#১৫_বছর_বয়সী_মা (২৭)
#সোফিয়া_সাফা
সময় আর স্রোত কারো জন্যই অপেক্ষা করেনা। ঠিক তেমনি কারো জন্য অপেক্ষা না করে আরো ২টো দিন কেটে গেছে। আজকে অলির শেষ পরিক্ষা।
৯টা বাজতেই অলি গোসল সেরে রেডি হয়ে নেয়। গোসল করে পরিক্ষা দিতে গেলে শরীর আর মন দুটোই ভালো লাগে। যদিও সে জানে এসব করেও তার মন ভালো লাগবেনা। কারণ ভালো কিছু তো হচ্ছেইনা তার সাথে। সেইক্ষেত্রে ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। অলি রেডি হতেই দেখলো তার মাও শপে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে এসেছে,
“আজকে তুমি দেরি করে যাচ্ছো কেনো মা?”
“ভাবলাম আজকে তোর সাথেই যাই। কালকে তো তুই চলেই যাবি।”
অলি মুখে হাসি ফুটিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
“আরে তারাতাড়ি চল। এমনিতেই আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
অলি মাকে ছেড়ে দিলো তারপর তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাটা ধরলো,
“মা আজকে একটু তারাতাড়ি আসবে বুঝলে? আমি বাবাকেও তারাতাড়ি আসতে বলে দিয়েছি”
আসমা বানু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কেনো?”
অলি হাসিমুখেই বললো,
“তোমাকে আর বাবাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো মা।”
“তাই নাকি? কোথায় ঘুরতে যাবি?”
“বসুন্ধরা তে যাবো”
আসমা বানুর হাসিটা মিলিয়ে গেলো,
“তোর কি কিছু লাগবে?”
“আমার জন্য লাগবেনা মা। তোমার জন্য লাগবে”
আসমা বানু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। অলি হাসি থামিয়ে বললো,
“তোমার কতোগুলো নতুন বোরকা কেনা উচিৎ মা। এগুলো অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। তাই তোমার আর বাবার জন্যই শপিং করতে যাবো।”
“আরে সেসবের কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো দিয়েই আরও ২-৩ বছর চলে যাবে অলি।”
অলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,
“আমি তোমাদেরকে কিনে দেবো মা। তাই টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।”
আসমা বানু খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন,
“আরে অলি টাকার জন্য বলছি নাকি?”
অলি হঠাৎ করেই হাটা থামিয়ে আলতো হাতে মায়ের হাতজোড়া ধরলো,
“মা প্লিজ না করবেনা। আমি তোমাদের জন্য কখনো কিছু করতে পারিনি। এতোটুকু করতে দেও আমাকে। আমি জানি তোমরা সারাজীবন আমার জন্যই কষ্ট করে গেছো। নিজেরা কষ্ট পেলেও আমাকে কষ্ট পেতে দেওনি কখনো। আমাকে ভালো স্কুলে পড়িয়েছো। ভালো পোশাক, ভালো খাবার, আমাকে ভালোভাবে বড় করার জন্য সবকিছু করেছো। আমি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ মা।”
মেয়ের কথা শুনে আসমা বানু স্তব্ধ হয়ে গেলেন।
“এসব তুই কি বলছিস পাগলি মেয়ে। এগুলো করা তো বাবা মা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ছিলো।”
অলি আরও কিছু হয়তো বলতে চাইলো কিন্তু আসমা বানুর তাড়ায় আর বলে উঠতে পারলোনা। আসমা বানু শপে ঢোকার সময় অলির দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তুই আমাদের কাছে অনেক প্রিয় অলি। আমি আর তোর বাবা তোকে অনেক ভালোবাসি। সবসময় এটা মনে রাখিস”
অলি উত্তরে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই আসমা বানু শপে ঢুকে গেলেন। অলিও হাতে থাকা ঘড়িতে দৃষ্টি বুলিয়ে স্কুলের দিকে এগিয়ে গেলো।
—
ছুটির পর প্রতিদিনের মতোই কমন রুমে বসে শায়লার সাথে কথা বলছিলো অলি,
“ধুর দুলাভাইকে দেখতেই পারলাম না। ছবিও দেখালি না অলি। তুই কি কোনোভাবে আমাকে সন্দেহ করিস? আরে আমি দুলাভাইয়ের দিকে নজর দিবো নাকি? দেখালে কি হতো?”
অলি উত্তর না দিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে লাগলো। শায়লা মুখ ফুলিয়ে বললো,
“তুই একবার চাওয়াতেই আমি আমার ভাইয়ের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম আর তুই? হাহ বিয়ের পর অনেক খারাপ হয়ে গেছিস।”
অলি পানি খেয়ে মুখ মুছে বললো,
“আরে শালু বললাম তো ওনার ছবি নেই আমার ফোনে। তোকে কিভাবে দেখাবো বল”
“তাহলে প্রমিস কর যে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে তার ছবি তুলে পাঠাবি”
অলি কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
“তুই হয়তো ওনাকে চিনিস।”
“কিভাবে চিনি সেটা না বলে বারবার এই কথাটা বলিস নাতো।”
অলি বলতে গিয়েও বললোনা। রিফাত যে শায়লার ভাই এটা জানার পর শায়লার সাথে কথাই বলতে ইচ্ছা করেনা অলির। কিন্তু শায়লার সাথে ওর স্কুল লাইফের শুরু থেকেই বন্ধুত্ব। অলি জানে শায়লা মোটেও রিফাতের মতো নয়। তবে এই ব্যপারটা শায়লার না জানাই ভালো।
“বাড়িতে যেতে হবে রে। তোর কাছে তো আমার নম্বর আছেই। বাকি কথা ফোনে হবে”
শায়লার উত্তরের অপেক্ষা না করেই অলি বেরিয়ে গেলো। অলি বাড়িতে এসে হাতমুখ ধুয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো। তারপর নিজের রুমে এসে জামাকাপড় গোছাতে লাগলো। সে এখনই সবকিছু গুছিয়ে রাখবে। মা বাবা আসলেই তাদেরকে নিয়ে শপিং করতে যাবে। অলি আলমারি টা খুলে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র গুছিয়ে রাখলো। তার সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এই বাড়িতেই রেখেছে সে। আলভীর সাথে তার বিয়ের কাবিননামা, শর্তের দলিলপত্র, তার বার্থ সার্টিফিকেট আর ক্রেডিট কার্ড টাও এখানেই রেখেছে।
অলি সবকিছু গুছিয়ে রেখে বিছানার উপর বসলো। পরিক্ষা শেষ হওয়াতে এখন একটু হাল্কা হাল্কা লাগছে। অলি নিজের পেটের উপর হাত রাখলো,
“বাবু তুই কবে আসবি? আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিনা। নিজেকে বড্ড একা একা লাগে। তুই তারাতাড়ি আয় প্লিজ।”
অলির ভাবনার মাঝেই তার ফোনটা বেজে ওঠে। অলি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো নোমান কল করেছে। রাতেও নোমান কল করেছিলো কিন্তু অলি কল রিসিভ করেনি। অলি এবারও কল রিসিভ করলোনা। কিন্তু নোমান ননস্টপ কল করেই যাচ্ছে। এক সময় বিরক্ত হয়ে অলি অনেক চেষ্টা করে নোমানের নম্বরটা ব্লক করে দিলো। অলি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এখন বিকেল ৫ টা বাজে। কিছুক্ষণ যেতেই লিয়াকত হোসাইন বাড়িতে ফিরে আসেন।
“বাবা, মা কি ভুলে গেলো নাকি?”
