#১৫_বছর_বয়সী_মা (১২)
#সোফিয়া_সাফা
“আমাকে এতো এতো ভয় দেখিওনা আমার হার্ট অনেক দূর্বল বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবে”
অলি আলভীর কথা বুঝতে না পারলেও দিহান আলভীর কথা বুঝতে পেরে হেসে ওঠে। আলভী যে ঠাট্টা করেছে সেটা দিহান বুঝতে পেরেছে,
“আংকেল আন্টি গাড়িতে উঠে বসুন আপনাদেরকে বাড়িতে দিয়ে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে”
বাকিরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলো কিন্তু অলি পা নিয়ে হাটতেই পারছেনা ব্যাথা যেনো সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে। অলিকে আসতে না দেখে আসমা বানু আবারও নেমে যেতে চাইলে আলভী বলে,
“আন্টি আপনি বসুন আমি দেখছি”
আলভী অলির সামনে এসে অলিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাকে কোলে তুলে নিলো। আকষ্মিক ঘটনায় অলি স্তব্ধ হয়ে গেলো, আলভী অলিকে নিয়ে গিয়ে ব্যাকসিটে আসমা বানুর পাশে বসিয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো,
তাদের বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে রাত হয়ে গেলো। আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দরজা খুলে দিলেন। অলি গাড়ির বাইরে পা রাখতেই আলভী তাকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা বাড়িতে ঢুকে গেলো। অলি কিছুই বললোনা। তার পা ব্যাথায় ফুলে গেছে। আলভী অলিকে ড্রইংরুমে বসিয়ে দিয়ে অলির পা চেক করতে লাগলো। অলি বলে ওঠে,
“এরকম ভাব করছেন যেনো আপনি ধরলেই আমার পা সেরে যাবে”
দিহান পাশ থেকে বলে উঠলো,
“এভির ধরাতে না সারলেও আমার ধরাতে সিওর সেরে যেতো কারণ আমি অর্থোপেডিক্স এর ডক্টর কিন্তু আমি তোমার পা সারাতে গিয়ে নিজের আঙ্গুল হারাতে চাইনা”
অলি দিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাবাহ আপনি ডক্টর?”
“ইয়েস শুধু আমি না তোমার হবু স্বামীও একজন হার্টের ডক্টর মানে কার্ডিওলজিস্ট”
কথাটা শুনে আলি চিৎকার দিয়ে ওঠে,
“কিহ”
অলির চিৎকার শুনে আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইনও ছুটে আসে। আসমা বানু কিচেনে ডিনার রেডি করছিলেন। আর যাই হোক আলভীর সাথেই অলির বিয়েটা হচ্ছে, অলির চিৎকারে আলভীও একটু ঘাবড়ে গেলো,
“আপনি একজন ডক্টর?”
আলভী বিরক্তি নিয়ে অলির দিকে তাকায়,
“হ্যাঁ, তো কি হয়েছে এভাবে চিল্লানোর কি আছে? লিসেন আমি একজন ডক্টর কোনো প্রেতাত্মা নই”
“শিট আমার কপাল সবদিক দিয়ে খারাপ দেখছি”
আলভী আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
“আসলে অলি ডাক্তারদের অনেক ভয় পায়”
লিয়াকত হোসাইনের কথা শুনে আলভী ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়লো। পুরোটা জীবন লাগিয়ে দিলো একজন দক্ষ কার্ডিওলজিস্ট হওয়ার পেছনে, শেষমেষ কিনা তার বউ তার প্রোফেশনকেই ভয় পাবে৷ বাহঃ দারুন তো। লাইফে ইদানীং সবকিছুই কেমন যেনো আনফেয়ার হচ্ছে। প্রথমত বিয়ে করার আগেই বাসর সেরে ফেললো, দ্বিতীয়ত ঠিকমতো বাসর উপভোগ করার আগেই বাচ্চার বাপ হয়ে বসে আছে। এসব কিছু ভেবে আলভীর ভীষণ খারাপ লাগছে। তবে এর মধ্যে একটা ভালো ব্যাপার হলো। সে যাকে ভালোবেসেছে সেই তার বেডপার্টনার হয়েছে। তার বাচ্চার মাও সেই হতে চলেছে আর পরিশেষে তার লাইফপার্টনারও সেই হবে।
“আন্টি একটা আইস ব্যাগে করে কিছু বরফ এনে দিন ওর পা অনেক ফুলে গেছে। আর একটা মোটা কাপড় আনবেন।”
আসমা বানু সেসব এনে দিতেই আলভী অলির পায়ে আইস ব্যাগ লাগিয়ে দেয়। তারপর মোটা কাপড় দিয়ে বেধে সোফার উপর একটা বালিশ রেখে সেটার উপর অলির পা রেখে দেয়। আলভী আর দিহান ডিনার করতে না চাইলেও মুখের উপরে না করতে পারেনা। ডিনার করা শেষে আলভী আর দিহান চলে যেতে নিলে অলি ঘোর আপত্তি জানায়,
“আপনি আমাকে বিয়ে না করা অব্ধি নিজের বাড়িতে যেতে পারবেন না।”
আলভী অবাক চোখে অলির দিকে তাকায়,
“এটা কেমন কথা আমি বিয়ে করবো সেটা সবাইকে জানাতে হবেনা? আয়োজন করতে হবেনা?”
“না কিচ্ছু করতে হবেনা। আমি জানি আপনি একবার বাড়িতে গেলে আর আসবেননা। আপনার মা জীবনেও আমাদের বিয়ে হতে দেবেনা”
অলির কথা শুনে আলভী ভেবে দেখলো যে অলি ঠিকই বলেছে,
“আচ্ছা যাচ্ছিনা”
অলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে,
“শুনুন আমার কিছু শর্ত আছে সেগুলো মানলে তবেই আমি আপনাকে বিয়ে করবো।”
আলভী বুকের উপর হাত বেধে বলে,
“আর যদি না মানি?”
“তাহলে জেলের ভাত খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যান”
“তুমি সত্যিই আমাকে জেলের ভাত খাওয়াতে চাও?”
“আগে চেয়েছিলাম কিন্তু এখন বাবুর কথা ভেবে চাইছিনা সেই জন্যই তো বিয়ে করতে চাইছি। কিন্তু আপনি শর্ত না মানলে তো আমার আর কিছুই করার নেই।”
আসমাবানু ইশারায় অলিকে চুপ করতে বললেও অলি পাত্তা দেয়না। আসমাবানু তো বারবার ভয় পাচ্ছে এই বুঝি আলভী বিয়ে করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাবে। আলভী ঘুরে এসে অলির সামনে বসে বলে,
“বলো তোমার কি কি শর্ত আছে?”
