#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২৬+২৭
#পর্ব-২৬
★ ছেলেরা সব সুইমিং পুলের মাঝামাঝি নেট টানিয়ে পানির ভেতর ভলিবল খেলছে। তাসির আর আবির এক টিমে। আর আদিত্য একাই এক টিমে। আবির আর তাসির দুজন মিলেও আদিত্যের সাথে পেরে উঠছে না।
মেয়েরা তিনজন ছাতা বিশিষ্ট চেয়ারে বসে গল্প করছে আর ওদের খেলা দেখছে। তানি বারবার আবিরকে চিয়ার করছে। আর সানা আদিত্যকে। নূর সরাসরি আদিত্যের দিকে না তাকালেও আরচোখে বারবার আদিত্যকেই দেখছে।
হাতা কাটা টিশার্ট পরায় আদিত্যর ফোলা মাসলস্ গুলো বের হয়ে আছে। পানিতে ভেজার কারণে আদিত্যের বডি আরো আকর্ষনীয় লাগছে। ভেজা লম্বা চুলগুলো বারবার কপালে পরছে।আর আদিত্য সেটা হাত দিয়ে পেছনে টেনে দিচ্ছে। নূর কিছুতেই অন্য দিকে কনসেন্ট্রেট করতে পারছে না। চোখ ঘুরেফিরে বারবার ওইদিকেই যাচ্ছে।
তানি আর সানা নূরকে দেখে মুখটিপে হাসছে।তানি দুষ্টু হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…ইয়ার নূর আজ একটু বেশি গরম পরেছে মনে হয়? সবকিছু কেমন হট হট লাগছে তাইনা?
নূর থতমত খেয়ে বললো।
…মা মানে? কি বলছিস এসব? কোথায় গরম?
…সেটাতো তুইই ভালো জানিস। কথাটা বলেই তানি নিজের এক হাত সানার এক হাতের মিলিয়ে হাই ফাই দিয়ে হাসতে লাগলো।
নূর লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো।
————————————
একটু পরে মেয়েরা তিনজন ডাইনিং টেবিলে লাঞ্চের জন্য খাবার রেডি করছে।
ছেলেরা তিনজন চেঞ্জ করে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসলো। খাবারের ঘ্রাণ নাকে আসতেই আবির নাক টেনে ঘ্রাণ নিয়ে বললো।
….খুশবুউউউউউউ,,,,,
বলেই আবির দৌড়ে যেয়ে খাবারের উপর হামলে পড়লো। খাবার খেতে খেতে বললো।
…উমমমম,, সো ইয়াম্মি, লা জবাব।
আবিরের এমন ভাব দেখে তাসিরও আর থাকতে পাড়লো না।সেও দৌড়ে যেতে যেতে বলে উঠলো।
…এই এই সব খেয়ে ফেলবি নাকি? আমার জন্যেও রাখ। বলেই তাসিরও যেয়ে গপাগপ খাওয়া শুরু করে দিল। মনে হচ্ছে এরা কতো জনম জনমের ক্ষুধার্ত।
আদিত্য বিরক্তির স্বরে ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…তোরা এমন ভাব করছিস যেন বাপের জন্মে কিছু খাসনি। এভাবে কেউ খায়?
