১৫ বছর বয়সী মা পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
25

#১৫_বছর_বয়সী_মা (৪০)
#সোফিয়া_সাফা

“আমার কোলে বসার জন্য ট্যাক্স কি তোমার ছেলে দেবে নাকি তুমি দেবে?”

আলভীর কথা শুনে অলি অবাক চোখে আলভীর দিকে তাকায়। আলভী মুখে কিছু না বলে অলির ঠোঁটে আলতো চুমু একে দেয়। অলি হতভম্ব হয়ে আলভীর দিকে তাকিয়ে রইলো। তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলভী ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“কি? আগামী কালকের ট্যাক্স ও কি এখনই দিতে চাইছো নাকি?”

কথাটা শুনে অলি তড়িঘড়ি করে আলভীর কোল থেকে উঠে দাঁড়ায়। দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় ড্রেসিং টেবিলের দিকে।
,

আলভী কার ড্রাইভ করছে। পাশের সিটেই অলি বসে আছে, দৃষ্টি বাইরে নিবদ্ধ। হঠাৎ করেই অলি বলে ওঠে,
“গাড়িটা একটা ব্যাংকের সামনে থামান একটু।”

অলির কথায় আলভী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই অলি ফের বলে ওঠে,
“বলেছিলাম না নোমান ভাইয়া ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমাকে পালাতে সাহায্য করেছিলো। তো তাকে টাকা গুলো দিতে হবেনা?”

আলভী পুনরায় সামনের দিকে ফোকাস করে বলল,
“আমি দিয়ে দেবো। সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা।”

“আপনি তো আগেই আমাকে অনেক গুলো টাকা দিয়েছেন।”

“হু, তো?”

“নোমান ভাইয়াকে টাকাগুলো আমিই দিতে চাইছি।”

“দেখো অলি, বললাম তো আমি দিয়ে দেবো।”

আলভীর কথায় অলি গাল ফুলিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। টাকা গুলো সে দিলে কি হবে? যদি আলভী তাকে টাকা গুলো খরচই করতে না দেয় তাহলে টাকা গুলো দিয়েছেই বা কেনো?
“আপনি টাকা গুলো আমাকে দিয়েছিলেন যাতে আমাকে কারো মুখাপেক্ষী হতে না হয়। কিন্তু আপনি তো আমাকে টাকা গুলো খরচই করতে দেবেন না বলে মনে হচ্ছে।”

আলভী শান্ত কন্ঠে বলল,
“অবশ্যই খরচ করবে, যখন আমি থাকবো না তখন।”

কথাটা শুনে অলি হকচকিয়ে আলভীর পানে তাকায়। তবে সে কিছু বলার আগেই আলভী গাড়িটা ব্রেক করে,
“নামুন ম্যাডাম, চলে এসেছি।”

আলভী নেমে গেল। তারপর ঘুরে এসে অলিকেও নামতে সাহায্য করলো। কিন্তু অলি এখনো আলভীর বলা কথাটা নিয়েই ভাবছে। আলভী অলিকে নিয়ে একটা টেবিলে বসে বললো,
“কি খাবে?”

হঠাৎ এহেন প্রশ্নে অলি চমকিত নয়নে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো তারা হসপিটালে না গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে,
“এখানে কেনো?”

আলভী মেন্যু কার্ড হাতে নিয়ে তাতে চোখ বুলায়,
“ব্রেকফাস্ট করোনি, ভুলে গেছো?”

অলি চুপ করে থাকলো। কিছুক্ষণ আগেও মনে ছিলো কিন্তু আলভীর সেই কথাটা শুনে সে কিছুক্ষণের জন্য সবকিছুই ভুলে গিয়েছিলো। আচ্ছা আলভী এভাবে কথাটা না বললেও তো পারতো, তাইনা? আলভী নাহয় বলেছেই—অলির কেনো এতো খারাপ লাগছে?
“কি হলো? তারাতাড়ি করো। সময় নেই।”

অলি ফোস করে একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“পাস্তা খাবো।”

আলভী ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার করলো। এরই মাঝে অলি বলে ওঠে,
“আপনিও কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন?”

আলভীর কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো,
“আমি কোথাও যাচ্ছিনা অলি। তবে পরিস্থিতি কখন কিরকম হয় তাতো বলা যায়না তাইনা?”

অলি আচমকাই আলভীর টেবিলের উপর রাখা হাতটা ধরে অসহায় কন্ঠে বলতে শুরু করলো,
“আমাকে সবাই ছেড়ে গেছে। আপনি আমাকে কখনও ছেড়ে যাবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে পেয়ে নিজেকে সামলাতে পেরেছি। আপনিও ছেড়ে গেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো। আমার জীবনে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা। আমি হয়ে যাবো আশ্রয়হীন, অস্ত্বিত্বহীন।”

আলভী অলির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
“আমি সবকিছু ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম হানিবি শুধু তোমার জন্যই ফিরে এসেছি। আমৃত্যু তোমার জন্যই ফিরে আসবো। পরিস্থিতির চাপে পথ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু আমার লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য একমাত্র তুমি অবধি পৌছানো। জীবনের যেই রাস্তা ধরেই হাটিনা কেনো শেষ অবধি আমি বারবার—হাজার বার তোমার কাছেই ফিরে আসবো। শুধু তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কোরো।”

অলি মৃদু হাসলো। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। এরই মাঝে ওয়েটার খাবার নিয়ে আসে। অলি খুশিমনে খাবার খাচ্ছে, তাকে খেতে দেখে আলভীও স্যান্ডউইচে একটা বাইট দিতেই যাবে তখনই সে এমন কিছু দেখলো যা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।
সে স্যান্ডউইচটি আলগোছে পুনরায় টেবিলের উপর রেখে রেস্টুরেন্টের দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো। অলি আনমনে খেয়েই যাচ্ছে, কিছুক্ষণ পর আলভীর দিকে তাকাতেই তার ভ্রু কুচকে আসে। আলভীকে একভাবে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অলি নিজেও পেছনের দিকে ঘুরে তাকাতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
ঊর্মিলা আর দিহান অন্য একটা টেবিলে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে অলি হা করে তাকিয়ে রইলো। কয়েক সেকেন্ড পর সে আবারও আলভীর দিকে তাকিয়ে দেখলো আলভী ভয়ানক দৃষ্টিতে তাদের দিকেই আছে। তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। চোখ দুটোতেও রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। অলি একটা শুষ্ক ঢোক গিলে বলল,
“আমরা হয়তো ভুল দেখছি। আপনি প্লিজ শান্ত হোন।”

আলভী তড়াক করে হাত দিয়ে টেবিলে উপর ঠাস করে বাড়ি দিতেই চারদিকে একটা বিকট শব্দ ছড়িয়ে পড়ে। ঊর্মিলা আর দিহান শব্দের উৎস খুজতে আশেপাশে তাকাতেই আলভীকে আবিষ্কার করলো। ঊর্মিলা ফট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আলভী বিদ্যুতের গতিতে তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে দিহানের শার্টের কলার চেপে ধরে,
“এই তুই ওর সাথে কি করছিস?”

আলভীর রক্তিম চেহারাটা দেখে দিহান কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নরম কন্ঠে বলে,
“এভি প্লিজ এখানে সিন ক্রিয়েট করিস না। আমাকে ছাড়, আমি তোকে এক্সপ্লেইন করছি।”

অলি এগিয়ে এসে আলভীর শার্ট ধরে টানতে লাগলো। আলভী অলির দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল,
“তুমি সবাইকে বাচাতে চলে আসো কেনো? আজব? যখন দেখো আমার মাথা ঠান্ডা আছে তখন তো আমার কাছেও আসোনা। কিন্তু যখন দেখো আমি রেগে আছি তখন এমন অদ্ভুত বিহেভ করো কেনো? তুমি কি চাও? আমি ওকে ছেড়ে তোমার উপরে রাগ ঝাড়ি?”

আশেপাশের সবাই আলভীর চিল্লিয়ে বলা কথাগুলো শুনে মুখ চেপে হেসে ওঠে। এদিকে অলি তো লজ্জায় জবুথবু হয়ে আলভীর শার্টের কোণা ছেড়ে দেয়। ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। অন্যদিকে অলিকে লজ্জা পেতে দেখে আলভীর রাগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। সে একটা বিরক্তির শ্বাস ফেলে ঊর্মিলাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। যাওয়ার আগে দিহানের উদ্দেশ্যে কড়া ভাবে বলল,
“কাজটা তুই ঠিক করলিনা দিহান, তোকে আমি দেখে নেবো।”

আলভী একমনে গাড়ি চালাচ্ছে পাশের সিটে অলি আর ব্যাকসিটে ঊর্মিলা বসে আছে। ঊর্মিলার গলা শুকিয়ে আসছে। আলভী দিহানকে আর তাকে একসাথে দেখে ফেলেছে, এবার কি হবে? তার মা যদি একবার এই ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে তো তাকে খু*ন করে ফেলবে। অলি একবার আলভীর দিকে তাকাচ্ছে তো একবার পেছনে ঘুরে ঊর্মিলার দিকে তাকাচ্ছে।
হসপিটালের সামনের পার্কিং লটে গাড়ি থামিয়ে আলভী গাড়ি থেকে নেমে যায়। তারপর অলির হাত ধরে তাকে বের করে কোনো কথা না বলেই গাড়ির দরজা লক করে দেয়। ঊর্মিলা ভীত স্বরে বলে ওঠে,
“ভাইয়া আমাকে বের হতে দে। কার লক করে দিলি কেনো?”

