হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব-৩৫+৩৬

0
613

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৫
বৌভাতের অনুষ্ঠানে প্রিয়া ওর বাবা-মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। উনারা কাছাকাছি চলেও এসেছেন। সেই সকালে ভাবীরা মিলে পার্লারে নিয়ে গেলো আর একটু আগে এলো। এতো লম্বা ড্রেস যে সামলাতে পারছে না। প্রিয়ার এখন মনে হচ্ছে, গাউনের থেকে শাড়িই ভালো। গাউনটা যদিও তুলনামূলক হালকা কাজের। এই হোয়াইট গাউনটা জারিফ তার বান্ধুবী মারিয়াকে দিয়ে কানাডা থেকে অর্ডার করে আনিয়েছে। মারিয়া প্রিয়ার পাশেই বসে আছে। মারিয়া বিদেশিনী হয়েও আজ সে শখ করে সবুজ কাতান শাড়ি পরেছে। প্রিয়ার সাথে তার ভালোই ভাব জমেছে।

অদূরে জারিফ হোয়াইট সুটে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। প্রিয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে এই শুভ্রতায় রাঙানো পুরুষটিকে দেখে মুখ ফুটে বলে ফেলে,

“আমার শুভ্র মানব! এতো ভালো লাগে কেনো? বিরক্তি থেকে কিভাবে যে তার প্রেমে আমি এতোটা আসক্ত হলাম! এখনও আমি তার প্রতি হৃদয়ে লুকানো প্রেম কোনো শব্দে ব্যাক্ত করতে পারিনি।”

মারিয়া, তাসফি ও রাহা প্রিয়ার পাশে বসা। তিনজনেই প্রিয়ার ঘোরলাগা দৃষ্টিতে মুখ চেপে হাসছে। বেচারি হয়তো ভুলেই গেছে সে এখন সেন্টার অফ দ্যা পয়েন্টে আছে। রাহা প্রিয়ার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“এই প্রিয়ুপু, আস্তে বলো হ্যাঁ! তোমার হৃদয়ে লুকানো প্রেম আর লুকানো নাই। আমরা তো শুনে ফেললাম। তাই না তাসফিপু, মারিয়াপু?”

প্রিয়া আচমকা থতমত খেয়ে যায়। মারিয়া মুচকি হেসে বলে,
“ইয়েস ডিয়ার, উই অল নো। থিংস আর নট সিক্রেট ইয়েট।”

প্রিয়া লজ্জা পেয়ে যায়। রাহার বাহুতে দুটো কি**ল বসিয়ে দেয় বিনিময়ে। রাহা সহ ওরা হাসতে থাকে। কিছুক্ষণ পর শোরগোলে তাসফি বলে উঠে,

“প্রিয়া আপু, মনে হয় মামারা চলে এসেছেন। চলো রাহা। আপু তুমি বসো।”

তাসফি ও রাহা উঠে যায়। জারিফও গিয়ে প্রিয়ার বাবা-মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করে উনাদের নিয়ে আসে। উনারা স্টেজের কাছে আসলে প্রিয়া উঠে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুটা আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রিয়ার মা মেয়ের গা*লে এক হাত রেখে নিজের চোখ মুছে বলেন,

“মাশাআল্লাহ্। আমার মেয়েটাকে একদম প্রিন্সেস লাগতেছে।”

প্রিয়ার বাবা স্ত্রীর কথায় বিরোধীতা করে বলেন,
“আমার মেয়ে সবসময় প্রিন্সেস। প্রিন্সেস অফ মাই কিংডম। কোনো সাজসজ্জা তাকে প্রিন্সেসের রূপ দিতে পারে না কারণ সে সয়ং একজন প্রিন্সেস। অ্যাপেল অফ মাই অ্যাইস।”

প্রিয়া টলমল নয়নে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। প্রিয়ার বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে জারিফের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“হেই প্রিন্স চার্মিং! আমার প্রিন্সেসের চোখে যেনো তোমার কারণে দুঃখের অশ্রু না গড়ায়। মা*ইন্ড ইট।”