লিয়াকত হোসাইন মৃদু হেসে বললেন,
“আরে না ভোলে নি। সন্ধ্যার পরপরই চলে আসবে”
লিয়াকত হোসাইন ফ্রেশ হতে নিজেদের রুমে চলে যায়।
মাগরিবের আজান দিয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। অলি কিছুক্ষণ বসে থেকে অজু করে এলো। অলির মা সবসময় বলে এই সময়ে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করতে হয়। তাই অলি চেষ্টা করে পাচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি বিভিন্ন নফল ইবাদত গুলোও করার। অলি নামাজ আদায় করে কোরআন শরীফ পাঠ করছিলো। ঠিক তখনই তার কানে ভেসে আসে এমন কিছু যা শোনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।
“অলি তোর মা এক্সিডেন্ট করেছে”
অলি ধৈর্য্য সহকারে নিজের পাঠকৃত আয়াতটি শেষ করে কোরআন শরীফটি জায়গামত রেখে বাবার রুমে ছুটে এলো। লিয়াকত হোসাইন নিজেও সবেমাত্র নামাজ শেষ করে তসবিহ পাঠ করছিলেন তখনই আসমা বানুর বান্ধবী কল দিয়ে তাকে এই দুঃসংবাদ টা জানায়। লিয়াকত হোসাইন আলমারি থেকে টাকা বের করে পকেটে নিলেন।
“বাবা, মায়ের কি হয়েছে? মা ঠিক আছে তো?”
অলির কথায় লিয়াকত হোসাইন নিজের চোখজোড়া মুছে অলির দিকে তাকায়। সে দেখতে পায় অলিও ইতোমধ্যেই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে,
“আরে আম্মু কাদছিস কেনো? তোর মাকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। আল্লাহর রহমতে কিচ্ছু হবেনা দেখিস।”
অলির মন যে মানেনা সে হাউমাউ করে কেদে উঠলো,
“আমার মা কোথায়? বাবা আমাকে তারাতাড়ি মায়ের কাছে নিয়ে চলো”
লিয়াকত হোসাইন অলির কাছে এগিয়ে এসে অলির মাথায় হাত রাখলেন,
“তোর মা সব সময় বলে বিপদ আসলে ভেঙ্গে পড়তে নেই। ধৈর্য্য ধর আম্মু। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে”
অলি কান্নারত অবস্থাতেই মাথা নাড়ায়। লিয়াকত হোসাইন অলিকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ১৫ মিনিটের মাথায় তারা হসপিটালে এসে পৌছায়। আসমা বানুর বান্ধবী মিসেস রাবেয়া আখতার করিডোরেই বসে ছিলেন। লিয়াকত হোসাইন তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“আসমা কোথায়? কিভাবে হলো এসব?”
“ভাইজান, আসমাকে তো ওটিতে নেওয়া হয়েছে। আসমার আজকে বাড়িতে ফেরার খুব তাড়া ছিলো। তাই আমিও ওর সাথেই দোকান বন্ধ করে বেরিয়ে যাই কিন্তু পথিমধ্যেই হঠাৎ একদল ছিনতাইকারী আমাদের গতিরোধ করে আর আমাদের ব্যাগ টেনে নিয়ে যায়। আসমা বেখেয়ালি হয়ে তাদের পিছু নিলে একটা প্রাইভেট কারের সাথে,,,”
অলি কেদে উঠলো,
“আমার মা ঠিক হয়ে যাবে তো? হে আল্লাহ আমার মাকে তুমি ঠিক করে দেও।”
লিয়াকত হোসাইন মেয়েকে সামলাবেন না নিজেকে সামলাবেন সেটাই বুঝতে পারছেন না। অলি নিজেকে সামলাতে চেয়েও সামলাতে পারেনা। একসময় কাদতে কাদতে অলি সেন্সলেস হয়ে যায়। লিয়াকত হোসাইন অলিকে রাবেয়ার নিকট রেখে তার জন্য ডাক্তার ডাকতে চলে যায় কিন্তু এমন সময়েই দুজন লোক আসে রাবেয়া আখতারের কাছে। একজন তার দিকে গান তাক করে ভয় ভীতি দেখায় আরেকজন অলিকে তুলে নিয়ে চলে যায়। তাদের হাতে গান থাকাতে আশেপাশের কেউ আর এগোনোর সাহস পেলোনা। ঘটনা এতো দ্রুত ঘটে যায় যে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই অলিকে নিয়ে তারা হাওয়া হয়ে গেল। লিয়াকত হোসাইন ফিরে এসে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে পড়লেন। সে পুরো হসপিটাল তন্নতন্ন করে খুজেও মেয়েকে আর পেলেন না।
,
পরের দিন বিকেল বেলা। আজ শুক্রবার। আলভী নিজের রুমে বসেই সময় কাটাচ্ছে। পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। সেই নীরবতার মাঝে শুধু কি-বোর্ড প্রেসের আওয়াজ। আলভী স্টাডি টেবিলে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। তখনই তার ফোনে একটা মেইল আসে।
—স্যার আপনি যার নম্বর আর ই-মেইল এড্রেস দিয়েছিলেন তার লোকেশন জানা গেছে।
কথাটা শোনামাত্রই আলভী রিপ্লাই দিলো,
—যাক এতোদিন পর আজকে জানতে পারলে তাহলে?
—স্যার এতোদিন নম্বরটা বন্ধ ছিলো। আর নম্বরটা যার আইডি কার্ড দিয়ে কেনা হয়েছিলো সে তো হাফ যুগ আগেই মা*রা গেছে। তবে আজকে শহরের একটা জায়গাতে তার অবস্থান জানা গেছে।
—লোকেশন সেন্ড করো।
সোহেল লোকেশন পাঠানোর পর আলভী খুব ভালো করে লোকেশন টা দেখে নিলো। প্রথম যেদিন সেই আননোন নম্বর থেকে অলির ছবিগুলো পাঠানো হয়েছিলো সেদিনই আলভীর সন্দেহ হয়েছিলো—কেউ তো আছে যে চায়না—অলি আর তার মাঝে কোনো সম্পর্ক থাকুক। যদি সেটা নাই হয় তাহলে কেনো সে অলির ছবিগুলো তাকে পাঠাবে? আলভীর রিফাতকে সন্দেহ হচ্ছে। সেদিন রাগের মাথায় অলির সাথে সে খারাপ বিহেভ করে ফেলেছিলো। সে জানে অলি একটু গ্রীডি টাইপের হতে পারে তবে ততোটা খারাপ হতে পারেনা। কিন্তু অলির উপর তো সে আগে থেকেই রেগে ছিলো যার জন্য অলির সাথে ইচ্ছাকৃত ভাবেই যোগাযোগ রাখেনি। তাছাড়া সে যদি যোগাযোগ রাখতো তাহলে সেই লোকটা আরও ঝামেলা লাগাতে চাইতে পারে। এসব চিন্তা করেই আলভী অলির সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে।
“রিফাত তোকে একবার পাই। তোকে আমি মে*রেই ফেলবো। আমার জীবনের সবচাইতে বড় শত্রু তুই। আর এসবের পেছনে যদি তুই থাকিস—তাহলে তোকে আমি সবচাইতে করুণ মৃ*ত্যু উপহার দেবো।”
আলভী রেডি হয়ে লোকেশন ফলো করে বেরিয়ে গেলো তার সাথে দিহান আর সোহেলও আছে।
“লোকেশন কোথায় দেখাচ্ছে?”
