#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_19
‘পালাচ্ছিস কেন না বলে?’
ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। ভাইয়া দেয়াল এক হাত রেখে আমাকে আটকে দাঁড়িয়ে আছে।আরেক হাত আমার কোমর ধরে আছে। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছি হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। ভাইয়ার এতো কাছে আসাতে আমি থরথর করে কাঁপছি।
কথা বলতে পারছি না। চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারছি ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাও চোখ খুলতে পারছি না। শক্ত করে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। দুহাতে শক্ত করে ওরনার কোণা ধরে আছি। আচমকা ভাইয়ার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ আমার গালে পেলাম। ভাইয়ার স্পর্শ পেতেই আমি কেঁপে উঠলাম। সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেল। আমি খিচে বন্ধ করা চোখ খুলে ফেললাম।
চোখ পিটপিট করে তাকালাম। ভাইয়া আমার থাপ্পড় দেওয়া গালে নিজের এক হাত ডুবিয়ে রেখেছে। আলতো হাতের স্পর্শ দিচ্ছে। তার দৃষ্টি ও আমার গালে সীমাবদ্ধ। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। কি করছে কি? ভাইয়া! বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
‘কি করছেন ভাইয়া আপনি?’
ভাইয়া আমার কথা শুনে গালে থেকে হাত সরিয়ে নিলো। আমার থেকে সরে দাঁড়ালো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সারা শরীর এখনো কাঁপছে ভাইয়া আমার এতো কাছে ছিলো। ভাইয়া হকচকিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর বলল,
‘ যা এখানে থেকে।’
ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে চমকে মাথা উঁচু করে তাকালাম। ভাইয়া অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।আমি দৌড়ে বেরিয়ে এলাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে।
নিজের রুমে চলে এলাম। হাপাচ্ছি আমি। বিছানায় শক্ত হয়ে বসে পরলাম।
চাদর খামচে ধরে।ইহান ভাইয়া আমার এতো কাছে কেন এলো? আর এলেই আমার এমন লাগে কেন?
তখন চাচি এলো থমথমে মুখ করে।
আমি চাচিকে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
চাচি এসে রেগে তাকিয়ে অনেক কিছু বলল।আমি নাকি ইহান ভাই এর কাছে বিচার দিয়েছে মার এর কথা বলে।তাই নিয়ে অনেক বকে গেল আমি মাথা নিচু করে চাচির বকা শুনছি আর আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
‘ এই পানি দেখিয়েই তো আমার ছেলেকে নিজের দলে নিয়েছিস। সে তোর জন্য আমাকে কথা শুনায়। একদম ওর কাছে ঘেষবি না নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। ‘
বলেই চাচি গটগট করে চলে গেল।
আমি ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইলাম তার যাওয়ার দিকে। আমি কখন ইহান ভাইকে বললাম। আমি তো কিছু বলিনি। না বলেও কথা শুনতে হলো।
চোখ বন্ধ করে কাঁদতে লাগলাম লতা এসে আমার পাশে বসলো।
