#১৫_বছর_বয়সী_মা (১৬)
#সোফিয়া_সাফা
“আই সি। তোমরা এমনভাবে তাকিয়ে ছিলে বলেই মেয়েটা খেতে পারছিলো না। এই চেয়ারে কোনো বিশেষ ব্যাপার আছে নাকি? যে তোমরা এমনভাবে তাকিয়ে আছো?”
আলভীর কথা শুনে সবাই চোখ সরিয়ে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। সবার খাওয়া শেষ হতেই উসমান মির্জা বলে ওঠে,
“এভি পরশু দিন তোদের রিসেপশনের এরেঞ্জমেন্ট করা হবে।”
“ওকে আমার কোনো সমস্যা নেই”
“কালকে কি তুই একবার অফিসে যেতে পারবি?”
“হুম বাবা আমি এমনিতেও কালকে অফিসে যেতাম”
আলভী হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। অলি তার রুমের শোকেসে থাকা একটা শোপিসের দিকে আনমনে তাকিয়ে ছিলো তখনই একজন সার্ভেন্ট এসে তাকে খাবার দিয়ে যায়। অলির প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছিলো। সে তারাতাড়ি করে খাবার খেয়ে নেয়।
রাত ১২:১৪ মিনিট,,, অলি ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই তার ভয় করছে। এমনিতে একা ঘুমানোর অভ্যাস তার নেই। তার উপর নতুন জায়গা। তার প্রচন্ড পরিমানে ঘুম আসছে কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই অদ্ভুত অদ্ভুত কল্পনা আসছে। অলি উঠে বসলো তার রুমের লাইট জ্বালানো দরজাও লক করেনি। কিন্তু তাও তার ভালো লাগছেনা।
“মনে হচ্ছে আমার এই বাড়িতে আসার আইডিয়া টাই ভুল ছিলো।”
অলি কিছুক্ষণ হাটুতে গাল ঠেকিয়ে বসে রইলো তারপর ধীরপায়ে রুমে থেকে বেরিয়ে এলো। সে প্রথমেই আলভীর রুমের দিকে উঁকি দিলো আলভীর রুমের দরজা খোলাই ছিলো। অলি সেদিকে যেতে নেবে ঠিক তখনই তার আলভীর করা বিহেভিয়ারের কথা মনে পড়ে যায়। ফলস্বরূপ অলি উল্টো দিকে ঘুরে ঊর্মিলার রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালো। এদিকে ঊর্মিলা ফোনে দিহানের সাথে কথা বলছিলো,
“আরে বললাম তো তখন আমার ফোন দিয়ে অলি ওর মায়ের সাথে কথা বলছিলো”
“সেটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু তারপর কল কেটে দিচ্ছিলে কেনো? আমি কি তোমাকে খুব বেশিই বিরক্ত করছি? বিরক্ত বোধ করলে বলে দেও আমি আর কল দেবোনা”
“আপনি ভুল বুঝছেন তখন আমি অলির রুমে ছিলাম। আপনি কল দেওয়া মাত্রই ভাইয়া এসে পরেছিলো সেই জন্যই কেটে দিয়েছি। দয়া করে ভুল বুঝবেন না”
“হয়েছে আমাকে আর এতো ব্যাখ্যা দিতে হবেনা। আমি তো তোমার জাস্ট ফ্রেন্ড তাইনা?”
ঊর্মিলা একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“জাস্ট ফ্রেন্ড হলে রাগ করছেন কেনো?”
“আমি রাগ করিনি, আর সত্যি বলতে গেলে আমার রাগ করার কোনো অধিকারও নেই। তোমার ফোন ব্যস্ত থাকুক বা তুমি কল কেটে দেও। তোমার যা ইচ্ছা তাই করো”
বলেই দিহান কল কেটে দিলো। ঊর্মিলা আবারও দিহানকে কল দিতে যাবে ঠিক সেই সময়েই অলি তার দরজায় নক করে। ঊর্মিলা বিরক্তি নিয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো,
“এতো রাতে আবার কে আসলো?”
ঊর্মিলা দরজা খুলে অলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“অলি তুমি এখানে, ঘুমাওনি?”
অলি একটু ইতস্তত বোধ করলো। মাথা নিচু করেই বললো,
“আসলে আপু আমার একা ঘুমানোর অভ্যাস নেই। আমি কি তোমার সাথে ঘুমাতে পারি?”
ঊর্মিলা হাসিমুখে বললো,
“তুমি আমার সাথে ঘুমাতে চাও এটা তো ভালো কথা ভেতরে আসোনা।”
অলির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে ঊর্মিলার রুমে ঢুকে ঊর্মিলার বিছানার উপর বসলো। ঊর্মিলা দরজা লক করে দিয়ে অলির পাশে এসে বসলো। অলি ঘুমের জন্য চোখ খুলেই রাখতে পারছেনা।
“অলি তুমি শুয়ে পড়ো”
অলি মাথা নাড়িয়ে বেডের একসাইডে শুয়ে পড়লো। ঊর্মিলা লাইট অফ করতে গেলে অলি বলে ওঠে,
“আপু লাইট অন রাখলে কি তোমার সমস্যা হবে?”
ঊর্মিলা অলির দিকে তাকাতেই অলি বলে ওঠে,
“আসলে নতুন জায়গা তো আমার একটু ভয় করছে।”
ঊর্মিলা মৃদু হাসলো তারপর লাইট না নিভিয়েই অলির পাশে এসে শুয়ে পড়লো।
“অলি শোনো, তুমি চাইলে প্রতি রাতেই আমার সাথে শুতে পারো। আমার কোনো সমস্যা নেই। ভাবীকে সর্বাবস্থায় সাহায্য করা ননদ হিসেবে আমার দায়িত্ব”
অলি ঊর্মিলার দিকে ঘুরে একটা কিউট স্মাইল দিলো,
“থ্যাঙ্কিউ আপু। তুমি অনেক ভালো”
“জানি আর আমার ভাইটাও কিন্তু খারাপ নয়। কিন্তু আমি তো বুঝতেই পারছিনা যে ইদানীং ও এরকম ইর-রেসপনসিবলের মতো এক্ট কেনো করছে। বউকে অন্য রুমে থাকতে দিলো তার কারণ হিসেবে বললো ও নাকি রুম শেয়ার করতে পারবেনা। হাউ ফানি! আমার তো বলেই দিতে ইচ্ছা করছিলো যে আরে তুই রুম শেয়ার করতে না পারলে বিয়ে করেছিস কেনো? তারউপর রুম শেয়ার না করেই কি বাপ হতে চলেছিস নাকি?”