আলভী কোনো উত্তর না দিয়ে উল্টো ঘুরে হাটা ধরতেই অলি পেছন থেকে তার শার্টের কোনা টেনে ধরলো,
“আপুকে রেখে যাবেন না প্লিজ। তাকে বেরোতে দিন।”

আলভী বিরক্ত হয়ে অলিকে কোলে তুলে নিলো। তারপর সোজা হসপিটালের ভেতরে চলে গেলো। অলি নামার জন্য হাতপা ছুড়ছে কিন্তু আলভী বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করছেনা। এদিকে আলভীকে এভাবে প্রবেশ করতে দেখে ডাক্তার থেকে নার্স, প্যাশেন্ট সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। তাদের চাহনি দেখে অলি ছোটার বৃথা চেষ্টা না করে, অচেতন হবার ভান ধরে চোখ বুজলো। ফলস্বরূপ কয়েকজন ওয়ার্ডবয় এগিয়ে এসে বলল,
“স্যার ওনার কি হয়েছে? স্ট্রেচার আনবো? অবস্থা তো বেশ ক্রিটিক্যাল মনে হচ্ছে।”

আলভী দাত কিড়মিড় করে বলল,
“ওকে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। যেটা শুধু আমিই দিতে পারবো। আপনারা সরুন।”

তারা সরে যেতেই আলভী অলিকে নিয়ে নিজের পার্সোনাল রুমে আসলো।
“আর ভান করতে হবেনা। এসে গেছি আমরা। চোখ খোলো নয়তো সত্যি সত্যিই স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দেবো।”

অলি ফট করেই চোখ খুলে ফেললো। আলভী অলিকে নামিয়ে দিতেই অলি বলে ওঠে,
“আপনি তো ভারী নির্লজ্জ। অতোগুলো লোকের সামনে আমাকে কোলে তুললেন কেনো? আমার সাথে কি পা নেই? আমি কি হেটে আসতে পারতাম না?”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“তুমি চুপচাপ নিজের পায়ে হেঁটে এলে, আমাকে নির্লজ্জ হতে হতো না। তুমিই আমাকে নির্লজ্জ বানাচ্ছো হানিবি। তাই আমার এই নির্লজ্জতা তো তোমাকেই সহ্য করতে হবে।”

আলভীর কথা শুনে অলি না চাইতেও লজ্জা পেয়ে যায়। আর আলভী এই জিনিস টাই ইদানীং ভীষণ ইনজয় করে। অলি কথা ঘুরিয়ে বলল,
“আপনি আপুকে রেখে এলেন কেনো? সে গাড়ির ভেতর একা একা কি করবে?”

“এই শাস্তিটা ওর জন্য খুবই কম। ওকে রূপসার মতো থাপড়ানো উচিৎ ছিলো। আমি তো ভাবতেই পারছিনা দিহানের বাচ্চাটাও আমার সাথে বেঈমানী করলো? ওর থেকে আমি এমনটা কক্ষনো আশা করিনি। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি…

“এক মিনিট, এক মিনিট দিহান ভাইয়ের বাচ্চাও আছে নাকি? আর থেকে থাকলেও সে আপনার সাথে কি করেছে? ঊর্মি আপুর সাথে লাইন তো দিহান ভাই মে*রেছে। আপনি শুধু শুধু ওনার বাচ্চাকে দোষারোপ করছেন কেনো?”

এই রকম সিচুয়েশনে অলির এই কথা শুনে আলভী হাসবে নাকি কাদবে বুঝতে পারছেনা। কিন্তু তার ভীষণ ভাবে ইচ্ছা করছে কোনো কিছু আছাড় মা*রতে।
“দিহান যে ঊর্মির সাথে লাইন মে*রেছে সেটা বুঝতে পারলে আর আমি যে রাগের বশে দিহানের বাচ্চা বলে ফেলেছি সেটা বুঝতে পারলেনা? এই জন্যই তো বলেছি, তুমি সবার টাই বোঝো আমার টাই বোঝোনা।”

“ওহ স্যরি, স্যরি আসলে ঊর্মি আপুর ব্যাপারটা নিয়ে আমিও ভীষণ চমকে গেছি। সেই জন্যই সহজ কথাটাও বুঝতে পারিনি। দেখলেন, সেদিন তো খুব বড় গলায় বললেন দিহান ভাই রিফাতের মতো নয়। এখন দিহান ভাইকে কেমন বুঝলেন?”

আলভী কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“চলো তোমাকে নোমানের নানুর সাথে দেখা করিয়ে আনি।”

অলি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে।

নোমানের নানুর কেবিনে আসতেই অলির দেখা হয় নোমানের সাথে। সে নানুর পাশেই বসে ছিলো। অলিকে দেখে নোমানের নানু ভীষণ খুশি হলেন।
“আসসালামু আলাইকুম নানু, আমি অলি।”

অলি গিয়ে নানুর পাশে বসতেই তিনি বলে উঠলেন,
“হুম তোমার কথা নোমান বলেছে আমাকে। তবে নোমানের বর্ণনা থেকেও তুমি সামনাসামনি বেশি মিষ্টি দেখতে।”

কথাটা শুনে অলি আর নোমান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও আলভী জ্বলন্ত চোখে নোমানের দিকে তাকায়। ভারী গলায় বলে ওঠে,
“নোমান অলির সম্মন্ধে অনেক বর্ণনাই দিয়েছে দেখছি।”

নোমান ম্লান হেসে বলল, “ভুল বুঝবেন না ভাই। অলিকে আমি বোনের নজরে দেখি। আগে যা কিছু করেছিলাম তা নিতান্তই চাপে পড়ে করেছিলাম।”

আলভী প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “২০ মিনিট পর ওনার সার্জারী শুরু হবে।”

কথাটা বলেই আলভী দ্রুতপায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আলভী দ্রুত গাউন, গ্লাভস, মাস্ক পরে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতিমূলক কক্ষে ঢুকে পড়ে। চোখে তার অদ্ভুত এক ধরণের দৃঢ়তা।

৩০ মিনিট পর,,,

সার্জারির সময় ঘনিয়ে আসছে। রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার আগেই আলভী কেবিনে ঢুকল।
“সময় হয়ে গেছে,” শুধু এতটুকুই বলল।

হাসপাতালের স্ট্রেচারে করে নানুকে নেওয়া হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারের বাতাসে এক ধরনের কোল্ড স্টেরাইল গন্ধ। চারপাশে হালকা গুঞ্জন, যন্ত্রপাতির সুরসুর শব্দ, এনেসথেসিয়া টিম রোগীকে ঘিরে ব্যস্ত।

আলভী হাত ধুয়ে অপারেটিং টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ায়। নানু একবার আলভীর দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললেন,
“তুমি আমার নাতির মতোই… আমার জন্য দোয়া করো, ভাই।”

আলভী মাথা নেড়ে বলল, “আপনি ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবেন নানু। চিন্তা করবেন না।”

অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অলি আর নোমান। পুরো হসপিটালের বাইরে গার্ডস থাকে সর্বক্ষণ তাই অলির জন্য আলভী আলাদা করে কোনো গার্ডস রাখেনি। বা অলিকে রুমেও লক করে রাখেনি।

সার্জারি শুরু হলো।

আলভী তার টিম নিয়ে কাজ করছে। বাইপাস সার্জারির সময় যে সতর্কতা লাগে, সেটুকুই ঠিকঠাক রাখার চেষ্টা করছে সে। মাঝে মাঝে সহকারী নার্স মেডিক্যাল রিডিং জানায়, “সব কিছু এখনও স্বাভাবিক আছে।”

আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে যায়।
দেড় ঘণ্টা পর, সার্জারির মূল অংশ শেষ হয়। হৃৎপিণ্ডে সফলভাবে বাইপাস বসানো হয়েছে। আলভী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অবশেষে, তিন ঘণ্টা পর অপারেশন শেষ হয়।

বাইরে বেরিয়ে এসে আলভী নোমান আর অলির সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “সার্জারি সফল হয়েছে। এখন কয়েকটা দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, চিন্তার কিছু নেই।”

নোমান মাথা নিচু করে বলল,
“ধন্যবাদ, ভাই।”

আলভী কিছু বলল না। হালকা মাথা নেড়ে সেখান থেকে হেঁটে চলে গেল। অলিও তাকে অনুসরণ করতে লাগলো। আলভী হাঁটতে হাঁটতে কার্ডিয়াক ব্লকের ভেতরের অনকল রুমে ঢুকল। এটাই তার পার্সোনাল রুম।
গাউনটা খুলে চেয়ারটায় ঝুলিয়ে রাখল আলভী। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে আয়নায় তাকিয়ে থাকল কয়েক মুহূর্ত। চোখে ক্লান্তি জমেছে, অলি রুমে থাকা সোফায় নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছে। সে বেশ বুঝতে পারছে আলভী কতোটা স্ট্রিক্ট লাইফ লিড করছে। সারাদিন কতো ব্যস্ত থাকে সে। আলভী বের হতেই অলি তার দিকে নিজের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে।
“দিহান ভাই কল দিয়েছিলেন।”

আলভী যেন শুনেও শুনলোনা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এখন দুপুর আড়াইটা বাজে। অলি আলভীর দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“দিহান ভাই বললেন ঊর্মি আপু অনেক কান্নাকাটি করছে। আপনি প্লিজ এবার অন্তত আপুকে বেরোতে দিন।”

ঊর্মি কান্না করছে শুনে আলভীর মধ্যে একটু মায়া জাগ্রত হলো। যতই হোক, একমাত্র আদরের বোন তার। সম্পর্কটা সাপ বেজির হলেও বোনকে সে অনেক ভালোবাসে। আলভী একটা চাপা শ্বাস ফেলে বলল,
“চলো,”

আলভী অলিকে নিয়ে আবারও নোমানের কাছে এলো। আলগোছে অলির হাতে একটা চেক ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা তোমার নো-ম্যান ভাইকে গিয়ে দিয়ে এসো। কুইক।”

অলি প্রথমে না বুঝলেও চেকটা দেখে বুঝতে পারলো যে এটা টাকার চেক। সে এগিয়ে গেলো নোমানের দিকে চেকটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ভাইয়া এটা রাখুন।”

নোমান একবার অলির দিকে তাকিয়ে তারপর চেকটার দিকে তাকায়, “এটা কি, মিসেস অলি?”

অলি হাল্কা হেসে বলল, “আমি বলেছিলাম না আপনাকে তাদের থেকেও দ্বিগুণ টাকা দেবো? এটাই সেই টাকা।”

নোমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে,
“আমার এটা লাগবেনা মিসেস অলি। আলভী ভাই বিনামূল্যেই আমার নানুর সার্জারী করে দিয়েছেন। এখন আর টাকা দিয়ে আমি কি করবো?”