“আলাদা ভাবে বলবো”
অলির কথা শুনে বাকিরা অন্যরুমে চলে যায়,
“এবার বলো”
“আমার প্রথম শর্ত আপনি যতোদিন বেচে থাকবেন ততোদিন কোনো রকম পরিস্থিতিতেই আরেকটা বিয়ে করতে পারবেন না”
আলভী ভ্রু কুচকে অলির দিকে তাকায়,
“বউ থাকতে আরেক বিয়ে আমি করবোই বা কেনো?”
“আমার অবর্তমানেও করতে পারবেন না”
“তোমার অবর্তমানে করলেই বা তুমি কি করবে?”
“ভালো প্রশ্ন করেছেন। আমার অবর্তমানে আপনি বিয়ে করলে আপনার সব সম্পত্তি আমার বাবু পাবে।”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে রাজি হয়ে যায়,
“আপনি কোনো অবস্থাতেই আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবেন না কিন্তু আমি চাইলেই আপনাকে ডিভোর্স দিতে পারবো”
“এটা তো আনফেয়ার ডিভোর্স কেউ না দিতে পারলেও একটা কথা ছিলো”
“হাহ আপনি তো ক্যারেক্টারলেস আপনার উপর বিশ্বাস নেই। তাই ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষমতা শুধু আমার হাতেই থাকবে”
আলভী প্রতিউত্তরে কিছুই বললোনা,
“আমার চার নম্বর শর্ত হলো, আমার জন্য ওই বাড়িতে আলাদা একটা রুমের ব্যবস্থা করে দেবেন। আমি আপনার সাথে এক রুমে থাকতে পারবোনা। তাছাড়া আমার অনুমতি ব্যতীত আপনি আমাকে কখনো কোনো প্রকার পরিস্থিতিতে স্পর্শ করতে পারবেন না”
অলির এই কথাটা শুনে আলভী অসহায় চোখে অলির দিকে তাকায় অলি ভ্রু কুচকে বলে,
“কি হলো? এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো? না পারলে বলে দিন”
আলভী অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“আর কি শর্ত আছে?”
“আমার লাস্ট শর্ত হলো আপনি যদি মা’রা যান তাহলে আপনার স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তির মালিক বউ হিসেবে আমি হবো”
অলির কথা শুনে আলভী শান্তচোখে অলির দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি ম’রে গেলে তুমি সম্পত্তি দিয়ে কি করবে?”
“সেটা আপনার না জানলেও চলবে”
“আচ্ছা আমি সব শর্ত মেনে নিলাম”
“মানলেই হবেনা। আপনি কালকেই বিয়ের আগে একটা চুক্তিনামা বানিয়ে আনবেন। বিয়ের আগে সেটায় সই করবেন তারপর বিয়ে হবে আমাদের।”
আলভী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে,
“৪ নম্বর শর্তটা বাদ দেওয়া যায়না?”
“আপনার তাহলে বিয়ে করতে হবেনা জেলের ভাত খাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করুন গিয়ে।”
“এতো ভয় দেখিওনা। জানোই তো বেশি ভয় দেখালে ভয় ভেঙ্গে যায়”
“আমি ভয় দেখাচ্ছিনা। লোকের কথার পরোয়া করিনা আমি। দরকার হলে নিজে ম’রে গিয়ে আপনাকে ফা’সিয়ে দিয়ে যাবো তারপরও যেকোনো উপায়ে আপনাকে জেলের ভাত খাইয়েই ছাড়বো”
আলভী অবাক চোখে অলির দিকে তাকায়। আলভীর চোখ দুটো লালবর্ণ ধারণ করেছে। অলি নিজের চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকায়,
“এতোবেশি ঘৃনা করো আমাকে?”
“আপনার ভাবনার চেয়েও অধিক বেশি ঘৃনা করি আপনাকে”
আলভী নিজের চুল টানতে লাগলো কিছুক্ষণ পর বললো,
“ওকে কালকে আমার বিয়ে আমি অনেক এক্সাইটেড, এখন ঘুমাবো কোথায় বলো”
“আমাদের বাড়িতে দুটোই রুম একটায় আমি থাকি আর একটায় আব্বু আম্মু থাকে। আপনি বরং আজকের রাতটা না ঘুমিয়েই কাটান। আপনি তো অনেক এক্সাইটেড তাইনা। এক্সাইটমেন্টের ঠেলায় ১দিন না ঘুমালে খুব একটা সমস্যা হবেনা।”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“আমি গতকাল রাতেও একফোঁটা ঘুমাইনি”
“কেনো কি হয়েছিলো গতকাল রাতে? আচ্ছা আপনি কোথায় লুকিয়ে ছিলেন বলুন তো? আবার এতো সাহস জুগিয়ে আসলেনই বা কেনো?”
“জেলের ভাত খেতে হবে তো সেই ভয়েই এসেছি বুঝলে”
“বাহঃ আপনার মতো একজন খাম্বার মতো মানুষ জেলখানাকে এতো বেশি ভয় পায়?”
“হুম তুমি যেমন ডাক্তারকে ভয় পাও আমিও তেমন জেলখানাকে ভয় পাই”
অলি হেসে উঠলো। আলভী মুগ্ধ নয়নে অলির দিকে তাকিয়ে রইলো। আলভী মনে মনেই বলে,
“তুমিহীনা আমার জীবন সত্যিই একটা জেলখানা হানিবি। আমি সেই জেলখানাকে ভীষণ ভয় পাই। কিভাবে এতো প্রয়োজনীয় হয়ে গেলে?”
