এক চিলতে রোদ পর্ব-২৩+২৪

0
934

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_23

আচমকা ভাইয়া আমার হাত স্পর্শ করতেই আমি শিউরে উঠি। হকচকিয়ে মাথা থেকে হাত সরিয়ে হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার মুখ ও হাতের দিকে তাকিয়ে। ভাইয়া চোখ বন্ধ করেই আমার হাত নিজের বুকে চেপে ধরেছে। আমি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়া কি ঘুমিয়ে পরলো নাকি? ঘুমের মধ্যে কি ভুলে আমার হাত টেনে ধরেছে। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমালো করি করে।
আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি। বুঝতে না পেরে আমি কাঁপা গলায় আমতা আমতা করে নিচু করে বললাম,
” ভাইয়া আপনি কি জেগে আছেন?”
ভাইয়ার কাছে বসে মাথায় কাছে বসে ছিলাম তাই কথাটা কানে ভালো মতোই গেলো সাথে সাথে চোখ মেলে আমার চোখের দিকে তাকালো।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া চোখ সরিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। আর ফট করেই আমার হাত ছেড়ে বুকে থেকে সরিয়ে দিলো।
আমি বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া বলল,
“তুই যা এখানে থেকে।”
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। নরছি না যেতে কেন বলছে আর হাত বা ধরলো কেন জিজ্ঞেস করবো। হুম করি করতে যাব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
“যেতে বললাম তো তোকে। আমি ঘুমাবে এখন যা তুই।”
বলেই ঘার বাঁকালো।আমি ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠ শুনে চমকে বিছানায় থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম।
ভাইয়া অন্য দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে। আমি কিছু ই বুঝতে না পেরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে পেছনে ঘুরে চলে এলাম। দরজার কাছে এসে পেছন ঘুরে দেখি ভাইয়ার নেশাতুর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম সাথে ভাইয় চোখ সরিয়ে নিলো।
আমি হতভম্ব হয়ে নিজের রুমে এলাম।
বিছানায় বসে ভাইয়ার কথা ভেবে চলেছি কিন্তু কোন কিনারা খোঁজে পেলাম না।
গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম। না পেয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙল সকালেই।বাসায় আজ থেকে বিয়ের কাজ শুরু হবে। কাল গায়ে হলুদ আজ বাসা সাজানো স্টেজ রান্নার যোগার সব হবে।
ঘুম থেকে উঠে আমি বারান্দায় চলে এলাম বাগানে হলুদের স্টেজ হবে।
বাইরে এসে চা কফি করে নিলাম।চাচি চাচা সবাই উঠে গেছে তারা সোফা বসে কি যেন হিসাব করছে আমি তাদের চা দিলাম। লতা রান্নার যোগার করছে।আমি চা নিয়ে ইমা আপু ইলা আপু কে দিয়ে ইহান ভাই এর রুম এ এলাম চাচি জানতে পারলে বকবে তাও এসেছি ভাইয়ার সাথে আমার কথা আছে।‌তাকে বলতে হবে আমি বিয়ের দুইদিন কোচিং যাব না সেটা যেন জানিয়ে দেয়।ভাইয়া বুকে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ফর্সা উন্মুক্ত পিঠ দেখা যাচ্ছে লজ্জায় লাল নীল হয়ে দরজা শব্দ করে আওয়াজ করে ঢুকলাম ভাইয়া জেগে গেলো আর উঠে বসলো ঘুমে তাকাতে পারছে না। আমি বললাম,
