#১৫_বছর_বয়সী_মা (২৫)
#সোফিয়া_সাফা
কিছুক্ষণ আগে আলভী সত্যিটা যাচাই করার জন্য অলির ফোনে কল দিয়েছিলো কিন্তু অলি তখন নোমানের সাথে কথা বলছিলো। যার জন্য আলভীর ফোন থেকে নেটওয়ার্ক ব্যস্ত দেখায়, ব্যস আলভী সেটা নিয়েই রেগেমেগে ফোনটা আবারও আছাড় মে*রেছে।
“ফোনটা দিয়েছিলাম বাবা মায়ের সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু ও তো তাদের কাছেই আছে—কথা বলেছিলো কার সাথে? হাহ ৯ দিন হয়েছে ওই বাড়িতে গেছে আমাকে ভুল করেও একবার কল দেয়নি। তবে আমাকে কল না দিলেও অন্য কারো সাথে ঠিকই কথা চলে, আর আমি কিনা এখানে ওনার কথা ভেবে ভেবে পা*গল হয়ে যাচ্ছি। এটা সত্যিই যে কেউ কিছু সহজে পেয়ে গেলে সেটার মূল্যায়ন করেনা”
,
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। মায়ের ডাকে অলির ঘুম ভাঙ্গে, ফজরের নামাজ আদায় করে সে বাড়ির পাশে থাকা বাগানে আসে। নিজহাতে এই গোলাপ ফুলের বাগান করেছে সে। প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী পানি দিচ্ছিলো অলি, গোলাপ ফুল তার ভীষণ প্রিয়। ভোরের এই স্নিগ্ধ আবহাওয়া অলির কাছে দারুণ লাগে। অলি সচরাচর ফুল ছেড়ে না, তার মতে—ফুল গাছেই সুন্দর। হাতে নিলে সেটার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তবে ফুলের ঘ্রাণ নিতে সে ভালোবাসে৷ অলি সবগুলো গাছে পানি দিয়ে একটা ফুলের দিকে ঝুকে ঘ্রাণ নিতে যায়। ফুলের পাপড়ি তার নাকে লাগা মাত্রই সে হাচি দিতে লাগলো। হঠাৎ এরকম হওয়াতে অলি কিছুটা দূরে সরে যায়। এর আগে এরকম টা কখনো হয়নি। আচমকা তার হাত পাও চুলকাতে শুরু করেছে,
“আল্লাহ আমার গায়ে কি লাগলো?”
অলি হাত পা চুলকাতে চুলকাতে বাড়ির ভেতরে চলে আসে। আসমা বানু রান্নাঘরে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিলেন,
“মা ও মা, আমার গায়ে কি জানো লেগেছে অনেক চুলকাচ্ছে”
অলির ডাকে আসমা বানু বসার ঘরে আসলেন, এসেই অলির এরকম অবস্থা দেখে সে অনেক ঘাবড়ে যায়। অলির হাত পা কিছু কিছু অংশ লাল হয়ে গেছে,
“একি! কি লেগেছে?”
অলি সোফায় বসে পা চুলকাতে লাগলো,
“জানিনা মা হয়তো বিছুটি পাতা লেগেছে। অনেক চুলকাচ্ছে”
আসমা বানু অলির দিকে এগিয়ে গেলেন,
“বাগানে কতোকিছু থাকতে পারে। সেই জন্যই বলেছি এই অবস্থায় বাগানে যেতে হবেনা। কিন্তু তুই তো আমার কথা শুনলিই না। তোর তো আজকে পরিক্ষা ও আছে। একটা কাজ কর একেবারে গোসল করে আয়”
অলি মাথা নাড়িয়ে গোসল করতে চলে গেলো।
সকাল ১০ টা। আলভী নিজের রুমেই বসে আছে। আজকে সে নাতো অফিসে গেছে আর নাতো হসপিটালে গেছে। সকাল থেকে রুমের দরজাও খোলেনি। তার ভালো লাগছেনা কিছুই। আলভী ল্যাপটপের মাধ্যমে সোহেলকে মেইল পাঠালো,
—ছবিগুলো চেক করার পর ফটোগ্রাফার কি বলেছে?
কয়েক মিনিট যেতেই অপরপাশ থেকে রিপ্লাই আসে,
—স্যার সে বলেছে ছবিগুলো ৯৫% অরিজিনাল বাকিটা এডিট করা।
আলভী আর কোনো রিপ্লাই দিলোনা। কিছুক্ষণ যেতেই সোহেল আবারও মেইল পাঠায়,
—স্যার আজকে কি আপনি আসবেন না?
আলভী রিপ্লাই দিলো,
—না আমি ব্যস্ত আছি।
কিছুক্ষণ যেতেই সোহেল আবারও মেইল পাঠালো,
—স্যার, আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আমাদের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টের ডেডলাইন আজ। টিমের রিভিউ মিটিং আজ দুপুরে। সিইও হিসেবে আপনার নির্দেশনা দরকার। নাহলে ঠিক সময়ে কাজ শেষ হবেনা।
মেইল টার দিকে আলভী অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো। সে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে ভুলে গেছে ভাবতেই তার ভীষণ রাগ উঠছে। আজকে প্রজেক্টটা লঞ্চ করতে না পারলে বিশাল বড় একটা লস ফেস করতে হবে।
সে এই বিষয় টা ভুলে গিয়ে সারাটা রাত শুধু অলির কথাই ভেবে গেছে। আলভী সমস্ত ভাবনা সাইডে রেখে উঠে দাড়ালো, তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
,
সময়ের পাতা থেকে ঝরে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। অলির লাস্ট ২টো পরিক্ষাই বাকি আছে। আজ একটা আর ২দিন পর একটা। অলি এই কয়েকদিনে আলভীকে প্রতিদিন কল দিয়েছে কিন্তু আলভীর ফোন বন্ধ বলেছে।
অন্যদিকে আলভী নিজের কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। হসপিটাল আর অফিস সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। অলির উপর অভিমান জমেছে—যদিও সে জানে তার অভিমানের কোনো মূল্যই নেই অলির কাছে। আলভীর রাগ হলে সেটা সে প্রকাশ করে কিন্তু অভিমান হলে সে প্রকাশ করেনা। চুপচাপ থাকে কারো প্রতি তার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। অলি তাকে ভুল বুঝলে বুঝুক—সে আর ভাঙ্গাতেও চায়না। সে জানে অলি তার অভিমান কোনোদিনও বুঝবে না। আর আলভীও তাকে বোঝাতে চায়না। ফোন হাতে থাকলে আনমনে হলেও সে অলিকে কল দিয়ে ফেলতে পারে। কৈফিয়ত চাইতে পারে—ছেলেটা কে ছিলো? কেনো অলিকে স্পর্শ করেছে। তাতে কি হবে? আলভীর বুকের মাঝের এই অসহ্য যন্ত্রণা টা কি কমে যাবে? যাবেনা, আলভী সেই জন্য আর ফোন কেনেনি। আর কিনলেও বা কি? সে এই রকমের পরিস্থিতিতে আছে যে ফোন কিনলে একদিনের বেশি ফোনটা অক্ষত থাকবেনা।
অলি পরিক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো তখনই তার ফোনটা বেজে ওঠে। অলি ফোনটা হাতে নিয়ে নম্বরটা দেখে একটা শ্বাস ফেললো। প্রত্যেকবার নোমান নামের ছেলেটা কল দিলে সে ভাবে আলভী কল দিয়েছে। সে ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটা ভাবে তেমনটা নয়। তার মন নিজে থেকেই ভেবে নেয়। অলি কলটা রিসিভ করে কানের কাছে নিলো,
“হ্যালো”
নোমান হাসিমাখা কন্ঠে বললো,
“কি হয়েছে মিস? আজকে কন্ঠটা এরকম শোনাচ্ছে কেনো? বেশিই বিরক্ত করছি নাকি?”
