এক চিলতে রোদ পর্ব-৪০+৪১

0
906

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_40

হাত ভর্তি মেহেদী দিয়ে বসে আছি চেয়ারে। আর আমার দৃষ্টি হাতের মধ্যে। যেখানে ইহান নাম লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। আমার পাশে বসে দিনা যে আমার মেহেদীর প্রশংসা করতে ব্যস্ত।

দিনা বললো, “ঊষা তোমার মেহেদির ডিজাইন বেশি সুন্দর হয়েছে। আপুর টার থেকে ও। ইহান ভাইয়ার পছন্দ খুব সুন্দর তাইনা।”

আমি ওর দিকে থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম। ইহান ভাই দিনার ভাই তামিম এর সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে।
ইমা আপু হাতে মেহেদি লাগাচ্ছে। তিন্নি আপু তার বান্ধবী দের সাথে গল্পে ব্যস্ত। একটু আগের কথা ভাবতেই লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছি।

আমি ভাইয়া থেকে চোখ সরিয়ে আবার হাতের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।

বিকেলে ভাইয়ার রুমে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপর যখন চোখ খুললাম আমার মুখের সামনে দিনাকে বসে থাকতে দেখি।ও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। আমি ওকে দেখে অবাক হয়ে যায় আর চোখ খুলে বুঝতে পারি আমি ভাইয়ার রুমে আছি। কিন্তু ভাইয়া রুমে নাই। দিনা বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমার চোখ খুলে তাকানো দেখে জিজ্ঞেস করে, “ঊষা তুমি এখানে ঘুমাচ্ছ কেন? এটা তো ইহানের রুম। তুমি সেই যে এলে আর গেলে না পরে আমি এসেও দরজা ভেতর থেকে আটকানো পেলাম। তোমরা দুজন ভেতরে কি করছিলে?”

আমি ওর কথায় চমকে উঠে বসলাম। এই মেয়েকে এখন আমি কি বলবো? দিনা আমাকে পুলিশের মতো জেড়া করছে। তখন ইমা আপু এলো আর আমাদের কাছে এসে দিনাকে বলল,

“সেসব জেনে তুমি কি করবে দিনা?”

দিনা বলে, ” ভাবি ঊষা ইহানের রুমে ছিলো জানো।এখানে ঘুমাচ্ছিলো।”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছি। ছিঃ আপুর সামনে এসব কি করে যে ঘুমিয়ে পরলাম আর ভাইয়া কোথায় গেছে?

আপু আমার দিকে একবার তাকিয়ে দিনার দিকে তাকিয়ে বললো,
” জানি।”

‘তুমি কি বলবা না? এসব কি ?”

“কি বলবো?”

দিনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বলছে না কেন কিছু ও ভাবছে।

ইমা আপু দিনাকে গড়গড় করে বলে দিলো আমার আর ইহান ভাইয়ের বিয়ে হবে। বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ছোট থেকে। আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে আমার হাত টেনে আংটি দেখালো। দিনা সব শুনে থ মেরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি। সত্য মিথ্যা কি সুন্দর বলে দিলো আপু।

দিনা চোখে মুখে চরম বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

আপু আমাকে বললো, ” উঠ আর কতো ঘুমাবি। একটু পর মেহেদি দেওয়া হবে যা রেডি হয়ে ওইপাশে যা। সবাই নাচবে গাইবে দিনার সাথে রেডি হয়ে আয়।”

দিনা আমাকে নিয়ে ওর রুমে এলো। আর আমার দিকে কোমরে দিয়ে তাকালো। তারপর গালে ফুলিয়ে বললো,

“তাই তো বলি আমি ইহানকে নিয়ে সরি, ইহান ভাইকে নিয়ে কথা বলায় মুখটা ওমন করে কেন রাখছিলি।”

আমি চুপ করে তাকিয়ে আছি।

“আগে বলবি না এই কাহিনী। তাহলে কি তোর বরের দিকে নজর দিতাম নাকি‌ আমি ওতো খারাপ না হু।”

আমি আমতা আমতা করে বললাম, “আমি খারাপ বলেছি নাকি!”

“বলো নি মনে মনে ঠিক বলেছো জানি। ইহান ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে এসব শুনে তো আমি অবাক। যাই হোক তোমাদের কিন্তু খুব মানাবে।”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করলাম।

“আচ্ছা তোমরা এক রুমে কি করছিলে?”

আমি থমকে গেলাম।

“ও এগিয়ে এসে বললো। আহারে ক্রাশ খেতে খেতে ছ্যাকাও খেলাম।”

বলে মনে খারাপ করে তাকালো। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ও এগিয়ে এসে বললো,

“ইহান ভাই তোমাকে খুব ভালোবাসে তাইনা।”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।

“ওয়াও কী লাকি তুমি!”

