি, নাতির টাকায় খেয়ে মোটা হয়ে গেছিস।”

“এত কালও মোটাই ছিলাম আমি। আগের চেয়ে মাত্র তিন কেজি ওজন বেড়েছে।”
_________________________

জার্মানি থেকে আসার পর প্রথম রাত মায়ের সাথে ঘুমিয়েছিল মায়া। মেহবুবা মেহের মেয়ের কাছে এসে ঘুমিয়েছিলেন। মেয়ের মন খারাপ, রাতে না ঘুমিয়ে যদি কাঁদে তাই মেয়ের সাথে শুয়ে ছিলেন, কিন্তু ক্লান্ত থাকায় এক ঘুমেই রাত পাড় হয়ে গিয়েছিল মায়ার।

তারপর থেকে গত রাত গুলো মায়া একাই থেকেছে। রাতে আলভী কে পাশে না পেয়ে বার বার ঘুম ভেঙে গেছে। ঘুম থেকে উঠে মাঝরাতে বালিশে মুখ গুজে গুমরে গুমরে কেঁদেছে আলভীর জন্য। আলভী কে এত বেশি মিস করে যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। পরিবারের সকলের সাথে থেকেও আলভী কে এক মিনিটের জন্যও ভুলতে পারে না। আলভী কে ঠিক কতটা মিস করে মায়া নিজেও বুঝতে পারে না।
আলভী কে ছাড়া রাত টা সবচেয়ে কঠিন লাগে মায়ার কাছে। এই রাত কেনো আসে?

মায়া খাওয়া দাওয়া সেরে দশটায় আলভীর রুমে চলে আসে, যেটা এখন ওরো রুম।
ডোর লক করে রুমের চারো দিকে নজর বুলায়, কোথাও নেই আলভী। ভেঙ্গে চুরে আবার কান্না আসছে। যত বার খালি রুমে আসে ততবার কান্না চলে আসে। আলভীও বোধহয় ওর মতোই খালি রুমে একা একা ছটফট করে। চার্জ থেকে ফোন খুলে ফোন অন করে। তখন আলভীর সাথে কথা বলতে বলতে ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আলভী কে কল করার সাথে সাথেই রিসিভ হয়। আলভীও বোধহয় কল করতেই নিয়েছিল।

একে অপর কে দেখে দুজনেই হাসে তারপরেই মায়ার মুখ টা মলিন হয়ে যায়। চোখ দুটো পানিতে টুইটুম্বর হয়ে ওঠে। ধরা গলায় বলে,

“তুমি তো বলেছিলে দুই-তিন দিন একটু বেশি কষ্ট হবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে অথচ তোমাকে ছেড়ে থাকার কষ্ট একটুও কমেনি।”

আলভী কি বলবে? মায়া কে ছেড়ে থাকতে তো ওরো একই রকম কষ্ট হচ্ছে।

পুরো এক ঘন্টা কথা বলে দুজন, কথা বলার চেয়ে বেশি একে অপর কে দেখে শুধু।
রাত বেড়ে যাওয়ায় মায়া কে ঘুমোতে বলে কল কে টে দেয় আলভী।
মায়া ফ্রেস হয়ে এসে আলমারি থেকে আলভীর শার্ট বের করে। শার্ট টা গায়ে জড়িয়ে লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করে শুয়ে পড়ে। শার্টে এখনো আলভীর গায়ের ঘ্রাণ আছে। শার্ট গায়ে জড়িয়ে ঘুমোলে মনে হয় আলভী ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। এরকম টাই কল্পনা করে মায়া, আলভী ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।
চোখ বন্ধ করে রাখলেও ঘুম কি এত সহজেই আসবে নাকি?
,
,
ডিনার সেরে রাত নয়টায় রুমে ফিরে আসে আলভী।
এই রুমে আসলেই ওর দম আটকে আছে। এই রুমে মায়ার সাথে কত শত মুহূর্ত কে টে ছে সেসবই এখন স্মৃতি হয়ে গেছে। মায়ার ব্যবহার করা জিনিস গুলো এখনো আগের মতোই রয়েছে সব কিছু।