জারিফ পকেটে হাত গুঁজে দেখছিল। শ্বশুরের থ্রে*ট মূলক বুলিতে মা*থা নুইয়ে হাসে।

রিশেপশনের অনুষ্ঠানের শেষে প্রিয়া ও জারিফকে নিয়ে প্রিয়াদের বাড়িতে রওনা হয়। ফিহাও সঙ্গী ওদের। এদিকে ফিহাকে প্রিয়ার এক কাজিন ভাই পছন্দ করে বসে আছে! গাড়িতে সে ইচ্ছে করে ফ্রন্ট মিররটা ফিহাকে দেখা যায় এমন পজিশনে রেখেছে। ফিহা কিন্তু সবই বুঝেছে আর তাই সে মিটিমিটি হাসছে।

________
মুন্নির মা তার ভাই-ভাবীর থেকে বিদায় নিয়ে সন্ধ্যার বাসে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। পাঁচদিন হলো এখানে আছে। মেয়েটার আর একটা পরীক্ষা বাকি। প্রতিনিয়ত মেয়ের খবরাখবর তো রাখছেই। দুইদিন প্রিয়াকে দেখে তার ভালোই লেগেছে। এখন ফিরে গিয়ে নিজের মেয়ের সুখের পথ নিশ্চিত করতে হবে।

মুন্নি আজকে বিকেলে খালাকে বলে বেরিয়েছে। উদ্দেশ্য রাদিফের সাথে দেখা করতে লেকপাড়ে যাবে। রাদিফই গতকাল তাকে বলেছে যখন সে পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিল। মুন্নি জিজ্ঞেস করেছিল, অফিস বাদ দিয়ে এখানে আসার কারণ কী? রাদিফ আজ সেই কারণটা বলতেই ডেকেছে। মুন্নি কী ভেবে রাজি হয়ে গেলো নিজেও জানে না। সারা বিকেল লেকপাড়ে কিছুটা নির্জনে বসেছিল ওরা। রাদিফ প্রায় অনেকক্ষণ নিরব ছিল। দুজনের সঙ্গী তখন বাদাম ও বুট ভা*জা। যখন দুটোই শেষের পথে আর সূর্য ডুবেও গেছে তখন মুন্নি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,

“আপনার মৌনতা শুনতে ডেকেছেন? আপনার নিরবতার ভাষা বোঝার ক্ষ*মতা আমার নাই। যদি শব্দ খরচ করে কিছু বলতেন।”

রাদিফ রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেয়। কথাটা বলতে তার ভয় হচ্ছে। যেই কয়দিন ওদের কথা হয়েছে তাতে রাদিফ এটুকু বুঝতে পেরেছে মুন্নি কাউকে খুব ভালোবাসে বা বাসত! এতোদিনে সে বুঝতে পেরেছে মুন্নি কোনো করুণ সত্যের শি*কা*র। রাদিফ দম নিয়ে বলে,

“ভেঙে যাওয়া হৃদয় কী কখনও জোরা লাগাবেন না?”

মুন্নি চমকে উঠলো। সে তো ভেবে নিয়েছিল, ছেলেটা কোনো কথাই বলবে না। হুট করে বলে উঠায় খানিক চমকে যায়। মুন্নি ভাবলেশহীন ভাবে বলে,

“এবার নিজ থেকে আর কিছুতে জড়াব না। আর যেচে দুঃখ টানতে ইচ্ছে হয় না। আমার বাবা-মা যা বলবেন তাই করব।”

রাদিফ বলে,
“আমি যদি বলি, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই! তাহলে?”