আবির খেতে খেতে বললো।
…ভাই বাপের জন্মে খাইছি কিনা জানিনা।তবে এমন সুস্বাদু খাবার বাপের কেন, দাদার জন্মেও খাইনি। তুই খেতে চাইলে তাড়াতাড়ি চলে আায়।নাহলে তোর ভাগের টাও আমি খেয়ে ফেলবোনে। কথায় আছেনা? আগে আসলে আগে খাবি, পরে আসলে হাড্ডি পাবি।
তাসির আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
…আরে তুই জানিস না? আদিত্য এসব খাবার খায় না। ওর এসব খাবার পছন্দ না।
তারপর আবার আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…থাক তোর এসব খেতে হবে না। তুই বরং ওইযে সালাত আছে না? ওইটা খা।
আদিত্য মনে মনে ভাবলো, এই রাক্ষস গুলো যদি সত্যি সত্যিই সব খেয়ে ফেলে? নূরের হাতের রান্নাতো ওরও খেতে ইচ্ছে করছে। আদিত্য এদিক ওদিক তাকিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
… মাঝে মধ্যে একটু খেলে আর তেমন কি হবে? আর নূর এতো কষ্ট করে সবার জন্য রান্না করেছে। নাখেলে ওর মন খারাপ হবে। তাই আমিও একটু খাবো। কথাগুলো বলে আদিত্য টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করে।
বাকি সবাই মুখ টিপে হাসছে। তারপর মেয়েরাও খেতে বসলো।সবাই নূরের রান্নার অনেক প্রশংসা করছে। সবার প্রশংসা শুনে নূরেরও অনেক ভালো লাগছে।
খাওয়া শেষে আদিত্যের জন্মদিন উপলক্ষে যে কেক আনা হয়েছিল সেটা কাটা হলো। সবাই কেক খেয়ে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করলো।
সবাই কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে, আবার আড্ডা দেওয়ার জন্য বাইরে গার্ডেন এরিয়ায় আসলো।
এখানে গাছের সাথে সাদা আর পিংক কালারের পর্দা টানিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। নিচে বসার জন্য সুন্দর করে ম্যাট পারা আছে। খাবারের জন্য কোল্ড ড্রিংকস আর হালকা স্নাক্সেরও ব্যাবস্থা আছে। এন্টারটেইনমেন্টের জন্য পাশেই সাউন্ড বক্স গিটার সহ আরো কিছু জিনিস রাখা আছে।
এসব দেখে নূর একটু অবাক হয়ে বললো।
…এসব কখন করা হলো? আমরা তো টেরই পেলাম না।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…যখন তোমরা ভেতরে ছিলে তখন আমাদের লোক এসে এগুলো করে দিয়ে গেছে।
…ওহহ।
সবাই আয়েস করে যারযার জায়গায় বসে পরলো। বিকেল বেলার আলো ছায়া, ঠান্ডা ঠান্ডা মৃদু বাতাস আর গাছগাছালির প্রাকৃতিক পরিবেশে মহলটা সবার অনেক ভালো লাগছে। তাসির আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…আদি একটা গান ধর। তাহলে আড্ডাটা জমবে ভালো।
তাসিরের কথায় বাকি সবাইও তাল মিলিয়ে আদিত্যকে গান গাইতে বললো।
আদিত্য একবার নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
…ঠিক আছে।
তারপর গিটারটা হাতে নিয়ে নূরের দিকে চোখ রেখে গাইতে শুরু করলো।
♬ ♬ কেও এলো মনে মনে কাছাকাছি
কেও বলে কানে কানে আমি আছি
কেও এলো মনে মনে কাছাকাছি
কেও বলে কানে কানে আমি আছি
খুব চেনা ও চোখে
অচেনা স্বপ্নকে দেখে মন খুশিতে
ভেসে গেলোওওও
🎸🎸🎸🎸🎸🎸
কি করি কি বলি
কি লিখি কি ভুলি
তা বুঝিনা
উতলা এ মনে
কি হলো কে জানে
কেও জানে না
ও হো হো
কি করি কি বলি
কি লিখি কি ভুলি
৷ তা বুঝিনা
উতলা এ মনে
কি হলো কে জানে
কেও জানে না
দিন কাটে পলকে
মন চোরা আলোকে
দেখে মন খুশিতে
ভেসে গেলোওওও
🎸🎸🎸🎸🎸🎸🎸
কবে যে আড়ালে বেড়েছে গোপনে
এত চাওয়া
না বলে কখন পড়েছে এ মনে
কারো ছায়া
ও হো হো
কবে যে আড়ালে বেড়েছে গোপনে
এত চাওয়া
না বলে কখন পড়েছে এ মনে
কারো ছায়া
ঐ হাসির বৃষ্টিকে
আর চোখের দৃষ্টিকে
দেখে মন খুশিতে
ভেসে গেলোওওও
ভেসে গেলোওওওওও
🎸🎸🎸🎸🎸🎸🎸
পুরো গানটা আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়েই গাইলো। সবাই মিটিমিটি হাসছে। ওরা বুঝতে পেরেছে যে আদিত্য গানটা নূরকে ডেডিকেট করে গেয়েছে। গান শেষে সবাই হাতে তালি দিল।
নূর এতক্ষণ আদিত্যের গানে হারিয়ে গিয়েছিল। সবার করতালির শব্দে নূর বাস্তবে ফিরে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সবার দেখাদেখি নিজেও তালি দেই।
সানা বলে উঠলো।
…. আমরা সবাই একটা গেম খেললে কেমন হয়?
