#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_40
(কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ)
সকালে ফজরের নামাজ আদায় করে বেড রুমে প্রবেশ করে আলভী। মায়া জায়নামাজে বসে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করছে। আলভী এগিয়ে এসে মায়ার গা ঘেঁষে বসে ফ্লোরে। মায়া তেলাওয়াত থামায় না। আলভী কোনো প্রকার ডিস্টার্ব না করে চুপ চাপ বসে থাকে।
প্রায় দশ মিনিট পর তেলাওয়াত থামায় মায়া। কোরআন শরীফ বন্ধ করে পাশে সরিয়ে রাখে। পা দুটো লম্বা করে মায়া, ভাঁজ করে বসে থাকতে থাকতে ব্যাথা হয়ে গেছে। আলভী মায়ার পেছনে বসে দুই পা মায়ার দুদিক দিয়ে দেয়। মায়া আলভীর বুকের সাথে ঠেস দিয়ে আরাম করে বসে। আলভী নিজের হাত দুটো মায়ার উঁচু ভারী পেটের উপর রাখে। বেবিরা নড়াচড়া করছে। মায়া আলভীর হাতের উপর নিজের দুই হাত রাখে।
আলভী পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
“অনেক কষ্ট হচ্ছে?”
মায়া দুদিকে মাথা নাড়ায়। নিজের হাত দুটো উঁচু করে ধরে বলে,
“এগুলো কি করেছো?”
আলভী মায়ার দুই হাতের দিকে তাকায়। হেঁসে বলে,
“কি করেছি?”
“মেহেদী দিয়েছো কেনো হাতে?”
“সুন্দর দেখানোর জন্য?”
“আজকে হসপিটালে যেতে হবে আর তুমি মেহেদী দিয়ে দিয়েছ!”
“তো কি হয়েছে? সুন্দর হাত দুটো এখন আরো বেশি সুন্দর লাগছে দেখতে।”
“নার্স ডক্টর কি ভাববে?”
“যা ভাবার ভাবুক তাতে আমার কি?”
“কখন দিয়েছ?”
“বারোটার দিকে বোধহয়।”
“অনেক সুন্দর হয়েছে দেওয়া।”
“তোমার হাত দুটো যে সুন্দর তাই সুন্দর লাগছে।”
মায়ার হাত দুটো ধরে উচুঁ করে দুই হাতে চুমু খায় আলভী। রাতে মায়া ঘুমিয়ে গেলেও আলভীর ঘুম আসছিল না। মায়ার হাত ধরে আধশোয়া হয়ে বসে ছিল তখন চোখ পড়ে মায়ার হাতের দিকে। হাতের নখ গুলো বড় বড় হয়ে গেছে আবার। নেইল কা’টার এনে দুই হাতের নখ কে’টে দেয়, দুই পায়ের নখ কে’টে দেয়। তারপর খেয়াল হয় হাতে পায়ের নখের মেহেদীর রঙ হালকা হয়ে গেছে। বসে বসে দুই হাতের নখে মেহেদী দিয়ে দেয়। হালকা হালকা শুকিয়ে যাওয়ার পর টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে দেয়। ইনস্ট্যান্ট মেহেদী হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই গাঢ় সুন্দর রঙ হয়ে যায়। দুই হাতের তালুতেও সুন্দর করে ডিজাইন করে দেয়। পাঁচ মিনিট পর টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে দেয়। দুই পায়ের নখেও মেহেদী দিয়ে দিয়েছে। মায়া গভীর ঘুমে মগ্ন থাকায় কিছুই টের পায়নি। রাতে কয়েক বার ঘুম ভাঙলেও হাতের দিকে খেয়াল করেনি। ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য ওয়াশরুমে প্রবেশ করার পর হাতের দিকে নজর যায় মায়ার। দুই হাতের তালুতেই সুন্দর ডিজাইন করে মেহেদী দেওয়া রয়েছে। হাতে-পায়ের নখেও মেহেদী দেওয়া।
প্রত্যেক বারের মতন একা একাই হেসেছিল মায়া।
(গল্পের লেখক সানা শেখ। পরবর্তী পার্ট আগে আগে পড়তে সানা শেখ পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন তাহলে পরবর্তী পার্ট পোষ্ট করার সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন)
আলভী বাড়িতে আসার পর থেকে মায়ার হাত পায়ের নখের মেহেদীর রঙ কখনো উঠে যায়নি বা খুব একটা হালকা হয়নি। রঙ একটু হালকা হলেই আলভী আবার দিয়ে দিয়েছে। ইউটিউব ভিডিও দেখে দেখে মেহেদী ডিজাইন করা শিখেছে। প্রথম প্রথম ভালো ভাবে দিতে পারতো না কিন্তু চেষ্টা করতে করতে এখন অনেক সুন্দর করে দিতে পারে। কম হলেও মাসে দুই একবার মায়ার হাতে পায়ে মেহেদী দিয়ে দেয় নিজেই। ইনস্ট্যান্ট মেহেদী হওয়ায় অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই উঠে যেত আলভী আবার দিয়ে দিত।
মায়ার হাত, পায়ে, নখে মেহেদী দেওয়া থাকলে আলভীর কাছে ভালো লাগে।
মায়া মুখ তুলে আলভীর মুখের দিকে দেখার চেষ্টা করে বলে,
“হসপিটালে কখন যাবে?”