অলি একটা শ্বাস ফেললো। লোকটা প্রতিদিন নিয়ম করে অলিকে কল দেয়। অবশ্য আজেবাজে কিছু বলে না তবে অলির ভালো লাগেনা কথা বলতে। যখন বাড়িতে একা থাকে তখন তার দম বন্ধ হয়ে আসে। একাকিত্ব কাটানোর জন্য সে কথা বলে নোমানের সাথে। নোমান স্বাভাবিক স্বরেই বললো,
“আপনার জন্য একটা সুখবর আছে”
“সেটা কি?”
“আমি ফিরে এসেছি আজকে দেখা হচ্ছে”
কথাটা শুনে অলি খুশি হলো এতোদিন কার্ডটার জন্য ছেলেটার সাথে যোগাযোগ রেখেছে। কার্ডটা দিয়ে দিতে পারলেই সে দায়ভার মুক্ত। আর কল রিসিভ করবেনা,
“আচ্ছা আমি তাহলে দুপুরের টাইমে সেখানেই অপেক্ষা করবো আপনি কার্ডটা নিয়ে যাইয়েন”
নোমান সেই ব্যাপারে কিছু না বলে অন্য কথা বললো,
“আজকে তো তোমার অর্থনীতি পরীক্ষা তাইনা?”
“হ্যাঁ। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এখন রাখছি”
নোমান একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“আচ্ছা বেস্ট অফ লাক”
—
MIRZA-TECH Software Headquarters
উঁচু সিলিং, চারপাশ কাচ দিয়ে ঘেরা। সকালের কড়া আলোয় কাচের গ্লাসগুলো উত্তপ্ত, তবে ভিতরে এয়ার কন্ডিশনের ঠান্ডা বাতাসে একধরনের ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। একপাশে মেটালিক ধাঁচের খোলা ওয়ার্কস্টেশন, সাদা ও ধূসর রঙের আধুনিক চেয়ার-ডেস্ক, মাথা নিচু করে বসে আছে একেকজন ডেভেলপার—কেউ কোড করছে, কেউবা হেডফোনে কল নিয়ে কথা বলছে। কিবোর্ডের ক্লিক ক্লিক, মাউসের স্ক্রল, মাঝে মাঝে প্রিন্টারের গুনগুন।
আলভীর কেবিন আলাদা, কাচ দিয়ে ঘেরা হলেও আধা খোলা। আলভী নিজের ডেস্কে বসে আছে—মিনিমাল ডিজাইনের কাঠের ডেস্ক, এক পাশে রাখা সিলভার ম্যাকবুক, অন্য পাশে এক গ্লাস হালকা লেমন ইনফিউজড পানি। ডেস্কের উপরে রাখা ডিজিটাল ক্লকে সময় ধীরে ধীরে এগোচ্ছে, ১০টা ৪৩। দেয়ালে ঝুলে থাকা একখানা বিমূর্ত চিত্রকর্ম ঘরের পরিবেশে একধরনের নীরব ভারিক্কি যোগ করেছে।
আলভী চুপচাপ ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। স্ক্রিনে এক্সেল শিটের লম্বা সারি, রিপোর্ট, প্রজেক্ট টাইমলাইন, মেইল ক্লায়েন্ট—সব মিলিয়ে একজোড়া ক্লান্ত চোখ ধৈর্য ধরে বিশ্লেষণ করছে প্রতিটি ডিটেইলস। মাঝে মাঝে সে আঙুল দিয়ে কপালের মাঝখানটা চেপে ধরছে। ঠিক তখনই তার কেবিনের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। সোহেল, তার ব্যক্তিগত অ্যাসিস্ট্যান্ট, ধীরে ধীরে মাথা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে—
“Sir, may I come in?”
