১৫ বছর বয়সী মা পর্ব-০১

0
23

#১৫_বছর_বয়সী_মা (০১)
#সোফিয়া_সাফা

“আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ আমার সাথে এমনটা করবেন না, আমাকে যেতে দিন, আমি মায়ের কাছে যাবো”

মেয়েটির কান্না শুনে আলভী মেয়েটির কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো, মেয়েটি আলভীর লাল লাল চোখদুটো দেখে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিল,
“আপনি,,,আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আমার খুব ভয় করছে”

মেয়েটির চোখে পানি দেখে আলভী স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো, সে মেয়েটিকে ছেড়ে দুপা পিছিয়ে গেল, আলভী কিছু বলতে চাইছে কিন্তু গলা পুরোপুরিভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় কথাও বের হচ্ছেনা। আলভী অনেক কষ্ট করে বলে ওঠে,
“অ,,,অলি তুমি এখানে কি করছো? তুমি এখন যাও প্লিজ, আমি সঠিক কন্ডিশনে নেই। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো তুমি যাও”

অলি উপায়ন্তর না পেয়ে মেঝেতে বসেই চিৎকার দিয়ে উঠলো,
“কিভাবে যাবো দরজা যে বন্ধ”

আলভী নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে অলিকে টেনে কোলে তুলে নেয়,
“আপনি কেনো এমনটা করছেন? প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন”

অলি আলভীকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে কিল ঘুষি দিতে লাগলো কিন্তু আলভীর মতো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষালি শক্তির সামনে তার শিশু শক্তি নিতান্তই তুচ্ছ বলে গণ্য হলো, আলভী এবার বিরক্ত হয়ে অলিকে খাটের উপর ছুড়ে মা’রলো, তারপর নিজেও অলির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে নিজের শার্টের বাটন খুলতে লাগলো।
“আমার সাথে এরকম করবেন না পায়ে পড়ি, আমি বাচতে পারবোনা”

কাদতে কাদতে অলির অবস্থা খুবই খারাপ মেয়েটা ভয়ে থরথর করে কাপছে, কিন্তু অলির কান্নার আওয়াজ এখন আর আলভী শুনতে পাচ্ছেনা। সে তো তাকিয়ে আছে অলির গোলাপি ঠোঁটজোড়ার দিকে, যেগুলো এইমূহুর্তে তাকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। আলভী নিজের গায়ের শার্টটা খুলে ফেলে দিয়ে অলির পা ধরে নিজের দিকে টেনে আনলো, অলি আর কিছু বলার আগেই আলভী অলির ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিলো। প্রচন্ড ঘৃনায় অলি আলভীর ঠোঁটে কামড় দিয়ে বসলো, আলভী ভীষণ রেগে গেলো সে অলিকে ছেড়ে দিয়ে নিজের ঠোঁটে লেগে থাকা র’ক্তটুকু তর্জনী আঙ্গুলে নিয়ে চোখ কটমট করে অলির দিকে তাকায়। অলি কিছু বলতে চাইলে আলভী অলিকে খাটের সাথে চেপে ধরে রাগান্বিত স্বরে বললো,
“ইউ লিটল হানি’বি, তোমার কি মনে হয় তুমি আমার সাথে পারবে?”

“আমাকে ছেড়ে দিন, হাত জোড় করছি”

“নট টুডে, চলো হানি’বি কম্পিটিশন করি যে কে কাকে কতো বেশি বাইট করতে পারে,”

বলেই একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আলভী অলির উপর ঝাপিয়ে পড়ে, আলভীর এলোমেলো স্পর্শে ছোট্ট অলি ক্ষনে ক্ষনে চিৎকার দিয়ে উঠছিলো। কিন্তু বাইরের সাউন্ড বক্সের শব্দে অলির সেই শীৎকারগুলো পুরোপুরি ভাবে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে, এভাবে চিৎকার করতে করতে একপর্যায়ে অলি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, সেই সুযোগে আলভী বিনা বাধায় পুরোপুরি ভাবে অলির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।

রাত আড়াইটা বাজে, ৩ তলা বিশিষ্ট বিশাল বাড়িটার চারপাশে করা লাইটিং গুলোই জানান দিচ্ছে আজ এই বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান। বাড়ির ভেতরের আবহাওয়া বেশ গরম। কিছুক্ষণ আগেই এই বাড়ির বড় মেয়ে তিশার মেহেন্দি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটেছে। বাড়িতে থাকা প্রত্যেকটা রুম মহিলাদের দখলে হওয়ার ফলস্বরূপ ছেলেদেরকে ড্রইংরুমের মেঝেতেই বেড বিছিয়ে শুতে হয়েছে, ড্রইংরুমে সবাই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে,
,
কারো নাক ডাকার শব্দ কানে পৌছাতেই অলি চোখ মেলে তাকায়, আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে যে সে এখন কোথায় আছে, অলি ডান পাশে ঘুরতেই আলভীর চেহারা দেখে চিৎকার দিতেই যাবে কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেয়।
“এই লোকটার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আবারও আমার সাথে খারাপ কাজ করবে”

