#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_২০
#ইশরাত_জাহান
🦋
“আমার থেকে পালাচ্ছিস ভালো কথা।কিন্তু খাঁচার পাখি উড়াল দিয়ে অন্য খাঁচায় যাস না।এই রুদ্র সইতে পারবে না।”
প্রতিউত্তর করে না হিয়া।পিছনে ঘুরে দরজা খুলতে যায়।রুদ্র হিয়ার হাত আটকে ধরে।হিয়া রুদ্রের ছোয়া পেয়ে আজ ভয় পায়।এই হাত যে কাউকে খুন করেছে।রুদ্র হিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,”কার থেকে পালাচ্ছিস তুই?তুই যার থেকে পালাবি তার থেকেও ভয়ংকর রূপ দেখতে পাবি।”
হিয়া চুপ করে শুনলো রুদ্রের কথা।ভাবতে লাগলো সে তো রুদ্রের দুর্বলতা হয়ে তাকে বিনাশ করতে চায়।তাহলে এমন ভয় পেলে তো হবে না।সাহস নিয়ে হিয়া বলে,”পালাবো কেন আমি?আমি তো শুধু অবাক হয়েছি আপনি আমার লাইব্রেরীতে।”
“আমি তো প্রায়ই আসি এখানে।”
“এভাবে এত সকালে আমার আগে আসেন না আপনি।তাই ভয় পেয়েছি।”
“আচ্ছা?”
“হুম।আপনি কি গল্পের বই পড়বেন?”
“না।তুই পড়বি আমি শুনবো।তোর মুখে ওই সাহিত্যিক প্রেমের বিশ্লেষণ শুনলে আমার মনের ভালোবাসার জাগ্রত হয়, হিয়াপাখি।”
হিয়া হালকা হেসে বুকশেলফ থেকে বই নিয়ে পড়তে থাকে।রুদ্র টেবিলে দুই হাত ভাঁজ করে তাতে মাথা এলিয়ে তাকিয়ে থাকে হিয়ার দিকে।হিয়ার বইয়ের মাঝে আবদ্ধ চোখ।চশমার ভিতরে বড় বড় পাপড়ি আলা চোখ,বইয়ের প্রতিটি লাইনের সাথে সাথে চোখের দৃষ্টি পাল্টাতে থাকে।ঠোঁটের নড়াচড়ার পরিবর্তন হতে থাকে।রুদ্র হিয়ার বলা কথাগুলো কানে নিচ্ছে না।কারণ তার মন জুড়ে হিয়ার মুখমণ্ডল বিরাজ করছে।হিয়া বুঝতে পারছে রুদ্রের এই দৃষ্টি।কিন্তু সে পাত্তা দিচ্ছে না।সে চায় রুদ্র এখন তার প্রতি দূর্বল হোক।তারপর সে রুদ্রের থেকে ভালোবাসার ছলনা করে সবকিছু আদায় করে নিবে।
ঢাকার এয়ারপোর্টে এসে প্লেন থেকে একে একে নামতে থাকে সব গার্ড।সবাই নেমে সাইড হয়ে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকে।তারপর প্লেন থেকে নামে রাজ।রাজের পরপরই প্লেন থেকে নেমে পড়ে মায়া। পিয়াশ মৌয়ের হাত ধরে একসাথে নামতে থাকে প্লেন থেকে।চেকিং কমপ্লিট করে মায়া রাজ ও মৌ পিয়াশ এক জায়গায় দাড়ায়। গার্ডগুলো তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।মায়ার দিকে তাকিয়ে রাজ কিছু বলতে যাবে তার আগে মায়া দৌড়ে যেয়ে কোনো এক যুবককে জড়িয়ে ধরে।রাজ ও পিয়াশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পিয়াশ বলেই ফেলে,”এ আবার কোন চরিত্র?”
মায়া যুবকটিকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ডু ইউ মিস মি?”
যুবকটি মায়ার গালে হাত রেখে বলে,”মিস ইউ লট মাই বেবিডল।”
মায়া একগাল হেসে তারপর যুবকটির হাত ধরে রাজের সামনে আসে।রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”মিট মাই উড বি,মিহির।”
রাজ অবাক হয়ে বলে,”উড বি?”
