১৫ বছর বয়সী মা পর্ব-১০

0
24

#১৫_বছর_বয়সী_মা (১০)
#সোফিয়া_সাফা

“এক কথা প্রতিদিন জিজ্ঞেস করলেই উত্তর চেঞ্জ হয়ে যাবেনা ঊর্মি। এভি যেখানে তোমাদের সাথেই যোগাযোগ রাখেনি সেখানে আমার সাথে রাখবে এটা ভাবাও অনুচিত”

উত্তরে ঊর্মিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ড্রইংরুম থেকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ ভেসে আসে। ঊর্মিলা তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়েই দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে আসে। তাড়াহুড়োয় সে ফোন কাটতেও ভুলে গেছে, রূপসা আর ইয়াদও ড্রইংরুমে এসে জড়ো হয়। তারা বুঝতে পারছেনা যে এখানে ঠিক কি হচ্ছে,
“আপনাদের তো সাহস কম নয় আমার ছেলেকে নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলছেন। এক্ষুনি বেরিয়ে যান আমাদের বাড়ি থেকে”

শাহানাজ বেগমের উচ্চস্বরে বলা কথাটার জবাবে আসমা বানু শান্তকন্ঠে বলে,
“আপনারা কেনো বুঝতে পারছেন না আমার মেয়েটা আপনাদের ছেলের অনাগত সন্তানের মা হতে চলেছে। আপনারা দরকার হলে ডিএনএ টেস্ট করে দেখুন। এসবের পরেও যদি আপনার ছেলে আমার মেয়েকে বিয়ে না করে তাহলে আমার মেয়ের কি উপায় আছে বলুন আমাকে। কে বিয়ে করবে ওকে?”

কথাটা শুনে ঊর্মিলা, রূপসা আর ইয়াদ চমকে গেলো। এতোটুকু শুনেই তারা পুরো ব্যাপারটা বুঝে গেছে। ঊর্মিলা অলির দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা মাথা নিচু করে কেদেই যাচ্ছে। শাহানাজ বেগম চেচিয়ে বলে ওঠে,
“এইসব কিছু আপনাদের প্ল্যান, বড়লোকের ছেলে দেখে মেয়েকে আমার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিতে চাইছেন আপনারা।”

লিয়াকত হোসাইন বললো,
“একবার আমাদের মেয়ের জায়গায় নিজের মেয়েকে রেখে ভাবুন তো, আজকে অলির জায়গায় আপনার মেয়ে থাকলে তাকে এতোকিছু বলতে পারতেন?”

“আমার মেয়ে এমন কিছু করলে আমি কেটে টু’করো টু’করো করে নদীতে ভাসিয়ে দিতাম এরকম অন্যের ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিতে চাইতাম না, চরিত্রহীনা মেয়ে। এদের মুখ দেখাও পাপ। আপনাদের লজ্জা করলোনা এই মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসতে। আমাদের পুরো বাড়িটা একদম অপবিত্র হয়ে গেলো”

দিহান ফোনের অপর পাশ থেকে এতোকিছু শুনে কল কেটে দিলো। শাহানাজ বেগমের কথা শুনে তার বমি পাচ্ছে। ছিহ কি বিশ্রী ভাষা,
অলি এতোকিছু সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলো,
“আমাকে চরিত্রহীনা না বলে নিজের ছেলেকে বলুন। কোথায় আপনার সেই কুলাংগার ছেলেটা? আমাকে চরিত্রহীনা বানিয়ে কোথায় লুকিয়ে আছে? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তার? কেনো এরকম টা করলো আমার সাথে?”

অলির কথা শুনে শাহানাজ বেগম আরও তেতে উঠলেন,
“এই মেয়ে বের হ আমাদের বাড়ি থেকে, নইলে বাবা মাসহ ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।”

লিয়াকত হোসাইন উঠে দাড়িয়ে বললো,
“আমরাই চলে যাচ্ছি এতোকিছুর পর এমনিতেও আমাদের মেয়েকে এই আগুনে ফেলতে চাইনা”