“স্যার লোকেশনে তো দেখাচ্ছে সেই সিমকার্ড ব্যবহারকৃত লোকটা সামনের ক্যাফেতেই আছেন”
“সোহেল তুমি বাইরেই অপেক্ষা করো আমি আর দিহান যাচ্ছি”
সোহেল মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। আলভী মূলত পারিবারিক বিষয়ে সোহেলকে জানাতে চায়না বলেই তাকে এখানে থাকতে বলেছে।
আলভী আর দিহান ভেতরে গিয়ে কিছু খাবার অর্ডার করল। তারপর একটা টেবিলে গিয়ে বসলো তখনই আলভীর সাথে তার মেডিক্যাল এডমিন এসিস্ট্যান্ট লাবিবের দেখা হয়ে যায়।
“আরে স্যার আপনারা এখানে?”
আলভী গম্ভীর মুখেই বললো,
“আমরা তো একটা কাজেই এখানে এসেছি। তোমার কি খবর? এখানে কি করছো?”
“স্যার আজকে তো আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই, আমারও কাজ ছিলোনা। সেই জন্যই আমি ভাবলাম আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করে নেই।”
আলভী চোখ দিয়ে দিহানকে ইশারা করতেই দিহান একটা নম্বরে কল করলো। সাথে সাথেই লাবিবের ফোন বেজে ওঠে। লাবিব প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে না পারলেও যখন সে বুঝতে পারলো যে আলভী তাকে ধরে ফেলেছে ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আলভী তো চেয়ার থেকে উঠে এসেই লাবিবের কলার চেপে ধরে।
“তুই আমাকে অলির ছবিগুলো কেনো দিয়েছিলি? কি সমস্যা তোর?”
বলেই আলভী লাবিবকে কয়েকটা ঘুষি দিয়েই বসল,
“স্যার মা*রবেন না স্যার। আগে আমার কথাটা তো শুনুন।”
আলভী লাবিবের মুখ বরাবর একটা ঘুষি দিয়ে বলল,
“কে বলেছে এসব করতে সেটা আগে বল।”
দিহান আলভীর হাত থেকে লাবিবকে ছাড়িয়ে আলভীর উদ্দেশ্যে বলল,
“আরে ওকে বলতে তো দিবি?”
আলভী একটা শ্বাস টেনে বলল,
“হুম বল, বল। কে বলেছে অলির ছবিগুলো আমাকে দিতে?”
লাবিব একটা ঢোক গিলে বলল,
“স্যার আমাকে কেউই বলেনি। আমি তো সেদিন সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম তখনই দেখলাম অলি,,,
আলভী ধমকের স্বরে বলল,
“ম্যাডাম বল”
“জ্বি স্যার, ম্যাডাম। ম্যাডাম একটা ছেলের সাথে ঘোরাঘুরি করছেন। আমি তো ম্যাডামকে চিনতাম। সেদিন ওনাকে হসপিটালেও তো নিয়ে এসেছিলেন। সেই জন্যই ভাবলাম,,,
আলভী চেচিয়ে উঠলো,
“কি ভাবলি হুম? যে এটা দিয়েই ঝামেলা লাগিয়ে দেই তাইনা?”
“স্যরি স্যার, কিন্তু আপনি ভুল বুঝছেন। আমি তো ভাবলাম ম্যাডাম যে বাইরে এসব করে বেড়াচ্ছে সেটা আপনাকে জানানো প্রয়োজন। সেই জন্যই জানিয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন আমি প্রথমে আপনার ফোনেই ছবিগুলো দিয়েছিলাম কিন্তু আপনি সীন করছিলেন না সেই জন্যই আমি বাধ্য হয়ে আপনার ফ্যামিলির সবাইকে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।”
দিহান কড়া গলায় বলল,
“ওই তুই ওনাদের সবার নম্বর কোথায় পেলি”
“স্যার খুজলে তো বাঘের চোখও পাওয়া যায় সেখানে নম্বর জোগাড় করা এমন কোনো বড় ব্যাপার নয়।”
আলভী লাবিবের শার্টের কলার খামচে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
“এড্রেসটা দিয়ে মেইলটাও তুই-ই করেছিলি?”
লাবিব নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
“জ্বি স্যার। আর আমি সেইদিনের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইছি আসলে ম্যাডামের উপর আমার ভীষণ রাগ উঠেছিলো বিশ্বাস করুন”
দিহান ভ্রু কুচকে লাবিবের দিকে তাকালো,
“তোর আবার ভাবীর উপর কেনো রাগ উঠেছিলো শুনি। উনি ধোকা দিলে এভিকে দিয়েছে তোকে তো দেয়নি”
“স্যার তাসনীম স্যারকে আমি ভাইয়ের মতো মনে করি। সেই জন্যই ওনার চোখ খুলে দেওয়ার জন্য আমি এমনটা করেছি বিশ্বাস করুন আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা”
আলভী রাগীকন্ঠে বলল,
“হোয়াট ডু ইউ মিন? তোর কি মনে হয়…এতোদিন আমার চোখ বন্ধ ছিলো?”
“না স্যার আসলে ম্যাডাম যেই ছেলেটার সাথে লাইন মে*রেছে সেই ছেলেটা আমার বন্ধু। আর এই ব্যাপারটা নিয়েই আমি অনেক রেগে গিয়েছিলাম। আমার বন্ধু নোমান তো আপনার বউ বলতে অজ্ঞান। ওকে পুরোই ফাসিয়ে নিয়েছে আপনার বউ। আর ম্যাডাম যে বিবাহিতা সেটাও নোমান জানতোনা। যদিওবা এখন জানে। কিন্তু ম্যাডাম এখনো নোমানকে ছাড়েনি। সে বলেছে আপনি নাকি একজন রে/পি/ষ্ট। সে নাকি আপনার সাথে সুখী নেই। আপনি নাকি তাকে ধ/র্ষ/ণ,,,,”
আরও কিছু বলার আগেই আলভী লাবিবকে আবারও ঘুষি দিয়ে বসে।
“আর একটাও বাজে কথা বললে আমি তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো”
দিহান আলভীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
“তুই ওর উপর চিল্লাচ্ছিস কেনো?”
“ওকে যেতে বল দিহান। নইলে আমি ওকে মে’রেই ফেলবো।”
লাবিব নিজে শার্টের কলার ঠিক করে বলল,
“স্যার আমি জানিনা ম্যাডাম আপনাকে আর নোমানকে কিভাবে একসাথে কন্ট্রোল করছে। আমি যখন ওকে বলতে গেলাম যে ম্যাডাম বিবাহিতা তখন ও এরকমই রিয়েক্ট করেছিলো। আরে ভাই এখানে আমার দোষটা কি? আমি তো জাষ্ট ম্যাডামের আসল রূপটা সামনে আনতে চেয়েছি”
আলভী আর সহ্য করতে পারলোনা চিৎকার করে বলে উঠলো,
“তুই যাবি নাকি আমার হাতেই ম*রবি?”