মায়া মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”ইয়াহ, মাই ওয়ান অ্যান্ড ওনলি লাভ।আপনাকে তো বলেছিলাম আমার জীবনে কেউ আছে।ওই যে চট্টগ্রামে যাওয়ার দিন প্লেনে।”
রাজের মনে পড়ে যায়।তারমানে মায়া এই ছেলেটির কথা বলেছিলো।মায়া মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”ইউ নো হোয়াট?আমাদের মন্ত্রী মশাই আমাকে পুরো জার্নিতে সাপোর্ট করেছে।আমাকে অনেক বিপদের মুখ থেকে রক্ষা করেছেন তিনি।তার জন্যই বলা যায় আমি বেঁচে গেছি।উনি না থাকলে হয়তো আমার উপর আরো অ্যাটাক হতো।”
মিহির সহানুভূতি প্রকাশ করে বলে,যদিও আমার বেবিডল অনেক ব্রেভ। ও এমনিতেই সবকিছু ম্যানেজ করে নিতো কিন্তু আপনি ওকে অনেক হেল্প করেছেন।থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
রাজ কোনো রিয়েকশন দেখায় না। মায়া মিহিরের হাত ধরে চলে যায়।রাজ তাকিয়ে দেখছে মায়া ও মিহিরের হাত একসাথে।তারা একই দিকে একসাথে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে।গাড়িতে উঠে মায়া মিহিরের দিকে তাকিয়ে ভিলেনি হাসি দিয়ে বলে,”গুড জব।”
মিহির নিজেও হো হো করে হেসে বলে,”তোমার মন্ত্রী মশাই তো পুরো বোম হয়ে আছে, বেবিডল।বেচারা বুঝলো না আমরা নাটক করছি।”
“শাহমীর রাজকে এত কাচা ভেবো না মিহির ভাই।ওনার চোখে আগুনের আভাস দেখেছি।যেটা এখন দাউ দাউ করে জ্বলবে আর তার বেনিফিট আমার হবে।”
সন্ধায়,
মোহন সরদার আজ ক্ষেপে আছেন।তার কোম্পানির প্রমোটের জন্য একজন অ্যাকট্রেস হায়ার করেছিলো।সে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিলো।সামান্য একটু খাবার খেয়ে তার সুনাম করবে ক্যামেরার সামনে।এটাই ছিলো কোম্পানির প্রমোটের বিশেষ কাজ।এটা বিভিন্ন চ্যানেলে এড হয়ে আসলে তার বেনিফিট হবে।কারণ সে এখন কোনো ডিল পাচ্ছে না।আবার ছোটখাটো দোকান ছাড়া তার খাবারগুলো কেউ নিচ্ছে না।মোহন সরদার তার এসিস্ট্যান্টকে জোর গলায় বলেন,”কোথায় সেই মারিয়া?আমার থেকে মোটা টাকা নিয়ে পালিয়েছে কেনো?”
এসিস্ট্যান্ট ভয় পেয়ে যায়।বলে,”আসলে স্যার উনি কোন ফ্যাশন হাউজের প্রোমোট করতে গেছে।ওটা নাকি ওভার বেনিফিট।”
“তাকে তুলে আনো নাই কেনো?”
“আমরা গিয়েছিলাম।কিন্তু ওই কোম্পানির সিইও অনেক পাওয়ারফুল।তাই সফল হইনি।”
“গাড়ি বের করো মারিয়ার শুটিং প্রেজেন্ট স্পটে।আমি দেখতে চাই কেমন পাওয়ারফুল সিইও।”
বলেই গাড়ি করে বের হয় মোহন সরদার। সোজা মারিয়া মানে প্রোমোট এর শুটিং স্পটে এসে দাড়ালো মোহন সরদার।রাগে হুংকার ছেড়ে মোহন সরদার মারিয়ার বাহু শক্ত করে ধরে বলে,”মা**,তোকে বিছানায় নিয়ে ভালোবেসেছিলাম বলে বেশি লাই পেয়েছিস?আমার কাজের জন্য টাকা নিয়ে আবার আমার সাথে বেইমানি করছিস।”
মারিয়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখে।সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। হ্যাঁ এটা সত্যি যে সে মোহন সরদারের সাথে পার্টনার হয়েছিলো।ইনফ্যাক্ট মোটা অঙ্কের টাকা দুই কাজের জন্য পেয়েছে।কিন্তু এই ডিলটাতে বেনিফিট ছিলো। আর এর জন্য তাকে মোহন সরদারের থেকেও বেশি টাকা দেওয়া হবে।মোহন সরদারকে নিজের পার্সোনাল রুমে এনে ইজি চেয়ারে বসিয়ে দেয় মারিয়া।মোহন সরদারের কোলে বসে বলে,”রিলাক্স সুইটহার্ট।আমি তো এই জায়গায় শুট শেষ করে তোমার কাছে যেতাম।আমি তোমার কাজটাও করবো।এত হাইফার হচ্ছো কেনো?”
“গুল্লি মারি তোর রিলাক্স এর।আমার কাজ বাদ দিয়ে এখানে এসেছিস কেনো?”
“ওহ হো হানি। ইটস কলড বেনিফিট।এই কোম্পানির সিইও আজ চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন।ওনার হাতে সময় কম।তাই আমাকে ডাবল পেমেন্ট করে শুটিং করতে নিয়ে এসেছে।”
কে শোনে কার কথা।মোহন সরদার তড়িৎ গতিতে মারিয়াকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো নিজের কোম্পানিতে।মারিয়াকে ছুড়ে মারে একটি সোফায়।তারপর একজন মেয়েকে বলে,”ওকে রেডি করে দেও।”
মেয়েটি তৈরি করে দেয় মারিয়াকে শুটিংয়ের জন্য।তৈরি হওয়ার পর মারিয়া ক্যামেরার সামনে আসলে কিছু পুলিশ হাজির হয় সেখানে।ক্যামেরার পিছনে চেয়ারে বসেছিলো মোহন সরদার।পুলিশ দেখে অবাক হলেন তিনি।চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছেন সেদিকে।পুলিশ এসে মোহন সরদারকে বলে,”একটি মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগে আপনাকে অ্যারেস্ট করা হবে,মোহন সরদার।”
“হোয়াট?আমি কাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করাচ্ছি?”