আলভী মায়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“দুপুরের পর, তার আগে যদি তোমার পেইন শুরু হয় তাহলে আগেই যাব।”
মায়া কিছু না বলে আলভীর বুকের সাথে ঠেস দিয়ে চুপ হয়ে থাকে। আলভী মায়ার হাত দুটো মুঠো করে ধরে বলে,
“ভয় করছে?”
“একটু।”
“ভয় পেও না, আল্লাহর রহমতে কিছু হবে না ইনশা আল্লাহ। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।”
মায়া আবারো চুপ হয়ে থাকে। আলভী বসা থেকে উঠে মায়া কে ধরে দাঁড় করায়। বসে থাকতে থাকতে পা দুটো ভারী হয়ে গেছে আবার। রুমেই হাঁটাহাঁটি করে ততক্ষণে আলভী জায়নামাজ ভাঁজ করে রেখে কোরআন শরীফ তুলে রাখে তারপর বেড গুছিয়ে নেয়।
মায়া কে টুলের উপর বসিয়ে চুলের বিনুনি খুলে চুল ব্রাশ করে আবার বিনুনি করে দেয়।
মায়া কে বেডে বসিয়ে বলে,
“বসে থাকো আমি তোমার নাস্তা নিয়ে আসছি।”
“নিচে গিয়ে খেয়ে নেব।”
“কষ্ট করে এখন আর নিচে নামতে হবে না। সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে কষ্ট হয় তো তোমার। তুমি থাকো আমি নিয়ে আসছি।”
মায়া কে রুমে রেখে আলভী রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
মায়া নিজের পেটের দিকে তাকায়। এক জায়গায় উঁচু হচ্ছে আরেক জায়গায় নিচু হচ্ছে।
,
,
এগারোটার পর পর শাওয়ার নেয় মায়া আর আলভী। রোজকার মতন দুজন একসাথেই শাওয়ার নিয়েছে।
মায়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বেডে এসে বসে, আলভী দুজনের ড্রেস ধুয়ে হাতে নিয়ে বের হয়। বেলকনিতে মেলে দিয়ে এসে ক্রিম লোশন নিয়ে মায়ার পাশে দাঁড়ায়। মায়ার ফেসে ক্রিম লাগিয়ে দিয়ে হাতে, পায়ে, গলায় দিয়ে দেয়। তারপর মায়ার চুল গুলো ভালো ভাবে মুছে নিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে দেয়, নিজের চুল গুলোও শুকিয়ে নেয়।
হেয়ার অয়েল এনে মায়ার চুলের গোড়ায় ভালো ভাবে অয়েল ম্যাসাজ করে দেয় তারপর পুরো চুলেই দিয়ে দেয়। চুল গুলো ব্রাশ করে বিনুনি করে দেয়।
সব কিছু করা শেষ করে নিজের গায়ে টিশার্ট জড়ায়।
নিচে গিয়ে মায়ার জন্য খাবার নিয়ে আসে আবার।
মায়ার সামনে বসে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।
মায়ার জোরাজুরিতে নিজেও খায় অল্প।
খাওয়া শেষে আলভীর সাথেই নিচে নেমে আসে মায়া।
আজ আলতাফ মাহমুদ আর আহনাফ মাহমুদ অফিসে যাননি, মাহির একাই গেছে অফিসে লাঞ্চের পর মাহিরও ফিরে আসবে।
নিচে এসে সোফায় বসে।
আলভী প্লেট রেখে এসে নিজেও বসে সোফায়।
নাহার বেগম এটা সেটা জিজ্ঞেস করছেন মায়া কে।
মাহিদ মানতাসা কে কোলে করে নিয়ে এসে বসে আলভীর পাশে। মানতাসা আলভীর কোলে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ছোত আব্বু।”
“বলো আম্মু।”
“আজকে আমাল বাইয়া আর বুনু হবে?”
“হ্যাঁ।”
“কখন হবে?”
“হসপিটালে যাওয়ার পর।”
“তালে চলো।”
“কোথায়?”