কথাটা শুনে অলি কাশতে লাগলো। ঊর্মিলা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে বসলো তারপর অলির দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। অলিও উঠে বসে পানি খেয়ে নিলো,
“অলি তোমার কি হলো? আর ইউ ওকে?”
অলি মুখ মুছে হাসার চেষ্টা করে বললো,
“হু আপু আমি ঠিক আছি”
ঊর্মিলা কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
“ভাইয়া বলেছিলো তোমাকে নাকি ও ৩মাস আগেই বিয়ে করেছিলো। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? অলি বলোনা সত্যিই কি ভাইয়া ৩মাস আগেই তোমাকে বিয়ে করেছিলো?”
অলি একটা ঢোক গিললো তারপর মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো,
“হুম আপু এটাই সত্যি কথা।”
“কিন্তু ৩মাস আগে কিভাবে সম্ভব? তখন তো ও তোমাকে চেনারই কথা নয়”
অলি কি বলবে খুঁজে পেলোনা। সে মিথ্যা মিথ্যা কয়েকটা হাই তুলে বললো,
“ওটা অনেক বড় একটা গল্প আপু। আমার না ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আমি তোমাকে কালকে সব খুলে বলবো। এখন আমি ঘুমাই?”
ঊর্মিলা আর কি বলবে? সে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই অলি শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। এসবের মাঝে ঊর্মিলাও দিহানের কথা ভুলে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
,
আলভী ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হসপিটালের রোগী আর কোম্পানি একসাথে সামলানো খুবই কঠিন ব্যাপার। তবুও তাকে সামলাতেই হয়। পরিবারের বড় ছেলে সে। ইয়াদের এখনো পড়ালেখা শেষ হয়নি। যদিও ইয়াদ কোম্পানির বিভিন্ন পোস্ট দেখাশোনা করে। তবে এই কয়দিন বাড়ি থেকে দূরে থাকার কারণে তার অনেক কাজ জমে গেছে। কয়েকটা বিজন্যাস মিটিংও পরপর কয়েকবার postponed করা হয়েছে। কালকে সেসব মিটিং গুলো এটেন্ড করতে হবে। নয়তো অনেক বড় একটা লস ফেস করতে হবে। তার পিএ কয়েকটা প্রেজেন্টেশন সেন্ড করেছে। আলভী সেসবই রিচেক করছে। অবশেষে তার কাজ শেষ হলো। সে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এখন রাত ১:০৩ বাজে। আলভী দরজার দিকে তাকালো। তার দরজা একদম খোলাই আছে।
“অলি কি ঘুমিয়ে গেছে নাকি? ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে নাতো? হলেও কি আমার কাছে আসবে? তখনকার ব্যাপারটার জন্য মনে তো হয়না যে আমার কাছে আর আসবে”
আলভী বেড থেকে নেমে দাড়ালো তারপর অলির রুমের সামনে আসতেই সে থমকে গেলো। অলির রুমের দরজা খোলা। আলভী ভেতরে ঢুকে দেখলো অলি রুমে নেই,
“শিট এই মেয়েটা আবার কোথায় গেলো?”
আলভী ব্যালকনি আর ওয়াশরুমে খুজেও অলিকে পেলোনা।
“এই মেয়েটা আমাকে শান্তিতে কাজও করতে দেবেনা দেখছি”
আলভী কিছু একটা ভেবে ঊর্মিলার রুমের সামনে এসে দাড়ালো। কয়েকবার নক করার পরেও ঊর্মিলা দরজা খুললোনা। আলভী আবার নিজের রুমে ফিরে এসে ঊর্মিলার নম্বরে কল দিলো। ফোনের রিংটোনে ঊর্মিলার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সে ফোনটা হাতে নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠেই বললো,
“হ্যালো”
“অলি কোথায়?”
আলভীর ঝাঝালো কন্ঠ শুনে ঊর্মিলা ফোনটা সামনে এনে দেখলো আলভীর নম্বর। ঊর্মিলা জড়ানো কন্ঠেই বললো,
“চিন্তা করিসনা ভাইয়া। ও আমার রুমেই আছে”
“ওকে পাঠিয়ে দে”
“ও ঘুমিয়ে গেছে ভাইয়া”
“দরজা খোল”
ঊর্মিলা এবার ভীষণ বিরক্ত হলো,
“কি হয়েছে তোর? কেনো বিরক্ত করছিস? বললাম তো ঘুমিয়ে গেছে। আর প্লিজ আমাকেও ঘুমাতে দে”
আলভী এবার রেগেমেগে বলে ওঠে,
“দরজা না খুললে ভেঙ্গে ফেলবো। তারপর ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় মারলেই তোর ঘুম ছুটে যাবে। ৫ পর্যন্ত কাউন্ট করবো,,,
“আরে আর ভয় দেখাসনা তো খুলে দিচ্ছি। মাগো ঘুমিয়েও শান্তি নাই”
ঊর্মিলা হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলা মাত্রই আলভী টর্নেডোর বেগে রুমে ঢুকে পরলো। আলভীর চেহারা দেখে ঊর্মিলার ঘুম ছুটে গেলো। আলভী অলির সামনে এসে দাড়ালো,
“আমার ঘুম উড়িয়ে দিয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে”
আলভী ঊর্মিলার দিকে তাকিয়ে রাগীস্বরে বলল,
“ও এখানে কেনো?”
ঊর্মিলা এগিয়ে এসে মিনমিনিয়ে বলল,
“ও একা ঘুমাতে পারছিলো না সেই জন্যই আমার রুমে এসেছিলো”
“আসলেই কি ঘুমাতে দিতে হবে নাকি? বেয়াদব কোথাকার। দাড়া তোর ব্যবস্থা করছি আমি”
ঊর্মিলা বেশ অবাক হয়ে গেলো। ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করলো,
“আমি কি বেয়াদবি করেছি হুম? আর তুই আমার কি ব্যবস্থা করবি?”
“ভাবীকে নিজের রুমে ঘুমাতে দেওয়া বেয়াদবি নয়?”
