#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২০
____________
পনেরো দিন পর হসপিটাল থেকে বাড়িতে ট্রান্সফার করা হয় হ্যাভেনকে। বাড়িতে নেওয়ার ফলে আহির যত্নশীল আচরণে মোহিত হয় হ্যাভেন। প্রতিদিন গা মুছে দেওয়া থেকে শুরু করে সবটা করে আহি। আহি যখন তাঁর সেবায় সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করে হ্যাভেন তখন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে বোঝার চেষ্টা করে মেয়েটার মনে ঠিক কি চলছে৷ মনে তাঁর এক আকাশ সন্দেহ জন্মায়। নিশ্চয়ই এসবের পেছনে বড় কোন কারণ আছে। যা অবশ্যই তাঁর জন্য ক্ষতিকারক। রূপবতী নারীরা স্বামীর সঙ্গে কপটতা করায় ওস্তাদ। তাই নিজেকে আরো অনেক বেশী স্ট্রং রেখে চোখ,কান সর্বদা খোলা রাখলো এবং সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিলো। দুমাসের বেড রেস্টে আছে সে। যদিও মোটামুটি সুস্থ চলাচল করতে পারে। তবুও তাঁর হয়ে যাবতীয় কাজ এবং সভা সমিতি তে অংশগ্রহণ করছে তাঁর বাবা হুমায়ুন তালুকদার। যেসব কাজ একেবারেই তাঁকে ছাড়া চলছে না তাঁর অনুমতির প্রয়োজন পড়ছে সেসব কাজ আউটহাউজে সম্পন্ন করছে। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মিটিংও আউটহাউজেই সম্পন্ন করছে।
ইতিমধ্যে রূপসাও বেশ কয়েকবার মিট করতে চেয়েছে হ্যাভেনের সাথে। অসুস্থতার কথা বলে এড়িয়ে যাচ্ছে সে। ইচ্ছে করলেই অপমান করে ভাগাতে পারে এই নির্লজ্জ মেয়েটা কে। কিন্তু তাঁর মনে কি চলছে সে এক উপরওয়ালা ছাড়া আর কারো বোঝার উপায় নেই । রূপসা জিসানকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে এ খবর যখন রূপসা হ্যাভেনকে জানায় আহি তাঁর পাশেই শুয়ে ছিলো। সবটা সে শুনতেও পেয়েছে এবং শেষটা দেখার অপেক্ষাতেও রয়েছে। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে হ্যাভেনের মাথায় ইট,পাথর ছুঁড়ে মারতে। রড দিয়ে আঘাত করে মাথাটা চৌচির করে ফেলতে। বহু কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সে। না জানি কবে এমপি মহাশয়ের খুন সম্পন্ন হয়ে যায় নিজ স্ত্রী দ্বারাই ।
.
অনেকদিন হলো ভার্সিটি মিস দিচ্ছে আহি। হ্যাভেন অসুস্থ থাকায় ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা মাথায়ও আনেনি। সামনে পরীক্ষা এবার না যেয়ে উপায় নেই। টিভি দেখছিলো হ্যাভেন আহি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানার একপাশে গুটিশুটি হয়ে বসলো। তাঁকে দেখেই হ্যাভেন তাঁর গা ঘেষে বসে হিন্দি গানের চ্যানেল দিলো। সানিলিওন এর আইটেম সং হচ্ছিল। আহি দেখা মাএই চোখ সরিয়ে নিলো। শাড়ির আঁচল মোচরাতে মোচরাতে বললো,
-‘ আমার কিছু কথা ছিলো ‘।
-‘ কি কথা এমন হট ভিডিও দেখতে নিষেধ করবে নিশ্চয়ই। ওয়েট ওয়েট হট সিন দেখে ফিলিংস বেড়ে গেলো নাকি? অনেকদিন ইন্টিমেট না হওয়াতে ভাবছো ইগনোর করছি? তোমরা মেয়েরা পারোও বটে হাজব্যান্ডের অসুস্থতা তে গুরুত্ব দাও না হাজব্যান্ডের সংস্পর্শ কিছুদিন পাচ্ছো না বলেই শুরু হয়ে যায় গুরুতর অসুবিধা’।