আলভী কেবল মাথা নাড়ে। সোহেল ভেতরে এসে দাঁড়ায়, ফাইল হাতে, চোখে গম্ভীরতা।
“স্যার, জার্মানির ‘MediTech Corp’ থেকে চুক্তি এসেছে। ওরা একটা হাই-এন্ড হসপিটাল সফটওয়্যার তৈরি করতে চায়—AI ডায়াগনস্টিক, পেশেন্ট ট্র্যাকিং, রিমোট মনিটরিং সব থাকবে। চুক্তির প্রাথমিক মূল্য ২.৮ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু তারা বলেছে, সিইও স্বাক্ষর ছাড়া প্রজেক্ট চালু হবে না।”
আলভী গম্ভীর স্বরে বললো,
“তুমি ফাইলগুলো রেখে যাও আমি চেক করে সাইন করে দেবো”
সোহেল চলে যেতেই আলভী চুপচাপ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ডেস্কে রাখা ফাইলের দিকে। বাইরের দিকে তাকালে দূরে ঢাকা শহরটাকে যেন একটা বিরাট সিস্টেমের মতো মনে হয়, প্রতিটা মানুষ যেন একটা করে প্রসেসর—চলছেই।
অফিসের চারপাশে তখনো একই ছন্দে কাজ চলছে। করিডোরে এক টিম লিড হেঁটে যাচ্ছে কনফারেন্স রুমের দিকে,
এ এক অন্যরকম পৃথিবী—যেখানে সময় চলে শৃঙ্খলার ঘড়িতে, আর আলভী, সেই পৃথিবীর মূলচক্রের একজন, তার সিদ্ধান্তেই নির্ভর করে কয়েকশো কর্মীর পরবর্তী দিকনির্দেশনা।
আলভী পুনরায় ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে ফোকাস করলো ঠিক তখনই তার স্ক্রিনে একটা মেইল আসে। আলভী মেইল টা ওপেন করতেই একটা লেখা ভেসে উঠলো।
“শুধু অফিসে মনোযোগ দিলেই হবে মিস্টার তাসনীম মির্জা? ওইদিকে তো আপনার ওয়াইফ নতুন প্রেমিককে নিয়ে কফি খেতে যাচ্ছে। আপনার উপর আমার করুণা হচ্ছে জানেন তো। বেশ খুজে খুজে একটা পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। ভেবেছিলেন পিচ্চি বলে আপনি খুব সহজেই তার জীবনের প্রথম আর শেষ পুরুষ হবেন? কিন্তু আফসোস সেটা আর হলোনা। আপনার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আপনাকে বাকিটা জীবন অফিস আর হসপিটালের সাথেই সংসার করতে হবে”
মেইলটার নিচে একটা এড্রেস দেওয়া আছে। আলভী বেশ কিছুক্ষণ মেইলটার দিকে তাকিয়ে রইলো,
বিকাল ৩টা,
পরিক্ষার শেষে অলি আর শায়লা কমন রুমে বসে আছে। এই কয়েকদিনের মধ্যে অলি জেনে গিয়েছে যে শায়লার ভাই রিফাতই হচ্ছে আলভীর সেই বন্ধু রিফাত। তবে এই বিষয়ে অলি শায়লাকে কিছুই বলেনি। অলি পানি খেয়ে গ্লাসটা রেখে দিলো। বেশ তেষ্টা পেয়েছিলো। অলি একহাতে মুখ মুছে শায়লার উদ্দেশ্যে বললো,
“তুই একটু যাবি আমার সাথে?”
“কোথায় যাবো?”
“ওই যে নোমান লোকটার বিষয়ে বলেছিলাম না। সে আজকে এসেছে। কার্ডটা ফিরিয়ে দিতে যাবো”
শায়লা একমূহুর্ত ভেবে নিজের পেটে হাত রেখে বললো,
“আমার পি*রিয়ড হয়েছে রে বাড়তি প্যাড আনিনি বাড়িতে যেতেই হবে। তাছাড়া আমার বাড়ি তো অনেক দূরে।”
অলি বুঝতে পারলো যে শায়লা উল্টো রাস্তায় তার বাড়ির দিকে গেলে শায়লার বাড়ি পৌছাতে দেরি হয়ে যাবো,
“তুই মন খারাপ করলি নাকি? মন খারাপ করিসনা দোস্ত। আমার পেট ব্যাথা করছে খুব। নইলে যেতাম তোর সাথে।”
“আরে না না মন খারাপ করিনি। তুই বাড়িতে চলে যা। দুদিন পর দেখা হবে।”
অলি স্কুল থেকে বেরিয়ে সেই রাস্তার মোড়ে এসে দাড়ালো। অলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু দুটো লোক পাশে থাকা চায়ের দোকানে বসে তার উপরেই নজর রাখছিলো। কয়েক মিনিট যেতেই নোমান এসে অলির সামনে দাঁড়ায়। তার হাতে একটা গোলাপ ফুলের তোরা। মুখে হাসি, নোমান ফুলটা এগিয়ে দিলো অলির দিকে। অলি অপ্রস্তুত হয়ে পরলো,
“এসব কি?”
“ফুলের তোরা মিস। আপনি বলেছিলেন যে আপনি গোলাপ ফুল লাইক করেন। ভুলে গেলেন?”
“কিন্তু এসব আমাকে দিচ্ছেন কেনো?”
নোমান কিছুটা বিরক্ত হলো। মেয়েটা বেশিই প্রশ্ন করে।
“মিস এখানে অনেক রোদ। পাশে একটা ক্যাফে আছে চলুন আমরা সেখানে গিয়ে কথা বলি?”
অলির কপাল কুচকে এলো, ভদ্রভাবে বলল,
“আসলে আমাকে বাড়িতে যেতে হবে। শরীর টাও ভালো লাগছেনা। আপনি আপনার কার্ডটা রাখুন দয়া করে”
নোমান সরু চোখে অলির দিকে তাকায়,
“আপনার শরীর কি বেশিই খারাপ লাগছে?”
অলি উপরনিচ মাথা নাড়ালো,
“তাহলে আমরা কালকে দেখা করি? আপনি বরং কার্ডটা কালকেই দিয়ে দেবেন”
“কেনো? আপনি এখন নিবেন না?”
নোমান এক গাল হেসে বললো,
“না নেবোনা। আপনি ওই ক্যাফেতে গিয়ে আমার সাথে এক কাপ কফি খাবেন আর এই ফুলগুলো নিবেন তারপরেই আমি কার্ডটা নেবো।”
অলি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো বেশ ভালোই মানুষজন আছে। তার ভয় পাওয়ার কারণ নেই আপাতত,
“আপনার কার্ড আপনার দরকার হলে নিবেন নয়তো নিবেন না। আমি কেনো যাবো আপনার সাথে? আর এই ফুলগুলোই বা কেনো নেবো?”
নোমানের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো,
“আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারলেন মিস অলি? আপনি ভুলে গেলেন আমি সেদিন যদি আপনাকে না বাচাতাম তাহলে আপনি এইমূহুর্তে এই জায়গাতে দাঁড়িয়ে আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারতেন না”
কথাটা শুনে অলি মাথা নিচু করে নিলো। লোকটা সত্যি কথাই বলেছে কিন্তু তার জন্য কি লোকটার সাথে ক্যাফেতে কফি খেতে যেতে হবে?