লিয়াকত হোসাইন মেয়েকে আর আসমা বানুকে নিয়ে মির্জা ভিলা থেকে বেরিয়ে গেলেন। অলির কাদতে কাদতে অবস্থা খারাপ। তার জন্য তার বাবা মাকে এভাবে অপমানিত হতে হবে জানলে আগেই ম’রেই যেতো। পুরোটা রাস্তা কেউ কারো সাথে কথা বললোনা। বাড়িতে এসে লিয়াকত হোসাইন বললেন,
“যা হবার হয়ে গেছে, আমি আগে থেকেই জানতাম যে ওনারা এরকম টাই করবে। এখন আমাদের উচিৎ যতদ্রুত সম্ভব অলির এবোরশন করিয়ে এই সমস্ত ব্যাপার এখানেই শেষ করে দেয়া।”

“কোর্টের অর্ডার না পেলে এবোরশন কিভাবে করাবে?”

“এসব কোনো বড় ব্যপার নয়। বেআইনী হলেও এবোরশন করানোর উপায় আছে। আমি ব্যবস্থা করে ফেলবো।”

অলি চুপচাপ বসে আছে কান্নাও করছেনা। একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। লিয়াকত হোসাইন মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললো,
“এসব ভুলে যাও আম্মু। জীবনে চলার পথে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবেনা। তোমার তো লক্ষ্য ছিলো বড় হয়ে লয়্যার হওয়ার তুমি এসব বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেবে। বাবা সব ব্যাবস্থা করে ফেলবো”

অলি মনে মনে বলে ওঠে,
“আমার লক্ষ্য পরিবর্তন হয়ে গেছে বাবা। আমার জীবনের এখন একটাই লক্ষ্য সেটা হলো তোমাদের অপমানের বদলা নেওয়া।”

অলিকে চুপ থাকতে দেখে আসমা বানু একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,
“অলি ঘুমাতে চল। আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি সকাল হতেই সব ঠিক হয়ে যাবে”

খাওয়া দাওয়া করে আসমা বানু অলিকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে লাগলো। অলি ঘাপটি মে’রে শুয়ে রইলো।
,
অন্যদিকে ইন্ডিয়ার মুম্বাই সিটির রাস্তা ধরে হেটে চলেছে আলভী। ইন্ডিয়াতে এখন রাত সাড়ে ১০ টা বাজে, ইন্ডিয়াতে আসার পর থেকে প্রতিদিন রাতেই সে হাটতে বের হয়। রাতের তাজা বাতাসে শ্বাস না নিলে তার ঘুম হয়না। আলভী আরও কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে হোটেলে ফিরে আসে। সে মুম্বাই সিটির বিলাসবহুল হোটেল গুলোর মধ্যে একটি হোটেলে উঠেছে। এখানের পরিবেশ তার জন্য পার্ফেক্ট। সেইজন্য সে এখানেই থাকবে বলে ঠিক করেছে। আলভী নিজের ফ্লোরে এসে দেখলো তার ফোন বাজছে, আলভী ততোটা গুরুত্ব না দিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেলো। শাওয়ার নিয়ে এসে সে একটা শান্তির ঘুম দেবে। আলভী ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো তার ফোন এখনো ননস্টপ বেজেই চলেছে। আলভী হাতের তোয়ালে টা সোফার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে ফোনটা হাতে নিলো। দেখলো দিহান ৫০ টারও বেশি কল দিয়েছে। ইন্ডিয়াতে আসার ২দিন পর আলভী দিহানের নম্বরে কল দিয়ে বাড়ির সবার খোঁজখবর নিয়েছিলো। আর শাহানাজ বেগমকে চিঠিটাও আলভী দিহানের মাধ্যমেই পাঠিয়েছিলো।
“ওকে আমার নম্বর দেওয়াটাই ভুল হয়েছে দেখছি।”

আলভীর ভাবনার মাঝেই আবারও দিহানের কল আসে। আলভী একটা শ্বাস ফেলে কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরে,
“কিরে তুই কোন অসাধ্য সাধন করতে গিয়েছিলি বলবি আমাকে? কোনোদিনও কাজের সময় পাওয়া যায়না”

আলভী মেজাজ খারাপ করে বলে,
“তোর ফাও কথা শোনার জন্য নম্বর দেইনি বুঝলি?”