লাবিব একটু দূরে সরে গিয়ে বলল,
“স্যার আমি তো নোমানের সাথে দেখা করতেই এখানে এসেছি। শুনেছি ও নাকি ওর গার্লফ্রেন্ড মানে ম্যাডামকে নিয়ে এখানেই আসবে। আমি জাস্ট সামনা-সামনি থেকে দেখতে চাই যে ম্যাডাম ঠিক কিভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমার বন্ধুর ব্রেইন ওয়াশ করে”
আলভী চমকে তাকালো,
“অলি এখানে আসবে?”
লাবিব মাথা নাড়িয়ে বলল,
“জ্বি স্যার আপনি চাইলে নিজের চোখেই দেখতে পারেন”
দিহান বুঝতে পারলো এখানে অনেক খারাপ কিছু হতে চলেছে। সে আলভীর হাত ধরে বলল,
“আরে ও যা নয় তাই বলছে তুই ওর কথা বাদ দে। এভি চল, আজকে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। যেতেই হবে, চল প্লিজ”
আলভী দিহানের হাত সরিয়ে দিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল,
“তোর অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে তুই যা। দিহান, ডাক্তার হিসেবে আমার কাজ হচ্ছে জীবন বাচানো তাইনা? কিন্তু আমার কেনো মনে হচ্ছে…আজকে কেউ একজন আমার হাতেই খু*ন হবে?”
কথাটা শুনে দিহান আবারও আলভীর হাত ধরল। রাগে আলভীর শরীর কাপছে,
“প্লিজ এভি, মাথা ঠান্ডা রাখ।”
“হুম আমার মাথা ঠান্ডাই আছে দিহান। আফটার অল আমি ওকে ঠান্ডা মাথায় খু*ন করবো”
দিহান আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু আলভীর তীক্ষ্ণ চাহনির সামনে সে কিছুই বলে উঠতে পারলোনা,
“তুই ওকে বাচাতে আসার মতো ভুল করিস না দিহান, তাহলে ওর বদলে আমি হয়তো তোকেই খু*ন করে ফেলবো। এই পৃথিবীতে বেঈমানরা হচ্ছে একপ্রকার আবর্জনা তাদেরকে ডাস্টবিনে না ফেললে পরিবেশ দূষিত হয়”
দিহান ভয়ার্ত গলায় বলল,
“তুই ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিলেই তো হয়”
দিহানের এই কথাটা শুনে অলির দেওয়া শর্তগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। যা আলভীর ক্ষতস্থানে লবণের কাজ করে,
“সেই রাস্তা ওই মেয়েটা শুরুতেই বন্ধ করেই দিয়েছে। আমি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি ও ওইসব শর্ত কেনো দিয়েছিলো।”
“কোনসব শর্তের কথা বলছিস?”
“বাদ দে, তুই চলে যা। ডিভোর্স দেওয়ার রাস্তা থাকলেও আমি ওকে ডিভোর্স দিতাম না আমি তো অন্য রাস্তায় গিয়ে ওকে একেবারে খু*ন করেই ফেলবো। আমার মনের মৃ*ত্যু ঘটানোর অস্ত্রকে আমি আগেই ডেস্ট্রয় করে ফেলবো।”
দিহানকে চলে যেতে বললেও দিহান আলভীর সাথেই থাকলো। এখানে এই অবস্থায় আলভীকে একা রেখে যাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা।
“ওরা আসছে আপনারা ওইদিকটাতে চলে যান। যেনো ওরা আপনাদেরকে দেখতে না পায়”
লাবিবের কথার উত্তরে দিহান বলে ওঠে,
“ওই আমরা ওখানে গিয়ে লুকিয়ে থাকবো কেনো? আমরা কি চোর নাকি?”
আলভী একটা বিরক্তি সূচক শব্দ উচ্চারণ করে বলল,
“বেশি কথা বললে কিন্তু তোর কপালে দুঃখ আছে। চল ওইদিকে গিয়ে দাড়াই। যদিও আমার মনে হয়না বেশিক্ষণ আমি ওদের রোমান্টিক শো দেখতে পারবো।”
আলভী কিছুক্ষণ থেমে একটা শ্বাস ফেলে হাস্কিস্বরে বললো,
“দিহান আমি ওকে মে*রে ফেলতে নিলে আমাকে আটকাস। আমি ওকে মে*রে নিজের হাত নোংরা করতে চাইনা”
আলভী স্বাভাবিক ভাবে বললেও দিহান বুঝতে পারলো আলভীর ভেতরে অল্রেডি র*রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আলভী আর দিহান কাউন্টারের পাশে লুকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পরেই সেখানে নোমান অলিকে নিয়ে আসে। নোমান অলির হাত ধরে ছিলো।
অলি ক্যাফেতে ঢুকেই আশেপাশে তাকালো। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসছে। নোমান একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল,
“বসুন, না মানে বসো”
অলি হাসার চেষ্টা করে চেয়ারে বসলো। নোমান লাবিবকে দেখিয়ে বলল,
“ও হচ্ছে আমার বন্ধু লাবিব।”
লাবিবকে দেখে অলির চেনাচেনা লাগলো। কিন্তু ঠিক চিনতে পারলোনা, নোমান অলির সামনের চেয়ারে বসেছে আর লাবিব নোমানের পাশের চেয়ারে বসেছে।
“কি খাবে অলি?”
অলি নাবোধক মাথা নাড়ে, নোমান একটা শুষ্ক ঢোক গিলে অলিকে ইশারায় কিছু বলতেই অলি বলে ওঠে,
“আমি নুডলস খাবো”
ওয়েটার নুডলস দিয়ে গেলো। নোমান লাবিবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই অলির সাথে দেখা করতে চেয়েছিলি তাই নিয়ে আসলাম।”
“নোমান আমি ওনাকে চিনি। উনি কার্ডিওলজিস্ট তাসনীম মির্জার ওয়াইফ”
কথাটা শুনে অলি মাথা নিচু করে নিলো। তখনই তার কানে থাকা ব্লুটুথে হুমকির স্বর ভেসে আসে,
—তুই কিন্তু ঠিকঠাক কাজ করছিস না। রাতের থেরাপির কথা ভুলে যাসনি নিশ্চয়ই। ভুলে গেলেও সমস্যা নেই আমি আছি তো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
অলির শরীর হিম হয়ে আসে। মনে হচ্ছে সে যখন তখন জ্ঞান হারাতে পারে। সেই সাথে মনে পড়ে যায় গত রাতের নির্যা*তনের কথা। সেসবের উপর কাল রাত থেকেই সে অভুক্ত। অলি একবার সামনে থাকা নুডলসের দিকে তাকিয়ে সেটা হাতে নিয়ে খেতে লাগলো। নিজের জন্য না হলেও বাচ্চাটার জন্য তাকে খেতেই হবে।
—শুধু খেয়েই যাবি? এতো ক্ষিদে তোর? গু*লি কিন্তু অনেক টেস্টি, খাবি নাকি?
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২৬৫০+
#১৫_বছর_বয়সী_মা (২৮)
#সোফিয়া_সাফা
(সত্যের মুখোমুখি অলি)
—শুধু খেয়েই যাবি? এতো ক্ষিদে তোর? গু*লি কিন্তু অনেক টেস্টি, খাবি নাকি?
