১৫ বছর বয়সী মা পর্ব-৬১+৬২+৬৩

0
27

#১৫_বছর_বয়সী_মা (৬১)
#সোফিয়া_সাফা

{রোমান্টিক এলার্ট}

বন্ধ রুমটার ভেতরে খাটের উপর আরিশকে আঁকড়ে ধরে বসে আছে অলি। আলভীকে একপা একপা করে নিজের দিকে আসতে দেখে তার শরীর বরফের ন্যায় জমে গেছে। চোখের কোণেও পানি জমেছে, আলভী বাম হাতে প্যাচানো শেকলটা খুলতে খুলতে এগিয়ে যাচ্ছে, মাথার চুলগুলো এলোমেলো। হাতজোড়া রক্তাক্ত, সারা শরীর ঘামে জবজবে। অলি ঢোক গিলে বলল,
“একদম ভয় দেখাবেন না আমাকে, আপনার জন্যই আমি আপনাকে ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম।”
“চলে আসার আগে আমার পারমিশন নিয়েছিলি?”

আলভীর ঠান্ডা কন্ঠ শুনে অলি আরও গুটিয়ে গেল,
“পা…রমিশন? আপনি আমাকে নিয়ে খারাপ চিন্তা ভাবনা করেছেন। আলোকে নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। তারপরও আমি আসার আগে আপনার পারমিশন নিয়ে আসতাম?”
“তোর কোনো ভুল নেই। ভুলটা আমার, তোকে অত্যাধিক ভালোবাসাটা আমার ভুল ছিল। তোকে স্বাধীনতা দেওয়াটা আমার ভুল ছিল। তোর মতো বেঈমানকে কলিজায় জায়গা দেওয়াটা আমার ভুল ছিল,”

অলির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল,

“ছেলেকে নিচে রাখ।”

অলি প্রথমে কথাটার মানে বুঝতে পারলোনা। অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আলভীর দিকে, আজ যেন আলভীকে সে চিনতেই পারছেনা। আলভী নিজেই অলির কোল থেকে আরিশকে নিয়ে খাটের অন্যপাশে এনে শুইয়ে দিল, অলি পুনরায় আরিশকে কোলে নিতে যাবে তার আগেই আলভী অলির পা ধরে টান দেয়। অলি হুমড়ি খেয়ে বিছানার উপর পড়ে যায়। সে প্রতিক্রিয়া করার পূর্বেই আলভী তাকে একটানে কোলে তুলে নিল। অলির পাদুটো আলভীর কোমড় জড়িয়ে আছে। মাথা থেকে ওড়নাটা অনেক আগেই সরে গেছে, আলভী কোনো কিছু না ভেবেই অলিকে চেপে ধরে তার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়। প্রতিউত্তরে অলির সারা শরীর ঝিমঝিম করে ওঠে, বহুদিন পর অলির শরীরের উষ্ণ ঘ্রাণে আলভী ছটফটিয়ে উঠল। সে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় অলির ঘাড়ের ভাজে কামড় বসিয়ে দিল। অলি ভয়ঙ্কর ভাবে কেপে উঠল। শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল, একপর্যায়ে আলভী বিরক্ত হয়ে তাকে খাটের উপর ছুড়ে ফেলল,
“কি সমস্যা তোর?”

অলির গলা শুকিয়ে আসছে,
“আপনি সিগারেট খেয়েছেন?”

অলির কথাশুনে আলভী থমকে গেল। কিছু মুহুর্ত যেতেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল,
“সিগারেট?”

আলভী অলির দিকে ঝুকে গিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“শুধু সিগারেট নয়। আরও অনেক কিছু খেয়েছি। তবুও তোর আসক্তি কাটিয়ে উঠতে পারিনি।”

আলভী হঠাৎ করেই অলির গলা চেপে ধরল,
“এই, এই, কি করেছিস আমাকে? কেনো করেছিস? মুক্তি দে আমাকে, হয় বাচতে দে নয়তো মে*রে ফেল।”

অলি আলভীর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
“আপনি এরকম করছেন কেনো? আমার আপনাকে স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছেনা। আপনি অস্বাভাবিক আচরণ করেছেন।”

আলভী আরও শক্ত করে অলির গলা চেপে ধরে বলল,
“লোকে যেমন প্রেয়সীর ভালোবাসা পেয়ে অস্বাভাবিক থেকে স্বাভাবিক হয়। ঠিক তেমনি তোর ভালোবাসার অভাবে আমি স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক হয়েছি।”

অলির শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, সে আলভীর হাত সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে এমনকি আলভীর হাতও খামচে ধরেছে কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা, আলভী তাকে ছাড়ছেনা। একপর্যায়ে অলি ছটফট করতে লাগল। পা দিয়ে আলভীকে সরিয়ে দিতে চাইলো। অলির নূপুরের ঝনঝন শব্দে আলভীর হুশ এল। সে অলির গলা ছেড়ে দিয়ে বাম পা চেপে ধরলো, ছাড়া পেয়ে অলি খুকখুক করে কেশে উঠল। তার কাশির শব্দে আরিশের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ছেলেটা স্বভাবতই কেদে ওঠে, অলি আরিশের দিকে এগিয়ে যেতে নিতেই পায়ে টান অনুভব করল। মাথা নিচু করে পায়ের দিকে তাকাতেই সারা শরীর শিউরে উঠল, আলভী নিজের হাতে থাকা শেকলটা অলির পায়ে পড়িয়ে দিয়েছে,
“কি করছেন, এমনটা করবেন না। ছাড়ুন আমাকে।”
“তুই এখন থেকে আমার কয়েদি। আমাকে শেষ করে দিয়েছিস তুই। শাস্তি হিসেবে তোকে বন্দিজীবন কাটাতে হবে। এই জীবনে আর স্বাধীনতার মুখ দেখবিনা। ইচ্ছা তো করছে যেই পা দিয়ে আমার থেকে দূরে আসার দুঃসাহস করেছিস সেই পা ভেঙ্গে ফেলতে কিন্তু না, আমি তার চেয়েও কঠিন শাস্তি দেবো তোকে। তোর পা থাকবে কিন্তু নিজের ইচ্ছামতো হাটার ক্ষমতা থাকবেনা।”

আরিশের কান্নার শব্দে অলি পুনরায় হামাগুড়ি দিয়ে তার কাছে যেতে নেয় কিন্তু শেকলের আরেকপ্রান্ত আলভীর হাতে থাকায় সে আরিশ অবধি পৌছাতে পারেনা।
“বাচ্চাটা কাদছে ছাড়ুন আমাকে।”

আলভী কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে হুট করে শেকলটার অন্যপ্রান্ত খাটের সাথে আটকে দিল। অলি এবার শব্দ করেই কেদে ওঠে। আলভী সবকিছু উপেক্ষা করে এগিয়ে গিয়ে আরিশকে কোলে তুলে নিল, বাবার কোলে উঠতেই আরিশের কান্না থেমে যায়। ঠোঁট ফুলিয়ে টলমলে নয়নে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। আলভী আরিশকে চুমু দিতে গিয়েও নিজেকে সংযত করল। আর যাই হোক সিগারেটের উটকো গন্ধ নিয়ে সে ছেলেকে প্রথমবার চুমু খেতে চায়না। আরিশকে কোলে নিয়েই আলভী এগিয়ে এলো অলির দিকে শেকলের অন্যপ্রান্তটা খুলে নিজের হাতে প্যাচিয়ে নিল।
“তোর যা যা আছে সব গুছিয়ে নে, একটা সুতোও যেন এই বাড়িতে না থাকে। সময় মাত্র ৫ মিনিট।”

অলি ভ্রুক্ষেপ করলোনা, নির্জীব পদার্থের ন্যায় খাটের উপর পড়ে রইল,
“আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করিসনা। আমাকে সামলানোর ক্ষমতা এখনো হয়নি তোর। আমি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেলে তোর মৃ*ত্যু নিশ্চিত। সেই সাথে আলোর আর আমারও মৃ*ত্যু হবে।”

অলি এবার মাথা তুলে আলভীর দিকে তাকাল। তারপর নিজেকে খাট থেকে টেনে তুলে ওয়ারড্রবের দিকে এগিয়ে গেল সেখান থেকে আরিশ আর নিজের সব কাপড় চোপড় বের করে ব্যাগে ভরে নিল। অলি বারবার পায়ে টান অনুভব করছে, তবুও একমনে আলভীর কথামতো সবকিছু গুছিয়ে নিল।
“হু, এবার বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নে। কুইক,”

অলি বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নিল, আলভীর ডানহাতে আরিশ, বাম হাতে শেকল প্যাচানো, সেই হাতেই ব্যাগগুলো নিয়ে সে রুম থেকে বেরিয়ে এল। রুমের বাইরে সবাই তাদের বের হওয়ার অপেক্ষাতেই ছিল। তারা বের হতেই নোমান এগিয়ে আসে,
“ভাই, যা হবার হয়ে গেছে। আপনি দয়াকরে মিসেস অলিকে কিছু বলবেন না।”
“ওহ আচ্ছা, তো এখন কি অলিকে কিছু বলার আগে আমাকে তোমার পারমিশন নিতে হবে?”