অলি চোখ তুলে নোমানের দিকে তাকায়।
“আমি জানিনা আপনি কি করবেন। কিন্তু আমি যখন দেবো বলেছি, তখন আপনাকেও নিতেই হবে। অবশ্য এই টাকাগুলো আমার আরও আগেই দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আপনি তো জানেনই আমি আমার বাবা মাকে হারিয়ে ফেলেছি। তারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। সেইজন্যই দেরি হয়েছে। আপনি প্লিজ টাকা গুলো রাখুন।”

নোমান বেশ কিছুক্ষণ অলির দিকে তাকিয়ে রইলো।
“আমি নিতে পারবোনা মিসেস অলি। তুমি দয়া করে জোর কোরো না।”

অলি ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল, “কেনো নিবেন না? আপনি তখন বলেছিলেন না? যে আমাকে বোন হিসেবে দেখেন? তাহলে আমি সেই বোন হিসেবেই আপনাকে টাকাগুলো দিচ্ছি। আপনি যদি না নেন, তাহলে আমি বুঝবো যে আপনি তখন কথার কথা বলেছেন। আপনি মন থেকে আমাকে বোন হিসেবে মানেন না। আমি খুব কষ্ট পাবো।”

অলির কথাগুলো শুনে নোমান একটা ছোট্ট ঢোক গিলে মনে মনেই বলল,
“ফ্লাওয়ার কুইন, আমি সত্যিই আপনাকে আমার বোন বলে মানিনা। কখনো মানতেও পারবোনা। কথার কথাই বলেছিলাম, তবে আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনা। আপনি অল্রেডি অনেক সাফার করছেন।”

নোমান মুখে হাসি টেনে অলির হাত থেকে চেকটি নিয়ে নিলো, “ভালো থেকো মিসেস অলি। ভাগ্যে থাকলে আমাদের আবার দেখা হবে।”

অলি মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়, “অবশ্যই ভাইয়া। আপনিও ভালো থাকবেন। নানুর খেয়াল রাখবেন, কেমন? আমার ডাক্তার মশাই তো আছেনই এখানে আপনার যে-কোনো প্রয়োজনে তাকে স্মরণ করবেন। আসি, আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ, মিসেস অলি।”

অলি আলভীর কাছে আসতেই আলভী ফোনের স্ক্রিনের দিকে মনোযোগ দেয়। এমন ভাব করে যেনো সে অলির ফোনে মারাত্মক ভাবে ব্যস্ত সময় পার করেছে এতোক্ষণ যাবত। যদিও বাস্তবতা পুরোই উল্টো সে নোমান আর অলিকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে পুরোটা সময় জুড়ে। অলিকে নোমানের সাথে হাসতে দেখে তার কলিজা পুড়েছে ঠিকই কিন্তু অলিকে সে ধরা দেবেনা। কারণ সে জানে অলি নোমানকে ভাইয়ের চোখেই দেখে। তবুও কেনো আলভীর কলিজা পুড়ছিলো? উত্তর টা আলভী জানলেও সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করলো। কারণ সে এতোটাও মহান নয় যে অন্য ছেলের চোখের ভাষা পড়েই তার হাতে নিজের কলিজাকে সমর্পণ করে দেবে।

চলবে,,,

#১৫_বছর_বয়সী_মা (৪১)
#সোফিয়া_সাফা

বিকেলের দিকে সূর্যের তাপ কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। ক্লান্তি ভরা দুপুরের ভার নেমেছে কিছুটা। আলভী আর অলি হসপিটাল থেকে বাইরে আসতেই দেখলো দিহান গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। আলভী রেগেমেগে এগিয়ে গেলো সেই দিকে,
“এই তুই এখানে কি করছিস হ্যাঁ? তোর সাহস তো কম না।”

দিহান ঝড়ের বেগে আলভীর সামনে এসে বলল,
“ওই শা*লা তুই কোথায় গিয়েছিলি ওকে আটকে রেখে? তোর মধ্যে কমন সেন্স টুকুও নেই দেখছি।”

আলভী রাগের বশে ফের দিহানের শার্টের কলার চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল,
“খবরদার শা*লা বলবিনা। আমার বোনের ধারে কাছেও আমি আর তোকে ঘেষতে দেবোনা। যা ভাগ এখান থেকে।”

“হুম তুই তো ওর বড় ভাই তুই আমার শা*লা হবিনা। কিন্তু তুই কাজটা ঠিক করিসনি সম্বন্ধি। প্লিজ ওকে আনলক কর।”

“আমাকে সম্বন্ধি বললি তুই? এত্তোবড় সাহস?”

অলি এগিয়ে এসে যেইনা আলভীর শার্টের কোণা ধরতে যাবে ঠিক তখনই আলভী ধমক দিয়ে বলে,
“আমার শার্টে হাত দিলে আমি কিন্তু ওর সাথে তোমাকেও লক করে রাখবো।”

অলি একটা ঢোক গিলে ঊর্মিলার দিকে এগিয়ে গেলো। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো ঊর্মিলা হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে।
“ঊর্মি আপু, তুমি ঠিক আছোতো?”

ঊর্মিলা মুখ তুলে অলির দিকে তাকালো। অলিকে দেখে ঊর্মিলা ডুকরে কেদে ওঠে,
“ভাবী প্লিজ আমাকে বের করো এখান থেকে। আমার অবস্থা অনেক খারাপ। ওয়াশরুমে যেতে হবে।”

ঊর্মিলার কান্না দেখে অলির ভীষণ খারাপ লাগলো। কিন্তু সে কি করবে? অলি কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে আলভীর কাছে আসলো। আলভী তো দিহানের সাথে একপ্রকার মা*রামা*রিই লাগিয়ে দিয়েছে। অলি কিছু না ভেবেই বলে ওঠে,
“শুনছেন? আপু বলেছে আপনি তাকে বের না করলে সে নাকি আপনার গাড়িতেই হি’সু করে দেবে।”

আলভী দিহানকে ঘুষি দেয়ার জন্য হাত উঠিয়েছিলো কিন্তু অলির কথা শুনে সে তব্দা খেয়ে অলির দিকে তাকায়। দিহানও ভ্রু কুচকে অলির দিকে তাকালো। তার মানে এতোক্ষণ যাবত ঊর্মিলা এই জন্যই কান্না করছিলো? সে এতোবার জিজ্ঞেস করার পরেও মেয়েটা কিচ্ছুটি বললোনা। আলভী দিহানকে ছেড়ে দিয়ে গাড়ির দিকে দৌড় দিলো।
“শিট,,,

দিহানও তার পিছুপিছু আসতে আসতে বললো,
“কিরে এখন দৌড়ে যাচ্ছিস কেনো। মার*বিনা আমাকে?”

আলভী তড়িঘড়ি করে গাড়ির লক খুলে দিতেই ঊর্মিলা বেরিয়ে এলো। সে জানেনা হঠাৎ অলি কি এমন বলেছে যার জন্য আলভী এভাবে দৌড়ে এসে গাড়ির লক খুলে দিলো। ঊর্মিলা বের হতেই আলভী গাড়ি চেক করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“আয় আমার সাথে।”

ঊর্মিলা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আলভীর দিকে তাকাতেই আলভী গলা পরিষ্কার করে বলে।
“ওয়াশরুম দেখিয়ে দিচ্ছি।”

কথাটা শুনে ঊর্মিলা থতমত খেয়ে গেলো। সে বুঝতে পারলো, তার পিচ্চি ভাবীটাহ তার মান সম্মানের ফালুদা বানিয়ে সবাইকে খাইয়েছে। আলভী দিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“অলিকে রেখে যাচ্ছি। কষ্ট করে আবারও হসপিটালের ভেতরে যেতে হবেনা। ওকে দেখে রাখিস।”

দিহান মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। আর আলভীও হাটা ধরলো। ঊর্মিলা মাথা নিচু করে তাকে অনুসরণ করতে লাগলো। তারা চলে যেতেই দিহান অলির উদ্দেশ্যে বলল,
“ঊর্মির জায়গায় আমি থাকলে নিশ্চিত গাড়িতেই… করে দিতাম। কিন্তু এই মেয়ে এতো ইনোসেন্ট আহ। এভির মতো দজ্জালের গাড়িকে ক্লিন রাখতে ও এতোক্ষণ কষ্ট কেনো করলো? দ্যাটস আনফেয়ার।”

দিহানের কথা শুনে অলি সরু চোখে তার দিকে তাকায়।
“উনি দজ্জাল নন। আপনিই বন্ধু হিসেবে বেঈমান। আপনার জন্যই আমার নির্দোষ ননদটাকে এতোক্ষণ কষ্ট পেতে হলো।”

দিহানের কপাল কুচকে এলো। মেয়েটা বলে কি?
“আপনি এটা কি বললেন ভাবী? এখানে আমার দোষ কোথায়? আপনার নির্দোষ ননদটাই তো আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছিলো। আপনিই ভেবে দেখুন আমি যদি ওকে না করে দিতাম, তাহলে ও অন্য ডাক্তারের কাছে চলে যেতো এটা কি শোভনীয় দেখাতো? বন্ধুর বোন আমার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছে আমি সেটাও যদি না দিতে পারি তাহলে কেমন বন্ধু হলাম?”

কথাগুলো সব অলির মাথার উপর দিয়ে গেলো। সে শুধু ড্যাবড্যাব করে দিহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। দিহানও বুঝতে পারলো যে অলি কিছুই বোঝেনি। সে একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“আপনাকে সহজ ভাষায় বলছি ভাবী। আমি আপনার ননদকে ভালোবাসি। তাই ও আমার সাথে দেখা করতে চাওয়ায় আমি না করতে পারিনি।”

অলি সন্দিহান চোখে দিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি সত্যিই আপুকে ভালোবাসেন?”

“হুম। অনেক ভালোবাসি।”

অলি আনমনেই প্রশ্ন করলো,
“কতোটা?”

দিহান আড়চোখে একবার অলির দিকে তাকিয়ে বলল,
“যতটা ভালো এভি আপনাকে বাসে। আমিও ঠিক ততোটাই ভালো আপনার ননদকে বাসি।”

অলি চমকে গেলো। দিহান তার প্রতি আলভীর ভালোবাসাকে উদাহরণ দিয়ে ভালোবাসার গভীরতা বোঝাতে চাইছে?
“আমি সব কাজ ছেড়ে ছুড়ে গাড়ির সামনেই সারাটাদিন দাড়িয়ে ছিলাম। আপনি ভাবতে পারছেন? দুপুরের উত্তপ্ত রোদের মাঝেও ওকে পাহারা দিয়েছি। ভাগ্যিস ও আমাকে কল দিয়েছিলো। নইলে তো আমি ভাবতাম এভি ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।”

দিহানের কথার মাঝেই আলভী ঊর্মিলাকে নিয়ে চলে আসে। ঊর্মিলা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো। অলি সামনের সিটে বসতে গেলে আলভী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“অলি তুমি ঊর্মির পাশে বসো।”

অলি প্রশ্ন না করেই ঊর্মিলার পাশে গিয়ে বসলো। আলভী ড্রাইভিং সিটে বসে দিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“গাড়িতে উঠে বস।”

তার কথায় দিহানের সাথে সাথে অলি আর ঊর্মিলাও অবাক হলো।
“তারাতাড়ি ওঠ।”

দিহান একটা শ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে বসলো। আলভী গাড়িটাকে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এনে থামালো। তারা চারজন গিয়ে একটা টেবিলে বসলো। একপাশে অলি আর ঊর্মিলা বসেছে আরেকপাশে দিহান আর আলভী বসেছে। ঊর্মিলা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। আলভী হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
“ঊর্মি তুই দিহানকে ভালোবাসিস?”