আপনার কফি ভাইয়া।
ভাইয়া আমার দিকে শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে কফি নিলো।আমি কফি দিয়ে চলে আসি সব সময় আজ তা না করে দাঁড়িয়ে আছি। আসলে কিভাবে বলবো ভাবছি‌।
ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকালো কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
“কিছু বলবি?”
আমি ওরনার কোণা আগুলে পেছাতে পেছাতে বললাম, ” আমি দুইদিন কোচিং এ যাব না‌।”
“কেন?”
আমি মাথা উঁচু করে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললাম,
” আপুর বিয়ের আর আমি তা রেখে কি কোচিং এ যাব।”
“হুম যাবি সমস্যা ক‌ই। ” শা‌ন্ত গলায় বললো।
‘এ্যা , হা হয়ে চোখ বড় করে।
ভাইয়া বলল, “একদিন ছুটি নিয়ে দেব আজ কাল যেতেই হবে আমি নিয়ে যাব তোকে। হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হ‌ওয়ার আগেই আসতি পারবি।”
আমি গোমড়া মুখে তাকিয়ে বেরিয়ে এলাম। ধুর কোথায় ভাল্লাগে না। কাজ ও তো আছে এই নিয়ে যে কি করবে চাচি আমাকে আল্লাহ মালুম জানে।
সকালের নাস্তা শেষ করে বাইরে চলে এলাম আমি আর লতা স্টেজ সাজানো হচ্ছে আমরা উজ্জ্বল মুখ করে তাকিয়ে দেখছি। হাতে হাতে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। আরেকপাশে কয়েকজন লোক খাবার তৈরির আধা, রসুন বাটছে। পিঁয়াজ কুচি করছি। সব রেডি করছে। গেট সাজানো হচ্ছে। বাতি ফুল, ক্যান্ডেলা দিয়ে সাজাচ্ছে।
দুপুরের রান্না করতে হলো না যাদের রান্নার জন্য আনা হয়েছে তারাই রান্না করলো সেই খাবার সবাই গেলো। বাসা ভেতরেও সাজানো হচ্ছে আমাদের কাজ নেই এখন অনেক লোক আছেই তারাই সব করছে।
বিকেলে,,
ভাইয়া গেটের কাছে ছিলো কি যেন বলে দিচ্ছিলো লোক গুলো মাথা নাড়ছে। আমি আর লতা সেখান থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি আর এটা ওটা বলছি।
তখন হঠাৎ ভাইয়া আমার আর লতার সামনে এসে দাড়ালো। আমরা হকচকিয়ে গেলাম।
“ঊষা তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোর কোচিং যেতে হবে তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়।”
বলেই চলে গেলো।
আমি রাগ করে চলে গেলাম। রেডি বলতে চুল ভালো করে বেঁধে আর মুখ ধুয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম। চাচির দেখা তখন আমার দিকে অড়া চোখে তাকিয়ে বলল,
” এমন ফিটফাট হয়ে ক‌ই যাস।”
আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।
” এতো কাছের মধ্যে তুই কোচিং যাচ্ছিস? খুব ভার বেরেছে তোর। রুমে এগুলো রেখে কাজ কর।”
“চাচি কাজ সবাই তো করছে। আমি আর কি করবো।”
“ও কাজ পাচ্ছিস না চল তোকে কাজ দেই।”
“কিন্তু আমি তো কোচিং এ যাচ্ছি। পরে করে দেয়।”
“না এখন ‌ই করবি আর কোথা ও এখন যাওয়া হবেনা তোর।”
আমার কথা চাচি শুনছে না ধমক দিয়ে দিলো আমি রুমে যাচ্ছি মাথা নিচু করে তখন কোথা থেকে ভাইয়া এসে ডাক দিলো।
“ঊষা তারাতাড়ি চলো। এতো সময় লাগছে কেন?”
আমি থমকে গেলাম একবার চাচির দিকে তো একবার ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি।
ভাইয়া চাচির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আম্মু ও এখন কোচিং এ যাবে।তোমার এতো দরকারি কাজ থাকলে কাজের লোকদের বলো।”