“আরে ভাই আগে শোন এদিকে অনেক বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে”

“দেখ তুই যদি উল্টো পাল্টা কিছু বলিস তাহলে কিন্তু আমি নম্বর চেইঞ্জ করে ফেলবো, এমনিতেও বাড়ির কোনো খবর জানতে আমি এখন ইন্টারেস্টেড নই”

“হুম ইন্টারেস্টেড হবিই বা কেনো? একটা মেয়ের লাইফ হেল করে দিয়ে নিজে হ্যাভেনে গিয়ে বসে আছিস। শেইম অন ইউ এভি”

দিহানের কথা শুনে আলভী গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“তুই কোনোভাবে অলির কথা বললি নাকি?”

“হ্যাঁ ওর কথাই বলছি রে। এভি কংগ্রাচুলেশন তুই বিয়ের আগেই বাপ হতে চলেছিস।”

কথাটা শুনে আলভী বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো,
“হোয়াট কিসব বলছিস তুই? নে’শা টে’শা করেছিস নাকি?”

“আহারে চান্দু এখন আর ভালো সেজে লাভ নাই। তোর ফ্যামিলির সবাইও বিষয়টা জেনে গেছে।”

আলভীর গলা শুকিয়ে আসছে। সে একটা ঢোক গিলে বলে ওঠে,
“অলি প্রেগন্যান্ট?”

“ইয়েস মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড আচ্ছা তুই এক রাউন্ডেই কিভাবে এরকম সেঞ্চুরি করে ফেললি বলনা দোস্ত। টিপস দিবি একটু”

আলভী কি বলবে ভেবে পেলোনা। তার এখন ইচ্ছা করছে দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকতে,
“দিহান পুরো বিষয়টা খুলে বল”

দিহান আলভীকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো, অলি তার মা বাবাকে নিয়ে আলভীদের বাড়িতে যাওয়ার পর কি কি হয়েছিলো সব বিস্তারিতভাবে বললো। শুধুমাত্র সে কিভাবে জেনেছে সেটুকু বললোনা। কারণ আলভী যদি একবার জানতে পারে যে সে ঊর্মিলার সাথে প্রতিদিনই কথা বলে তাহলে তাকে মে’রেই ফেলবে।
,
বাংলাদেশ টাইম রাত ১২টার দিকে অলি পাশে তাকিয়ে দেখলো তার মা ঘুমিয়ে গেছে, অলি নিঃশব্দে উঠে দাড়ালো। তারপর অন্ধকারের মাঝেই ব্যাগ হাতরে একটা কাগজের টুকরো বের করলো। অলি মায়ের ফোনটা হাতে নিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলো। ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ফোনে নম্বরটা তুলে ডায়াল করলো কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। অলি আরো বেশ অনেকবার চেষ্টা করলো তবুও বারবার একই কথা ভেসে আসছে।
the number you’ve dialled is currently unreachable, please try again later.

“হাহ একটা ভুল নম্বর দিয়েছে শ’য়তান লোক৷ খুব তো বলেছিলো আমার প্রয়োজনে আমার পাশে থাকবে। হুহ মিথ্যাবাদী কাওয়ার্ড মেরুদণ্ডহীন প্রানী।”

অলি আর কিছুই বলতে পারলোনা। শাহানাজ বেগমের মতো তারও কতোগুলো বিশ্রী ভাষা ইউজ করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু পারছেনা।
“কু’ত্তা মার্কা লোক, অবশ্য ওই জা’নোয়ারের থেকে এসব আশা করাটাই ভুল হয়েছে আমার”

অলি সোফার সাথে মাথা ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। অজান্তেই তার হাত পেটের উপর চলে গেলো। অলি পেটের উপর হাত দেওয়া মাত্রই থমকে গেলো। চোখের কার্ণিশ বেয়ে একফোঁটা জল সন্তর্পণে গড়িয়ে পরলো। অলি বাধা দিলোনা। তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। তবে তার সাথে যা হয়েছে সেসবের জন্য নয় এতোদিন সেসব চিন্তা করে অনেক কান্না করেছে কিন্তু আজকে কান্না করছে তাকে আকড়ে থাকা নিষ্পাপ প্রাণটার জন্য। ডক্টর যখন বলেছিলো যে সে মা হতে চলেছে তখনই তার মাঝে অদ্ভুত একটা অনূভুতির জন্ম হয়েছিলো কিন্তু প্রচন্ড ভয়ের নিচে সেই অনূভুতিটা চাপা পড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সেই অনূভুতিটা আবারও তাকে ঘিরে ধরেছে,
“আমি মা হতে চলেছি? যেখানে আমি নিজেই মাকে ছাড়া থাকতে পারিনা। সেখানে আমিও একটা বাবুর মা হতে চলেছি”

