#১৫_বছর_বয়সী_মা (০৭)
#সোফিয়া_সাফা
“কলেজ শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতেই লেট হয়ে গেছে।”
তাদের কথার মাঝেই রূপসার মা রুনা খাতুন সেখানে এসে বলেন,
“রূপ তুই এখানে? আমি তোকে তোর নানুর কাছে যেতে বলেছিলাম। উনি তোকে ডেকেছিলেন”
“আসলে মা আমি যেতেই নিচ্ছিলাম কিন্তু তখনই মামনি কফি দিয়ে বললো এভি ভাইয়াকে দিয়ে যেতে। সেই জন্যই আবার এদিকে এসেছি।”
“আচ্ছা এখন যা। মায়ের চুলগুলো বেধে দে গিয়ে”
রূপসা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। রূপসা যেতেই ঊর্মিলা ফুপির উদ্দেশ্যে বললো,
“ফুপি আমার জন্য একটু পাস্তা বানিয়ে দেবে? তোমার হাতের পাস্তা অনেক মজাদার”
“হয়েছে হয়েছে, ফুপিকে আর মাস্কা লাগাতে হবেনা। খাওয়ার সময় ফুপি আর চকলেট গিফট করার সময় কাকিমাকে খুজে বেড়াস। ফাজিল মেয়ে”
ঊর্মিলা জিভ কেটে ফুপির দিকে তাকালো,
“তোমাকে এসব কে বলেছে ফুপি, আমি কাকিমার থেকে তোমাকে বেশি ভালোবাসি। ওনাকে তো কন্ট্রোলে রাখার জন্য মাঝেমাঝে চকলেট গিফট করি।”
ঊর্মিলার কথা শুনে রুনা খাতুন হেসে উঠলেন। মেয়েটা বড্ড ছেলেমানুষী করে। ঊর্মিলা রুনা খাতুনের শাড়ির আচল ধরে কিউট ভাবে বললো,
“দেবেনা ফুপি?”
“এরকম মুখ বানালে কি আর না দিয়ে পারি? দিচ্ছি আমি। বাইরে থেকে এসেছিস আগে ফ্রেশ হয়ে নে। তারপর নিচে আয়”
ঊর্মিলা খুশি হয়ে রুনা খাতুনকে জড়িয়ে ধরে।
শাহানাজ বেগম কিচেনে বসে সার্ভেন্টদের রান্নার বিষয়ে তদারকি করছেন। আর যা যা রান্না হবে সেইসব বলে দিচ্ছেন। তখনই তার একমাত্র ছোটো জা নূরনাহার সেখানে আসে।
“ভাবী আজকে অনেক কিছু রান্না করছো দেখছি, ব্যাপার কি?”
শাহানাজ বেগম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
“ভুলে গেলে আজকে এভি প্রথমবারের মতো ওপেন হার্ট সার্জারী করবে। সেই জন্যই একটু ওর পছন্দের খাবার রান্না করতে বলেছি”
“ওহ হ্যাঁ ভুলেই গিয়েছিলাম।”
শাহানাজ বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলেন,
“আমি একটা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নূর।”
“হ্যাঁ বলোনা ভাবী কি সেটা?”
“ছেলেটার ২৮ বছর হয়ে গেছে এখন ওর বিয়ের ব্যাপারে ভাবা উচিৎ। ছেলে কবে বিয়ে করতে চাইবে সেই আশায় আর বসে থাকা ঠিক হবেনা।”
“হুম ভাবী তুমি ঠিকই বলেছো। এভি বাবা আজকালকার যুগের ছেলে বেশি দেরি করাটা ঠিক হবেনা। কে বলতে পারে কখন আবার কার প্রেমে পড়ে যায়।”
নূরনাহারের কথা শুনে শাহানাজ বেগম একটু রেগেই গেলেন,
“এভিকে নিয়ে এসব মন্তব্য কোরোনা নূর। এভি সেইরকম ছেলে নয় তাছাড়া আমি ওর জন্য রূপসাকে পছন্দ করে রেখেছি। তাই অন্য কোনো মেয়ের প্রেমে পড়া তো দূর তাকে নিয়ে চিন্তা করাও ওর জন্য নিষিদ্ধ।”
নূরনাহার চমকে উঠে বললেন,
“ভাবী তুমি এসব কি বলছো? রূপসাকে এভির জন্য পছন্দ করে রেখেছো মানে? আমাদেরকে তো কখনো এই বিষয়ে বলোনি”
“প্রয়োজন হয়নি তাই বলিনি। এখন প্রয়োজন আছে তাই বলছি। রূপসাকে আমি অনেক আগে থেকেই এভির জন্য পছন্দ করে রেখেছি”
“এভি বাবা জানে এসব?”