“আমি সেই জন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ কিন্ত,,,
“যাক বাদ দিন মিস অলি। তবে আমি শুধু আপনার সাথে এককাপ কফি খেতেই চেয়েছিলাম। আপনি যদি খেতে না চান আমার খুব খারাপ লাগবে আর কার্ডটাও আমি নিতে পারবোনা। আপনি যেতে পারেন আর বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত”
নোমান চলে যেতে নিলে অলি একটা শুষ্ক ঢোক গিলে মনে মনে ভাবে,
“সে আমাকে আর বাবুকে বাচিয়েছে। এক কাপ কফি খেলে কিছুই তো হবেনা তাইনা? আর কার্ডটা একবার দিতে পারলেই তো শেষ। আমি আর কক্ষনো এই লোকের কল রিসিভ করবোনা। নইলে তো কল দিয়ে বিরক্ত করবে। আমি তো অকৃতজ্ঞ নই। কার্ডটা না দিতে পারলে নিজেও শান্তি পাবোনা।”
অলি নোমানকে ডাক দিলো,
“আচ্ছা চলুন তবে, আমি যেখানে যেতে চাইবো সেখানেই যেতে হবে”
নোমান খুশি হয়ে ফিরে এলো।
“বলুন কোথায় যাবেন আপনি? আমি সেখানেই যেতে রাজি আছি”
অলি হাটতে লাগলো। তার পিছুপিছু নোমানও আসছে। অলি নোমানকে নিয়ে আসমা বানু যেই পেস্ট্রি শপে কাজ করে সেখানে এলো। অলিকে শপে দেখে আসমা বানু এগিয়ে এলেন। আসমা বানু খুব ভালো পেস্ট্রি আর কেক বানায়। এই শপটা মূলত তার এক বান্ধবী আর সে মিলেই চালায়,
“অলি তুই এসেছিস? ব্যাপার কি? এমনি এমনি তো কক্ষনো আসিস না”
অলি মিষ্টি হেসে নোমানকে দেখিয়ে বললো,
“মা উনিই সেদিন আমাকে বাচিয়েছিলেন। আজকে উনি আমার সাথে এককাপ কফি খেতে চাইলো। আমি ভাবলাম এই সুযোগে ওনার সাথে তোমার পরিচয় টাও করিয়ে দেওয়া যাবে”
আসমা বানু নোমানকে দেখে বেশ খুশি হয়ে গেলেন।
“অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে—আমার মেয়েকে বাচানোর জন্য। অলি তুই ওনাকে নিয়ে ভেতরে গিয়ে বস”
নোমান আসমা বানুকে সালাম দিয়ে ভেতরে এসে বসলো। অলি তার সামনের চেয়ারেই বসেছে,
“বাহঃ আপনি তো অনেক চালাক মিস”
অলি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কেনো এমনটা মনে হলো?”
“এইযে একেবারে মায়ের কাছেই নিয়ে চলে এলেন”
অলি মৃদু হেসে এককাপ কফি নোমানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“মা আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো ধন্যবাদ জানানোর জন্য। সেই জন্যই নিয়ে এসেছি”
নোমান কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
“আচ্ছা আপনার আমাকে কেমন লাগে?”
প্রশ্নটা শুনে অলি থতমত খেয়ে গেলো,
“আপনার প্রশ্নটা আমি বুঝতে পারলাম না”
“আমরা কি বন্ধু হতে পারিনা মিস অলি?”
অলি একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“আপনি বয়সে আমার থেকে অনেক বড়।”
“বড় হলে কি হয়েছে আমার তো আপনাকে পছন্দ হয়েছে মিস অলি। প্লিজ আমার বন্ধু হয়ে যান”
অলি একবার কাউন্টারে বসে থাকা মায়ের দিকে তাকালো। আসমা বানু অন্য কাস্টমারের সাথে কথা বলছে। আর নোমান নিম্নস্বরে কথাগুলো বলেছে যার জন্য অলি ছাড়া আর কেউ তার কথা শুনতে পায়নি,
“কি হলো বলুন না—হবেন আমার বন্ধু?”
অলি কিছু না বলে কার্ডটা নোমানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আপনার কথামতো কফি খাওয়া শেষ এবার আপনি এই কার্ডটা নিয়ে চলে যান প্লিজ।”
নোমান লক্ষ্য করলো অলি যেই হাত দিয়ে কার্ডটা ধরে রেখেছে সেই হাতটা কাপছে। সেই সাথে অলির চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। নোমান একটা শ্বাস ফেলে অলির দিকে ফুলের তোরাটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আগে এটা নিন মিস অলি”
অলি কম্পিত হস্তে নোমানের হাত থেকে ফুলের তোরাটা নিলো। কিন্তু তার পুরো খেয়াল ছিলো নোমানের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে। লোকটা অগ্নিঝরা চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মূলত তার চাহনি দেখেই অলির অন্তরআত্মা পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। অলি ফুলটা অন্য সাইডে রেখে ব্যস্ত হাতে কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আপনি প্লিজ এই কার্ডটা নিয়ে এখান থেকে যতদ্রুত সম্ভব চলে যান।”
নোমান অলির চেহারা দেখে অবাক হলেও অলির হাত থেকে কার্ডটা নিতে যাবে ঠিক সেই সময়েই কেউ একজন হঠাৎ করে এসেই তার শার্টের কলার চেপে ধরে মুখ বরাবর একটা পাঞ্চ বসিয়ে দিলো। লোকটা কিছু না বলেই নোমানকে ইচ্ছামতো মারতে লাগলো। নোমান নিজের আত্মরক্ষার জন্য লোকটাকেও দু চারটা ঘুষি মে*রেছে। আশেপাশের সবাই এগিয়ে এলো তাদের দুজনকে ছাড়াতে, আসমা বানু এগিয়ে এসে অলির সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“জামাই এখানে কি করছে? আর ওই লোকটাকে এভাবে মার*ছেই বা কেনো?”
অলি যেনো নিজের জায়গাতেই জমে গেছে। আলভী চিৎকার করে বলে উঠলো,
“আই উইল কিল ইউ। তোর এতোবড় সাহস আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস।”
অলি এগিয়ে গেলো আলভীর দিকে, নোমানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
“কি করছেন ছাড়ুন ওনাকে প্লিজ। ছাড়ুন ওনাকে,”
অলিকে দেখে আলভী আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলোনা নোমানকে ছেড়ে দিয়ে অলির গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় আসমা বানু ছুটে এলেন। থাপ্পড় টা অনেক জোরেই লেগেছে—ফলস্বরূপ অলি ছিটকে গিয়ে পড়লো কাঠের চেয়ারের উপর। আসমা বানু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আলভীর দিকে তাকিয়ে শুধালেন,
“তুমি অলিকে মা’রলে কেনো?”
রাগে আলভী দিকবিদিকশুন্য হয়ে বলেই ফেলে,
“কেনো মা*রলাম বুঝতে পারছেন না আপনি? ওহ হ্যাঁ বুঝবেন ই বা কিভাবে? মেয়ে তো আপনার সামনে বসেই রোমান্টিক শো করছে। আপনি নিশ্চয়ই বসে বসে সেই শো’য়ের মজা নিচ্ছেন? বিশ্বাস করুন আমিও অনেকক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু এই শো টা আমার জন্য মজা নয়,,,আমার জন্য সাজা ছিলো”
অলি কপালে হাত দিয়ে দেখলো রক্ত বের হচ্ছে। সেই সাথে ব্যাথায় টনটন করছে কিন্তু আলভীর মুখ থেকে এই কথাটি শুনে অলি চুপ করে থাকতে পারলোনা।
“আপনি আমার মায়ের সাথে এভাবে কথা বলার সাহস কথায় পেলেন?”