“আপনি মিস মারিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ শুটিং থেকে জোর করে নিয়ে এসেছেন।সাথে করে ওই কোম্পানির পুরো দিনের কাজকে ওয়েস্ট করেছেন।তারও অভিযোগ করা হয়েছে। আপনি যার কোম্পানির ক্ষতি করতে চেয়েছেন সে এই কেস করেছে।”
“আমি যে তার ক্ষতি করেছি অথবা মারিয়াকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এনেছি তার কোনো এভিডেন্স আছে?”
“বিনা কোনো এভিডেন্সে চলে না মেহেরুন জাহান মায়া।মায়ার কাজ ও মায়ার ইচ্ছা মায়ার জীবনের মেইন টার্গেট।সেই টার্গেটে যে বাধা হয়ে আসে তার জীবনে কাল হয়ে আসে এই মায়া।নামের সাথে কিন্তু কাজের মিল নেই মিস্টার মোহন সরদার।”
বলতে বলতে সেখানে এন্ট্রি নেয় মায়া।মোহন সরদার তাকায় মায়ার দিকে।মায়ার মুখে রহস্য বিদ্রুপ নিয়ে ভরা।
মায়ার দিকে তাকিয়ে মোহন সরদার বলেন,”কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”
“আপনি মনেহয় দেখেননি আপনি যখন শুটিং স্পটে এন্ট্রি নেন তখন মারিয়ার শুটিং চলছিলো।সে তখন ক্যামেরার সামনেই ছিলো।আপনি বয়সে বড় হলেও খেলায় কাচা।অবশ্য এমন ইউজলেজ নারী আসক্তি পুরুষদের কি অন্যদিকে হুশ থাকে!আপনার আর মারিয়ার সমস্ত কীর্তিকলাপ আমাদের ওই ক্যামেরায় সুন্দরভাবে সেট হয়ে আছে।”
মোহন সরদার চুপ হয়ে গেলেন।মরিয়া ভয় পেয়েছে।যদি ভিডিও ভাইরাল করে দেয় মায়া।মায়া পুলিশদের উদ্দেশে বলে,”নিয়ে যান আসামিকে।আমার জীবনে কাল হয়ে আসার একটা ডেমো তো তাকে দেখতেই হবে।এনার এই কাজে আমার কোম্পানির লস হতে পারে।প্রমোট না পেলে তো আমি উন্নতি করতে পারবো না। আর আমার সাথে যেভাবে ডিল করেছে তার প্রমাণ আমার কাছে আছে।সুতরাং আমি তো তাকে শাস্তি দিবোই।”
মোহন সরদারকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে যায়।যাওয়ার সময় মোহন সরদার অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।মায়া ডেভিল হাসি দিয়ে তাকায় মোহন সরদারের দিকে।মোহন সরদার চলে যাওয়ার পর মায়া তাকায় মারিয়ার দিকে। মারিয়া সাথে সাথে চলে যায় মায়ার ঠিক করা শুটিং স্পটে।সবাই চলে যাওয়ার পর মায়া তার গলায় হাত দেয়।গলায় থাকা ছোট লাভ শেপের একটি লকেট সহ চেইন আছে। লকেটটি হাতে নিয়ে খুলে দেখতে থাকে।ওখানে ছোটবেলার মায়া ও শাহানা পারভীনের ছবি আছে।মায়া শাহানা পারভীনের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি আজ পেরেছি মা।এক একটা করে সবাইকে শেষ করে দিবো।আজ মোহন সরদার জেলে গেছে। হ্যাঁ উনি ওনার পরিবারের দাপটে ছাড়া পাবে।কিন্তু শান্তিতে থাকতে পারবে না।কারণ মন্ত্রী মশাই এখন মায়ার পাতানো ফাঁদে পা ফেলেছেন।তার কি আর হুশ আছে পরিবার কোথায়?”
