ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-৩৭+৩৮

0
2789

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩৭

★ রাত ৮-৩৫
পিটপিট করে চোখ খুলে চোখ খুলে তাকালো নূর। চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ও কোথায় আছে। জায়গাটা ওর খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে ওর। কিছুক্ষণ ভাবার পরে নূরের মনে পরলো, এটাতো আদিত্যদের ফার্মহাউস। নূর চমকে গেল। মনে মনে ভাবলো, আমিতো বাড়িতে ছিলাম। এখানে কখন কিভাবে এলাম। এসব ভেবে নূর তড়িঘড়ি করে উঠে বসতে নিলেই শরীরের ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো।
….আহহ্।

তানি পাশেই সোফায় বসে ছিল। নূরের আওয়াজ শুনে তড়িঘড়ি করে নূরের কাছ যেয়ে নূরকে ধরে বলে উঠলো।
….তোর জ্ঞান ফিরে এসেছে? যাক আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। তুই ঠিক আছিস তো? জানিস কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা? আর তুই এই শরীরে একা একা কেন উঠতে যাচ্ছিস? আমাকে বললেই তো আমি হেল্প করতাম।
কথাগুলো বলে তানি নূরের বাহু ধরে ওকে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসালো।

নূর তানির কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। নূর তানির দিকে কনফিউজ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
….আমি এখানে কিভাবে এলাম?আমিতো বাড়িতে ছিলাম। আর ছোট মা আমাকে,,,,,,

নূর বাকিটুকু বলতে পারলো না। কালকের কথা মনে পরতেই ওর গলাটা ধরে এলো।

তানি মুচকি হেসে বললো।
….তুই কি ভেবেছিলি? আমরা থাকতে, আর বিশেষ করে আদিত্য ভাইয়া থাকতে। তোকে ওভাবে ওখানে পঁচে মরতে দিবে? হিরো থাকতে হিরোইনের কিছু হতে পারে কখনো?

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে?

তানি নূরকে সব খুলে বললো। তারপর বললো।
….তোকে নিয়ে সোজা হসপিটালে গিয়েছিলো ভাইয়া। তারপর তোকে ট্রিটমেন্ট করিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে। ভাইয়ার ফ্লাটে নিয়ে গেলে।লোকজন নানা ধরনের কথা বানাতে পারে। তাই তোকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমরাও সবাই এসেছি। আমি তোকে বলেছিলাম না? তোর জীবনে কেউ আসবে। যে তোকে ওই নরক থেকে বের করে নিয়ে আসবে। দেখলিতো আমার কথাই সঠিক হলো। আজ ভাইয়া তোকে ওই নরক থেকে একেবারে নিয়ে এসেছে। আর কখনও তোকে ওই নরকে আর ফেরত যেতে হবে না। তুই জানিস? ভাইয়া কেমন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল তোর জন্য। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পুরো হসপিটাল মাথায় তুলে ফেলেছিল।

সবকথা শুনে নূর থ হয়ে গেলো। যে মানুষটাক ও এতো কষ্ট দিল।আজ সেই মানুষটাই ওর সব কষ্ট দূরে করে দিচ্ছে। এসব ভেবে নূরের মনে মনে অনেক খারাপ লাগলো। তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….কোথায় উনি?

তানি দুষ্টু হেসে বললো।
…কে উনি? উনি নামের তো এখানে কেউ নেই।

নূর লজ্জা পেয়ে বললো।
…তানিইই।

তানি হেসে দিয়ে বললো।
….তোর জন্য গরম গরম সুপ বানাতে গেছে, তোর উনি।

নূর নিচের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো।

ওদের কথার মাঝেই হঠাৎ আদিত্য একটা ট্রেতে করে সুপ নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
আদিত্যকে দেখে নূরের বুকের ভেতর ধক্ করে উঠলো। আদিত্যকে সত্যিই কেমন পাগল পাগল লাগছে। চুলগুলো এলোমেলো, চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। পরনের টিশার্ট টাও কেমন কুচিমুচি হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওনার ওপর দিয়ে কোনো ঝড় বয়ে গেছে।

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে নূরের জ্ঞান ফিরেছে দেখে মনে মনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর কিছু একটা মনে আসতেই আদিত্য নূরের দিক থেকে নজর সরিয়ে নিল। তানির সামনে যেয়ে তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই সুপটা ওকে খাইয়ে দেও। তারপর মেডিসিন গুলোও খাইয়ে দিও।

তানি মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে ভাইয়া।

আদিত্য ট্রেটা তানির হাতে দিয়ে। নূরের না তাকিয়েই রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।

আদিত্যের এমন ব্যবহারে নূর অনেক অবাক হলো। মনে মনে ভীষণ খারাপও লাগলো। তানির দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বললো।
….উনিতো আমার দিকে তাকালেনও না। আবার কোনো কথাও বললো না।

তানি একটু মুচকি হেসে বললো।
…. ভাইয়া হয়তো একটু রেগে আছে তোর ওপর। তোর সেদিনের ব্যবহারের পর এটাতো একটু স্বাভাবিকই তাইনা?

নূরের চোখে পানি চলে এলো। নূর কাঁদো কাঁদো সুরে বললো।
……এখন আমি কি করবো? উনিতো অনেক রেগে আছে।

…..চিন্তা করিস না। একটু সময় দে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখনতো এখানেই থাকবি। সময় বুঝে ভাইয়াকে সরি বলে দিস। দেখবি ভাইয়া আর রাগ করে থাকতে পারবে না।

নূর মাথা ঝাকালো। মানে ঠিক আছে।

তানি বললো।
….এখন সুপটা খেয়ে ওষুধ খেয়ে শুয়ে থাক।
কথাটা বলে তানি নূরকে সুপটা খাইয়ে দিল। তারপর ওষুধ খাইয়ে দিয়ে নূরকে ধরে শুইয়ে দিয়ে তানিও অন্য রুমে যেয়ে শুয়ে পরলো।

নূরের কিছুতেই ঘুম আসছে না। বারবার শুধু আদিত্যের কথায় মনে পরছে। মনে মনে ভাবছে , উনি যদি আমাকে কখনো মাফ না করে, তাহলে কি করবো আমি? আচ্ছা উনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন? ধ্যাৎ এই শরীরের ব্যাথায় উঠে দেখতেও পাচ্ছি না কিছু।
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে নূর একসময় ঘুমিয়ে পরে।

নূর ঘুমিয়ে যেতেই আদিত্য আস্তে করে নূরের রুমের দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ধীর পায়ে নূরের কাছে এসে নূরের পাশে বেডের ওপর বসলো। তারপর নূরের মূখের ওপর ঝুকে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিল। নূরের গালে আলতো করে হাত বোলাতে লাগলো আর নূরকে দেখতে লাগলো। আধাঘন্টা এভাবে থাকার পর আদিত্য আবারও নূরের কপালে সময় নিয়ে একটা চুমু দিয়ে নূরের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