ফ্রেস হয়ে এসে শুয়ে পড়ে তবে ঘুম ওর ধারে কাছেও নেই। অস্থির হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। গায়ের টিশার্ট খুলে ছুড়ে ফেলে ফ্লোরে। মায়া কোথায়? ওর মায়া কে চাই এখন?
বেড থেকে নেমে দাড়ায়। আলমারি খুলে মায়ার শেষ বার ইউজ করা ওড়না টা বের করে। এই ওড়না টা ওই দিন মায়া ইউজ করেছিল কিন্তু ধোয়া হয়নি। ওড়না টায় এখনো মায়ার শরীরের ঘ্রাণ রয়েছে। মায়ার কথা বেশি মনে পড়লে ওড়না টা বের করে মুখে চেপে ধরে রাখে আলভী। তখন চোখ বন্ধ করে কল্পনায় অনুভব করে মায়া কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, মায়া ওর কাছেই আছে। ওড়না টা বেশি বের করে না, যদি মায়ার শরীরের ঘ্রাণ চলে যায় তখন তো আলভী আরো ছটফট করে ম র বে। সময় কেনো ফুরোচ্ছে না? দিন কেনো আগাচ্ছে না? মনে হয় সময় যেন থমকে আছে।

চোখ বন্ধ রেখেই গভীর ভাবে মৃদু স্বরে ডাকে আলভী,

“মায়া পরী।”

একটু থেমে আবার ডেকে ওঠে,

“মায়া পরী আমার জান। তোমার শূন্যতা অনেক বেশি মায়া পরী।”
,
,
ঘুমের ঘোরে বেড হাতড়ে হাতড়ে আলভী কে খোঁজে মায়া। ঘুমের ঘোরেই বির বির করে বলে,

“কোথায় তুমি? জড়িয়ে ধরো শীত করছে।”

তার পরেই যেন স্পষ্ট শুনতে পায় আলভীর ডাক,

“মায়া পরী।”

ফট করে চোখ মেলে তাকায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে আলভী কে খোঁজে। শোয়া থেকে উঠে বসে, আলভী কোথায়? কোথায় থেকে ডাকছে ওকে?
তারপর স্মরণ হয় আলভী তো নেই, আলভী জার্মানিতে রয়েছে। এতক্ষণ ঘুমের ঘোরে আলভী কে খুঁজছিল আর ডাক টা ধান্দা শুনেছে।

বেড থেকে নেমে রুমের বড় লাইট অন করে। পানি খায়। ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখে নেয় প্রায় দুই টা বেজে গেছে। আলভী তো বোধহয় এখনো ঘুমায়নি। কল করতে গিয়েও থেমে যায়, এত রাত পর্যন্ত জেগে আছে দেখে রাগারাগি করতে পারে। বিশ্বাসই করতে চাইবে না মায়া মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।

ফোন রেখে বেডে বসতেই মায়ার ফোনে কল আসে। স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে আলভীর কল।
দ্রুত কল রিসিভ করে ফোন মুখের সামনে ধরে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে আলভীর চেহারা। আলভী বলে,

“কেমন আছো?”

“ভালো।”

“ঘুমাওনি এখনো? কল করার সাথে সাথেই যে রিসিভ করলে!”

“ঘুমিয়েছিলাম, তোমাকে স্বপ্নে দেখে মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। মনে হচ্ছিল তুমি ডাকছো আমাকে।”

“সত্যি সত্যিই তোমাকে ডাকছিলাম মায়া পরী।”

মায়ার চোখ পড়ে আলভীর গলায়। ওর ওড়না আলভী গলায় পেঁচিয়ে রেখেছে।

“আমার ওড়না।”

আলভী ওড়নার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনের স্ক্রিনে তাকায় তারপর বলে,

“তোমার তেষ্টা পেয়েছে ভীষণ তাই তোমাকে কাছ থেকে অনুভবের একটু চেষ্টা। বাই দ্যা ওয়ে আমার শার্ট তোমার গায়ে কেন?”

“ওই যে অনুভবের একটু চেষ্টা।”

“শার্ট পড়েই ঘুমিয়েছিলে?”

“হ্যাঁ।”

“মিস ইউ জান।”

“রাতে ঘুমের ঘোরে তোমাকে খুঁজি। তারপর এদিক ওদিক বেড হাতড়ে দেখি তুমি নেই।”

“অফিসে যখন বসে থাকি তখন মনে হয় তুমি পাশের চেয়ারে বসে আছো কিন্তু তাঁকিয়ে দেখি তুমি নেই। রাতে ঘুম হালকা হয়ে আসলে জড়িয়ে ধরার জন্য বেড হাতড়ে দেখি তুমি নেই। বাইরে থেকে রুমে এসে জড়িয়ে ধরার জন্য তোমাকে খুঁজলে দেখি ফাঁকা রুম আমার অপেক্ষায়, জড়িয়ে ধরার মানুষ টা নেই।”

চলবে…………..