হৃদয়েশ্বরী পর্ব-৩৫+৩৬

0
1083

#হৃদয়েশ্বরী
#লেখিকা-সাদিয়া মেহরুজ দোলা
#পর্ব-৩৫
___________

রজনীর তৃতীয় প্রহর। জানালার উন্মুক্ত কপাট দিয়ে মুক্ত সমীর সাইঁ সাইঁ করে কক্ষে প্রবেশ করছে। হীম অনিল। মীরা কাঁপুনি দিলো জড়োসড়ো হয়ে চেপে বসলো আরেকটু৷ গায়ে ওড়না জড়িয়ে নিচে তাকালো। উশান তার কোলে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে প্রায় দুই ঘন্টার মতো হবে। মীরা বিরক্ত হয়! একটু বেশিই বিরক্ত। লোকটা এখনো উঠছে না কেনো?সে আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবে?উশানের কপালে দুই আঙুলের সাহায্যে টোকা দিলো মীরা। একবার, দুইবার পদে পদে তিনবার। শেষেরটা একটু জোরেই দিলো যার দরুন মুখোশ্রী বেজায় বিরক্তি নিয়ে কুঁচকে বদ্ধ নেত্রযুগল উশান উন্মুক্ত করলো। বিরক্তি সহিত বলল,

-‘ কি সমস্যা? ঘুমোতে দিচ্ছো না কেনো? ‘

উশানের থেকেও দ্বিগুন বিরক্তি নিয়ে মীরা শুধালো,

-‘ উঠছেন না কেনো? আমি আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো? বিরক্ত লাগছে তো! ‘

-‘ যতক্ষণ না আমার ঘুম সম্পূর্ণ হবে ততক্ষণ এভাবেই বসে থাকবে। বুঝেছো? ‘

ত্যাড়া উত্তর শ্রবণ করা মাত্র মীরা ক্ষেপলো ভীষণ। উশানের ঘাড়ে সে চিমটি কাটলো অনেকটা জোরে। ব্যাথায় মৃদু আর্তনাদ করে ঘাড়ের সেই কাঙ্খিত স্থান ডলে উঠে বসলো উশান৷ ভাব এমন! মীরাকে ধরে এখন সে তুলে আছাড় দেয়। তবে এটা যে সম্ভব নয় একদমই।উশান কাউচ থেকে নেমে দাঁড়ালো।হতাশ হয়ে বলল,

-‘ তোমার জন্য পুরো আটদিন আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি মীরা। পুরো আটদিন! একটু তো দয়া করে এখন একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিবে? এতো নিষ্ঠুর তুমি! ‘

লম্বা কদম ফেলে বারান্দায় যায় উশান। ফেলে যায় অনুশোচনায় ভোগা মীরাকে৷ আপাত লহমায় তার ভীষণ অনুশোচনা হচ্ছে। লোকটা তো তারই জন্য এতো কষ্ট করলো তাহলে এতটুকু সময়ের জন্য সে স্থির থাকতে পারলো না? রয়ে – সয়ে আরো কিছু সময় সেখানেই স্থির রূপে বসে মীরা গভীর ধ্যানে ভাবলো কিছু। অতঃপর সেও উশানের মতো লম্বা কদম ফেলে চললো বারান্দায়।

ক্যালিফোর্নিয়ার সৌন্দর্য বিলাসের অন্যতম মনোমুগ্ধকর সময় রাত৷ রাতের বেলা এখানকার সৌন্দর্য যেনো হুহু করে বাড়ে। ক্যালিফোর্নিয়াতে এপার্টমেন্ট কম বাংলো বেশি। এখানে মানুষ তেমন ভাড়া থাকে না। বাড়ি ক্রয় করে। বাংলো বাড়ি। এই বাংলো বাড়ি গুলো চোখ ধাঁধানো সুন্দর। একদম বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর। রাত হলে যখন বাংলোর বাহিরে বিভিন্ন রঙের ফেইরি লাইট জ্বালানো হয় তখন পরিবেশ সৌন্দর্যটা মেপে মেপে বৃদ্ধি পায়। যানজটহীন শহর। কোলাহল মুক্ত পরিবেশ দর্শন করা মাত্র নেত্র যুগল শিথিল, শান্ত, মৌন হয়। মুগ্ধ হয় পদে পদে!