হ্যাভেনের মুখের ভাষার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আর না নিয়ন্ত্রণ আছে নিজের আচরণবিধিতে। যখন যা ইচ্ছে হয় তাই বলে তাই করে৷ লজ্জাশরম যে নেই সে আর নতুন কথা নয় পুরানো কথাই। তবুও আহি তো তাঁর স্বভাবের নয়। এসব লুচুমার্কা কথাবার্তা তাঁর আজো হজম করতে অস্বস্তি হয়। চোখ মুখ খিঁচে দু’হাতে শাড়ি আঁকড়ে ধরলো আহি। তা দেখে হ্যাভেন হো’হো করে হেসে ওঠলো। হাসিটা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো ছিলো। আহি চোখ মেলে ঘৃণার দৃষ্টি ফেলে তীক্ষ্ণ গলায় বললো,
-‘ মি.হ্যাভেন তালুকদার সব মেয়েকে আপনার প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। আপনার সাথে ইন্টিমেট হওয়ার জন্য আগেও ইচ্ছুক ছিলাম না এখনো নই। যেখানে মনেরই মিল নেই সেখানে দেহের মিলন দিয়ে কি হবে বলতে পারেন ‘?
রূপসাকে স্মরণ করাতেই হ্যাভেনের চোখ দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। ক্ষণে ক্ষণে তাঁর আচরণের পরিবর্তন ঘটে৷ এ যেনো ফুঁস করে আগুন জ্বলে ওঠা বা নিভে যাওয়ার ব্যাপার স্যাপার।
আহি তাঁর মূল্যবান বাক্যগুলো ব্যায় করে ওঠে যেতে নিতেই হ্যাভেন তাঁর শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচাতে পেঁচাতে একটানে বিছানায় ফেললো। আচমকাই এভাবে টান দিতে ঘাড়ে বেশ টান পড়লো। ব্যাথায় আর নড়চড় করতে পারলো না৷ এর মধ্যে হ্যাভেন ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর দুহাত বালিশে চেপে ধরে হিংস্র গলায় প্রশ্ন করলো,
-‘ আমার সাথে ইন্টিমেট হতে ইচ্ছে হয় না তাইনা তাহলে কার সাথে ইচ্ছে হয় বল। তোদের এক পুরুষে মন ভরে না। বল কোন দিক দিয়ে অসুখি রেখেছি ‘।
-‘ ভালোবাসার দিক দিয়ে আপনার আচরণে কখনোই ভালোবাসা কেনো দেখতে পাইনা আমি ‘।
হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে হিংস্র গলায় বললো,
-‘ ভালোবাসা দিয়ে কি করবি? সব চাহিদা মিটাচ্ছি এতে হয় না। নাকি অন্য পুরুষের স্বাদ নিতে শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে ‘?
দুচোখ বন্ধ করে কান্নায় ভেঙে পড়লো আহি চিৎকার করে বলে ওঠলো,
-‘ আমার কিচ্ছু চাইনা। লাগছে আমার ছাড়ুন ‘।
-‘ সত্যিটা বল একদম উপরে পাঠিয়ে দিব ‘।
আহি ভয়ার্ত চোখে তাকালো হ্যাভেনের দিকে। এই মূহুর্তটা শ্বাসরুদ্ধকর এক ভয়ানক পরিস্থিতি। হ্যাভেনের আচরণ গুলো মোটেই স্বাভাবিক মানুষের মতো লাগছে না। এমন ভয়ংকর রূপ ভয়ংকর স্পর্শ গত দের বছরে কম পায়নি। এসবের সমাপ্তি টা ঠিক কোথায় ভেবে পায় না সে। হুহু করে কেঁদে দিয়ে শুধু বলতে থাকে,
-‘ সামনে পরীক্ষা ভার্সিটিতে যেতে হবে সে কথাই বলতে এসেছিলাম,প্লিজ ছাড়ুন আমার লাগছে ‘।
মূহুর্তেই স্বাভাবিক হয়ে যায় হ্যাভেন। আহিকে ছেড়ে ফোন হাতে নিয়ে দ্রুত কল করে হিরাকে ভার্সিটির সমস্ত খবরাখবর নিতে বলে যদি আহির যাওয়ার প্রয়োজনও হয় এও যেনো ইমিডিয়েটলি জানায়। বলেই ফোন রেখে দিয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে মেঝেতে দৃষ্টি স্থির রাখে। আহির ফুঁপানির শব্দে ঘোর কাটিয়ে তাঁর দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রশ্ন করে,
-‘ কি চাও তুমি ‘?