নিজেকে স্বাভাবিক করে ওকে নিয়ে বাগানে চলে এলাম। বাইরে এসে পানি দিতে লাগলাম গাছে। ফুল আমার খুব প্রিয়। পানি দিচ্ছি আর চোখ বন্ধ করে তার গন্ধ শুকছি। তখন মনে হলো কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাসায় দিকে তাকালাম। বাগান দেখা যায় ইহান ভাই এর রুম থেকে আমি ভাইয়ার রুমের দিকে তাকালাম। ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে তার দৃষ্টি আমার উপর। আমি ও ভাইয়ার দিকে তাকালাম তখন মনে পরলো চাচির কথা। আমি চোখ সরিয়ে ফুল গাছের পানি দিলাম। লতা ঘাস পরিষ্কার করছে।
পানি দিয়ে বাসায় চলে এলাম রান্নাঘরে গিয়ে থালা বাসন ধুয়ে নিলাম। চাচি তারপর আমাকে ডেকে রুমে মুছালো। তার নামাজ আদায় করতে হয় ঘর নাকি অপরিষ্কার। মুছে দিলাম।ইলা আপু ডাকলো তার জামা কাপড় ধুতে হবে। না খাওয়ার জন্য খারাপ লাগছিলো কি না শুনে উপায় নাই।
সারাদিন এভাবেই গেল রাতের আগে খেতে পেলাম না। যা আমি লতা ছাড়া আর চাচি ছাড়া কেউ জানে না। রাতে বেশি খেতে পারলাম না সারাদিন না খেলে একসাথে এতো খাওয়া যায় না। সারদিনের ক্লান্তিতে শুতেই ঘুমিয়ে পরলাম।
মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেউ আমার ঘরে এলো। এসেই সে আমার পাশে বসলো। তারপর আমার মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইলো। সে আমার কষ্ট টা উপলদ্ধি করতে পারলো। আমার থাপ্পড় দেওয়া গালে সে মাথা ঝুকে ঠোঁটের পরশ বুলিয়ে দিলো। আমি ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠলাম যা দেখে যে মৃদু হাসলো। একটা মলম বের করে খুব আলতো ভাবে আমার ব্যাথা গালে লাগিয়ে দিলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কপালে কিস করে বেরিয়ে এলো।
ইমা রাত জেগে রিফাত এর সাথে কথা বলে আজ ও বলছে। পানি পিপাসা পায় কিন্তু আজ পানি আনতেই ভুলে গেছে আর ঊষা ও পানি দিয়ে যায়নি। ঊষা আজ ক্লান্ত বলে পানি দেয়নি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।
ইমা ফোন টেবিলের উপর রেখে পানির বোতল নিয়ে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে সময় কারো সাথে ধাক্কা খায়।
চমকে উঠে বলে,
‘ কে কে ? ‘
ভয়ে ভয়ে। ইমার ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে ইহান কেশে বলে,
‘ আমি ইহান। ‘
ইমা ইহানের কথা শুনে বুকে ফূ দিয়ে বলে,
‘ তুই এতো রাতে নিচে কি করছিস? ‘
ইহান আমতা আমতা করে বলে, ‘ ওই আমার পানি প্রয়োজন পরে তাই। ‘
‘ পানি কেন ঘরে পানি নেই।’
ইহান না বলে।
‘ ওহ আচ্ছা যা।’
ইহান তারাতাড়ি চলে আসে।
পরদিন সকালে ধরফরিয়ে উঠে বসি। কাল রাতে মনে হয়েছিলো কেউ এসেছিলো কিন্তু কে? অতিরিক্ত ঘুমে ছিলাম তবুও তার স্পর্শ আমার মনে আছে।কে ছিলো নাকি আমার মনে ভুল সব কি সপ্ন ছিলো।
খাবার টেবিলের সব রাখলাম আমি আর লতা তারপর দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু দেরি করে ভাইয়া এলো। ভাইয়া আজ খয়েরি রঙের শার্ট পরেছে খুব লাগছে। আমি একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। ভাইয়াকে দেখলেই আমার বুক টিপটিপ করে। খাওয়ার মাঝে যত বার তাকালাম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখলাম। আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম।
ভাইয়া বেশি খেল না হালকা খেয়ে চলে গেল কলেজে যেখানে জব নিয়েছে সেখানে। দুপুরের পর ভাইয়া এলো আমি রান্না ঘরের দরজায় থেকে দেখলাম লতাকে দিয়ে কফি পাঠিয়ে দিলাম।চাচি ভাইয়ার কাছে যেতে মানা করেছে তাই।