আলভী একদৃষ্টিতে অলির দিকে তাকিয়ে আছে। অলির চেহারা দেখে তার ভীষণ মায়া লাগছে। এই বয়সে কতোকিছু ফেস করতে হচ্ছে তাকে ভাবতেই নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে। সে যদি সেদিন কোনোভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিতো তাহলে এতোকিছু হতোনা। আলভীকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অলি ভ্রু কুচকে তাকায়,
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু এটা নিয়েও একটা শর্ত দিয়ে দেবো যে একসেকেন্ডের বেশি তাকিয়ে থাকতে পারবেন না।”
অলির কথা শুনে আলভী অন্য দিকে তাকায়। এটা মেয়ে নাকি অন্যকিছু। আলভী অন্যদিকে তাকিয়েই গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,
“এভাবে পালিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি, তোমার কোনো আইডিয়াই নেই যে তোমার সাথে কতো খারাপ কিছু হতে পারতো”
অলি একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“আমার সাথে ২মাস আগেই সবচেয়ে খারাপ কিছু হয়ে গেছে। এখন আর ভয় পাওয়ার মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমাকে ১বার ধ/র্ষ/ন করা হোক বা ১০০বার করা হোক আমি তো ধ/র্ষি/তাই।”
আলভী জানে এসব সত্যি কথা কিন্তু অলি কি জানে এগুলো বারবার আলভীকে মনে করিয়ে দিয়ে সে বারবার তাকে মে’রে ফেলছে।
“অলি শোনো, আমি তো বারবার বলছি যে আমি ইচ্ছা করে কিছুই করিনি। সেদি,,,”
আলভীকে আর কিছু বলতে না দিয়েই অলি বলে ওঠে,
“সেদিন আপনার কি হয়েছিলো সেসব জানতে আমি আগ্রহী নই। যতই অজুহাত দেন না কেনো দিন শেষে আপনি একজন ধ/র্ষ/কই থাকবেন। তাই অজুহাত না খুঁজে স্বীকার করে নিন”
আলভীর অনেক কষ্ট লাগলো কিন্তু অলি ঠিকই বলেছে,
“তাহলে আমার জেলে যাওয়াই উচিৎ। তুমি বরং কালকে আমার সাথে পুলিশের কাছে যাবে আমি নিজে থেকেই সেখানে গিয়ে স্বীকার করে নেবো।”
“এতো ভালোমানুষী দেখাতে হবেনা স্বীকার করার হলে আরো আগেই স্বীকার করে নিতেন এতোদিন পালিয়ে থাকতেন না”
আলভী অলির দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি আগেই স্বীকার করে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমিই তো তোমার বাবা মায়ের ভয়ে কাউকে জানাতে চাওনি। এখন তো তারা জেনেই গেছে তোমার তো আর কোনো ভয় নেই। এখন আমার স্বীকার করে নেওয়া উচিৎ”
অলির মনে পড়লো যে আলভী ঠিকই বলছে। অলি কিছুক্ষণ ভেবে বলে ওঠে,
“আমি সেদিনই সবাইকে জানিয়ে দিতাম কিন্তু আপনার মা আমাকে ভয় দেখিয়েছিলো বুঝেছেন”
অলির কথা শুনে আলভী অবাক হয়ে যায়,
“আমার মা এই ব্যাপারে জানে?”
“হুম সেদিন দরজাটা সেই খুলে দিয়েছিলো নইলে তো আমি বেরই হতে পারতাম না আর সেদিনই সবকিছু জানাজানি হয়ে যেতো।”
অলি আর কিছুই বললোনা। কিন্তু আলভী বাকিটাও বুঝতে পেরেছে। সে বুঝে গেছে তার মা অলিকে বিভিন্ন আজেবাজে কথা বলে ভয় দেখিয়েছিলো।
“অলি ইউ ডিজার্ভ বেটার। আন্টি আর আংকেলের কথা শুনে তুমি এবো’রশন করে নেও”
কথাটা শুনে অলি চমকে তাকালো। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর শান্তকন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনিও কি চান যে আমি এবো’রশন করে ফেলি?”
আলভীর গলা শুকিয়ে আসছে। ইদানীং যেনো একটু বেশিই তার এরকম অনুভূতি হয়। আলভী মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে বলে,
“আমি কি চাই বা না চাই সেটা যদিও ম্যাটার করেনা। আমি শুধু জানি এটাই তোমার জন্য ভালো হবে। আর আমিও তোমার ভালো চাই”
“আমার ভালো আমিই বুঝে নিতে পারবো মিস্টার আলভী তাসনীম মির্জা। আপনাকে কষ্ট করে সেসব নিয়ে ভাবতে হবেনা। আপনি শুধু আমার শর্তগুলো পূরণ করে আমাকে বিয়ে করুন। আপাতত এটাই আপনার শাস্তি”
আলভী বিষ্ময় নিয়ে অলির দিকে তাকালো। এই মেয়েটার বয়স কতো?
“অলি তোমার বয়স কতো?”
“আপনার থেকে বেশি নয়। চিন্তা করবেন না”
অলির শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছে। প্রচুর ঘুম আসার কারণে হাই তুলছে, আলভী আবারও অলির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা যেনো একটা জীবন্ত আর্ট। এতো সুন্দর একটা মেয়ের সাথে সেরকম কিছু না হলেই কি হতোনা? আলভী না হয় আরও ৪-৫ টা বছর অপেক্ষা করে নিতো। অলির পরণে হলুদ রঙের টপস আর লাল রঙের স্কার্ট, সাথে লাল রঙের ওড়না। লম্বা সিল্কি চুলগুলো ডান সাইডে এনে বেনী করে রাখা। চুলগুলো উসকোখুসকো। তবুও তাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে যাকে বলে ভয়ংকর সুন্দর। আলভী অলিকে ড্রইংরুমের সোফায় এনে বসানোর পর অলি আর ওঠেনি। অলির মা সেখানেই ভাত দিয়ে গিয়েছিলো। আলভী অলির দিকে তাকিয়ে আছে। অলির বসে থাকা অবস্থাতেই চোখ লেগে গেছে। মেয়েটা বেশি রাত অব্ধি জেগে থাকতে পারেনা। দিহান অলির রুমে বসে বসে ঊর্মিলার সাথে কথা বলছিলো, মেয়েটা তাকে অলির ব্যাপারে বলছে,
“আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা যে আমার ভাই একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে ওরকম কিছু করেছে। সেই সাথে মায়ের উপরেও প্রচন্ড রাগ উঠছে। ভাইয়া কি এই আকাম করেছে বলেই বিয়ে না করে পালিয়ে গেছে?”
দিহান চুপচাপ ঊর্মিলার কথা শুনছে। ঊর্মিলা বিরক্ত হয়ে বললো,
“আপনি আদৌ আমার কথা শুনছেন?”
“হুম শুনছি তো বলতে থাকো”
“আপনার কি আমাকে বাচাল বলে মনে হয় নাকি? যে আপনি চুপ করে থাকবেন আর আমি বলেই যাবো। শুনুন আপনি ছাড়াও আমার অনেক ফ্রেন্ড আছে আমি চাইলেই তাদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে পারি। কিন্তু এটা পারিবারিক কথা বলে আমি ওদের সাথে শেয়ার করতে পারবোনা। আপনিই বলুন নিজের ভাইয়ের আকামের কথা কি ফ্রেন্ডসদের কাছে বলা যায়?”
ঊর্মিলার কথা শুনে দিহান বলে ওঠে,
“তুমি কি ইনডিরেক্টলি বলতে চাইছো যে আমি তোমার জাস্ট ফ্রেন্ড নই?”