মীরা বিড়াল পায়ে উশানের পেছনে এসে দাঁড়ালো। উশান তখন ব্যাস্ত ভঙ্গিতে ফোনে কারো সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ করছে। কখনো হেঁটে, হেঁটে কথা বলছে তো কখনো এক স্থানে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে মীরার লাগানো এ্যালোভেরা গাছটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে কথা বলছে। মীরা এবার গিয়ে দাঁড়ালো উশানের সম্মুখে। উশানের শার্টের বাম হাতা টেনে ইশারা করলো কিছু। উশান ভ্রু’কুটি কুঁচকে নিয়ে তাকালো।কান থেকে ফোন দূরে সরিয়ে কন্ঠের খাদ নামিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,

-‘ কি হয়েছে? টানাটানি করছো কেনো? ‘

মীরা আহ্লাদী স্বরে জবাব দিলো,

-‘ ফোন কাটুন! খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। ‘

-‘ খুব গুরুত্বপূর্ণ? ‘

উশানের করা পাল্টা প্রশ্নে মীরা সিরিয়াস হয়ে মাথা নাড়লো। যার অর্থ ‘ হ্যা। ‘
আর কিছুক্ষণ কথা বলে অত্যান্ত তাড়া দেখিয়ে কল কাটলো উশান৷ অবলোকন করলো মীরার প্রতি। মীরা তখন উশানের শার্টে আকিঁবুকিঁ করছে। অধর বাঁকিয়ে কিয়ৎ হাসলো সে। বলল,

-‘ ২৫ বছরের নারী দিনদিন বুঝি বাচ্চা হচ্ছে? ‘

মীরা আঁড়চোখে তাকালো। সন্দিহান গলায় বলল,

-‘ হটাৎ এ প্রশ্ন? ‘

-‘ কারণ ম্যাডাম, আমার আপনার ব্যাবহার দেখে তাই মনে হচ্ছে। ‘

মীরা এ প্রসঙ্গে আর কথা বাড়াতে চাইলো না। কড়া কয়েক তিক্ত কথা গলায় এসেও কন্ঠনালীতে পেঁচিয়ে লহমায় এলোমেলো হয়ে গেলো। উশানের কথা ভুল নয় বৈকি। পঁচিশ বছরে গত মাসেই পা রাখলো সে। অথচ উশানের সাথে প্রণয় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তার ব্যাবহার ছোট বাচ্চাদের মতোই হয়ে যাচ্ছে দিনকে-দিন। সোজাসাপ্টা উত্তর আমরা সকলেই আহ্লাদী। বাচ্চামো করে থাকি। তবে সেটা ক্ষেত্রবিশেষে এবং অল্পসংখ্যক নিকটবর্তী প্রিয় মানুষের সাথে।

-‘ রাতে তো খেয়ে আসেননি। খাবেন না? ক্ষুদা লাগেনি? ‘

উশান একটু অন্যমনস্ক ছিলো। এতক্ষণ সে মীরাকে এক ধ্যানে দর্শন করছিলো। বোঝার চেষ্টা করছিলো মনোযোগ সহিত কিছু। ধ্যান কাটতেই দৃষ্টিপাত ফেরালো। বলল,

-‘ হুঁ! প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে। তুমিও তো খাওনি। এসো একসাথে খাবো।’

রাতের খাবার কোনোমতে শেষ করলো উশান।দেরী হচ্ছে তার। ক্যাম্পে ফিরতে হবে। যাওয়ার আগে হুট করে মনে পড়লো মীরা তাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলবে বলেছিলো। পথিমধ্যে পিছন ফিরে উশান প্রশ্ন করলো,

-‘ মীরা? তুমি কিছু বলবে বলেছিলে? ‘

মীরা দ্বিধাগ্রস্তে নয়নে তাকালো। বলবে কি বলবে না তা ভাবতে ভাবতে মিনিটখানেক সময় পার করলো। অতঃপর আচানক বলে উঠলো,

-‘ উশান? আমরা বিয়ে করবো কবে? ‘

অপ্রতিভ নেত্রে তাকালো উশান৷ শ্রান্ত পায়ে এগোল মীরার নিকটবর্তী। কন্ঠের খাদ নামিয়ে মিহি কন্ঠে বলল,

-‘ বলতে গেলে আমি কিন্তু এখনোও বেকার-ই মীরা। নিজের টাকাতেই কোনোমতে চলছি৷ এটাই আমার লাস্ট ট্রেনিং। এই ট্রেনিং শেষ হলেই পাকাপোক্ত হয়ে নিজের চেয়ারে বসবো। একটু অপেক্ষা করো? ট্রেনিং টা শেষ হলেই আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলবো। ‘

উশান থামলো কিয়ৎ। পরক্ষণেই ওষ্ঠাধর কোণে অদ্ভুত হাসির রেশ ফুটিয়ে তুলে শুধালো,

-‘ আপনি কিন্তু একদিক দিয়ে বর্তমানে আমার অদূরবর্তী বউ ম্যাডাম। আপনি আমার অর্ধবউ আপাতত। ‘

উশান প্রস্থান করলো দ্রুত। মীরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে। তার মস্তিষ্ক তখন প্রশ্নবিদ্ধ! অর্ধবউ মানে? এই শব্দের অর্থ কি?