—————————————-

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই নূরের ঘুমটা ভেঙে গেল। নূর আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে তাকালো। ওষুধের কারণে শরীরের ব্যাথাটা একটু কমেছে। নূর ধীরে ধীরে উঠে বসলো। ব্যাথা কমলেও পুরোপুরি সারেনি। তাই এখনো নড়াচড়া করতে কষ্ট হচ্ছে নূরের। নূর পা দুটো আস্তে আস্তে বেডের নিচে নামালো। বেডের মাথায় হাত রেখে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে ওয়াশরুমে যাওয়ার চেষ্টা করলো। দুই পা এগুতেই নূর নিজের ব্যালেন্স না রাখতে পেরে পরে যেতে নেয়। কিন্তু পরে যাওয়ার আগেই আদিত্য দৌড়ে এসে নূরকে ধরে ফেলে।
নূর ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। যখন বুঝতে পারে যে ও পরে যাইনি, তখন চোখ খুলে দেখে আদিত্য ওকে ধরে আছে। এটা দেখে নূরের অনেক খুশি লাগে। নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। কিন্তু নূরের হাসি বেশিক্ষণ টেকে না। আদিত্য অন্য দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে তানির নাম ধরে ডাকলো।
একটু পরেই তানি তড়িঘড়ি এসে বললো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া। কি হয়েছে বলুন?

আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
….তানি তোমার বান্ধবীকে বলো বেশি পন্ডিতি না করতে। কোনো হেল্প লাগলে কাউকে যেন ডাক দেয়। আমার কথা নাহয় বাদ দিলাম। আমাকে তো আবার তার পছন্দ না। কিন্তু তোমাকে তো ডাকতে পারে। একা একা চলাফেরা করতে যেয়ে আবার কি কোনো দূর্ঘটনা বাধাতে চায় নাকি? আমিও কাকে কি বলছি। সব বিষয়ে এক লাইন বেশি বোঝা তো ওনার পুরাণ অভ্যাস। যাইহোক এখন ওকে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে যাও।

তানি মাথা ঝাকিয়ে এগিয়ে যেয়ে নূরকে ধরলো।
আর আদিত্য ওখান থেকে চলে গেলো।

আদিত্যের এমন ব্যবহারে নূরের চোখে পানি চলে এলো। তানি নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কাদিস নাতো। শুধু জানিস ভ্যা ভ্যা করে কাঁদা। কাঁদলে কি সবকিছুর সমাধান হবে নাকি? তারচেয়ে বরং ভাইয়াকে কিভাবে মানাবি সেই চিন্তা কর। এখন চল তোকে ওয়াশরুমে দিয়ে আসি।

নূরকে ওয়ায়রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে তানি মনে মনে ভাবলো। আমরা এখানে থাকলে ওদের ভেতর সহজে কিছু ঠিক হবে না। আমরা না থামলে ভাইয়ার তখন নূরের সাথে সরাসরি কথা না বলে কোনো উপায় থাকবে না। হ্যাঁ আমাদের আপাতত এখান থেকে চলে যাওয়ায় ঠিক হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

একটু পরে নূর বেড়িয়ে আসলে তানি ওকে ধরে বিছানায় বসালো। তারপর নূরকে নাস্তা করিয়ে দিয়ে বললো।
….আচ্ছা নূর। বাসা থেকে মা ফোন করেছে। আমাকে বাসায় যেতে বলেছে। তাই আমি আর থাকতে পারছি না। আমাকে বাসায় চলে যেতে হবে।

নূর তানির দিকে চমকে তাকিয়ে বললো।
….চলে যাবি মানে? আমি এখানে একা একা কি করে থাকবো? না না তুই কোথাও যেতে পারবি না।

….দেখ এটা সম্ভব না। তোর এখানে কতদিন থাকতে হয় তারতো কোনো ঠিক নেই তাইনা? তাই বলেকি আমি এখানে এতো দিন থাকতে পারি নাকি?মা বাবা এটা কখনোই মেনে নেবে না।আর তুই একা কোথায়? আদিত্য ভাইয়া তো আছেই তোর সাথে। উনি থাকতে আর তোর কোনো চিন্তা নেই। আর আমিও মাঝে মধ্যে আসবো তোর সাথে দেখা করতে। তুই চিন্তা করিস না কেমন?

নূর মুখ ছোট করে বললো।
…কিন্তু তবুও।

…..আর কোনো কিন্তু পরেন্তু নেই। এতো ভাবিস নাতো সব ঠিক হয়ে যাবে।

নূর আর কিছু না বলে জোরপূর্বক একটা হাসি দিল।

একটু পরে তানি আবির আর তাসির বেড়িয়ে চলে গেলো।

—————————————-

দুপুর ২ টা
তানিরা চলে যাওয়ার পর নূর একটু ঘুমিয়েছিল। একটু আগেই ওর ঘুম ভাঙলো। শুয়ে শুয়ে থেকে থেকে ওর আর ভালো লাগছে না। এদিকে কেও নেই সময়ও কাটছে না ওর। নিচে নেমে বাইরে যাওয়ারও সাহস পাচ্ছে না। ভয় পাচ্ছে আবারও যদি আদিত্য তখনকার মতো ধমক দেয় এটা ভেবে। নূরের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে নূর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য এসেছে। হাতে খাবারের ট্রে। তারমানে উনি দুপুরের খাবার খাওয়াতে এসেছে। কথাটা ভেবে খুশি হলো নূর। মনে মনে ভাবলো, এই সুযোগে ওনার কাছে মাপ চেয়ে নিতে হবে।

আদিত্য নূরের দিকে না তাকিয়েই খাবারের ট্রে টা নিয়ে বেডের পাশে ছোট টেবিলে রাখলো। তারপর চুপচাপ প্লেটে খাবার বেড়ে হাতে নিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরলো।
নূর খুশী মনে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে থেকেই হা করে খাবার মুখে নিল।
আদিত্য চুপচাপ খাইয়ে যাচ্ছে। কোনো কথাই বলছে না। খাওয়া শেষ হলে নূরকে ওষুধ খাইয়ে দেয়। তারপর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে চলে যেতে নিলেই নূর খপ করে আদিত্যের হাত টেনে ধরে। তারপর মিনতির সুরে বললো।
…..আমি জানি আপনি আমার উপর রেগে আছেন। আর এটাই স্বাভাবিক। আমি আপনার সাথে যে ব্যবহার করেছি তাতে আপনার রাগ করাটা জায়েজ। কিন্তু একবার শুধু আমাকে সবটা এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দিন। একবার আমার সাথে কথা বলুন। আমার কথাটা শুনোন প্লিজ।

আদিত্য এখনো উল্টো দিকে ঘুরেই দাঁড়িয়ে আছে। নূরের কথা শুনে ও ভেতরে ভেতরে অনেক দূর্বল হয়ে পরলো।আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজেকে একটু শক্ত করে নূরের দিকে না তাকিয়েই বললো।
…..এসব কথা পরে হবে। তুমি এখন অসুস্থ। তোমার রেস্ট নেওয়া উচিৎ।