আলভী রাগে ফুসছে। নোমান নিজের কলার ঠিক করে বললো,
“এই অসভ্য লোকটা কে মিস অলি? কত্তোবড় সাহস বলা নেই কওয়া নেই এই নোমানের উপর হামলা করেছে। এই,,, এই কে আপনি হ্যাঁ?”
আলভী রেগেমেগে বললো,
“আমি তোর বাপ আর,,,
অলির দিকে ইশারা করে,
“ওই মেয়েটা তোর মা বুঝলি?”
কথাটা শুনে সবাই তাজ্জব বনে গেলো। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দিহান তো উচ্চস্বরে হেসেই উঠলো। আলভী রাগীচোখে একবার তাকাতেই দিহানের হাসি উধাও হয়ে যায়। আলভী তড়িৎ গতিতে অলির হাত ধরে টেনে অলিকে নিয়ে যেতে লাগলো,
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে ছাড়ুন। আহ ব্যাথা পাচ্ছি আমি”
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২৫০০+
#১৫_বছর_বয়সী_মা (২৬)
#সোফিয়া_সাফা
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ছাড়ুন, আহ ব্যাথা পাচ্ছি আমি”
অলির চিৎকার শুনে নোমান এগিয়ে এসে অলির অন্য হাত টেনে ধরলো। আলভীর মেজাজ এবার চরম বিগড়ে গেছে,
“ওর হাত ছাড় নয়তো তোর এমন অবস্থা করবো যে তোর চেহারা তুই নিজেই চিনতে পারবিনা।”
নোমান বললো,
“তুই ওনার হাত ছাড় নয়তো আমিও তোকে উপরে পাঠিয়ে দেবো”
আলভী ঘুরে এসে নোমানের গলা চেপে ধরলো। নোমানও আলভীর গলা চেপে ধরেছে। ওদের যুদ্ধ দেখে অলি চিৎকার দিয়ে উঠলো,
“কি করছেন আপনারা ছাড়ুন,,,ছাড়ুন প্লিজ”
দিহান আর কয়েকজন মিলে তাদের দুজনকে ছাড়িয়ে দিলো। আলভী তো কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। সে আবারও নোমানের দিকে তেড়ে যেতে নিলে অলি মাঝখানে চলে আসে,
“কি করছেন আপনি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কেনো মা*রছেন ওনাকে”
আলভী তেজি কন্ঠে হুমকি দিলো,
“সরে যা সামনে থেকে নয়তো ওর জায়গায় তোকেই খু*ন করে ফেলবো”
দিহান এগিয়ে এসে আলভীকে আটকালো। অলি নোমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“চলে যান আপনি, প্লিজ চলে যান এখান থেকে”
নোমান কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। কিন্তু অলির চেহারা দেখে তার ভীষণ মায়া লাগছে। কপাল থেকে র’ক্ত গড়িয়ে পরছে আর থাপ্পড়ের তীব্রতায় গাল আর ঠোঁট ফেটেও র*ক্ত পরছে।
“মিস অলি আপনি চিন্তা করবেন না আমি লোকটাকে দেখে নেবো আপনি সরে যান”
অলি দিশা না পেয়ে হাত জোর করে বললো,
“প্লিজ আপনি চলে যান। আমার সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করবেন না। উনি,,,উনি আমার হাজব্যান্ড। আপনাকে আর আমাকে একসাথে দেখে নিশ্চয়ই ভুলভাল ভেবেছেন সেই জন্যই এরকম টা করেছেন। আপনি প্লিজ চলে যান”
অলি কান্না করছে। নোমান বাকি কথা কিছুই শুনতে পায়নি। অলির বলা হাজব্যান্ড শব্দটা শুনেই সে হতভম্ব হয়ে গেছে।
“প্লিজ আপনি চলে যান।”
নোমান অজান্তেই হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে উল্টো দিকে ঘুরে চলে গেলো। আলভী তো ইচ্ছামতো চিল্লাচ্ছে আর নোমানের ১৪ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। নোমান চলে যেতেই আলভী দিহানকে সরিয়ে অলির সামনে এসে দাঁড়ায় অলি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আলভী অলিকে পুনরায় থাপ্পড় দেয়। অলি টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরের উপর পড়ে যায়। আসমা বানু ছুটে যায় অলির কাছে। আলভী অলিকে টেনে তুলতে গেলে আসমা বানু বাধা দিয়ে বলে,
“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? অলি গর্ভবতী, কেনো তুমি এই অবস্থায় ওকে মার*ধর করছো? কি করেছে আমার মেয়ে?”
আলভীর গায়ে থাকা সবুজ রঙের শার্টটা ঘামে ভিজে গেছে। চুলগুলোও উসকোখুসকো। চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে বহু আগেই।
“আপনি দেখতে পাচ্ছেন না যে আপনার মেয়ে কি করেছে? ওই ছেলেটা আপনাদের আত্মীয় তো ছিলোনা। কে ছিলো? কে ছিলো ও কোন অধিকারে অলিকে ফ্লাওয়ার দিয়েছে? কোন অধিকারে অলিকে জড়িয়ে ধরেছিলো?”
অলি নিঃশব্দে কান্না করছে। তার মাথা চক্কর দিচ্ছে।
“আপনার মেয়ে নিজে থেকেই কি এরকমটা করে নাকি আপনারা ওকে দিয়ে এসব করাচ্ছেন কোনটা?”
আলভীর কথা শুনে আসমা বানু ভীষণ অপমানিত বোধ করলেন,
“আলভী তুমি আমাদের কথাটা তো আগে শোনো। ওই ছেলেটা,,,
“কে ওই ছেলেটা? অলির আপন ভাই? নাহ। অলির মামা? নাহ। অলির চাচা? সেটাও না। তাহলে কে? আপনাদের লজ্জা করেনা বিবাহিতা মেয়েকে দিয়ে এসব করাতে? কি পেলেন এসব করে? আমি তো নিজের সবকিছু ওকে দিয়েই দিয়েছিলাম। একটা ভুল একটা মিস্টেক কে আমি শুধরানোর চেষ্টা করেই গেছি। বিনিময়ে আপনারা কি করলেন? এটাই কি আপনাদের পারিবারিক বিজন্যাস? মেয়েকে দিয়ে এসব করাতে লজ্জা করেনা? কতো টাকা দিয়েছে ওই ছেলেটা? কতো টাকা?”