-‘ আমি যা চাই তা আপনি দেবেন আমায় ‘?
-‘ শুনি ‘।
-‘ একজন স্বাভাবিক হাজব্যান্ড, একটা স্বাভাবিক সংসার। একটা নিশ্চিন্ত বুক,একটা ভরসার হাত, একটু ভালোবাসা ব্যাস আর কিছু না ‘।
হ্যাভেন ভেবেছিলো আহি ডিভোর্স চাইবে। কিন্তু এমন কিছু হলোনা। পানিশমেন্ট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেও সেই প্রস্তুতির ইতি টেনে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। আর আহি চোখের পানি মুছে অসহায় মুখে তাঁর যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো। অনুভব করলো তাঁর ফিরে আসা উচিত হয়নি। এ পৃথিবীতে সবাই তো আর নির্মলের মতো করে ভালোবাসে না হয়তো ভালোবাসতে পারবেও না।
.
হ্যাভেনকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আহি। হ্যারি,হিরা পাশাপাশি বসেছে। হিয়া ঘুম থেকে এখনো ওঠেনি। যেহেতু আজ ভার্সিটি নেই এগারোটার আগে সে ওঠবেওনা। হ্যাভেনের মা হ্যাভেনের বাবার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। খাওয়ার মাঝেই হুমায়ুন তালুকদার বলে ওঠলেন,
-‘ বাসায় মেহমান আসছে শুনলাম। আদর যত্নে কোন ত্রুটি যেনো না হয়’।
কথাটা শোনা মাএই হ্যাভেনের মা সম্মতি জানালেন। কে আসছে জানার জন্য পরপর সকলের দিকেই দৃষ্টি ফেললো আহি। হ্যারির ফর্সা মুখটা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। হিরা হ্যারির বাহুতে খোঁচা মেরে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। আহি লক্ষ করলো হ্যাভেনও মুচকি মুচকি হাসছে। জানার তীব্র ইচ্ছে থাকলেও কাউকে একটি প্রশ্নও সে করলো না। এ বাড়ির প্রতিটি লোকই খুব কম কথা বলে এবং কম মিশুক। তাঁরও এদের সাথে ভাব জমাতে ইচ্ছে করেনা। আসল মানুষ টার সাথেই ভাব নেই এদের সাথে ভাব হলেই কি না হলেই বা কি? টুকটাক প্রয়োজনীয় যা কথা ঐ হিয়ার সাথেই বলে। খাওয়া শেষে আহির আঁচলে হাত, মুখ মুছে ওঠে গেলো হ্যাভেন। আহি রান্নাঘর থেকে এক বাটি পায়েসে চামচ ডুবিয়ে ধীর পায়ে উপরে ওঠে গেলো। রুমে গিয়ে ট্রি টেবিলে পায়েসের বাটি রেখে বেড়িয়ে আসবে এমন সময় আঁচল টেনে ধরলো হ্যাভেন।
-‘সাইকোপ্যাথিতে ভুগছে ভালো কথা সর্বক্ষণ বউয়ের আঁচল ধরে ঘোরা কোন রোগের লক্ষণ নাকি এটাও সাইকোসিস প্রবলেমের মধ্যেই পড়ে অসহ্য ‘।
ভেবেই পিছনমুখী দাঁড়িয়েই নিচু গলায় বললো,
-‘ আমার কাজ শেষ হয়নি খাওয়াও হয়নি ‘।
-‘ আই নো দ্যাট সুন্দরী। কিন্তু বাড়িতে কে আসবে সেটা শুনে যাও ‘।
বলতে বলতেই একদম কাছে টেনে নিলো। কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে ঘাড়ে নাক ঘষে লম্বা এক শ্বাস টেনে ঘ্রাণ নিলো অতঃপর আলতো ঠোঁট ছুঁইয়িয়ে দিলো। চোখ বুজে ঘন প্রশ্বাস নিতে শুরু করলো আহি। তা দেখে মৃদু হেসে ভারী কন্ঠে হ্যাভেন বললো,
-‘ সাবা ম্যাম আসছে ‘।
চমকে গিয়ে পিছন দিক তাকালো আহি। সাবা ম্যাম আসছে? কিন্তু কেনো? সাবা ম্যাম এর আসাতে তিন ভাইয়ের এতো ঈদ আনন্দই বা কিসের? আর হ্যারি এমন মহিলাদের মতো লজ্জাই বা পাচ্ছে কেনো? মনে হচ্ছে বাসর রাতের পর সকাল সকাল নতুন বউ জনসম্মুখে এসেছে।