….না আমি এখুনি কথা বলতে চাই প্লিজ। আপনার রাগ করে থাকা, আমার সাথে কথা না বলা এগুলো আমার সহ্য হচ্ছে না। প্লিজ কথা বলুন আমার সাথে। দরকার হলে বকাঝকা করুন তবুও কথা বলুন প্লিজ।

আদিত্য উল্টো ঘুরে থাকা অবস্থাতেই তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
….কেন? আমার মতো ছ্যাঁচড়া লোক তোমার সাথে কথা না বললে,তোমার তো আরো ভালো লাগার কথা। এইজন্যই তো আমি তোমার থেকে দূরে থাকি যাতে তুমি বিরক্ত না হও। এখন এখানে কেউ নেই বলে আমার আসতে হলো। নাহলে আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করতে আসতাম না। তবে চিন্তা করোনা। আমি মালি কাকাকে বলে দিয়েছি। এখন থেকে উনার বউ এসে তোমার দেখাশোনা করবে। তারপর আর আমার মুখ তোমাকে দেখতে হবে না।

আদিত্যের কথায় নূর এবার কেঁদে উঠলো। কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
…..এভাবে বলবেননা প্লিজ। আমি সেদিন ওসব মন থেকে বলিনি। ওগুলো আমি মিথ্যে বানিয়ে বলেছিলাম। যাতে আপনি আমাকে ভুল বুঝে ঘৃণা করেন।আমাকে ভুলে যান। যাতে আমার জন্য আপনার কোনো ক্ষতি না হয়।

আদিত্য এবার ট্রেটা বেডের পাশে রেখে। নূরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
….মানে? কি বলতে চাও তুমি?

নূর মাথা নিচু করে কান্না মিশ্রিত গলায় বলে উঠলো।
……ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি। আমি নাকি অপয়া। আমার জন্য সবার ক্ষতি হয়।আমি নাকি সবাইকে খেয়ে ফেলি। জন্ম নিতেই মা মারা গেল। বাবা থেকেও নেই। এক দাদি ছিল সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। সবার কথা শুনতে শুনতে একসময় আমারও হতে লাগলো। আমি সত্যিই হয়তো অপয়া।আমি যার জীবনে যাবো তারই ক্ষতি হবে। তাই সেদিন যখন আমাকে বাচাতে যেয়ে আপনার এক্সিডেন্টে হলো। আমার মনে হলো আমার জন্যেই আপনার সাথে এমন হয়েছে । আমি সত্যিই একটা অপয়া। আমি আপনার জীবনে থাকলে আপনার জীবনের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই আমি আপনার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য ওসব করেছি।

নূরের কথা শুনে আদিত্য কতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।তারপর হঠাৎ দূই হাত উঁচু করে তালি বাজাতে লাগলো। আদিত্য তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
….বাহ্ বাহ্ আমি আমার জীবনেও এমন ফালতু কথা শুনিনি। লাইক সিরিয়াসলি নূর। তুমি এইযুগের একটা শিক্ষিত মেয়ে হয়ে এইসব ফালতু কথা কিভাবে মানতে। আবার এই কারণে তুমি আমার জীবন থেকে দূরেও চলে যেতে চেয়েছো? বাহ্ তুমি কতো গ্রেট, তাইনা নূর?

তারপর আদিত্য নিজের ভাবভঙ্গি পাল্টে চোয়াল শক্ত করে রাগী স্বরে বলে উঠলো।
……তুমি কি ভেবেছো? তুমি আমাকে এইসব লেইম স্কিউস দিবে আর আমি খুশি হয়ে যাবো? আসলে জানো কি নূর? তুমি সেদিন সত্যিই বলেছিলে। তুমি আমাকে আসলে ভালোই বাসোনা। কারণ ভালোবাসলে এইসব ফালতু কথা না মেনে ভালোবাসার ওপর ভরসা রাখতে। আমার কাছ থেকে কখনো দূরে যাওয়ার চেষ্টা করতে না। তুমি ভাবলে কি করে যে, তুমি আমার জীবন থেকে চলে গেলে আমি ভালো থাকবো? একটা কথা জেনে রাখো নূর তুমি আমার জীবনে থাকলে আমি বাঁচব কি মরবো জানিনা।তবে তুমি আমার জীবনে না থাকলে আমি নিশ্চিত মরে যাবো। অথচ তুমি কতো সহজেই আমার জীবন থেকে চলে যেতে চাইলে। আমাদের দুজনের বিষয়ে তুমি একাই ফয়সালা করে ফেললে? তাও আবার নিজের মতো করে। বাহ্ তুমি সত্যিই গ্রেট। আই সেলুট ইউ।
কথাগুলো বলে আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো আদিত্য।

আদিত্য চলে যেতেই নূর হাটুর ভেতর মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো।

আদিত্য নিজের রুমে এসে বেডের ওপর বসে হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে মাথা নিচু করে বসে রইলো। নূরের রুম থেকে কিভাবে এসেছে তা শুধু ওই জানে। নূরের কান্না ও কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলো না। আদিত্য মনে মনে বললো।
….আই এ্যাম সরি নূর। আমি তোমার ওপর একটুও রেগে নেই। আমিতো আগে থেকেই সব জানতাম। তানি আমাকে আগেই সব বলে দিয়েছে। আমি শুধু তোমাকে বোঝাতে চাই যে ভালোবাসার মানুষ দূরে গেলে কতো কষ্ট হয়। যাতে ভবিষ্যতে আর কখনো তুমি আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার কথা চিন্তাও করতে না পারো। তাই আপাতত তোমাকে একটু কষ্ট পেতে হবে নূরপাখি। কারণ তোমাকে আমি কিছুতেই হারাতে পারবো না। তোমাকে ছাড়া যে আমি নিঃস্ব নূরপাখি।

নূর নিজের চোখের পানি মুছে মনে মনে বললো।
…তানি ঠিকই বলেছে। এভাবে বসে বসে শুধু কাঁদলে কাজ হবে না। আমিই যখন ওনাকে রাগিয়েছি তাহলে আমিই ওনার রাগ ভাঙাবো।
————————————–

রাত ৮ টা
নূর বসে অপেক্ষা করছে কখন আদিত্য খাবার নিয়ে আসবে। এবার আসলে ও আদিত্যকে মানিয়েই ছাড়বে। নূরের ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার শব্দ পেল।নূর মনে মনে খুশি হয়ে গেলো আদিত্য আসছে ভেবে।
দরজা খুলতেই নূরের মুখ থেকে হাসি উড়ে গেল। কারণ খাবার নিয়ে আদিত্য আসেনি। একজন বয়স্ক মহিলা খাবার নিয়ে এসেছে। নূরের মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।

মহিলাটি দরজা থেকে বললো।
….ভেতরে আসতে পারি ম্যাডাম?

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…হ্যা আসুন।

মহিলাটি ভেতরে এসে বললো।
…ম্যাডাম আদিত্য বাবা খাবার পাঠিয়েছে খাবারটা খেয়ে নিন।

নূর বুঝতে পারলো এটা সেই মালি কাকার বউ। যার কথা আদিত্য বলেছিল। তারমানে সত্যি সত্যিই উনি আর আমার সামনে আসবেনা? নূর মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বললো।
…উনি কোথায়? মানে আপনার আদিত্য বাবা কোথায়?