নোমান ভড়কে গেল, “না না ভাই। আমি সেটা বলতে চাইনি।”

আলভী গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল, “শুধু বিয়ে করছো বলে আমার হাত থেকে বেচে গেলে। আমি চাইনা তোমার বউ বিধবা হয়ে যাক। তুমিও সেটা চাওনা নিশ্চয়ই?”

আলভীর ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠল,
“ভেবেচিন্তে কথা বলবে। অনেক অনধিকারচর্চা করে ফেলেছো। আর সামনে এগিও না।”

অলি শুধু নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইলো আলভীর দিকে, মুখে কিছু বলার সাহস পেলোনা। আলভীর কথা শুনে রায়া এগিয়ে এসে নোমানের বাহু আঁকড়ে ধরল, নোমান আঁড়চোখে রায়ার দিকে তাকাল।

***

ভোর ৪ টা নাগাদ আলভী অলিকে নিয়ে মির্জা ভিলার সামনে এসে হাজির হয়। গাড়ি পার্ক করে অলির দিকে তাকিয়ে দেখলো অলি ঘুমে তলিয়ে আছে, ঘুমন্ত অবস্থাতেও আরিশকে বুকের সাথে আগলে রেখেছে। আলভী কিছুক্ষণ ভেবে অলির মাথায় মৃদু ধাক্কা দিল,
“এই, ওঠ,”

অলি চোখ মেলে আলভীকে দেখেই সিটের সাথে আরও সিটিয়ে গেল।
“নাম গাড়ি থেকে।”

আলভী মেইন গেটের সামনে এসে এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল, বাড়ির পরিবেশ শান্ত। দু একটা লাইট জ্বলছে। আলভী অলিকে নিয়ে রুমে ঢুকল, অলি আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কোনো আসবাবপত্রই সঠিক কন্ডিশনে নেই। রুমটার অবস্থা বড্ড নাজুক। অলির চাহনি দেখে আলভী গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“এই রুমের যেই অবস্থা, আমার মনেরও সেই অবস্থা। পার্থক্য শুধু—তুই রুমের অবস্থা চোখ দিয়ে অবলোকন করতে পারছিস কিন্তু আমার মনের অবস্থাটা মন দিয়ে অনুভব করতে পারছিস না।”

অলি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইল।
“আমার রুমটা অনেকদিন ধরে অন্ধকারে তলিয়ে আছে৷ এখন যদি আলোর আগমনে একটু উজ্জ্বলতা আসে।”

আলভী আরিশকে অলির কোল থেকে নিয়ে খাটের দিকে এগিয়ে যেতেই অলি পায়ে টান অনুভব করল। আলভীর বাম হাতের সাথে তার বাম পা কানেক্টেড, শেকলটার দৈর্ঘ্য ১০-১২ ফুটের বেশি হবেনা। তাই আলভী যেদিকে যাবে তাকেও সেদিকেই যেতে হবে। আলভী আরিশকে শুইয়ে দিয়ে অলির দিকে তাকায়, অলি ইতস্তত বোধ করে চোখ সরিয়ে নেয়। আলভী একটানে অলিকে কোলে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এনে দাঁড় করায়, ড্রেসিং টেবিলের ভাঙ্গা কাচগুলো দেখে অলির বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠল, সেই সাথে মনে পড়ে গেল আলভীর হাতে সে র*ক্ত দেখেছিল। তার ভাবনার মাঝেই আলভী অলির হিজাব খুলতে লাগল, নিকাব অবশ্য গাড়িতে ওঠার পরেই অলি খুলে ফেলেছিল। হিজাব খোলা শেষে আলভী অলির বোরকা খুলে দিতে উদ্যত হতেই অলি বাধা দিয়ে বলে,
“আমি খুলতে পারবো। আপনার হাতে আমি র*ক্ত দেখেছি। আপনি ব্যাথা পেলেন কিভাবে?”

আলভী উত্তর না দিয়ে অলির বোরকায় হাত দিতেই অলি তার হাত ধরে ফেলে। সামনে এনে দেখে আলভীর আঙুলের গাঁটগুলো থেতলে গেছে,
“কিভাবে হয়েছে?”

আলভী ঝাড়া মে*রে অলির হাত সরিয়ে দিল,
“এসব দেখে তোর কাজ কি? তুই কবেইবা আমার কথা ভেবেছিস?”

অলি নিশ্চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ যেতেই বলে উঠল,
“আপনার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে সব ভুল আমার ছিল। আপনি কিছুই করেননি, আমি শুধু শুধুই আপনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম।”
“আমার হাজারটা ভুল থাকলেও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার অধিকার তোর নেই। আগেও ছিলনা,”

অলি বোরকাটা খুলে হিজাবটাই ওড়নার মতো প্যাচিয়ে নিল।
“তোর আমার কথা একবারও মনে পড়েনি তাইনা? এতো সহজে কিভাবে পারলি ভুলে যেতে?”

অলি সোজাসাপ্টা বলল,
“আমার মনে পড়েছে আপনার কথা। আপনি আমার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। আমি কি করে আপনাকে ভুলে যেতে পারি?”

আলভী নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অলির গালে চড় বসিয়ে দিল। অলি বিস্মিত চোখে আলভীর দিকে তাকাতেই আলভী তার কোমড় চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়, অলি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আলভী অলির ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিল। ঘটনার আকস্মিকতায় অলির চোখজোড়া বড়বড় হয়ে গেল। বেশ অনেকক্ষণ পর আলভী অলিকে ছেড়ে দেয়, তারপর অলিকে কোলে তুলে সোফায় ছুড়ে মারে।
“আজকে তোর এমন অবস্থা করবো যে আর কখনো ভুল করেও সেই কথাটা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবিনা।”

অলি ভীষণ ঘাবড়ে গেল, সোফা থেকে নামতে যাবে তার আগেই আলভী একহাতে অলিকে সোফার সাথে চেপে ধরে আরেক হাতে শার্টের বাটন খুলতে লাগল, শার্টটা খুলে ফেলে দিয়ে অলির হিজাবে হাত দিতেই অলি কেদে ওঠে,
“কি হয়েছে আপনার? কেনো এমন করছেন? এমন করবেন না প্লিজ।”

আলভী অলির কথায় পাত্তা দিলনা, হিজাব টা খুলে সেটা দিয়েই অলির হাতদুটো বেধে দিল,
“আমি তোর ভালোবাসা চাই। ভালোবাসবি না আমায়?”

অলি কান্নাজরিত কন্ঠে বলল, “আমি ভালোবাসি তো আপনাকে। আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি। দয়া করে আমার হাত খুলে দিন। আমি আপনাকে আর কিচ্ছু বলবোনা।”

আলভী নিজের মাঝেই নেই। সে অলির গলায় মুখ গুজে দিয়ে বিরবির করে বলল,
“একটু ভালোবাস আমাকে। বেশি না একটু,”

ভয়ে অলির গলা শুকিয়ে আসছে, আলভীর মাতাল কন্ঠ শ্রবণগোচর হতেই সেই ভয় যেন গন্ডি পেরিয়ে আকাশ ছুইছুই, অলি হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বলতে লাগল,
“আমি ভালোবাসবো আপনাকে।”

আলভী একটানে অলিকে বসাল, কানের কাছে মুখ নিয়ে ব্যাকুল কন্ঠে বলল,
“তাহলে দেরি করছিস কেন? ভালোবাস আমাকে।”

আলভী অলির চোখে চোখ রাখলো। অলি আনমনেই বলে ওঠে,
“আর কিভাবে ভালোবাসবো?”

আলভী অলির গাল স্পর্শ করে বলে,
“আস্তে আস্তে শেখাবো। কিন্তু আগে আমাকে একটু শান্ত কর। করবি?”

অলি ভয়ে ভয়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে,
“কি করলে শান্ত হবেন?”

আলভী অলিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল,
“আমি অনেক কষ্টে আছি পয়জনবি। খুব আদর করতে ইচ্ছা করছে তোকে। জোর করে হলেও আমি আজকে তোকে আদর করবো। তুই আমাকে যত বাধা দিতে চাইবি আমি তত বেশিই ক্ষিপ্রতা সহিত তোকে আদর করবো। তাই নিজের ভালো চাইলে আমাকে বাধা দিবিনা কেমন?”

অলি চুপ করে আলভীর বুকে লেপ্টে রইল। আলভী অলিকে শুইয়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো। দুপা এগিয়ে গিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে আবারও অলির কাছে ফিরে এলো,
“তোকে একটু কষ্ট না দিতে পারলে আমি শান্ত হতে পারছিনা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার। তোর ভালোবাসা কেনো পাচ্ছিনা আমি? এই বিরহ আর সহ্য হচ্ছেনা আমার। তোর মনটা কি দিয়ে গড়েছে আল্লাহ? আদৌ তোর মাঝে হার্ট আছে তো? কিভাবে পারলি আমাকে ছাড়া থাকতে? বল।”

অলি কিছু বলতে পারলোনা। ঠোঁট চেপে কেদে উঠল, আলভী অলির গলায় কিস করতে লাগল, বেশ কিছুক্ষণ পর অলির কানের কাছে মুখ নিয়ে কাতর গলায় বলল,
“আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলেছিস। কেনো? তোকে ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেনো? এতো কষ্ট কিভাবে দিলি আমাকে? একটুও বুক কাপলোনা? আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে একবারও ভাবলিনা?”