ঊর্মিলা চমকিত নয়তে আলভীর দিকে তাকিয়ে রইলো কিন্তু আলভীর কথা তার মাথার উপর দিয়ে গেছে,
“দাড়া তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি। তারপর দেখবো এই ফাজিল মেয়ে কার সাথে ঘুমাতে যায়”
“তুই কি ড্রিংকস করেছিস ভাইয়া? আবোলতাবোল বকছিস কেনো? ঝেড়ে কাশ”
আলভী রেগেমেগে ঊর্মিলা দিকে এগিয়ে গিয়ে একহাতে ঊর্মিলার চুল টেনে ধরলো,
“আহ ভাইয়া লাগছে ছাড় আমাকে।”
“বড় ভাইয়ার সাথে বেয়াদবি করে আবার তারই মুখে মুখে তর্ক করছিস? আরে তুই ওকে নিজের রুমে জায়গা না দিলে ও কোথায় যেতো বল”
“ছাড় ভাইয়া। আমার চুল ছিড়ে যাবে”
“আগে বল”
“আমি জানিনা মাফ কর ভাইয়া। আমি আর তোর বউকে আমার রুমে জায়গা দেবোনা”
কথাটা শোনামাত্রই আলভী ঊর্মিলার চুল ছেড়ে দিলো। ঊর্মিলা গাল ফুলিয়ে বললো,
“তোর বউকে নিয়ে বের হ আমার রুম থেকে।”
“তুই বেরিয়ে যা”
ঊর্মিলা অবাক হয়ে গেলো,
“ইয়ার্কি করছিস? আমার রুম থেকে আমিই কেনো বেরিয়ে যাবো?”
“যাবি নাকি চুল হারাবি?”
ঊর্মিলা দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,
“দজ্জাল ভাই একটা। তোর একশোটা ছানাপোনা হবে দেখিস। আমি তোকে বদদোয়া দিলাম। সারাজীবন হাগুমুতু পরিষ্কার করতে করতেই তুই টাকলা হয়ে যাবি”
“কি বললি?”
ঊর্মিলাকে আর পায় কে? ঊর্মিলা দৌড়ে অলির রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। আলভীও একটা শ্বাস ফেলে দরজা লক করে দিলো। তারপর অলির সামনে এসে দেখলো অলি নিশ্চিন্তমনে ঘুমিয়ে আছে। অলি বাম কাত হয়ে শুয়ে আছে বেনী করা লম্বা সিল্কি চুলগুলো খাটের সীমানা পেরিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে আছে। অলি গভীর ঘুমে মগ্ন, আরামে ঘুমোচ্ছে সেই জন্যই তাদের ভাইবোনের ঝগড়ার আওয়াজেও তার ঘুম ভাঙ্গেনি। আলভী প্রথমেই এসির টেম্পারেচার কমিয়ে দিলো তারপর অলির গায়ে কম্ফোর্টার জড়িয়ে দিয়ে লাইট নিভিয়ে দিলো। এরপর ধীরে ধীরে পা ফেলে বেডের অন্যপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আলভী ডান দিকে ফিরে শুয়েছে। তার হৃস্পন্দন বেড়ে গেছে। কিছুক্ষণ যেতেই আলভী মনে মনেই বলে ওঠে,
“স্যরি হানিবি। বাট আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ এনিমোর”
বলেই আলভী অলির দিকে ঘুরে কম্ফোর্টারের উপর দিয়েই অলিকে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। অলির ঘাড়ে মুখ গুজে দিয়ে কয়েকটা বড়বড় শ্বাস নিলো,
“আ’ম স্যরি হানিবি। বাট আই লাভ ইউ সো মাচ। তোমার আজকের পরিস্থিতির জন্য আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবোনা। ইউ নো? ইউ আর মাই most precious ট্রিজার। আমি কখনো চাইনি এতো তারাতাড়ি তোমাকে এরকম সিচুয়েশনে ফেলতে।”
আলভী অলির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কথাগুলো বলছিলো। যার জন্য অলি একটু নড়েচড়ে উঠলো। আলভী একটু ঘাবড়ে গেলো। অলি যদি চোখ মেলে তাকে দেখে তাহলে নির্ঘাত চিৎকার দিয়ে উঠবে। আলভী হাতের বাধন আলগা করতেই অলি কম্ফোর্টার মুড়ো দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো। আলভী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পুনরায় আলতো হাতে অলিকে জড়িয়ে ধরলো,
“হানিবি তুমি অনেক বোকা। আমাকে দিয়ে কতোগুলো ফালতু শর্তে সাইন করিয়ে নিয়েছো। তুমি আমাকে শর্ত দিয়েছো যে আমি তোমাকে স্পর্শ করতে পারবোনা। কিন্তু সেই তুমিই কাবিননামায় সাইন করে তোমার অস্তিত্ব আমার নামে লিখে দিয়েছো। তুমি যেই মূহুর্তে কবুল বলেছো সেই মূহুর্তেই তুমি আমার হয়ে গেছো। একই মূহুর্তে তোমার প্রতি আমার অধিকার জন্ম নিয়েছে। সেই অধিকারের কাছে তোমার কাগজ কলমে লেখা ৪ নম্বর শর্তটা যে বড্ড দূর্বল। আমি তোমাকে টাচ করবো হানিবি। একশোবার করবো, আমার সময় হলেই আমি নিজের অধিকার বুঝে নেবো”
মনে মনে কথাগুলো আওড়াতে আওড়াতেই আলভী ঘুমিয়ে গেলো। মাঝরাতে কারো নাক ডাকার শব্দে অলির ঘুম হাল্কা হয়ে এলো। সে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অলি মাথা উঁচু করে এদিকে সেদিক তাকালো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলোনা। অলি হাত দিয়ে পরখ করে দেখলো তার ডানপাশে কেউ শুয়ে আছে। মূলত সেই নাক ডাকছে। অলির সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। সেইরাতে আলভীর নাক ডাকার শব্দেই অলি সেন্স ফিরে পেয়েছিলো, সেই সাথে পাশে শুয়ে থাকা ব্যক্তির শরীর থেকেও আলভীর ব্যবহার করা পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। এসব ভাবনা মাথায় আসতেই অলি বিছানার অন্য প্রান্তে গিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। ঘুমের ঘোরেই বললো,
“ঊর্মিলা আপু তুমিও দেখি তোমার ভাইয়ের মতো নাক ডাকো। আর তুমি আর তোমার ভাই কি একই ব্রান্ডের পারফিউম ইউজ করো নাকি?”
অলি বিরবির করে কথাগুলো বললো, তারপর আবারও ঘুমিয়ে গেলো। আলভী গভীর ঘুমে থাকায় সেও অলির কথা শুনতে পেলোনা।
সকাল ৭টার দিকে আলভীর ফোন বেজে ওঠে আলভী ঘুমের ঘোরেই ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো,
“ভাইয়া বের হ আমার রুম থেকে, আমাকে কলেজের জন্য রেডি হতে হবে। আমি তো বুঝতেই পারছিনা নিজেদের রুম রেখে তুই তোর বউকে নিয়ে আমার রুম দখল করেছিস কেনো?”