আহির ভাবনায় বেঘাত ঘটলো হ্যাভেনের কথায়,
-‘ শুনলাম ম্যামের সাথে নিরিবিলি কথা বলার জন্য খুব হাসফাস করছিলে? ম্যাম ও আমার ছেলেদের বেশ ঝাঁঝালো কথা শুনিয়েছে। তাই একদম বাড়িতে ইনভাইট করে দিলাম। যতোই হোক শ্রদ্ধেয় ক্রাশ আমার সেই সাথে আমার বউয়ের বেশ ঘনিষ্ঠ মানুষও হয়ে ওঠেছে। সম্পর্ক জোরালো না করলে হয় নাকি ‘?
বলেই চোখ টিপ মেরে ঘাড় বাঁকিয়ে দুঠোঁট চৌকা করে সুর তুলতে তুলতে কয়েক পা চালিয়ে গিয়ে ধপাস করে সোফায় বসে পড়লো। ট্রি টেবিলে এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে অনবরত নাচাতে শুরু করলো।
আহি কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কি সাংঘাতিক মানুষের সাথে বসবাস তাঁর। অবশ্য সত্যিই বেশ কিছু দিন ধরে সাবা ম্যামের সাথে একান্ত কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু হ্যাভেনের এই সিসি ক্যামেরার ন্যায় ছেলেপুলের জন্য তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ বাড়িতে নিয়ে এলেই বা কি একান্ত কথা বলা কি আদেও সম্ভব? বাথরুম বাদে সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা সেটআপ করা রয়েছে ম্যামকে নিয়ে বাথরুম তো আর ঢোকা যাবে না। বিরক্তিতে চোখ,মুখ কুঁচকে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো আহি।
______________
সাবা ম্যাম এসেছেন মিনিক পাঁচেক আগে। আহি,হ্যাভেন, হ্যারি,হিরা,হিয়া সহ বাড়ির প্রতিটি ব্যাক্তিই তাঁর সাথে কুশল বিনিময় করে যে যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। হিয়া আর হিরা সাবা ম্যাম এর সাথে বসে টুকটাক কথা বার্তা বলছে। হ্যাভেন নিজ রুমের বেলকনিতে বসে ফোনে গেম খেলছে। আহি কাজের মেয়ে এবং শাশুড়ী মায়ের সঙ্গে রান্নাবান্নার কাজে ব্যাস্ত। হ্যারি নিজ রুমের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিচের দিকে। সাবা ম্যাম সামনে পড়লেই তাঁর আর দিন দুনিয়ার হুশ থাকে না। বয়স টা কোন ফ্যাক্টই মনে করে না সে। বড় জোর পাঁচ বছরের সিনিয়র তাতে কিই বা আসে জায়? নির্মল গত হয়েছে এগারো বছর হতে চললো। তবুও তাঁর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে তাঁকে একটা সুযোগ দিলে সে কি কম ভালোবাসতো নাকি? আর কতো একা থাকবে ম্যাম? এসব ভেবেই মেজাজ বিগরে যাচ্ছে তাঁর। মনটা কেমন আগডুম বাগডুম করছে নিচে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেখানে গিয়ে এক মূহুর্তও স্থির থাকতে পারবেনা। মনে পড়ে যাবে কয়েক বছর আগে ক্যাম্পাসে কিছু সংখ্যাক স্টুডেন্টদের সামনে ম্যামকে প্রপোজ করার মূহুর্তটা। সেই সাথে সীমিত পরিসরে প্র্যাসটিজের ফালুদা হয়ে যাওয়ার কথা। যদিও ম্যাম ধারণা করেছিলো হ্যারি জানেনা সে এই ভার্সিটির প্রফেসর স্টুডেন্ট মনে করেই প্রপোজ করেছে। তাই সাবা ম্যাম স্বগতোক্তি হয়ে বলেছিলো,
-‘ এই ছেলে তুমি জানো আমি কে ‘?