বলেই ডেভিল হাসি দিতে থাকে মায়া।
রাগে গজগজ করে রাতের বেলায় বাসায় ফিরে রাজ।এতক্ষণ তার কাজে ছিলো।কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসে।বাসায় এসে পুরো অবাক হয়ে যায় রাজ।সবকিছু পাল্টে গেছে।বাড়ির সমস্ত লাইট অফ করে অন্ধকারে ছোট ছোট লালবাতি জ্বালিয়ে পার্টি করছে সোনালী ও তার বন্ধু বান্ধবী। পরিবারও আছে এখানে। জারা মিলি ও মালিনী আছে সেখানে।সিয়া হিয়া নিজেদের ঘরে দরজা আটকে বই পড়ছে।ওদের এসব ভালো লাগে না।রুদ্র বাইরে আছে।মাহমুদ সরদার নিজের গ্রামে গেছেন কাল আসবে।মন টানলেই তিনি গ্রামের বাড়ি যেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত করে আসে।রাজ বাড়ির এই অবস্থা দেখে থ মেরে দাড়িয়ে থাকে।রাজ জানে না মাহমুদ সরদার নেই। জারা ড্যান্স করছিলো হঠাৎ দেখলো দরজার দিকে রাজ দাড়িয়ে।রাজের চোখ লাল কপালের শিরা ফুলে আছে।কিন্তু এটা কারো নজরে নেই। জারা রাজের দিকে এগিয়ে এসে বলে,”ওহ মাই বেইবী।তুমি এসেছো। মিস ইউ লট, বেইবী।”
জারা একটু টান দিয়ে কথা বলে।যেগুলো বিদেশে ব্যাবহার করা হয়।রাজ এমনি ক্ষেপে আছে আবার এখন উটকো জারা হাজির।রাজ গুরুজনদের দেখে প্রতিক্রিয়া করে না।সোজা চলে যায় নিজের ঘরে।রাজ উপরে যাওয়ার পর পরই রুদ্র আসে বাড়িতে।কিন্তু রুদ্র দেখতে পায়নি রাজকে।সোনালী জারার কাছে এসে একটি ওয়াইংয়ের বোতল ও দুইটা গ্লাস দিয়ে বলেন,”এটা নিয়ে যাও রাজের ঘরে।রাজের দিকে আসার জন্য এটার থেকে বেস্ট টনিক আর হতেই পারে না। আর হ্যাঁ এই টেবলেট রাজের ড্রিংকে মিলিয়ে দিবে।নেশার ঘোরে কিছু বুঝতে পারবে না। রাজ ঘুমিয়ে গেলে তুমি ওর পাশে ঘুমিয়ে যাবে।সকালে রাজ তোমার হয়ে যাবে।কারণ সেখানে আসল ধামাকা দিবো আমি।”
জারা খুশি হয়ে নিলো জিনিসগুলো।তারপর চলে গেলো উপরে।রুদ্র এদের প্লান শুনে মনে মনে হাসতে থাকে।রাজ ফ্রেশ হয়ে নরমাল বাসায় পড়ার ঢিলা গেঞ্জি পরেছে।ফ্রেশ হয়ে মাত্র বসে কিছু প্লান করে মিটমিট হাসতে থাকে রাজ।জারা এসে রাজের গেট নক করে।রাজ তাকায় সেদিকে।দেখতে পায় শর্ট ড্রেস পরে গেটের সামনে হাতে বোতল ও ছোট ছোট ড্রিংকের গ্লাস নিয়ে হাঁটু বেকা করে দাড়িয়ে আছে জারা।গাঢ় সবুজ রঙের শর্ট ড্রেস আর পরনে হাই হিল।রাজের তাকানো দেখে জারা এগিয়ে আসতে আসতে বলে,”সো! নাউ টাইম টু চিল বেইবী।”
বলেই বোতল ও গ্লাস দুটি টেবিলে রেখে দেয়।রাজের দিকে এগিয়ে বসে চিকুন কণ্ঠে বলে,”ওহ বেইবী।কতদিন তোমাকে দেখিনি।আজ আমার এই চোখের থ্রিস্না মেটাবো।”
“এটা থ্রিস্না না তৃষ্ণা।”
“ওকে,লেট ইট বী।আজ আমরা একসাথে কিছু মোমেন্ট কাটাব।ওনলি তুমি আর আমি। আর কেউ না বেইবী।”
রাজ কিছু না বলে তাকিয়ে আছে জারার দিকে। জারা বোতলের মুখ খুলে দুটি গ্লাসে ওয়াইং ঢেলে রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে গ্লাসে একটি নেশার ঔষধ মিশিয়ে দেয়।যেটা সোনালী দিয়েছিলো জারার হাতে।ড্রিংক রেডি করে জারা গ্লাসটি নিয়ে আরো একটু এগিয়ে আসে রাজের দিকে।রাজ তাকিয়ে আছে জারার স্মকি চোখের দিকে।রাজের সামনে গ্লাস নিয়ে জারা বলে,”দিস স্পেশাল ড্রিংকস বাই ইউর লাভলি জারা।”
রাজ গ্লাসটি না নিয়ে তাকিয়ে আছে জারার দিকে। জারা ইশারা করে রাজকে বলে,”টেক ইট বেইবী।ইটস স্পেশাল ফর ইউ অ্যান্ড মি।”
রাজ এবার জারার হাত থেকে ড্রিংকের গ্লাস নেয়। জারা খুশি হয়ে তাকিয়ে থাকে।রাজ নিজেও তাকিয়ে আছে জারার দিকে।রাজ গ্লাস এনে নিজের মুখের সামনে ধরে বলে,”দিস স্পেশাল ড্রিংক বিলং টু মাই জারা বেইবী,রাইট?”
“ইয়েস।”
“দা স্পেশাল ড্রিংকস শুড গোস টু মাই স্পেশাল জারা বেইবী।”
বলেই সমস্ত ওয়াইং জারার মাথার উপর ঢালতে থাকে রাজ।হঠাৎ ওয়াইংয়ের আক্রমণ বুঝে উঠতে পারে না জারা।চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে।রাজ গ্লাসের ড্রিংক ঢেলে শেষ করে টেবিলের ওপর গ্লাস রাখে। জারা বলে ওঠে,”তুমি আমাকে ভেজালে কেনো বেইবী?”