“রঙ নম্বর”
বলেই আলভী কল কেটে দিয়ে অলির দিকে ফিরতেই অলির বাম হাতটা এসে তার ডান গালের উপরে পড়ে। আলভী ব্যাথা পেয়েছে সেই সাথে তার ঘুমও উবে গেছে। আলভী তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।
“বাহঃ কি সুন্দর একটা সকাল। বউয়ের হাতের চড় খেয়ে ঘুম ভাঙ্গলো।”
আলভী নিজের গালে হাত বুলাতে লাগলো। অলি তো হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। আলভী বেশ কিছুক্ষণ ঘুমন্ত অলির মুখপানে তাকিয়ে রইলো,
“ওহ নো। আমার এক্ষুনি বেরিয়ে যাওয়া উচিৎ।”
আলভী তারাতাড়ি খাট থেকে নেমে ফোনটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আলভীকে রুম থেকে বের হতে দেখে ঊর্মিলা এগিয়ে এসে চোখ ছোট ছোট করে আলভীর দিকে তাকালো। আলভী মাথা চুলকাতে-চুলকাতে বলল,
“সর সামনে থেকে”
“তোর কাহিনি কি ভাইয়া? রুম শেয়ার করতে পারবিনা বলে বউকে অন্য রুমে থাকতে বললি। আবার রাত হতেই এমন ভান করলি যেনো বউ ছাড়া তোর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। তোর ব্যাপার স্যাপার তো ভালো ঠেকছেনা”
“আমাকে নিয়ে এতো গবেষণা না করে, মাথাটা স্টাডিতে খাটা। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে না পারলে কিন্তু সত্যি সত্যিই তোর বিয়ে দিয়ে দেবো”
ঊর্মিলা একটু লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করে বললো,
“বিয়ের টপিকটা খুব একটা খারাপ নয় ভাইয়া, তুই ভেবে দেখতেই পারিস।”
আলভী শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো,
“তাই নাকি? তাহলে বল তোর জন্য রিক্সা ওয়ালা খুজবো নাকি মুচি খুজবো?”
ঊর্মিলা ভীষণ রেগে গেলো,
“ভাইয়া”
“রেগে যাচ্ছিস কেনো? এই দুটো ভালো না লাগলে আমার কাছে আরও একটা অপশন আছে”
“সেটা কি?”
“সেটা হলো নাপিত”
কথাটা শুনে ঊর্মিলা আরও বেশি রেগে গেলো,
“তুই অনেক মুডি ভাইয়া। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিস আর আমার জন্য রিক্সাওয়ালা, মুচি বা নাপিত খুজবি?”
আলভী ঊর্মিলার মাথায় চাপড় মেরে বললো,
“কোনো পেশাকেই ছোটো করতে নেই ঊর্মি”
“তাই বলে আমার মতো একজন এজুকেটেড মেয়েকে তুই রিক্সাওয়ালা, মুচি বা নাপিতের কাছে বিয়ে দিবি?”
“আরে আমি তো তোকে বিয়ে দিতেই চাইছিনা। সেই জন্যই তো স্টাডিতে মাথা খাটাতে বললাম। দেখ ভালো রেজাল্ট করতে না পারলে তো তোকে এই ৩টার মধ্যে থেকেই একটাকে চুজ করতে হবে”
ঊর্মিলা আর কথা না বাড়িয়ে গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে যেতে নিলো। তখনই আলভী বলে ওঠে,
“অলিকে বলিসনা যে আমি রাতে ওর সাথে ছিলাম”
ঊর্মিলা উত্তর না দিয়ে মুখ বাকিয়ে চলে গেলো, সকাল ৮ টার দিকে অলির ঘুম ভাঙ্গলো। অলি উঠে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেলোনা। আজকে নতুন জায়গা হিসেবে তার বেশ ভালোই ঘুম হয়েছে। অলি একহাত পেটের উপর রেখে মুখে হাসি টেনে বললো,
“শুভ সকাল বাবু।”
অলি উঠে দাড়ালো ওড়নাটা মাথায় প্যাচিয়ে ঊর্মিলার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে নিতেই দেখলো রূপসা হাতে করে একটা মগ নিয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে আলভীর রুমের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। অলি রূপসাকে চিনতে পারলোনা। যদিও সে খাবার টেবিলে রূপসাকে একঝলক দেখেছিলো কিন্তু রূপসা ও রুনা খাতুনের সাথে তার পরিচয় হয়নি। অলি হাটার গতি কমিয়ে দিলো। রূপসা আলভীর দরজায় নক করে দাঁড়িয়ে আছে। অলি রূপসার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাল্কা হেসে বললো,
“আপু শুনুন না”
অলির কন্ঠ শুনে রূপসা অলির দিকে তাকালো। অলিকে দেখামাত্রই আপনা-আপনিই তার কপাল কুচকে গেলো। অলি হাসিমুখেই বললো,
“আপনি সম্পর্কে আমার আপুই তো হন তাইনা?”
অলির মুখের হাসি দেখে রূপসার শরীর পুড়ে যাচ্ছে। মেয়েটা যেনো উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। রূপসাকে চুপ করে থাকতে দেখে অলি ভ্রু কুচকে তাকায়। মুখটাকে মলিন করে বলে,
“আপু আপনি কি কথা বলতে পারেন না?”
কথাটা শুনে রূপসা অনেক চটে গেলো। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আলভী দরজা খুলে রূপসার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। রূপসা নিজের রাগ কন্ট্রোলে এনে আলভীর দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“ভাইয়া তোমার কফি”
আলভী একবার রূপসার দিকে তাকিয়ে তারপর অলির দিকে তাকালো। একহাতে কফির মগটা নিয়ে ছোট্ট করে বললো,
“থ্যাঙ্কিউ”
আলভী পুনরায় রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলো। অলি অবাক চোখে রূপসার পানে তাকিয়ে আছে। রূপসা চোখ পাকিয়ে একবার অলির দিকে তাকিয়ে দ্রুতপায়ে স্থান ত্যাগ করলো।
চলবে,,,
#১৫_বছর_বয়সী_মা (১৭)
#সোফিয়া_সাফা
অলি একটা শ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো৷ তারপর ফ্রেশ হয়ে খাটের উপরে বসলো।
“অলি ব্রেকফাস্টে কি খাবে?”