“না ও জানবে কিভাবে আমি কথাটা তোমাকেই আগে বলেছি।”
“ভাবী আমি বলিকি এই বিষয়টা নিয়ে আগে এভির সাথে কথা বললে ভালো হতোনা?”
নূরনাহারের কথা শুনে শাহানাজ বেগম ভারী অসন্তুষ্ট হলেন,
“এভি আমার ছেলে নূর। আর আজ পর্যন্ত এভি কখনোই মায়ের মুখের উপরে কথা বলেনি। আমি যা বলেছি তাই করেছে। ভবিষ্যতেও করবে কারণ ওরা জানে মায়ের কথা শুনলে ওদের ভালোই হবে”
নূরনাহার একটা শ্বাস ফেলে বললেন,
“ভাবী ছেলেকে কিভাবে এমন কন্ট্রোলে রেখেছো বলবে? আমি জানি এভি তোমাকে অনেক ভালোবাসে, আর এটাও সত্যি যে ওকে তুমি যা বলবে ও তাই করবে। আর অন্যদিকে আমার ছেলেটাকে দেখো কতবার বুঝিয়েছি এভি বাবার মতো পড়াশোনা করে ভালো কিছু হবি কিন্তু কে শোনে কার কথা। সারাদিন খেলাধুলা নিয়ে পরে থাকে সামনে অনার্স ৩য় বর্ষের পরীক্ষা কিন্তু ওনার সেই বিষয়ে হুশঁই নেই।”
শাহানাজ বেগম নূরনাহারের কথাগুলো পুরোপুরি শোনেনি। সে আছে অন্য চিন্তায়, ইদানীং আলভীর মতিগতি তার কাছে ভালো ঠেকছেনা সেই রাতের সেই অদ্ভুত ঘটনার পর সে ঝুকি নিতে চাইছেনা। যদিও সে জানেনা সেদিন রাতে ঠিক কি ঘটেছিলো তবুও সে আলভীর বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায়। ছেলে বড় হয়েছে, বিয়ের কথা বলতে সংকোচবোধ করছে হয়তো। এই সবকিছু বিবেচনা করেই সে রূপসার সাথে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এভির বিয়েটা দিয়ে দিতে চাইছে।
,
রাত ৮ টার মধ্যে এভি ডিনার করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। হসপিটালে এসে নিজের চেম্বারে বসতেই দিহান তার চেম্বারে ঢোকে, দিহান এই হসপিটালে অর্থোপেডিক্স ডাক্তার হিসেবে গতবছরেই জয়েন করেছে। সে আর আলভী এক সাথেই mbbs কমপ্লিট করেছে যদিও তারপর তাদের সেকশন আলাদা হয়ে গিয়েছিলো।
“কিরে দোস্ত আজকে তোর লাইফের প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারী তোর অনূভুতি কেমন?”
“হুম ভালো”
“তুই এতো কুল আছিস কিভাবে নার্ভাস লাগছেনা?”
আলভী হাতে থাকা বইটা সাইডে রেখে ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠলো,
“জীবনে একবার নার্ভাস হওয়ার এক্সপেরিয়েন্স হয়েছিলো। যখন আমি প্রথমবার অলির সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম তখন। এর আগেপরে নার্ভাস হইনি কখনো”
আলভীর কথা শুনে দিহান হাসি আটকে সিরিয়াস মুখ নিয়ে বসে আছে। আলভী নিজের ফিলিংস গুলো কখনোই চেপে রাখেনা। সে যখন যেমন ফিল করে তখনই সেটা স্বীকার করে নেয়। এই একটা ব্যাপার তার খুবই ভালো লাগে।
“রিফাতের ব্যাপারে কিছু জানতে পারলি?”