আলভীর প্রশ্নে অলি আড়চোখে আলভীর দিকে তাকায় কিন্তু মুখে কিছুই বলেনা। সে এতোদিনে বুঝতে পেরেছে দিহান রিফাতের মতো বাজে লোক নয়। কিন্তু তারপরও দিহানকে সে ঊর্মিলার প্রেমিক হিসেবে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
“কিরে বলছিস না কেনো?”

ঊর্মিলা কান্না আটকে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। আলভী দিহানের দিকে তাকিয়ে ভারী গলায় প্রশ্ন করে,
“তুই ওকে প্রপোজ করেছিলি? নাকি ঊর্মি তোকে প্রপোজ করেছে?”

দিহান স্বাভাবিক স্বরেই বলে,
“আমিই তোর বোনকে প্রপোজ করেছি।”

আলভী একটা চাপা শ্বাস ফেলল। দিহান আলভীর মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,
“আমি জানি তুই রিফাতের বলা কথাগুলো ভাবছিস। ও নিজের বোনকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলেছিলো। তুইও কি সেগুলোই ভাবছিস এভি?”

আলভী নিশ্চুপ হয়ে রইলো।
“দেখ এভি। রিফাত একটা জঘন্য ছেলে। ওর কথার কোনো লজিক নেই। আমি সত্যিই ঊর্মিকে ভালোবাসি। তবে তুই যদি না চাস, আমি তোর বোনের সাথে সম্পর্ক রাখবোনা।”

দিহানের কথায় আলভী ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকায়। আর ঊর্মিলা তো ছলছল চোখে দিহানের দিকেই তাকিয়ে আছে। দিহান একবার ঊর্মিলার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
“তুই আমার কথায় ঊর্মির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবি?”

আলভীর প্রশ্নের উত্তরে দিহান মলিন হেসে বলে।
“তুই আমার বন্ধু কম ভাই এভি। তুই জানিস আমার কখন সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে?”

দিহান থামলো। একটা শ্বাস টেনে বলল,
“যখন তুই রিফাতের সাথে আমাকে তুলনা করিস তখন। রিফাত একটা বাজে ছেলে এভি। সেটা তুই আর আমি আগে থেকেই জানতাম। তবুও ছোটবেলার বন্ধু ভেবে আমরা ওকে যথেষ্ট ছাড় দিয়েছি। দয়া করে কক্ষনো আমাকে ওর সাথে কম্পেয়ার করিসনা।”

অলি যখন শুনলো যে ঊর্মিলাও দিহানকে ভালোবাসে তখনই তার মনে থাকা দিহানকে নিয়ে উল্টো পাল্টা চিন্তাগুলো বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া সে দেখেছিলো সেইদিন গুলোতে যখন আলভী অলিকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলো তখন দিহান একা হাতেই সবদিক সামাল দিয়েছিলো। দিহানের অসৎ উদ্দেশ্যে থাকলে এতোকিছু করতোনা নিশ্চয়ই?

আলভী কিছুক্ষণ বসে থেকে খাবার অর্ডার করলো এসবের চক্করে কেউই লাঞ্চ করেনি। এখন বিকেল চার টা বাজে। অলিকে এতোক্ষণ না খাইয়ে রাখাটা একদমই ঠিক হয়নি। খাবার দিয়ে গেলে বিনাবাক্যে সবাই খেয়ে নিলো। তারপর আলভী উঠে দাড়িয়ে বলল।
“তুই যদি আমার বোনকে ভালোবেসেই থাকিস তাহলে নিশ্চয়ই ওর খারাপ চাইবিনা?”

দিহান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। আলভী গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“সামনে ওর ইয়ার ফাইনাল এক্সাম। সেটা নিশ্চয়ই জানিস?”

দিহান হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে।
“যদি ওর আর নিজের ভালো চাস তাহলে ওকে ক্লাস ফাকি দিতে দিবিনা। ওর ছেলেমানুষীতেও সায় দিবিনা বুঝলি?”

ঊর্মিলা ভয়ার্ত চোখে একবার আলভীর দিকে তাকায়। আলভীর শান্ত কন্ঠ শুনে সে অবাকই হচ্ছে। আলভী হঠাৎ করেই বলে ওঠে,
“আমি বলেছিলাম ও এক্সামে ফেল করলে ওকে মুচি, রিক্সাওয়ালা বা নাপিত দেখেই বিয়ে দেবো। তো সেটা আমি আবারও রিপিট করছি।”

আলভীর কথা শুনে সবাই আহাম্মকের মতো আলভীর দিকেই তাকায়। আলভী মৃদু হেসে বলল,
“সিম্পল, ঊর্মি এক্সামে ফেল করলে তোকে এই ৩ টার মধ্যে একটা প্রফেশন বেছে নিতে হবে তবেই আমি ওকে তোর সাথে বিয়ে দেবো। নইলে তুই পাত্রের লিস্ট থেকে আউট হয়ে যাবি। কারণ ফেল করা মেয়ে তোর মতো MBBS পাশ করা ছেলের সাথে যায়না।”

আলভীর কথা শুনে দিহান আর অলি ফিক করে হেসে উঠলো। ঊর্মিলা বেচারি ভেতরে ভেতরে রেগে গেলেও আপাতত আলভীকে কিছু বলার সাহস নেই। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর আলভী সিরিয়াস গলায় বলল,
“ওর এক্সাম শেষ হোক তারপর সোজা অভিভাবক নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবি। তার আগে ওর সাথে দেখা করা একদম বন্ধ। যদি আমার কথার অবাধ্য হয়ে দেখা করিস তাহলে কিন্তু…

“ভয় দেখাতে হবেনা ভাই আমি তোর বোনের সাথে আর দেখা করবোনা।”

“হুম সেটাই ভালো। আমার মাকে তো চিনিসই, যদি একবার নিজের মেয়ের এই কুকর্মের কথা তার কানে যায়। তাহলে ওকে কি করবে তা আমিও জানিনা। মনে রাখিস আমার সুপারিশ ছাড়া কিন্তু এই জন্মে তোদের বিয়ে হবেনা।”

দিহান একগাল হেসে আলভীকে জড়িয়ে ধরলো,
“হয়েছে হয়েছে, ছাড়।”

এরপর আলভী ঊর্মিলা আর অলিকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
,

সন্ধ্যার সময় আলভী নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। অলি সেই ফাঁকে রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে আসে। এইবাড়িতে আসার পর সে এই প্রথম কিচেনে এসেছে। সেখানে এসে দেখল, কয়েকজন সার্ভেন্ট মিলে ডিনার রেডি করছে। নূরনাহার তাদের কাজের তদারকি করছেন। শাহানাজ বেগমকে না দেখে অলি একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলল,
অলিকে কিচেনের দিকে আসতে দেখে নূরনাহার জিজ্ঞেস করলেন।
“কিছুকি লাগবে?”

অলি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,
“কাকীমা, আমি কি কিচেন টা ব্যবহার করতে পারি?”

অলির কথার উত্তরে নূরনাহার অবাক হলেন,
“তুমি কিছু খেতে চাইলে আমাকে বলো আমি রান্না করে দিচ্ছি।”

নূরনাহারের ব্যবহারে অলি খুশি হলো। এদিকে অলিকে দেখে নূরনাহার আগের ঘটনা ভুলে গেছেন। তাছাড়া আলভীর সেগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা না হলে তারও বিশেষ সমস্যা নেই। হয়তো ছবিতে থাকা ছেলেটা অলির আত্মীয় বা পরিচিত কেউ ছিলো। সেটা নিয়ে অলিকে এতো কথা শোনানো যুক্তিযুক্ত নয়। তার উপর মেয়েটা বাবা মা হারিয়েছে কিছুদিন হলো মাত্র। এইসব ভেবেই নূরনাহার পুরোনো ঘটনা সব ভুলে গেছেন।
“আপনার বড় ছেলের জন্য নিজের হাতে কফি বানাতে চাইছি কাকীমা। আমাকে কি কিচেন ব্যবহার করতে দেবেন?”

নূরনাহার মুখে হাসি টেনে বলল,
“বাহঃ খুব ভালো। কিন্তু তুমি কি কফি বানাতে জানো?”

অলি নাবোধক মাথা নাড়ে,
“তাহলে কিভাবে বানাবে?”

অলি নিজের ফোনটা বের করে একটা ভিডিও প্লে করে নূরনাহারকে দেখায়।
“এই ভিডিওতে দেখানো কফির রেসিপি অনুসরণ করেই আমি বানিয়ে নেবো কাকীমা।”

“তুমি চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করতেই পারি।”

নূরনাহারের কথা শুনে অলির চোখজোড়া চকচক করে উঠলো। খুশি হয়ে বলল,
“আপনি আমাকে সাহায্য করবেন?”

“হুম, কেনো করবোনা। এসো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।”

অলি মাথা নেড়ে চুলার দিকে এগিয়ে যায়।
নূরনাহার তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
“পার্ফেক্ট কফি বানাতে হলে পরিমাণ মতো উপাদান দিতে হয়। প্রথমে ইনস্ট্যান্ট কফি পাউডার, তারপর দুধ, তারপর চিনি। চাইলে একটু দারচিনি পাউডারও দেয়া যায়। তবে আলভী সাধারণত প্লেইন কফিই পছন্দ করে।”

তিনি হাত বাড়িয়ে কাঠের র‍্যাক থেকে কফি জার নামিয়ে আনলেন। তারপর একটা ছোট সসপ্যানে আধা কাপ দুধ, আধা কাপ পানি মিশিয়ে বললেন,
“এই পরিমাণে ১ চামচ কফি, ১ চামচ চিনি দিলেই যথেষ্ট। পানি আর দুধ গরম করে কফি ও চিনি মিশিয়ে নিলেই হয়ে যাবে।”

অলি মন দিয়ে সব শুনলো। তার চোখে মুখে আগ্রহ উপচে পড়ছে। নূরনাহার একটু হাসলেন,
“তুমি চেষ্টা করলেই পারবে,”

এরই মাঝে ইয়ামিন মির্জার ডাক ভেসে আসে। সে নূরনাহারকে ডাকছেন। নূরনাহার অলির দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আমি একটু দেখে আসি, তোমার কাকা শ্বশুর কেনো ডাকছেন। তুমি চালিয়ে যাও, কিছুর দরকার হলে সার্ভেন্টদের কাউকে জিজ্ঞেস করো কেমন?”

অলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। নূরনাহার চলে যেতেই অলি নিজ হাতে সবটা করতে শুরু করলো।
সসপ্যানের দুধ আর পানি গরম হতে দিলো। এক চামচ কফি পাউডার ঢাললো নিখুঁতভাবে। কিন্তু চিনি নিতে গিয়ে সে বিভ্রান্ত হলো। কিচেনের তাকের ওপর দুইটা হুবহু একরকম কাচের বয়ামের একটাতে চিনি, আরেকটাতে লবণ রাখা ছিল।

অলি সার্ভেন্টদের একজনকে জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যে পেছনে তাকাতেই দেখলো শাহানাজ বেগম কিচেনে এসেছেন। তার চাহনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাকে নিয়ে সে মনেমনে কটু কথা বলছেন। কিন্তু আলভী বাড়িতে থাকায়, নিজের রাগটার বহিঃপ্রকাশ করতে পারছেন না। এরকম পরিস্থিতিতে অলি আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলোনা। সে একটা শুষ্ক ঢোক গিলে আন্দাজেই একটা বয়াম থেকে এক চামচ চিনি নিয়ে মিশিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কফি তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু শাহানাজ বেগমের জ্বলন্ত দৃষ্টির জন্য অলি ঠিকঠাকভাবে ফোকাস করতে পারছেনা। সে সসপ্যান থেকে মগে কফি ঢালতে উদ্যত হয়। কিন্তু তার হাত পা অস্বাভাবিক ভাবে কাপছে। যার কারণে সে নিজের উপরেই বিরক্তবোধ করছে। ছোটবেলায় দেখা দজ্জাল শাশুড়ী ছবিটার কথা মনে পড়ছে। তার ভাগ্যেই এমন দজ্জাল শাশুড়ী জুটতে হলো? কাপাকাপির ঠেলায় অসাবধানতা বশত কিছুটা গরম কফি তার বাম হাতের বৃদ্ধা আঙুলের উপর পড়তেই অলি শিউরে ওঠে। মুখ থেকে আপনা-আপনিই মৃদুস্বরে বেরিয়ে আসে,
“ও মাগোওওও।”

অলি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নেয়। বন্ধ চোখের পাপড়ি ভেদ করে একফোঁটা নোনাজল গাল বেয়ে চিবুকে এসে ঠেকে। তবুও নিজেকে সংযত করে চোখ মেলে কফি টুকু মগে ঢালে। একহাতে চোখের পানিটুকু মুছে শাহানাজ বেগমের দিকে তাকাতেই দেখলো। এতোক্ষণ যাবত রাগীচোখে তাকিয়ে থাকলেও তার চাহনি কিছুটা কোমল হয়েছে। অলির সাথে চোখাচোখি হতেই শাহানাজ বেগম চোখ সরিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে যান। অলি মাথার ওড়না টা ঠিকঠাক করে কফির মগ হাতে ধীরে ধীরে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

আলভী অনলাইনে মিটিং এটেন্ড করছিলো। মাত্রই তার মিটিং শেষ হয়েছে। এরই মাঝে অলি এসে আলভীর দিকে কফির মগটা এগিয়ে দেয়। আলভী হকচকিয়ে অলির দিকে তাকাতেই অলি মিষ্টি হেসে বলে,
“আপনার জন্য অলি ফাস্ট টাইম কফি বানিয়েছে।”

অলির কথা বলার ধরন শুনে আলভী খুশি হলেও সে কফি বানিয়েছে শুনে আলভীর কপাল কুচকে এলো।
“তোমাকে কফি বানাতে কে বলেছে?”

অলি আলভীর সামনে বসে বলল,
“কেউ বলেনি। কিন্তু কেউ একজন বলেছিলো যে আমার স্বামীর ভাগ্যে নাকি কফিটুকুও জুটবেনা। আমি শুধু মাত্র সেই কথাটাকে ভুল প্রমাণ করতে চাইছি।”

“কাম অন অলি। ওই বেয়াদবের কথায় তুমি এসব করতে যেওনা।”

অলি ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
“কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাবে। খাবেন না?”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে কফির মগটা হাতে নিয়ে বলে, “তুমি ফাস্ট টাইম কফি বানিয়েছো রাইট?”

অলি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। আলভী এবার সুক্ষ্ম চোখে অলির দিকে তাকিয়ে বলে,
“আবার হাতে টাতে ফেলোনি তো?”

অলি বাম হাতটা আলগোছে ওড়নার নিচে নিয়ে না বোধক মাথা নেড়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে ওঠে,
“আপনি কি কফি ঠান্ডা করেই খান নাকি?”

আলভী ল্যাপটপ টা সাইডে রেখে সোজা হয়ে বসলো। তারপর কফির মগটায় একটা চুমুক দিতেই তার মুখ বেকে যায়। এমন বাজে কফি সে এই জন্মে খেয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। সে একবার অলির দিকে তাকিয়ে দেখলো, অলি কফির টেস্ট সম্পর্কে জানার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। আলভী মূহুর্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“বাহঃ এতো ভালো কফি আমি জীবনেও খাইনি।”

অলির চোখে মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে ওঠে।
“সত্যিই ভালো হয়েছে?”

আলভীর ইচ্ছা তো করছে অলিকে কাছে এনে আদর করে দিতে। অলিকে খুশি দেখে সে নিজেও খুশি হয়ে গেছে। অলিকে এভাবে হাসতে আর লজ্জা পেতে দেখতে বড্ড বেশিই আদূরে লাগে। আলভী পুনরায় কফির মগে চুমুক দেয়। এই বিদঘুটে নোনতা স্বাদের কফিও তার কাছে অমৃত বলে মনে হচ্ছে।
সে লক্ষ্য করেছে সে যেই কয়বার কফির মগে চুমুক দেয় সেই কয়বার অলি একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চাহনি একদম নিখুঁত। অলির সেই চাহনিতে সে নিজেও হারিয়ে যায়। আলভীর কফি খাওয়া শেষ হতেই অলি বলে ওঠে, “আপনি কেমন জানি,”

আলভী থমকে গেলো, “মানে?”

“মানে আমি প্রথম বারের মতো কফি বানিয়ে আনলাম, আপনি আমাকে একবার টেস্ট করতেও বললেন না? এটা কি ঠিক করলেন?”

আলভী কি বলবে খুঁজে পেলোনা। অনেক ভাবনা চিন্তা করে বলল, “স্যরি হানিবি। আসলে কফিটা অনেক বেশিই মজা ছিলো তো। তাই আমি তোমাকে টেস্ট করার কথা বলতেও ভুলে গিয়েছি। তুমি কি রাগ করেছো?”

অলি সাথে সাথেই মাথা নেড়ে না বলল। আলভী অলির দিকে দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“এতো ভালো কফি খাইয়েছো তার জন্য তোমাকে একটা গিফট দেই, কাছে এসো।”

আলভীর কথা শুনে অলি ভ্রুকুটি করে বলে,
“আপনাকে নিজে থেকে গিফট দিতে হবেনা। যদি গিফট দিতেই চান তাহলে আমি যা চাইবো তাই দিন।”

অলির কথা শুনে আলভী সিরিয়াস গলায় বললো,
“তোমার কিছু লাগলে তুমি আমার কাছে এমনিতেই তো চাইতে পারো হানিবি।”

অলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আপনার কাছে ফোন থাকলে আমি অবশ্যই কল করে আসার সময় নিয়ে আসতে বলতাম।”

“আজকে বাইরে গেলাম তখনও তো চাইতে পারতে।”

“ঊর্মি আপুর জন্য মনেই ছিলোনা।”

আলভী ভাবলো অলি হয়তো ভীষণ দরকারি কিছুই চাইবে।
“কি লাগবে তোমার, শুধু বলো আমাকে।”

অলি মাথা নিচু করে বলতে লাগলো,
“কালকে ঊর্মি আপু আমার জন্য আমের আচার এনেছিলো।”

“হু?”

“আমার খেতে ইচ্ছা করেছিলো কিন্তু ফুপিমণি বানিয়েছে শুনে আমি আর খাইনি। আপনিই তো বলেছিলেন কেউ কিছু দিলে না খেতে।”

“হুম ভালো করেছো”

অলি একবার আলভীর দিকে তাকায়।
“আমার ভীষণ কাঁচা আমের আচার খেতে ইচ্ছা করছে। প্লিজ আপনি যেখান থেকে পারেন এনে দিন।”

অলির কথা শুনে আলভী সাথে সাথেই বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়।

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ২৫৫০+

#১৫_বছর_বয়সী_মা (৪২)
#সোফিয়া_সাফা

আলভী বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মানিব্যাগ টা পকেটে নিলো তারপর দ্রুতপায়ে বের হয়ে যেতে নেবে তার আগেই অলি পিছু ডেকে বলে, “কোথায় যাচ্ছেন?”

আলভী পিছু ফিরে বলে, “কোথায় আবার? যেটা খেতে চেয়েছো সেটাই আনতে যাচ্ছি।”

কথাটা শুনে অলি খুশি হয়ে গেলো। “আমিও যাবো। নিয়ে যাবেন?”