দুইদিন চলে গেল আমি ভাইয়ার রুমে যাইনা। আশেপাশে ও যাইনা চাচির কড়া নিষেধ। আমি আড়াল থেকে ভাইয়াকে দেখি।
আপুর বিয়ের আর তিনদিন আছে।তাই এখন বিয়ের তোরজোর হচ্ছে।
দুপুরে খেয়ে চাচি আর ইলা আপু মার্কেট এ চলে গেল।
লতা আর আমি খাবার খেয়ে নিলাম গোসল করে। রুমে এসে ভেজা চুল ছেড়ে দিয়ে ছোট একটা আয়না আছে আমি তার সামনে বসে পরলাম। নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে আমি হাত দিয়ে ঝাড়া দিলাম চুল এজন্য আমার বড় চুল ভালো লাগে না। সামলানো কষ্ট। ব্লো কামিজ ভিজে কালো হয়ে গেছে। ওরনা একপাশে ফেলে চুল সামনে এনে হাত দিয়ে পানি ফেলছি। তখন আমার মনে হলো কেউ আমার সামনে দাড়িয়ে আছে তার ফর্সা পা আমি দেখতে পাচ্ছি।
ব্রাউন রঙের প্যান্ট পড়া এটা তো ভাইয়া পরেছিলো। আমি চুল ছেড়ে দিয়ে চমকে মাথা তুলে তাকালাম।
ভাইয়া ব্লো রঙের শার্ট পড়ে আছে। সে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।
কাঁপা গলায় বললাম।
‘ ভাইয়া আপনি আপনার কিছু লাগবে? ‘
ভাইয়া কিছু বললো না সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো শক্ত হয়ে। আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।আমি ওরনা ভালো করে গায়ে জরিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম আর করলাম ভুল।আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমার চুলের পানি পরে ফ্লোর পিছিল হয়ে আছে।
আমি পা পিছলে পড়ে যাচ্ছি ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলাম।
আমি পরলাম না আমাকে ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে ভাইয়া কোমর পেঁচিয়ে দুহাতে আগলে ধরলো। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে।আমি ভাইয়ার শার্ট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছি।
ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।
কপালে ভাইয়ার হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকালাম। ভাইয়া আমার চুল সরিয়ে দিচ্ছে মুখে থেকে। আমার চুল মুখে এসেছিলো তা সরিয়ে দিয়েছে।
আমি কেঁপে উঠলাম।
ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।
ভাইয়া হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি নড়াচড়া করতেই ছেড়ে দিলো।
কিন্তু হাত ছারলো না। আমি হাতের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি। ছুটানোর চেষ্টা করছি পারছিনা শক্ত করে ধরে আছে।
ভাইয়া তার ভ্রুক্ষেপ না করে বলল,
‘ আমার কফি লাগবে! ‘
আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম এটা বলতে এসেছে নাকি।
আমি বিস্মিত, আচ্ছা লতাকে পাঠাচ্ছি।
আমার কথা বলতে দেরি হলো ভাইয়ার রেগে তাকাতে সময় লাগলো না।
আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো শুধু তাকালো না নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আমার হাত টেনে নিলো আমি আচমকা টানে ভাইয়ের বুকে গিয়ে পরলাম।
ভাইয়া হাত বাড়িয়ে আমার থুতনিতে ধরে উঁচু করে বলল,
‘ একদম আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করবি না।আমি তোকে বলেছি মানে তুই দিবি আমার কফি।’
বলেই ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো রাগ কেন?