_____

তারপর কয়েকদিন। ফোন কলেই কথা বলে সময় কারলো মীরা – উশানের৷ দেখা করার সুযোগ নেই। উশানের চাপ যাচ্ছে। এই কয়েকদিনে টুইঙ্কেলের সাথে মীরার সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে অনেকটা।এখন প্রায় সময়ই টুইঙ্কেল মীরার বাসায় থাকে। ইফরাদ মেয়েকে বকে – টকেও নিজের সাথে নিতে পারেনা। তার মতে! টুইঙ্কেল দিনকে দিন নিজের অন্য রূপ প্রদর্শন করছে। এমনিতে সে সর্বদা বাবার কথা মেনে চলতো তবে মীরার সাথে তার সাক্ষাৎ হওয়ার পর সে এলোমেলো হয়েছে। ‘মীরা পাগল ‘ হয়েছে! মীরা যা করতে পছন্দ করে টুইঙ্কেল তাই-ই করে। সহজ বাংলা মীরাকে অনুকরণ করা তারজন্য এখন ফরজ কাজ।
এইযে যেমন আজকে! আজ থেকে রমজান মাস শুরু হয়েছে। ভোররাতে মীরা যখন সেহরি খেলো, টুইঙ্কেল নিজের প্রিয় ঘুম ফেলে রেখে নিজেও তাই করলো। সারাদিন বলতে গেলে না খেয়েই থেকেছে কারণ মীরা খায়নি। অবশ্য মাঝে মীরা ভুলিয়ে ভালিয়ে তাকে স্বল্প পরিমাণে খাবার খাইয়েছে।
.

বিকেল হতে মীরা তুমুল ব্যাস্ত। ইফতার করতে ইফরাদ আর উশান আসবে। রান্না তার মোটামুটি শেষ। এখন শুধু ফলমূল কেটে টেবিলে রাখা।ব্যাস!কাজ শেষ। চপিং বোর্ডে আপেল কাটছিলো মীরা।টুইঙ্কেল তা একবার দেখছে তো একবার মীরাকে দেখছে। তার চুপচাপ থাকার ধৈর্যবাধঁ ভেঙে যেতেই সে গোল গোল চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-‘ চাচি? ‘

হাতের কাজ সম্পূর্ণ করতে করতে মীরা উত্তর দিল,

-‘ ইয়েস প্রিন্সেস? খুদা পেয়েছে? খেতে দেই একটু?’

-‘ উঁহু! আই এম নট হাংরি। ‘

মীরা হতাশ চোখে তাকালো। বলল,

-‘ তাহলে? কি হয়েছে? ‘

-‘ তোমাকে আজ খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে? বাট হোয়াই? ‘

মীরা সপ্রতিভ হলো। মৃদু হেঁসে টুইঙ্কেলের গাল টেনে দিলো আদুরে ভঙ্গিতে। পরিশেষে ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে উত্তর দিতে নিবে তার পূর্বে রুহি সেখানে উপস্থিত হয়ে বলল,

-‘ তোমার চাচি খুশি হবেনা তো কে খুশি হবে টুইঙ্কেল? আজকে তোমার চাচ্চু আসছে না? তাই চাচি খুশি! বুঝেছো? ‘

মীরা রুষ্ট চাহনি নিক্ষেপ করলো। টুইঙ্কেল হাসে। হাস্যরত অবস্থায় দু’হাতে তালি দিয়ে হৃষ্টচিত্তে।শেষে কিয়ৎ স্থির, মৌন হয় সে৷ মীরা – রুহি স্পষ্টত দর্শন করলো তার মুখোশ্রীর অদৃশ্যমান মলিনতার ছাপঁ। মীরা অস্থিরচিত্তে প্রশ্ন ছুড়লো,

-‘ কি হয়েছে প্রিন্সেস? মন খারাপ কেনো? ‘

-‘ বাবা যখন দূরে থাকার পর অনেকদিন পর পর বাসায় আসতো তখন মাম্মামও এমনি খুশি হতো। তারপর অনেকদিন বাবা আসেনি আমাদের কাছে। মাম্মা তখন খুব দুঃখ পেয়েছিলো তাই আমাদের ছেড়ে আকাশের স্টার(তারা) হয়ে গেছে যাতে বাবাকে সবসময় দেখতে পায়, জানো? কিন্তু বাবা তো এখন আর দূরে যায়না রুহিপি! তাহলে মাম্মাম কেনো স্টার থেকে মানুষ হয়ে আমাদের কাছে আসে না? ‘