মুন্নির ঠোঁট কোলে তার নিজের অজান্তেই হাসির রেখা ফোটে। কিন্তু এতে মুন্নির দৃষ্টিসীমা হটেনি। দৃষ্টি তার সম্মুখে রক্তিম অম্বরে। রাদিফ ঠিকই সেই হাসিটা দেখল। মুন্নি বলে উঠে,

“যদি অদৃষ্টে লেখা থাকে সবই সম্ভব।”

মুন্নি কথাটা বলেই কালক্ষেপণ না করে উঠে দাঁড়ায় তারপর একটা কথা বলে একাই স্থান ত্যাগ করে।

“যদি আপনার অদৃষ্টে এই ভগ্ন হৃদয়ের মালকিন লেখা থাকে তবে কেউ সেটা খন্ডাতে পারবে না। তাও আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাই কারণ চেষ্টা না করলে যে ললাটে আছে তাকেও পাওয়া হবে না।”

রাদিফ এক দৃষ্টিকে মুন্নির গমনপথের দিকে তাকিয়ে আছে। লাল-হলুদের মিশেলে থ্রিপিসে এই গোধূলিতে মেয়েটাকে তার কাছে “গোধূলি কন্যা” লাগছে।

___________

আড্ডা শেষে রুমে গিয়ে জারিফ প্রিয়াকে জানায়,
“আমরা সকালের ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবো তারপর সেখান থেকে সেন্টমার্টিন।”

প্রিয়া অবাক সাথে খুশিও হয়। তার অনেকদিনের ইচ্ছা সে তার বরের সাথে সমুদ্রবিলাশ করবে। আরও অনেক বাসনা আছে সমুদ্র নিয়ে। প্রিয়া বলে,

“বাবা-মাকে জানিয়েছেন? আরেকটা কিসের যেনো ফাংশন বাকি আছে।”

“হ্যাঁ আমি আঙ্কেলকে বলেছি আর প্রিয়মকেও।”

“ফিহা? ও কী করবে?”

“ফিহাকে কাল প্রিয়ম পৌঁছে দিবে বলেছে।”

“ওহ আচ্ছা। তবে প্যাকিং করে নিই।”

প্রিয়া আলমারি খুলতে উদ্দত হলে জারিফ প্রিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে। প্রিয়া আচমকা এহেনো টানে চমকে উঠে। জারিফ প্রিয়ার মুখের উপর আসা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে গালে স্লাইড করতে করতে হালকা স্বরে বলে,

“তোমার কিছু করতে হবে না। সব গোছানো আছে। সকালে নাহান কালকে ভোরে ট্রলিটা নিয়ে আসবে।”

প্রিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়। সে বারবার জারিফের হাতের স্পর্শে শিউরে উঠছে। জারিফ প্রিয়াকে আরও কাছে টেনে প্রিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

“ওখানে কিন্তু তুমি আর পালাতে পারবে না! সর্বক্ষণ তুমি আমাকেই পাবে।”

প্রিয়া ছুটার জন্য নড়াচড়া করছে। জারিফ দেখল প্রিয়ার মুখশ্রীতে ব্রীড়া মিশ্রিত হালকা আভা। কপালের ঠোঁটের স্পর্শ করে প্রিয়াকে হাতের বাঁধন মুক্ত করল। প্রিয়া এক ছুটে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তার এখন হাত-মুখ ধু*তে হবে! জারিফ হেসে বিছানায় হেলান দিয়ে বসল। কখন লজ্জা রানীর লজ্জা কমবে আর সে বেরোবে সেই অপেক্ষায়।

________

সকাল সাড়ে ছয়টায় কলিংবেলের শব্দে রাহা ঘুম ঘুম চোখে উঠে দরজা খুলল। তার আজকেও কেনো জানি ঘুম আসছে না। পরনে তার টিশার্ট, প্লাজো আর ওড়না। হাই তুলতে তুলতে এতো সকালে কে এলো দেখতে গেছে। রান্নাঘর থেকে শব্দ হচ্ছে মানে তার ফুফি উঠে গিয়ে নাস্তা বানাচ্ছে। দরজা খুলে যে রাহা শ*ক*ড হয়ে থতমত খে*য়ে যাবে সে কল্পনাও করেনি।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৬(ভালোবাসায় রাঙানো)
দরজার ওপাশে নাহান দাঁড়ানো। নাহানও থ*তম*ত খে*য়ে যায়। রাহা তোঁতলাতে তোঁতলাতে নাহানকে ভিতরে আসতে বলে ছুটে নিজের রুমে চলে যায়। নাহান সোফাতে বসে আশেপাশে তাকায়। রান্নাঘর থেকে প্রিয়ার মা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলতে বলতে বেরিয়ে আসেন,