আচমকা আলভীর কন্ঠ শুনে অলি দরজার দিকে তাকালো। আলভী একদম স্যুট পড়ে রেডি হয়ে দরজায় একহাত ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অলি উঠে এসে আলভীর সামনে দাড়ালো ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কোথাও যাচ্ছেন?”
“তোমার কি আমাকে বেকার বলে মনে হয়?”
“আপনি বলেছিলেন প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করতে নেই”
আলভীর ঠোঁটের কোনে সুক্ষ্ম হাসি ফুটে উঠলো যা দেখে অলি থমকে গেলো,
“হাসছেন কেনো?”
আলভী মুখটাকে পুনরায় অনূভুতিশূন্য করে অলির দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি প্রশ্ন করিনি উত্তরই দিয়েছি। আমার কথার মাঝেই তোমার উত্তর লুকিয়ে আছে”
অলির মাথা ঘুরতে লাগলো। অলি কিছুমূহুর্ত চুপ থেকে বলে ওঠে,
“এতো ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে না বলে সোজাসাপ্টা ভাবে বলে দিলেই পারতেন যে আপনি রোগী দেখতে যাচ্ছেন”
“আমি রোগী দেখতে যাচ্ছিনা। ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং এটেন্ড করতে যাচ্ছি”
“কিসের ক্লায়েন্ট?”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে অলির দিকে তাকায়,
“অফিসে যাচ্ছি। নতুন প্রজেক্ট লঞ্চ করা হবে। সেটা নিয়েই কয়েকজন ফরেইন ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং আছে”
অলি বুঝতে পারলোনা,
“অফিসে যাচ্ছেন মানে, আপনি না ডাক্তার?”
“ইয়েস তবে আমাদের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এর কোম্পানি আছে এর কয়েকটা শাখা বাইরের কান্ট্রিতেও আছে। আর আমাদের কাজ হলো নতুন নতুন এপ্লিকেশন লঞ্চ করা এবং সেগুলোর ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করা। এছাড়া আরও অনেক কাজ আছে। তুমি চাইলে আমি তোমাকে ডিটেইলসে বলতে পারি”
অলি হা করে তাকিয়ে আছে। আলভী বার দুয়েক পলক ফেলে জিজ্ঞাস করলো,
“হা করে আছো কেনো? তোমার কি ক্ষুধা লেগেছে?”
অলি তড়াক করে মুখ বন্ধ করে ফেলে। কথা ঘোরানোর জন্য বলে,
“আমি ওসব জেনে কি করবো? আপনি বরং নিজের কাজে যান”
“কি করবে মানে? তোমার অবশ্যই জানার দরকার আছে”
অলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আলভী স্বাভাবিক স্বরেই বলে ওঠে,
“আমি ম’রে ট’রে গেলে তুমিই তো এসবের মালিক হবে। তখন তো তোমাকেই কোম্পানির কাজগুলো দেখাশোনা করতে হবে তাইনা?”
আলভীর কথাগুলো শুনে অলি হতাবাক হয়ে গেলো। লোকটা যে বারবার তাকে শর্তগুলোর জন্য খোচা মা’রছে সেটা সে বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে।
“চুপ করুন এসব শুনতে ভালো লাগছেনা। আপনার কোম্পানির মালিক হওয়ার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই”
আলভী অলির দিকে ২পা এগিয়ে আসলো। ফলস্বরূপ অলিও ২পা পিছিয়ে গেলো,
“আপনি কথায় কথায় এগিয়ে আসেন কেনো?”
“তুমি পিছিয়ে যাও কেনো?”
“আবারও প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করছেন?”
“প্রশ্নের মাঝেই উত্তর আছে”
অলি নিজের পরনের ওড়না মাথা সহ পুরো শরীরের উপরিভাগে প্যাচিয়ে নিলো। আলভী ঠাট্টার স্বরেই বললো,
“তোমার মালিক হওয়ার ইচ্ছা না থাকলে ওরকম শর্ত দিয়েছিলে কেনো?”
অলি চুপ করে রইলো,
“কি হলো বলো? দেখো অলি ভালো সাজতে হবেনা তুমি যেমন তেমনই বিহেভ করো”
আলভীর কথা শুনে অলির ভীষণ খারাপ লাগলো।
“এখন তোমার সাথে কথা বলার টাইম নেই। একজন সার্ভেন্টকে পাঠিয়ে দেবো যা খেতে পারবে তাকে বলে দিও।”
আলভী ঘুরে চলে আসতে নিলে অলি বলে ওঠে,
“আপনার এতো সমস্যা হলে আমি আমার শেষ শর্তটা উঠিয়ে নেবো”
আলভী অলির দিকে তাকিয়ে বললো,
“আই হ্যাভ নো প্রবলেম। আমি ম’রে যাওয়ার পর সম্পত্তি কে পাবে সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আর থাকার কথাও নয় তাইনা? শুধু আমার মা বাবা আর বোনকে দেখে রেখো”
কথাটা শুনে অজান্তেই অলির বুকটা ধক করে উঠলো। আলভী চলে আসতে নিলে অলি দ্রুতগতিতে আলভীর সামনে এসে দাড়ালে আলভী অবাক চোখে অলির দিকে তাকায়,
“আপনি এভাবে কেনো বলছেন?”
আলভী গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো,
“কিভাবে বললাম?”
অলি কিছু বলতে নিলে তার গলা আটকিয়ে আসে। অলির অবস্থা দেখে আলভী চিন্তিত হয়ে পড়ে। অলির দিকে এগিয়ে যেতে নিলে অলি পিছিয়ে যায়,
“আপনি অনেক খারাপ”
আলভী অলিকে ধরতে গেলে অলি তার হাত সরিয়ে দেয়। আলভী অসহায় কন্ঠে বলে ওঠে,
“আরে কি করেছি আমি বলবে তো?”
অলি একনাগাড়ে বলতে লাগলো,
“আপনি কোথাও যাওয়ার আগে এভাবে বলে যাচ্ছেন কেনো? আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি কিছুক্ষণ পরেই ম’রে যাবেন”
কথাটা শুনে আলভী নিশ্চুপ হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ড পর বলে ওঠে,
“আমি যদি ম’রেও যাই তাতে তোমার কি? আমি খারাপ লোক সেই সাথে একজন রে/পিস্ট সেই হিসেবে তো আমার ম’রে যাওয়াই উচিৎ তাইনা? তুমিই তো বলেছিলে”
অলি থমকে গেলো। হ্যাঁ আলভী ঠিকই বলেছে। কিন্তু তার কষ্ট লাগলো কেনো?
“কি হলো? বলো, আমার তো ম’রে যাওয়াই উচিৎ তাইনা?”