আসমা বানু কি বলবেন খুজে পেলেন না। আলভী ভুল বুঝছে কিন্তু সঠিক টা কিভাবে বোঝাবে তাকে? অলি হঠাৎ করেই উঠে দাড়ালো আলভীর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললো,
“আপনি ভুল বুঝছেন একবার আমার কথাটা তো শুনুন”
“তোর কথা কি শুনবো? এই জন্যই কি আমার কথা মনে পড়েনি তোর? এই জন্যই শর্তগুলো দিয়েছিলি তাইনা। ছিহ!”
“বিশ্বাস করুন আমি কিচ্ছু করিনি। উনি তো আমাকে এক্সিডেন্ট হওয়া থেকে বাচিয়েছিলেন। সেই জন্যই মায়ের সাথে দেখা করাতে এনেছিলাম। প্লিজ বিশ্বাস করুন”
আলভী এক দৃষ্টিতে অলির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“এক্সকিউজ দিয়েছিস বেশ ভালো কথা। একটা বিশ্বাসযোগ্য এক্সকিউজ তো দিবি নাকি?”
অলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে কান্না করছে। আজকে নিজেকে সবচাইতে বেশি অসহায় লাগছে। অলিকে কান্না করতে দেখে আলভী অলির বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো,
“তুই আমাকে মে*রে ফেলতে চাস তাইনা?”
অলি নাবোধক মাথা নাড়ালো। আলভী যেখানে ধরেছে সেখানটা মনে হচ্ছে ছিড়ে যাবে। আলভী অন্যহাতে অলির গাল চেপে ধরে বললো,
“একদিন তোকে বলেছিলাম আমাকে মে*রে ফেলার জন্য তোর একফোঁটা চোখের জলই যথেষ্ট। কথাটা মনে রেখেছিস? সেই অস্ত্রটাই কি আমার উপর প্রয়োগ করতে চাইছিস? আমি ম*রে গেলে আমার সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিবি। এটাই তো তোদের প্ল্যান তাইনা?”
অলি দ্রুতহাতে নিজের চোখজোড়া মুছে নিলো। আলভী অলিকে ছেড়ে দিলো।
“আজকের পর থেকে তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ডিভোর্স দিয়ে দেবো,,,ওহহো ওয়েট আমার হাতে তো ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষমতা নেই, রাইট?”
আলভী আবারও অলির বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো,
“পয়জনবি তুই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবি তো?”
আলভীর ঠান্ডা কন্ঠস্বর শুনে অলির শরীর কেপে উঠলো, তবুও সে সাহস জুগিয়ে বললো,
“আ,,,আমি আপনাকে কেনো ডিভোর্স দেবো? আপনি ভুল বুঝছেন। এসব সত্যি নয়। আমি ওই ধরনের মেয়ে নই”
“হিশশশ,,,চুপ একদম চুপ।”
“তুই আমাকে ডিভোর্স দিবি। অবশ্যই দিবি”
আলভীর হাত আলগা হতেই অলি সরে দাড়ালো। তারপর চিৎকার করে বললো,
“আমি আপনাকে ডিভোর্স দেবোনা। কক্ষনো দেবোনা। আপনার যা ইচ্ছা—করুন গিয়ে”
“ওকে, তুই আমাকে ডিভোর্স না দিলে—না দে। তবে আমার লাইফ থেকে তোকে এইমূহুর্তে আমি আউট করে দিলাম।”
কথাটা বলেই আলভী হনহন করে শপ থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। আলভী চলে যেতেই অলি হাটু মুড়ে সেখানেই বসে পরলো,
“মা ওনাকে আটকাও। উনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি তো কিচ্ছু করিনি।”
অলি উঠে দাড়ালো দৌড়ে আলভীর পিছু নিলো। আলভী ততক্ষণে গাড়িতে উঠে গেছে। অলি গাড়ির উইন্ডো ধাক্কাচ্ছে আর বলছে,
“প্লিজ আমার কথাটা তো শুনুন। এভাবে চলে যাবেন না।”
আলভী অলির দিকে একবারও তাকালো না, সে গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে গাড়িটা নিয়ে চলে গেলো। অলি অনেকটা পথ দৌড়ে গাড়িটার পিছু নিলো। কিন্তু একটা সময় পর গাড়িটা তার নাগালের বাইরে চলে যায়। অলি কাদতে কাদতে শপে ফিরে এলো,
“মা আমি এক্ষুণি চলে যাবো। বাবাকে কল দিয়ে আসতে বলো। সে আমাকে দিয়ে আসবে”
আসমা বানু অলিকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিলেন,
“কাদিস না মা। বিপদ এলে ভেঙ্গে পরতে হয়না। আলভী ভুল বুঝেছে, রাগের মাথায় ওসব বলেছে। রাগ কমে গেলে দেখবি ঠিকই তোর কথাগুলো বুঝবে”
অলি কেদেই যাচ্ছে। হঠাৎ করেই তার কিছু একটা মনে পড়ে। সে নিজের চোখজোড়া মুছে নিলো,
“মা, আমি যে এই সময় ওই লোকটার সাথে এখানে আছি সেটা উনি জানলেন কিভাবে? আমার মনে হচ্ছে কেউ না কেউ তাকে আমার বিষয়ে উল্টো পাল্টা বুঝিয়েছে।”
“কিন্তু কে এরকম টা করলো? আর কেনোই বা করলো?”
অলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে,
“ওই বাড়িতে আমার শত্রুর অভাব নেই। কেউই আমাকে পছন্দ করেনা। আমি সঠিকভাবে বলতে পারবোনা যে কে এরকম টা করেছে কিন্তু আমি নিশ্চিত যে ওই বাড়ির কেউই—ওনাকে আমার ব্যাপারে ভুলভাল বুঝিয়েছে। আমাকে যত তারাতাড়ি সম্ভব ওই বাড়িতে ফিরে যেতে হবে মা।”
“কিন্তু অলি তোর পরিক্ষা তো এখনো শেষ হয়নি”
“পরিক্ষা দিয়ে আমি কি করবো? ওইদিকে আমার সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে। উনি যদি রাগের মাথায় আরেকটা বিয়ে করে নেয় তখন? আমি সম্পত্তি দিয়ে কি করবো? আমি তো শুধু উনি যেনো আরেকটা বিয়ে কক্ষনো করতে না পারে সেই জন্যই ওই ধরনের শর্ত দিয়েছিলাম।”
“কিন্তু ও তো অনেক রেগে আছে তুই ওখানে গেলে যদি মার*ধর করে?”