ঊর্মিলা স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে উল্টো পাল্টা বলে ফেলেছে,
“না আমি সেটা বলিনি। আপনি তো ভাইয়ারও বন্ধু তাই আপনাকে বলাই যায়। নিজের ফ্রেন্ডের আকামের কথা জানলে সমস্যা নেই। আপনি তো আর অন্যদেরকে বলতে যাবেন না। যদিও আমার সন্দেহ আছে যে আপনি হয়তো এসব আগে থেকেই জানেন। আর ভাইয়ার সাথেও আপনার যোগাযোগ আছে। প্লিজ যদি আপনার যোগাযোগ থেকে থাকে তাহলে ওকে এই বিষয়ে জানাবেন। বাড়িতে কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হচ্ছে। ঝামেলা বললে কম স্নায়ুযুদ্ধ চলছে”
“তোমার কি মনে হয় তোমার ভাই সেরকম কিছু করতে পারে?”
“আমি জানিনা। ছেলেমানুষ সব করতে পারে তাছাড়া আমি দেখেছিলাম অলি ভাইয়াকে দেখে ভয় পাচ্ছিলো। আর ভাইয়ার গালে মেহেন্দি লেগেছিলো পরে আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে অলির হাতের মেহেন্দিও লেপ্টে ছিলো। আমি সিওর যদি কিছু হয়েই থাকে তাহলে মেহেন্দির রাতেই হয়েছিলো। যদিও আমি এখনো মানতেই পারছিনা যে আমার ভাইয়া অলির সাথে সেরকম কিছু করেছে”
“হুম দেখি কি করা যায়। তুমি চিন্তা কোরোনা যা হবে ভালোই হবে”
,
আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন নিজেদের রুমে বসে কথা বলছে,
“আচ্ছা ছেলেটা ওর মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে অলিকে বিয়ে করতে রাজি হলো কেনো?”
আসমা বানুর কথার উত্তরে লিয়াকত হোসাইন বলে,
“হয়তো জেল খাটতে হবে সেই ভয়েই বিয়ে করতে চাইছে।বলছি কি মেয়েটাকে ওই বাড়িতে পাঠানো কি ঠিক হবে?”
আসমা বানু বলল,
“আমি মেয়েকে ওই বাড়িতে পাঠাবো না বুঝলে। বিয়ের পরেও অলি এই বাড়িতেই আমাদের সাথে থাকবে।”
“আলভী কি এতে রাজি হবে?”
“দেখি কি করা যায়”
আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন ড্রইংরুমে এসে দেখলেন অলি সোফাতেই ঘুমিয়ে আছে আর আলভী একদৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। লিয়াকত হোসাইন একটু কেশে উঠলেন। আলভী থতমত খেয়ে গেলো,
“আংকেল আপনারা ঘুমাননি?”
লিয়াকত হোসাইন অন্যপাশের সোফায় বসে বললো,
“না ঘুমাইনি। আসলে আপনার মা গতকাল রাতে আমাদের সাথে যেই ব্যবহার করলো তারপর অলিকে ওই বাড়িতে যেতে দিতে আমাদের মন সায় দেবেনা”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে বলে,
“আংকেল প্রথমত আমি বয়সে আপনার থেকে ছোট। আপনি আমাকে তুমি বলে সম্মোধন করতে পারেন। দয়া করে আপনি বলবেন না। আর রইলো অলির থাকার বিষয়টা সেটা অলির উপর ও যেখানে থাকতে চাইবে সেখানেই থাকবে।”
আসমা বানু বলল,
“আমি বলিকি বিয়ের পর ও আমাদের সাথেই থাকুক। ও তো বাচ্চা মেয়ে, তার উপর আবার প্রেগন্যান্ট। নিজের খেয়াল টাই তো রাখতে পারেনা এই অবস্থায় নতুন জায়গায় গেলে ও মানিয়ে নিতে পারবেনা”
কথার আওয়াজে অলির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। অলি চোখ মেলে আশেপাশে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসে। ঘুমঘুম চোখেই বলে,
“আমি শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই থাকবো। আমি এখনই আমার শাশুড়ী মাকে মিস করছি।”
অলির কথা শুনে আলভী চোখ ছোটো ছোটো করে অলির দিকে তাকায়। অলি চোখ কচলাচ্ছে আর হাই তুলছে,
“অলি পা’গলামী করিস না। সেখানে গিয়ে শুধু শুধু ঝামেলা করার কোনো মানেই হয়না। তুই যেহেতু বাচ্চাটা রাখতেই চাইছিস সেহেতু আমরা শুধু বাচ্চাটার জন্য নাম পরিচয় চাই। আলভী তোকে বিয়ে করবে সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই।”
অলির ঘুমঘুম ভাবটা কেটে গেছে সে স্বাভাবিক স্বরেই বলে ওঠে,
“মা আমি ওই বাড়িতে গিয়েই থাকবো। কারণ বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িই মেয়েদের নিজের বাড়ি। আমি মাঝে মাঝে বেড়াতে আসবো এখানে তুমি চিন্তা কোরোনা”
আলভী অলির দিকে তাকিয়ে শান্তকন্ঠে বলে ওঠে,
“তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিতে পারি। ২জন সার্ভেন্ট রেখে দেবো তোমার থাকতে কোনো প্রবলেম হবেনা। সত্যি বলতে আমিও চাইনা যে তুমি ওই বাড়িতে গিয়ে থাকো”
“আপনি কি কোনোভাবে আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাইছেন নাকি? ওই বাড়িতে থাকাতে পারাটা আমার অধিকার। যদি আমাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যেতে না পারেন তাহলে বিয়ে করতে হবেনা”
অলির কথা শুনে আলভী মাথায় হাত দিয়ে একটা বিরক্তির শ্বাস ফেললো। অলি উপরে উপরে ম্যাচিউর সাজার চেষ্টা করলেও ভেতরে ভেতরে একদম বাচ্চা। নিজের কিসে ভালো হবে সেটাও বোঝেনা,
“আমি আগেই বলেছি তুমি যেখানে থাকতে চাইবে সেখানেই রাখবো।”
“তাহলে আর কি আমি কালকে ওই বাড়িতে যাচ্ছি আর এটাই ফাইনাল”
আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন একটা শ্বাস ফেলে আলভীর উদ্দেশ্যে বললো,
“আলভী তুমি তোমার বন্ধুকে নিয়ে অলির রুমে শোও। অলি তুই আমার সাথে এই রুমে শো। তোর বাবা ড্রইংরুমেই শুয়ে পরবে।”
আলভী ভদ্রভাবে বলল,
“আমি আর দিহান এখানে ড্রইংরুমেই ঘুমাতে পারবো। আপনাদের কষ্ট করতে হবেনা আন্টি। আপনারা গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন”
আসমা বানু কিছু বলতে গেলে অলি বলে,
“মা উনি যেহেতু এখানেই ঘুমাতে চাইছে তাহলে ঘুমাক। আমরা ঘুমিয়ে পরি চলো”
“এটা কেমন কথা ওরা এখানে ঘুমাবে কেনো? যাও তোমরা অলির রুমে গিয়ে ঘুমাও”
লিয়াকত হোসাইনের কথার উপরে অলি আর কিছুই বলতে পারলোনা। আলভীও মাথা নেড়ে অলির রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো দিহান এখনও ফোনে কথা বলছে। আলভীকে আসতে দেখে দিহান কল কেটে দেয়। এদিকে আসমা বানু অলিকে ধরে ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। তারপর নিজেও অলির পাশে শুয়ে পড়ে। অলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“শুধু শুধু কেনো জেদ করছিস? আলভীর যেহেতু সমস্যা নেই তাহলে এখানেই তো থাকতে পারতি। তাছাড়া তুই আমাকে ছাড়া ওই বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারবি?”