মহিলাটি বললো।
….আদিত্য বাবাতো নিজের রুমেই আছে। আমি কি আপনাকে খাইয়ে দিব ম্যাডাম? আদিত্য বাবা বললো আপনি নাকি অসুস্থ তাই আপনাকে খাইয়ে দিতে হবে। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

নূর মুচকি হেসে বললো।
….প্রথমেতো আমাকে ম্যাডাম বলা বন্ধ করুন। আমি আপনার মেয়ের মতোই। তাই আমাকে নাম ধরেই ডাকবেন। আমার নাম নূর। তাই আমাকে নূর বলে ডাকলেই খুশি হবো।

নূরের কথায় মহিলাটি খুশি হয়ে বললো।
….ঠিক আছে। তাহলে খাবারটা কি খাইয়ে দিব এখন?

নূর বললো।
…..না আমি খাবোনা। আপনার আদিত্য বাবাকে যেয়ে বলুন। উনি যেন আমাকে এসে খাইয়ে দিয়ে যায়। নাহলে আমি খাবনা।

মহিলাটি সব বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো। তারপর বললো।
…ঠিক আছে আমি বলছি।
কথাটি বলে মহিলাটি বেড়িয়ে গেলো।

নূর বাঁকা হেসে মনে মনে বললো।
….এবার কোথায় যাবেন? আমাকে খাওয়াতে হলে আপনাকে আসতেই হবে।

কিছুক্ষণ পর মহিলাটি আবার আসলো। নূরের সামনে এসে মুখ ছোট করে বললো।
….আদিত্য বাবা বলেছে সে আসবেনা। তোমাকে আমার কাছেই খেয়ে নিতে বলেছে।

নূর মনে মনে বললো। এবার উনি একটু বেশিই করছে। এতো কিসের রাগ হ্যাঁ? আমিও দেখে ছাড়বো কিভাবে আমার সামনে না আসে। এসব ভেবে নূর মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বললো।
……ঠিক আছে। তাহলে আমিও খাবোনা। উনাকে যেয়ে বলে দিন।

মহিলাটি এবার করুন সুরে বললো।
….না না এমন করোনা দয়া করে। খাবার টা খেয়ে নেও। নাহলে আমার আর তোমার মালি কাকার কারোরই চাকরি থাকবে না। তাই দয়া করে খাবার টা খেয়ে নেও।

এবার নূর বিপাকে পরে গেলো। ওর জন্য বেচারা গরীব লোকগুলোর চাকরি চলে যাক। এটা নূর কখনই চাইবে না। অগত্যা নূর হার মেনে মুখ গোমড়া করে খাবারটা খেয়ে নিল। তারপর ওষুধ খেয়ে শুয়ে পরলো।

নূর ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আজও আদিত্য নূরের রুমে এসে নূরকে প্রাণভরে দেখে আদর করে গেল।
—————————————

এভাবে দুই দিন কেটে গেল। এখন নূর প্রায় সুস্থ। এখন নিজে নিজেই চলাফেরা করে। খাবারও নিজেই খায়। এই দুই দিনে নূর অনেক চেষ্টা করেছে আদিত্যর কাছে যাওয়ার ওর সাথে কথা বলার। কিন্তু আদিত্য সবসময় নূরকে ইগনোর করে ওর কাছ থেকে সরে যায়। নূর মনে মনে অনেক কষ্টও পায় আদিত্যের এমন আচরণে। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আজ আদিত্য অফিসে গেছে। ফিরতে নাকি রাত হবে। মালি কাকার বউয়ের কাছে বলে গেছে নূরের খেয়াল রাখতে।

নূর বসে বসে ভাবছে কি করা যায়। কিভাবে আদিত্যকে মানানো যায়। নূর ফোন বের করে তানির নাম্বারে কল দিল। আদিত্য কালই ওকে এই ফোনটা কিনে দিয়েছে।

তানি ফোন রিসিভ করে বললো।
….হ্যাঁ নূর বল।কেমন আছিস?

নূর মুখ গোমড়া করে বললো।
….ভালো নেই।

….কেন? কি হয়েছে? শরীর বেশি খারাপ করছে?

…..শরীর খারাপ না।মন খারাপ আমার।

….কেন? মনের আবার গ্যাস্টিক হলো নাকি?

….ধুরর মজা করিস নাতো।ভালো লাগছে না।

….আচ্ছা আচ্ছা সরি। বল কি হয়েছে?

নূর তানিকে সব খুলে বললো।
….এখন বল কি করবো আমি? উনিতো কিছুতেই মানছে না।

সবকিছু শুনে তানি বললো।
….শোন আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে। একদম হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর এটা কাজ করবেই।

নূর একটু উৎসাহ নিয়ে বললো।
….সত্যিই কি প্ল্যান বলনা?

তানি নূরকে সব প্ল্যান বুঝিয়ে দিয়ে বললো।
….আজকেই প্ল্যানটা কাজে লাগিয়ে ফেল।দেখবি সব একদম ঠিক হয়ে যাবে।

নূর একটু লাজুক হেসে বললো।
….ঠিক আছে।

রাত ৭-৩০
আদিত্য মাত্রই অফিস থেকে ফিরেছে। দরজার লক খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো। সারা বারি কেমন অন্ধকার হয়ে আছে। আদিত্য একটু ঘাবড়ে গেল। মনে মনে ভাবলো সারা বারি এমন অন্ধকার কেন? নূর কোথায় ওর কিছু হলো নাতো। এসব ভেবে আদিত্য জোরে জোরে নূরের নাম ধরে ডাকতে লাগলো।
হঠাৎ করে সব লাইট জ্বলে উঠলো। আদিত্য সামনে তাকাতেই থমকে গেল।

চলবে……..

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩৮
(first kiss 👩‍❤️‍💋‍👨)

★ আদিত্যের মনে হচ্ছে ও কোনো পরীদের রাজ্যে চলে এসেছে। আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা নিশ্চয় পরীদের রানী। এতো সুন্দর কেউ কিভাবে হতে পার?