মীরা, রুহি তখন থমকে তাকিয়েছিলো। টুইঙ্কেলের নেত্র কোণে তখন অশ্রুকণা চিকচিক করছে। নোনা অশ্রুকণা দ্বারা মূর্হতেই সিক্ত হলো তার তুলতুলে গাল দু’টো। মীরা ত্রস্ত পায়ে এগোল। টুইঙ্কেল কে কোলে তুলে দুই গালে চুমু খেয়ে বলল,

-‘ ওখান থেকে তো আর ফিরে আসা যায়না প্রিন্সেস তাই তোমার মাম্মাম আসছে না। তবে ব্যাপার নাহ!আমি আছি না? হুহ্?’

টুইঙ্কেল মাথা নাড়লো দুইবার, তিনবার করে।মিনিট দুয়েক পর কলিংবেলের শব্দ কর্ণপাত করতেই মীরার কোল থেকে সে হুড়মুড়িয়ে নামলো। দরজা খুলে লাফ দিয়ে উঠলো বাবার কোলে। ইফরাদ চমকায়। চমকিত গলায় জিজ্ঞেস করে,

-‘ কি হয়েছে আম্মু? ‘

-‘ কিছুনা। আই মিসিউ বাবা। ‘

-‘ মিসিউ টু৷ আজ যাবে তাহলে বাবার সাথে বাসায়?’

-‘ হু। ‘
ইফরাদ স্বস্তির শ্বাস ফেলে। মেয়েকে ছাড়া রাতে তার ঘুম হয়না ঠিক মতো। একটুও না।

ইফতার করা শেষ হওয়ার পর এক ফাঁকে উশান মীরাকে পাশের রুমে নিয়ে আসে। রুমটা তখন আঁধারে বিলীন। মীরা একটু হতবিহ্বল হয়। বলে,

-‘ কি সমস্যা? ‘

উশান মীরার হাতে কিছু পরিয়ে দিচ্ছিলো তখন। পরানো শেষ হলে প্রতিত্তুর করে,

-‘ অনেক অনেক সমস্যা। অর্ধবউয়ের হাত খালি খালি কেনো থাকবে? হাত খালি থাকলে ‘ বউ ‘ শব্দটা ঠিক মানানসই হয় না। ‘

মীরা হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। বাহিরের রশ্মি এসেছে প্রবেশ করেছে। সেই মৃদু রশ্মিতে মীরা বুঝলো তার হাতে উশান চুড়ি পরিয়েছে। হাত দু’টো নামিয়ে নিয়ে কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞেস করলো,

-‘ কি সেদিন থেকে ‘ অর্ধবউ ‘, ‘ অর্ধবউ ‘ করে যাচ্ছেন! এই শব্দটার মানে কি? ‘

চলবে…

#হৃদয়েশ্বরী
#লেখিকাঃসাদিয়া মেহরুজ দোলা
#পর্ব-৩৬

চৈত্র মাসের অন্তিমকাল।ক্যালিফোর্নিয়ার উষ্ণ বাতাবরণ ধীরে ধীরে শীতলতার প্রক্রিয়া শুরু করছে।উষ্ণাগম মেদিনী তখন তুমুল ব্যাস্ত বর্ষাকে বরণ করতে।হীম বর্ষণের ধাপ ইতিমধ্যেই আরম্ভ হয়েছে।অম্বরে বিরাজ করা ধূসর মেঘেরা বৃষ্টি নামার তাল বুনছে প্রতিনিয়ত। প্রভাতের শুরুতে কিংবা বাতাবরণের তৃষ্ণীম্ভাব আগমন কালে হটাৎ হটাৎ দানবীয় বজ্রপাত আছড়ে বর্ষণ নেমে সিক্ত করছে মড়মড়, শুকনো সব গাছের পাতা।
সায়ংকাল নামতেই ফের মেঘ জমেছে অন্তরীক্ষ জুড়ে। কমলাটে মেঘ। পশ্চিম অম্বরে তারা বিচরণ করছে নিজ মনে। নীলাভাব অন্তরীক্ষে আচানক কমলাটে মেঘ দেখতে দারুণ লাগছে। বজ্রপাতের কর্কশ ধ্বনি আচানক মৌনতা বিরাজমান পরিবেশে হানা দিতেই খানিক কেঁপে উঠলো মীরা।সে এতক্ষণ যাবৎ অত্যান্ত মনোযোগ সহকারে সাদা, খালি কাগজে লিখতে ব্যাস্ত ছিলো।