রিফাতের কথা উঠতেই আলভীর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো,
“আজ এইমূহুর্তে ওর কথা না বললেই পারতি। দিলি মুডের বারোটা বাজিয়ে। যা বের হ এখান থেকে”
দিহান কিছু বলতে চাইলে আলভী রেগেই বলে,
“আমি তোকে বের হতে বলেছি যা এখন।”
দিহান একটা শ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেলো।
,
অন্যদিকে অলি তার মা বাবার সাথে রাতের খাবার খেতে বসেছিলো। আসমা বানু অলি আর লিয়াকত হোসাইনকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজেও খেতে বসে পরলেন। অলির মা বাবা খেতে খেতেই নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু অলি খাবার নিয়ে শুধু নাড়াচাড়া করছে, বিষয়টা আসমা বানু লক্ষ্য করেছে। আজকাল অলির খাবারের প্রতি অনীহা বেড়েই চলেছে, যেই মেয়েটা মাছ ছাড়া ভাত খেতে পারতোনা সেই মেয়েটা মাছ দেখলেই নাক সিটকাচ্ছে।
“অলি খাচ্ছিস না কেনো? মাছ দিতে বারণ করেছিস বলে দেইনি। শুধু ডালই দিয়েছি তাও মুখে দিচ্ছিস না কেনো?”
মায়ের কথা শুনে অলি তড়িঘড়ি করে একমুঠ ভাত মুখে দিতেই তার বমি চলে আসে। অলির অবস্থা দেখে তার মা বাবা দুজনেই বিচলিত হয়ে পড়লো, অলি দ্রত চেয়ার ত্যাগ করে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করতে লাগলো। ১০ মিনিট পর অলি চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে মা বাবার সামনে এসে বসলো। লিয়াকত হোসাইন চিন্তিত স্বরে বলে উঠলেন,
“আম্মু তোর কি ফুড পয়জনিং হয়েছে নাকি? কিছুই তো খেতে পারছিস না”
আসমা বানু রাগী কন্ঠে বললো,
“কে জানে স্কুলে গিয়ে আচার জাতীয় কিছু খেয়েছে হয়তো সেই জন্যই এরকম হচ্ছে। অলি তোকে আমি বারবার বারণ করেছি যে বাইরের কিছু খাবিনা। তারপরও কেনো খাস বলতো?”
অলি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলো। সে নিজেও ব্যাপারটা বুঝতে পারছেনা। ইদানীং তার শরীর সঠিক অবস্থায় নেই, তার উপর সে বাইরের জিনিসও খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। মোটকথা সে ঘরের বাইরের কোনো জিনিসই খেতে পারছেনা। আসমা বানু খাবার দাবার গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
“আজকে থেকে তোর পকেট মানি বন্ধ, টাকা না থাকলে খেতেও পারবিনা সেটাই ভালো হবে।”
লিয়াকত হোসাইন উঠে এসে অলির মাথায় হাত রেখে বললো,
“এভাবে বলছো কেনো? আমার মেয়ে এতোটাও ছোটো নয় যে নিজের শরীরের অবস্থা বুঝবেনা। ওতো জানেই তাইনা যে বাইরের জিনিস খাওয়া ভালো নয়।”
“মেয়েকে আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলোনা। ও এতোটাও বড় হয়ে যায়নি যে শাসন করার প্রয়োজন হবেনা।”
অলি স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে ওঠে,
“মা বাবা তোমরা চিন্তা কোরোনা আমি ঠিক আছি”
বলেই অলি নিজের রুমে চলে যায়, তারপর দরজা খোলা রেখেই বিছানায় শুয়ে পরে। কিছুক্ষণ যেতেই আসমা বানু অলির রুমে আসে। অলি কোলবালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছে, আসমা বানু অলির পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মেয়েটাকে প্রতিদিন এভাবে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যায় আসমা বানু। মাঝে মাঝে অলির সাথেই ঘুমিয়ে যায়, অলিও জানে তার মা তাকে একটু শাসন করলেও তাকে অনেক বেশিই ভালোবাসে। অলি বালিশে মুখ গুজে কান্না করছে, সে জানেনা কেনো কিন্তু তার মন ভীষণ খারাপ। সেদিনের ঘটনার পর থেকে সে আস্তে আস্তে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। হয়তো সেই জন্যই তার শরীর দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হয়তো সেই জন্যই সে অসুস্থ হয়ে পরছে। কান্নার ফলে অলির শরীর কেপে উঠছে, আসমা বানু মেয়েকে কাদতে দেখে ঘাবড়ে গেলেন। মাথায় হাত রেখে অদূরে গলায় বলে উঠলেন,
“আমার ছোট্ট পরীটা কি মায়ের কথায় কষ্ট পেয়েছে?”