নূর আজ একটা টুকটুকে লাল রংয়ের শাড়ী পরেছে। চোখে কাজল, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। কানে বড়ো বড়ো ঝুমকো, দুই হাত ভর্তি লাল কাচের চুরি। ঘনকালো চুলগুলো পিঠময় ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। কানের নিচে চুলের মাঝে একটা একটা লাল জারবেড়া ফুল লাগিয়েছে। আর মুখে আছে লাজুক হাসি। মোটকথা আদিত্যকে পাগল করার জন্য যা যা দরকার তার কিছুই বাদ রাখেনি। শুধু নিজেকেই নয়,পুরো বাসাটাকেও সুন্দর করে লাভ শেপের বেলুন, ফুল আর সুগন্ধি ক্যান্ডেল দিয়ে সাজিয়েছে।

আদিত্যের হার্ট মনে হচ্ছে বিট করাই বন্ধ করে দিয়েছে। আশেপাশের আর কোনো হুশ নেই ওর। হা করে শুধু তাকিয়েই আছে নূরের দিকে।

নূর লাজুক হেসে আদিত্যের দিকে এগিয়ে গেল।
নূর হাটার সময় ওর চুরির রিনিঝিনি শব্দ যেন আদিত্যকে আরো ঘায়েল করছে ।

নূর আদিত্যের কাছে এসে লাজুক হেসে বললো।
….আপনি চলে এসেছেন? আমি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আপনি যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর আমরা একসাথে ডিনার করবো।

নূরের কথায় আদিত্যের ঘোর কাটলো। আদিত্য একটু এদিক ওদিক তাকালো।তারপর নূরকে কোনো কিছু না বলেই নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

নূর একটু হতাশ হলো তবে আশা ছাড়লো না। নূর আজ পণ করেছে। যে করেই হোক আদিত্যের রাগ আজ ভাঙিয়েই ছাড়বে।

আদিত্য নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বুকের বাম পাশে হাত রেখে হার্টটাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। নূরকে এই রুপে দেখে আদিত্যের হার্ট যেন বুকের ভেতর থেকে লাফিয়ে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে।
আদিত্য চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো।
…..আদি বি এ ম্যান। তোকে শক্ত হতে হবে। এভাবে গলে গেলে চলবে না। নূরের সামনে তোকে স্ট্রং থাকতে হবে।

হঠাৎ আদিত্যের ভেতর থেকে একটা আওয়াজ আসলো। আওয়াজ টা বললো।
……কিন্তু আমার প্রাণপাখীটা যে আজ ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। তাহলে কিভাবে শক্ত থাকবো? ওকে দেখেই তো আমার অবস্থা বেহাল হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে জড়িয়ে ধরে শুধু আদর করি।

আদিত্য ভেতরের আওয়াজকে একটা রাম ধমক দিয়ে বললো।
…..সাট আপ। মা মানছি যে আজ নূর অনেক সুন্দর লাগছে। তাই বলে কি একদম গলে পানি হয়ে যেতে হবে নাকি? এসব হচ্ছে মেয়েদের হাতিয়ার। ছেলেদের দূর্বল করার। কিন্তু আমি এতো সহজে ধরা দেওয়ার পাত্র নই।হুহ্। বুঝতে পেরেছিস?
আদিত্য নিজেকে একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠিক করলো। তারপর কাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিল। ঘরের ভেতর কতক্ষণ পায়চারী করলো। বাইরে যাবে কি যাবেনা তাই ভাবছে। আদিত্য দরজার কাছে এসে বিড়বিড় করে বললো।
…আদি ইউ ক্যান ডু ইট। গো ফর ইট। ইয়েস।
মনে মনে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে রুমের দরজা খুলে বের হলো আদিত্য।

নিচে এসে দেখলো নূর সোফায় বসে ওর জন্যই অপেক্ষা করছে।
আদিত্য ওর কাছে এসে দাড়াতেই নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে একটা অমায়িক হাসি দিল।

ব্যাচ এতেই আদিত্যের সব সংকল্প পানি হয়ে গলতে শুরু করলো। আদিত্য উপরে উপরে সেটা বুঝতে না দিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….এসব কি? আর কাকি কোথায়? ওনাকে দেখছি না কেন?

নূর মুচকি হেসে বললো।
…..আমিই কাকিকে বাসায় চলে যেতে বলেছি।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কেন? আর তুমি বললেই ওনাকে চলে যেতে হবে? তোমাকে এখানে একা রেখে কিভাবে চলে গেলেন উনি?

….আরে আরে, আপনি রাগছেন কেন? উনার কোনো দোষ নেই। উনিতো যেতে চান নি। আমিই উনাকে জোর করে পাঠিয়েছি। আর সারাদিন তো ছিলোই। আপনি আসার একটু আগেই আমি পাঠিয়েছি।

আদিত্য বুঝতে পারছে ও বেশিক্ষণ নূরের সামনে থাকলে, নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না। তাই আবারও গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…..যাইহোক ডিনার করে শুয়ে পরো।

নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আপনি খাবেন না? চলুন না একসাথে ডিনার করবো?

আদিত্য অন্য দিকে তাকিয়ে বললো।
….আমার ক্ষিদে নেই।আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। তুমি খেয়ে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পরো।
কথাটা বলেই আদিত্য ওখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য উল্টো ঘুরতেই, নূর আদিত্যের হাত ধরে আটকে দেয়। করুন সুরে বললো।
….. আর কতো রাগ করে থাকবেন? প্লিজ মাপ করে দিন না আমাকে? আই এ্যাম সরি। আর কখনও এমন করবো না। সত্যিই বলছি।

আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছে।
আদিত্য নূরের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে আবারও চলে যেতে নেয়। চার কদম যেতেই আদিত্য আর যেতে পারে না। ওর পা জোরা থমকে যায়, পেছন থেকে আসা নূরের মিষ্টি কন্ঠ শুনে।

নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠলো।

♬ পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালোবাসা
সবই তোমায় দেব,একটাই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে।

(নূরের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে আদিত্যের মনের ভেতর যেন খুশীর বন্যা বয়ে গেলো। আদিত্য উল্টো ঘুরে থাকা অবস্থাতেই ঠোঁট কামড়ে প্রাপ্তির হাসি দিল)

ভাবিনি কখনও, এ হৃদয় রাঙানো
ভালোবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে, দুবাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াব আমি
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলবো এসে
এক পলকে পৌঁছে যাবো, রুপকথারই দেশে

মেঘেতে দাঁড়িয়ে, আকাশে হারিয়ে
যতনে রেখ গো তুমি
সেই মেঘেরই আঁচল এসে
আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং-তুলিতে আঁকবো ক্ষণ
রুপ কুমারের দেশে।

তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে। ♬

এই প্রথম নূর গান গাইলো। তাও আদিত্যের জন্য। আদিত্য যেন খুশীতে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নূরকে সেটা বুঝতে না দিয়ে আদিত্য ওখান থেকে চলে গেলো।

আদিত্য চলে যাওয়াতে নূর এবার সত্যি সত্যিই ভেঙে পরলো। ভেবেছিলো আজ হয়তো আদিত্য ওকে মাফ করে দিবে। কিন্তু আদিত্য তো ফিরেও তাকালো না।
নূর সোফায় ধপ করে বসে পরলো। বসে নিরবে কাঁদতে লাগলো। মনে মনে ভাবলো, আমি উনাকে সত্যি সত্যিই হারিয়ে ফেললাম। তানি ঠিকই বলেছে। আমি আমার সুখকে ধরে রাখতে পারিনি। আমি দেরি করে ফেলেছি। উনাকে হয়তো আর কখনোই পাবো না আমি। এসব ভেবে নূরের কন্নার গতি আরও বেড়ে গেল। নূর মুখে হাত চেপে ধরে দৌড়ে দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেলো।