মীরা নিজের বসার স্থান ছেড়ে উঠলো। দ্রুত পদে পা ফেলে গিয়ে জানালার কপাট তাড়াহুড়ো করে বন্ধ করলো। বৃষ্টি আসবে। বৃষ্টিবিলাস করার তুমুল আগ্রাসী ইচ্ছেটাকে আপাতত সে মাটিচাপা দিয়ে ফের নিজের পূর্বের স্থানে এসে বসলো।এসাইনমেন্ট দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় হতে। কালই জমা দিতে হবে।এখনো অনেক, অনেক লেখা বাকি তার।ক্লাস টেস্ট শেষ হতে না হতেই শ্বাস ফেলার সুযোগ দেয়া হয়নি তাদের।লিখতে বসেও লেখায় পূর্ণ মনোযোগ টানতে পারছে না মীরা৷ কারণটা মস্তিষ্কের তোষামোদ!কিছু দিন ধরে সে ভীষণ ক্ষুব্ধ! ভয়ানক রেগে। তবে তা অন্তঃকরণে।এই মনঃগুপ্ত রাগটার কারণ উশান।এই লোক তাকে সেদিন ‘ অর্ধবউ ‘ শব্দটার বিশদ বর্ণনা দেয়নি।এমনকি এই শব্দ সম্পর্কিত কিচ্ছুটি বলেনি।বদ উশান সেদিন তাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে চলে গিয়েছিলো কৃত্রিম, অহেতুক তাড়া দেখিয়ে। এবং আজ দুইদিন! উশান একটা ফোনও করেনি তাকে। ভীষণ, ভীষণ রাগ দমন করে মীরা করেছিলো বদটাকে ফোন। কিন্তু সেই লোক রিসিভ করেনি। কি পরিমাণে বদ ভাবা যায়?

মীরা ভাবনা ছুঁড়ে ফেললো অদূরে। মনোনিবেশ করলো সাদা, সুন্দর কাগজ গুলোতে। একটু ধ্যান দিয়ে আশপাশে তাকালেই সে দেখতে পেতো উশান এর তার প্রতি গভীর চাহনি। দরজার সাথে হেলান দিয়ে উশান এক ধ্যানে মীরাকে অবলোকন করছে প্রায় পঁচিশ মিনিট পেরুবে। ধৈর্যের বাঁধ তার এবার হুট করেই ভাঙলো। লম্বা লম্বা কদম ফেলে এগোল মীরার নিকটবর্তী।নিঃশব্দতা ধ্বংস করে উঁচু কন্ঠে বলল,

-‘ কেও কি আছে? ‘

রবার দিয়ে কাগজ ঘষা বাদ দিয়ে মাথা তুললো মীরা৷চমকিত তার দৃষ্টিপাত গিয়ে নিবদ্ধ হলো উশানের ওপর৷ মীরার মুখোশ্রীর দশা দেখে উশান বুঝেই নিলো,এই মেয়ে এখন ঘোরে আছে!আপাতত আর কথা বলবে না।তাই সে প্রস্তুতি নিলো দ্বিতীয় শব্দটি কন্ঠনালী দ্বারা উচ্চারণ করার৷ তবে তাকে ভীষণ রূপে চমকে দিয়ে মীরা চেয়ার ছেড়ে তড়িৎ বেগে উঠে সটান দাঁড়ালো তার সন্নিকটে।দ্রুত কন্ঠে বলল,

-‘ একদম আমার রুম থেকে বের হোন আপনি!নয়তো এক্ষুনি থাপ্পড় বসাবো আপনার গালে। ‘

চমকে দিতে এসে নিজেই চমকে যাওয়ার অনুভূতিটা ভীষণ অন্যরকম।উশান কপালে সুক্ষ্ম বলিরেখা ফেললো। তার ভ্রু যুগলের মাঝে ভাজ পড়লো সুন্দর করে৷ কিয়ৎক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে সে জিজ্ঞেস করলো,

-‘ কি হয়েছে তোমার? এতো রেগে কেনো আমার ওপর? আমি কি কোনো ভুল করেছি? ‘

মীরা তেতেঁ উঠলো। তিক্ত কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল,

-‘ নাহ! কিছুই করেননি আপনি। আপনি তো মিয়া সাধুপুরুষ। সাধুপুরুষ’রা আবার কিছু করতে পারে? উঁহু! এইযে আমি দুইদিন ধরে আপনাকে আমি কল দিচ্ছি আর আপনি সেই কল রিসিভ করছেন না, এটা কি কোনো ভুল হলো বলুন?একদমই না!পরশু দিন আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম আর আপনি তার জবাব না দিয়ে চলে গেলেন! এটা কি কোনো ভুল নাকি? আরে নাহ্! এসব কোনো ভুলই না। এসব হচ্ছে ভদ্রতা। আধুনিক যুগের ‘ উশান ‘ নামক ব্যাক্তির তৈরি করা ভদ্রতা। ‘