ভাবতেই অলি কেদে ওঠে, অলি নিজের উপর থেকে আলভীর হাত পা সরিয়ে উঠে বসতেই কম্ফোর্টার টা সরে যায়। অলি কান্নাভরা চোখে আশেপাশে তাকিয়ে নিজের জামাকাপড় খুজতে লাগলো, সে দেখলো সেগুলো নিচেই পড়ে আছে, অলি নিজের চোখজোড়া মুছে একটা শ্বাস টেনে খাটের বাইরে পা রাখতেই সমস্ত শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে সেসব সাইডে রেখে সে নিজের কাপড়গুলো তুলে নিলো, দ্রুত হাতে কাপড়গুলো পড়ে আলভীর দিকে শেষবারের মতো তাকিয়ে দরজার সামনে এসে দাড়ালো। সে দরজায় হাত দেওয়ার আগেই আকষ্মিকভাবে দরজাটা আপনা-আপনিই খুলে গেলো। দরজার অন্যপাশে থাকা ব্যাক্তিটাকে দেখে অলি প্রচন্ড পরিমানে ভয় পেয়ে যায়। সামনে থাকা ব্যাক্তিটা অলিকে অকথ্য ভাষায় গা’লাগা’লি করে অলিকে টানতে টানতে কোথাও নিয়ে চলে যায়।

অন্যদিকে আসমা বানুর ঘুম ভাঙ্গতেই সে নিজের মেয়েকে খুজতে লাগলো, অন্যপাশে থাকা নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে,
“আমার মেয়েটা কোথায় গেলো? এখনো আসলোনা কেনো? গানবাজনা শেষ হয়েছে তো অনেকক্ষণ হয়ে গেলো”

মনে মনে কথাগুলো বলতে বলতেই আসমা বানু খোলা দরজাটার দিকে তাকায়, কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে দরজা দিয়ে বের হতেই অলি এসে তাকে জড়িয়ে ধরে, অলির এহেন কর্মকান্ডে আসমা বানু ঘাবড়ে যায়।
“কি হয়েছে মা, কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?”

অলি সবকিছু বলতে চাইলেও বলে উঠতে পারেনা। উল্টো কান্না করতে লাগে, আসমা বানু অলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“কি হয়েছে অলি, কাদছিস কেনো? কোথায় ছিলি তুই?”

অলি মাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের চোখ মুছে হাসার চেষ্টা করে বলে,
“মা আমি ড্রইংরুমের সোফাতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, আর তুমিতো জানোই আমি একা ঘুমাতে পারিনা। তাই ঘুম ভাঙ্গতেই আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম”

আসমা বানু অলির বাচ্চামো কথায় মুখে হাসি টেনে বলে ওঠে,
“তখন থাকতে চেয়েছিলি কেনো বলতো? আমি তো জানি তুই বেশি রাত অব্ধি জেগে থাকতে পারবিনা।”

“স্যরি মা আমার ভুল হয়ে গিয়েছিলো, আমি আর কক্ষনো তোমাকে ছাড়া কোথাও থাকবোনা।”

চারপাশে অন্ধকারের মাঝে দু একটা ডিম লাইট জ্বলছে, সেই আলোতে আসমা বানু অলির চোখের পানি দেখতে পাচ্ছিলোনা। মেয়েটা বিনাশব্দে কান্না করছে, আসমা বানু অলির হাত ধরে রুমের ভেতরে নিয়ে গেলো তারপর অলিকে নিজের অন্যপাশে শুইয়ে দিয়ে বললো,
“আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুই ঘুমা”

অলি হাতের উল্টো পিঠে নিজের চোখের জলগুলো মুছতে মুছতে মনে মনেই বললো,
“আমি আর ঘুমাতে পারবোনা মা, আমার ভীষণ ভয় করছে। আমি তোমাকে কিছু বলতেও পারলাম না মা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও”

সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে আলভীর ঘুম ভাঙ্গলো, সে ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখে নিলো। তারপর আড়মোড়া ভেঙ্গে খাট থেকে নামতেই নিজেকে কাপড় বিহীন আবিষ্কার করে বড়সড় ধাক্কা খেলো। সে এতোটাই চমকে গেছে যে রিয়েকশন দিতেই ভুলে গেছে, এরইমাঝে তার রাতের কিছু কিছু কথা মনে পড়তে লাগলো, আলভী দ্রুতগতিতে ফ্লোর থেকে নিজের কাপড়গুলো তুলে গায়ে পড়ে নিলো। তারপর
ধপ করে খাটের উপর বসে পড়লো।
“এসব কি করে হলো?”

আলভী মাথা চেপে ধরে বসে রইলো, তার প্রচন্ড পরিমানে মাথাব্যথা করছে।
“রাতে কি হয়েছিলো আমার সাথে?”

আলভী আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। খাটের উপর থেকে কম্ফোর্টার টা সরাতেই আলভীর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। বিছানার মাঝে ছোপ ছোপ র’ক্তের দাগ, তার পাশেই একটা নূপুর পড়ে আছে। আলভী নিজের চুল টেনে ধরে মনে করার চেষ্টা করছে,
“এটা আবার কার নূপুর, এখানেই বা আসলো কেমন করে?”