অলি মাকে জড়িয়ে ধরে নিশব্দে কেদে ওঠে মনে মনেই বলে,
“তোমাদের অপমানের বদলা নেওয়ার জন্য আর আমার বাবুর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি ওনাকে বিয়ে করবো। তাই আমাকে ওই বাড়িতে যেতেই হবে মা। আমি ওনার মায়ের দম্ভ ভাঙ্গতে চাই। বোঝাতে চাই যে আমি আসলে কোন ধরনের মেয়ে”
আসমা বানু অলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,
“কি হলো বল, তুই আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি তো?”
অলি কান্নাগুলো গিলে অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“আমাকে পারতেই হবে মা। সব মেয়েকেই পারতে হয়। তুমিও তো পেরেছিলে আমিও পারবো দেখো”
আসমা বানুর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। সে জানতো এই দিনটা আসবে কিন্তু এতো তারাতাড়ি আসবে সেটা সে ভাবেওনি,
“তুই কেনো এতো তারাতাড়ি বড় হয়ে গেলি অলি? আমি ভাবতেই পারছিনা কালকে তুই অন্য একজনের বউ হয়ে যাবি। তারপর আমাদেরকে ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে পাড়ি জমাবি”
“কান্না কোরোনা মা মেয়েদের জীবনটাই এমন। তবে আমি প্রতি সপ্তাহে আসবো তোমার কাছে। তুমি কেদোনা প্লিজ”
,
আলভী ঘুমাতে পারছেনা শুধু এপাশ ওপাশ করছে। পাশেই দিহান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। আলভীর একা ঘুমানোর অভ্যাস বেড শেয়ার করলে সে ঘুমাতে পারেনা। তার উপর বাড়ির আশেপাশ থেকে আসা গোলাপ ফুলের গন্ধে তার চোখমুখ জ্বলছে। চোখ নাক থেকে সমানে পানি পড়ছে। সেই সাথে শরীরও চুলকাচ্ছে,
“এতো মহা মুশকিল। আজকেও ঘুমাতে পারবোনা দেখছি। হাহ এরকমই হওয়া উচিৎ। কে বলেছিলো একটা bee কে ভালোবাসতে। তাও আবার ব্যাপারটা ভালোবাসা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নেই।”
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২৮৫০+
#১৫_বছর_বয়সী_মা (১৩)
#সোফিয়া_সাফা
(অলি এভির বিয়ে স্পেশাল)
সকাল ৯ টা
আসমা বানু সবাইকে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করে দিচ্ছে। খাবারের আইটেম দেখে আলভী একটা শ্বাস ফেললো। আসমা বানু ফজরের নামাজ পড়েই রান্না করা শুরু করেছিলেন। অলি নাকমুখ কুচকে টেবিলে বসে আছে,
“মা আমি কিছুই খেতে পারবোনা এখন। আমার এতো এতো খাবার দেখেই বমি আসছে”
আসমা বানু আলভীর প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললো,
“না খেতে পারলে ড্রইংরুমে গিয়ে বোস”
অলি চুপচাপ ড্রইংরুমে এসে বসলো। আসমা বানু আলভীর দিকে তাকিয়ে দেখলো আলভীর মুখ পুরোই ফুলে গেছে। চোখদুটো লাল টকটকে। ব্যাপারটা বাকিরাও লক্ষ্য করলো। লিয়াকত হোসাইন জিজ্ঞেস করেই ফেলে,
“তোমার কি শরীর ভালো নেই?”
আলভী পায়েস খেতে খেতেই বলে,
“তেমন কিছুই না আঙ্কেল আমি ঠিক আছি”
আসমা বানু বলল,
“তোমার চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছেনা যে তুমি ঠিক আছো”
দিহান মুখের খাবারটুকু গিলে বলে ওঠে,
“আন্টি ওর রোজ ফ্লাওয়ারে এলার্জি আছে। আপনাদের বাড়ির চারপাশে গোলাপ গাছে ঘেরা। চারদিকে মিষ্টি সুঘ্রাণের ছড়াছড়ি কিন্তু এই সুঘ্রাণ আবার এভির সহ্য হয়না”
লিয়াকত হোসাইন আর কিছুই বললোনা। কিইবা বলবে সে? অলির ফুল খুব পছন্দ। বাড়ির চারদিকে ফুলের গাছ অলিই লাগিয়েছে।
সবার খাওয়া দাওয়া শেষে আসমা বানু অলিকে নিজের একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলো। আলভী শপিং করতে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু অলি যেতে দেয়নি। যদি আলভী ফিরে না আসে?
বেলা ১১টা, তারা সবাই প্রথমে কোর্টে আসে। অলির বয়স কম সেই ক্ষেত্রে অলির বিয়েতে কোর্টের পার্মিশন লাগবে। বাংলাদেশ আইন মোতাবেক বিশেষ প্রয়োজনে পরিবারের সম্মতিতে নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। অলি যেহেতু প্রেগন্যান্ট আর অলির পরিবার তাকে বিয়ে দিতে চাইছে সেহেতু কোর্ট থেকে তারা সহজেই পার্মিশন পেয়ে যায়। এইক্ষেত্রে সাহায্য করে আলভী আর দিহানের পরিচিত কিছু লয়্যার। কোর্ট থেকে পার্মিশন নিয়ে তারা সবাই কাজি অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আধা ঘণ্টা পর তারা কাজি অফিসের সামনে এসে পৌছালে অলি আলভীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আগে চুক্তিনামা রেডি করুন”
আলভী মাথা নেড়ে কোথাও চলে যায়। দিহান অলিদের সাথেই কাজি অফিসে বসে আছে। প্রায় আধাঘন্টা পর আলভী এসে অলির দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলে,
“পড়ে দেখো সব ঠিকঠাক আছে কিনা”
অলি পড়ে দেখলো সে যা যা বলেছিলো আলভী সব গুছিয়ে লিখিয়ে এনেছে। লেখাগুলো কিছুটা এইরকম,
~আলভী তাসনীম মির্জা কোনোপ্রকার পরিস্থিতিতেই দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবেনা,
~প্রথম স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে আলভী তাসনীম মির্জা দ্বিতীয় বিয়ে করলে তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে তার প্রথম স্ত্রী অলি আর তার সন্তান,
~আলভী তাসনীম মির্জা কখনো কোনোপ্রকার পরিস্থিতিতে অলিকে ডিভোর্স দিতে পারবেনা। ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র অলির হাতে থাকবে,
~অলিকে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তার অনুমতি ব্যতীত তাকে স্পর্শ করা যাবেনা,
~আলভী তাসনীম মির্জার অনুপস্থিতিতে তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে তার একমাত্র স্ত্রী অলি,
সবকিছু পড়ে দেখে অলি কাগজটা আলভীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“হুম ঠিকঠাক আছে সাইন করুন”
আলভী বিনাবাক্যে কাগজটা টেবিলের উপরে রেখে সাইন করে দেয়। তারপর অলিও সেটাতে সাইন করে। এবার বিয়ে পড়ানো হবে। অলি আর আলভী দুজনেই কাজি সাহেবের সামনে বসে আছে।
“বিয়ের মোহরানা কতো লিখবো?”