#চলবে
#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_20
হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি তার রাগের কারনটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
আমি বুঝার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। তার ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে। হুট করে আমাকে ছেড়ে দিলো আমি হেলে পরেও সামলে নিলাম নিজেকে।
ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা দরজার দিকে হাঁটা ধরলো। আমি পেছন ঘুরে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছি। তখন ভাইয়া দাঁড়িয়ে পরলো আমি উঁচু কন্ঠে বলল, কফিটা দ্রুত চাই।
বলেই দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে গেল। একবার ও পেছনে ফিরে তাকালো না। ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে না তবুও আমি সেদিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
বুকের ধুকপুক কমে এসেছে। ভাইয়ার ওতো কাছে আসলে এই ধুকপুক এতো বেড়ে যায় কেন? বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কমে গেছে একদম স্বাভাবিক এখন। বিছানায় বসে ভাইয়ার কথা ভাবছি। ভাইয়া কি? আমি তার আশেপাশে না যাওয়াতে রেগে আছে। কিন্তু এতে এতো রাগের কি আছে? আমি তো ইচ্ছে করে করিনি। চাচি তো বলেছে এটা। আর তার কথা অমান্য করলে আমার খারাপ বলে ভালো হবে না। যা হবে খারাপ হবে।
ভাইয়ার কফির কথা মনে পরতেই ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম। যে রাগ দেখিয়ে গেল এখন যদি কফি না দেয় আমার খবর আছে। ছুটে রান্না ঘরে আসলাম। কফি করে ভাবছি চাচি জানতে পারলে যে কি হবে? সে তো আমাকে বলেছে ভাইয়ার আশেপাশে কম যেতে। কিন্তু এখন না গেলেও ভাইয়া বকবে আজকে যাই চাচি তো বাসায় নাই এখন। চিন্তা ভাবনা করে ভাইয়ার রুমের দিকে এলাম সিঁড়ির কাছে লতার দেখা পেলাম ও কফি হাতে দেখে বলল,
‘তুই নিয়ে যাবি নাকি আমি নেব।’
ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠের কথা মনে পড়ে আমার আমি লতাকে বললাম,
‘ না আমি যাই। ‘
লতা আচ্ছা বলে চলে গেল।আমি ভাইয়ার রুমে সোজা ঢুকে গেলাম। আমি ভেবেছি রুমে ঢুকে ট্রি-টেবিলের উপর কফি রেখে চলে আসবো তাই। আমি ভেতরে ঢুকে কফি রেখে পেছনে ফিরতেই চোখ যায় ভাইয়ার উপর। ভাইয়া মনে হয় এখন গোসল করে এসেছে। ভাইয়ার ফর্সা জীম করা বডিতে লেগে আছে বিন্দু বিন্দু জল। মাথা ভেজা চুল বেয়ে পানি নাক মুখ ছুঁয়ে লোমহীন বুকে গিয়ে ঠেকছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে পেছনে ঘুরে গেলাম। লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে আসছে। বুকে হাত চেপে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালাম।
তখনি ভাইয়ার মোটা কন্ঠে বলে উঠলো, স্টপ,
আওয়াজটা কানে আসতেই থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। বুকে হাত দিয়ে ওইভাবেই দাঁড়িয়ে আছি।
আবার দাঁড়াতে বলছে কেন?
ভাইয়া আবার বলে উঠলো,
‘তোর সাথে আমার কথা আছে?’
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সাথে কি কথা আছে ভাইয়ার।
‘ কথা কানে যাচ্ছে না কথা আছে বললাম তো।’
আমি মাথা নিচু করে ভাইয়ার দিকে ফিরলাম হাত কচলাতে কচলাতে।
‘কি কথা ভাইয়া?’
‘এদিকে আয়। আর কফি আমার কাছে দে। ‘
বলতে বলতে ভাইয়া বিছানায় গিয়ে বসলো।
আমি তুলে দেখি উনি কালো টাউজার পরে আছেন। আর নীল গেঞ্জি। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ট্রি টেবিলের উপর থেকে কফি নিয়ে ভাইয়াকে দিলাম।
‘জি কি কথা বলুন?’
তারাতারি জানতে হবে। আবার চাচি কখন চলে আসে। আমার তারাতাড়ি আছে।
ভাইয়া আয়েশ করে বসে কফিতে চুমুক দিয়ে শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুই আমার সাথে কথা বলিস না কেন?’
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ার কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। আমি তো ভাইয়ার আশেপাশেই যাইনা কথা কখন বলবো।
‘দুইদিন ধরে দেখছি আমার কফি নিয়ে আসিস না। এই রুমেই আসিস না।আমি যেখানে থাকি তার ধারের কাছেও যাস না।’
আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এসব খেয়াল ও করেছে আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।
‘কি হলো হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন? উওর না দিয়ে।’
আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম আমি নাকি হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি। কিন্তু ভাইয়াকে কি বলবো?