শান্ত, মৌনতার পরিপূর্ণ উশানের দৃষ্টিপাত। সে এক ধ্যানে ফের মীরাকে অবলোকন করা শুরু করেছে। খুঁটিয়ে, খুঁটিয়ে দেখছে মীরাকে। দর্শন করা শেষে অধর যুগল কোণে সে শ্লেষের হাসির রেখা মৃদু করে টানলো।এক হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিলো মীরাকে। ছটফটে, জেদী স্বভাবের মীরা দুইহাত দিয়ে ইচ্ছেমতো উশানের বাহুতে আঘাত করলেও উশান তাকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ছাড়লো না। নড়লো না! বরঞ্চ সে নিজ স্থানে অটল।মীরার গালে নম্র হাত রাখলো সে। বলল,

-‘ আদর চাই ম্যাডাম? ‘

এক মূর্হতের জন্য হতবিহ্বল হয়ে পড়লো মীরা। শুকনো ঢোক গিললো পরপর দুইবার।অতঃপর খানিক এলোমেলো, অগোছালো কন্ঠে বলল,

-‘ কিসব উল্টোপাল্টা কথা বলছেন? আশ্চর্য! ‘

উশান সামান্য হাসলো। এইতো বাঘিনী নম্র হয়েছে। উশান তার এক মুক্ত হস্ত স্থাপন করলো মীরার কোমড়ে। আরেকহাত রাখলো মীরার ঘন কেশের উপরিভাগে। লম্বা এক শ্বাস টেনে বলল,

-‘ উল্টোপাল্টা না সত্যি। আমার খোঁজ করছিলে কেনো? আদর পাওয়ার জন্যই তো। নাও দিলাম আদর। ‘

কথার ইতি টানতেই উশান তার অধর ছোঁয়া স্পর্শ করালো মীরার কুচকুচে কালো কেশে।আচানক হাতের কালো ঘড়িটায় সুতীক্ষ্ণ আওয়াজটা তাকে বার্তা দিলো ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে। উশান ছিটকে ছেড়ে দিলো মীরাকে। যেতে যেতে বলল,

-‘ কাল টুইঙ্কেলের বার্থডে।সেলিব্রেশন বাহিরে করতে চাচ্ছে ইফরাদ৷ সকালে রেডি থেকো আমি এসে তোমায় নিয়ে যাবো। টুইঙ্কেল তো তোমাকে ছাড়া কোথাও যেতেই চায় না। ‘

কিয়ৎ মূর্হত পূর্বের নিস্তব্ধতা ফের ঝেকে ধরলো কক্ষটাকে। মীরা তখন বিমূঢ়! আনমনে এক হাত গালে রেখে দরজার পানে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিপাত এলিয়ে রেখেছে। অন্তঃকরণে পাকাপোক্ত ভাবে সে ঠিক করেই ফেললো, আচানক এই কর্মের কারণে কাল উশানকে সে থাপ্পড় মেরেই ছাড়বে!

____

টুইঙ্কেলকে বাংলা শিখিয়েছে মীরা। মেয়েটা এখন অনেকটা বাংলা বলতে পারে। তবে আধো, আধো! বেগুনি রঙের শেষ ফিতেটা বাঁধা শেষে টুইঙ্কেলকে নিজের দিকে ফিরালো মীরা। নেত্রযুগল কার্নিশ হতে আইলেনার আঙুলের ডগায় নিয়ে টুইঙ্কেলের কপালে পড়ে থাকা সোনালি ছোট্ট কেশ গুচ্ছের মাঝে আঙুল ছোঁয়ালো। বলল,

-‘ প্রিন্সেসকে কত্তো কিউট লাগছে আজ। একদম এক্সট্রা এক্সট্রা কিউট! ‘

টুইঙ্কেল হাসলো। ফট করে চুমু খেলো মীরার নির্মেদ গালে। মীরার কৃষ্ণবর্ণের কপালে পড়ে থাকা কেশ কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে মিষ্টি কন্ঠে বলল,

-‘ তোমাকেও কিউট লাগছে মিষ্টি। ‘

রিনরিনে মিষ্টি সুরের মাঝে হটাৎ ধপাধপ পা ফেলার শব্দের উৎপত্তি। টুইঙ্কেলের চুল কালো রিবন ফিতে দিয়ে আঁটকে দিয়ে মীরা একবার দৃষ্টি ফেললো দরজার পানে।তৎক্ষনাৎ সেখানে উপস্থিত হয় রুহি।মুখোশ্রীতে তার বিরাজ করছে চরম হৃষ্টচিত্ততা।গমগম সুরে সে বলে উঠলো,