“হসপিটাল।”
“আরেকটু পর যাব।”
“আমি কোলে নেব।”
“কোলে নিতে পারবে তুমি?”
“শত্যি আছে আমাল।”
“শক্তি আছে তাহলে আমাকে কোলে নাও।”
“তুমি বলো।”
“কোথায় বড়? আমি এখনো অনেক ছোট।”
“না তুমি বলো ওইছ।”
“আম্মা খিদে পেয়েছে।”
“খিদে পেয়েছে তোমাল?”
“হ্যাঁ।”
“কি কাবে?”
মাহিদ বলে,
“তোমার বাচ্চা ছেলে দুদু খাবে। খেতে দাও তাড়াতাড়ি নাহলে কান্না করে দেবে।”
মাহিদ এর কথা শুনে সোফায় বসে থাকা সকলে ওর দিকে তাকায়। মানতাসা নিজের গায়ে থাকা টিশার্ট উঁচু করে তুলে আলভী কে বলে,
“আব্বু নাও কাও কান্না কোলো না।”
মানতাসার কথা শুনে হো হো করে হেঁসে ওঠে আলভী সাথে বাকি সবাই। মানতাসা ছোট ছোট করে আলভী সহ বাকিদের দিকে তাকাচ্ছে। এভাবে হাসছে কেনো সবাই?
মানতাসা আবার বলে,
“কাচ্ছ না কেন? কাও।”
মাহিদ হাসতে হাসতে ঠাস করে সোফা থেকে নিচে পড়ে যায় তবুও ওর হাসি বন্ধ হয় না।
হাসতে হাসতে আলভীর পেটে খিল ধরে যাচ্ছে।
,
,
দুপুরের খাবার খেয়ে মায়া আর আলভী রুমে আসে তৈরি হওয়ার জন্য। একটু পরেই হসপিটালের উদ্যেশ্যে বের হবে সবাই।
একটা ব্যাগের ভেতর মায়ার জামা কাপড় সহ আরো প্রয়োজনীয় সব কিছু ভরে নেয় আলভী।
মায়া ফ্রেস হয়ে এসে বেডে বসে। আলভী ড্রেস চেঞ্জ করে প্যান্ট শার্ট পড়ে নেয়।
মায়া আর কি তৈরি হবে? আলভী মায়ার চুল গুলো আবার খুলে ব্রাশ করে বেঁধে দেয়।
মায়া আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঝরঝর করে কেঁদে দেয়। সযত্নে মায়া কে বুকে আগলে নেয় আলভী। পিঠে হাত বুলিয়ে মাথায় চুমু খেয়ে বলে,
“আল্লাহর রহমতে কিচ্ছু হবে না ইনশা আল্লাহ, সাহস রাখো।”
“যদি আমি
থামিয়ে দেয় আলভী। মায়া কে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“কিচ্ছু হবে না তোমাদের ইনশা আল্লাহ।”
মায়া শক্ত করে আলভীর কোমড় জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,
“আমি অনেক বছর বাঁচতে চাই তোমার সাথে।”
আলভী মায়ার মাথায় আবার চুমু খেয়ে আদর করে বলে,
“হ্যাঁ আমরা একসাথে বাঁচবো তো অনেক বছর।”
মায়া আবার কাদতে কাদতে বলে,
” আমি আরো শত শত রাত তোমার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে চাই। শত শত ভোর দেখতে চাই তোমার সাথে। তোমার বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শত শত ভোরে ঘুম থেকে জাগতে চাই। আমি চাই তোমার ভালোবাসার উষ্ণতায় ঘুম ভাঙুক। আমি তোমার হাত ধরে বৃদ্ধ হতে চাই। তোমার আদর, যত্ন আর ভালোবাসা আরো অনেক বছর পেতে চাই। আমাদের সন্তানদের নিয়ে হাসি-খুশি আর শান্তিতে ভরা একটা সুন্দর সংসার করতে চাই।”
আলভী শক্ত করে ধরে রাখে মায়া কে। ধরা গলায় বলে,
“তোমার সব ইচ্ছে-চাওয়া পূরণ হবে ইনশা আল্লাহ। আমি অনন্ত কাল তোমার সাথে থাকবো। আমরা একসাথে আরো অনেক বছর বাঁচবো।”
মায়া আলভীর বুক থেকে মুখ তুলে তাকায়। আলভী মায়ার চোখ গাল মুছিয়ে দেয়। দুই হাতে মায়ার মুখ আগলে ধরে সারা মুখে অসংখ্য চুমু খায়। আবার জড়িয়ে ধরে বলে,
“চলো সবাই অপেক্ষা করছে।”
চলবে………….