“ইহান ঊষা কোথাও যাবে না। আমার কাজ করবে। তুই জোর করিস না।”
“সরি আম্মু আমি তোমার কথা মানতে পারলাম না। তুমি লতাকে বলো।”
আমার দিকে তাকিয়ে আসতে বললো আমি চুপ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।চাচির সামনে আমার যাওয়ার সাহস নাই‌। ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে এলো।চাচি কটমট করে তাকিয়ে র‌ইলো।
গাড়িতে বসে,
আজকে না গেলেই ভালে হতো।এতো কাজ বাসায় কিছু তো করা দরকার।
ড্রাইভ করতে করতে বললো,
“তুই কি কাজ না করলে কাজ থেকে যাবে।এতো লোক রাখা হয়েছে তাদের বদলে তোর কাজ এগিয়ে দিতে হবে এতো কাজ শিখে গেছিস।”
শক্ত গলায় বলল।আমি ভাইয়া বাম গালে দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া গম্ভীর মুখে বলছে কথাটা‌।
” না আসলে তা না।”
ঢোক গিলে বললাম।
ভাইয়া আর কিছু বললো না। কোচিং নামিয়ে দিলো আমি নেমে চলে গেলাম। ক্লাস শেষ করে বের এলাম। একাই যেতে হবে ভাবছি। কিন্তু টাকা তো নাই টাকার কথা ভুলে গেছি। এখন যাব কি করে।নিচে এসেই দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন চাপছে।ভাইয়া আকাশি রঙের শার্ট ও ব্রাউন প্যান্ট পরেছে।
আমি বিস্মিত হয়ে এগিয়ে এলাম ভাইয়া কি এতো সময় এখানেই ছিল। নাকি চলে গেছিল আবার এসেছে।
আমি এগিয়ে এসে বললাম,” আপনি যাননি।”
ভাইয়া ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বলল না‌।
গাড়িতে উঠে বসলো।আমিও আর কিছু না বলে উঠে বসলাম।
সারা রাস্তা আর কোন কথা হলো না আমি একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কথা না বলে কি থাকা যায় কিন্তু ভাইয়া তো বলে না তাই কষ্ট হলেও চুপ করেই থাকলাম। বাসায় আসার পর চাচি তার রুমে নিয়ে আমাকে সারা রুম পরিস্কার এর দায়িত্ব দিলো।আটটা পর্যন্ত সেখানেই র‌ইলাম।ক্লান্ত হয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম না খেয়ে‌।এগারোটার দিকে জাগানা পেয়ে উঠে বাইরে এসে খাবার খুঁজে একটু খাবার পেলাম। তারপর খেতে লাগলাম। খিদে পেয়েছিলো অনেক। এক লোকমা মুখে দিতেই হাত জ্বলে উঠলো।
হাত কেটে ফেলেছি কাজ করতে গিয়ে হয়েছে‌ এটা। পেটে খিদে হাত ব্যাথা কি করবো।এখন আমার চোখে জল চলে এলো।জ্বালা হাত দিয়ে আবার খাবার মুখে দিলাম কিন্তু কষ্ট আমি শেষ পারছি না। তখন দরজা খুলে কেউ ভেতরে এলো তাকিয়ে দেখি ইহান ভাই‌।
নীল ট্রাউজার ও কালো গেঞ্জি করে এলোমেলো চুলে ভেতরে এলো।আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকালো ভাইয়া এখানে কেন কোন দরকার নাকি?
ভাইয়া এগিয়ে এসে বলল,
“কি হয়েছে হাতে দেখি?”
বলেই আমার সামনে থেকে খাবার সরিয়ে নিজে বসে পরলো আমার সামনে আর হাত টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। আমি কেঁপে উঠে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া জানলো কি করৈ আমার হাতে আঘাত পেয়েছি।
বিষ্ময় ভড়া চোখে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া আমার এঁটো হাত নিজের হাতে নিয়ে দেখছে তার হাতেও খাবার লাগছে সেদিকে খেয়াল নেই‌।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_24