-‘ টুইঙ্কেল! লুকিং টু মাচ প্রিটি বেবি। ‘

-‘ থ্যাঙ্কিউ লাফঝাঁপ! ‘

নিমিষেই রুহির মুখোশ্রীতে আঁধার নামলো। টুইঙ্কেল তাকে লাফঝাঁপ বলে ডাকে আধো গলায়। এই নাম টা তার পছন্দ নয়। ভীষণ অপছন্দের! নামটা মীরা শিখিয়েছে টুইঙ্কেল কে। রুহির মুখোশ্রী দর্শন করা মাত্র নিজের কালচে ওষ্ঠাধর চেপে মৃদু হেসেঁ নিজের কাজে ব্যাস্ত হলো মীরা।
কিয়ংদশ বাদে টুইঙ্কেল তার এক আঙুল তুলে রুহির দিকে তাক করে বলল,

-‘ এই লাফঝাঁপ কে নিবো না মিষ্টি। লাফঝাঁপ বেশি লাফালাফি করে। দুষ্টু! ‘

রুহি অসহায় চাহনি নিক্ষেপ করলো।টুইঙ্কেলকে এসব কথাবার্তা যে মীরা শিখিয়েছে তা সে হারে হারে নিশ্চিত। মলিন কন্ঠে রুহি বলল,

-‘ তোর সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা বইন?বল কোন জন্মের? টুইঙ্কেল কে দিনদিন আমার নামে উল্টাপাল্টা শেখাস! আমি কি তোর জামাইর সাথে ফ্লার্ট করি? উড়ন্ত চুম্মা ছুঁড়ে দেই? না তো! তাইলে?’

মীরা বিরক্তি সহিত জবাব দিলো,

-‘ তুই আমারে বিরক্ত করস! এইটা তোর সর্বমূল দোষ। এখন যা এখান থেকে। বিরক্ত করিস না আর। রেডি হ জলদি। ‘

___

উশান এবং ইফরাদ আসে সকাল দশটায়।তারা আসার পরপরই রওনা হয় সকলে। আপাতত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সকলে ডিজনিল্যান্ড যাবে। সেখানে ডিজনি পার্কটাই মূলত দর্শন করবে তারা। এই স্থানটি শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য পার্ফেক্ট বলা চলে। প্রায় দুই ঘন্টার মতো ওরা সবাই পার্কে ঘুরে ঘুরে দেখলো। মীরা প্রতিটা সময় উশানকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলেছে। উশান কাছে আসতে নিলেই সে দূরে পালিয়েছে। লোকটার কোনো ঠিক নেই! কখন কি করে বসে কে জানে?

দুপুর তিনটে ছুঁই ছুঁই।
আশপাশের সুন্দর এক রেষ্টুরেন্টে দুপুরের ভোজন করার সিদ্ধান্ত নিলো ইফরাদ।তারই পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত স্থান দর্শন করা বাদে সবাই রেষ্টুরেন্টে এলো। টুইঙ্কেল মুখ ভার করে বসে আছে। কারণ সে খেলছিলো। খেলার মাঝে বিরক্ত করলে তার রাগ লাগে প্রচন্ড। কিন্তু এখানে মীরা আছে। মীরার সামনে সে নিজের রাগ প্রদর্শন করাতে চায়না বিধায় মুখ ভার করে বসে৷ ইফরাদ মেয়েকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে একটু চমকালো।মেয়ের গাল টেনে দিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,

-‘ কি হয়েছে আম্মু? এতো চুপচাপ যে আপনি? ‘

টুইঙ্কেল চুল নাড়াচাড়া করতে করতে জবাব দিলো,

-‘ আমি তো চুপচাপই থাকি পাপা। তুমি হটাৎ এভাবে বলছো কেনো? ‘

ইফরাদ এবার থমকালো। ঘাড় বাকিঁয়ে মীরাকে দর্শন করে সে নিশ্চিত হলো মেয়ের এই অদ্ভুত আচরণের কারণ সম্পর্কে। টুইঙ্কেল মীরার সামনে সর্বদা পরিপাটি, নম্র-ভদ্র থাকার চেষ্টা করে এই বিষয়টি সম্পর্কে সে অবগত হয়েছে কিছুদিন পূর্বে।
উশান এসে শব্দ করে বসলো মীরার পাশটায়।পিঠ এলিয়ে দিলো পিছনে। লম্বা শ্বাস টেনে আঁখিজোড়া বন্ধ করে নিলো। রুহির সাথে কথা বলার ফাঁকে বিরতি দিয়ে মীরা আঁড়চোখে তাকালো উশানের পানে।পরপরই নজর সরিয়ে সামনে তাকালো।দুই, তিন মিনিট পর নেত্র যুগল উন্মুক্ত করে উশান আশপাশ দেখলো। যে যার যার কাজে ব্যাস্ত। মীরা একা বসে ফোনে নজরবন্দি করে রেখেছে। আলগোছে নিজ স্থানে হতে নড়েচড়ে মীরার কানের নিকট অধর জোড়া নিয়ে ‘ফু ‘ দেয় সে। মীরা শিউড়ে উঠে। উশানকে এক হাত দিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলল,

