হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 13]
ছেলেটির কথা শুনে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম। ওদের মধ্যে বাকি দুইজন তবেরে বলে এগিয়ে আসতেই আমি পিছিয়ে গেলাম। যাকে চড় মারলাম ছেলেটি বাকি দুজন ছেলের উদ্দেশ্যে বলল,
-“তোরা থাম একে তো আমি দেখে নিচ্ছি”!
বলে এগিয়ে আসতে লাগলো এদিকে পিছনে যেতে যেতে আমার পিঠটা গাড়ির সঙ্গে ঠেকে গেছে। ছেলেটা তার হাতটা আমার দিকে বাড়াতে যাবে এমন সময় আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমার গায়ে হাত দেওয়ার আগেই একটা আওয়াজ শুনে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলাম ছেলেটি একটু দুরে দেওয়ালের কাছে রাস্তায় ব্যথায় কাতরাতে লাগল।
আর বাকি ছেলে গুলো ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে লাগল কিন্তু অনুরাগ ভাইয়া ওদেরকে ধরে উধুম কেলাতে লাগলো। সবগুলো মার খেয়ে বলতে লাগলো,
-” ভাই ছেড়ে দেন ভাই! আমি আর করবো না ছেড়ে দিন।”
অনুরাগ ভাইয়া ছেড়ে দিলেন ওদের। তারপর কপালের ঘাম মুছে ওদের লিডারের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“জিগ্যেস করলি না ও আমার কে হয় ,? ও আমার বউ হয়। আর কোনদিন যদি কোন মেয়ের দিকে এইভাবে চোখ তুলে তাকাস তবে চোখ উপরে ফেলবো যা এখান থেকে।”
ছেলেটিও দৌড়ে পালালো এদিকে উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি আমি। কি বলছিলেন একটু আগে উনি? আমি উনার বউ এটা উনি স্বিকার করে ফেললেন আর আমার জন্য ছেলে গুলোর সঙ্গে মারপিট করলেন। আমাকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া বললেন,
-“ভয় পেয়েছিস? এগুলো নিয়ে ভাবিস না। এই নে তোর আইসক্রিম।”
আমি মুড অফ করে বললাম,
-“থাক এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না আপনি বাসায় চলুন আমি বাসায় যাবো।”
অনুরাগ ভাইয়া চেচিয়ে বলে উঠলেন,
-” এই চুপ! তুই আইসক্রিম খাবি বলছিলি এখন খাবিনা মানে কি? তোকে আইসক্রিম খেতে হবে সো চল ঐদিকটাই।”
ইচ্ছে না থাকা স্বর্তেও আইসক্রিমটা নিয়ে নদীর ওইদিকটাই গেলাম। ভাইয়া আর আমি আইসক্রিম নিয়ে গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে নদী দেখতে থাকলাম। আমি চুপচাপ আইসক্রিম খেতে শুরু করলাম। ভাইয়া বুঝতে পারলো কিছুক্ষণ আগের ঘটনার জন্য আমার মন খারাপ তাই উনি বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলতে লাগলেন যেনো আমার মন খারাপ ভালো হয়ে যাই। আর এটাই হলো একটা সময় পর উনার কথা শুনে হাসতে লাগলাম। আমাকে হাসতে দেখে ভাইয়াও হাসতে শুরু করলো। আমি আইসক্রিম খেতে খেতে কথা বলছিলাম। আমার কথা শোনার চেয়ে মাঝে মাঝে তাকাতে লাগলেন আমার দিকে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আইসক্রিমে মুখ দিতেই উনি টুপ করে চুমু খেলেন আমার গালে। আমি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে গেলাম। ভাইয়া একবারো আমার দিকে না তাকিয়ে মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে গেলো। আমি ওইভাবেই দাড়িয়ে রইলাম। এরপর অনুরাগ ভাইয়া গাড়ির হর্ণ দিতে লাগল আমি হাতের অবশিষ্ট আইসক্রিমটা মুখে পুরে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। উনি মুচকি হেসে গাড়ি চালাতে শুরু করলেন এদিকে আমার যেন দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।
রাতে ডিনার টেবিলে আঙ্কেল আন্টি আমার ঘুরাঘুরি কেমন হলো এইবিষয়ে জানতে চাইলেন। আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভালো বললাম। এমন সময় ভাইয়া বিষম খেয়ে বললেন আমার কাজ আছে আম্মু আমি উঠলাম। এদিকে উনি চলে গেলে আঙ্কেল আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালেন আমি ও একটা হাসি দিয়ে বললাম আমার ও পরীক্ষা সামনে একটু পড়াশোনা করা দরকার গেলাম আমি।