আদিত্য নিজের রুমে এসে বেডের ওপর মাথার চুল টেনে ধরে বসে আছে। বারবার শুধু নূরের গাওয়া গানের ভালোবাসি লাইনটা মনে পরছে। আদিত্য বিড়বিড় করে বললো।
…..আমার প্রানপাখী আমাকে ভালোবাসে। হ্যাঁ ভালোবাসে আমাকে। সি লাভস মি।
কথাটা বারবার বলে হাসতে লাগলো আদিত্য।

দশ মিনিট পর আদিত্যের নূরের কথা মনে পরলো। নূরের মায়া ভরা চেহারাটা চোখে ভাসছে। মনে মনে ভাবছে আমি বোধ হয় একটু বেশিই করছি। এভাবে চলে আসাটা মনে হয় ঠিক হয় নি। মেয়েটা কতো কিছু করছে , শুধুমাত্র আমাকে মানানোর জন্য। এভাবে চলে আসায় নিশ্চয় ও খুব কষ্ট পেয়েছে। না না আমার প্রাণপাখী টাকে আর কষ্ট দিবো না আমি । ওকে যেটুকু বুঝানোর দরকার ছিল ও সেটা বুঝে গেছে। এখন আর ওকে কষ্ট দেওয়াটা ঠিক হবে না। এসব কথা ভেবে আদিত্য দ্রুত উঠে নূরের কাছে যাওয়ার জন্য দরজা খুলে বের হলো।

আদিত্য নিচে এসে দেখলো নূর ওখানে নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকালো। নূরকে কোথাও দেখতে পেল না আদিত্য। আদিত্য ভাবলো হয়তো নিজের রুমে চলে গেছে। আদিত্য দ্রুত নূরের রুমের দিকে গেল।

নূরের রুমের সামনে এসে দেখলো দরজা খোলা। আদিত্য ভেতরে ঢুকে দেখলো নূর রুমে নেই। ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওয়াশরুমের দরজা খোলা। তারমানে নূর ওয়াশরুমেও নেই। আদিত্যের এবার ভয় হতে লাগলো। কোথায় চলে গেলো মেয়েটা? আদিত্য নূরের নাম ধরে ডাকতে লাগলো। বেলকনিতে যেয়ে দেখলো সেখানেও নেই নূর।
আদিত্যের এবার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। কোথায় গেল আমার নূরপাখি? আদিত্য পাগলের মতো পুরো বাসায় খুজতে লাগলো। আর নূরের নাম ধরে ডাকতে লাগলো।
বাসার ভেতরে কোথাও না পেয়ে আদিত্য দৌড়ে ছাদে উঠে গেলো। ছাদে এসেও নূরকে কোথাও পেল না।
আদিত্যের ভয়ে এবার হাত পা অবশ হয়ে আসতে লাগলো। দুই হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে অস্থির হয়ে পেছাতে পেছাতে বিড়বিড় বলতে লাগলো। কোথায় গেল আমার প্রাণপাখীটা? সব আমার দোষ। আমার জন্যই হয়েছে এসব। নূর নিশ্চয় আমার ওপর রাগ করে কোথাও চলে গেছে। এখন কোথায় খুঁজব আমি ওকে? নূরপাখি প্লিজ চলে এসো আমার কাছে। আই প্রমিজ আর কক্ষণো রাগ করবো না তোমার ওপর। প্লিজ কাম টু মি। প্লিজ।

আদিত্য কিছু একটা ভেবে দৌড়ে আবার নিচে নেমে গেল। নিচে নেমে দেখলো মেইন দরজা খোলা। তারমানে নূর বাসার বাইরে গেছে।
কথাটা ভেবে আদিত্য দৌড়ে বাইরে গেল।

বাইরে এসে দেখলো নূর সুইমিং পুলের পাশে হাটুর ভেতর মুখ গুঁজে বসে আছে।
নূরকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এতক্ষণে যেন ওর জানে পানি এলো। আদিত্য ধীরে ধীরে নূরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।

নূরের কাছাকাছি আসতেই আদিত্য বুঝতে পারলো নূর কাঁদছে।
আদিত্যের এবার নিজের ওপরই রাগ হতে লাগলো। আজ ওর জন্য নূরপাখিটা কতো কষ্ট পাচ্ছে।
আদিত্য আস্তে করে নূরের পাশে হাঁটু গেড়ে বসলো। ডান হাতটা উঠিয়ে নূরের কাঁধে রাখলো।

কাঁধে কারোর ছোঁয়া পেয়ে নূর আস্তে করে মাথাটা তুলে পাশে তাকালো।
আদিত্যকে দেখে নূর অভিমান করে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ফুপাতে লাগলো।

আদিত্য নিজের বাম হাতটা দিয়ে নূরের গালে হাত দিয়ে নূরের মুখটা ওর দিকে ঘুরালো।
নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে আরো জোরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। তারপর আদিত্যের ঘাড়ের ওপর দিয়ে দুই হাত দিয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
আদিত্যও দুই হাত দিয়ে নূরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল।
আদিত্যর আলিঙ্গনে নূর আবেগে আপ্লূত হয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।

আদিত্য কিছু না বলে নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিল। নূরকে কোলে করে বাসার ভেতরে নিয়ে আসলো।

ভেতরে ঢুকে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়েই সোফায় গিয়ে বসলো।
নূর আদিত্যের বুকে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছে। আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
….বাচ্। আর কতো কাঁদবে? এবার বন্ধ করোনা কান্না প্লিজ। তোমার কান্না যে আমার একদম সহ্য হয় না। তাকি জানো তুমি?

নূর আদিত্যের বুকে মাথা রেখেই কান্না জড়িত কন্ঠে বললো ।
…..আ আপনি আমাকে আর ভা ভালোবাসেননা তাইনা?

আদিত্য নূরের কথায় একটু অবাক হয়ে বললো।
….কি বলছ তুমি? কে বলেছে তোমাকে এসব ফালতু কথা?

নূর ফুপাতে ফুপাতে করুণ সুর বললো।
….তা না হলে আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন? আমাকে এভাবে অবহেলা কেন করছেন? আপনি জানেন সবাই আমাকে অবহেলা করে। আপনিও আমাকে অবহেলা করলে আমি কোথায় যাবো? সবার অবহেলা সহ্য করতে পারলেও, আপনার অবহেলা আমি সহ্য করতে পারি না। আমার অনেক কষ্ট হয়।
কথাগুলো বলে নূর আদিত্যের বুকের কাছের টিশার্ট খামচে ধরে আবারও ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।