তানি বললো।
.. হ্যাঁ গুড আইডিয়া। তাহলে কি গেম খেলা যায়?
আবির বলে উঠলো।
….ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলি।
তাসির বললো।
….ইয়া ইটস গুড আইডিয়া।
আবির একটা পেপসির খালি বোতল এনে বললো।
….ওকে দেন লেটস স্টার্ট দা গেম। সবাইতো নিয়ম জানো।তারপরও বলে দিচ্ছি। এই বোতলটা ঘুরানো হবে। যার দিকে বোতলের মুখ যেয়ে থামবে। তাকে ট্রুথ আর ডেয়ার যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে। ট্রুথ নিলে আমরা যে প্রশ্ন করবো তার সঠিক উত্তর দিতে হবে। আর ডেয়ার নিলে আমরা যা করতে বলবো সেটাই করতে হবে। বুঝতে পেরেছো নিশ্চয় সবাই? তাহলে এখন শুরু করা যাক।
তারপর আবির বোতলটা মাঝখানে রেখে ঘুড়ালো।বোতল যেয়ে থামল সানার সামনে। আবির বললো।
…তো বল তুই কি নিবি? ট্রুথ না ডেয়ার?
সানা একটু ভেবে বললো।
…..উমম ট্রুথ।
তানি উৎসাহ নিয়ে বললো।
…আমি জিজ্ঞেস করছি। আচ্ছা তুমি কখনো কারোর উপর ক্রাশ খেয়েছো?
সানা মুচকি হেসে বললো।
…নাহ আমার ক্রাশ পছন্দ না। আমার চিকেন পছন্দ, তাই আমি চিকেন খাই।হি হি
সানার কথায় সবাই হেসে দিল। তাসির হেসে মনে মনে ভাবলো, মেয়েটা সত্যিই পিচ্চি।
আবার বোতল ঘুরানো হলো। এবার যেয়ে থামলো তাসিরের সামনে। তাসির বললো।
… আমি ট্রুথ নিবো।
সানা তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো।
….আমি জিজ্ঞেস করবো। আচ্ছা বলেনতো আপনি কি কাওকে কখনো ভালোবেসেছেন?
সানার কথায় তাসির খানিকটা অবাক হলো। সানা হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছে কেন? ওর কি কিছু বুঝতে পেরেছে তাহলে?
তাসিরের ভাবনার মাঝেই সানা আবারও বললো।
…কি হলো বলুন?
তাসির একটু মুচকি হেসে বললো।
…শুধু ভালোবাসতাম না, বরং এখনো অনেক ভালোবাসি।আর সারাজীবন বেসে যাবো। তবে তাকে কখনও পাবার আশা করি না। না কখনও করবো। তাকে সবসময় দূর থেকেই ভালোবাসবো।
তারপর সবার দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো।
…এখন প্লিজ কেউ জিজ্ঞেস করবে না যে মেয়েটা কে? কারণ আমি বলতে পারবো না।
তাসিরের কথায় সবাই মাথা ঝাকালো। মানে ঠিক আছে।
সানা মুগ্ধ হয়ে তাসিরের কথা শুনছে। ছেলেটা ওকে এতো নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে? সানার মনে মনে প্রচুর আনন্দ লাগছে। ইচ্ছে করছে এখুনি বক্স বাজিয়ে লুঙ্গি ডান্স দিতে। সানা মনে মনে বললো। তুমি দূর থেকে ভালোবাসতে পারলেও আমি পারবোনা। তাই তোমাকেতো আমি ভালোবাসার কথা স্বীকার করিয়েই ছাড়বো। তুমি শুধু দেখে যাও চান্দু, সানা কা কামাল।😎
বোতলটা আবারও ঘুরানো হলো। এবার তানির সামনে থামলো।
তানি বললো ও ডেয়ার নিবে।
সানা উৎসাহ নিয়ে বললো।
….আপু তুমি আমদের করে দেখাও।
তানি বললো।
..ঠিক আছে।
তানি দিলবার গানে একটু নেচে দেখালো।
নাচ শেষে সবাই হাতে তালি দিয়ে প্রশংসা করলো।
আবার বোতল ঘুড়ানো হলো। এবার থামলো নূরের সামনে। নূর বললো ও ট্রুথ নিবে।
আবির বাঁকা হেসে বললো।
…আমি প্রশ্ন করছি। আচ্ছা নূর তোমাকে কেউ কখনো প্রপোজ করেছে?