_____________
এইভাবে বেশকিছুদিন পার হয়ে যাই। আস্তে আস্তে আমার পরীক্ষার ডেট চলে আসলো। এদিকে অনুরাগ ভাইয়াও অনেকটা ব্যস্ত হয়ে পরলো তবুও আমার পরীক্ষা ব্যপারে যাবতীয় খোঁজ খবর নিতে লাগলো। বাসায় একটা টিচারের ব্যবস্থা করে দিলো উনি। তাছাড়া ল্যাবে যাওয়ার আগে উনি আমাকে কলেজে পৌঁছে দিত প্রতিদিন । একদিন উনি ব্যস্ত থাকায় আয়মান আঙ্কেলকে বললেন কলেজে পৌঁছে দিতে। তখন অবশ্য আমার পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে আমি অপেক্ষা করছিলাম আঙ্কেলের জন্য। এদিকে মেধা ওর আব্বুর সঙ্গে চলে যায়। আমি আঙ্কেল আসবে বলে থেকে গেলাম। প্রাই আধাঘন্টা লেট করে আসলেন আঙ্কেল। আঙ্কেলের সঙ্গে পরীক্ষা বিষয়ে কথা বলছিলাম আর আসছিলাম বেশ হাসি খুশি ছিলাম আমরা বাসায় আসার পথে দুটো কালো রঙের গাড়ি আমাদের গাড়ির সামনে দাঁড়ায় যার জন্য আয়মান আঙ্কেল ঠিক মতো ব্রেক না কষায় সরাসরি ধাক্কা লাগে। আয়মান আঙ্কেলের আর আমার কপালে আঘাত লাগয় রক্ত পরতে থাকে। ব্যাস ওদিকে একটা গাড়ি উল্টে যাই। দ্বিতীয় গাড়ি থেকে কয়েকজন লোক এসে আমাকে গাড়ি থেকে বের করে। আঙ্কেল ও মাথার কাটা যাইগায় হাত দিয়ে ধরে বলল,
-” কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমার বউমাকে?”
এদিকে মাথায় প্রচণ্ড জরে আঘাত লাগার জন্য সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে আমার। আমাকে ওইভাবেই গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে যেতে লাগে। আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে বললাম কে তোমরা ছাড়ো আমাকে। ওদের মধ্যে একজন থাপ্পড় দেয় আমাকে। আমি ওইভাবে সেন্সলেস হয়ে যাই।
যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে চেয়ারে বাধা অবস্থায় পাই। আশেপাশে সব জাইগায় নিজের চেহারা দেখতে পাই আমি। চারপাশে সবজাইগায় আয়না। জ্ঞান ফিরতেই রুমের ভিতরে আওয়াজ আসে তো মিসেস অনিরুদ্ধ জুবায়ের কেমন লাগছে এখন?
আমি আয়নায় দেখলাম কপাল কেটে রক্ত শুকিয়ে গেছে চুল গুলো এলোমেলো। নিজেকে আয়নায় দেখে আতকে উঠলাম। আর রুমের ভেতরে যে আওয়াজ টা আসছে শুনেই ভয় পেয়ে গেলাম আমি।
-“কে আপনি,? আমাকে এখানে কেনো এনেছেন ছেড়ে দিন আমাকে! বলেই চেয়ার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। ”
রুমে লাউডস্পিকার থেকে ধমকের আওয়াজ আসতে লাগলো এমনটা করার চেষ্টা করবেন না মিসেস জুবায়ের!
এমন রুঢ় কথায় চমকে উঠলাম। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে আমি কাপতে শুরু করলাম আল্টিমেটলি।
তারপর হুট করে লাইট অফ হয়ে যায়। স্পিকারে আওয়াজ ও বন্ধ হয়ে যায়। আমি ভয়ে রিতিমতো কাপাকাপি আরো দ্বিগুণ হয়ে যাই। কাপাকাপা হাতে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে লাভ হলোনা।
___________
এদিকে আয়মান আঙ্কেল কপালের আঘাত সামনে ক্র্যাচ হওয়া গাড়িটা নিয়ে সরাসরি অনুরাগ ভাইয়ার ল্যাবে চলে যায়। ল্যাবে যেতেই অনুরাগ দৌড়ে এসে বলল কি হয়েছে আব্বু তুমি এমন অবস্থা কেনো?
-” আঙ্কেল প্রচন্ড হাপাচ্ছে। নিজেকে কোন মতে সামলাতে পারছে না। কথা বলতে গেলেও আটকে আসছে।”
এইটা দেখে অনুরাগ ভাইয়া আঙ্কেলকে জরিয়ে বলল,
-” কি হয়েছে আব্বু বলো আমাকে?তোমার মাথায় কে আঘাত করলো? ”
-” অনি তৃষা,,,,
” কি হয়েছে তৃষাতুরের? কি হলো আব্বু বলো কি হয়েছে তৃষাতুরের?কোথায় ও?