“একচুয়ালি তোমাকে ভেজানোর এর থেকে বেটার অপশন আমার কাছে নেই, বেইবী।”
জারা আর কিছু বলবে তার আগে রাজ চিল্লিয়ে বলে,”নাও গেট লস্ট।”
জারা বোতল ও গ্লাস নিয়ে বের হয়। সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখতে পায় রুদ্র সিড়ি দিয়ে উপড়ে উঠছে।রুদ্র জারার দিকে তাকিয়ে দেখে জারার মাথার চুলগুলো ভিজে আছে।বিদ্রুপের সুরে রুদ্র বলে,”পারলি না তো!আগেই জানতাম পারবি না।আসলে কি বলতো আমরা ছেলেরা তোদের মত মেয়েদের ভোগ্য মনে করি আর মায়াবী দেখতে মেয়েদের নিজেদের উত্তরাধিকারী মনে করি।এটা না বুঝেই তোদের মত যেসব মেয়েরা ঢলে পড়িস তারা ভুগতে থাকিস।”
“ওহ শাট আপ।তুমি তোমার মিশন দেখো।তোমার হিয়াকে তো তুমি তোমার দিকে ফেরাতেই পারোনি।আবার আমাকে বলো।”
“আমার পাখি আমার খাঁচাতে থাকবে।তোকে ভাবতে হবে না।”
বলেই নিজের ঘরে চলে যায় রুদ্র।
চলবে…?
#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_২১
#ইশরাত_জাহান
🦋
অন্ধকার ঘরে একটি চেয়ারে হাত পা বাধা অবস্থায় নাড়াচাড়া করছে একজন যুবক।যুবকটির ছোটাছুটির জন্য ফাঁকা ঘরটি থেকে বিকট শব্দ তৈরি হয়।চেয়ারের সাথে ফ্লোরের ধাক্কা লাগলে ফাঁকা ঘরে এমন ভৌতিক শব্ধ সৃষ্টি করে।যুবকটির হাত পা মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা।মুখে বড় রুমাল দেওয়া।চোখ মেলে তাকানো কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না কিছুই।যুবকটি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য অনেক ছটফট করছে। ছটফটানির জন্য শব্দের বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।ঠিক তখনই যুবকটির কানে মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসে,”মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচার খুব ইচ্ছা হচ্ছে তাই না?”
যুবকটি তাকিয়ে থাকে কিন্তু কিছু দেখছে না।অনুভব করছে তার সামনে একজন মানবদেহ।আবারও তার কানে ভেসে আসে,”আমাকে দেখার চেষ্টা করে লাভ নেই।আমাকে দেখতে পাবি।তোর লাভ হবে সবকিছু স্বীকার করা।”
বলেই রুমের কোনায় থাকা একটি সুইচ অন করল।যুবকটি তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাগে টলমল চোখের নারীটির দিকে।মায়া একটি ব্ল্যাক জ্যাকেট ও জিন্স পরে আছে।সাথে হাতে আছে গ্লাভস।যুবকটি তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।কিছু বলার উপায় নেই কারণ তার মুখটাও বাধা।মায়া যুবকটির কাছে এসে একটু ঝুঁকে বলে,”কিছু বলতে চাস?”
যুবকটি মাথা নাড়ায় যার অর্থ হ্যা।মায়া লাল চোখের দৃষ্টি আরো ভয়ংকর করে বলে,”তোকে কিছু বলতে দেওয়া হবে।কিন্তু তার আগে আমার প্রশ্নের উত্তরটি দে। যেটার জন্য আমি চাতক পাখির মতো ঘুরছি।বলে দে আমাকে কে সেই লোক যে আমার মাকে খুন করতে চেয়েছিলো।বলবি তার নাম?”
যুবকটি মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল না।মায়া রেগে গেলো।চেয়ারে দিলো জোরে এক লাত্থি।তারপর বলে,”কি ভেবেছিস তুই?তোকে বাঁচিয়ে রেখেছি বলে পার পেয়েছিস?তোকে মৃত্যু না দিয়েও মৃত্যু যন্ত্রণায় ভুকতে হবে।তার ব্যাবস্থা আমি করছি।”
বলেই একটি পাইপ এনে পুরো রুমে পানিতে ভরিয়ে দেয়।তারপর মায়া যুবকটির গায়ে কিছু তার মিশিয়ে দেয়।দরজার সামনে পানির থেকে কিছুটা দূরে এসে মায়া প্লাকের সাথে কানেক্ট করে দেয়।সাথে সাথে বিদ্যুৎ চমকানোর মত করে কেপে ওঠে যুবকটি।পুরো শরীরে তার কারেন্টের ঝাকুনি লাগছে।এরকম কয়েক সেকেন্ড করে থেমে যায় মায়া।তারপর আবার এমন কারেন্টের শক দিতে থাকে।কিন্তু একবারে বেশিক্ষণ রাখে না।এমন কারেন্টের শক পেয়ে যুবকটি অজ্ঞান হয়ে যায়।মায়া হালকা হেসে চলে যায় সেখান থেকে।অনেক খুজে পেয়েছে এই যুবকটিকে সে।তার মাকে খুন করতে যারা উঠে পড়ে লেগেছিলো তাদের সবাইকে মায়া নিজে খুঁজে বের করবে।এখন তো শুধু এই যুবকটিকে পেলো।যুবকটির চোখে মুখে ভয়ের রেশ নেই।তাই মায়া আজ তাকে কারেন্টের শক দিলো।দেখা যাক পরে কি করে।যতদিন সে তার শত্রুদের খোঁজ না পাবে ততদিন এভাবেই এই যুবকটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।শত্রুদের এক এক করে বের করে সবাইকে উপযুক্ত শাস্তি দিবে মায়া।
হাসির কোলে মাথা এলিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে মায়া।মায়ার মাথায় হাসির হাত।মায়া শূন্যে তাকিয়ে বলে,”জানো হাসি মা আমি আমার মাকে খুব মিস করি।আমার মুখ ওই বুক খুঁজতে থাকে যার বুকে মুখ গুঁজে কান্না করবো।সে আর কেউ না আমার মা।”
“জানি তো মা।কিন্তু এটাই যে তোমার ভাগ্য।”
“সুখেই তো ছিলাম বাবা ছাড়া জীবন।কেনো এলো সেদিনের ওই কালরাত।যে রাতে হারাতে হলো আমার মায়ের থেকে আমার ভালোবাসা।কেনো হারালো আমার মায়ের দু হাত মেলে আমার দিকে হাসি মুখে ভালোবাসার আবদার?”