আমি হাঁ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।আর ভাইয়ার সেদিকে খেয়াল নেই। সে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে খাবার গিলছি।
ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দেবে এটা আমার কল্পনায় বাইরে ছিলো।
সেটাই করছে ভাইয়া। আমি অবাক নয়নে তার ফর্সা কুঁচকানো কপাল থেকে সারা মুখ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। আমার আজকে একটা জিনিস নজরে পরলো মাইয়ার বাম গালে কানের কাছে একটা লাল তিল আছে। যা আগে আমি লক্ষ্য করি নি‌ আজ করলাম। আমি নির্লজ্জের মত চোখ বড় করে তাকিয়ে আছি।
হুট করেই ভাইয়ার একটা কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। আর সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম লজ্জায় আমার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে।

ভাইয়া বলেছে,,,, ” এইভাবে তাকিয়ে না থেকে খা। ”

আমি দুই হাত মুঠো করে জরোসরো হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

” উফফ ঊষা খাবার টা শেষ করো। এতোক্ষণ তো লজ্জা পেলি না। এখন এতো লজ্জা কোথা থেকে এলো। ”

ভাইয়ার কথায় চমকে ভয়ার্ত মুখ করে মাথা তুলে তাকালাম। আর বললাম,,,,
” সরি ভাইয়া আমি আসলে…

ভাইয়া চাপা রাগ নিয়ে ধমক সুরে বলল,,,,
“তোকে আমি কিছু বলতে বলেছি। তাহলে কেন বলছিস? খেতে বলেছি খাঁ তারাতাড়ি।”

আমি ভীতু মুখ করে তাকিয়ে হা করলাম।
ভাইয়ার হাতে খেতে এতো লজ্জা লাগছে কি বলবো? আমি কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না।পারবো কি করে? একটু আগে যখন ভাইয়া আমার হাতের ওই অবস্থা দেখলো রেগে এক ধমক দিলো।
আমি কেঁপে উঠে মাথা নিচু করে ছিলাম। ভাইয়া আমাকে টেনে হাত ধুয়ে দিলো। আমি হতভম্ব হয়ে র‌ইলাম। এখন খাবো কি ভাবে?

ভাইয়া রাগে ফুঁসছে তখন আমি খিদের জ্বালায় বলেই ফেললাম,

” আমার তো খিদে পেয়েছে। এখন খাবো কি করে? আপনি আমার হাত কেন ধুয়ে দিলেন! ”

আমার কথা শুনে গরম চোখে তাকালো ভাইয়া।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তাও বললাম নিচু কন্ঠে,,,

” হাত ব্যাথা করলেই পেটের ব্যাথা কমাতে পারতাম। হাতের থেকে সেটা কষ্টদায়ক বেশি।এখন আমি দুই ব্যাথা সহ্য করবো কিভাবে?”

কথাটা বলেই নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া ধমক দিবে। কিন্তু কেন সত্যি তো আমার খিদে পেয়েছে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাইয়া আমাকে ধমক দিলো না। উল্টো আমাকে বিছানায় বসিয়ে রেখে নিজেও বসলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।কি করতে চাইছে ভাইয়া? ফট করেই ভাইয়া আমার প্লেট নিয়ে নিজের হাত দিয়ে লোকমা তুলে দিলো। আমি এতোটাই‌ শক খেয়েছি যে মনে হচ্ছিল আমার চোখ দুটো বেরিয়ে আসবে। বড় বড় চোখ করে ভাইয়া দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।

ভাইয়া শক্ত কন্ঠে বলল,,,”কি হলো ? এখন খাচ্ছিস না কেন? তোর না খুব খিদে পেয়েছে। ”

আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,,
” তাই আপনি আমাকে খাইয়ে দিবেন।”

“তো কি হয়েছে?”

“আপনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন ভাইয়া।আমি কি স্বপ্ন দেখছি।সত্যি আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।”

গম্ভীর গলায় বলল ভাইয়া,,
“তোর বিশ্বাস করতে হবে না। চুপচাপ কথা বাদ দিয়ে খা।”

আমি তাও শান্ত হতে পারছি না।
“এমনটা করবেন না ভাই আমি নিজেই খেতে পারবো। আপনি এতো চমক কেন দিচ্ছেন?চলে যান এখানে থেকে! চাচি দেখলে সর্বনাশ হবে।”

তারপর ভাইয়া আমাকে দিলো এক ধমক। আমি চমকে কেঁপে উঠলাম। আর সমস্ত কথা অফ হয়ে গেলো।

“আর একটা কথা বললে চরিয়ে গাল লাল করে দেবো।”

ভাইয়া কন্ঠে গাম্ভীর্যতা দেখে আমি আর কিছু বলতে পারিনা। ঢোক গিলে খাবার খেতে লাগলাম।
খাওয়া শেষ হতেই ভাইয়া প্লেট নিয়ে, ব্যাসিং এ গিয়ে হাত ধুয়ে নিলো। তারপর হনহন করে বেরিয়ে গেলো একবার ও পেছনে ফিরে তাকালো না।আয়ি হতভম্ব হয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।
সারারাত আমি হতভম্ব নেস কাটাতে পারলাম না।