-“ওরা ওকে তুলে নিয়ে গেছে অনি!!”
___________
কথাটা শুনে অনুরাগ নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে ফেলে। সে কোন কিছু না ভেবেই জনকে ফোন করে ওদের গার্ড সহ আসতে বলে। এদিকে ল্যাবে উপস্থিত সবাই কে তৃষাতুরের ঠিকানা ট্র্যাপ করতে বলে। অনুরাগ তৃষাতুরকে পরীক্ষার জন্য একটা ঘরি দিয়েছিলো ওখানে জিপিএস ট্র্যাকার যোগ ছিল। অনুরাগ সন্দেহ করেছিলো এমন একটা হামলা হতে পারে এজন্য আগে থেকে এইটা ওর প্লান ছিলো। আর আজকে প্লান মাফিক সে তৃষাতুরকে কলেজে পৌঁছে দেয়নি। অনুরাগ আগে থেকে বাসায় গার্ড রেখেছিলো যাতে করে জোহা সরাসরি হামলা করতে না পারে। এজন্যই ওর প্লান মতো তৃষাতুরকে তুলে নিয়ে যাই।
অনুরাগ দেরি না করে ব্লেজার আর বুট পরে ব্যাক সাইটে একটা গান নিয়ে সেই জাইগার উদ্দেশ্যে বের হয়। যাওয়ার আগে আয়মান আঙ্কেল কে বলে আব্বু ফিরলে তোমার বউমাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরবো না হলে ফিরবো না চিন্তা করোনা আমার জন্য। তারপর অনুরাগ তার লোকেদের কিছু একটা ইসারা করে চলে যায় তৃষাতুরকে বাচাতে।
এদিকে মাহির অনুরাগের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে। অপরদিকে জন অনুরাগের সঙ্গে যেতে চাইলে অনুরাগ তাকে প্লান মাফিক আসতে বলে।
অনুরাগ জিপিএস ট্রাকার সো করা জাইগায় পৌঁছনোর পর দেখতে পাই এটা বড় সড় কোন বিল্ডিং। আর ভিতরে বেশ কয়েকজন গুন্ডা সকলের হাতে একা করে অস্ত্র। অনুরাগ গুলি করে বেশ কয়েকজন কে মেরে দেয়। আর বাকি থাকে কয়েকজন। ওদের সঙ্গে হাতে হাতে মারপিট করে অনুরাগ। সে উপরে উঠতে থাকে একটা সময় পর একটা রুমে আরো বেশ কয়েকটি গুন্ডাকে দেখতে পাই সে। এবার ওদের সঙ্গে মারা মারির পর ছয় তলাতে গেলে দেখতে পাই তৃষাতুরে সেই ঘড়িটা মেঝে তে পড়ে আছে। কিন্তু সেখানে তৃষাতুর নাই। ওখানে একটা ভিডিও ফুটেজ চলছে সেখানে একজন কালো মাস্ক পরা ব্যাক্তি অধুরাগের উদ্দেশে্য বলছে,
“”ওয়েলকাম।
নিজেকে খুব চালাক মনে করিস ঠিক না? ভেবেছিস বউয়ের হাতের ঘড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার লাগিয়ে ওকে বাচাতে পারবি? আমি তোকে চিনি। জানতাম তুই এমন কিছু একটা প্লান করে রেখেছিস। তাই ওর হাতের ঘড়ি সঙ্গে মোবাইল ভেঙে চুরমার করেছি। তোকে রাস্তায় সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পেয়ে ওকে আগেই সরিয়ে ফেলেছি। এবার বাচিয়ে দেখা “””””
ভিডিওটা শেষ হতেই অনুরাগ স্ট্যান্ড করা ক্যামেরাটা ছুড়ে ফেলে দেয়। আর আশেপাশে কয়েকজনকে মারতে থাকে আর পাগলের মতো জিগ্যেস করতে থাকে তৃষাতুর কথায়? এসব কিছু জোহা দেখতে পাচ্ছিলো আজকে ওর মনের মাঝে অদ্ভুত শুখ অনুভব হচ্ছিলো। অনুরাগ লোকগুলোকে উধুম পেটাতে থাকে আর পাগলের মতো জিগ্যেস করে কোথায় তৃষাতুর কিন্তু কেউ বলতে পারেনি সবাই মার খেয়ে ওইখানে জ্ঞান হারায়। ওইখানে মেঝেতে বসে কাদঁতে থাকে। আজ ওর ভুলের জন্য তৃষাতুরকে ভুগতে হবে এটা ভেবেই ও জোরে চিৎকার করে বলতে থাকে কেনো আমি ওকে একলা ছেড়ে দিলাম!!!!