অলি নিজেকে সামলে বলে ওঠে,
“আপনি ম’রে গেলে আমার বাবু অনাথ হয়ে যাবে। তাই আপনার বেচে থাকা উচিৎ”
অলির উত্তরটা আলভীর পছন্দ হলোনা। তবে সে যা শুনতে চেয়েছে সেটা বর্তমানে অলির মুখ থেকে শুনতে চাওয়াটাও হয়তো ভুল।
“হোয়াট এভার! সামনে থেকে সরো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে”
অলি চুপচাপ সরে দাড়ালো, আলভী পা ফেলে চলে গেলো।
,
রূপসা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো। তার মন ভালো নেই, আলভী এরকম কিছু করবে সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। সেই ছোটোবেলা থেকে আলভীকে সে ভালোবাসতো।
“এভি তুমি কখনোই আমার ভালোবাসাটা দেখলে না। কেনো দেখলেনা বলো? আমার মাঝে কিসের কমতি ছিলো? আমার যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে”
রূপসার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সে কিছুতেই অলিকে মেনে নিতে পারছেনা,
“রূপ তুই রেডি হোসনি এখনো?”
আচমকা পেছন থেকে আসা কারো আওয়াজে রূপসা তড়িৎ গতিতে নিজের চোখজোড়া মুছে নিলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো ইয়াদ দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াদ রূপসার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“কিরে দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। তুই তো জানিস আজকে আমাদের বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট আছে। তারপর ভাইয়া অফিসে গেছে কলেজ শেষে আমাকে সেখানেও যেতে হবে। তারাতাড়ি চল নয়তো তোকে রেখেই চলে যাবো”
রূপসা একটা শ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
“তোমার যদি বেশিই তাড়া থাকে তাহলে অপেক্ষা করছো কেনো? চলে যাও, এমনিতেও আমাকে নিয়ে কেউ ভাবেনা”
ইয়াদ সবসময়ের মতোই হাসি দিয়ে বললো,
“তুই কি ভাইয়ার কথা বলছিস?”
রূপসা স্বভাবসুলভ মাথা নিচু করে রাখলো। তার ভালো লাগছেনা সবকিছুই বিস্বাদ লাগছে। আলভীকে সে ভালোবাসতো এখনো ভালোবাসে। ইয়াদ এবার মুখটাকে সিরিয়াস করে বললো,
“একটা সত্যি কথা বলি শোন। ভাইয়া তার বউকে অনেক বেশিই ভালোবাসে। তাই তার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল”
রূপসা অগ্নিচোখে ইয়াদের দিকে তাকায়। তারপর শক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
“এভি একবারও বলেনি যে ও ওই মেয়েটাকে ভালোবাসে। আমার বিশ্বাস যে ওই মেয়েটাই এভিকে ফাদে ফেলেছে”
ইয়াদ হেসে উঠলো,
“ট্র্যাপে ফেলেছে তাও আবার ভাইয়াকে? আনবেলিভেবল, দেখ তোর ভালোর জন্যই বলছি ভাইয়া আর তার বউয়ের মাঝে কাবাবে হাড্ডি হতে যাসনা।”
রূপসা ভ্রু কুচকে তাকালো। সন্দিহান কন্ঠে বললো,
“বাহঃ মেয়েটা আসতে না আসতেই দেখছি সবার মন জয় করে নিয়েছে। ইয়াদ তুমি ওর কথা ভাবলে কিন্তু নিজের বোনের কথা ভাবলেনা? তুমি আমাকে বলতে পারলে যে আমি ওদের মাঝে কাবাবে হাড্ডি হতে যাবো? তুমি বুঝতে পারছোনা ইয়াদ যে মেয়েটা আমার কতোবড় ক্ষতি করেছে।”
ইয়াদ একটা শ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। তারপর কয়েক সেকেন্ড পর চোখ মেলে বললো,
“আমি চাইনা যে তুই আরও বেশি কষ্ট পাস।”
রূপসা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়,
“আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি যে ভাইয়া তার বউকে অনেক বেশিই ভালোবাসে। আর তুইও ভালো করেই জানিস যে ভাইয়া কম্প্রোমাইজ করার মতো লোক নয়। এতোদিনে যখন তার মনে নিজের জন্য জায়গা করে নিতে পারিসনি তখন আর চেষ্টা না করাটাই ভালো।”
রূপসা একহাতে চোখ মুছে নিলো। তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“মামনি বলেছে হাল না ছাড়তে। সে ওই মেয়েটাকে মেনে নেবেনা। ওই মেয়েটাকে যে করেই হোক সে এভির জীবন থেকে সরাবেই তারপর এভির কাছে আমাকে চুজ করা ছাড়া আর কোনো রাস্তাই থাকবেনা।”
রূপসার কথা শুনে ইয়াদ ভীষণ রেগে গেলো। সে কিছু বলতেই যাবে তার আগেই ঊর্মিলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
“তোমাদের হলো? নাকি আমি একাই চলে যাবো?”
ইয়াদ দ্রুতপায়ে রূপসার রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ঊর্মিলাকে কিছু না বলেই হনহন করে চলে গেলো। ঊর্মিলা ভ্রু কুচকে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো।
“এর আবার কি হলো? মুখটাকে এভি ভাইয়ার মতো করে রেখেছে কেনো?”
ঊর্মিলা রূপসার দিকে তাকাতেই রূপসা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসে।
“চলো”
তারা হলরুম পেরিয়ে ড্রইংরুমে আসার জন্য সিড়িতে পা রাখতেই অলি বলে ওঠে,
“আপু তোমরা কোথাও যাচ্ছো?”
ঊর্মিলা অলির কন্ঠ অনুসরণ করে অলির দিকে তাকায়। মেয়েটাকে দেখলেই তার ভালো লাগে। এরকম কিউট পিচ্চি একটা মেয়ে তার গুরুগম্ভীর, মুডি ভাইয়ের বউ হবে সেটা কি সে কখনো ভাবতে পেরেছে? অলি একহাতে মাথার ওড়নাটা টেনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঊর্মিলা হাল্কা হেসে বলে ওঠে,
“আমরা ভার্সিটিতে যাচ্ছি অলি”
ঊর্মিলার কথা শুনে অলির মনটা খারাপ হয়ে যায়।
“কখন আসবে আপু? আমার তো একা একা ভালো লাগবেনা”
“ভালো না লাগলে নিজেদের বাড়িতে চলে যাওনা। থাকতে কে বলেছে?”