নূরের কথা শুনে আদিত্যের বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো। আদিত্য নূরকে আরো শক্ত করে বুকের ভেতর চেপে ধরলো। যেন বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেললেই শান্তি। নিজের ওপরে চরম রাগ লাগছে আদিত্যের। নূরকে বোঝাতে যেয়ে যে ওকে এতো কষ্ট দিয়ে ফেলবে , তা ভাবতেই পারেনি আদিত্য। সত্যিই তো বলেছে ও। মেয়েটা জীবনে শুধু কষ্ট আর অবহেলাই পেয়েছে। আর আমিও কিনা নিজের অজান্তে ওর সাথে সেম কাজটাই করছিলাম? না না আমি আর আর কোনো কষ্ট দেব না। আদিত্য নূরের মাথায় বুলিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বলে উঠলো।
……হুশশ শুশ শুশ।কি বলছো এসব? পাগল হয়ে গেছ? আমার প্রাণপাখী টাকে আমি কখনও অবহেলা করতে পারি? আমি নিজেকে একবার অবহেলা করতে পারি কিন্তু তোমাকে কখনও না। রুপকথার কাহিনিতে যেমন দৈত্যের জান একটা টিয়াপাখির ভেতরে থাকে। তেমনি আমার জানটাও তোমার ভেতরে আবদ্ধ। নিজের জানকে কি কেউ কখনো অবহেলা করতে পারে বলো? আর তুমি কি ভেবেছিলি, আমি সেদিনের কথার জন্য তোমার ওপর রেগে আছি? একদমই না। তানি আমাকে আগেই সবকিছু বলে দিয়েছল। হ্যাঁ প্রথমে একটু রেগে ছিলাম, কারণ আমি জানতাম যে তুমি আমাকে মিথ্যে বলছো। কেন মিথ্যে বলছো এইজন্যই একটু রেগে ছিলাম। তাছাড়া তুমি কি মনে করেছো যে তুমি আমাকে বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসনা। আর আমি সেটা শুনে তোমাকে আমার জীবন থেকে চলে যেতে দেব? কখনোই না। তুমি যদি সত্যি সত্যিইও আমাকে ভালো না বাসতে। তবুও আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে দিতাম না। কারণ আমার একার ভালোবাসাই আমাদের দুজনের জন্য যথেষ্ট। তাহলে তুমি কি করে ভাবলে যে এই আমি তোমাকে অবহেলা করতে পারি? আরে আমিতো তোমাকে শুধু বোঝাতে চাচ্ছিলাম যে, ভালোবাসার মানুষ দূরে গেলে কতো কষ্ট হয়। যাতে ভবিষ্যতে আর কখনো তুমি আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার কথা চিন্তাও করতে না পারো। বুঝতে পেরেছো পাগলি? এখন কান্না বন্ধ করো প্লিজ। তোমাকে যদি দেখাতে পারতাম যে,তোমার কান্না আমার বুকের ভেতর কতটা রক্ত ক্ষরণ করে। তাহলে হয়তো তুমি আর কখনো কাঁদতে না প্রাণপাখি।

এতক্ষণ আদিত্যের কথাগুলো শুনে নূরের কান্না অনেকটা কমে এসেছে। আদিত্যের মুখে প্রাণপাখী ডাকটা শুনে নূরের মনটা পুলকিত হয়ে উঠলো।

আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ওপরে তুলে বললো।
….এখন কান্না থামাও প্লিজ। দেখতো কেঁদে চেহারার কি অবস্থা করেছো?

আদিত্য খেয়াল করলো কাঁদার কারণে নূরের চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। একদম পাকা টমেটোর মতো লাগছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। চোখের কাজগুলো লেপ্টে গেছে। ঠোঁটের লিপস্টিকটাও ছড়িয়ে ঠোঁটের চারপাশে লেগে আছে। কিন্তু এই অবস্থায়ও আদিত্যের কাছে নূরকে আরো অপূর্ব সুন্দর লাগছে। এই অবস্থায় নূরকে প্রচুর মায়াবী আর আবেদনময়ী লাগছে। আদিত্য যেন ঘোরের ভেতর চলে যাচ্ছে। কেমন মারাত্মক নেশা ধরে যাচ্ছে। আদিত্য আজ কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে।

আদিত্য দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নূরের চোখের পানি মুছে দিল। মুখটা এগিয়ে নিয়ে নূরের কপালে একটা চুমু দিল। নূর কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিল। আদিত্য নূরের বন্ধ দুই চোখের পাতায় চুমু দিয়ে দিলো।
নূর দুই হাতে আদিত্যের বুকের কাছের টিশার্ট খামচে ধরলো।নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে নূরের। আদিত্য নূরের নাকের ডগায় একটা চুমু খেল। নূরের নাকের সাথে নিজের নাক ঠেকিয়ে নেশা ভরা চোখে নূরের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রইলো। নূরের নেশায় পাগল হয়ে যাচ্ছে আদিত্য। আজ কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আদিত্য নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নূরের ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা লিপস্টিক মুছে নিল। সাথে সাথে নূরের সারা শিরশির করে উঠলো। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। আদিত্য নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠলো।
…..তোমাকে বলেছিলাম না? আমার সামনে ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে আসবেনা। আমি কোনো ভুল করে ফেলবো। আমার কথা অমান্য করার জন্য তোমাকে এখন শাস্তি দেওয়া উচিৎ তাইনা?

নূর লজ্জায় মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো। আদিত্য আবারও নেশা ভরা কন্ঠে বললো।
…..নূর আজ আমি নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছিনা। প্রাণপাখি, ক্যান আই কিস ইউ প্লিজ?

নূর কিছু না বলে শুধু লাজুক হাসলো। আদিত্য বুঝতে পারলো নূরের অনুমতি আছে।

আদিত্য মুচকি হেসে নিজের দুই হাত নূরের দুই গালে রেখে ধীরে ধীরে নূরের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেল। নূর চোখ বন্ধ করে নিল। আদিত্য প্রথমে আলতো করে নূরের ঠোঁটে একটা চুমু খেল। নূরের সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো। নূর আরো শক্ত করে আদিত্যের টিশার্ট খামচে ধরে কাপতে লাগলো। যা আদিত্যকে আরো পাগল করে তুললো।আদিত্য এবার এক হাত নূরের চুলের মাঝে ঢুকিয়ে, অন্য হাত দিয়ে নূরের কোমড় পেচিয়ে, নূরের দুই ঠোঁটের ফাকে নিজের ঠোঁট ঢুকিয়ে দিয়ে নূরের রসালো ঠোঁট চুষে নিতে লাগলো। একবার নিচের ঠোঁট, আরেকবার উপরের ঠোঁট। এভাবে পালাক্রমে নূরের ঠোঁটের স্বাদ নিতে লাগলো। ঠোঁটের স্বাদ নিতে নিতে আদিত্য নূরের শাড়ির ফাকে উন্মুক্ত কোমড়ে হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো। মাঝে মাঝে হাত দিয়ে কোমড়ে চাপ দিতে লাগলো।
আদিত্যের এমন লোমহর্ষক ছোঁয়ায় নূরের সারা শরীরে কাটা দিয়ে উঠছে। লোমকূপও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। প্রিয়তমের ছোঁয়ায় যে এতো সুখ আছে, তা জানা ছিলোনা নূরের। আদিত্যের এমন পাগল করা আদরের কাছে নূরও আর বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারে না। নূর এক হাত আদিত্যের ঘাড়ের পেছনে দিয়ে আদিত্যের চুল শক্ত করে ধরে। আরেক হাতে আদিত্যের টিশার্টের কলার খামচে ধরে, নিজেও আদিত্যের সাথে রেসপন্স করে।
নূরের রেসপন্স পেয়ে আদিত্য আরো উন্মাদ হয়ে উঠে। পাগলের নূরের ঠোঁটে চুমু খেতে থাকে। আর আদিত্যের হাত নূরের কোমড়ে আর পিঠে বিচরণ করতে থাকে। আদিত্য এবার নূরের ঠোঁটে আলতো করে একটা কামড় দিল। তারপর নূরের ঠোঁট ছেড়ে ধীরে ধীরে চুমু দিতে দিতে নূরের গলায় নেমে এলো। পাগলের মতো নূরের গলায়, ঘাড়ে চুমু খেতে লাগলো। নূরের এদিকে কাঁপতে কাঁপতে পাগল হওয়ার উপক্রম। নূর আদিত্যের এমন পাগল করা ছোঁয়া সহ্য করতে না পেরে আদিত্যের কানের লতি কামড়ে ধরলো। এতে যেন আদিত্যের উন্মাদনা আরো বাড়িয়ে দিল। আদিত্য নূরের গলা আর ঘাড়ের মাঝখানে কামড় দিয়ে ধরলো।নূরের একটু ব্যাথা লাগলেও কিছু বললো। এই ব্যাথায়ও যে অন্যরকম সুখ আছে।