ব্লুটুথ থেকে ভেসে আসা বাক্য গুলো শুনে অলির খাওয়া থেমে যায়। সে একগ্লাস পানি পুরোটা খেয়ে ওড়না দিয়ে মুখ মুছে নিলো। তারপর লাবিবের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো,
“আপনি তাসনীম মির্জার কথা বলছেন? আরে সে সবার সামনে কার্ডিওলজিস্ট কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে একটা জানো*য়ার। মেয়ে দেখিলেই তার মাথা ঠিক থাকেনা। আপনি জানেন সে আমার সাথে জোরাজুরি করেছে। আমাকে একা পেয়ে রে/প করেছিলো”
অলির মুখ থেকে কথাগুলো শুনে আলভীর শরীর অবশ হয়ে আসে। অলি অবশ্য জানেনা যে আলভী আশেপাশেই আছে।
“আপনি নিজের স্বামীর বিষয়ে এসব কথা কিভাবে বলছেন?”
অলি কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারেনা। তাকে যা যা বলতে বলা হচ্ছে তাকে সেগুলোই বলতে হবে। অলি আরেকগ্লাস পানি নিয়ে খেতে লাগলো।
“কি হলো বলুন, আপনি নিজের হাজব্যান্ডের ব্যাপারে এসব কিভাবে বলতে পারেন?”
—কি হলো বলছিস না কেনো। ইউ স্লা*ট তোকে আজকে জিন্দা ক*বর দেবো। (ব্লুটুথ)
অলি একটা ঢোক গিলে বললো,
“আমি যা সত্যি সেটাই বলেছি। ওনার সামনেও বলতে পারবো।”
লাবিব নোমানকে বলল,
“শুনলি তো এই মেয়েটা নিজের স্বামীকে নিয়ে কিভাবে কথা বলছে। তুই প্লিজ এই মেয়ের ফাদে পা দিসনা”
কথাটা শুনেই নোমান লাবিবের কলার চেপে ধরল,
“একটাও বাজে কথা বলিস না। অলি শুধু সত্যিটাই বলছে। এখানে ওর তো কোনো দোষ নেই। আমি লোকটাকে দেখেছি। সে অলির সাথে অনেক বাজে বিহেভ করেছিলো। আই এম ড্যাম সিওর যে ওই লোকটা একটা প্রফেশনাল রে/পি/ষ্ট। তুই আমাকে সাহায্য কর অলিকে ওই লোকটার হাত থেকে বাচাতে।”
লাবিব জিজ্ঞেস করলো,
“আমি কিভাবে সাহায্য করবো?”
নোমান শান্তকন্ঠে বলে,
“আমি অলিকে বিয়ে করতে চাই”
লাবিব নিজের কলার ছাড়িয়ে বলল,
“পা*গল নাকি? আরেক ব্যাডার বউকে তুই কিভাবে বিয়ে করবি?”
নোমান অলির উদ্দেশ্যে বলল,
“অলি লোকটাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। তাইনা অলি?”
অলি উপরনিচ মাথা নাড়ালো।
“হুম আমি ওনাকে…ডিভোর্স দিয়ে দেবো।”
লাবিব বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল,
“তোদের যা ইচ্ছা কর। আমি এসবের মধ্যে নেই। তাসনীম মির্জাকে আমি নিজের ভাইয়ের চোখে দেখি তার সাথে বেঈমানী করতে পারবোনা”
“তার জন্য তুই বন্ধুকে সাহায্য করবিনা?”
“না করবোনা। তুই থাক তোর মতো। আজকের পর থেকে আমাদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক থাকলোনা।”
লাবিব ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়। নোমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে অলির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নেয়,
“তুমি চিন্তা করোনা অলি। আমি তোমাকে সেই নরক থেকে বের করবোই করবো।”
অলি হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু নোমান আরও শক্ত করেই ধরলো। আলভীর মাঝে কোনো ভাবাবেগ নেই। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। যেনো কোনো পাথরের মূর্তি। অলির কানে ভেসে এলো,
—এবার সেটা কর, (ব্লুটুথ)
অলি একটা শুষ্ক ঢোক গিলে নোমানের হাতটা দুহাতে চেপে ধরে ঠোঁটের নিকট আনলো তারপর একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে বলল,
“আই লাভ ইউ”
নোমান হাল্কা হেসে বলল,
“আই লাভ ইউ টু”
নোমান এবার নুডলসের প্লেটটা অলির দিকে এগিয়ে দিলো।
“পুরোটা খেয়ে নেও”
অলি মাথা নেড়ে খেতে লাগলো। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে খেতে গিয়ে খাবার গলায় আটকে যায়। অলি টেবিলের উপর তাকিয়ে দেখলো পানি শেষ হয়ে গেছে।
“প,,,পানি”
নোমান পানি আনার জন্য উঠে দাড়ালো কিন্তু তার আগেই কেউ একজন অলির দিকে পানি এগিয়ে দেয়। অলি পানিটা খেয়ে লোকটার দিকে না তাকিয়েই বললো,
“থ্যাংক ইউ”
“থ্যাংক ইউ টু মিসেস অলি তাসনীম মির্জা। এই আলভী তাসনীম মির্জার জীবন টা হেল করে দেওয়ার জন্য”
আকষ্মিক কারো গম্ভীর তীক্ষ্ণ কন্ঠে অলির অন্তরআত্মা কেপে ওঠে। অলি আর লোকটার দিকে তাকানোর সাহসটুকুও পেলোনা।
“আপনার বিয়ে হবে শুনলাম। আমাকে দাওয়াত দেবেন না… মিসেস অলি তাসনীম মির্জা?”
কথাটা শুনে অলির শরীর শিউরে উঠলো। নোমান নিম্নস্বরে বললো,
“মিস্টার তাসনীম মির্জা। এখানে বসে কোনোপ্রকার সিনক্রিয়েট করবেন না। আপনি অলির এক্স হাজব্যান্ড বলে আমি কিন্তু আপনাকে ছেড়ে দেবোনা।”
আলভী একহাত টেবিলের উপর রেখে তীক্ষ্ণ চোখে নোমানের দিকে তাকায়,
“এক্স? আমি ওর এক্স হাজব্যান্ড? বাহঃ ভালোই বললেন। কিন্তু আমি ঠিক কখন থেকে ওর এক্স হয়েছি বলতে পারবেন? আমার না—ঠিক মনে পড়ছেনা। অলি আপনিই বলুন না আমি কবে থেকে আপনার এক্স হয়েছি?”
অলিকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আলভী নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, ঠাস করে অলির গালে থাপ্পড় দিয়ে বসে। সাথে সাথেই নোমান আলভীর শার্টের কলার খামচে ধরে,
“আপনার সাহস হয় কি করে আমার সামনে অলির গায়ে হাত তোলার?”
“আর তোর সাহস হয় কি করে আমাকে এই প্রশ্ন করার?”
আলভী উল্টো দিকে ঘুরে নোমানকে মা*রতে লাগলো। অলি চুপচাপ বসে আছে। আলভী নোমানকে মে*রে ফ্লোরের উপর ফেলে দিয়ে এগিয়ে আসে অলির দিকে।
“চুপ করে বসে আছিস কেনো? বল কবে থেকে আমি তোর এক্স হয়েছি?”