-‘ কি সমস্যা? ‘

-‘ অনেক সমস্যা। আমাকে ইগনোর কেনো করছো?’

-‘ ইচ্ছে হয়েছে তাই। ‘

খাবার চলে এসেছে। উশান কিছু কড়া কথা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। কারণ এখন সবার দৃষ্টিপাত ফিরে এসেছে টেবিলে। টেবিলে খাবার হিসেবে রাখা হয়েছে কাসটালেটা ঘানাম, সানক্লিশ,ফাস্ট ফুড’স । এবং ডেজার্ট হিসেবে রাখা হয়েছে সুইট’স, চকলেট’স এবং বাকলাভা। সব খাবার গুলোই দারুণ সুস্বাদু!প্রথমে টুইঙ্কেল খাওয়া শুরু করেছে। তারপর একে একে সবাই কথা বলার মাঝে মাঝে খাওয়া শুরু করলো। চকলেট এবং সুইট’স গুলো মূলত টুইঙ্কেলের জন্য।

__

সায়ংকাল নামতেই টুইঙ্কেল ঘুমে ঢুলু ঢুলু প্রায়। মীরার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। সবাই চটজলদি ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো তৎক্ষনাৎ। উশানকেও ক্যাম্পে ফিরতে হবে৷ মীরাকে বাসায় নামিয়েই ক্যাম্পে ফিরবে সে৷ গাড়ির পিছনের সিটে রুহি, মীরা বসে। ড্রাইভিং সিটে ইফরাদ তার পাশে বসে উশান ফোনে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে আলাপ করছে।

কিয়ৎ দূর যেতেই গাড়ির গতি বেসামাল হলো। পরিস্থিতি তখন বেগতিক। উশান ফোনে কথা বলা ফেলে হন্তদন্ত হয়ে বলল,

-‘ ইফরাদ কি করছিস?এক্সিডেন্ট করবি তো। গাড়ি থামা। ‘

-‘ গাড়ি থামাতে পারছিনা। ঝামেলা হয়েছে কোনো।এটা কারো ষড়যন্ত্র নিশ্চিত। গাড়ির ব্রেকে ঝামেলা হচ্ছে। ‘

ফাঁকা সড়ক। গাড়িতে উপস্থিত সকলে বিচলিত হয়ে পড়লো। ভীতিগ্রস্ত নয়নে ইফরাদ ঘুমন্ত মেয়েকে দেখে উশানকে তড়িঘড়ি করে বলল,

-‘ গাড়ি থামানো সম্ভব না। মীরা, রুহি, টুইঙ্কেল ওদের নিয়ে তুই গাড়ি থেকে লাফ দে উশান! তাও প্রানে বাঁচতে পারবি। ‘

উশান উদ্বেগ নিয়ে বলল, ‘ পাগল তুই? ‘

-‘ ফর গড সেইক! আমার কথা শোন। আমার মেয়েটা নিষ্পাপ। ও এখনো ছোট উশান। ওর প্রাণটা অকালে ঝরতে দিস না। ‘

উশান সর্বপ্রথম মানলো না। তবে ইফরাদের কথায় যুক্তি রয়েছে। এখন লাফ না দিলে মৃত্যু নিশ্চিত। লাফ দিলে বাঁচার সম্ভবনা একটু হলেও রয়েছে। উশান মীরার পানে দৃষ্টি দিলো। মীরা কাঁদছে। সে আলত করে মীরার গাল ছুঁয়ে দরজা খুলে মীরা সহ রুহিকে ধাক্কা দিলো গাড়ি থেকে। অতঃপর ইফরাদ সুযোগ বুঝে ধাক্কা দেয়ার পূর্বে ইফরাদ তাকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দেয়। গাড়ি বেসামাল অবস্থায় বিস্ফোরণ ঘটার পূর্বে ইফরাদ চেচিঁয়ে বলল,

-‘ আমার মেয়েকে দেখে রাখিস উশান। ‘

চলবে…

[ রি-চেইক করিনি।]