আবিরের এমন প্রশ্নে আদিত্যের বুকের ভেতর হঠাৎ ধক করে উঠলো। সত্যিই কি কেউ ওকে প্রপোজ করেছে? আমার নূরপাখির জীবনে কি কেউ আমার আগেই চলে এসেছে? না না এটা হতে পারে না। কখনোই না। নূর শুধু আমার আর কারোর না। মনে মনে এসব ভেবে।
আদিত্য অধীর আগ্রহে বসে আছে নূরের জবাব জানার জন্য।
আবিরের প্রশ্ন শুনে তানি হো হো করে হেসে উঠলো। তানির এভাবে হাসা দেখে সবাই ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
তানি হাসি থামিয়ে বললো।
….কি যে বলোনা তুমি? নূর আর প্রপোজ? এটা কখনো সম্ভবই না। যে মেয়ে ছেলেদের দেখলেই থরথর করে কাঁপা শুরু করে দেয়। সবসময় ছেলেদের থেকে বিশ হাত দূরে থাকে। সেই মেয়েকে কেউ কিভাবে প্রপোজ করবে?
তানির কথায় আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আরেকটু হলে বেচারার হার্ট অ্যাটাকই হয়ে যেতো। আবার মনে মনে এটা ভেবে অনেক খুশিও হলো যে, নূর সত্যিই একটা পিওর সোল। যা শুধু আমার আর কারোর না।
তাসির নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….তুমি জানো নূর? এই একটা বিষয়ে তুমি আর আদিত্য দুজনেই এক স্বভাবের। তুমি যেমন ছেলেদের থেকে দূরে থাকো।আদিত্যও তেমন মেয়েদের থেকে সবসময় দূরে থাকে। তুমি হয়তো ভয় পেয়ে দূরে থাকো। তবে ও ইচ্ছাকৃতভাবেই দূরে থাকে। তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না। এতোবছর লন্ডনে থাকার পরও আদিত্যের গার্লফ্রেন্ডতো দূরের কথা। একটা মেয়ে বন্ধুও কখনো হয়নি। যদিও মেয়েরা সবসময় ওর জন্য পাগল হয়ে থাকে। তবুও ও কখনো তাদের কাছে আসতে দেয়নি।
তাসিরের কথা শুনে নূর প্রচুর অবাক হলো। আজকালকার যুগেও এমন পুরুষ আছে? কথাটা ভাবতেই নূরের মনের ভেতর অনেক ভালো লাগছে।
আবির মাঝখান থেকে বলে উঠলো।
…হ্যাঁ নূর, তাসির ঠিকই বলেছে। ভাইয়ার পেছনে মেয়েরা সবসময় ভিন ভিন করে। অথচ ও তাদের মাছি তারানোর মতো করে তাড়িয়ে দেয়। আমারতো মাঝে মাঝে সন্দেহ হতো। ভাইয়া আবার গে নাতো?
আবিরের কথায় সবাই হেসে দেয়। আদিত্য আবিরের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো।
….সাট আপ ইডিয়ট। আবারো শুরু করেছিস তোর সেই ফালতু কথা?
নূর কনফিউজ মুখ করে বললো।
…কিন্তু এই গে টা আবার কি?আমিতো তাই বুঝতে পারছি না।
নূরের কথায় সবাই অবাক চোখে নূরের দিকে তাকালো। আবির বলে উঠলো।
… লাইক সিরিয়াসলি নূর? তুমি এইযুগের মেয়ে হয়ে, গে কাকে বলে তাই জানোনা?