আলভী অলির দিকে ঝুকে অলির গাল চেপে ধরে রাগীকন্ঠে বলল।
“তুই আমাকে মে*রে ফেলার আগেই আমি তোকে মে*রে ফেলবো”
আলভী জোর করে অলিকে তুলে নিজের কাছে টেনে নিলো। এক হাত গলিয়ে দিলো অলির চুলের ভাজে আরেক হাত দিয়ে অলির কোমড় চেপে ধরলো,
“ছেড়ে দিন আমাকে। আমি ডিভোর্স দিয়ে দেবো আপনাকে। আর কোনো কিছুই চাইনা আমার। ছেড়ে দিন”
“হিশশশ…হাহ কি বলছিলি জানো? আমি একজন রে/পি/স্ট? আমি জোর করেছিলাম তোর সাথে?”
অলি কম্পিতস্বরে বলল,
“হ্যাঁ তো? মিথ্যা কি বলেছি আমি?”
আলভী হাসতে লাগলো যেই হাসি ছিলো ভয়ংকর।
“মেয়ে দেখলেই আমার মাথা ঠিক থাকেনা?”
অলি আলভীকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু একচুলো সরাতে পারলোনা।
“এরকম করছিস কেনো? তোর সব সত্য কথার মধ্যে এই মিথ্যা কথাটা আমি মানতে পারলাম না পয়জনবি। হ্যাঁ তোকে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা। এটা সত্যি, কিন্তু আর কাকে দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলোনা?”
আলভী কিছুক্ষণ স্থির চোখে অলির দিকে তাকিয়ে রইলো। অলির চেহারাটা আজকে ফ্যাকাসে লাগছে। আলভী হাস্কিস্বরে বলল,
“তুই আমাকে মে*রে ফেলতে চাস তাইনা?”
আলভী থামল, অলিকে উপরনিচ পরখ করে ফের বলল,
“তুই নিজেই তো এক্সপায়ার্ড হয়ে—হানি থেকে পয়জন হয়ে গেছিস। আমি তো তোকে খেয়েই ম*রতে চাই পয়জনবি। খাবো তোকে?”
আলভীর কথা শুনে অলির মাথা ঘুরে গেলো। সে নিজ থেকেই বলে উঠল,
“ছাড়ুন আমাকে। শর্তের কথা ভুলে গেছেন দেখছি”
কথাটা শোনামাত্রই আলভী অলিকে ছেড়ে দিলো।
“ডিভোর্সের কাগজটা পাঠিয়ে দিস। অপেক্ষা করবো”
আলভী কোনোদিকে না তাকিয়ে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেলো। দিহানও তার পিছু পিছু চলে যায়। অলি চেষ্টা করেও আলভীকে কোনো কিছুই বোঝাতে পারেনি। কারণ তাতে আলভীও বিপদে পড়তে পারে। নোমান ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা র*ক্তটুকু মুছে উঠে দাড়ালো। অলি তার সামনে গিয়ে হাতজোড় করে বললো,
“আপনি প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। কেনো করছেন এমন, কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার?”
নোমানের চেহারার কাঠামো পুরোই বদলে দিয়েছে আলভী, নোমান উত্তরে কিছু না বলে ইশারা করে পেছনে তাকাতে বললো। অলি পেছনে তাকিয়ে দেখলো ৩-৪ টা বডিগার্ড টাইপের লোক তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। নোমান হাতের ইশারা দিয়ে চুপ থাকতে বললো।
“আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। আমার মা হসপিটালে আছে, তার এখন কি অবস্থা সেটাও জানিনা। আমাকে প্লিজ ছেড়ে দিন”
নোমান ইশারা দিয়ে বোঝালো অলির কানে থাকা ব্লুটুথের মাধ্যমে কেউ একজন সব কথাই শুনছে তাই অলির চুপ থাকা উচিৎ। অলি ইশারা বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলো। সেই ৩-৪ জন লোক কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে অলি আর নোমানকে ইশারায় ডাক দেয়। অলি যেতে না চাইলেও নোমান জোর করে অলিকে নিয়ে একটা কালো রঙের গাড়িতে উঠে বসলো।
,
ঘড়ির কাটা এগারোটা ছুইছুই। আলভী নিজের রুমে বসে ড্রিংকস করছে। যদিওবা সে আগে প্রায় সময়ই ড্রিংকস করতো কিন্তু আজ থেকে ৩মাস আগের ঘটনাটার পর আলভী আর এলকোহল ছুয়েও দেখেনি। কিন্তু ৩ মাস পর আজকে বাড়িতে আসার সময় সে এগুলো নিয়ে এসেছে। যদিওবা সে এখনো পুরোপুরি ভাবে বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি। অলির মতো এতো কম বয়সী একটা মেয়ের দ্বারা কিভাবে এসব সম্ভব? আলভীর জন্য তার একটুও খারাপ লাগলোনা? ড্রিংকস করতে করতে একপর্যায়ে আলভী ব্ল্যাকআউট হয়ে যায়।
—
অলিকে একটা রুমে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে। তার চুলগুলো এলোমেলো গালে অসংখ্য চড়ের দাগ। থাপ্পড়ের তীব্রতায় তার গাল আর ঠোঁট ফেটে গেছে। যদিওবা গতরাতে তাকে মার*ধর করা হয়নি। শুধুমাত্র অন্ধকার রুমে আটকে রাখাই হয়েছিলো। কিন্তু আজকে একটা হাতির মতো লোক এসে তাকে গুনে গুনে ৩০ টা থাপ্পড় মে*রেছে। কিছুক্ষণ পর নোমান এসে অলির সামনে বসলো। অলির মাঝে চেতনা তো আছে কিন্তু কোনো কিছু বলার মতো শক্তি নেই। অলি গতকাল হসপিটালে বোরকা পড়েই গিয়েছিলো। কিন্তু নোমানের সাথে ক্যাফেতে যাওয়ার সময় তাকে একটা থ্রিপিস দেওয়া হয়েছিলো—যেটা এখনো তার পরণেই আছে। নোমান অলির সামনে থাকা টেবিলের উপর একটা ফোন এনে রাখল। অলি কোনোপ্রকার প্রতিক্রিয়া করলোনা। তার মাথা একদিকে হেলে রয়েছে, ঘেমে যাওয়ার কারণে চুলগুলো মুখের সাথে লেপ্টে আছে। হঠাৎ করেই ফোনের অপর পাশ থেকে একটা হাসির শব্দ ভেসে আসে। অলি জানে এই লোকটা হচ্ছে রিফাত। অলির এখনো সেই রাতের কথা মনে আছে যেই রাতে রিফাত তাকে ভুংভাং বুঝিয়ে আলভীর রুমে আটকে দিয়েছিলো। সবাইকে ভুলে গেলেও এই লোকটার কন্ঠস্বর কখনো ভুলতে পারবেনা।
—ভেবেছিলাম এভিকে সেদিন ড্রাংগস দিয়ে তোকে রে/প করতে বাধ্য করার পর এভি আর তোর দিকে ফিরেও তাকেবেনা। কিন্তু সেটা হলোনা।
কথাটা যেন অলির কানে তীব্র আন্দোলন তুললো। সে নিভু নিভু চোখে সামনের টেবিলের উপরে রাখা ফোনটার দিকে তাকালো।
—কিন্তু এভি তো সেই ঘটনার পর তোকে পাওয়ার জন্য আরও বেশি ডেস্পারেট হয়ে উঠলো।
লোকটার কন্ঠ শুনে অলির প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে।
—জানিস তো আমার মাঝে মাঝেই ইচ্ছা হয় এভি কিসের জন্য এতো বেশি ডেস্পারেট সেটা টেস্ট করে দেখতে। বাট ইউ নো? আমি আবার কারো উচ্ছিষ্ট খাইনা।
লোকটা বিকট শব্দে হেসে উঠলো,
—আমি এখনো বুঝতে পারছিনা যে এতো কিছু করার পরেও এভি তোর কথা এখনো কেনো ভাবছে? ট্রাস্ট মি, ওর জায়গায় আমি থাকলে কখন আরেকটা বিয়ে করে নিতাম। ওর উপরে আমার প্রচন্ড রাগ উঠছে জানিস তো। ইচ্ছা করছে ওর হার্টটা খুলে এনে পরীক্ষা করে দেখতে—যে সেখান থেকে কেনো তোকে এখনো বের করতে পারছিনা। কিন্তু সেটাও করতে পারবোনা। কারণ এভির হার্ট খুলে ফেললে ও তো ম*রে যাবে। আর ওকে তো মে*রে ফেলতেও পারবোনা।
অলি সবগুলো কথা মন দিয়ে শোনার পর বহু কষ্টে মাথা সোজা করে বসলো। তারপর কান্নাজরিত কন্ঠে নিম্নস্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“উ,,,উনি আমাকে ইচ্ছা করে রে/প করেননি?”