রূপসার কথা শুনে অলি আর ঊর্মিলা দুজনেই অবাক চোখে তাকালো।
“রূপাপু তুমি ওকে এভাবে কেনো বললে? ও ভাইয়ার বউ, সেই হিসেবে এটা ওরও বাড়ি। ও নিজের বাড়িতেই তো আছে”
অলি মুখে হাসি টেনে বললো,
“আপনাকে আমি ঠিক চিনতে পারছিনা। যদি একটু পরিচয় টা দিতেন। তাহলে বেশ উপকার হতো। আমি আবার আমার শত্রু আর বন্ধুর তালিকা করছি তো এই আরকি”
শেষের কথাটুকু অলি নিম্নস্বরেই বললো।
“ওহ তোমাদের তো পরিচয় করানোই হয়নি৷ অলি ও হচ্ছে রূপসা আপু, আমাদের একমাত্র ফুপাতো বোন।”
ঊর্মিলার কথা শেষ হতেই অলি কিঞ্চিৎ হেসে বলে ওঠে,
“ওহ এখন বুঝতে পারলাম আসলে রূপসা আপু হয়তো নিজের বাড়িকে অনেক বেশিই মিস করছে সেই জন্যই আমাকে নিজের বাড়িতে যেতে বলেছে। আমি ঠিক বললাম তো রূপসা আপু?”
অলির কথা শুনে রূপসা চোখ কটমট করে অলির দিকে তাকালো। রূপসা বুঝে গেছে যে এই মেয়েটা ইঁচড়েপাকা। নইলে এতটুকু মেয়ে তাকে এভাবে ঠেস লাগিয়ে বলতে পারতোনা। অবশ্য তার জানামতে মিডেল ক্লাসের মেয়েরা অকালপক্বই হয়, ঊর্মিলা অবশ্য কথাটা পজেটিভ ভাবেই নিয়েছে।
“তুমি কি সত্যিই তোমার বাড়িকে মিস করছো রূপাপু?”
ঊর্মিলার কথাশুনে রূপসার রাগ আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো,
“ঊর্মি তুমি কি ইনডিরেক্টলি আমাকে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলছো?”
ঊর্মিলা হতভম্ব হয়ে গেলো। সে কখন চলে যেতে বললো? নিজের বাড়িকে মিস করা কি অনুচিত কিছু?
“না রূপাপু এসব তুমি কি বলছো? আমি তোমাকে চলে যেতে বলবো কেনো?”
“তোরা ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস? কয়টা বাজে খেয়াল আছে?”
নূরনাহারের কথায় তারা ড্রইংরুমের দিকে তাকালো, রূপসা ঊর্মিলাকে পাশ কাটিয়ে নিচে নেমে গেলো। ঊর্মিলাও তার পিছু পিছু চলে গেলো। অলি বেচারি একা একা কি করবে বুঝতে না পেরে নিজের রুমের দিকেই যেতে নিচ্ছিলো তখনই নূরনাহার তাকে ডাক দেয়,
“বউমা তোমার কাজ না থাকলে এসো আমার কাছে”
নূরনাহারের মুখে বউমা ডাকটা শুনে অলি বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। তবে তাকে তো আর গিয়ে বলতে পারবেনা যে আপনি আমাকে অলি বলেই ডাকবেন। এসব ডাকনাম আমি নিতে পারছিনা। অলি মনে মনে কথাগুলো ভেবে নিচে নেমে আসলো।
“শোনো বউমা। একটু সাবধানে হাটাচলা করবে। এই সময় কিন্তু একদমই বেখেয়ালি হয়ে হাটা যাবেনা”
অলি উপর নিচ মাথা নাড়ালো। নূরনাহার অলির মাথায় হাত রেখে বললো,
“চলো মায়ের রুমে গিয়ে গল্প করি”
অলি চুপচাপ কাকি শাশুড়ীর সাথে দাদুমনির রুমের দিকে চলে গেলো।
,
বিকেল বেলা।
অলি নূরনাহারের সাথে বসে গল্প করছিলো।
“তুমি তো কিছুই খেতে পারছোনা বউমা। এরকম হলে কি চলবে?”
অলি হাতে থাকা কাস্টার্ডের বাটিটা টেবিলের উপর রেখে বললো,
“আসলে কাকীমা আমি খাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু খেতে পারিনা।”
“এরকম হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। একবারে খেতে না পারলে কিছুক্ষণ পরপর খাবে কেমন?”
অলি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। তখনই ঊর্মিলা আর রূপসা বাড়িতে ফিরে আসে।
“ওয়াও কাস্টার্ড? আমার টা কোথায় কাকীমা?”
ঊর্মিলার কথা শুনে নূরনাহার বলে,
“ফ্রেশ হয়ে আয়। তোর টা ফ্রিজে রাখা আছে”
ঊর্মিলা মাথা নেড়ে চলে গেলো। নূরনাহার রূপসার উদ্দেশ্যে বললো,
“ইয়াদ কোথায় নিশ্চয়ই খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত তাইনা?”
“না মামী ও তো ২টো ক্লাস করেই অফিসে চলে গেছে”
“যাক ছেলেটা একটু কাজে মনোযোগী হচ্ছে তাহলে”
রূপসা মুখে কিছুই বললোনা তবে সে অলির দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা বয়সে তার থেকে অনেক ছোটো কিন্তু ভাগ্যটা তার থেকে অনেক বড়।
“এই জন্যই হয়তো বলে ভাগ্যবতী হওয়া বেশি জরুরী”
রূপসা মনেমনে কথাগুলো বললো। এদিকে রূপসাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অলি একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। প্রত্যুত্তরে রূপসা মুখ বাকিয়ে উপরে চলে গেলো। অলির হাসি থেমে গেলো রূপসার মুখ বাকানোটা তার কাছে ভালো লাগেনি।
“আমি তার কি ক্ষতি করেছি? কেনো আমাকে দেখলেই এরকম করে? শুধুই কি আমি মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে বলে? নাকি অন্য কোনো ব্যাপার আছে?”
অলির ভাবনার মাঝেই শাহানাজ বেগম আর রুনা খাতুন ড্রইংরুমে আসে।
“নূরনাহার রাতের খাবারের মেন্যু গুলো সব বুঝিয়ে দিতে আমাকে হেল্প করো”
শাহানাজ বেগমের কথা শুনে নূরনাহার উঠে দাড়ালো তারপর তাদের সাথে কিচেনে চলে গেলো। অলি চুপচাপ বসে আছে তখনই আবারও কলিংবেল বেজে ওঠে। একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আলভীর খালার আর মামার ফ্যামিলির লোকজন বাড়িতে প্রবেশ করে। এতো মানুষকে একসাথে আসতে দেখে অলি বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ইশা এগিয়ে এসে অলিকে জড়িয়ে ধরে। অলি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষন পর ইশা অলিকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়,
“কেমন আছিস অলি?”