“এভাবে নিজেকে কষ্ট দিও না মায়াবতী।”
“মায়াবতী এই নামটি তো আমাকে আমার মা বলে ডাকতো।তারপর তুমি এখন আবার মন্ত্রী মশাই।”
“দুর্বল হয়ে পড়েছো তুমি মন্ত্রী মশাইয়ের উপর?”
“একদম না।আমি চাই ওই সরদার বংশের বিনাশ।তাকে তো আমি নিজের হাতে খুন করবো যে আমার মাকে আমার থেকে দূরে রেখেছে।”
“আমার মায়াবতী তার পথে সফল হবে।সে পারবে তার মায়ের প্রতি করা অন্যায়ের শাস্তি দিতে।আমার বিশ্বাস।”
“আমাকে যে পারতেই হবে।ওই মোহন সরদার সবকিছু হারাবে।শুধু সম্পত্তি হারালেও কেউ শূন্যতা বুঝতে পারে না।আমি মোহন সরদারের থেকে তার অস্তিত্ব তার ভালোবাসা তার বংশধর সবকিছু কেরে নিবো।”
“আচ্ছা?মিহিরকে নিয়ে যে নাটকটা করলে তার কি কোনো প্রভাব পড়বে?”
“জানি না হাসি মা।তবে আমি যতটুকু আমার এই সূক্ষ দৃষ্টি দিয়ে দেখেছি মন্ত্রী মশাই কিছু তো একটা করবে।তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রেখেছি।”
“বাহ!এতগুলো বছর পর বাড়ি ফিরেছি।কোথায় ছেলের মাথায় হাত বুলাবে তা না।তোমার সব ভালোবাসা এই বেবিডলের জন্য মা।”
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে মিহির।মায়া উঠে বসে বলে,”কৃষি বিষয়ে পি এইচ ডি না করে কি হিংসুটে নিয়ে পি এইচ ডি করেছো মিহির ভাই?”
“মায়ের থেকে দূরে ছিলাম।এখন তো একটু ভালোবাসা পেতে চাই।”
মায়া হাসির কোলে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”একটুও দিবো না।আমিও এক সপ্তাহ ছিলাম না এখানে।তাই তুমি পাবে না হাসি মাকে।”
মিহির কম কিসে।সেও বলে ওঠে,”দিবি না তো দেখ কি করি।”
বলেই মায়ার চুল ধরে টানতে থাকে।মায়া উঠে মিহিরের মাথার চুল ধরে টানতে থাকে।দুজনের এই খুনসুটি দেখে হাসি হেসে দেয়।
হাসির ছেলে মিহির।মিহিরের জন্মের পরপরই হাসির স্বামী আরেক জায়গায় মন দেয়।কিন্তু হাসির সাথে বিচ্ছেদের আগে সেই স্বামী মারা যায়।কাজ খুঁজতে থাকে হাসি।হাসির বাবা গরীব মানুষ তিনি মায়ার নানার কর্মী ছিলেন। সেই সূত্রে শাহানা পারভীন মায়াকে দেখভালের জন্য হাসিকে রেখে দিয়েছিলো।কিন্তু মায়াকে বেশি দেখা লাগতো না।শাহানা পারভীন এমনিতেই মায়াকে সময় দিতো।কিন্তু অফিস টাইম হাসি মায়ার আশেপাশে থাকতো।মিহির ছোট মানুষ মায়ার থেকে এক বছরের বড়।তাই মিহির ও মায়াকে নিয়ে হাসি এক জায়গায় থাকতো।মিহির ও মায়া দুজন ভাই বোনের মতো বড় হতে থাকে।যেহেতু হাসির ইনকাম এখানে ভালোই আর মিহির কৃষি নিয়ে সরকারিভাবে পড়াশোনা করেছে তাও খুব ভালো রেজাল্ট এর সাথে।তাই মিহির বিদেশে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সুযোগ পায়।হাসি তার গ্রামের জমি বিক্রি করে নিজ যোগ্যতায় মিহিরকে সাহায্য করে।মায়া চেয়েছিলো সাহায্য করতে কিন্তু মায়া নিজেই এদিক ওদিক কষ্ট করে সামলাতো।তাই হাসি না করে মায়াকে।এমনিতেও মিহির পড়াশোনার পাশাপাশি মায়ার শিবচরের ফ্যাক্টরি দেখাশুনা করতো।মায়া মিহিরের দায়িত্বে কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছিলো।এখন সেখানে অন্য একজন দেখাশোনা করে।তার নাম রুবি মিহিরের বাগদত্তা।মিহির ও রুবি একে অপরকে ভালবাসে।এখন শুধু তাদের বিয়ে করা বাকি।এসব ভেবে ছেলে মেয়ে দুজনকে দেখে সুখের নিঃশ্বাস টানলো হাসি।