“বাবা তো যাবে আমার সাথে। তেমন কিছু করলে আমি ওনার নামে মা’মলা করবো কিন্তু তবুও ওনাকে ছাড়বোনা। আমার অধিকার আমি ছাড়বোনা”
আসমা বানু লিয়াকত হোসাইনকে কল দিয়ে বাড়িতে আসতে বললেন তারপর নিজেও অলিকে নিয়ে বাড়িতে চলে
এলেন,
,
সূর্য ডুবে গেছে কিছুক্ষণ আগেই, এরই মাঝে ধরনীর বুকে নিকষ কালো অন্ধকার নেমে এসেছে। পাখির কিচিরমিচির এখন আর শোনা যাচ্ছেনা তবে বাগানের সাইড থেকে ঝিঝি পোকার একঘেয়ে ডাক ভেসে আসছে। অলি জানালার ফ্রেমের উপর মাথা রেখে খাটের উপর বসে আছে। সে আজকেই চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু লিয়াকত হোসাইন তাকে বুঝিয়ে বলেছে যে একেবারে পরিক্ষা টা দিয়েই যেনো অলি যায়। কারণ এই টেস্ট পরিক্ষাটা না দিলে অলি সামনের বছর এস এস সি পরিক্ষা টা দিতে পারবেনা।
—
ঘড়ির কাটা এখন ১০ টা ছুইছুই। আলভী মূর্তির ন্যায়ে নিজের রুমে বসে আছে। তার চেহারা অনূভুতিশূন্য। তার মনে পড়ে যায় একদিনের কথা যেদিন রিফাত তার সামনে বসে মেয়ে জাতিকে নিয়ে আজবাজে কথা বলেছিলো,
“—মেয়েরা শুধু মাত্র খেলনার বস্তু। আর মিডেল ক্লাস পরিবারের মেয়েরা তো জন্মগত ভাবেই লোভী। এরা পুতুল নিয়ে খেলতে শেখার আগেই ছেলেদের মন নিয়ে খেলতে শিখে যায়।
আলভী কথাটা মেনে নিতে পারেনা। সে প্রতিউত্তরে বলে,
“—মেয়ে বলতে তুই কাদের বোঝাতে চাইছিস? ভুলে যাসনা তোর মা আর বোনও কিন্তু নারীজাতির অংশ। তাই মেয়েদের নিয়ে কিছু বলার আগে তাদের কথা ভেবে নিস।
রিফাত হাসতে লাগলো,
“—তাদের কথা ভেবেই বলছি রে। আরে আমার মা আর বাবার তো লাভ ম্যারেজ ছিলো। যদিও আমার বোনের বিষয়ে এখনো আমি তেমন কিছু জানতে পারিনি। তবে ভবিষ্যতে শায়লা ও একজন কে ঠিকই পটিয়ে নেবে।
আলভী রেগে গেলো,
“—শেইম অন ইউ রিফাত। নিজের বোনের ব্যপারে এসব বলতে লজ্জা করছেনা?
“—ওয়েট আমার বোনকে নিয়ে আমি বলছি কিন্তু তোর ফাটছে কেনো বে? এই,,,এই শায়লা কোনোভাবে তোকে পটিয়ে নেয়নি তো? দেখ তেমনটা হলে কিন্তু আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি তোকে দুলাভাই বানাতে রাজি আছি। তোর শালা হতে আমার তো কোনোপ্রকার আপত্তি নেই।
আলভী নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে রিফাতকে ধোলাই করতে যাবে ঠিক তখনই দিহান তাকে আটকায়,
“—আরে এভি রিফাত এখন ড্রাংক। জানিসই তো ওর একসপ্তাহ আগেই ব্রেকআপ হয়েছে। ছেড়ে দে ওকে,
আলভী একটা বাকা হাসি দিয়ে দিহানের পেটেই একটা ঘুষি দিয়ে ফেললো,
“—আহ তুই আমাকে মা’রলি কেনো?
“—তুই ওকে বাচাতে এলি কেনো?
“—নিজেই বলিস যে প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করতে নেই আর নিজেই প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করিস। দ্যাটস নট ফেয়ার।
“—প্রশ্ন কোথায় করলাম? আমি তো উত্তরই দিয়েছি তুই ওকে বাচাতে এসেছিলি তাই ওর বদলে তোকে মে*রেছি সিম্পল।
রিফাত মাতাল অবস্থাতেই বললো,
“—এভি তুইও একদিন ঠিকই বুঝবি যে মেয়েরা জন্মই নেয় ছেলেদের মনের মৃ’ত্যু ঘটানোর জন্য।
“—আমি সেটা কখনোই বুঝবোনা কারণ সব মেয়েরা কখনোই এক হতে পারেনা।
রিফাত শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
“—ওকে দরকার হলে আমি তোকে বুঝতে সাহায্য করবো। তখন আবার তোর মনের মৃ’ত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করতে পারবিনা কিন্তু বলে দিলাম।
“—রিফাত তুই ভুলে যাচ্ছিস যে এভি এখন কার্ডিওলজিস্ট। ওর মনের মৃ’ত্যু ঘটাতে কেউই পারবেনা কারণ ও তার আগেই নিজের হার্টের চিকিৎসা করে ফেলবে। তাইনা রে এভি?
কথাটা বলেই দিহান হাসতে লাগলো। রিফাত ও হাসলো কিন্তু তার হাসিটা ছিলো অন্যরকম। আলভী সেটা লক্ষ্য করলো কিন্তু বিশেষ পাত্তা দিলোনা।
ঠকঠক আওয়াজে আলভীর ভাবনায় ছেদ পড়ে। কেউ দরজায় কড়া নাড়ছে৷ আলভী একটা শ্বাস ফেলে দরজা খুলে দিতেই শাহানাজ বেগম একটা খাবারের ট্রে নিয়ে আলভীর রুমে আসে। আলভী মায়ের দিকে তাকালো না। তার চেহারার অবস্থা খারাপ। সে ভেতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে কিন্তু সেটা সে কাউকেই দেখাতে চায়না।
“খাবোনা মা। এসব নিয়ে যাওতো এখান থেকে”
শাহানাজ বেগম খাবারের ট্রে টা টেবিলের উপরে রেখে আলভীর সামনে এসে দাঁড়ায়।
“কেনো নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস বাবা?”
“কারণ ভুলটা আমার ছিলো মা। তাই আমারই শাস্তি পাওয়া উচিৎ”
শাহানাজ বেগম ছেলেকে টেনে নিয়ে খাটের উপরে বসালেন,
“সকালে তো কিছু না খেয়েই অফিসে চলে গিয়েছিলি। সারাদিন বাইরে ছিলি। আমি জানি সারাদিনে একটু পানিও মুখে দিস নি। এরকম করলে কি চলবে বাবা?”