আলভীর চোখ থেকেও একফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো, অলি আর সহ্য করতে পারলোনা। বাধা হাতদুটোর ফাঁক দিয়েই আলভীর গলা জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটে চুমু খেলো। কিছুক্ষণ পর আলভী বলে ওঠে,
“এভাবে আমাকে আরও পাগল বানিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছিস? আর পাগল বানাতে হবেনা। এবার ছেড়ে গেলে আমি এমনিতেও বাচবোনা। আমি বাচতে চাই বিশ্বাস কর। আমি ম*রে যেতে চাইনা। তুই আমাকে মে*রে ফেলিস না। আমাকে বেচে থাকতে দে।”

অলি ডুকরে কেদে উঠল,
“আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
“তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি তোর জীবন নষ্ট করে ফেলেছি।”

অলি কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে দিল।
“আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। আমাকে আদর করুন। প্লিজ, আদর করুন, থামবেন না।”

অলি নিজ থেকেই আলভীর গ্রীবাদেশে চুম্বন করতে লাগল। আলভী আর অপেক্ষা করলোনা। অলিকে থামিয়ে দিয়ে তার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরলো। অলির শরীর বেয়ে বয়ে গেল অদ্ভুত এক শিহরণ। আলভীর হাতের এলোমেলো অযাচিত স্পর্শে সে গুঙিয়ে উঠল, তার মুখ নিসৃত শব্দগুলো আলভীকে আরও প্রখর করে তুলল,

চলবে,,,

#১৫_বছর_বয়সী_মা (৬২)
#সোফিয়া_সাফা

একটা বদ্ধ রুম চারদিকে কৃত্রিম আভা। খাটের উপর এলোমেলো অবচেতন দুই নর নারী। উন্মুক্ত দেহদুটো কম্ফোর্টার প্যাচানো। যুবকটি মেয়েটির উন্মুক্ত বক্ষে মুখ গুজে ঘুমে নিমজ্জিত। যারা হলো আলভী আর অলি। এরইমাঝে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে লাবিব। সে নিজের শার্ট খুলে অলির থেকে আলভীকে ছাড়ানোর প্রয়াসে আলভীকে ধাক্কা দিতেই নেশাগ্রস্থ আলভী চোখ মেলে তাকায়। তার রক্তচক্ষু দেখে লাবিব একটা শুষ্ক ঢোক গিলল। নিজেকে সান্ত্বনা দিতে বলল,
“ও আমার কিছুই করতে পারবেনা। আরে ও তো ড্রাংক, আমার সাথে পারবে নাকি?”

লাবিব এসব ভেবেই খাটে উঠে গেল কম্ফোর্টার সরানোর উদ্দেশ্যে হাত বাড়ানোর কিয়তক্ষণের মধ্যেই আলভী তাকে ধাক্কা দেয়। সে টাল সামলাতে না পেরে খাট থেকে পড়ে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় কোমড়ে মারাত্মক আঘাত পেয়ে বহু কষ্টে উঠে দাড়াল, আলভীর দিকে তাকাতেই দেখল, আলভী শান্তচোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তার সেই চাহনি দেখে লাবিব আর এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেলনা। একহাতে কোমড় চেপে ধরে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। লাবিব চলে যাওয়া মাত্রই আলভী অলি সমেত কম্ফোর্টার মুড়ো দিল। প্রায় আধাঘন্টা সেভাবে থাকার পর আলভী অলিকে ছেড়ে খাটের অন্যপ্রান্তে চলে গেল। অসহায় কন্ঠে বিরবির করে বলল,
“আ’ম স্যরি, আ’ম স্যরি।”

বলতে বলতেই আলভীর চোখ লেগে যায়। ঠিক এই সময়েই রিফাত প্রবেশ করল। অলির কম্ফোর্টার টা সরিয়ে বিকৃত আচরণ করতে করতে বলল,
“তুই বলেছিলি ওর দিকে কেউ তাকালে তার চোখ তুলে ফেলবি। হাত বাড়ালে হাত কেটে ফেলবি। দেখ আমি দুটোই করেছি। পারলে কিছু করে দেখা দেখি।”

তার উক্ত কথাটা কানে পৌছাতেই আলভীর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে রিফাতের দিকে তাকাতেই রিফাতের হাতে থাকা ক্যামেরা টা পড়ে গেল। আলভী একবার অলির দিকে তাকিয়ে আবারও রিফাতের দিকে তাকাল, ইতোমধ্যেই আলভীর মুখাবয়ব রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। কালক্ষেপণ না করেই আলভী শোয়া থেকে উঠে একহাতে অলির কম্ফোর্টার ঠিক করে দিয়ে আরেক হাতে রিফাতকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে মুখ বরাবর একটা ঘুষি দিতেই রিফাত দূরে ছিটকে পড়ে। আলভী খাট থেকে নামতে উদ্যত হওয়া মাত্রই রিফাত কোনমতে ক্যামেরাটা তুলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আলভী অনেকক্ষণ দরজার হ্যান্ডেল ধরে টানাটানি করেও দরজা খুলতে পারেনা। কারণ দরজাটা রিফাত বাইরে থেকে লাগিয়ে দিয়ে গেছে। আলভী পুনরায় অলির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে, অলিকে টেনে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরে। সে অলিকে জাগানোর জন্য গালে আলতো চাপড় মা’রল, হিসহিসিয়ে বলল,
“ওপেন ইওর আইস। এই, হানিবি, কি হয়েছে? প্লিজ, আ’ম স্যরি।”

এরই মাঝে আলভী আবারও অদ্ভুত কিছু অনুভব করতে লাগল, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে আলভী পুনরায় অলির ঘাড়ে মুখ গুজলো। অলির উষ্ণ শরীর থেকে নির্গত মিষ্টি ঘ্রাণে আলভী দ্বিগুণ নেশাগ্রস্থ হয়ে পরল। অলির হাতটা নিজের গালে ঠেকিয়ে মুখ তুলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল ঠোঁটজোড়ার পানে। একটা শুষ্ক ঢোক গিলে জিভ দিয়ে নিজের শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে একমূহুর্ত অপেক্ষা না করেই অলির ঠোঁটেজোড়া কামড়ে ধরল। আরও একবার নিয়ন্ত্রণহীন আলভী নিষিদ্ধ উন্মাদনায় অবৈধ স্পর্শে অবচেতন অলিকে কলঙ্কিত করল,

প্রায় একঘন্টা পর ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দ জানান দিচ্ছে রাত ২:২০ বাজে, আলভী এবার পুরোপুরিভাবে শান্ত হয়ে অলির পাশে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ যেতেই চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠল, বহু চেষ্টার পরেও সে সেন্সে থাকতে পারলোনা। অলিকে আগলে ধরেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল, আলভীর একটা বদ অভ্যাস আছে ভালো ঘুম হলেই সে নাক ডাকে। এবারও তাই হলো। আলভীর নাক অলির কানের কাছে থাকায় অনবরত নাক ডাকার শব্দে অলির সেন্স ফিরে আসে।

“ছাড়ুন আমাকে, দয়া করে ছাড়ুন।”

একদিকে আরিশের কান্না আরেকদিকে আলভীর নাক ডাকার শব্দে অলি বিরক্তির শেষ পর্যায়ে চলে গেছে।
অলি আলভীকে সুড়সুড়ি দিল কিন্তু তাও আলভীকে একচুলো সরাতে পারলোনা। সোফায় জায়গা বেশি না থাকায় আলভী সম্পূর্ণভাবে অলির উপরেই ভর দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। একপর্যায়ে আরিশ কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে দিলে আলভীর ঘুম হাল্কা হয়ে আসে,
“এভাবে ঘুমায় কেউ? কাদতে কাদতে ছেলেটা নীল হয়ে যাচ্ছে আর আপনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন?”

অলি এবার আলভীর কানের কাছে মুখ নিয়ে চিল্লিয়ে উঠল,
“উঠুউউউনননন…..

আলভী এবার লাফিয়ে উঠল,
“কি হয়েছে? কি হয়েছে?”