আলভী অলির দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমিই বলো”
অলি একটু ভেবে বলে ওঠে,
“দশকোটি লিখুন। আমার শখ ছিলো যে আমার বিয়ের মোহরানা দশকোটি টাকাই হবে”
মেয়ের কথাশুনে অলির বাবা মা অনেক ইতস্তত বোধ করলো। আসমা বানু কিছু বলতে চাইলে আলভী ইশারায় বলে যে তাদের কিছুই বলতে হবেনা। আলভী কিছুক্ষণ অলির দিকে তাকিয়ে রইলো। লাল শাড়িতে অলিকে পুতুলের মতো লাগছে। মাথায় লাল ওড়নাটা দেওয়ার কারণে একদম পিচ্চি বউয়ের মতোই দেখাচ্ছে। আলভী চাপাস্বরে অলিকে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কি আদৌ মোহরানার মানে বোঝো?”
“হুম আপনি আমাকে ডিভোর্স দিলে মোহরানা দিয়ে দিতে হবে সেটাই তো তাইনা? আরে আপনি চিন্তা করছেন কেনো আপনার হাতে তো ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষমতাই থাকবেনা। এটা তো আমি শোঅফ করার জন্য লিখতে বলেছি”
আলভী চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেললো। মেয়েটা বোঝেনা বিষয়টা,
“কি হলো আপনি কি ভয় পেয়ে গেলেন? এখনি ভয় পেয়ে গেলে চলবে নাকি? আপনারা তো বড়লোক তাইনা? টাকার পরিমাণ শুনে তো ভয় পাওয়ার কথা নয়”
আলভী অলির সামনে ঝুকে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,
“আমার ১৪গোষ্ঠী বড়লোক কিন্তু মোহরানা কি তারা দেবে নাকি? সেটা তো আমাকেই দিতে হবে।”
অলিও আলভীর দিকে তাকিয়ে নিচুস্বরেই বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি যদি কখনো আপনাকে ডিভোর্স দেই তাহলে আমাকে মোহরানা দেয়া লাগবেনা। এখন আর চিন্তা কইরেন না। আমি শুধু শোঅফ করার জন্যই এতগুলো টাকা লিখতে বলেছি”
আলভী যেনো অলির কথা শুনলোই না। সেতো অলিকে এতো কাছ থেকে দেখে তব্দা খেয়ে অলির দিকেই তাকিয়ে আছে। কথা বলার সময় অলির চোখ মুখের ভঙ্গি দেখে আলভীর গলা শুকিয়ে এলো সে কয়েকটা ঢোক গিলে অলির থেকে সরে এসে নিজের জায়গায় বসলো। দিহান আলভীর অন্য পাশের চেয়ারেই বসে ছিলো সে আলভীর কানের কাছে এসে ঠাট্টা করেই বলে,
“কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত তুই মোহরানা পরিশোধ করতে গিয়ে ফকির হতে চলেছিস। আরো করো বাচ্চা মেয়েকে প্রেগন্যান্ট চান্দু। একদম ঠিক কাজ হচ্ছে”
আলভী দিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুই বন্ধু নাকি রিফাতের মতো শত্রু?”
“বারবার রিফাতের সাথে তুলনা করিসনা তো ওর নাম শুনলেও বমি আসে”
“এতো বমি আসা তো প্রেগন্যান্সির লক্ষ্মণ। তুই কোনোভাবে প্রেগন্যান্ট হয়ে যাসনি তো?”
আলভীর কথা শুনে দিহান চোখ বড়বড় করে আলভীর দিকে তাকালো। সে আলভীকে রোস্ট করতে গিয়ে নিজেই রোস্ট হয়ে গেছে। আলভী আর দিহানের কথার মাঝে আসমা বানু অলিকে টেনে অন্য সাইডে নিয়ে গিয়ে বলে,
“তুই দশকোটি টাকার কথা কেনো বললি? এতো টাকা তো রাজারাও মোহরানা দেয়না।”
“আরে মা আমি তো শোঅফ,,,”
“এটা কোনো শোঅফ করার জিনিস নয়। মোহরানা স্ত্রীর হক আর সেটা পরিশোধ করা স্বামীর জন্য ফরজ।”
অলি ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকায়,
“আমি তো জানতাম কাবিনের টাকা ডিভোর্সের সময় দিতে হয়”
“ভুল জানিস তুই এখন গিয়ে চুপচাপ বসে থাক। আলভী যত লেখাতে চায় ততই লেখাক। তুই টাকা দিয়ে কি করবি? ও তোকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেবে। তোর বাবুকে স্বীকৃতি দেবে সেটাই অনেক।”
অলি চুপ করে রইলো তার মা ঠিকই বলেছে। তার টাকাপয়সার দরকার নেই সেতো শুধুমাত্র তাদের দম্ভ ভাঙ্গতে চায়। অলি চুপচাপ এসে নিজের জায়গায় বসলো। কিছুক্ষণ পর কাজী সাহেব বলে ওঠে,
“এবার বলুন মোহরানা কতো লিখবো?”
আলভী অলির দিকে তাকিয়ে দেখে অলি চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। অলিকে চুপ থাকতে দেখে আলভী বললো,
“অলি যত বলেছে ততই লিখুন”
কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক চোখে আলভীর দিকে তাকায়। আসমা বানু বলে ওঠে,
“অলি বাচ্চা মেয়ে ও এসব ব্যাপারে বোঝেনা”
আলভী শান্তস্বরে বলে ওঠে,
“কাজি সাহেব আপনি দশকোটি টাকাই লিখুন”
অলি আলভীর দিকে তাকিয়ে আছে আলভী একদম স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে। পরণে ব্লু কালারের শার্ট আর ব্ল্যাক ডেনিম প্যান্ট। হাতে Cartier ব্রান্ডের ঘড়ি। আলভী হঠাৎ করেই কাজি সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো,
“বিয়ের তারিখ ৩মাস আগে দেবেন”
কথাটা শুনে কাজি সাহেব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
“বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দিতে চাইছেন?”