অলি কান্নার মাঝেই হেসে উঠলো তার ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আজকেই তার বেবির সাথে তার প্রথম আর শেষ রাত। এর আগে সে জানতোনা, আর জানামাত্রই তাকে বলতে হলো সে বেবিটা ফেলে দিতে চায়।
“আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবু, আমি হয়তো তোকে বাচাতে পারবোনা। তুই আমাকে একবার মা বলে ডাকবি বাবু?”

অলি কাদছে,
“আমার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে? হে আল্লাহ তুমি আমার মাঝে এই অদ্ভুত অনুভূতি গুলো কেনো দিলে? কেনো দিলে আমি কি করবো এখন, যেখানে আমার মা এতোকিছুর পরেও আমাকে মে’রে ফেলতে পারলোনা সেখানে আমি কিভাবে আমার নিষ্পাপ বাবুটাকে মে’রে ফেলবো? এবোরশনের পর ও যখন আমার মাঝে থাকবেনা তখন আমি কিভাবে থাকবো? আমি পারবো তো নিজেকে ক্ষমা করতে?”

অলি পুরোটা রাত ঘুমাতে পারলোনা। অজানা কষ্টে তার ছোট্ট হৃদয়টা ফেটে যাচ্ছে। নিশ্বাস নিতেও যেনো কষ্ট হচ্ছে। ভোর ৪ টা নাগাদ অলির চোখ লেগে আসে। তখনই সে স্বপ্নে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। সে চারদিকে ছোটাছুটি করে বাচ্চাটাকে খোজার চেষ্টা করছে কিন্তু খুজে পাচ্ছেনা। এরই মাঝে ফজরের আজান দেয়। অলির ঘুমঘুম ভাবটাও কেটে যায়। আসমা বানু উঠে দেখে অলি তার পাশে নেই। সে দ্রুতপায়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায় তখনই অলি অজু করে রুমে ঢোকে আসমা বানুকে কিছু না বলেই মাদুর বিছিয়ে নামাজ পড়তে শুরু করে। আসমা বানু কিছুটা অবাক হলো প্রতিদিন নামাজ পড়ার জন্য অলিকে ওঠাতে তাকে একপ্রকার যুদ্ধ করতে হয় কিন্তু আজকে অলি নিজে থেকেই উঠে গেছে।

১০টার দিকে লিয়াকত হোসাইন আর আসমা বানু অলিকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। অলির ভীষণ ভয় করছে, সেই সাথে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। মাতৃত্ব কাকে বলে সে বেশ উপলব্ধি করতে পারছে। আসমা বানুও মেয়ের পরিস্থিতি বুঝতে পারছে। তারা হসপিটালের ভেতর বসে আছে। লিয়াকত হোসাইন তার এক পরিচিত বন্ধুকে নিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করছে অবশ্য অলির কথা সে কাউকে বলেনি বলেছে আসমা বানুর কথা।
“তুই কেনো এতো ঘাবড়ে যাচ্ছিস?”

“মা আমার বাবু”

“ওটা এখনো একটা র’ক্তের দলা মাত্র, এতো চিন্তা করিসনা।”

অলি নিজের ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। তার মা পুরোপুরি ভাবে তার ফিলিংসগুলো বুঝতে পারছেনা। অলি মনে মনে বললো,
“কতো মেয়েই তো বয়ফ্রেন্ডের সাথে আকাম কুকাম করে এবোরশন করে ফেলে তাদের মনে কি এরকম ফিলিংস আসেনা? আল্লাহ সব ফিলিংস আমার মধ্যেই কেনো দিলো? আল্লাহ আমার মনে হচ্ছে বাবুটাকে ছাড়া আমিও বাচতে পারবোনা। আমি কি করবো এখন?”

অলির চেহারা দেখে আসমা বানুর খুব মায়া হলো,
“কেনো এতো ভাবছিস তুই ভুলে যা না ওর কথা”

অলির চেহারা লালবর্ণ ধারণ করেছে।
“মা তুমিও কি আমার কথা ভুলে যেতে পারবে? আমি ম’রে গেলে থাকতে পারবে?”