🖤🖤🖤

পরদিন বাসা আলোকিত সাজানো একদম বিয়ে বাড়ির সাজ কম্পিলিট। সবাই এখন দেখলেই বুঝবেন এটা বিয়ের বাড়ি।সকালেই আমার দুই ফুপিরা চলে এলো।তাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে। বড় ফুপির এক ছেলে এক মেয়ে।ছোট ফুপির দুই মেয়ে এক ছেলে ছোট আমার থেকে ও ছোট। ভাই বোন দের মধ্যে আমি সবার ছোট এখন ও আমার ও ছোট।
বাড়িতে হ‌ইহ‌ই শুরু হয়ে গেছে।এখন অন্তত চাচি আমাকে জ্বালাতে পারছে না আসলে যত‌ই হোক মেয়ের বিয়ে তার এতো খোঁজ রাখার সময় থাকলে তো।
তাই আমার দিকে নজর দিতে পারছে না। আমি ও কাজ করছি না সাথে লতাও না আমরা সব ভাই বোন লতা মিলে হলুদ স্টেজ এ বসে গল্প করছি।

তখন আমার চোখ গেল ভাইয়ের রুমের বেলকনিতে। ভাইয়ার দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার পাশে বসা ছোট ফুপির ছোট মেয়ে শীলা আর একবছর এর বড়। ও ভাইয়া কে দেখেই ডেকে উঠলো,

” ভাইয়া এইখানে আসো। ”

হাত নাড়িয়ে জোরে বললো।ভাইয়া না বললো।

আর কেউ ডাকলো না ভাইয়া কে। ভাইয়া ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আমরা মজা করছি। হাসাহাসি করছি। সব কিছুর মাঝেও আমি এক
পর পর ভাইয়ার দিকে তাকিয়েছে কেন জানি মনে হচ্ছে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

দুপুরের পর আরো আত্নীয় চলে এলো। সাথে ভাইয়ার মামা বাড়ি, খালা সব বাসা ভর্তি লোক। এই সময় আমার হলো বিপদ। চাচি আমাকে রুম থেকে বের করে দিলো। সেখানে তার ভাইয়ের মেয়ে থাকবো আমি বিস্মিত হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।আমি কোথায় ঘুমাবো।লতার পরিবার ও এসেছে ওর রুমে আছে আমি ওর রুমেও যেতে পারবো না‌। আনন্দের মাঝে আমি আতংকিত হয়ে গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছি।তখন ভাইয়ার আওয়াজ পেলাম।

কপাল কুঁচকে ভাইয়া বলল,”এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

আমি কিছু বললাম না।

ভাইয়া আবার বললো ,,” যা রেডি আয়। কোচিং এ যেতে হবে”

আমি রেগে তাকিয়ে বললাম, ” আমি যাব না কোচিং এ আজ। ”

আমার রাগ দেখে ভাইয়া ভ্রু কুঁচকালো।

” কি হয়েছে?”

আমি বললাম, ” কি হবে কিছু না তো?”

ইহানের চোখ গেলো ঊষার রুমে। রুমে বসে আছে ওর মামাতো বোন মিলি।
এবার ও বুঝতে পারলো ব্যাপারটা‌। কিন্তু কিছু বললো না।

জোর করেই কোচিং এ নিয়ে এলো। ঊষা সারা রাস্তা গাল ফুলিয়ে বসে ছিলো।
গায়ে হলুদে যেতেও পারবে না ও। চোখ ছলছল করছে ওর। কিন্তু চাপা অভিমান করলো ইহানের উপর আর কিছু না বলে কোচিং এর ভেতর চলে গেলো।

কোচিং শেষে বেরিয়ে দেখতে পায় ইহানের ক্লান্ত মুখ সে কি আজ যায়নি। কেন গায়ে হলুদ এ যাবে না নাকি।
এগিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইহান বলে,

“এখন কথা না তারাতাড়ি কর। হলুদ এ যেতে হবে!”

আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,
“এখনো আমি নাকি?”

ভাইয়া কথার জবাব দিলো না।বাসায় এলো তারাতাড়ি ড্রাইভ করে।নামতে গাড়ি থেকে ভাইয়া বললো।

“দশ মিনিট এ রেডি হয়ে নিচে আসবি।”

বলেই উপরে চলে গেলো। সবাই রিফাত ভাইয়াকে ওইখানে চলে গেছে। আর ওইখানের লোক এসেছে মাত্র। তারমানে বেশি সময় ধরে যায়নি।
ইমা আপুকে এখনো স্টেজ এ নেওয়া হয়নাই।আমাকে বাসায় দেখে বললো,

“কি রে ক‌ই ছিলি যাবি না‌?”

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম, ” আমাকে জোর করে ভাই কোচিং এ নিয়ে গেছিল।”

“উফ পারি না আর। আমি কি ধরতে পারি দেখ তো কতো সাজিয়েছে। তাহলে শাড়ি পড়ে আমার কাছে থাক।”

“ভাইয়া বলেছে তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিচে যেতে।”

“ওহ তাহলে রেডি হ। ইহান তোকে নিয়ে যাবে বোধহয়। ভালোই হয়েছে‌।”

খুশি হয়ে বললো।

“কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারিনা।”

“আমিও তো পারবো না।আমার কি অবস্থা দেখ?”

“এখন কি করবো?”

তখন ছোট ফুপি আসে। ইমা তাকে দেখেই বলে।

“ফুপি ঊষাকে একটু শাড়ি পরিয়ে দাও না।”

“আমি ভালো পারিনা।”

“যা পারো তাই দাও।”

*হ্যাত ভালো হবে না।”

“দাও না মেয়েটা কাঁদছে দেখো।”

“আচ্ছা আয়।”

ফুপি কোন রকম কুচি করে পরিয়ে দিলো। আপু নিচে চলে গেছে। ফুপি আপু কে নিতে এসেছিলো। আপু ফুপিকে রেখে একাই গেছে।

ফুপি শাড়ি কোন রকম পরিয়ে দিল। খারাপ হয়নি কিন্তু ওতো টাও ভালোও হয়নি।
কিন্তু আমি তাতেই খুশি।

“ওই সাজ একটু।”
ফুপি বলল।

“সাজাবো?”

“হুম সবাই কতো সাজছে জানিস।”

“কিন্তু কি দিয়ে?”

“ওই যে ইমার জিনিস সাজ বসে।”

“আচ্ছা।”

কি দেবো বুঝতাছিনা। পাওডার নিয়ে সারা মুখে দিলাম। ভেসে উঠলো। মুছতে মুছতে সব মুছে ফেললাম। ধুর এসব দেবো না। লিপস্টিক দিলাম একটু। কাজল দিতে গিয়ে চোখ কালো করে ফেললাম। হায় হায় করলাম কি?
তারাতাড়ি মুখে ধুয়ে আসলাম। সাজাবো না চুল বেনি করে একটু সামনে এনে রাখলাম।

হাতে লাল চুড়ি পড়ে বেরিয়ে এলাম। আর কিছু লাগবে না।
ভাইয়া নিচেই ছিলো আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলো।আমি কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি।

ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে বা‌ইরে এলো। বাসায় ফাঁকা সবাই আপুর হলুদ এ।
আধা ঘন্টা পর রিফাত ভাইয়ার বাসায় এসে পৌছালাম। সারা রাস্তা কেউ কারো সাথে কথা বলি নি। ভাইয়া খুব দ্রুত গতিতে চালিয়ে এসেছে।
আমি শুধু শাড়ির এদিক ওদিক টেনেছি।

গাড়িতে থেকে নামতে গিয়ে আকাম করলাম শাড়ির কুঁচি পা দিয়ে খুলে ফেললাম। চমকে শাড়ির কুচি ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
আমি এগিয়ে যাচ্ছি না দেখে ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কি হলো আসছিস না কেন? যাবি নাকি।”

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়ার কথা শুনে এবার কেঁদে দিলাম।ভাইয়া হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছুটে এলো।

“কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?”

#চলবে