হ্যারি মুখটা কাচুমাচু করে যেই বলতে যাবে ‘হ্যা জানি’। তৎক্ষনাৎ সাবা বলে ওঠলো,
-‘ আমি এই ভার্সিটির একজন অধ্যাপক হাঁটুর বয়সী ছেলে হয়ে আমায় প্রপোজ করতে আসো। সরি বলার প্রয়োজন নেই অনিচ্ছাকৃত ভুল বুঝতে পেরেছি’। বলেই মিষ্টি করে হেসে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
পুরো শহড়ে গা-জুরি করে বেড়ানো ছেলে হ্যারি। এলাকার ছেলেরা সহ ছাএদলের নেতাদেরও হাঁটু কাঁপে তাঁকে দেখে। হ্যাভেন তালুকদারের ভাই সে। শতশত মেয়েরা তাঁর হাতের মোয়া সেই হ্যারি তালুকদার কে কিনা এভাবে এভয়েড করা হলো? এভয়ড করে আবার মিষ্টি হাসি দিয়ে বুকের ভিতর তালগোল পাকিয়ে দিয়েও গেলো? এমন নিখুঁত যন্ত্রণা দেওয়ার পরও সাবা ম্যামকে বিন্দু পরিমাণ অসম্মানও সে করতে পারেনি৷ তাঁর জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে হিসেবটা আলাদা হতো। রিজেক্ট হওয়ার পর জোর করে তুলে আনার প্ল্যান করলেও নির্মল ভাইয়ের স্ত্রী এই সত্যিটা জানার পর আর জোর পূর্বক কিছু করার ইচ্ছে হয়নি। সে যখন সাবা ম্যামকে নিয়ে এক সমুদ্র ভাবনায় ব্যাস্ত ছিলো ঠিক সে সময়ই ডাক পড়লো কাজের মেয়ের। সে এক সুরে সবাইকে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য নিচে যেতে বলছে। তাই দ্রুত রুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে নিলো। সাবা ম্যাম কে সাদা রঙের কামিজ আকাশি রঙের সেলোয়ার ওড়না পরিহিত দেখেই সে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সাদা পাঞ্জাবি,পাজামা পড়ে কড়া স্মেলের পারফিউম পাঞ্জাবির গায়ে মাখিয়েছে। দুগাল ভর্তি দাঁড়ি তাঁর কে বলবে সে ম্যাম এর থেকে জুনিয়র বরং ম্যামকেই তাঁর পাশে পিচ্চি পিচ্চি লাগবে। এই চিরন্তন সত্যিটা কে বোঝাবে শুভ্রতায় বেষ্টিত মহীয়সী সেই নারীটাকে।
.