“জ্বি সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে শুধু মাস টা ৩মাস পিছিয়ে দেবেন”
কাজি সাহেব আরও কিছু জানতে চাইলে আলভীর চোখজোড়া দেখে থেমে যায়। আলভী অদ্ভুত ভাবে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তার তাকানো দেখে কাজি সাহেব তার কথামতোই বিয়ের তারিখের জায়গায় ৩মাস পিছিয়ে লিখলো। সবকিছু লেখার শেষে কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।
“মোহাম্মদ লিয়াকত হোসাইন এবং আসমা বানুর একমাত্র কন্যা আলিয়া তাবাসসুম অলি হোসাইনকে জনাব আলভী তাসনীম মির্জা দশকোটি একটাকা দেনমোহরে বিবাহ করিতে রাজি থাকিলে বলুন কবুল”
আলভী একনিশ্বাসে বললো,
“কবুল, কবুল, কবুল”
কাজি এবার অলিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“মোহাম্মদ উসমান মির্জা এবং শাহানাজ বেগমের একমাত্র পুত্র আলভী তাসনীম মির্জার সাথে এই বিবাহে রাজি থাকলে বলুন কবুল”
অলি একবার বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে তারপর আলভীর দিকে তাকায় আলভী তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অলি একটা ঢোক গিলে বলে ওঠে,
“কবুল, কবুল, কবুল”
এরপর আলভী আর অলি দুজনেই রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দেয়। ব্যস বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যায়। বিয়ে শেষ হওয়ার পর আলভী সবাইকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে নেয়। এখন বিকাল ৫টা বাজে,
“তোমরা আজকে আমাদের বাড়িতে থেকে কালকে যেও”
আসমা বানুর কথা শুনে আলভী বলে,
“না আম্মু আমি থাকতে পারবোনা আবার পরে এসে বেড়াবো।”
আলভীর মুখ থেকে আম্মু ডাক শুনে আসমা বানুর বেশ ভালো লাগলো। সে ইতোমধ্যেই বুঝে গেছে যে আলভী তার মায়ের মতো না। নইলে অলির এতোবড় আবদার মেনে এতো বড় অংকের টাকা দেনমোহর করতোনা। গাড়িতে ওঠার সময় আসমা বানু অলিকে জড়িয়ে ধরে কেদে ওঠে। তার কান্না দেখে অলিও কান্না করে দেয়।
“অলি চাইলে আজকে আপনাদের সাথে থাকতে পারে। আমি কালকে এসে ওকে নিয়ে যাবো”
আলভীর কথা শুনে অলি মাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। চোখ মুছে বলে,
“আপনি গেলে আর আসবেন না। আমি আপনার সাথেই যাবো।”
অলিকে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে আলভী ড্রাইভিং সিটে বসে। দিহান ব্যাক সিটে বসলো। আলভী গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আসমা বানু তো কেদেই যাচ্ছে লিয়াকত হোসাইন তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে যদিও তারও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
,
অলি বাইরের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কেদেই চলেছে। আলভীর ব্যাপারটা ভালো লাগছেনা,
“তোমার সাথে তোমার বার্থ সার্টিফিকেট আছে?”
আলভীর প্রশ্ন শুনে অলি চোখ মুছে আলভীর দিকে তাকায়। আলভী ব্যাংকের সামনে গাড়ি থামিয়ে অলির দিকে তাকায়,
“কি হলো বলো”
অলি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই আলভী গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে এসে অলির সাইডের ডোর ওপেন করে,
“নেমে এসো”
অলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আলভী অলিকে নামানোর উদ্দেশ্যে অলির হাত ধরতে গিয়েও থেমে যায়। তার মনে পড়ে যায় চুক্তির কথা।
“গাড়ি থেকে নামো। গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে”
আলভীর গম্ভীর কণ্ঠশুনে অলি চুপচাপ নেমে আসে। তার পায়ে এখনো ব্যাথা স্বাভাবিক ভাবে হাটতে পারছেনা। ওদের দুজনকে নামতে দেখে দিহানও নেমে আসলো,
“কিরে এখানে নামলি কেনো? এখনো তো অনেক রাস্তা বাকি আছে।”
“তুই এখানেই থাক আমি অলিকে নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে আসছি”
আলভী অলির দিকে তাকিয়ে বলে,
“চুপচাপ চলো আমি এখনি তোমাকে স্পর্শ না করার শর্ত ভেঙ্গে জেলে যেতে চাইছিনা”
বলেই আলভী হাটা ধরলো অলিও কৌতুহল বশত তার পিছু পিছু যেতে লাগলো। ব্যাংকে ঢুকে আলভী অলির থেকে বার্থ সার্টিফিকেট নিলো। তারপর অলির জন্য একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলে নিজের একাউন্ট থেকে পুরো দশকোটি একটাকা অলির সেই একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিলো। অলি তো অবাক চোখে আলভীর দিকে তাকিয়ে আছে। তার আলভীকে পা’গল বলেই মনে হচ্ছে,
“আপনি এসব কি করছেন? আমার এতো টাকা লাগবেনা। আমি এতো টাকা দিয়ে কি করবো?”
“আই ডোন্ট নো। তুমি কি করবে সেটা আমি কি করে জানবো? আর আমি জানতেও চাইনা। তোমার যা ইচ্ছা হবে তাই কোরবে”
কিছুক্ষণ যেতেই আলভী আবারও অলির উদ্দেশ্যে বললো,
“এদিকে এগিয়ে এসে তোমার একাউন্টে পিন সেট করো”
অলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। আলভী এবার প্রচন্ড বিরক্ত হলো। এই মেয়ে একবার কথা বললে শোনেনা নাকি বোঝেনা?
“কি হলো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তারাতাড়ি এসে পিন সেট করো কুইক”
আলভীর চিৎকার শুনে আশেপাশের সবাই আলভীর দিকে তাকালো। অলি তো আলভীর কন্ঠ শুনেই কেপে উঠেছে সে কাপতে কাপতেই আলভীর দিকে এগিয়ে গেলো। আলভীর চেহারা দেখে অলির ভীষণ ভয় করছে অলির হাত পাও কাপছে। আলভী কি বোকা নাকি এতোগুলো টাকা তাকে কেনো দিয়ে দিচ্ছে এসব ভেবে তার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই মা বাবাকে ছেড়ে আসাতে অলির ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার উপর আলভী এরকম করার কারণে অলি না চাইতেও কেদে ওঠে। আলভী চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেলে অলির কাছে এগিয়ে গিয়ে শান্তকন্ঠে বলে,
“আমি কি তোমাকে মে’রেছি?”