সকালে,
মায়া আজ সকাল সকাল জিমে এসেছে।কিছু ব্যায়াম করে নিলো মায়া।তারপর মাঠে দৌড়াতে শুরু করে।মাঠ থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তায় এসে দৌড়ায়।এভাবেই বাসায় যাবে সে।রাস্তার কোনা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ মায়ার সামনে একটি গাড়ি এসে থামে।গাড়ি থেকে নামলো এক হুডি পরা লোক।চোখমুখ দেখা যাচ্ছে না।মায়া কিছু করতে যাবে তার আগেই মায়ার মুখে স্প্রে করা হয়।সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায় মায়া।
মুখে পানির ছিটা পেতেই জ্ঞান ফিরে মায়ার।চোখ খুলেই সাথে সাথে সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনের চেয়ারে বসে আছে রাজ।মুখে তার ভিলেনি হাসি।ডেভিল হাসি দিয়ে রাজ বলে,”গুড মর্নিং,মায়াবতী। অফস হ্যাপি এডভ্যান্স ম্যারেড ডে,মায়াবতী।”
“হোয়াট এ জোকস!”
“নো নট জোকস।জাস্ট লুক দেয়ার।”
পাশে ইশারা করে বলে রাজ।মায়া তাকিয়ে দেখে একজন কাজী ও একজন রেজিষ্টার কাপছে।তাদের পিছনে গুলি তাক করে দাঁড়িয়ে আছে কিছু গার্ড।মায়া হেসে দেয়।বলে,”যে মায়া কারো জীবনের পরোয়া করে না তাকে ভয় দেখাচ্ছেন এদের দিকে গুলি দেখিয়ে?”
“মায়াবতী এত কাঁচা খেলোয়াড় হলো কবে থেকে?আমি কি এদেরকে তোমাকে ব্লাকমেইল করতে গুলি তাক করে আছি?মোটেও না।আমি তো এদেরকে গার্ড দিয়ে আটকে রেখেছি কারণ এরা এই শীতে ঘুম থেকে উঠতেই চাইছিলো না।অবশ্য দোষ আমার পিয়ু বেবীর।সে প্রথমে বলেনি যে শাহমীর রাজ বিয়ে করবে বলে তাদের ডাকছি।”
মায়া চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।রাজ ডেভিল হেসে বলে,”অভাবে শীতের সকালে বউ ছেড়ে কে ঘুম থেকে উঠতে চায় বলো?আমি তো তোমাকে নিয়ে সকাল এগারোটা পর্যন্ত ঘুমাবো।শুনেছি বউ কাছে থাকলে ঘুম ভালো হয়।তাই না কাজী সাহেব?”
শেষের কথাটা একটু টান দিয়ে রসিক সুরে বলে রাজ। কাজী ঘামছে ভয়তে।এটা সত্যি সে আসতে চায়নি।সকাল ছয়টা এখনও শীতের আভাস আছে।কে উঠতে চায়?কাজীর কি ঘুম নেই?তার কি বউ ঘর নেই?আছে তো।কাজী কাপতে কাপতে বলে,”হ্যাঁ বাবা।আমি তো বউ ছাড়া আসতেই চাইনি।কিন্তু যদি জানতাম তোমার ইমারজেন্সি বউ লাগবে তাহলে গুলি দেখার অপেক্ষায় থাকতাম না।”
রাজ ফ্লাইং কিস দেখিয়ে বলে,”আমার বউ পাগলা কাজী।আচ্ছা এবার আপনি বলুন!আপনি কেনো আসতে চাননি।”
শেষের কথাটি রেজিষ্টারকে বলে।রেজিষ্টার নিজেও কাজীর মত ভয়তে আছে। সেও কাপতে কাপতে বলে,”ইয়ে মানে একটু পর যখন আপনার বউ আপনার হয়ে যাবে।রাতের পর যে সকাল আসবে তখন বুঝবেন।এখন কি আমরা বললে বুঝবেন?”
রাজ এবার মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”দেখেছো মায়াবতী!এদের বুড়ো বয়সেও বউ ছাড়তে মন চায় না।তাহলে আমি কেনো বউ ধরবো না।তাই আমিও এদেরকে বউয়ের থেকে আলাদা করে এনেছি।আগে আমার বউ আসবে তারপর কাজীর বউয়ের সাথে তার প্রেম হবে।”
রেজিষ্টার ফোড়ন কেটে বলে,”আর আমি!আমার কি বউয়ের কাছে যাওয়ার অধিকার নেই?”