ডাইনিং টেবিলে বসেছে সকলেই। আহি হ্যাভেনের পাশে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে খাবার পরিবেশন করছে। সকলকে নয় শুধুই তাঁর স্বামীকে। সাবা খাওয়ার ফাঁকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আহির কর্মকান্ড দেখছে। মেজাজ তাঁর বড্ড খারাপ লাগছে। এসেছে থেকেই বেশ লক্ষ করছে সে। আহির আচরণ একটা কাঠের পুতুল বৈকি আর কিছু নয়। হ্যাভেনের দিকে চেয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। গাণ্ডেপিণ্ডে গিলছে আর বউয়ের দিকে অসভ্যের ন্যায় চেয়ে আছে। কখনো কখনো মিটিমিটি হাসছেও। আবার কখনো বা কাজের মেয়েটিকে বলে ওঠছে,
-‘ এই লতা ম্যামের পাতে পোলাও দে, মাংস দে অতিথি আপ্যায়নে কোন ত্রুটি যেনো না হয় ‘।
আহি যা বলেছিলো সব পাই টু পাই মিলে যাচ্ছে। সত্যি শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ ছাড়া আর কিছু নয়। আহির সঙ্গে একান্ত কথা বলাটাকে অত্যাবশ্যকীয় জরুরি মনে করলো সাবা।
খাবার শেষে হ্যাভেন যখন আহির আঁচলে হাত,মুখ মুছে ওঠে গেলো। সাবা তখন আচমকাই নিজের কপালে হাত রাখলো। বিরবির করে বলতে থাকলো,
-‘ হায়রে এ কোন পাগলের দরবারে এসে পড়লাম। বাসায় মেহমান এলেও স্বভাব একটুও সংযত রাখেনা আচ্ছা বেয়াদব তো ‘।
হিয়া, হিরা মিটিমিটি হাসতে থাকলো। হ্যারি লাজুক ভঙ্গিতে সাবার দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো৷ তাঁর বর্তমান ভাবভঙ্গি দেখে কেউ বিশ্বাস করবেনা সে একজন রাজনৈতিক নেতা, প্রচন্ড বদমায়েশ, ইতর একটা ছেলে এবং তরুণ এমপি হ্যাভেন তালুকদারের ছোট ভাই। আহি যখন রান্নাঘর থেকে পায়েসের বাটি নিয়ে উপরে যাচ্ছিলো সাবা তখন হিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো,
-‘ কি ব্যাপার আহি খাবে না ‘?
-‘ হ্যাঁ কিছুক্ষণ পরই খাবে আম্মুর সাথে। দাদান যখন খায় ভাবি এভাবেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। এটা আমাদের বাড়িতে সেই আদিকাল থেকেই নাকি বাবা,কাকারা দেখে আসছে। সে অনুযায়ীই রীতিটা ধরে রেখেছে বাবা আর দাদান ‘।
-‘ হুম বুঝলাম কিন্তু এখন উপরে গেলো কেনো? খাবার শেষে তোমার দাদানের পায়ে তেল মালিশও করে দিতে হয় নাকি ‘। ভৎসনার সুরে কথাটি বললো সাবা।
– ‘ না না খাওয়া শেষে দাদানের এক বাটি পায়েস খাওয়ার অভ্যেস আছে তাই পায়েস নিয়ে গেলো ভাবি ‘।
-‘ আমার কিন্তু এমন কোন অভ্যাস নেই ম্যাম। আমার বউয়ের বেলায় উল্টো নিয়ম হবে সে বসে খাবে আর আমি প্রয়োজনে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করবো তাঁকে ‘। আচমকাই কথাটা বলে ফেললো হ্যারি এবং অন্তিম পর্যায় জ্বিবও কাটলো।
হিরার গলায় খাবার আটকে গেলো অনবরত কাশতে শুরু করলো সে। সাবা ভ্রু কুঁচকে হ্যারির দিকে তাকালো। হিয়া বড় বড় চোখ করে এক ঢোক গিললো। হ্যারি সাবা ম্যামের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিজেকে নিরুদ্দেশ করার প্রানপন চেষ্টা করে না হাত ধোয়া, না পানি খাওয়া কিছুই সম্পন্ন করলো না৷ ঠোঁটের কোনায় জোর পূর্বক হাসি টেনে তরান্বিত বেগে ওঠে চলে গেলো ।
চলবে…