আদিত্য নূরের গলায় চুমু খেতে খেতে হাত বাড়িয়ে নূরের বুকের ওপর থেকে আঁচলটা সরাতে যায়।আঁচলে হাত দিতেই হঠাৎ আদিত্যের হুঁশ আসে ও কি করছে। আদিত্য নূরের আঁচল ঠিক করে দিয়ে মাথা উঠিয়ে নূরের মুখের দিকে তাকায়। নূর এখনো চোখ বন্ধ করে কাপছে। আদিত্য নূরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে সময় নিয়ে একটা চুমু খায়। তারপর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দুজনেই হাঁপাতে থাকে। নূর লজ্জায় আদিত্যের বুকের ভেতর লুকিয়ে পরে। আদিত্য বলে উঠলো।
…..আই এ্যাম সরি প্রাণপাখি। আমি বোধহয় একটু বেশিই করে ফেলেছি।

নূর আদিত্যের বুকে মাথা রেখেই বলে উঠলো।
….সরি বলার দরকার নেই। আপনার ওপর আমার বিশ্বাস আছে।

আদিত্য বললো।
……তবুও আমি এভাবে বিয়ের আগে আমাদের লিমিট ক্রস করতে চাই না। আমি চাই না আমাদের প্রথম কাছে আসা নিয়ে আমাদের ভেতরে কোনো অপরাধ বোধ থাকুক। আমি চাই আমাদের প্রথম মিলন হবে, সম্পূর্ন বৈধ আর পবিত্র। যেটা মনে করে শুধু খুশি আর ভালো লাগা কাজ করবে।কোনো অপরাধ বোধ নয় বুঝেছ? তবে যতই বলিনা কেন। আমি একজন ছেলে পুরুষ মানুষ। তাই অনেক সময় হয়তো আমি আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যেতে পারি। তখন তুমি আমাকে বাঁধা দিয়ে আমাকে আটকাবে। আমার মাইন্ড ডাইভার্ট করার চেষ্টা করবে বুঝেছ?

আদিত্যের কথা শুনে নূরের মনটা ভরে উঠলো। মনে মনে ভাবলো, উনি সত্যিই একজন সুপুরুষ। একজন সত্যিকারের প্রেমিক। এসব ভেবে নূর আদিত্যের বুকের মাঝেই মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হুম।

আদিত্য দুষ্টু হেসে বললো।
….তবে এটা শুধু বিয়ের আগ পর্যন্তই বুজেছো? বিয়ের পরে কোনো বাঁধা চলবে না। দিনরাত শুধু আদর আর আদর চলবে। তুমি কোনো বাধা দিতে পারবে না বুজেছো?

নূর লজ্জা পেয়ে আদিত্যের বুকে আস্তে করে একটা কিল দিয়ে বললো।
….ছিহ্, অসভ্য।

নূরের কথায় আদিত্য হেসে উঠলো।

একটু পরে আদিত্য বললো।
…..এভাবে বুকের মাঝে পরে থাকলে হবে? ডিনার করতে হবে না?

নূর একটু মিথ্যে অভিমান দেখিয়ে আদিত্যের বুকেই মাথা নাড়ালো।মানে সে খাবে না।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
……আমি খাইয়ে দিলেও না?

নূর এবার লাজুক হেসে বললো।
…..জানি না?

আদিত্য হেসে দিয়ে নূরকে কোলে নিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেল। তারপর পা দিয়ে চেয়ার টান দিয়ে নূরকে কোলে নিয়েই চেয়ারে বসলো। তারপর প্লেটে খাবার বেড়ে হাতে নিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরলো।

নূরও চুপচাপ খাবার মুখে নিয়ে নিল। নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আপনি খাবেন না? দাড়ান আমি আপনার জন্য খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
কথাটা বলেই নূর আদিত্যের কোল থেকে উঠতে নিলেই, আদিত্য নূরকে আটকে ধরে বলে উঠলো।
….আমি কি তোমাকে বলেছি আমার জন্য আলাদা খাবার বাড়তে?

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কেন আপনি খাবেন না? নাকি সত্যি সত্যিই বাইরে থেকে খেয়ে এসেছেন?

…..আমি কি বলেছি নাকি আমি খাবো না? আমি খাবো,তবে আলাদা প্লেটে নয়। তোমার সাথে এক প্লেটেই খাবো।

….কিন্তু আমার এটো প্লেটে আপনি কিভাবে খাবেন?

……তোমাকে এতো বুঝতে হবে না। তোমার প্লেটে খেলে খাব নাহলে খাবনা।

নূর লাজুক হেসে বললো।
….ঠিক আছে।
কথাটা বলে নূর নিজের হাত ধুয়ে, প্লেট থেকে খাবার নিয়ে আদিত্যের সামনে ধরলো।

আদিত্য মুচকি হেসে খাবারটা মুখে নিয়ে নিল।
এভাবে দুজন দুজনকে খাইয়ে দিল। ডিনার শেষে আদিত্য আবারও নূরকে কোলে নিয়ে নূরের রুমের দিকে এগুলো। নূর আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে আদিত্যের ঘাড়ে মাথা রাখলো। আদিত্য নূরের রুমে এসে নূরকে বেডের ওপর বসালো।তারপর নূরকে মেডিসিন খাইয়ে দিল। মেডিসিন খাওয়া শেষে আদিত্য নূরকে শুইয়ে দিয়ে গায়ের ওপর দিয়ে চাদর দিয়ে দিল।তারপর নূরের কপালে চুমু দিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….গুড নাইট প্রাণপাখি।

নূরও মুচকি হেসে বললো।
…গুড নাইট।

তারপর আদিত্য উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।

চলবে…..