আলভী উঠে যেতেই অলি সোফা থেকে নামতে চাইল কিন্তু সারা শরীর ব্যাথায় টনটন করছে। আলভী বাতি জ্বালাতে এগিয়ে যেতে নিলে অলি বাধা দিয়ে বলে,
“আগে আমার কাপড় খুঁজে দিন।”

আলভী এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা সে স্বপ্নে আছে নাকি বাস্তবে আছে। এতোক্ষণ সে যা যা দেখেছিল সব কি আসেলেই স্বপ্ন ছিল? কিন্তু স্বপ্ন কি করে এতো বাস্তবিক হতে পারে?
“কি হলো? জলদি কাপড় খুঁজে দিন না।”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে অলির কাপড়গুলো খুজতে লাগল কিন্তু অলির সালোয়ার আর আলভীর শার্ট শেকলেই প্যাচিয়ে আছে। আলভী বেশিকিছু না ভেবে শেকলের একপ্রান্ত নিজের হাত থেকে খুলে ফেলল। তারপর কাপড়গুলো অলির দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজেও কাপড় পড়ে নিল। লাইট অন করতেই অলি সোফা থেকে নেমে দাড়াল। কিন্তু মুহূর্তেই তার মাথা ঘুরে যায়। আলভী অলিকে পুনরায় সোফাতে বসিয়ে দিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বলে ওঠে,
“তুমি বসো আমি ছেলেকে নিয়ে আসছি।”

আলভী দ্রুতপায়ে এগিয়ে গিয়ে আরিশকে কোলে তুলে নিল। ছেলেটা কাদতে কাদতে হিচকি তুলে ফেলেছে। কাদার ধরণ একেবারে অলির মতো। আলভীর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।
“ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছেন কেনো? ছেলের কান্না দেখে হাসি পাচ্ছে? আজব বাবা তো আপনি।”

আলভীর হাসি থেমে গেল, ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গেল অলির দিকে। অলি আরিশকে কোলে তুলে বুকের দুধ খাওয়াতে লাগল। আলভী এগিয়ে গেল খাটের দিকে, খাট সহ পুরো রুমটাই এলোমেলো, গোছানো দরকার। আলভী প্রথমে খাট গোছাতে লাগল। আরিশ ঘুমিয়ে গেলে আলভী পুনরায় তাকে খাটে শুইয়ে দিল। অলি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নামাজের সময় পেরিয়ে গেছে, এখন সকাল সাড়ে সাতটা বাজে।
“কখন থেকে ডাকছিলাম, ওঠেন নি কেন?”

আলভী তব্দা খেয়ে গেল, সে ঘুমের ঘোরেও অলির সাথে ইয়ে ইয়ে করায় ব্যস্ত ছিল কিন্তু সেসব অলিকে কিভাবে বলবে? আলভী ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। সেই জন্যই…
“কি এমন স্বপ্ন দেখছিলেন শুনি?”

আলভী আবারও হেসে উঠল, ভীষণ অস্বস্তি ফিল করছে, যেই প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্য নিজের ছেলের NIPP টেস্ট পর্যন্ত করেছিল সে, সেই প্রশ্নের উত্তর এভাবে পেয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি।
আলভীর হাসির ধরন দেখে অলির কপাল কুচকে গেল, আফসোসের সুরে বলল,
“আপনার জন্য আমার নামাজ মিস হয়ে গেল। আমি বসা থেকেও উঠতে পারছিনা। ওয়াশরুমে যাবো কিভাবে?”

আলভী ফট করে অলিকে কোলে তুলে নিল,
“আমি থাকতে চিন্তা কিসের? দরকার হলে আমিই তোমাকে গোসল করিয়ে দেব।”

অলি ছটফটিয়ে উঠল,
“না না। নামান আমাকে, আমি একাই যেতে পারবো।”
“তুমি একটু আগে না বললে? আমার জন্য তুমি বসা থেকেও উঠতে পারছোনা, তো আমার তোমাকে হেল্প করা উচিৎ নয়?”

অলি বারণ করা সত্ত্বেও আলভী তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা লক করে দিল।

ঘড়ির কাটা ৮ টা ছুইছুই, জানালার পর্দা ভেদ করে সূর্যের রশ্মি রুমের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েছে, অলি সোফায় বসে আছে, একহাত দিয়ে সালোয়ারের হাটুর অংশ খামচে ধরে রেখেছে। আলভী তার চুল মুছে দিতে ব্যস্ত, হঠাৎ করেই অলির পেটের মধ্যে গুড়গুড় করে ওঠে, অলি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল,

“তোমার ক্ষুধা লেগেছে?”
অলি না বোধক মাথা নাড়তেই আলভী বলে ওঠে,
“তুমি যে মিথ্যা কথাও বলো তা জানা ছিলনা।”

অলি থতমত খেয়ে গেল। আলভীর দিকে তাকাতেই আলভী হেসে ওঠে,
“তোমার পেট বলছে ক্ষুধা লেগেছে আর তুমি বলছো লাগেনি। কোনটা সত্য?”

অলি নিশ্চুপ থেকে বলে ওঠে,
“পা থেকে এটা খুলে দিন।”
“আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। ওটা খুলে দিলেই যদি তুমি চলে যাও?”
“আমি যাবোনা আর।”
“তুমি একটু আগেও মিথ্যা বলেছো। আমি কিভাবে বিলিভ করবো যে তুমি এবারও মিথ্যা বলছোনা?”

অলি ছলছল নয়নে আলভীর দিকে তাকাতেই আলভী চোখ সরিয়ে নেয়,
“ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে লাভ নেই। তুমি অনেক ছলনা জানো। নইলে সেদিন আমাকে ঘুম পাড়িয়ে পালিয়ে যেতে পারতেনা।”
“পালিয়ে গিয়েই বা কি লাভ হলো? দেড় মাসের মাথায় খুঁজে বের করে ফেললেন।”

আলভীর হাত থেমে গেল, শান্ত কন্ঠে বলল,
“তোমার মনে হচ্ছে দেড় মাস হয়েছে?”

অলি অবাক চোখে তাকায়, আলভী ফের বলে ওঠে,
“দেড় মাস মানে কত সময় জানো?”

অলির কপালের ভাজ আরও গাঢ় হল, মৃদু কন্ঠে উচ্চারণ করল,
“পঁয়তাল্লিশ দিন।”
“পঁয়তাল্লিশ দিন নয় উনপঞ্চাশ দিন/এক হাজার একশো বাহাত্তর ঘন্টা/সত্তর হাজার তিনশো সাতচল্লিশ মিনিট/বিয়াল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার আটশো একত্রিশ সেকেন্ড। আর এই প্রত্যেকটা সেকেন্ড ছিল একঘন্টার সমতুল্য। এবার তুমিই হিসাব করে দেখো তুমি আমার থেকে কত সময় দূরে ছিলে।”

বিস্ময়ে অলির ঠোঁটজোড়া আপনা আপনি ফাঁক হয়ে গেল। চোয়াল টাও ঝুলে পড়ার উপক্রম।
“আপনি এসব কি বললেন?”

আলভী তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠল,
“তুমি বুঝতে পারবেনা, যদি বুঝতেই পারতে তাহলে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে তোমার পাজোড়া অবশ হয়ে যেতো, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতো। হৃৎস্পন্দন থেমে যেতো। তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়া তো দূর একথা চিন্তাও করতে পারতেনা। যদি তুমি জানতে, তোমার অনুপস্থিতি আমাকে কতটা কষ্ট দেয় তাহলে আমাকে এতোটা কষ্ট দিতে পারতেনা। ভালো না বাসলেও একজন মানুষ হিসেবে কেউ কাউকে এতোটা কষ্ট দিতে পারেনা। যতটা তুমি আমাকে দিয়েছো।”

অলি সোফা থেকে নেমে আলভীর সামনে দাড়াল। আলভীর হাতদুটো ধরে মাথা উঁচু করে বলল,
“আপনি আমার উপর এতটা নারাজ?”
“আমি নারাজ হলেই বা তোমার কি?”
“আপনি আমার স্বামী। আপনি নারাজ হলে আমার অনেক কিছু।”
“আমি নারাজ নই। যা সত্যি তাই বললাম। আমি অবশ্যই তোমার ব্যবহারের কষ্ট পেয়েছি। আর আমি যে কষ্ট পেয়েছি সেটাও নিজ মুখে বলতে হচ্ছে। তুমি ভাবতে পারছো আমি কতটা অসহায়?”

অলি আলভীর হাতজোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আঘাত প্রাপ্ত স্থানে ঠোঁট ছোয়াল। আলভী ভ্রু কুচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অলি হঠাৎ করেই আলভীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি যখন আলোকে নিয়ে সন্দেহ করেছেন তখন আমিও কষ্ট পেয়েছিলাম। আপনি কেন সন্দেহ করলেন আমায়? সন্দেহ করার মতো কিছু কি করেছিলাম আমি?”