“আছে তো।অবশ্যই আছে।আপনাদের বিদায় দেওয়া হবে।আগে আমার বউকে আমার করে দিন।”
“আমরা রাজি বাবা।তুমি তোমার বউকে নিয়ে আমাদেরকে যেতে দেও আমাদের বউ অপেক্ষা করছে।”
“অবশ্যই যাবেন।তো মায়াবতী!বুঝলে তো আমি কেনো গুলি তাক করে আছি তাদের দিকে?তোমার জন্য নয়।আসলে ওরা খুব দুষ্টু।ওদের বউ ছাড়া কিছু বুঝে না।আমি যে সিঙ্গেল ওদের নজরে নেই।তাই গুলি দেখিয়ে রেখেছি।”
মায়া এবার চেঁচিয়ে বলে,”সার্কাস হচ্ছে এখানে?”
“ধুর।বউ মিস করা হচ্ছে।এই কাজী ও রেজিষ্টার দুজন দুজনের বউকে মিস করছে। চলনা মায়াবতী।আমরা দুজন এক হয়ে ওদের অর্ধ সকালকে পূর্ণ করতে পাঠিয়ে দেই।”
“নির্লজ্জ আপনি।এভাবে কেউ কথা বলে?”
“বউ হয়ে লজ্জা বাড়িয়ে দিবে।এখন বিয়ে করে ফেলো আমাকে।”
“আমি বিয়ে করবো না।”
“তাহলে এরাও বউয়ের কাছে যেতে পারবে না।”
কাজী সাহেব একটু শুকনো ঢোক গিলে বলেন,”বলছিলাম যে বাবা।বিয়েতে কন্যার মত নেই।কেনো জোর করছো তাকে?”
“আপনি যদি বেশি কথা বলেন আপনার বউকে উঠিয়ে নিয়ে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করে দিবো বলে দিলাম।”
“কোনো দরকার নেই বাবা।আমার প্রথম বউ মারা গেছে,দ্বিতীয় বউ আমার গয়না গাটি নিয়ে ভাগছে কোনমতে সম্পত্তির লোভে তৃতীয় বউ আটকে আছে।এটা গেলে আমি বউ পাবো না।তুমি জোর করো।সমস্যা নেই বিয়ের পর সম্পর্ক হালাল হয়ে যাবে।”
“গুড বয় কাজী।”
রেজিষ্টার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে কাজীকে।মনে মনে ভাবছে,”এটা কোন দিক দিয়ে বয়?”
মায়াকে বেধে রাখা হয়েছে চেয়ারে।মায়া ছটফট করতে থাকে।রেজিষ্টার লোকটি বলে,”বলছি স্যার! ম্যামের হাত খুলে দিলে ভালো হতো।এমনিতেও এই চিড়িয়া না মানে আপনার এখান থেকে তো কেউ পালাতে পারবে না।শুধু শুধু মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।”
“খুব তো মেয়েদের কষ্ট বুঝেন।এদিকে যে আমি সারারাত না ঘুমিয়ে কষ্টে ভুগেছি তার বেলায় কি হবে?”
রেজিষ্টার এবার দমে গেলো।মায়া বলে ওঠে,”আমাকে ছেড়ে দিন।আমার হবু বর আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
রাজ কিছু বলার আগে কাজী বলেন,”বাইরেও কি তোমার হবু বর আছে মা?”
“হ্যাঁ।”
“ওটা ভুলে যাও।এখন তোমার হবু বর এই শাহমীর রাজ।না না হবু না এখনই তো বিয়ে হবে।ওই যে বাইরে তোমার হবু বর আছে সে তোমার বর না বেগানা পুরুষ।তোমার একমাত্র বর হবে আমাদের মন্ত্রী।”
মায়া এবার গর্জে উঠে বলে,”একবার হাতটা ছাড়া হোক তোদের কোনটা বর আর কোনটা বেগানা পুরুষ দেখিয়ে দিচ্ছি।”
রাজ একজন গার্ডকে ইশারা করলে সে এসে মায়ার বাঁধন খুলে দেয়।বাঁধন খুলতেই মায়া সাথে সাথে পা দিয়ে কিক মারে গার্ডের পেটে।সোজা পাকস্থলী বরাবর জায়গায় আঘাত পায় গার্ডটি।একটু ঝুঁকে যায়।তবে বেশি কিছু হয়না।কারণ গভীরে আঘাত পাওয়ার আগেই নিজেকে ঝুঁকিয়ে রাখে।মায়া পাশে থাকা গার্ডের পকেট থেকে গুলি নিয়ে তাক করে কাজীর সামনে।বলে,”কি বলছিলেন যেনো?উনি আমার বর।এতক্ষণ তো মন্ত্রীর চামচাদের গুলিতে ভয় পেয়েছিলেন আপনারা।এখন সোজা আমি নিজেই আপনাকে জমের দুয়ারে রেখেছি।কেমন লাগছে?”
কাজী ও রেজিষ্টার দুজন এবার কাচুমাচু করে।রেজিষ্টার ফিসফিস করে বলে,”এতক্ষণ গুলি পিছনে ছিলো।দেখতে পাইনি তাই একটু সাহস ছিলো।এখন তো সোজা বাঘিনী এসে গুলি সামনে ধরলো।মনে হয় না বেঁচে ফিরবো।”
কাজী ফিসফিস করে বলে,”আমার তিন নাম্বার বউ খুব ডেঞ্জারাস।আমার প্রথম বউয়ের বাচ্চাদের দেখতে পারে না।আমি গেলে ওদের কি হবে?”
চলবে…?গ