আলভী নিজের হাতপা চেক করে দেখতে লাগলো কিন্তু তার হাতপা ঠিকঠাকই আছে,
“আমার তো কোথাও কে’টে যায়নি, তাহলে,,, তাহলে এত র’ক্তই বা কোত্থেকে আসলো?”

আলভী রেগেমেগে কম্ফোর্টার টা ছুড়ে ফেলে দিলো,
“রাতে আমার সাথে একটা মেয়ে ছিলো সেই ব্যাপারে আমি সিওর কিন্তু কে ছিলো? আর রাতে আমারই বা কি হয়েছিলো, আমি কি করেছি মেয়েটার সাথে? আর কেনোইবা করেছি? শিট আমার কিছু কেনো মনে পরছেনা?”

আলভী বিরক্ত হয়ে খাটের উপর বসতেই তার মা শাহানাজ বেগম আলভীর রুমে প্রবেশ করেন, তাকে দেখে আলভী তড়িঘড়ি করে র’ক্তের দাগগুলোর উপরেই বসে পড়ে, এদিকে শাহনাজ বেগম এসে আলভীকে জাগ্রত অবস্থায় দেখে বেশ অবাক হলেন,
“কি ব্যাপার আজকে সূর্য কোনদিক দিয়ে উঠলো শুনি? আমার লাটসাহেব ছেলেটা সাত সকালে কারো সহায়তা ছাড়াই জাগ্রত হলো কিভাবে?”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে মায়ের দিকে তাকালো, শাহানাজ ছেলের চেহারা দেখে থতমত খেয়ে গেলেন, মায়ের এরকম চাহনি দেখে আলভীও ঘাবড়ে গেলো। শাহানাজ বেগম কিছু বলার আগেই ঊর্মিলা দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। ঊর্মিলা কারো দিকে না তাকিয়েই বলতে লাগলো,
“মা তুমি এখানে, আর আমি তোমাকে সারাবাড়ি খুজছি, তারপর ভাবলাম তুমি তো আবার তোমার ছেলে বলতে অজ্ঞান, তাই ঘুরে ফিরে এখানেই চলে এলাম, মা আমি আমার লাল রঙের জামাটা পাচ্ছিনা তুমি একটু খুঁজে দেবে প্লিজ?”

শাহানাজ বেগম এখনো আলভীর দিকেই তাকিয়ে আছে, ঊর্মিলা মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের ভাইয়ের দিকে তাকাতেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। আলভী ঊর্মিলাকে হাসতে দেখে ভীষণ রেগে যায়,
“সকাল সকাল দাত দেখাচ্ছিস কেনো? তুই যে পেত্নী তা দাত না দেখালোও বুঝতে পারে সবাই।”

আলভীর কথা শুনে ঊর্মিলার হাসি থেমে গেলো,
“মা দেখলে, দেখলে তোমার লাটসাহেব ছেলে আমাকে কিভাবে বললো? শোন ভাইয়া তুই নিজের চেহারাটা আয়নায় গিয়ে দেখ, আমাকে পেত্নী বলা তাইনা। তোকে একদম কান কাটা বাদরের মতো দেখাচ্ছে, ছ্যাহ ছ্যাহ ছ্যাহ তোর মেহেন্দি দিতে ইচ্ছা করেছে তুই আমাকে বলতে পারতি আমি তোকে দিয়ে দিতাম। আমি যদিওবা মেহেন্দি দিতে পারিনা, কিন্তু এর থেকে তো ঢের ভালো পারতাম”

“আমি মেহেন্দি দেবো কেনো? ছেলেরা মেহেন্দি দেয়না বুঝলি, তোর মতো পেত্নীগুলোই দেয়”

ঊর্মিলা আবারও হেসে উঠলো, আলভী শুধু পারছেনা বসা থেকে উঠে গিয়ে ঊর্মিলার গালে ঠাটিয়ে চড় মে’রে দিতে, তাকে নিয়ে হাসা তাইনা।
“বের হ এই রুম থেকে, নইলে তোর দাত আমি ভেঙ্গে ফেলবো”

“তুই চাইছিস তোর চেহারার এই অবস্থা দেখেও আমি চুপ করে থাকবো? নো ভাইয়া, আচ্ছা ওয়েট ১ মিনিট তোর লজ্জা করলোনা এভাবে সারামুখে মেহেন্দি মেখে বসে থাকতে? তোর মেহেন্দি এতো পছন্দ আমি সত্যিই জানতাম না রে, নইলে তিশা আপুকে বাদ দিয়ে আগে তোকে মেহেন্দি পড়ানোর ব্যাবস্থা করতাম।”

আলভী ঊর্মিলার কথা শুনে তব্দা খেয়ে গেলো। কিন্তু সে বসা থেকেও উঠতে পারছেনা।
“মা তোমার মেয়েকে নিয়ে যাওতো নইলে আমি কিন্তু ওর মাথার সব চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো। আমার সাথে মশকরা করা”

চলবে,,,