অলি অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
“আমি তো ভালোই আছি কিন্তু তোমরা সবাই হঠাৎ?”
সামিরা হাল্কা হেসে বললো,
“আমরা নিজে থেকে হঠাৎ করে আসিনি অলি। বরং তোমরা হঠাৎ করে আমাদেরকে এনেছো”
অলি একটা ঢোক গিলে গোলগাল চোখে তাকিয়ে আছে। অলির খালা আমেনা খাতুন এগিয়ে এসে অলির মাথায় হাত রেখে বললেন,
“আমরা তো বুঝতেই পারছিনা যে তুই কিভাবে এই বাড়ির বউ হয়ে গেলি। তুই একটু আমাদেরকে বুঝিয়ে বলবি?”
অলি কি বলবে খুজে পেলোনা।
“আসলে খালামনি,,,
“মামী আমি তোমাদেরকে সবকিছু বুঝিয়ে বলছি”
হঠাৎ করে আলভীর কথা শুনে অলি দরজার দিকে তাকালো আলভীর একহাতে ওভারকোট আর অফিস ব্যাগ আরেক হাত পকেটে গোজা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভীষণ ক্লান্ত। অবশ্য ক্লান্ত থাকাটাই স্বাভাবিক সে অফিসের কাজ শেষ করেই তাদেরকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলো। আলভী সোজা ভেতরে এসে অলির পাশে দাঁড়ায় অলির দিকে একনজর তাকিয়ে বলে ওঠে,
“আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ মাস আগে অলির সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। আমার বন্ধু রিফাতের বাড়ি ওদের বাড়ির কাছাকাছি। সেবার একটা দরকারে আমাকে আর দিহানকে রিফাতের বাড়িতে যেতে হয়েছিলো। ঘটনাক্রমে ও স্কুলে যাচ্ছিলো সেই সময়ে আমি ওকে দেখেছিলাম। আর ওকে দেখার পর মনে হয়েছিলো যে ওই আমার জন্য পার্ফেক্ট চয়েজ। ওকে দেখার জন্য আমি বেশকিছু দিন রিফাতের বাড়িতেই ছিলাম। আমি ওর সামনা-সামনি গিয়েও অনেকবার ওকে বোঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও বুঝতেই চাইছিলোনা। একবার তো বলেই ফেললো যে আমাকে ও কখনোই বিয়ে করবেনা। ওর কথা শুনে আমার মধ্যে ভীষণ ভয় লাগা কাজ করেছিলো সেই ভয় থেকেই একপর্যায়ে গিয়ে আমি ওকে জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমি জাস্ট নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিলাম”
আলভীর কথাগুলো কেউ হজম করতে পারলোনা। এটা ঠিক যে আলভী নিজের ফিলিংস গুলোর ব্যাপারে অনেক বেশিই পসেসিভ তাই বলে কাউকে কিছু না জানিয়ে একেবারে বিয়ে করে নেবে? আমেনা খাতুন চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
“এটা কোনো কথা? তাই বলে তুমি ওকে জোর করে বিয়ে করবে?”
“হুম বিকজ আই লাভ হার”
আলভীর কথাশুনে অলি চোখ বড়বড় করে আলভীর দিকে তাকলো। ইশা কথার মাঝে বা হাত ঢুকিয়ে বললো,
“ভাইয়া তুমি তাহলে সেদিন অলিদের বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে কেনো? তোমার কথানুযায়ী তো ওদের বাড়ির এড্রেস তোমার জানা থাকার কথা তাইনা?”
আলভী কিছুক্ষণ ভেবে বলে ওঠে,
“ওদের বাড়ির লোকেশন আমি জানতাম কিন্তু তিশার বিয়ের সময় একটা বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে ঝামেলা হয়েছিলো সেটার পর থেকেই অলির সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওরা বাসা চেঞ্জ করেও তো নিতে পারে সেটা বিবেচনা করেই ওদের লোকেশন জানার জন্য আমি তোর কাছে কল করেছিলাম।”
তিশা জিজ্ঞেস করলো,
“কিন্তু ভাইয়া তুমি ওকে জোর করে বিয়ে না করে আমাদেরকে বলতে পারতে।”
“ওইযে ওর জেদের জন্যই আজকের মতো এরকম একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেদিন ও যদি আমাকে কথা দিতো যে ৩ বছর পর ও আমাকেই বিয়ে করবে তাহলে আমাকে ফোর্সফুলি ওকে বিয়ে করতে হতোনা। যদিও ওকে বিয়ে করার পরেও ৩ বছর পর ওকে এই বাড়িতে আনার প্ল্যান ছিলো”
ইশা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“তাহলে ৩ বছর অপেক্ষা করতেই পারতে ভাইয়া। আফটার অল অলি একটা বাচ্চা মেয়ে।”
আলভী একটু সংকোচবোধ করলো কিন্তু তাকে এসব বলতেই হবে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সে চায়না অলিকে বা বেবিকে নিয়ে কাউকে কিছু বলার স্পেস দিতে,
“চোখের সামনে বউ ঘুরঘুর করলে আউট অফ কন্ট্রোল হওয়া অস্বাভাবিক কিছুই নয়। সেদিন তিশার মেহেন্দির রাতে আমার সাথেও তেমনটাই হয়েছিলো। আর যার ফলস্বরূপ অলি বর্তমানে প্রেগন্যান্ট। এখন আশাকরি এই নিয়ে কারোর মনে আর কোনো প্রশ্ন নেই”
কথাটা বলেই আলভী দ্রুতপায়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। আলভীর কথাটা বোধগম্য হওয়া মাত্রই সবাই একসাথে অলির দিকে তাকালো। আসলে তারা ঠিক অলির চেহারার দিকে নয় বরং অলির পেটের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অলি আলগোছে ওড়না দ্বারা নিজের পেট আবৃত করে নিলো। সবার চাহনি দেখে অলির ভীষণ লজ্জা লাগছে। বজ্জাত লোকটা এভাবে সবকিছু খোলামেলা ভাবে বলে দিয়ে দিব্যি নিজের রুমে চলে গেলো কিন্তু অলির ইচ্ছা করছে এখানেই মাটি খুড়ে তার ভেতর ঢুকে যেতে। লজ্জার ঠেলায় পা দুটোও জমে গেছে।
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২৪৯০+