“আমি পারছিনা মা। আমার ভীষণ,,,
আলভী আর কিছুই বলতে পারলোনা। তার গলা আটকে আসছে,
“বাবা তুই তো জানিসই যে আমি মিডেল ক্লাস ফ্যামিলি পছন্দ করতাম না। তবুও তোর দিকে তাকিয়ে আমিও তো মেয়েটাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। বল করিনি?”
আলভী নিশ্চুপ,
“এখন তুই আমার জন্য এটুকু কর বাবা। নিজেকে কষ্ট দিসনা। তুই ম’রে গেলেও হয়তো মেয়েটার কিছুই যাবে আসবেনা। কিন্তু তোর কিছু হয়ে গেলে তোর মাও কিন্তু ম’রে যাবে।”
আলভী তবুও নিশ্চুপ। শাহানাজ বেগম একটা শ্বাস ফেলে খাবারের প্লেট টা হাতে নিয়ে এক চামচ ভাত ছেলের দিকে এগিয়ে নিলেন। আলভী বিনাবাক্যে খাবারটা মুখে নিলো কিন্তু গিলতে পারলোনা।
“মা প্লিজ আমি পরে খেয়ে নেবো। আমার গলা দিয়ে খাবার নামছেনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে। কয়েকদিন না খেয়ে থাকলেও আমি ম*রে যাবোনা। তুমি এখন যাও, আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।”
শাহানাজ বেগম কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু আলভীকে সে খুব ভালো করেই চেনে। এখন কিছু বলতে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। আর আলভীর সব রাগ এসে পরবে তার উপর। তাই সে বিনাবাক্যে প্রস্থান করলেন। আলভী কিছুক্ষণ বসে রইলো তারপর উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো বেডসাইডে থাকা ড্রয়ারের দিকে। সেখান থেকে একটা স্লিপিং পিলের পাতা হাতে নিয়ে নিজমনেই বললো,
“মনের মৃ’ত্যু ঘটার আগেই আমার কিছু করা উচিৎ।”
আলভী ২টো স্লিপিং পিল নিয়ে পানি দিয়ে গিলে নিলো। তারপর লাইট অফ করে দিয়ে খাটে গা এলিয়ে দিলো।
—
অলি চুপচাপ বসে আছে এখন রাত ১১টা। প্রতিদিন এই সময়টাতে যেখানে অলি ঘুমের চাপে চোখ খুলে রাখতেই পারেনা সেখানে আজকে অলির চোখে ঘুম নেই। আসমা বানু এসে অলির পাশে বসলেন,
“আজকে আমার ছোট্ট পরীটার খুব মন খারাপ তাইনা?”
মায়ের আওয়াজে অলি নিজের চোখজোড়া মুছে নিলো।
“তুই একবার আলভীকে কল কেনো করছিস না?”
অলি শান্তস্বরে বললো,
“ওনার ফোন তো অনেকদিন ধরেই বন্ধ বলছে”
আসমা বানু অলিকে টেনে কোলের উপর শোয়ালেন। অলিও নিঃশব্দে মায়ের কোলে মাথা রাখলো,
“অলি তোর অনেক খারাপ লাগছে তাইনা রে?”
অলি কিছুই বললোনা। সে জানেনা তার কেনো এতো খারাপ লাগছে। তার মন বারবার বলছে খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। কিন্তু কি হতে পারে সেটাই সে বুঝে উঠতে পারছেনা।
“মা ওই বাড়ি থেকে সবাই মিলে আমাকে বের করে দিলে— আমি কি করবো?”
আসমা বানু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,
“কি আর করবি? আমাদের কাছে ফিরে আসবি। আমি আর তোর বাবা সবসময় আছি তো তোর পাশে চিন্তা করিসনা”
“আমার সংসার টা শুরু হওয়ার আগেই ভেঙ্গে যাচ্ছে মা”
“তুই ভাবছিস কেনো? সেদিন তো বললি ভাঙ্গলে ভাঙ্গুক, তোর নাকি কিছুই যায় আসেনা। তাহলে আজকে আবার কি হলো?”
“আমি মন থেকে বলিনি মা। আমি তো এমনি এমনি বলেছিলাম। ভেবেছিলাম শর্ত গুলো তো দিয়েই দিয়েছি। এখন আর কোনো ভয় নেই”
“অলি আমার মনে হচ্ছে এর পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আর সে চাইছেনা যে তুই আলভীকে নিয়ে ভালোভাবে সংসার করিস। সুখে শান্তিতে থাকিস। আর সত্যি বলতে আজকের এই দিনটার জন্য তুইও দায়ী আছিস। তুই নিজেই সুযোগ করে দিয়েছিস আর সেই লোকটা শুধু সু্যোগের সদ্ব্যবহার করেছে।”
“আমি কি করতাম মা? একজন রে/পি/স্টের সাথে আমি কিভাবে স্বাভাবিক থাকতাম? তাকে দেখলেই যে আমার ভয় করে।”
“যাকে দেখলে তোর ভয় করে তাকে নিয়ে তুই ভাবছিসই বা কেনো?”
অলি একটা শ্বাস ফেলে মনে মনে বললো,
**জানিনা কেনো কিন্তু আমি তাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছিনা। সত্যি বলতে ওনার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করার ক্ষমতা…আমার নেই। আমি ওনার জীবনের প্রথম না হলেও…শেষ হতে চাই। উনি যেই হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করেছিলেন…সেই হাত দিয়ে আর কাউকে স্পর্শ না করুক। উনি ভালো হোক বা খারাপ হোক…উনি শুধুই আমার থাকুক।**
“এতো এতো চিন্তা করিসনা অলি। তোর শরীর ভালো নেই, বয়স টাও কম। পর্যাপ্ত পরিমানে তো খেতেও পারছিস না। এরকম চলতে থাকলে মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে”
কথাটা শুনে অলির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো। সে কম্পিত কন্ঠে বললো,
“এগুলো বলোনা মা। আমার বাবু যথেষ্ট স্ট্রং। ওর কিছু হবেনা। ওর জন্যই তো এতোকিছুর পরেও আমি কষ্ট করে খাবার গুলো গিলেছি। খাবার গুলো কোনো ওষুধের চাইতে কম ছিলোনা। আর তুমি তো জানোই ওষুধ আমার সবচাইতে বড় শত্রু।”
“শুধু কষ্ট করে খেলেই কি হবে? ঠিকমতো ঘুমাতে হবে। আর এই সময়ে তো একদম চিন্তামুক্ত থাকতে হয়”
অলি বালিশে মাথা রেখে বললো,
“আমি এখনি ঘুমিয়ে যাবো। তুমি আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেও।”
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২৩০০+