আলভী না বলতে গিয়েও বলতে পারেনা। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই অলি উঠে দাঁড়িয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যায়। সেখান থেকে বোরকা আর হিজাব বের করে সেগুলো গায়ে জড়িয়ে নেয়। আলভী একবার হাত ঘড়ির দিকে তাকায় তো একবার অলির দিকে তাকায়। অলি ১৫ মিনিটে রেডি হয়ে আলভীর সামনে এসে দাঁড়ায়, “আমি রেডি, চলুন।”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে হাটা ধরলো। অলিও তার সাথে পা মেলাতে লাগলো। তারা দুজন নিচে নামতেই দেখলো বাড়ির প্রায় সবাই ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছে আর গল্প গুজব করছে। বলতে গেলে এটা এই বাড়ির নিত্যদিনের রুটিন। আলভী অলির পিছু পিছু বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পেছনে থাকা সবাই শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো। শাহানাজ বেগম কিছু হয়তো জিজ্ঞেস করতে চাইলেন কিন্তু আলভী ধপাধপ্ পা ফেলে চলে গেছে। অলিকেও একপ্রকার দৌড়ে তার পিছু নিতে হলো। বাড়ি থেকে বের হতেই অলি হাপাতে লাগলো। “আরে আস্তে হাটুন। আমি আর পারছিনা।”

অলির কথা শুনে আলভী দাঁড়িয়ে যায়।
“স্যরি, আসলে আমি চাইনি ভেতরে থাকা কারোর অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে। আস্তে আস্তেই এসো।”

অলিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আলভী ড্রাইভিং সিটে বসে, গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়।
প্রায় ২০ মিনিট খোজাখুজি পর। অলি কাঙ্খিত আমের আচারের স্টল পেয়ে যায়। আলভী গাড়ি থেকে বেরিয়ে অলির সামনে এসে দাঁড়ায়,
“তুমি বসো, আমি নিয়ে আসছি।”

অলি ঠোঁট চেপে কিছুক্ষণ নিজের কোলের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, “আমি ওখানে গিয়ে খেতে চাই।”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। অলি খুশিমনে নেমে আচারের দোকানের সামনে গিয়ে দাড়াতেই আলভী বলে ওঠে,
“বেশি খেতে পারবেনা কিন্তু। আগেই বলে দিচ্ছি।”

অলি মাথা নেড়ে আড়চোখে পাশে থাকা ফুচকার স্টলের দিকে তাকালো। আলভী একপ্লেট আচার অলির দিকে এগিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে তার দিকে তাকাতেই অলির চাহনি ফলো করলো। কিন্তু না দেখার ভান করে বলল,
“আচার খাবেনা?”

অলি দ্রুত উপরনিচ মাথা নেড়ে আচারের প্লেট হাতে নিয়ে খেতে লাগলো। কিন্তু ঝাল কম থাকায় তার ততোটা পছন্দ হলোনা। “ঝাল তো একদমই হয়নি।”

“আমি কম দিতে বলেছি। বেশি ঝাল খেলে পেটে ব্যাথা করবে।”

অলি মুখ বাকিয়ে বলল, “এভাবে খেতে ভালো লাগছেনা। একটু ঝাল দিতে বলুন না। একটু খেলে কিছুই হবেনা।”

বাধ্য হয়েই আলভী আচারের প্লেটটা নিয়ে, আরও একটু চিলি ফ্লেক্স নিয়ে এলো। এবার অলি তৃপ্তি করে আচার খেতে লাগলো৷ যদিও তার টেস্টের তুলনায় ঝাল একদমই নগন্য ছিলো। এদিকে আলভী পুরোটা সময় অলির দিকেই তাকিয়ে রইলো। তার তাকানো দেখে অলি বেশ কয়েকবার আচার খেতে বলল। কিন্তু আলভী মাথা নেড়ে বলল,
“আমি এসব খাইনা। এসব টক, ঝাল আমার ভালো লাগেনা।”

অলি খাওয়ার মাঝেই ভ্রু কুচকে বলে, “তাহলে কি ভালো লাগে আপনার?”

আলভী অলির দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আই লাইক হানি।”

আলভীর ফিসফিসিয়ে বলা কথাটা শুনে অলির গাল গরম হয়ে গেলো। “এভাবে না বলে, মিষ্টি পছন্দ করেন সেটা বললেই হতো।”

“নট অরডিনারি সুইটস, আই লাইক স্পেশাল সুইটস।”

অলি মাথা তুলে আলভীর দিকে তাকাতেই চমকে গেলো। আলভী তার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। তার দিকেই ঝুকে আছে, ফলে আলভীর উত্তপ্ত নিঃশ্বাস তার কপালের উপর আছড়ে পড়ছে। অলি একটা শুষ্ক ঢোক গিলে আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“আমি আর খাবোনা। রেখে আসুন এটা।”

অলির কথায় আলভীর হুশ এলো। ইদানীং নিজের উপরেই বিরক্ত লাগছে। মাঝে মাঝে সে ভুলেই যায় অলি পিচ্চি একটা মেয়ে তার উপর প্রেগন্যান্ট। আলভী শীতল চোখে অলির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি খাও আমি একটু আসছি।”

অলি ফের আলভীর দিকে তাকিয়ে আনমনেই হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। আলভী দুপা পিছিয়ে গিয়ে বলল,
“চিন্তা কোরোনা, আমার নজর তোমার উপরেই থাকবে। তুমি নিশ্চিন্তে খাও।”

অলি শুধু আলভীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। দুমিনিটেই তার খাওয়া শেষ হয়ে যায়। সে এগিয়ে গিয়ে প্লেট টা রেখে আলভীকে খুঁজতে লাগলো। সে দেখেছে আলভী কোনদিকে গেছে। সেই হিসেবেই সে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই থমকে যায়। আলভী একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে। তার দৃষ্টি আকাশের দিকে নিবদ্ধ। অলি যেখান টায় দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানে অন্ধকার ছিলো তাই প্রথমে আলভী অলিকে দেখতে পায়নি। কিন্তু হঠাৎ করেই অলি যেই স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো সেই স্টলের লাইট জ্বলে ওঠে।
আলভী আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই ভড়কে গেলো। অলি গোলগোল চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখেমুখে একরাশ বিস্ময় আর ঘৃনা। আলভী উল্টো দিকে ঘুরে গেলো। হতাশায় নিজের চুল খামচে ধরে হাতে থাকা সিগারেট টা ছুড়ে ফেলে দিলো। দুপা এগিয়ে গিয়ে চুইংগাম কিনে নিলো। সেটা মুখে দিয়ে ঘুরে তাকালো সামনের দিকে, কিন্তু অলি সেখানে ছিলোনা। আলভী ব্যতিব্যস্ত হয়ে সেদিকে এগিয়ে এসে দেখলো অলি আগের স্টলের সামনের বেঞ্চিতে বসে আছে। আলভী প্রসঙ্গ পাল্টানোর উদ্দেশ্যে বলল, “ফুচকা খাবে?”

অলি আলভীর দিকে না তাকিয়েই হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। আলভী ফুচকার দোকানের দিকে এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একপ্লেট ফুচকা এনে অলির সামনে ধরে। অলি বিনাবাক্যে ফুচকা খেতে লাগলো।

খাওয়া শেষ হতেই অলি বলে ওঠে,
“আমি চাই আপনি একটা ফোন কিনে নিন।”

অলির কথাটা শুনে আলভী কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে রাজি হয়ে যায়। সে অলিকে নিয়ে একটা ফোনের শোরুমে আসে। তারপর নিজের জন্য একটা ফোন কিনে নেয়।

বাড়িতে আসতে আসতে ৯ টা বেজে গেছে। আসার সময় তারা রেস্টুরেন্ট থেকে একেবারে ডিনার করেই এসেছে। রুমে এসে অলি হিজাব খোলার উদ্দেশ্যে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ালো। আর আলভী ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। অলি বোরকা খুলে ঝুড়ির মধ্যে রেখে বেডের উপর বসতেই তার চোখ কফির মগটার উপর পড়ে। সে এগিয়ে যায় মগটার দিকে উদ্দেশ্য সেটাকে নিচে রেখে আসা।
অলি মগটা হাতে নিয়ে দেখলো সেটার তলানিতে খানিকটা কফি অবশিষ্ট আছে।
“সে বলেছিলো কফিটা নাকি অনেক বেশিই মজা হয়েছে। আমিও তো একটু খেয়ে দেখি যে ঠিক কতোটা মজার হয়েছে।”

কথাটা ভেবেই অলি কফিটুকু মুখে দিতেই তার সমস্ত শরীর ঝংকার তুলল। এতো বিচ্ছিরি স্বাদের কফি? মুখের কফিটুকু পুনরায় মগে ফেলে খানিকক্ষণ ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো অলি।
“হায় আল্লাহ আমি বোধহয় চিনির জায়গায় লবণ দিয়ে ফেলেছিলাম। আর লোকটাই বা কেমন? এতো বাজে কফি বিনাবাক্যে খেয়ে নিলো?”

তার ভাবনার মাঝেই আলভী ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। অলিকে কফির মগ হাতে বসে থাকতে দেখে আলভীর কপালে ভাজ পড়লো,
“কি করছো?”

অলি আচানক ঠোঁট ফুলিয়ে কেদে উঠলো,
“আপনি এই বিচ্ছিরি স্বাদের কফি কিভাবে খেলেন? আর কেনোই বা খেলেন?”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে অলির সামনে এসে বসলো। আলগোছে অলির বাম হাতটা টেনে সামনে আনলো। তারপর লাল হয়ে থাকা পোড়া অংশটির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি আমার জন্য হাত পুড়িয়ে কফি বানাতে পারবে, আর আমি সেই কফি খেয়ে প্রশংসা করতে পারবোনা?”

অলি নিজের হাতটা সরিয়ে নিতে চাইলে আলভী হাতটা নিজের গালে ঠেকালো। কিছু মূহুর্ত সেভাবেই বসে থেকে আলভী ড্রয়ার থেকে অয়েন্টমেন্ট নিয়ে এলো তারপর আলতো হাতে অলির পুড়ে যাওয়া হাতে লাগিয়ে দিলো। “আপনি কিভাবে দেখলেন?”

“যখন তুমি আচার খেতে খেতে জিজ্ঞেস করেছিলে আমার কি ভালো লাগে, তখনই আমি এটা লক্ষ্য করেছিলাম।”

অলি আর কিছুই বললোনা। আলভী অলির ডান হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে পুনরায় টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বলল, “তোমাকে যেন কক্ষনো আর কিচেনে যেতে না দেখি।”

“এটা কেমন কথা? একদিন হাত পুড়েছে বলে কি প্রতিদিনই পুড়বে?”