ভাইয়া উওরের আশায় তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে।
আমি বললাম,
‘এমনটা না আসলে আমি ব্যস্ত থাকি অন্য কাজে তাই আর একজন দিলেই হলো কফি তাইনা। আর কথা কি বলতাম? কথা বলার দরকার ও হয়নি তাই বলিনি।’
ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। তারপর কি যেন ভেবে বলল,
‘তুই সারাদিন বাসায় থাকিস যে কোচিং করিস না।’
কোচিং এর কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, নাহ।
‘কেন? তোর না এস এস সি পরীক্ষা এবার তাহলে পড়া বাদ দিয়ে সারাদিন এসব করিস কেন? কখনো তো পরতের দেখি না।’
‘রাতে পরি একটু একটু।’
আমাকে পরা সময় দিলে তো পরবো। রাতে ক্লান্তিতে আর পরতেই মন চায়না।
‘একটু একটু পরলে হবে।’ খানিক রাগ নিয়ে।
‘না হলে না হবে। সেটা আপনাকে ভাবতেই হবে না।কাজ করে আর পড়ার সময় পেলে তো পরবো।’
‘এতো কাজ করার কি দরকার?’
‘আছে দরকার। না করলে করবে কেন?’
‘কেন লতা?’
‘ও একা এতো কিছু করতে পারবে না।’
‘তাহলে কাজের লোক রাখলেই হয়।’
‘আমি থাকতে তার কি দরকার ?’
‘তুই নিজেকে কাজের লোক ভাবিস?’
অবাক হয়ে।
‘আমি কি তার থেকে বেশি কিছু এই বাড়িতে আমার তো মনে হয়না?’
জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে।
ইহান কিছু বলতে পারলো না। চুপ করে ঊষার দিকে তাকিয়ে আছে ওর চোখ ছলছল।
ও তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে সেই মায়াবী কষ্টে ভড়া চোখের দিকে। ইহানের বুকের ভেতর ধুক করে উঠে এই পানি দেখলে।ঊষা সাথে সাথে আসি বলেই ছুটে চলে যায়।
রাতে খাবার টেবিলে রেখে রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি।সবাই খাচ্ছে সবাই আছে ইহান ভাই নাই।কেন নাই জানি না সেই বিকেলে কথা হয়েছিল আর তাকে দেখি নি।
আমার উৎসুক চোখ তাকে খুঁজছে। সবাই খেয়ে চলে গেল লতা ও খেতে বসে পরলো আমিও আর দেরি না করে খেতে বসলাম। রুমে এসে ভাবলাম।
ভাইয়া খেতে এলো না কেন?
কিন্তু ফলাফল শূন্য আমি কি করে জানবো।
পরদিন খাবার টেবিলে ভাইয়ার দেখা মিললো চোখ লাল হয়ে আছে যেন রাতে ঘুম হয়নি।
খাওয়ার মাঝে ভাইয়া আমাকে বললো,
‘ঊষা রেডি হয়ে খাবার খেয়ে নে তারাতাড়ি।’
আমি সহ খাবার টেবিলের সবাই অবাক হয়ে তাকালো ভাইয়ার দিকে।
ভাইয়া খাবার মুখে দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই?
চাচি বলল, ঊষাকে রেডি হতে কেন বলছিস? ও কোথায় যাবে?