আলভী হাত সরিয়ে নিল। সে এই ব্যাপারটা ভুলে যেতে চায় কিন্তু অলির জন্য ভুলতে পারবে বলে মনে হচ্ছেনা।
“আমি তোমাকে এই কথাটা বলতে নিষেধ করেছি।”
“বলতে চাইছিনা তো। কিন্তু আমাকে এই ব্যাপারটা শান্তি দিচ্ছেনা। আমি শান্তি পাচ্ছিনা, বিশ্বাস করুন। কেনো সন্দেহ করলেন? বলুন না।”

আলভী অলিকে পাশ কেটে খাটে এসে বসল, অলিও আসতে চাইল কিন্তু পায়ের শেকলের একপ্রান্ত সোফার সাথে লক থাকার কারণে পারলোনা। আলভী আরিশের দিকে তাকিয়ে দেখল আরিশের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। কান্না করবে করবে ভাব। আলভী আরিশকে কোলে নিয়ে বুঝতে পারল, আরিশের ডায়াপার পরিবর্তন করতে হবে, আলভী চোখমুখ কুচকে অলির দিকে তাকায়,
“আই থিঙ্ক হি হ্যাজ পুপড্।”

আলভীর অভিব্যক্তি দেখে অলির হাসি পেল তবুও চেহারায় গাম্ভীর্য টেনে বলল,
“আমার পা মুক্ত না করে দেওয়া পর্যন্ত আমি কিছুই করতে পারবোনা।”

আলভী অলির পাশে গিয়ে বসল,
“মানে কি? আমি ডায়পার এনে দিচ্ছি তুমি চেঞ্জ করে দেও। এটা খোলার প্রয়োজন কি?”
“অতো শত বুঝিনা। হয় এটা খুলে দিন নয় ওকে নিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে বসুন।”

আরিশ ঠোঁট ফুলিয়ে কেদে উঠতেই আলভী তাকে নিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে গেল। সেখান থেকে ডায়পার বের করে নিজেই পরিবর্তন করে দিতে লাগল। এই দৃশ্য দেখে অলির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল,
ডায়পার চেঞ্জ করা শেষে আলভী ফোন হাতে তুলে নিয়ে একজন সার্ভেন্টকে কল দিল,
“দুজনের ব্রেকফাস্ট রুমে পাঠিয়ে দেও।”

আলভী এবার আরিশকে কোলে নিয়ে ওর কপালে ঠোঁট ছোয়াল, এরই মাঝে কেউ একজন দরজায় নক করল, আলভী দরজা খুলে দেখল একজন সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে এসেছে তার সাথে ঊর্মিলা, নূরনাহার আর শাহানাজ বেগমও আছে। আলভী সরে যেতেই তারা রুমে ঢুকল, তাদের আসতে দেখে অলি পায়ে থাকা শেকল আড়াল করে বসল,

“তোমরা সকাল সকাল আমার রুমে?”

নূরনাহার বলল, “দুজনের খাবার দিয়ে কি করবে সেটাই দেখতে এলাম।”

ঊর্মিলা বলল, “আমি তো প্রচন্ড শকড, ভাবী? ভাইয়া তুই ভাবীকে কোথায় পেলি?”

কথাটা বলতে বলতেই ঊর্মিলা আলভীর দিকে এগিয়ে এল, আরিশকে দেখেই তার হাত নিসপিস করছে। আলভী ব্যপারটা বুঝতে পেরে বলল,
“ওই তোর মতিগতি তো ভালো ঠেকছেনা।”
“আহ আমার বাপজানকে একটু দেনা ভাইয়া।”

আলভী না করতে গিয়েও থেমে গেল, আরিশকে ঊর্মিলার কোলে দিতেই ঊর্মিলা ড্যাবড্যাব করে আরিশের দিকে তাকিয়ে থেকে টুস করে ওর ফোলাফোলা গালে চুমু খেয়ে নিল।
“তোর কলেজ নেই?”
“আজকে শুক্রবার ভাইয়া। কলেজ বন্ধ।”

নূরনাহার আর শাহানাজ বেগম অলির পাশে এসে বসতেই অলি মাথা নিচু করে সালাম দিল,
“আসসালামু আলাইকুম”

তারা দুজনেই অলির সালামের জবাব দিল।
নূরনাহার বলল, “তুমি এভাবে কোথায় চলে গিয়েছিলে বউমা?”

অলি হাত কচলাতে লাগল, কি বলবে সে? কোথায় গিয়েছিল আর কেনইবা গিয়েছিল সেসব যে বলার মতো নয়। শাহানাজ বেগম দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমরা ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম হয়তো সেইজন্যই অভিমান করে চলে গিয়েছিল।”

অলি চুপ করে রইল, আলভী এগিয়ে এসে বলল,
“বাদ দেও এসব কথা। ওর শরীর ভালো নেই। ব্রেকফাস্ট করে মেডিসিন খেতে হবে।”

নূরনাহার বসা থেকে উঠে দাড়াল। কিন্তু শাহানাজ বেগম হঠাৎ অলির হাত ধরে কেদে উঠলেন,
“আমাদেরকে ক্ষমা করে দেও বউমা। বিশেষ করে আমাকে, আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। অনেক কটু কথা বলেছি, তোমার বাবা মাকেও ছেড়ে কথা বলিনি। কিন্তু তুমি চলে যাওয়ার পর আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। তোমাকে ছাড়া আমার ছেলেটা ম*রেই যাবে। তুমি দয়া করে আমাদের সাথে রাগ করে ওকে ছেড়ে যেওনা কখনো।”

অলি অবিশ্বাস্য চোখে শাহানাজ বেগমের দিকে তাকাল পরক্ষণেই আলভীর দিকে তাকাতেই আলভীর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল,
“দেখো আমার ছেলেটার কি অবস্থা হয়েছে। তুমিও তো মা, বলোনা একজন মা কি পারে ছেলের এই অবস্থা সহ্য করতে? ছেলেটার দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। এর আগে কখনো এই অবস্থায় দেখেছো ওকে?”

অলির চোখজোড়া জলে ভরে উঠল, টুপ করে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়তেই আলভীর থেকে চোখ সরিয়ে খুব সন্তর্পণে মুছে নিল,
“তুমি চলে যাওয়ার পর আমার ছেলেটা পাগল হয়ে গিয়েছিল। উন্মাদের মতো আচরণ করতো, আমার কাছে মনে হতো ছেলের এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী।”

অলি শাহানাজ বেগমের কাধে হাত রেখে বলল,
“শান্ত হোন আম্মা। আমি আর যাবোনা কোথাও।”
“তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছো তো?”
“এভাবে বলবেন না, আপনি এভাবে বললে আমার খারাপ লাগে।”

শাহানাজ বেগম অলিকে বুকে টেনে নিলেন,
“আজ থেকে তুমি এই বাড়ির মেয়ে। আমি তোমাকে মেয়ের মতো করে রাখবো। যাতে তোমার কখনো এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা না জাগে।”

সবাই চলে যেতেই আলভী অলির পাশে এসে বসল,
“খাবার গুলো খেয়ে পেইন কিলার খেয়ে নেও। ব্যাথা কমে যাবে।”

অলি অভিমানী সুরে বলল,
“আগে আমার পা খুলে দেবেন তারপরই আমি খাবো। নয়তো খাবোনা।”

অলি ভাবল আলভী হয়তো রেগে যাবে কিন্তু আলভী চট করে অলিকে নিজের দিকে টেনে নিল, অলির কপালের উপর ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে বলল,
“আমি খুলে দেবো তার আগে ওয়াদা করো, আমি জীবিত থাকা অবস্থায় তুমি আমার অনুমতি ব্যতিত আমার থেকে দূরে যাবেনা।”

অলি লতানো গাছের ন্যায় মিইয়ে গেল, দৃষ্টি ফ্লোরে ছুড়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। আলভী অলির লজ্জামাখা মুখটা হাতের আঁজলায় নিল,
“তাকাও আমার দিকে,”

অলি আলভীর দিকে তাকাল, গলা শুকিয়ে আসছে। তার অবস্থা দেখে আলভীর ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল,
“মুখ দিয়ে উচ্চারণ করো।”
“কি?”
“বলো যে আমৃত্যু তুমি আমার সাথেই থাকবে।”

অলি সম্মোহনী সুরে বলল,
“আমি ওয়াদা করছি আমৃত্যু আপনার সাথেই থাকব।”

আলভীর মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল, “ধন্যবাদ বউ।”

আলভী অলির গালে নাক ঘষতে লাগল, ফলস্বরূপ অলির শরীর শিরশির করে ওঠে, আলভী নেশালো কন্ঠে বলে,
“তোমার মাঝে এখনও সংকোচ আছে দেখছি। বিলিভ মি তোমার এই সংকোচ, জড়তা গুলো আমাকে আরও বেশি আকৃষ্ট করে।”

অলি আমতা-আমতা করে উঠল,
“আ…মার ক্ষুধা লেগেছে,”

আলভী দুষ্ট হেসে বলল,
“আদর খাবে?”

অলি ছটফট করতে লাগল, পুরো শরীর ব্যথায় জর্জরিত আলভীর অল্প ছোয়াতেই যেন প্রতিটি রক্তকোষ বিস্ফোরিত হচ্ছে। আলভী কোমড় চেপে ধরতেই অলি আর্তনাদ করে উঠল,
“উহ! ব্যা…থা পাচ্ছি।”

আলভী তৎক্ষনাৎ অলিকে ছেড়ে দিল, সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল,
“স্যরি হানিবি। তুমি খাবার খেয়ে নেও। আমি তোমার জন্য মেডিসিন আনছি।”
“তার আগে আমাকে মুক্ত করুন।”

আলভী মাথা নেড়ে অলির পায়ের শেকল খুলে দিল।

চলবে,,,

#১৫_বছর_বয়সী_মা (৬৩)
#সোফিয়া_সাফা

ক্লান্ত দুপুরের অবসান ঘটিয়ে বিকালের দিকে সূর্যের তাপ ম্লান হয়ে এসেছে, আলভীর কোলে থাকা আরিশ আলভীর আঙুল ধরে পিটপিট চোখে তাকিয়ে আছে,
“রূপসা এই বাড়িতে কি করছে?”