“কী-রে রাহা? কে এলো রে? তোকে দেখে তরকারিটা পু* ড়ে যাবে বলে আর আসলাম না।”

বসার ঘরে এসে তিনি নাহানকে দাঁড়ানো দেখেন। নাহান সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব দিয়ে সহাস্যে বলেন,
“ও নাহান তুমি। বসো বাবা। ওদের লাগেজ দিতে কতো কস্ট করে সকালে এলে। বসো। আমি ওদের ডাকিয়ে দিচ্ছি।”

নাহান বিনয়ের সাথে বলে,
“না আন্টি। তার প্রয়োজন নাই। আমি চলে যাব এখন।”

পিয়ালি বেগম শা*স*নের স্বরে বলেন,
“এই একদম না। চুপ করে বসো। নাস্তার আগে বেরোতেই পারবে না। আমি তো শুনবই না। আর এই রাহাটাও কোথায়! আমাকে জানবে না কে এলো!”

প্রিয়ার মায়ের কথায় নাহানের মনে পরলো, ঘুমঘুম ফোলা মুখশ্রীর এলোমেলো কেশের অধিকারী সেই মেয়েটিকে। ভাবতেই মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠল তার। প্রিয়ার মা*কে আরো কয়েকবার বুঝানোর চেষ্টাতে অক্ষম হয়ে চুপচাপ সোফায় বসে পরল।

রাহা আয়নায় নিজের এলোমেলো অবস্থা দেখে নিয়ে জলদি করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। মনে মনে ভেবে নিলো, নাহান না যাওয়া ওব্দি সে রুম থেকে বের হবে না। লোকটাকে দেখলেই কেমন ধু*ক*পু*ক করে ওঠে বুকের ভেতর। মা*থা ঝাঁকিয়ে নিজের মনের অবান্তর চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আয়নার সামনে বসল চিরুনি হাতে। উদ্দেশ্য চুলগুলোকে মা*নু*ষ বানানো।
__________

নাস্তা শেষে জারিফ, প্রিয়া, প্রিয়ম ও ফিহার সাথে নাহানও বেরিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে নজর বুলিয়ে রাহাকে খুঁজছে তার আঁখিজোড়া। কিন্তু রাহাতো রুম থেকে বেরোয় নি! এদিকে ফিহাকে চলে যেতে দেখে নাবিলের মন খারাপ হলো। সে প্রিয়মকে বলে উঠে,

“ভাই, আমিও তোমাদের সাথে যাই?”

প্রিয়ম ভ্রুঁ কুঁচকে বলে উঠল,
“কেনো? তুই যাবি কেনো? আমি ওদের বাসস্টপ পর্যন্ত পৌঁছে দিবো তো।”

নাবিল আমতা আমতা করে বলে,
“না মানে, ফিহাকে তো পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে তাই না? তাই বললাম।”

নাবিলের বোকা বোকা কথায় ফিহা ঠোঁ*ট চেপে হাসছে। প্রিয়ম নাবিলের মা*থায় টো*কা দিয়ে বলে,

“এই তুই কী কা**না? নাহানকে তোর চোখে লাগে না?”

নাবিল চুপ করে কী বলবে ভাবছে। কিছুক্ষণ ভেবে চট করে বলে উঠল,
“নাহান ভাইও তো দুলাভাইকে আর প্রিয়াকে এগিয়ে দিতে যাবে। তাহলে ফিহা?”

প্রিয়া নাবিলকে বলে উঠে,
“এই ভাই! তুই যা তো! গিয়ে ঘুমা। নাহান ভাইয়া ফিহাকে নিয়ে যাবে আর ভাইয়া আমাদের এগিয়ে দিবে। বুঝেছিস?”