নূর ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়ালো।মানে সে জানেনা।
#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#পর্ব-২৭
সানা বলে উঠলো।
….আরে আপু একটা ছেলে যখন আরেকটা ছেলেকে ভালোবাসে তদেরকে গে বলে। আর এটা শুধু ছেলেদের ক্ষেত্রে না মেয়েদের ক্ষেত্রেও হয়।
নূর মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….. তো এটাতো ভালো কথা। এখানে খারাপ কি হলো? ওই হিসেবে দেখতে গেলে তো আমিও একজন গে।
আদিত্য বেচারা কেবলই কোল্ড ড্রিংক্স মুখে দিয়েছিলো। নূরের কথায় কোল্ড ড্রিংক্স গলায় আটকে কাশি উঠে যায়। কাশতে কাশতে মুখের কোল্ড ড্রিংকস সব বাইরে পরে যায়।
সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে নূরের দিকে তাকায়।
আবির #তারাক মেহতা কা উল্টা চশমা সিরিয়ালের দয়ার মতো দুই কানে দুই হাত রেখে মুখটা আকাশের দিকে করে বললো।
….হে মা , মাতাজি। এটা তুমি কি শোনালে? এ কথা শোনার আগে আমার কানে হেডফোন কেন লাগালাম না? এখন আমার ভাইটার কি হবে? 🙉🙉
সবার রিয়্যাকশন দেখে নূর ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ও কি এমন বললো যে সবাই এভাবে রিয়্যাক্ট করছে?
আদিত্য কোনো রকমে কাশি থামিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ও ওওয়াট?? কি বলছো এসব?
নূর থতমত খেয়ে বললো।
…কি বললাম? ঠিকিতো বললাম। আমিওতো তানিকে ভালোবাসি। তাহলে তো আমিও গে হলাম তাইনা?
নূরের কথায় সবাই বুঝে গেল যে নূর কথাটা বুঝতে ভুল করেছে। আদিত্য বেচারা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বুকে হাত দিয়ে নিজেকে একটু ঠিক করার চেষ্টা করলো। আবারও আরেকটু হলেই বেচারার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো।
তানি নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
…নূর কি বলছিস তুই এসব? এই ভালোবাসা সেই ভালোবাসা না। তানি নূরকে সবকিছু বুঝিয়ে বললো।
সবকিছু বুঝতে পেরে নূরের কান গরম হয়ে গেলো। নূর প্রচুর লজ্জায় পরে গেলো। না বুঝে কি সব বলে ফেলেছে। এখন সবার দিকে তাকাতেও লজ্জা করছে। ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে।
আদিত্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
… কিরে তোর গেম কি বন্ধ হয়ে গেলো? বোতল ঘুরা আবার।
আবির মাথা ঝাকিয়ে আবার বোতল ঘুরালো। এবার আবিরের দিকে থামলো। আবির ডেয়ার নিলো।
আদিত্য বাঁকা হেসে বললো।
…তুই গারমি সং এর নোরা ফাতেহির স্টেপ করে দেখাবি।
আবির আৎকে উঠে বললো।
… কি কস ভাই? আমি কিভাবে করবো ওটা?
…..ডেয়ার ইজ ডেয়ার। যা বলা হয়েছে তাই করতে হবে।
আদিত্যের কথায় বাকি সবাইও সায় দিয়ে আবিরকে ডান্স করতে বললো।
আবির বেচারা আর উপায় না পেয়ে উঠে গেলো ডান্স করতে। বক্সে গারমি সং প্লে করা হলো।
♬ ♬ ♬ এইসে না তু দেখ পারে
দিল কিউ মেরা ব্রেক কারে
দূর দূরছে ঠিক হে রানি
৷ পাছ আয়ুতো সেক লাগে
পারা ইতনা হায় হুয়া কে
থার্মোমিটার টুট গেয়া
ছাইয়া জি কা টাপাক টাপাক্কে
হায় পাছিনা ছুট গেয়া
কেইসি গুন্ডা গাড়দিহে
সারদি মেবি কারদিহে
হায় গারমিহ্
গারমি গারমি,গারমি গারমি
গানের এই পর্যায়ে এসে আবির উপর হয়ে শুয়ে দুই হাতে ভর দিয়ে এক পা একটু ভাজ করে মাজা উচু করে নোরার স্টেপ করছে।
বাকি সবাই হাসতে হাসতে শেষ।
একটু পরে আবির উঠে এলো। কোমড়ে এক হাত দিয়ে ধরে পিঠ বাঁকা করে হাটতে হাটতে আসলো।
আবির এসে বসতেই তাসির বাঁকা হেসে আবিরের কানে কানে বললো।
…ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি দুনিয়াতে আনতে পারবি নাকি আজই সব শেষ?