অলির প্রশ্ন শুনে আলভী আঁড়চোখে অলির দিকে তাকায়, সেই সুযোগেই আরিশ আলভীর আঙুল মুখে ঢুকিয়ে নিল। আলভী দ্রুতগতিতে হাত সরিয়ে বলে ওঠে,
“ওর বোধহয় ক্ষুধা লেগেছে,”

অলি আরিশের জামাকাপড় ভাজ করা রেখে বলল,
“কিছুক্ষণ আগেই খাইয়েছি। এটা ওর স্বভাব, হাতের কাছে কিছু পেলেই মুখে ঢুকিয়ে নেয়।”

আলভীর ভ্রু কুচকে গেল, আরিশ হাতপা ছড়িয়ে খেলা করছে।
“কিছু জিজ্ঞেস করেছি আপনাকে।”

আলভী ছোট্ট শ্বাস ফেলল, লাঞ্চ করার সময়েই অলির দেখা হয়েছে রূপসার সাথে। তারা দুজন টেবিলের পাশাপাশি চেয়ারে বসেই খাবার খেয়েছে,
“বেশ কয়েকদিন আগেই ইয়াদ রূপসাকে বিয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে।”

অলি থমকে গেল, বিস্ময়ভরা চোখে আলভীর দিকে তাকাল,
“মানেহ?”
“মানে ইয়াদ রূপসাকে আমার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিল তাই আমি ওকেই বাধ্য করেছি রূপসাকে বিয়ে করতে।”

অলির চোখমুখের অভিব্যক্তি মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে গেল,
“আপনি এটা কিভাবে করতে পারেন? ওরা দুজন মিলে আমাকে মে*রে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল। আর আপনি ওদের দুজনকে এক করে দিলেন? এখন এই বাড়িতে আমি থাকবো কিভাবে?”

আলভী কিছু বলতে যাবে এমন সময়েই তার ফোন বেজে ওঠে, কলটা রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই অপর পাশ থেকে দিহানের কন্ঠ ভেসে আসে,
“কিরে, কই তুই? আমরা সেই কখন থেকে ড্রইংরুমে বসে আছি। তোর আসার কোনো নাম গন্ধই নেই।”
“তুই এই বাড়িতে এসেছিস?”
“ইয়েস ব্রো তাড়াতাড়ি এসো, কতদিন হলো তোমার চাঁদমুখ খানা দেখিনা। একবার এসে দেখা দিয়ে যাও বাছাধন।”

আলভী কল কেটে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল, আরিশকে কোলে নিয়েই দরজার দিকে পা বাড়াল, অলি পেছনে থেকে ডেকে উঠল,
“কি হলো? হন্তদন্ত হয়ে যাচ্ছেন কোথায়?”

আলভী দরজা পর্যন্ত এসে পেছন ঘুরে বলল,
“দিহান এসেছে। আমি ড্রইংরুমে যাচ্ছি।”

ড্রইংরুমে এসে দিহানকে পরিবারসহ বসে থাকতে দেখে আলভীর পা থেমে গেল, সে ইতোমধ্যেই দিহানের আসার কারণ সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছে। নূরনাহার, রূপসা আর শাহানাজ বেগম হাতে হাতে তাদের সামনে নাস্তা পরিবেশন করে দিচ্ছে। রূপসা একপলক আলভীর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। তার চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছেনা মনের মধ্যে ঠিক কি চলছে। তবে ইদানীং রূপসা কারো কোনো ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করেনা। বলা যায় সারাটাক্ষন নিজ ভাবনার জগতেই ডুবে থাকে।

ড্রইংরুমের একপাশের সোফাতে মির্জা পরিবারের সদস্যরা আর অন্য পাশের সোফাতে শাখাওয়াত পরিবারের সদস্যরা বসে আছে। এরইমাঝে দিহান আর ঊর্মিলার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়ে গেছে। দুই পরিবারের সম্মতিতে একসপ্তাহ পর বিয়ের দিন তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

সবকিছু ঠিকঠাক করে শাখাওয়াত পরিবারের সবাই চলে গেল। পুরোটা সময় অলি আলভীর পাশেই বসে ছিল, সে বুঝতে পেরেছে ঊর্মিলা আর দিহানের বিয়েটা তার জন্যই আটকে ছিল।
এদিকে ইয়াদ ডাইনিং টেবিলের উপরে বসে বসে পা দোলাচ্ছে। পাশেই রূপসা টেবিল গোছাতে ব্যস্ত, গোছানো শেষে রূপসা চলে যেতে নেয় কিন্তু ইয়াদ তার হাত ধরে ফেলে,
“তোকে বলেছি একটা পেয়ার কেটে দিতে। আর তুই আমার কথা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে চলে যাচ্ছিস? জানিস না স্বামীর সেবা করলে সওয়াব হয়?”

রূপসা ঘুরে এসে ইয়াদের কথামতো নাশপাতি কাটতে লাগলো। এরই মাঝে তার নজর যায় ড্রইংরুমে বসে থাকা অলি আর আলভীর দিকে। এই সময়টাতে তারা দুজন বাদে ড্রইংরুমে আর কেউ নেই। ডাইনিং রুম থেকে অলি আর আলভী যেই সোফাতে বসে আছে সেই সোফার পেছন সাইড দেখা যাচ্ছে।
আলভী একটুকরো আপেল অলির মুখের সামনে ধরে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে,

“আমি খাবোনা।”

অলির কথাশুনে আলভীর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে,
“ওকে তাহলে আমাকে খাইয়ে দেও।”

অলি আলভীর হাত থেকে আপেলের টুকরোটা নিতে চাইলে আলভী বাধা দিয়ে বলে,
“হাত দিয়ে নয়।”

আলভী ইশারায় কিছু বলতেই অলি একটা শুষ্ক ঢোক গিলে আশেপাশে তাকাল, নার্ভাসনেসের কারণে ডাইনিং রুমে থাকা ইয়াদ আর রূপসাকে সে দেখতে পেলনা।
“কি হলো? এতো কি দেখছো?”

অলি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে দূরে সরে যেতে চাইলে আলভী তার কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।
“আমার ক্ষুধা লেগেছে তারাতাড়ি করো। ম*রে যাচ্ছি।”

আলভীর হিসহিসিয়ে বলা কথাটা শুনে অলির গলা শুকিয়ে আসছে, আলভী উত্তরের অপেক্ষা না করেই অলির মুখে আপেলের টুকরো ঢুকিয়ে দিল,

“এটা ড্রইংরুম…..

অলি কথাটা শেষ করতে পারলোনা তার আগেই আলভী একহাতে অলির কোলে থাকা আরিশের চোখজোড়া ঢাকল, আরেক হাতে অলির ঘাড় চেপে ধরে তার অধরজোড়া নিজের অধরদ্বয় দ্বারা কামড়ে ধরল।
এরকম দৃশ্য দেখার জন্য রূপসা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। বেখেয়ালি হয়ে নাশপাতি কাটতে গিয়ে রূপসার হাত কেটে যায়। অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
“আহ…

ইয়াদ ফোন চাপছিল, রূপসার আর্তনাদ শুনে তার দিকে তাকাতেই ইয়াদ ঘাবড়ে যায়, রূপসার দৃষ্টি অনুসরণ করে ড্রইংরুমের দিকে তাকাতেই ইয়াদ ভূত দেখার মতো লাফিয়ে উঠল। তড়িৎ গতিতে রূপসার সামনে দাঁড়িয়ে রূপসার চোখজোড়া চেপে ধরল, তারপর নিজেও চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বলল,
“ওহ গড ভাইয়া এসব কি শুরু করল? রুম থাকতে শেষ পর্যন্ত ড্রইংরুমে?”

ইয়াদ যেই হাত দিয়ে রূপসার চোখজোড়া চেপে ধরে রেখেছে সেই হাত ভেজা অনুভব করল, ইয়াদ বিরক্ত হয়ে রূপসাকে টেনেটুনে কিচেনে নিয়ে গেল, হাত সরিয়ে রূপসার ওড়নায় মুছতে মুছতে বলল,
“তোর চোখে এতো পানি আসে কোত্থেকে? এরকম রোমান্টিক সিন দেখে কাদে কেউ? নাকি অতিরিক্ত আবেগী হয়ে পড়েছিস?”

রূপসা উত্তর না দিয়ে চলে যেতে নিলে ইয়াদ তার বাহু চেপে ধরে।
“দেখি, হাত কেটে গেছে,”

ইয়াদ একহাতে রূপসাকে ধরে রেখে আরেকহাতে কিচেনে থাকা ফার্স্ট এইড বক্সটা বের করলো, তারপর হাতে ব্যান্ডেজ প্যাচাতে প্যাচাতে বলল,
“তোর কি মনে হয়? ভাইয়ার স্পার্ম অলৌকিক ভাবে ভাবীর গর্ভে স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছিল?”