অলির কথা শুনে আসমা বানু থমকে গেলেন,
“আমিও পারবোনা মা। আমি এবোরশন করতে চাইনা। দরকার হলে আমি ওই রে/পিস্টকেই বিয়ে করে নেবো। আমি আমার বাবুকে মা’রতে পারবোনা। ওর বেচে থাকার অধিকার আছে”

আসমা বানু এবার বেশ রেগে গেলেন,
“চুপচাপ এখানেই বসে থাক। ওই মির্জা বংশের জারজ সন্তানকে জন্ম দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। ওদের র’ক্ত ওদের মতোই হা’রামী হবে”

কথাটা শুনে অলির গলা শুকিয়ে এলো। এখানে থাকলে আজকে তার এবোরশন নিশ্চিত। কিন্তু নাহ সে পারবেনা এবোরশন করতে। তাকে পালাতে হবে এখান থেকে,
“আচ্ছা মা আমার ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে তুমি একটু পানি এনে দেবে?”

আসমা বানু পানি আনতে চলে গেলে অলি নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটাই নিয়ে নেয়।
“আমি বাচলে আমার বাবুও বাচবে আর নইলে দুজনেই ম’রে যাবো। এমনিতেও এই জালিম দুনিয়ায় আমার বেচে থাকার কোনো শখ নেই।”

অলি দৌড়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়। আসমা বানু এসে অলিকে না দেখতে পেয়ে লিয়াকত হোসাইনকে ডাক দেয়। তারা মিলে পুরো হসপিটাল খোজাখুজি করেও অলিকে পায়না,
“আমার মেয়েটা মির্জা বংশের পাপকে বাচিয়ে রাখতে পালিয়ে গেলো?”

বলেই আসমা বানু কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। লিয়াকত হোসাইন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
“বাড়িতে চলো, ও হয়তো বাড়িতে চলে গেছে। আর ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পরেও এটা করানো যাবো। বাচ্চা মেয়ে বোঝালে নিশ্চয়ই বুঝবে”

আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। অলি কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানেনা, তার শরীর ভীষণ দূর্বল। সকাল থেকে সে কিচ্ছু খায়নি। অলির কাছে টাকাপয়সাও নেই যে সে আবার মির্জা ভিলাতে আসবে। অলি ভেবেই নিয়েছে সে ওই বাড়িতে যেভাবেই হোক ঢুকবে আর তার বাবা মায়ের অপমানের বদলা নেবে। এভাবে সে নিজের বাচ্চাকেও বাচাতে পারবে।
,
অন্যদিকে দিহানের থেকে সমস্ত ঘটনা শোনার পর আলভী পারছিলোনা উড়ে দেশে ফিরে আসতে। বেচারা পুরোটা রাত প্লেনের টিকিট বুক করার পেছনেই কাটিয়েছে অবশেষে সকাল ১০টার দিকে সে একটা ইমার্জেন্সি ফ্লাইটের টিকেট পেতে সক্ষম হয়। ফ্লাইটে উঠে সে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তার ভুলের জন্য মেয়েটার জীবন তছনছ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। সে নিজের জীবন দিয়ে হলেও মেয়েটার জীবন রক্ষা করতে চায়। আলভী এই কদিন মুম্বাই সিটিতেই ছিলো সেখানে সে একটা হসপিটালে চাকরিও নিয়েছিলো। সে জানতে পেরেছে যেই প্যাশেন্টকে ট্রিট করার জন্য সে এসেছিলো সেই প্যাশেন্ট হচ্ছে সে যার ওপেন হার্ট সার্জারী করেছিলো তার আত্মীয়। মূলত তাদের থেকে প্রশংসা শুনেই সে আলভীর থেকেই ট্রিটমেন্ট নেবে বলে ঠিক করেছিলো। আলভী তো ভেবেই রেখেছিলো সে আর বাংলাদেশে ফিরবেনা। সে ভেবেই নিয়েছিলো এই জন্মে অলি আর তাকে কল দেবেনা। কিন্তু ভাগ্য বড়ই অদ্ভুত,

চার ঘন্টা ফ্লাইট জার্নির পর আলভী দেশের মাটিতে পা রাখে। দিহান আলভীকে রিসিভ করতে এসেছে। আলভী দেশে এসেই আগে নিজের সিমকার্ড চেইঞ্জ করে নিলো। দিহানের উদ্দেশ্যে বললো,
“তোকে বলেছিলাম অলির বাসায় যেতে সেটা না করে তুই আমাকে নিতে এসেছিস কেনো?”