আবির রাগী চোখে তাসিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..আপনা টাইম আয়েগা। তখন সবগুলারে দেখে নিবো।
তাসির হেসে দেয়। এভাবে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর আদিত্য বলে উঠলো।
….এখন আমাদের ব্যাক করা উচিৎ। নাহলে রাত হয়ে যাবে।
আদিত্যের কথায় বাকি সবাইও সায় দিল।
হঠাৎ আবিরের ফোন বেজে উঠলো। আবির ফোন রিসিভ করে কথা বললো। কথা বলা শেষ হলে আবির আদিত্যের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো।
…ভাই একটা প্রবলেম হয়ে গেছে।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কি প্রবলেম?
…..ড্রাইভার কাকা বললো এখানকার রাস্তার মোড়ে নাকি একটা বড়ো এক্সিডেন্ট হয়েছে।তাই রাস্তা ব্লক করে রাখা আছে। গাড়ি যাতায়াত করতে পারছে না। কাল সকালের আগে ঠিক হবে না। ড্রাইভার কাকাও এইজন্য আসতে পারেনি।
আবিরের কথায় সবাই চিন্তায় পরে গেলো। তাসির বললো।
…এখন কি করবি আদি? আমাদের নিয়েতো সমস্যা নেই। কিন্তু তানি আর নূর বাসায় না যেতে পারলে যদি সমস্যা হয়?
তানি বললো আমার বাসায় তেমন সমস্যা হবে না। সানা বা নূর কেও আমার বাসায় কথা বললেই হবে। আর নূরের বাসায়তো এখন কেউ নেই। তাই মনে হয় সমস্যা হবে না।
নূর কি বলবে বুঝতে পারছে না। যদিও বাসায় কেউ নেই, তবুও এভাবে রাত করে বাইরে থাকাটা ওর কেমন যেন লাগছে।
নূরের চুপ থাকা দেখে আদিত্য বলে উঠলো।
….তোমার সমস্যা হলে বলো। আমি যেভাবেই হোক তোমাকে রেখে আসবো। তুমি চিন্তা করোনা।
তাসির চিন্তিত স্বরে বললো ।
…এই অবস্থায় বাইরে বের হওয়া টা ঠিক হবে না। শেষে তুই পুলিশি ঝামেলায় ফেঁসে যেতে পারিস।
পুলিশের কথা শুনে নূর ভয় পেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললো।
…না না যাওয়ার দরকার নেই। আমার বাসায় সমস্যা হবে না।
আদিত্য বললো।
…আর ইউ শিওর?
নূর মাথা ঝাকালো। মানে হ্যাঁ।
অতঃপর সবাই রাতে এখানেই থাকার ডিসিশন নিলো।
—————————————-
রাত ৯-৩০
একটু আগেই সবাই রাতের খাবার খেয়েছে। এখন সোফায় বসে কথা বলছে। আদিত্য নিজের রুমে গিয়েছিল ফ্রেশ হতে। একটু পরে নিচে নেমে আসে। আদিত্য এদিক ওদিক তাকিয়ে নূরকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….নূর কোথায়?ওকে দেখছি না যে?