ইয়াদের কথা শুনে রূপসার মাথায় যেন বজ্রপাত হল।
“ভাইয়া মহান হতে পারে কিন্তু আমার থেকে বেশি নয়। তুই যদি ভেবে থাকিস সে আমার মতো নিজের বউকে শোকেসে সাজিয়ে রাখে তাহলে ভুল ভাবছিস।”

রূপসা এবার শব্দ করে কেদে ওঠে,
“এসব বলবেনা, আমার মনে আছে এভি বিয়ের পরেও আলাদা রুমে থাকতো।”
“তো? ভাবী তো বিয়ের আগে থেকেই প্রেগন্যান্ট ছিল। শুধু সম্পর্ক বৈধ দেখাতে ভাইয়া সবাইকে একটা আজগুবি কাহিনি বানিয়ে শুনিয়ে দিয়েছে।”
“তুমি এতোকিছু জানলে কিভাবে?”
“কোনো একভাবে জেনেছি।”

রূপসা মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল, “আর কি কি জানো তুমি?”

“সেসব জেনে তোর কাজ নেই। শুধু জেনে রাখ তোকে ভাইয়াকে ভুলে যেতে হবে।”

রূপসা বামহাতে চোখ মুছে অভিমানী সুরে বলল,
“তাকে ভুলে যাওয়া মানে আ*ত্মঘাতী হওয়া, তাকে ভুলে যাওয়া মানে মৃ*ত্যুর স্বাদ গ্রহণ করা।”

ইয়াদ একমুহূর্ত থামল, পরমুহূর্তেই রূপসার চোখে চোখ রেখে বলে উঠল,
“তুই যেই মূহুর্তে ভাইয়াকে সম্পূর্ণরূপে মন থেকে মুছে ফেলে মৃ*ত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবি ঠিক সেই মুহূর্তে আমি নিজের ভালোবাসা দিয়ে তোকে নতুন করে বাচতে শেখাবো। তবে মনে রাখিস তোর মনের মধ্যে ভাইয়া থাকা অবস্থায় আমার ভালোবাসার স্বাদ তুই গ্রহণ করতে পারবিনা। বিশ্বাস কর, আমি তোকে ভালোবাসতে চাই। দয়া করে হারাম অনুভুতি গুলোকে কবর দিয়ে আমার ভালোবাসার স্বাদ গ্রহণ কর।”

ইয়াদের কথাগুলো শুনে রূপসার গালবেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল, শেষমেশ রূপসা দিশেহারা হয়ে ইয়াদকে জড়িয়ে ধরল,
“তোমার ভালোবাসার স্বাদ অনুভব করার জন্য হলেও আমি মৃ*ত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।”

ধরনীর বুকে বেশ আয়োজন করেই রাত্রী নেমেছে, তা আকাশে থাকা তারকারাজি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অলি ছেলেকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসে আছে। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ আর রূপসা, আলভী তাদের দিকে তাকিয়ে একহাতে কপাল চেপে ধরে বসে আছে।
“তোদের দুটোর টাইম ওভার হয়ে গেছে। বলেছিলাম অলি ফিরে এসেই তোদের শাস্তি নির্ধারণ করবে, ভুলে যাসনি নিশ্চয়ই?”

আলভীর কথার প্রতিউত্তরে ইয়াদ হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। রূপসা মনমরা হয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে, অলি ভ্রু কুচকে আলভীর দিকে তাকিয়ে শান্তকন্ঠে বলল,
“আমি কি শাস্তি দেবো? আপনার আদরের ভাইবোন, যদি মনে হয় ওনারা শাস্তি পাওয়ার মতো কিছু করেছে তাহলে সেই শাস্তি আপনি নিজে থেকেই দিন।”

আলভী বিরক্তি সূচক শব্দ উচ্চারণ করল,
“আমার ভাইবোন বলেই শাস্তিটা তুমি ঠিক করবে। কারণ আমি যদি শাস্তি ঠিক করি সেইক্ষেত্রে তোমার কাছে পর্যাপ্ত বলে মনে না-ও হতে পারে।”

অলির ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল,
“যেদিন আলোর জন্ম হয়েছিল সেদিন আপনার এই ভাই আমার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। আপনি ভাবতে পারছেন? সেদিন যদি আমি ম*রে যেতাম তাহলে কি হতো? আমি কি পারতাম ওনাদের শাস্তি নির্ণয় করতে? তাহলে আপনি ধরেই কেনো নিচ্ছেন না যে আমি ম*রে গেছি।”

কথাটা শুনে আলভী রক্তচোখে ইয়াদের দিকে তাকায়। চোখের পলকেই তেড়ে গিয়ে ইয়াদের গলা চেপে ধরে। আলভী এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলোনা। সে ধরে নিয়েছিল রিফাত, সিদ্দিকের সাথে মিলে ইয়াদ আর রূপসা অলিকে মে*রে ফেলার প্ল্যানে সামিল ছিল কিন্তু ইয়াদ এরকম কিছু করেছে ভাবতেই তার মাথায় র*ক্ত উঠে গেছে।
গলা চেপে ধরাতে ইয়াদের দম আটকে আসছে। সে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো কিন্তু কোনোভাবেই আলভীর হাত সরাতে সফল হলোনা। রূপসা এতোক্ষণ যাবত চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও ইয়াদের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারলোনা। সে দৌড়ে গিয়ে আলভীর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল, একপর্যায়ে বলে উঠল,
“ভাই…য়া ছেড়ে দেও। ওকে ছেড়ে দেও, ও কিচ্ছু করেনি। সব আমি করেছি, তুমি আমাকে মে*রে ফেলো। ওকে ছেড়ে দেও ভাই…য়া।”

আলভী রূপসার কথা কানেই নিলোনা। বরং আরও দ্বিগুণ ক্ষিপ্ততা সহিত ইয়াদের গলা চেপে ধরল,
“ওর একটাই শাস্তি আর সেটা হলো মৃ*ত্যু। দরকার হলে ওকে মে*রে আমি জেলে যাবো। তবুও ওকে ছাড়বোনা।”

রূপসার কান্নার মাত্রা বেড়ে গেল, দিকবিদিকশুন্য হয়ে সে একছুটে অলির পা জড়িয়ে ধরল,
“ভাবী ভাইয়াকে আটকাও। প্লিজ, আমি তোমার পায়ে পড়ছি। ভাইয়া ইয়াদকে মে*রে ফেলবে। আটকাও,”

রূপসার মুখ থেকে ভাইয়া আর ভাবী ডাক শুনে অলি ভড়কে গেল। সেই সাথে আলভীর অবস্থা দেখেও তার হাতপা কাপছে, ইয়াদকে না মে*রে যে আলভী থামবেনা এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তার উপর রুমটা সাউন্ডপ্রুফ, অলি কি করবে ভেবে পেলোনা।
“দয়া করো, ভাইয়াকে আটকাও।”

রূপসার আহাজারিতে অলির ভাবনায় ছেদ পড়ল। টালমাটাল পায়ে বসা থেকে উঠে দাড়াল, আরিশকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে দ্রুতপায়ে আলভীর দিকে এগিয়ে গেল। প্রথমে আলভীর হাত সরাতে চাইলো কিন্তু পারলোনা,
“কি করছেন এসব? থামুন আল্লাহর দোহাই লাগে, এমন করবেন না। ছেড়ে দিন ওনাকে।”

আলভী একহাতে অলিকে ঠেলে সরিয়ে দিল, অলি এবার পেছন থেকে আলভীর শার্ট টেনে ধরে রূপসার উদ্দেশ্যে বলল,
“তুমি গিয়ে বাড়ির সবাইকে ডেকে নিয়ে এসো। দেরি কোরোনা তাড়াতাড়ি যাও,”

রূপসা হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

এইপর্যায়ে ইয়াদের মুখ দিয়ে র*ক্ত বেরিয়ে এলো। অলি এবার সহ্য করতে না পেরে কেদে ওঠে, আর যাই হোক স্বামীর হাতে তারই ভাইকে খু*ন হতে সে দেখতে পারবেনা। অলি এবার সুযোগ পেয়ে আলভী আর ইয়াদের মাঝে এসে দাঁড়ায়, অলিকে দেখে আলভী একমূহুর্তের জন্য থমকে গেল, সাথে সাথেই অলি আলভীকে জড়িয়ে ধরে। অলির উষ্ণ আলিঙ্গনে আলভীর হাত ঢিলে হয়ে আসে। ফলস্বরূপ ইয়াদ ছাড় পেয়ে ফ্লোরে বসে পড়ল। বাড়ির সবাই হন্তদন্ত হয়ে রুমে আসতেই অলি আর আলভীকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, আলভী শক্ত করে অলিকে জড়িয়ে ধরে আছে। এরইমাঝে নূরনাহারের চোখ যায় ইয়াদের দিকে, ইয়াদকে ফ্লোরে বসে হাপাতে দেখে সে চিন্তিত হয়ে পড়ল,
“একি, কি হয়েছে বাবা?”