দিহান সানগ্লাস টা খুলে বললো,
“তোর মাথা খারাপ? আন্টি গতরাতে তাদের সাথে যেই ব্যবহার করেছে এরপর আমি সেখানে গেলে তারা যদি সেই রাগ আমার উপর ঝাড়তো”

“ঝাড়লে ঝাড়তো। কেমন বন্ধু হলি বন্ধুর জন্য এতটুকু করতে পারলিনা। শা’লা রিফাত তো বিয়ের আগেই আমাকে বাপ বানিয়ে ছেড়ে দিলো। একবার পাই ওকে এমন খাতিরযত্ন করবো যে নিজে কোনোদিনও বাপ হতে পারবেনা।”

“তুই কি অলিদের বাড়িতে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছিস নাকি?”

আলভী ভ্রু কুচকে দিহানের দিকে তাকায়,
“আমি তো সেখানে যাওয়ার জন্যই এতো কাঠখড় পুড়িয়ে এসেছি। নইলে তুই আমাকে রাত ১১টা বাজে জানিয়েছিলি তখন কোনো ফ্লাইটের টিকেট পাওয়া যায়? তুই জানিস আমাকে কতোটা কষ্ট করতে হয়েছে।”

“আমাকে বলছিস কেনো তোকে আমি সাড়ে ৯ টা থেকে কল দিয়েছিলাম তুই-ই তো কল ধরিসনি, আমার দোষ কিসের?”

আলভীর মনে পরলো সে প্রতিদিনের মতোই নাইট ওয়াক করতে বেরিয়েছিল আর ফোনটা সে হোটেলেই ফেলে গিয়েছিলো।
“যাক বাদ দে। চল অলিদের বাড়িতে যাবো”

দিহান আর আলভী দিহানের গাড়িতে গিয়ে বসলো। যদিও দিহান খুব একটা গাড়ি ইউজ করেনা। কার ড্রাইভ করতে তার ভালো লাগেনা, সে তো চুপচাপ বসে থাকতে লাইক করে। আলভী ড্রাইভিং সিটে বসলো,
“তুই অলিদের বাড়ি চিনিস?”

“নাহ তিশা বা ইশার থেকে জেনে নেবো”

বলেই আলভী তিশার নম্বরে কল দিলো। কিন্তু তিশা ফোন ধরলো না তারপর আলভী ইশাকে কল দিলো। ইশা কল রিসিভ করেই বললো,
“কি খবর ভাইয়া? আমাদের কথা মনে আছে তাইলে?”

আলভী ইশার কথার ধরন দেখে বুঝলো ওরা অলি বা তার ব্যাপারে কিছুই জানেনা। সে যে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলো সেটাও তারা জানেনা। আলভী গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের উপর হাত রেখে বলে,
“হুম মনে আছে সেই জন্যই তো কল দিয়েছি।”

ইশা হাসলো,
“তো বলো কেমন আছো? বাড়ির সবাই কেমন আছে”

“সবাই ভালোই আছে, তোদের কি অবস্থা?”

“হুম আমরাও বিন্দাস আছি”

“শোন যেই জন্য কল দিলাম। তোর খালাতো বোন অলিরা তো শহরেই থাকে তাইনা?”

ইশা অবাক হয়ে বলে,
“হুম কিন্তু তুমি হঠাৎ ওর কথা জিজ্ঞেস করছো কেনো?”

“এতো প্রশ্ন করিসনা তো। ওদের বাড়ির এক্সাক্ট এড্রেসটা লাগবে আমার তুই এক্ষুনি এসএমএস করে আমার নম্বরে পাঠিয়ে দে কুইক”

ইশা আরও কিছু বলতে যাবে কিন্তু আলভী তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিলো। ইশা কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে অলিদের বাড়ির এড্রেস আলভীর নম্বরে এসএমএস করে পাঠিয়ে দিলো। এড্রেস পেয়ে আলভী কার স্টার্ট দিলো।
,
চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ২৩৫০