নাবিল সেন্টি হেসে বলে,
“হুম হুম। বুঝেছি। আসলে ঘুমের বড়োই সমস্যা হচ্ছে তো! তাই সহজ হিসাব বুঝতে পারিনি। যাই আমি ঘুমাই গিয়ে। হ্যাভ অ্যা সেফ জার্নি বোথ অফ ইউ।”

নাবিল মা*থা চু*ল*কাতে চু*ল*কাতে চলে যায়। প্রিয়ারা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রিয়ারা চলে যাচ্ছে তা রাহা দরজার ফাঁকা দিয়ে উুঁকি দিয়ে দেখছিল। ওরা যাওয়ার পর এখন সে রুম থেকে বেরিয়ে দেখে নাবিল সোফায় বসে ফোন টি*পছে। রাহা কোমড়ে হাত গুঁজে বলে,

“ভাই! তোমার না ঘুম পেয়েছে?”

নাবিল বিরস মুখে রাহার দিকে তাকিয়ে বলে,

“কই না-তো!”

“তাহলে ওদের যে বললে?”

নাবিল কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বলে,
“চোখের সামনে থেকে স*র বলছি। রা*গ হচ্ছে প্রচুর।”

রাহা ভ্রুঁ উুঁচিয়ে বলে,
“তুমি যে ফিহার সাথে যাবে বলে বলছিলে তা কী আমি বুঝি না? ফিহা তো কালকে গাড়িতে তোমার কান্ডকারখানা দেখে আমার কাছে বলে বলে হাসছিল। যাই আম্মুকে বলে আসি! তার ছেলে প্রেমে পরেছে!”

নাবিল অবাক হলেও শেষোক্ত কথায় হকচকিয়ে উঠে।
“না পু*চ*কি। বইন না ভালা আমার। কী লাগবে বল? সব এনে দিবো। আম্মুরে বলিস না। ঝা**টার বা*ড়ি খেতে চাই না। পারলে ফিহার সাথে একটু সেটিং করিয়ে দে না বইন!”

রাহা দাঁত বের করে হেসে বলে,
“বেশি না শুধু পাঁচশো টাকা দেও। আম্মুরেও বলব না আর ফিহার ফেসবুক আইডিও দিবো।”

নাবিল দুঃখী দুঃখী দৃষ্টিতে তাকালো। পকেট থেকে পাঁচশো টাকার নোট বের করে দিলো। রাহাও খুশিমনে ফিহার আইডি দিয়ে দিলো আর না*চতে না*চতে চলে গেলো।

____________

কক্সবাজারে সিবি*চে প্রিয়া খালি পায়ে হাঁটছে আর জারিফ প্রিয়ার পিছু পিছু। একসাথেই আসছিল ওরা তারপর লোকসমাগমের বাহিরে এসে প্রিয়া একটু সামনে সামনে হাঁটছে। অনেকটা পথ ওরা হেঁটে এসেছে। এখানে মানুষজন নাই বলতে গেলে। সা*গরে এখন ভাটা পরেছে। পড়ন্ত সূর্যের প্রতিচ্ছবি ভেজা বালুতে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রিয়া জারিফকে বলে,

“দেখুন, কী সুন্দর লাগছে। তাই না?”

জারিফ পেছোন থেকে প্রিয়ার ছবি তুলে নিলো। প্রিয়া দুই হাত প্রসারিত করে কথা বলছিল।

“হুম।”

“আমার না ওই দূর পর্যন্ত যেতে ইচ্ছে করছে। চলুন যাই।”