আলভী অলির চোখে চোখ রেখে বলে,
“যেতে বারণ করেছি। যাবেনা ব্যস, বাড়তি কথা শুনতে চাইনা।”

কথাটা বলেই আলভী উঠে দাঁড়ায়। অলি মুখ বাকিয়ে মনে মনেই বলে, “আমি একশোবার যাবো।”

কয়েক মিনিট পর আলভী এসে খাটের উপর বসলো। অলি বিছানা গুছিয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। বেড রেডি করে অলি গিয়ে দাড়ালো ড্রেসিং টেবিলের সামনে। প্রতিরাতেই শোয়ার আগে সে চুলগুলো বিনুনি করে শোয়। এটা তার অভ্যাস, সে একমনে লম্বা চুলগুলো বিনুনি করছে। আলভীও নিজের ফোনে ব্যস্ত। নতুন ফোনে সবকিছু নতুন করে সেট করতে হচ্ছে। হঠাৎ করেই আলভী অলির খোঁজে এদিক সেদিক তাকাতেই তার চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অলির দিকে। স্বভাবতই অলির কপালে বিরক্তির ভাজ। মাঝে মাঝে আনমনেই দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরছে।
আলভী ফোনটা একসাইডে রেখে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায়ে এগিয়ে গেল অলির দিকে। অলি তাকে খেয়াল করেনি। হঠাৎ পেটের উপর কারো হাতের বাধন জোরালো হওয়াতে সে হকচকিয়ে পেছনে ফিরে তাকাতেই আলভী তার ঘাড়ে মুখ গুজে দেয়। অলির সারা শরীর ভূমিকম্পের ন্যায় কেপে উঠলো। অলির ঘাড়ের ভাজে আলভী বেশ কয়েকটা আলতো চুমু খেলো। অলি সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেছে মেয়েটা। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করছে। এই সুন্দর মূহুর্তে একটা অসুন্দর কথা মনে পড়তেই অলি নিজেকে ছাড়ানোর প্রয়াস করতে লাগলো। একপর্যায়ে মুখেই উচ্চারণ করলো,
“উফফ, ছাড়ুন আমাকে।”

অলির ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে আলভী মুখ তুলে অলিকে একটানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অলির ওষ্ঠ বরাবর হামলা করতেই যাবে ঠিক তখনই অলি হাত দ্বারা নিজের ঠোঁটজোড়া ঢেকে ফেলে। আলভী এবার প্রচন্ড পরিমাণে বিরক্ত হয়ে গেলো,
“হাত সরাও।”

অলি নাবোধক মাথা নেড়ে বাম দিকে কয়েকপা সরে দাড়ালো। আলভী অবাক চোখে অলির দিকে তাকিয়ে রইলো, তবে মুখে কিছুই বললোনা। একটা বিরক্তির শ্বাস ফেলে খাটের দিকে চলে গেলো। অলি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পুনরায় চুল আচড়াতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর অলি আড়চোখে বেডের দিকে তাকিয়ে দেখলো আলভী উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। অলি ভাবলো সে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। অলি লাইট নিভিয়ে দিয়ে পা টিপেটিপে খাটের অন্যপাশে শুয়ে পড়লো। তারপর অন্যদিকে ফিরে চোখ বোজার মিনিট খানেক পেরোতেই সে অনুভব করলো কেউ তাকে পেছনের দিকে টেনে নিচ্ছে। অলি ফট করে চোখ মেলতেই আলভী তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার গালজোড়া চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল,
“ফার্দার আমাকে আটকানোর ভুল করবিনা। আমি বেশি কিছু তো চাইছিনা। শুধু তোর ঠোঁটজোড়াই তো চাইছি। আর ভবিষ্যতেও আমি এর থেকে বেশি কিছুই চাইবোনা। শুধু নিজেকে সংযত রাখার জন্য তোর ঠোঁটে অধিকার ফলাতেই হচ্ছে। বোঝার চেষ্টা কর, আ’ম হেল্পলেস।”

আলভীর কন্ঠে অনুরোধের রেশ ছিলো। যেনো খুব প্রয়োজনীয় কিছুর জন্য সে অলির কাছে অনুরোধ করছে। আলভীর এতো অনুরোধের মাঝেও অদ্ভুত একধরনের জেদ ভর করলো অলির মাঝে। সে আলভীর থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। আলভী এর কারণ টা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা।
“আহহহ, কেনো করছিস এমন? আমি কি তোকে ব্যাড টাচ করেছি? করিনি তো, তারপরেও এমন করছিস কেনো?”

অলি এবার কম্পিত কন্ঠে বলে ওঠে,
“আপনি সি’গারেট খেয়েছেন। আর আমি সি’গারেট সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি। আপনি ছাড়ুন আমাকে, আমার গা গোলাচ্ছে। বমি করে দেবো।”

অলির কথাগুলো শুনে আলভী তাজ্জব বনে গেলো। তার হাতের বাধন আলগা হতেই অলি হাত সরিয়ে মুক্ত হয়ে যায়। অলি আরও কিছু বলার জন্য উদ্যত হয় কিন্তু তার গলা ধরে আসছে। মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে কাঠকাঠ হয়ে গেছে। আলভীকে বলে তো ফেলল। কিন্তু এসব শোনার পর আলভী যদি রেগেমেগে তাকে আছাড় দিয়ে বসে? আছাড় দিলে দিক। কিন্তু অলি এসব মানতে পারবেনা। কিছুতেই না। অলি বহু কষ্টে বলে ওঠে,
“আপনার হয়তো সি’গারেট খেতে অনেক ভালো লাগে। দেখুন আমি আপনাকে খেতে বারণ করছিনা। শুধু সি’গারেট খাওয়া ঠোঁট দিয়ে আমাকে চুমু খাবেন না প্লিজ। আমার ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। আমি বমি করে দেবো।”

আলভী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে,
“কিসব কথা বলছো তুমি? এমন ভাব করছো যেন আমার থেকে সি’গারেটের গ*ন্ধ আসছে।”

“আমি নিজের চোখে আপনাকে ওসব বাজে জিনিস খেতে দেখেছি। গন্ধ না আসলেও আপনি যে খেয়েছেন সেটা কি অস্বীকার করতে পারবেন? আমি তো অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে আপনি একজন ডাক্তার হয়ে বি*ষ খাচ্ছেন?”

আলভী দাতে দাত পিষে বলল, “বি*ষ?”

“হু, বি*ষ নয়তো কি? এতো পড়ালেখা করে কি লাভ হলো যদি আপনি কোনটা বি*ষ আর কোনটা হেলদি সেটাই না বোঝেন? আমি ক্লাস টেনে পড়ে বুঝতে পারছি যে ওগুলো বি*ষ আর আপনি ডাক্তারি পাশ করেও বুঝতে পারছেন না? আপনি কি ঘুষ দিয়ে ডাক্তার হয়েছেন নাকি?”

কথাটা শুনে আলভী অলির মুখ চেপে ধরলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। অলিও বুঝতে পারলো সে একটু বেশিই বলে ফেলেছে। কিন্তু সে সি’গারেট প্রচন্ড পরিমাণে ঘৃনা করে।
“চুপ করো নয়তো এই সি’গারেট খাওয়া ঠোঁট দিয়েই জোরপূর্বক চুমু খাবো।”

অলি চুপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর আলভী নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
“শোনো আমি আর খাবোনা ওগুলো।”

অলি আলভীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“সত্যিই?”

“হু, প্রতিদিন আমাকে নিয়ম করে চুমু খেতে দিলে আমি আর ওগুলো খাবোনা।”

“প্রমিস?”

“হু প্রমিস,”

অলি খুশি হয়ে গেলো। অলিকে খুশি হতে দেখে আলভীর রাগও ভ্যানিশ হয়ে গেলো। সে আবারও অলিকে নিজের দিকে টেনে নেয় কিন্তু অলি বাধা দিয়ে বলে, “প্লিজ… না।”

আলভী বুঝতে পারলো অলি সি’গারেট খাওয়া টা অনেক বেশিই সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে। তাই আর সে অলিকে চুমুর জন্য জোর করলোনা।

সপ্তাহ খানেক কেটে গেল। সন্ধ্যার সময় আলভী বাড়িতে ফিরছিলো। তখনই তার ফোনে ঊর্মিলার কল আসে। সে কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ভেসে আসে। “ভাইয়া ভাবী পড়ে গেছে।”

আকস্মিক এমন একটা ঘটনা শুনে আলভীর হার্টবিট থেমে যাওয়ার উপক্রম। সে জোরেশোরে গাড়িটা ব্রেক করে। “হোয়াট?”

“হ্যাঁ, সিড়ি থেকে নেমে ড্রইংরুমে পা রাখার সাথে সাথেই সে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে গেছে।”

সময় যেন থমকে গেলো। খবরটা শোনামাত্রই আলভীর কলিজা শুকিয়ে যেতে লাগলো। সে দ্রুত কল কেটে দিয়ে ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে মাত্র ১০ মিনিটে বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
ড্রইংরুমে পা রাখতেই তার চোখে ধরা দিল সেই দৃশ্য। অলিকে সোফায় বসানো হয়েছে, কিন্তু বসে থাকার মতো অবস্থায় নেই। ব্যথার তীব্রতায় তার সারা শরীর কাঁপছে, ঠোঁট কামড়ে ধরলেও হুহু শব্দ বেরিয়ে আসছে। চোখ থেকে টলমল করে পানি গড়িয়ে পড়ছে, কপালে ঘাম জমে গেছে। সে ডান হাত বুকের কাছে শক্ত করে চেপে রেখেছে, পা সামান্য বাঁকানো, যেন সামান্য নড়াচড়াতেও শরীরে বজ্রাঘাত নামছে। প্রতিটা শ্বাস তার কাঁধ কাঁপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু শুধু ব্যথাই নয়, তার চোখে ভয়ও স্পষ্ট, নিজের জন্য নয়, পেটের ভেতরে থাকা ছোট্ট প্রাণটার জন্য আরও বেশি আতঙ্কে কাঁপছে সে।
“ওওও মায়ায়ায়া মাগোওও মাআআআ। আমার… বাচ্চা।”

আলভী দৌড়ে গিয়ে বসলো অলির সামনে।
“কি হয়েছে? কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?”

“আয়ায়াআ, পায়েএএ হাতেএএ।”

আলভী রাগীচোখে একবার উপস্থিত সবার দিকে তাকালো। বাড়িতে এখন শুধু মহিলারাই আছে। ইয়াদ, উসমান আর ইয়ামিন মির্জা অফিসে আছেন।
“মাহ তোমরা এই অবস্থায় ওকে নিয়ে বসে আছো? ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন টুকুও বোধ করোনি?”