বলেই আসমা বানু অলিকে নিজের দিকে ঘোরালেন। অলি দ্রুত চোখজোড়া মুছে নিলো।
“কান্না করিস না আমি তো তোকে ভয় দেখিয়েছি। পকেট মানি বন্ধ করবোনা। এতোটুকুতেই কাদলে চলে?”
অলি কথা না বাড়িয়ে মায়ের কোলে মাথা রাখলো,
“আমার ভীষণ খারাপ লাগছে মা”
আসমা বানু চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
“তোর শরীর কি বেশিই খারাপ লাগছে? তোর বাবাকে ডাক দেবো?”
অলি মাথা নাড়িয়ে বললো,
“আমি ঠিক আছি মা, আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেও প্লিজ”
,
রাত ২টার দিকে আলভীর প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারী সফলভাবে শেষ হয়। সে নিজের চেম্বারে এসে ড্রেস চেইঞ্জ করে বাড়িতে চলে আসে। শাহানাজ বেগম, রুনা খাতুন আর রূপসা আলভীর অপেক্ষায় বসে ছিলো। কলিংবেল বাজতেই রূপসা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। রূপসাকে দরজা খুলে দিতে দেখে আলভী একটু অবাক হলো,
“তুই ঘুমাসনি?”
রূপসা আলভীর কথা শুনে চমকে তাকায়, সচরাচর আলভী তার সাথে খুব একটা কথা বলেনা। তাই আলভীর এইটুকু কথা শুনেই রূপসা খুশি হয়ে যায়,
“না তোমার অপেক্ষাতেই বসে ছিলাম।”
আলভী রূপসাকে পাশ কাটিয়ে ড্রইংরুমে এসে দাঁড়ায়,
“কাম অন, তোমরা জেগে আছো কেনো? এতোরাত অব্ধি জেগে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়”
শাহানাজ বেগম ছেলের সামনে এসে দাড়ালেন,
“আমরা ঘুমিয়ে গেলে দরজা কে খুলে দিতো?”
“মা জানোই তো এক্সট্রা চাবি ছিলো আমার কাছে। তবুও ভুলবশত কলিংবেল প্রেস করে ফেলেছি”
রুনা বেগম বললেন,
“বাবা তুমি না আসা পর্যন্ত তোমার মা কি ঘুমাতে পারতো?”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে মায়ের দিকে তাকালো,
“আচ্ছা আমি তো এসেই গেছি। এবার গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাও”
বলেই আলভী নিজের রুমে চলে গেলো। বাকি সবাইও নিশ্চিন্তমনে যার যার রুমে চলে গেলো।
১ সপ্তাহ পর,,, বিকাল বেলা,
শাহানাজ বেগম আলভীর রুমের দরজায় নক করে। আলভী তখন ল্যাপটপে ভিডিও কলে দিহানের সাথে কথা বলছিলো। মাকে রুমে আসতে দেখে আলভী দিহানের কল কেটে দিয়ে ল্যাপটপ সাইডে রাখলো। শাহানাজ বেগম আলভীর সামনে বসে বলে উঠলেন,
“এভি তোর সাথে কিছু জরুরী কথা আছে”
আলভী ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকায়, সে বুঝতে পেরেছে তার মা তাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছুই বলতে এসেছে। আলভী দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ঊর্মিলা দরজা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে আর মুখ টিপে হাসছে।
“দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাত দেখাচ্ছিস কেনো। যা ওখান থেকে”
আলভীর রাগী কন্ঠ শুনে ঊর্মিলা হাসতে হাসতেই চলে গেলো। আলভী এবার স্বাভাবিক কন্ঠে মাকে বললো,
“হুম মা বলো কি বলবে।”
শাহানাজ বেগম ভণিতা না করেই বলে উঠলেন,
“আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি”
কথাটা বোধগম্য হতেই আলভী বড়বড় চোখ করে মায়ের দিয়ে তাকায়।
“বিয়ে মানে? মা তুমি এসব কি বলছো?”
“হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি। নিচে আয় তোকে সাথে নিয়েই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হবে”
কথাটা বলেই শাহানাজ বেগম আলভীর রুম ত্যাগ করেন। আলভী তো এখনো বিষ্ময়ে বিমূঢ় হয়ে বসে আছে, কিছুক্ষণ যেতেই তার হুশ ফেরে। মায়ের বলা কথা গুলো মনে পড়তেই তার গলা শুকিয়ে আসছে। বেশ কিছুক্ষণ পর ঊর্মিলা আলভীর রুমের দরজার সামনে এসে বলে,
“মা তোকে নিচে ডাকছে ভাইয়া”
আলভীর মেজাজ চরম খারাপ হলো, এভাবে তাকে না জানিয়ে হঠাৎ করেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার কি মানে?