ফোনের ওপাশে থাকা রিফাত আবারও হেসে ওঠে,
—আরে বোকা মেয়ে ও তো তোকে ভালোবাসতো। ও কেনো তোকে রে/প করতে চাইবে? তাছাড়া এভি অনেক মহান ছিল কোনো মেয়ের দিকেই বান্দা ফিরে তাকাতো না। আরে আমার তো ওকে হি*জরা বলেই মনে হতো। বাট ও তো একরাতেই তোকে প্রেগন্যান্ট বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
রিফাতের কথা শুনে অলির গলা শুকিয়ে এলো। তার মানে রিফাতও জানে যে অলি প্রেগন্যান্ট। এটা অলির জন্য মোটেও ভালো খবর নয়। অলি প্রেগন্যান্ট এটা শুনে নোমান আড়চোখে একবার অলির দিকে তাকায়। অলি ঠোঁট চেপে কেদে ওঠে,
“প্লিজ আ,,,আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাদের কি ক্ষতি করেছি?”
অলির আওয়াজ বড্ড ক্ষীণ শোনালো যেন ফিসফিসিয়ে কথা বলছে,
—তুই আমার কোনো ক্ষতিই করিস নি তবে একজনের অনেক বড় ক্ষতি করেছিস। আর সে আমার পার্টনার। তোকে ছেড়ে দেবো তবে তার আগে তুই ডিভোর্স পেপারে সাইন করবি আর এভির বাচ্চাটাকে এবো*রশন করে ফেলবি। ওকে?
অলি কান্নার মাঝেই বলে ওঠে,
“না,,,না প্লিজ। আমি আমার বাবুকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো। কক্ষনো তার কাছে ফিরে যাবোনা। আমার বাবুটার কোনো ক্ষতি করবেন না।”
—নাহ আমার পার্টনার বলেছে বাচ্চাটাকে বাচিয়ে রাখা যাবেনা। তো সেই কথামতোই কাজ হবে। বেশি ত্যাড়ামি করলে বাচ্চার সাথে সাথে তোকেও উপরে পাঠিয়ে দেবো।
ফোনের ওপাশে থাকা রিফাত নোমানের উদ্দেশ্যে বলল,
—নোমান ডিভোর্সের কাগজটায় ওকে দিয়ে সই করিয়ে নে।
নোমান মাথা নেড়ে রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় কিছুক্ষণ পর হাতে একটা কাগজ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। অলি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। নোমান অলির হাতের বাধন খুলে একটা কলম ধরিয়ে দেয়,
“এখানে সাইন করে দেও”
অলি শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজের হাত সরিয়ে নেয়,
“আ,,,আমি ওনাকে ডিভোর্স দেবোনা। আপনাদের যা ইচ্ছা করুন।”
অলির তেজি কন্ঠ শুনে ফোনের ওপাশে থাকা রিফাত ধমকে উঠলো,
—চুপচাপ সাইন কর, নইলে তোকে আবারও রুমে আটকে রাখা হবে।
অলি হেসে উঠলো,
“আমি আর একাকিত্বকে ভয় পাইনা। আপনাদের যা ইচ্ছা তাই করুন। আমি ম*রে যাবো কিন্তু সাইন করবোনা।”
—তোর ম*রে যাওয়ার অনেক শখ তাইনা?
অলি ছলছল চোখে ফোনের দিকে তাকাল,
“আমার তো অনেক আগেই ম*রে যাওয়ার কথা ছিলো। হয়তো আজকের দিনটা দেখার জন্যই বেচে ছিলাম। সেদিন ম*রে গেলে আলভী তাসনীম মির্জার প্রতি ঘৃণা নিয়ে ম*রতাম। কিন্তু আজকে ম*রবো নিজের ভাগ্যের প্রতি ঘৃণা নিয়ে। এটা জেনে খুশি হলাম যে সে আমাকে ইচ্ছাকৃত রে/প করেনি। অবাক হলাম এটা শুনে যে সে নাকি আমাকে শুরু থেকেই ভালোবাসতো। মুগ্ধ হলাম এটা শুনে যে সে আমার আগে পরে অন্য কোনো নারীকে স্পর্শ করেনি। ভাগ্যের প্রতি এক আকাশ পরিমাণ ঘৃণা থাকলেও আমার কোনো আফসোস নেই। তবে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমি আলভী তাসনীম মির্জার স্ত্রী হিসেবে থাকতে চাই। তাই মে*রে ফেললেও আমি ওই পেপারে সাইন করবোনা।”
রিফাত চিৎকার করে উঠল,
—নোমান ২জন লোককে ডেকে এনে ওকে মে*রে ফেল।
নোমান কিছুটা ঘাবড়ে গেল। কিন্তু অলির মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এমন সময় ফোনের ওপাশে থাকা রিফাতের হাত থেকে আরেকজন লোক ফোনটা টেনে নিয়ে যায়। তারপর রুক্ষ কন্ঠে রিফাতকে বলে,
—ও ডিভোর্স পেপারে সাইন না করা পর্যন্ত ওকে মা*রবি না। ও যদি ডিভোর্স পেপারে সাইন না করে তাহলে এভি কখনোই ২য় বিয়েতে রাজি হবেনা। আমি এভিকে চিনি, এভি সারাজীবন ওর জন্যই অপেক্ষা করবে।
এই লোকটার কন্ঠ শুনে অলির চোখ বড়বড় হয়ে যায়। তার মনে হচ্ছে এই কন্ঠটাও সে এর আগে শুনেছে। কিন্তু সে পুরোপুরি ভাবে বুঝতে পারছেনা যে লোকটা আসলে কে? কারণ লোকটার বাচনভঙ্গি অন্যরকম,
*তার মানে ওই পেপারে সাইন না করা পর্যন্ত আমাকে ওরা মা*রবে না। এটাই আমার কাছে একমাত্র সুযোগ*
কথাগুলো ভেবেই অলি মুখে হাসি টেনে বলল,
“আমি এই পেপার গুলোতে সাইন করে দিতাম কিন্তু আপনারা আমার গায়ে হাত তুলেছেন, টর্চার করেছেন। সেই জন্যই আমি এখানে সাইন করবোনা। একটা কথা শুনে রাখুন আমাকে টর্চার করে কখনোই এই পেপারে সাইন করাতে পারবেন না”
২য় লোকটা ফোনের ওপাশ থেকে বলল,
—দেখা যাক তুই কতোক্ষণ টর্চার সহ্য করতে পারিস। পিঠের উপর যখন স্পেশাল ডোজ পড়বে তখন সুড়সুড় করে পেপারে সাইন করে দিবি।
নোমান কিছু একটা ভেবে বলে উঠল,