শাহানাজ বেগম ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“বাড়িতে পুরুষ মানুষ কেউ নেই তাছাড়া ড্রাইভারও আজকে আসেনি বাবা।”

আলভী ক্রোধের বশবর্তী হয়ে গজগজ করে উঠলো,
“তো তাতে কি হয়েছে? তোমরা ট্যাক্সিও তো কল করতে পারতে। তোমরা কি করে এতোক্ষণ যাবত ওর কান্না সহ্য করলে? তোমাদের মনে কি একটুও মায়া দয়া নেই?”

শাহানাজ বেগম কিছু বলতে চাইলেও আলভীর অগ্নিঝরা চাহনি দেখে সে দমে গেলেন। আলভী সময় নষ্ট না করে অলিকে কোলে তুলে বাইরে বেরিয়ে যেতে লাগলো ঊর্মিলা আর নূরনাহারও তার পিছু পিছু আসতে লাগলো, শাহানাজ বেগমও হয়তো আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু আলভীর রাগ দেখে সে আর আসার চেষ্টা করেননি।
আলভী এক হাতে অলিকে বুকে জড়িয়ে ধরে গাড়িতে উঠাল। তার কপাল ভিজে গেছে ঘামে। ঊর্মিলা আর নূরনাহার পেছনের সিটে বসে অলিকে ধরে বসলেন। গাড়ি সোজা হাসপাতালের দিকে ছুটে চলেছে।

“আআআ আমার বাচ্চা…আমার বাচ্চা?”

বাচ্চার নাম ধরে অলির আর্তনাদ আলভীকে ভীষণভাবে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। তবুও সে শক্ত গলায় বললো,
“কিচ্ছু হবেনা বাচ্চার। প্লিজ এভাবে কান্না কোরোনা।”

আলভীর কথায় বিন্দুমাত্র শান্ত হলোনা অলি। সে নিজের ব্যাথা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে বাচ্চা বাচ্চা করেই কান্না করছে। হাসপাতালে পৌঁছাতেই ইমারজেন্সি বিভাগের নার্স, ডাক্তাররা আর দিহান হুইলচেয়ার নিয়ে একপ্রকার দৌড়ে এলো। আলভী আগেই কল করে সব রেডি রাখতে বলেছে। সে অলিকে নামিয়ে হুইলচেয়ারে বসাল।

“ও প্রেগন্যান্ট—১৮ সপ্তাহ!” তাড়াহুড়া করে বলল আলভী, যেন ডাক্তাররা এই তথ্যটা ভুলেও এড়িয়ে না যায়।

ডাক্তাররা দ্রুত অলিকে ভেতরে নিয়ে গেল। আলভীও সাথেই গেল। দুজন ফিমেল ডক্টর প্রথমেই বাচ্চার বিষয়টা পরীক্ষা করছেন। আলভীর বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে, প্রতিটা সেকেন্ড যেন ঘণ্টার মতো দীর্ঘ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেটাল মনিটরের শব্দ কানে এলো,

টুপ… টুপ… টুপ… ঠিকঠাক হার্টবিট।

ফিমেল ডাক্তারের মধ্যে একজন বললেন,
“বাচ্চা পুরোপুরি সেফ। হার্টবিট নরমাল আছে, কোনো রকম রক্তক্ষরণ বা প্লাসেন্টার ক্ষতি হয়নি।”

বাচ্চা সেফ আছে শুনে আলভীর বুকের উপর থেকে যেন একটা বড় পাথর নেমে গেল। কিন্তু অলি এখনো হাত, পায়ের ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছে। এরপর কয়েকজন নার্স এসে তাকে সতর্কভাবে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিলেন। তখনই পাশ থেকে দিহান এসে বলল,

“আমি দেখছি, এক্সরে রুম রেডি।” তার গলায় দৃঢ়তা, চোখে পেশাদার মনোযোগ। যেন এক মুহূর্তও নষ্ট করতে চায় না।

এক্সরে রুমের সাদা আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে, দেয়ালে টাঙানো মেশিনের ঠান্ডা ধাতব গন্ধ ভাসছে। আলভী নিজেই এগিয়ে এসে সীসা-ঢাকা প্রোটেক্টিভ এপ্রোন অলির পেটের উপরে ঠিকভাবে বসিয়ে দিল, যেন গর্ভের শিশুর উপর এক্সরে রশ্মি এক বিন্দুও না পড়ে। আলভী অলির কানের কাছে এসে মৃদু স্বরে বলল,
“চিন্তা কোরো না। বাচ্চা একদম সেফ আছে, আর থাকবে,”

কথাটা বলতে গিয়েও আলভী কষ্ট অনুভব করলো। সে পারছেনা অলিকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

মেশিনের শব্দ ক্লিক করে উঠল, আর মনিটরে ফুটে উঠল হাড়ের সাদা কালো ছবি। দিহান মনোযোগ দিয়ে চিত্রগুলো দেখছে। কিছুক্ষণ পর সে বলল,

“ডান হাতের রেডিয়াসে ফ্র্যাকচার আছে… আর ডান পায়ের টিবিয়াতেও চির ধরা পড়েছে।”

আলভী কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু দিহান আশ্বস্ত করে বলল, “ভয়ের কিছু নেই। ফ্র্যাকচার স্টেবল টাইপ। কাস্ট দিলে সেরে উঠবে। তবে প্রেগন্যান্সি থাকায় পেইনকিলার সীমিত ব্যবহার করতে হবে।”

দুইজন নার্স সাবধানে অলির হাত ও পায়ে নরম তুলো পেঁচিয়ে প্লাস্টার বসাচ্ছে, আর আলভী মাথার কাছে দাঁড়িয়ে অলির চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অলি ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রাখতে চাইলেও ব্যার্থ হয়। ব্যাথা এতোটাই অসহনীয় যে তার পুরো দুনিয়াই উল্টে পাল্টে যাচ্ছে। অলির কষ্ট দেখে আলভী আর নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারেনা। সে নিজেও কেদে ওঠে। আলভীকে কাদতে দেখে দিহান ঘাবড়ে গেলো। সে এগিয়ে এসে আলভীর কাধে হাত রেখে বলল,
“আমার মনে হয় বাচ্চাটাকে বাচানোর চেষ্টা করতে গিয়েই ভাবী এতোটা আঘাত পেয়েছে। তবে একবার ভেবে দেখ সে যদি সামনের দিকে পড়তো, তাহলে কি হতো। নিজেকে সামলে নিয়ে শুকরিয়া আদায় কর, বাচ্চা আর ভাবী দুজনেই সেফ আছে।”

আলভী দিহানের কথাগুলো শুনতেই পেলোনা যেন। সে শুধু কান্নাভেজা চোখে অলির দিকেই তাকিয়ে আছে। ইচ্ছা তো করছে অলির সবটুকু কষ্ট নিজের ভেতর শুষে নিতে কিন্তু আল্লাহ তাকে সেই ক্ষমতা দেননি।

সবার পরামর্শ অনুযায়ী আলভী অলিকে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নিলো। হুইলচেয়ারে বসিয়ে অলিকে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হলো। সাদা চাদরে ঢাকা বিছানায় বসতেই সে কষ্টে মুখ বিকৃত করল। আলভী তাড়াতাড়ি বালিশ ঠিক করে দিয়ে পা উঁচু করে রাখল, যেন প্লাস্টার করা পায়ে চাপ না পড়ে। কিছুক্ষণ আগেই ইয়াদ এসেছিলো অলিকে দেখতে। সে যাওয়ার সময় নূরনাহার আর ঊর্মিলাও তার সাথে বাড়িতে চলে গেছে।

রাত নামার সাথে সাথে হাসপাতালের করিডর নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কেবিনের নরম আলোয় আলভী চুপচাপ অলির হাত ধরে বসে আছে। মাঝে মাঝে ফেটাল মনিটরের টুপ… টুপ… শব্দ শোনা যাচ্ছে। অলির চোখ বন্ধ, কিন্তু কষ্টের ছাপ স্পষ্ট।
মাঝরাতে একজন ডাক্তার আর নার্স এসে প্রেসক্রিপশনমতো হালকা ডোজের পেইনকিলার ইনজেকশন দিয়ে বললেন,
“ব্যথা কিছুটা কমে যাবে, কিন্তু ওষুধের পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে যেন গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি না হয়।”

আলভী সারারাত বেডের পাশে থাকা ছোট সোফায় হেলান দিয়ে বসে রইল, চোখে ঘুম নেই। তার হাত তখনও অলির হাতের উপর,

অন্যদিকে,,,

রূপসা বাড়ির ছাদের উপর পায়চারি করছে। কতো কাঠখড় পুড়িয়ে সে অলিকে ফেলে দিয়েছিলো কিন্তু তবুও বাচ্চা আর মেয়েটা দুজনেই বেচে গেলো ব্যাপারটা নিয়ে তার মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। সে নিজের ফোনটা বের করে অপরিচিত লোকটাকে ম্যাসেজ পাঠালো। যে তাকে আড়ালে থেকে সাহায্য করে। সে অবশ্য লোকটার পরিচয় জানেনা। নাতো সে তার সাথে কথা বলেছে। তাদের সব কথা ম্যাসেজেই সীমাবদ্ধ। রূপসা লোকটাকে ম্যাসেজ পাঠায়,
—এই প্ল্যান টা তো ফেল হলো। এবার আমাদের দ্বিতীয় প্ল্যান এপ্লাই করার পালা।

কয়েক সেকেন্ড পার হতেই অপরপাশ থেকে ম্যাসেজের রিপ্লে এলো,
—বেশি তাড়াহুড়ো কর‍তে যেওনা। আগেও অনেকবার বলেছি ওদের সাথে ভালো বিহেভ করো, যেনো ওরা কোনোভাবেই তোমাকে সন্দেহ না করে। কিন্তু না তুমি তো… যাক এবার থেকে ভেবেচিন্তে কাজ করবে।

ম্যাসেজের দিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়না রূপসা, উল্টো নির্বিঘ্নে রেলিঙের উপর হাত রেখে আকাশের পানে তাকিয়ে গুন গুন করে গেয়ে উঠলো,
“ভালোবাসলেই সবার সাথে ঘর বাধা যায়না।
হাজার বছর পাশে থাকলেও, কেউ কেউ আপন হয়না”

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ৩০০০+