ইয়াদ দ্রুতহাতে চোখমুখ মুছে স্বাভাবিক হতে চাইলো। কিন্তু পারলোনা, হলুদ রঙের শার্টে লেগে থাকা র*ক্ত দেখে নূরনাহার বিচলিত হয়ে পড়লেন। রূপসা তো ইয়াদের বাম বাহু আঁকড়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাদের চার জনের দিকে তাকিয়ে আছে।

“হয়েছেটা কি? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা।”

ইয়ামিন মির্জার প্রশ্নে আলভীর হুশ ফিরলো, সে অলিকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল,
“কি হয়েছে সেটা বরং আপনি আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করুন কাকা।”

“এভি তুই ইয়াদের উপর হাত তুলেছিস?”

উসমান মির্জার প্রশ্নের উত্তরে আলভী নিজের চুল খামচে ধরে বলল,
“শুধু হাত তুলিনি। আমি ওকে মে*রে ফেলতে চেয়েছি।”

নূরনাহার এবার ভ্রু কুচকে ইয়াদের দিকে তাকালেন,
“ইয়াদ কি করেছিস তুই?”

ইয়াদ কথা বলার মতো অবস্থাতেই নেই। শাহানাজ বেগম নূরনাহারের কাধে হাত রাখলেন,
“আরে দেখতেই তো পাচ্ছো ছেলেটার কি অবস্থা। এই অবস্থায় এসব প্রশ্ন না করলেই কি নয়? আর এভি তুই অত্যন্ত ভুল করেছিস। ইয়াদ কিছু করে থাকলেও ওকে এভাবে মা*রধর করা উচিৎ হয়নি।”

অলি আলভীর শার্টের পেছনের অংশ খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে সারা শরীর থরথর করে কাপছে। এর আগে আলভীকে এতোটা রেগে যেতে সেদিন দেখেছিল যেদিন রূপসা অলিকে নিয়ে কটুক্তি করেছিল। এর বাইরে আলভীকে এতোটা হিংস্র রূপ ধারণ করতে দেখেনি সে।

রাত ১০ টা,

ড্রইংরুমের সোফায় সবাই গোল হয়ে বসে আছে, ইয়াদ কিছুটা স্বাভাবিক হতেই নিজ মুখে নিজের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেছে। তার এসব কর্মকাণ্ডের কথা শুনে নূরনাহার শাড়ির আঁচলে মুখ গুজে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন, এগিয়ে গিয়ে ইয়াদের গালে চড় বসিয়ে দিলেন,
“ছিহ লজ্জা করলোনা ভাইয়ের সাথে এমন কিছু করতে? এভি তোকে কি মা*রবে, আমি নিজেই তোকে মে*রে ফেলবো।”

নূরনাহার আবারও ইয়াদকে চড় মারতে নিলে রূপসা সামনে এসে দাঁড়ায়। ফলস্বরূপ চড়টা গিয়ে তার গালে লাগে, রূপসা মাথা নিচু করে বলে ওঠে,
“সব দোষ আমার। আপনারা ইয়াদকে কিছু বলবেন না। ও আমার জন্যই এসব করেছে।”

ইয়ামিন মির্জা তিক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
“হ্যাঁ তোকে আর কিছুই বলতে হবেনা। আমরা বুঝে গেছি সবটা। এই নালায়েক ছেলেটা এমন জঘন্য কিছু করবে সেটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিলো বৈকি, হ্যাঁ রে তোর কি মনে হয়? অলি বউমাকে মে*রে ফেললেই এভি রূপকে বিয়ে করে নিতো? শুধু শুধু কেনো এসব করলি? আমার উঁচু মাথাটা নিচু করে দেওয়ার আগে বিবেকে বাধলোনা?”

ইয়াদ মূর্তির মতো বসে রইল। সবার থেকে এতো এতো তিরস্কার পেয়ে ম*রে যেতে ইচ্ছা করছে। ইয়ামিন মির্জা আলভীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এভি, তোর যা ইচ্ছা কর ওর সাথে। ওর মতো ছেলের দরকার নেই আমার।”

আলভী অলির দিকে তাকালো।
“অলি,”

ডাক শুনে অলি মাথা তুলে আলভীর দিকে চাইলো,
“আমি ওকে মে*রে ফেলতে চেয়েছিলাম। তুমিই ওকে বাচিয়েছো তাই ওর শাস্তি এবার তুমিই নির্ধারণ করবে।”

অলি থতমত খেয়ে গেল, এরইমাঝে ইয়াদ হঠাৎ করে বসা থেকে উঠে দাড়াল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়াদ অলির সামনে এসে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল,
“আমাকে ক্ষমা করে দেও ভাবী। আমি অন্যায় করেছি, কিন্তু বিশ্বাস করো আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা। আমি শুধু চেয়েছিলাম রূপকে যেন মৃ*ত্যু যন্ত্রণা সহ্য করতে না হয়।”

অলি ভ্রুকুটি করল, “মানে?”

ইয়াদ একটা শ্বাস ফেলে বলল, “রূপ ভাইয়াকে অসম্ভব ভালোবাসে।”

আলভীর মেজাজ খারাপ হলো, “আমি রেগে যাচ্ছি, ফালতু কথা একদম বলবিনা। একবাচ্চার বাপকে ভালোবেসে ও কোনো মহৎ কাজ করে ফেলেনি।”

রূপসা মাথা নিচু করে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। ইয়াদ শান্তকন্ঠে বলল,
“ও তোমাদের বিয়ের আগে থেকেই তোমাকে ভালোবাসতো ভাইয়া। ওর অনুভূতি টা নতুন নয়। ওর ভাগ্য খারাপ যে তুমি সেই অনুভূতিটাকে কখনো মূল্য দেওনি।”

আলভী বিরক্তির শ্বাস ফেলে ঊর্মিলার দিকে তাকালো, ঊর্মিলা পাশের সোফাতেই আরিশকে কোলে নিয়ে বসে আছে। এরইমাঝে অলি বলে ওঠে,
“আপনি শুধু রূপসা আপুর অনুভূতি টাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন ভাইয়া। আপনার কাছে আর কারো অনুভূতির গুরুত্ব নেই। আচ্ছা, যার মনে রূপসা আপুর জন্য তিল পরিমাণও অনুভূতি নেই সেই মানুষটার সাথে বিয়ে হয়ে গেলেই কি রূপসা আপু সুখী হতে পারতো? আপনি রূপসা আপুর সুখ চাননি। শুধু চেয়েছেন তার আবদার পূরণ করতে। সে আলোর বাবার বউ হওয়ার আবদার করেছিল আর আপনি সেই আবদার পূরণে মরিয়া হয়ে উঠলেন। বিয়ের মাধ্যমে একটা সম্পর্ক পূর্নতা পায় ঠিকই কিন্তু সেই সম্পর্কে উভয় পক্ষের অনূভুতি থাকাটাও জরুরি। অন্তত দুজনের পিছুটান আছে কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়াটা প্রয়োজন। তবে এই পিছুটান কিন্তু রূপসা আপুর মনে থাকা ওনার জন্য হারাম অনুভুতি গুলোকে বোঝায় না। এটা পিছুটান নয় এটা একধরনের পাপ। মানলাম সে ওনাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে কিন্তু তাকেও তো বুঝতে হবে কোনটা হারাম আর কোনটা হালাল। ওনার অনুভূতি গুলো হারামে পরিনত হয়েছে। আর আমি মনে করি এই হারাম অনুভুতি গুলো যতদ্রুত সম্ভব মন থেকে মুছে ফেলা উচিৎ।”

অলির কথাগুলো শুনে সবাই বিস্মিত চোখে তার দিকে তাকায়। অলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে নূরনাহারের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো,
“আমি আপনাকে ক্ষমা করে দেবো শুধুমাত্র কাকিমার জন্য।”

নূরনাহার কান্নাজরিত কন্ঠে বলল, “না বউমা। তুমি ওকে ক্ষমা কোরোনা। ও ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। এভি একটা কাজ করো তোমরা ওকে আইনের হাতে তুলে দেও।”

ইয়াদ অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকায়। তার মলিন মুখটা দেখে নূরনাহারের কান্নার মাত্রা বেড়ে গেল।

“তো কি ঠিক করলে?”

আলভীর প্রশ্নে অলি শ্বাস ফেলে উত্তর দিল,
“ওনারা যেহেতু অনুতপ্ত, ক্ষমাও চেয়েছে সেহেতু আমি ওনাদের ক্ষমা করে দিলাম।”
“ওকে, তাহলে সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে।”

আলভীর কথার মানে বুঝলোনা কেউ, আলভী হঠাৎ বসা থেকে উঠে দাড়াল,
“ওদের সাথে এক বাড়িতে থাকাটা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই আমি ঠিক করেছি বউ বাচ্চাকে নিয়ে অন্য কোথাও শিফট হয়ে যাবো।”

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ২৪০০+