তানি বলে উঠলো।
….ভাইয়া ওকেতো বাইরের দিকে যেতে দেখলাম।
…বাইরে? রাত করে বাইরে কি করছে? ঠিক আছে আমি দেখছি।
কথাটা বলেই আদিত্য বাইরের দিকে গেল।
নূর সুইমিং পুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে। চাঁদের আলোয় পুলের পানি ঝকঝক করছে। দক্ষিণা ঠান্ডা বাতাসে শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে। নূর বসে বসে পরিবেশটা উপভোগ করছে।
আদিত্য বাইরে এসে দেখে নূর পুলের কাছে বসে আছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কাছে এগিয়ে যায়। নূরের কাছে এসে বললো।
…..এখানে কি করছো?
নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….কিছুনা। এমনিই বসে আছি।পরিবেশটা অনেক ভালো লাগছিল তাই।
আদিত্য বললো।
…তাহলে আমিও একটু বসতে পারি তোমার সাথে?
….আরে বসুননা এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে?
আদিত্য প্যান্টের নিচের অংশ ভাজ করে নূরের পাশে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পড়লো।
হঠাৎ আদিত্যের নজর গেল নূরের পায়ের দিকে। নূর প্লাজু কিছুটা উঁচু করে পানিতে পা ডুবিয়ে রেখেছে। যার জন্য নূরের ফর্সা মসৃণ পা জোড়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চাঁদের আলোয় পানির ভেতরে আরো অপূর্ব সুন্দর লাগছে।আদিত্য ভাবছে কারোর পা ও এতো সুন্দর কিভাবে হতে পারে? এই মেয়েটা আরো কতো রুপ দেখিয়ে আমাকে পাগল করবে? আদিত্যের ভাবনার মাঝেই নূর বলে উঠলো।
…আপনাদের এই জায়গাটা সত্যিই অনেক সুন্দর। আমি এতো সুন্দর জায়গা আগে কখনো দেখিনি।
নূরের কথায় আদিত্য মায়া ভরা চোখে নূরের দিকে তাকালো। মেয়েটা এই জায়গা দেখেই এতো খুশী হচ্ছে। পৃথিবীর আরো সুন্দর জায়গা দেখালে নাজানি আরো কতো খুশি হবে? আদিত্য মনে মনে বললো। আমি তোমাকে সব জায়গায় নিয়ে যাবো নূরপাখি। পৃথিবীর বিভিন্ন সৌন্দর্য তোমাকে দেখাবো।
আদিত্য কিছু একটা ভেবে নূরকে বললো।
…আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?
নূর বললো।
…কোথায়?
আদিত্য নিজের এক হাত নূরের দিকে বাড়িয়ে বললো।
…ভরসা আছে আমার উপর? তাহলে হাতটা ধরে আমার সাথে চলো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে আদিত্যের হাত ধরলো। আদিত্য নূরের হাত ধরে পুল থেকে উঠে দাড়ালো। তারপর গার্ডেন এরিয়ায় গেল। আদিত্য ঘাসের উপর বসে নূরকেও বসতে বললো। আদিত্যের কথামতো নূরও বসে পড়লো। আদিত্য বললো।
…চোখটা একটু বন্ধ করো। একটু পরে একটা সারপ্রাইজ দেখতে পাবে।
নূর চোখ বন্ধ করে নিলো। পাঁচ মিনিট পরে আদিত্য বললো।
…এখন চোখ খোল।
নূর চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো। আদিত্য ওর সামনে দুই হাত একসাথে আটকে মুঠ করে রেখেছে।
নূর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
…কি আছে এতে?
আদিত্য মুচকি হেসে মুঠো খুলে দিল। সাথে সাথে কয়েকটা জোনাকি পোকা বেড়িয়ে এলো।
এতোগুলো জোনাকি পোকা একসাথে দেখে নূর খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। নূর দুই হাত ঠোঁটে চেপে ধরে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে বললো।
…ওয়াও কি সুন্দর। থ্যাংক ইউ সো মাচ। এতো সুন্দর একটা জিনিস দেখানোর জন্য।
আদিত্য মুগ্ধ হয়ে শুধু নূরের খুশি দেখছে। নূরকে খুশি দিতে পারলে ওর সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।
নূর হাত বাড়িয়ে জোনাকি পোকা ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। আদিত্য হঠাৎ ঘাসের উপর চিত হয়ে শুয়ে পরলো। নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এখানে আমার পাশে শুয়ে পরো।দেখবে জোনাকি পোকা একাই তোমার মুখের উপর ঘোরাঘুরি করবে।
নূর খুশী হয়ে বললো।
…সত্যিই??? ঠিক আছে।
তারপর নূরও আদিত্যের পাশে চিত হয়ে শুয়ে পরলো।
একটু পরে সত্যি সত্যিই জোনাকি পোকাগুলো নূরের মুখের উপর দিয়ে ঘুড়াঘুড়ি করতে লাগলো। আর নূর খুশি হয়ে সেগুলো ধরতে লাগলো। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…তোমার প্রকৃতি বুঝি খুব পছন্দ?