“বস আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন আমি তো আছিই। আমি ওকে দিয়ে আজকে রাতের মধ্যেই পেপার গুলোতে সাইন করিয়ে নেবো। আপনারা কেউ এই নিয়ে ভাববেন না।”
—হুম সেটা তোর জন্যও ভালো হবে। ঠিকঠাক কাজ না হলে তুইও কিন্তু টাকাগুলো পাবিনা। কাল সকালের মধ্যে ওকে দিয়ে পেপার গুলোতে সাইন করিয়ে রাখবি। তারপর ওর ম*রার শখটাও পূরণ করে দিবি। ওকে এমন স্পেশাল ডোজ দিয়ে মা*রবি যেন লা*শটাও কেউ কখনো খুঁজে না পায়।
“ওকে বস”
টুট টুট আওয়াজে কলটা কেটে যায়। অলি শান্তচোখে নোমানের দিকেই তাকিয়ে আছে। লোকটা যে এতোটা জঘন্য সেটা সে ভাবতেও পারেনি।
“অলি শোনো। পেপারগুলোতে সাইন করে দেও।”
অলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আমাকে ছেড়ে দিন।”
“আমি ছেড়ে দিতে পারলে অবশ্যই দিতাম। আমি নিজ থেকে তোমাকে এখানে আনিনি অলি। ওনারা আমাকে যা করতে বলবে আমাকে তাই করতে হবে। তুমি হয়তো বিশ্বাস করবেনা কিন্তু আমি তোমার ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। আমাকে যখন যা করতে বলা হয়েছে, আমি শুধু তাই করেছি।”
অলি ধীরকন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“প্রথম থেকেই আপনি আমার সাথে অভিনয় করেছেন তাইনা?”
নোমান হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বলল,
“তোমাকে এক্সিডেন্ট থেকে বাচানো বাদে সবকিছুই আমি ওনাদের কথামতো করেছিলাম।”
“এক্সিডেন্ট আপনাদের প্ল্যানের বাইরে ছিলো?”
“আমাদের প্ল্যান নয়, সবকিছুই শুধুমাত্র ওনাদের প্ল্যান। আমি শুধুমাত্র ওনাদের কথামতো কাজ করেছিলাম। এমনকি তোমার নামটাও ওনারা আমাকে বলেনি”
অলি সবকিছু শুনে নিজের পেটের উপর হাত রেখে বলল,
“আমার বাবুকে আমি বাচাতে চাই।”
“তুমি সত্যিই প্রেগন্যান্ট?”
অলি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল,
“আমাকে অন্তত হেল্প করুন এখান থেকে বের হতে।”
নোমান একটা শ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমি পারবোনা অলি। ওনারা আমাকে টাকা দেবে। আর সত্যি বলতে টাকা গুলো আমার অনেক প্রয়োজন।”
অলি মাথা তুলে নোমানের দিকে স্থির চাহনি নিক্ষেপ করল,
“আপনি টাকা দিয়ে কি করবেন?”
“আমি সেদিন তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম যে আমার নানু মা*রা গেছে। আসলে আমার নানু মা*রা যায়নি। সে বেচে আছে কিন্তু…”
তার কণ্ঠ ভারী হয়ে এল।
“…উনার হার্ট ফেইল করেছে, অলি। এখন মাত্র ২৫% কাজ করছে। ডাক্তার বলেছে—অপারেশন না করালে…বেশি দিন বাচবেন না।”
নোমান চোখ নামিয়ে নিল।
“বাইপাস সার্জারি করতে হবে… ৫ লাখ টাকার উপরে খরচ। আমি ল স্টুডেন্ট, LLB করছি। সেই সাথে একটা ছোটো খাটো চাকরি করি। তার উপরে আমার বাবা- মা নেই। আমি ছোটো থাকতেই তারা একটা এক্সিডেন্টে মা*রা গেছেন। নানু ছাড়া আমার আপন বলতে কেউ নেই। টাকা গুলো আমার খুব প্রয়োজন অলি। আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবোনা।”
অলি মনোযোগ দিয়ে নোমানের কথাগুলো শুনলো।
“ওনারা আপনাকে কতো টাকা দেবে?”
অলির স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে নোমান কিছুটা অবাক হয়েছে। এই রকম পরিস্থিতিতেও মেয়েটা এতোটা স্বাভাবিক কিভাবে?
“বলুন…আমাকে খু*ন করার জন্য ওনারা কতো টাকা দেবে?”
“৫ লাখ টাকার পুরোটাই দেবে”
অলি মৃদু হাসলো,
“আমি আপনাকে ১০ লক্ষ টাকা দেবো। আমাকে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করুন।”
নোমান অলির কথা বিশ্বাস করতে পারলোনা। সে যতদূর জানে অলির ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড—অলিরা ধনী নয়।
“অলি, তুমি টাকা পাবে কোথায়?”
“সেটা আপনার না জানলেও চলবে।”
নোমান একটা শুষ্ক ঢোক গিলে বলল,
“আমি তোমাকে বিশ্বাস করবো কিভাবে? যে তুমি আমাকে সত্যিই টাকা দেবে?”
অলি নিজের পেটের উপর হাত রেখে বলল,
“আমি আমার বাবুকে ছুয়ে বলছি টাকাগুলো দেবো আপনাকে। প্লিজ সাহায্য করুন”
অলির চেহারা দেখে নোমানের ভীষণ মায়া লাগছে। নোমান অলির কথা বিশ্বাস করে নিলো।
“আমি গ্যারান্টি দিতে পারছিনা। তবে তোমাকে এখান থেকে বের করতে আমি সর্বোচ্চ সাহায্য করবো।”
অলি বসা থেকে উঠে দাড়ালো। এলোমেলো চুলগুলো হাতখোপা করে ওড়নাটা মাথায় প্যাচিয়ে নিলো। কয়েকবার দোআ ইউনূস পড়ে দরজার সামনে এসে বলল,
“আপনি শুধু আমার কথামতো কাজ করুন”
নোমান মাথা নেড়ে অলির সামনে এসে দাড়ালো। অলি ফের বলল,
“বাইরে গিয়ে দেখে আসুন আশেপাশে মোট কতোজন আছে।”
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২৬০০+