অলি ঠোঁট চেপে নাবোধক মাথা নাড়ায়,
“তাহলে কাদছো কেনো?”
অলি কান্নার মাঝেই বলে ওঠে,
“আপনি খুব খারাপ”
অলির কথা শুনে আলভী পুরোই শকড হয়ে গেলো সেই সাথে ভাবতে লাগলো যে সে অলির সাথে বর্তমানে কি এমন খারাপ করেছে যার জন্য অলি তাকে এভাবে বললো।
“আমি খারাপ কি করলাম?”
“ধমক দিচ্ছেন কেনো? আমি তো বললাম টাকার দরকার নেই”
“দেখো দেনমোহর পরিশোধ করা স্বামী হিসেবে আমার দায়িত্ব। আমি চাইলে পরেও দিতে পারতাম কিন্তু আমার যদি কিছু হয়ে যায়। তখন এর জন্য আমাকে জবাব দিতে হবে। তুমি প্লিজ টাকাগুলো নিয়ে আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করতে দেও।”
অলি চুপ করে রইলো। তার তখন কথা বলাই উচিৎ হয়নি। না জেনেশুনেই বলে দিয়েছিলো। আলভী আবারও শান্ত কন্ঠে বললো,
“আমি তো খারাপ। কিন্তু তুমি তো ভালো। আর ভালো মেয়েদেরকে এক কথা বারবার বলতে হয়না। একটা পিন সেট করো যেটা তোমার মনে থাকবে। আবার সহজ কিছু দিওনা।”
অলি উপায় না পেয়ে সামনে ঘুরে তাকালো। তারপর একটা পিন সেট করলো। কাউন্টারে থাকা মেয়েটি অলির দিকে একটা ক্রেডিট কার্ড এগিয়ে দিলো। আলভী ইশারায় অলিকে সেটা নিতে বললো৷ অলি একটা ঢোক গিলে সেটা নিয়ে নিলো। তারপর আলভী অলিকে নিয়ে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে আসে।
“আমি কিন্তু দেনমোহর পরিশোধ করে দিয়েছি।”
অলি কান্নাভরা চোখে আলভীর দিকে তাকায়। আলভী কেনো তাকে এতোগুলো টাকা দিলো সেটাই সে বুঝতে পারছেনা। টাকা গুলো দিতে আলভীকে তো কেউ বাধ্য করেনি। অলি গাড়িতে বসতেই আলভী গাড়ি স্টার্ট দেয়। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তারা বাড়ির সামনে এসে পৌছায়। গাড়ি থেকে নামতেই দিহান বলে,
“এভি আমি চলে যাচ্ছি তোরা বাড়িতে যা”
আলভী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই দিহান গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। অলি একদৃষ্টিতে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। এটাই সেই বাড়ি যেখান থেকে তার বাবা মাসহ তাকে অপমান করে বের করে দিয়েছিলো। আলভী অলির দিকে তাকালো তারপর একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“অলি ভেবে দেখো তুমি চাইলে আমি তোমাকে নিয়ে ফ্ল্যাটে থাকতে পারি। তুমি তো জানোই আমার মা কেমন। তোমাদের সাথেও বাজে বিহেভ করেছিলো। আমার মনে হয় না যে এই বাড়িতে তুমি থাকতে পারবে।”
অলি আলভীর দিকে না তাকিয়েই বললো,
“আমি এই বাড়িতেই থাকবো। বড়লোক বলে আপনার মায়ের খুব অহংকার আমিও দেখবো যে এবার আমাকে কিভাবে এই বাড়ি থেকে বের করে দেয়”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে হাটা শুরু করলো অলিও তাকে অনুসরণ করতে লাগলো। আলভীকে দেখে দারোয়ান সালাম দিয়ে গেইট খুলে দিলো। দারোয়ানকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে আলভীকে দেখে সে ভীষণ খুশি হয়েছে। মেইন দরজার সামনে এসে আলভী নিজের পকেটে চাবি খুজতে লাগলো। কিন্তু তার মনে পড়লো সে ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে চাবি নিজের রুমেই রেখে গিয়েছিলো। আলভী বেশি না ভেবে কলিংবেল প্রেস করলো। কয়েক সেকেন্ড পর একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ঊর্মিলা, নূরনাহার আর রুনা খাতুন ড্রইংরুমে বসে কথা বলছিলো আলভীকে দেখে তারা তিনজন প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলো৷
“ঊর্মি বাড়ির সবাইকে ডেকে আন গিয়ে”
আলভীর কথা শুনে ঊর্মিলা মাথা নাড়িয়ে সবাইকে ডেকে আনতে চলে গেলো। ২মিনিটের মাথায় বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য ড্রইংরুমে এসে উপস্থিত হয়েছে। আলভী এসেছে শুনে সবাই একপ্রকার ছুটেই এসেছে। শাহানাজ বেগম আলভীকে দেখে দ্রুতপায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। আলভীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“বাবা তুই ফিরে এসেছিস। আমি জানতাম তুই মায়ের সাথে অভিমান করে বেশিদিন থাকতে পারবিনা।”
শাহানাজ বেগম জড়িয়ে ধরলেও আলভী একহাত পকেটে খুজে দাঁড়িয়ে আছে। আরেক হাতে ২টি ব্যাগ। আলভীর থেকে রেসপন্স না পেয়ে শাহানাজ বেগম আলভীকে ছেড়ে দাঁড়ায়।
“আমি একা আসিনি মা”
আলভীর শান্তকন্ঠের কথাটা শুনে বাড়ির সবাই অবাক চোখে তার দিকে তাকায়। আলভী পেছনে ফিরে ইশারা করতেই লাল টুকটুকে শাড়ি পরিহিতা অলি এগিয়ে এসে আলভীর পাশে দাঁড়ায়। অলিকে এই সাজে আলভীর সাথে আসতে দেখে বাড়ির প্রত্যেকের মাথায় বজ্রপাত হলো যেনো। অলি সবার দিকে তাকিয়ে একটা কিউট স্মাইল দিলো।
“ও হচ্ছে অলি আমার ওয়াইফ। অলি এগিয়ে গিয়ে সবার সাথে পরিচিত হয়ে নেও”
আলভীর কথা শুনে শাহানাজ বেগম অগ্নিচোখে অলির দিকে তাকায়। তার চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে। অলি মাথা নিচু করে বলে,
“নতুন বউকে বরণ করে নিতে হয়। আপনি কাউকে বলুন যে এসে আমাকে বরণ করতে। আমি তারপরেই বাড়ির ভেতর ঢুকবো”
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২৩০০+