“তুই যা আমি আসছি”
“মা তোকে নিয়েই যেতে বলেছে, নইলে তো জানিসই হুদাই আমাকে বকবে”
আলভী বেড থেকে নেমে দাড়ালো, হতাশায় নিজের চুল টানতে লাগলো। ভীষণ রাগ উঠছে, কিন্তু এখন মাথা ঠান্ডা রেখে সবকিছু করতে হবে। ঊর্মিলা এতক্ষণ হাসলেও এখন ভাইয়ের অবস্থা দেখে তার হাসি থেমে গেছে,
“ভাইয়া তুই কি বিয়ে করতে চাস না?”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে বোনের দিকে তাকায়,
“না, আমি বিয়ে করতে চাইনা”
আলভীর কথা শুনে ঊর্মিলা অবাক হয়ে গেলো,
“কিন্তু কেনো ভাইয়া? তোর বিয়ের বয়স অনেক আগেই হয়ে গেছে, এখনও বিয়ে করতে চাসনা কেনো? এবার অন্তত ভাবীর মুখ দেখতে দে”
আলভী বিরক্ত নিয়ে ঊর্মিলার দিকে তাকায়। ঊর্মিলা কাদোকাদো মুখ করে বলে,
“তোর তো কোনো গার্লফ্রেন্ডও নেই, আর আমার মনেও হয়না ভবিষ্যতে তুই কোনো গার্লফ্রেন্ড জোটাতে পারবি। সেই হিসেবে তোকে মায়ের পছন্দেই তো বিয়ে করতে হবে তাহলে এখনই বিয়ে করতে আপত্তি কিসের?”
আলভী কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাদের একমাত্র চাচাতো ভাই ইয়াদ দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।
“কিরে ঊর্মি তোকে পাঠিয়েছে কেনো? নিচে যা কাকিমা তোকে স্পেশাল ডোজ দেবে। ভাইয়া তুমি তারাতাড়ি চলোতো”
অগত্যা আলভীকে ড্রইংরুমে আসতেই হলো। ড্রইংরুমে আসতেই আলভী বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্যকে দেখতে পেলো। তাদের দাদুমনিও আছে এখানে। সে বসে বসে পান চিবোচ্ছে, আলভী কতোবার তাকে পান খেতে নিষেধ করেছে কিন্তু সে পান ছাড়া বাচেই না। আলভীকে দেখে দাদুমনি পান চিবোনো থামিয়ে দিলো। আলভী একটা শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
“আবারও তুমি পান খাচ্ছো? এসব খাও সেই জন্যই তো ওষুধে কাজ হয়না। আমি তো বুঝে পাইনা এসব খেয়ে তুমি কি মজা পাও”
দাদুমনি হাল্কা হেসে বলে ওঠে,
“একটাই খেয়েছি দাদুভাই, কি করবো বলো জোয়ান ছেলেপেলে কষ্ট পেলে যা খায় আমি তো আর সেসব খেতে পারবোনা”
ঊর্মিলা হাসতে হাসতে বললো,
“তোমার আবার বুড়ো বয়সে কিসের কষ্ট বুড়ি?”
দাদুমনি একটু মন খারাপ করার ভান করেই বললো,
“বাড়ে আমার এভি দাদুভাই বিয়ে করবে। তারপর তার কি আর এই বুড়িকে নিয়ে ভাবার টাইম থাকবে? আমার তো খুব হিংসে হচ্ছে। মন চাইছে পান খেয়ে খেয়ে বিরহের গান গাই”
দাদুমনির কথা শুনে ঊর্মিলা আর ইয়াদ হেসে ওঠে। ইয়াদ হাসতে হাসতেই বললো,
“চিন্তা নেই দাদুমনি ভাইয়া বিয়ে করবে তো কি হয়েছে আমি আছিনা? আমি তোমাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যাবো, একসাথে সিনেমা দেখতে যাবো আর সেখানে গিয়ে পপকর্ন খেতে খেতে রোমান্টিক সিনেমা দেখবো। তুমি কষ্ট পেওনা বুঝলে”
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২০০০+