ভাইয়া খেতে খেতে শান্ত ভঙ্গিতে বলল, ওকে কোচিং এ ভর্তি করাতে যাব। কয়েকদিন পর ই তো এক্সাম।
সাথে সাথে চাচি হুংকার দিয়ে উঠলো,
‘কি বললি তুই? কোচিং এ ভর্তি করার কি দরকার? ওকে কোচিং এ ভর্তি করলে বাসায় কিছু কে করবে শুনি। ও কোথাও ভর্তি হবে না।’
‘হবে আম্মু। আমি করাবো। আর কাজ করার জন্য অবশ্যই ওকে রাখা হয়নি বাসায়। তোমার কাজের যদি অবহেলা হয় আমি একজন ভালো কাজের লোক এনে দেবো। ডোন্ট ওয়ারি।’
‘কাজের জন্য রাখা না হলেও আমি ওকে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না।’
তীব্র রাগ নিয়ে বলল।
‘আম্মু তুমি ওকে খাওয়ানোর খোটা দিচ্ছো।’
‘হুম দিচ্ছি। আর কোচিং করার কি দরকার ভারতি টাকা খরচ। বাড়িতে পরে যা পারবে তাই পরিক্ষা দেবে।’
‘বাড়িতে ওকে পরার সময় কি দাও?’
‘কি বলতে চাইছিস? আমি ওকে সারাদিন খাটায়?’
‘আমার বলার দরকার নাই। তুমি নিজেই জানো কি করো?’
‘তুই আমার সাথে এইভাবে কথা বলছিস?’
‘তুমি বাধ্য করেছো? কাকার তো কম টাকা ছিলো না সেগুলো দিয়ে তো ঊষা পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারতো কি হয়েছে সেগুলো?’
‘আমি কি জানি?’ ভয় পেয়ে বললো।
‘তাই তো তুমি কিছু জানো না? আব্বু তুমি এমন চুপ করে আছো কেন? নিজের ভাইয়ের মেয়েকে কি একটু ভালো করে মানুষ করতে পারতে না। এইভাবে কাজের লোক না বানিয়ে।’
তিনি মাথা নিচু করে আছে সে তার স্ত্রীর সাথে পেরে উঠে না তাই তো ঊষার জন্য কিছু করতে পারেনি। চোখের সামনে ওর কষ্ট ও দেখতে পারেনা তাই তো বাসায় ও থাকে না বেশি সময়।
আমি হতভম্ব হয়ে সব কান্ড কারখানা দেখছি। কি সব হচ্ছে? আমার জন্য সবার সাথে এইভাবে কথা বলছে ভাইয়া! চাচি একটু পর পর রাগী চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে। যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে।
চাচি আর ভাইয়ার তর্ক বিতর্ক সৃষ্টি হলো আমি তাদের ঝগড়া দেখছি চাচি কিছুতেই আমাকে কোচিং এ ভর্তি হতে দেবে না। আর ভাইয়া ভর্তি করেই ছাড়বে।
চাচি রেগে গমগম করে চলে গেল চিল্লাচিল্লি করতে করতে নিজের রুমে।
আমি হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আচমকা ভাইয়া এসে আমার সামনে দাড়ালো। আমি বড়সড় চোখ করে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া শক্ত গলায় বলল,
এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোকে রেডি হতে বললাম না।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম, আমি কোচিং এ ভর্তি হবো না।
তোকে আমি জিজ্ঞেস করেছি কি না তো ? তাহলে নিজের মতামত প্রকাশ করছিস কেন? রেডি হতে বলেছি চুপচাপ রেডি হয়ে আয়।
গম্ভীর গলায় কঠিন চোখ মুখ করে উঁচু কন্ঠে বলল ভাইয়া। তার কথায় আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভয়ে আমার বুক ধুক করে উঠলো যেন।
ভাইয়া কিছু বলতে পারছি না।ইমা আপু এগিয়ে এসে বলল,
যা তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়।
তার চোখ মুখ উজ্জ্বল।
আমি মৃদু কন্ঠে বললাম, কিন্তু চাচি ..
সেসব নিয়ে চিন্তা না করে নিজেকে নিয়ে ভাব এই সুযোগ আর নাও পেতে পারিস।
জানিনা আমার কি হলো আমি রেডি হতে চলে গেলাম। আসলে ভাইয়া রাগ দেখে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছি। রেডি হয়ে বাইরে এসে দেখি ভাইয়া গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি গুটিশুটি পায়ে এগিয়ে এলাম।
#চলবে