জারিফ ঘড়ির দিকে তাকালো। ভাটার সময় শেষ হতে আর বিশ মিনিট বাকি। প্রিয়ার হাত ধরে সে যেতে শুরু করল। ভেজা বালুতে খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে ওরা। হাঁটু পর্যন্ত পানিতে গিয়ে নামলো। অতি দ্রুত কয়েকটা ছবি তুলে ফিরে আসলো। সন্ধ্যা নেমে গেছে। হোটেলে ফিরে ক*সরের নামাজ পড়ে ফ্রেশ হয়ে ওরা খেতে বের হলো। এখন সিবি*চে ঘোরাফেরা করে সেখানের কাছে মার্কেটগুলোর থেকে কেনাকাটা ও খাওয়া দাওয়া করবে।
সমুদ্রপাড়ে হাঁটাহাঁটি করে এক জায়গায় এসে বসলো ওরা। সমুদ্রের গ*র্জন খুব কাছ থেকে অনুভব করছে ওরা। পায়ের কাছে একটু পরপর শীতল জলের রাশি ঢেউয়ের মতো আছ*ড়ে পরছে। প্রিয়া জারিফের কাঁধে মা*থা রাখল। চুপ করে আছে সে। জারিফ নিরবতা ভেঙে বলল,

“সময়টা থমকে যাক। তুমি আমি এভাবেই থাকি।”

“টিল দ্যা লাস্ট ব্রেথ, অ্যাই ওয়ান্না লাভ ইউ! আপনার এই কথার বিপরীতে সেদিন না বললেও আজ আমি বলব, ‘সমুদ্রস্রোতের যতোটা জলকণা আছে, ততোটা সময় আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই।’ মানে বুঝতে পারলেন?”

জারিফ বুঝেও নিরব হেসে অস্ফুট শব্দ করে,
“উঁহু!”

প্রিয়া জারিফের বাহু আরও জড়িয়ে সমুদ্রপানে দৃষ্টি স্থির রেখে চোখ বন্ধ করে ওষ্ঠকোণে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলে,

“অফুরন্ত। দে*হের মৃ*ত্যু*র পরও আপনার ভালোবাসাকে আমি আমার রবের কাছে পর*কা*লেও চাইব।”

জারিফ প্রিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আচ*মকা প্রিয়ার অধর জোড়া নিজের অধরের স্পর্শে বন্ধ করে দিল। প্রিয়া আচ*মকা হতবিহ্বল হয়ে গেলেও পরমুহূর্তে লজ্জায় নয়নজোড়া মুদন করে নিলো।

ওরা অনেকগুলো ঝিনুকের জিনিসপত্র কিনে নিলো। ওরা বলতে প্রিয়া! তারপর স্থানীয় রেস্তোরাঁ থেকে রাতের খাবার খেয়ে নিলো। খাবারের মেনুতে সামুদ্রিক মাছ তো থাকবেই।

______
ব্যালকনিতে দাঁড়ানো প্রিয়া। ব্যালকনি থেকে সমুদ্রটা দেখা যায়। দেখা যায় ঢেউয়ের গতি। গ*র্জনও শোনা যাচ্ছে। প্রিয়া চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যার ওই মুহূর্তটা মনে পরতেই গা শিরশির করে উঠে তার। ঠোঁটের কোলে ফুটে উঠে লাজুক হাসি। খোলা চুলগুলো বাতাসের ধ*ম*কায় উড়ছে। বারেবারে চোখের উপর ভীড় জমাচ্ছে। জারিফ পেছোন থেকে এসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরল। আচমকা এমন হওয়ায় হকচকিয়ে শিউরে উঠল প্রিয়া। জারিফ প্রিয়ার চুলগুলো কাঁধের কাছ থেকে সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবালো। প্রিয়া কেঁপে উঠে অর্ধখোলা ব্যালকনির গ্রিল চেপে ধরল। জারিফ মুখ ডুবানো অবস্থায় ফিসফিস করে বলে,

“তৃষ্ণার্ত হৃদয় আজ শান্ত করো প্রিয়া! আমাদের ভালোবাসা আজ আরেকটু রাঙুক। সমুদ্রের লবন ও জলের ন্যায় মিলে যাক।”

প্রিয়া চোখ মুখ খিঁচে রাখে। জারিফ ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোলে তুলে নেয়। রাতের সমুদ্রের গ*র্জনের সাথে ওদের ভালোবাসা ভোরের সূর্যের মতো রাঙুক।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,