নূর খুশী মনে বললো।
…হুম অনেক পছন্দ।
…হুম, আর কি কি পছন্দ তোমার?
নূর আজ অনেক খুশী। তাই ও আনমনেই আজ নিজের পছন্দ অপছন্দের কথা সব বলছে আদিত্যকে।
আর আদিত্য মুগ্ধ হয়ে সব শুনছে।
এভাবেই কথা বলতে বলতে দুজন দুজনার মাঝে হারাতে লাগলো। বাইরের দিন দুনিয়ায় চিন্তা যেন সব ভুলে গেল।
হঠাৎ নূরের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আদিত্য পাশে তাকিয়ে দেখলো নূর ঘুমিয়ে পরেছে। চাঁদের আলোয় নূরের ঘুমন্ত মুখটা কি মায়াবী লাগছে। আদিত্য মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। এতো কাছ থেকে নূরকে দেখে আদিত্যের ঘোর লেগে যাচ্ছে। আদিত্য নিজের হাত দিয়ে নূরের মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিল। আদিত্য হাতের চার আঙুল নূরের কানের নিচে রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নূরের গালে স্লাইড করতে লাগলো। আদিত্যের কেমন নেশা ধরে যাচ্ছে। নিজের ওপরে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে। আদিত্য মুখটা এগিয়ে নিয়ে নূরের কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে দিলো। নূর ঘুমের মাঝেই কেঁপে উঠলো। আদিত্য নূরের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। মনে মনে বললো। তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না নূরপাখি। খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো। তারপর আমার বুকের খাচায় তোমাকে বন্দী করে রাখবো সারাজীবন। আর কোথাও যেতে দেবনা তোমায়। কলিজায় ভেতর লুকিয়ে রাখবো যেখানে কোনো কষ্ট ছুতে পারবে না তোমায়।দুনিয়ায় সব খুশি তোমার চরণে ঢেলো দিবো। তুমি হবে আমার রাজ্যের রানী। কথাগুলো বলে আদিত্য নূরকে আস্তে করে কোলে তুলে নিল। নূর ঘুমের মাঝেই আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো। তা দেখে আদিত্য একটা তৃপ্তির হাসি দিল। নূরকে কোলে নিয়ে রুমে এসে বেডে শুইয়ে দিল। তারপর আবার নূরের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে গেলো।
————————————-
সকালের ঝলমলে আলো চোখে পরতেই নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নূর ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বেডে পেয়ে নূর একটু অবাক হলো। ওরাতো রাতে বাগানে ছিল তাহলে এখানে কিভাবে এলো? তাহলে কি উনি আমাকে নিয়ে এসেছে? কথাটা ভাবতেই নূর নিচের ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসলো। কালকের দিনটা আজপর্যন্ত ওর জীবনের সবচেয়ে সেরা দিন ছিলো।
একটু পরে সবাই ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা পানি খেয়ে বেড়িয়ে পড়লো বাসার উদ্দেশ্যে।
নূর আবারও আদিত্যর বাইকে গেল।
নূরকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আদিত্য বললো।
…আজতো ক্যাম্পাস বন্ধ। কাল নবীন বরণ উৎসব হবে। তাই আজ বাসায় রেস্ট করো কাল দেখা হচ্ছে বায়।
নূরও মাথা ঝাকিয়ে বায় বললো।
আদিত্য বাইক নিয়ে চলে গেলো।
চলবে……