আর কিছু বললো না আমাকে রেডি হতে বললো। আমাকে একটা ড্রেস দিলো ওর ড্রেসের মতো। নীল রঙের লেহেঙ্গা। সবাই এই এক কালারের ড্রেস পরবে। আমার আনা ড্রেস পড়া হলো না‌। আমি সাজতে পারিনা তাই দিনা আমাকে সাজিয়ে দিলো। চুল মাঝে সিথি কেটে দুই পাশে ফুলিয়ে ছেড়ে দিলো ও নিজেও আমার মতো করেই সাজলো। আমি চুড়ি এনেছিলাম তাই নীল চুড়ি পরলাম। দিনা ব্যাসলেট পরলো। তারপর আমরা ছাদে চলে এলাম সাতটার দিকে।কতো মানুষ এসেছে অনুষ্ঠান নাচ গান হবে যে। দেখার জন্য আশেপাশের আর আত্মীয় স্বজন সবাই আছে। ইমা আপু চাচি কে একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো। আমি তিন্নি আপুকে দেখলাম। তিনি রানী গোলাপি রঙের ড্রেস পরেছে। তারটা ভিন্ন ব‌উ বলে কথা। তার দুই হাত ধরে বসে দুজন অপরিচিত মুখের অধিকারী মানুষ মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে।

ইহান ভাইকে নীল রঙের জিন্স আর শার্ট পড়া দেখলাম। তিনি পাঞ্জাবি পরে নি দিনা বললো সবাইকে দিয়েছে সে নাকি পরবে না তাই ম্যাসিং করে শার্ট পরে এসেছে।
ভাইয়া রিফাত ভাইয়া আর কয়েকজনের সাথে দাড়িয়ে আছে। দিনা আমাকে রেখে ওর একটা ফ্রেন্ড এসেছে তার কাছে চলে গেলো।

আমি হাঁটতে হাঁটতে চাচির কাছে গিয়ে পরলাম।চাচির সাথে আরো কয়েকটা মহিলা বসা ছিলো তারা আমাকে দেখেই ডাকলো। আমি চাচির দিকে তাকিয়ে মুখ কাচুমাচু করে এগিয়ে যেতেই তারা চাচিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

আপা এটা আপনার ছেলের হবু বউ তাইনা। মাশাআল্লাহ কি সুন্দর দেখতে। মেয়ে তো আপনার দেওর এর মেয়ে তাইনা‌। দেওর মারা গেছে শুনলাম আহারে মেয়েটা ছোট বয়সেই এতিম হয়েছে। আপনারা খুব ভালো মানুষ এই অনাথ মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন আবার ছেলের বউ করবেন সত্যি এমন ভালো মানুষ। এমন আমি খুব কম দেখেছি।

বলেই আমাকে কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চাচি কটমট চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গিলে খাবে যেন। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এর এসব কি বলছে?

একটু পর ঘটনা ক্লিয়ার হলো,

“আপনার মেয়ে মানে আমাদের রিফাতের ব‌উ আমাদের সব বললো। না হলে জানতেই পারতাম না।”

আপু সবাইকে এসব বলেছে। অবাক হয়ে সেখানে থেকে চলে এলাম। দিনারা নাচবে এখন তাই গান ঠিক করছে। আমি একপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম তখন ভাইয়া এসে আমার পাশে দাঁড়ালো।

আমি মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। ভাইয়া বললো,

“কি হয়েছে?”

আমি বললাম, “আপু সবাইকে কি সব বলছে জানেন?”

“কি বলেছে?”

“আমার আর আপনার নাকি বিয়ে ঠিক। আরো অনেক কথা। চাচি তো খুব রেগে আছে।”

“ভালোই তো করেছে। আপুকে আমার থ্যাক্স দিতে ইচ্ছে করছে।”

“কেন?”

“এসব বলার জন্য।এখন সবাই জানে তুই আমার হবু বউ। তাই কেউ আমার সাথে তোকে দেখলে খারাপ ভাববে না।”

আমি চোখ বড় তাকালাম।

ভাইয়া চোখ ছোট করে তাকিয়ে বললো, ” তোকে নীল কালারের মানায় না রে ঊষা।”

আমি বললাম, “মানে।”

“মানে তোকে দেখতে ভালো লাগছেনা। ”

আমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি। আজ মনে হয় সত্যি ভালো লাগছে না কেউ তো আমার প্রশংসা করে নি।

আমি নিচের দিকে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছি‌
ওইদিকে দিনা নাচছে দেখতেও ইচ্ছে করছে না। ভাইয়া আমাকে টেনে স্টেজ এর পেছনে নিয়ে এলো। আর আমাকে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড় করিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, “কি হলো এখানে আনলেন কেন?”

‘আচ্ছা তোর কি মনে খারাপ হয়েছে? সুন্দর লাগছে না বলে?”

আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম। আমার তো মন খারাপ হয়েছে কিন্তু আমি বলবো না।

“কি হলো আমার মুখে প্রশংসা শুনতে চাস?”

আমি ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেললাম কি সর্বনাশ আমার ভাইয়ার মুখ থেকে নিজের প্রশংসা শুনতে ইচ্ছে করছে। আমি নিজের এমন নির্লজ্জ ইচ্ছে কি করে বলবো। পারবো না আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। ঠোঁট শুকিয়ে আসছে আমি বার বার ভিজিয়ে নিচ্ছি জিভ্বা দিয়ে ঠোঁট। ভাইয়া আমার থুতনি ধরে মুখটা তুলে বললো” কি হলো এমন হাঁসফাঁস করছিস কেন?”

আমি বললাম, ” সবাই নাচছে চলুন দেখি?”

ভাইয়া ছারলো না।

আমি বললাম, ” আমাকে তো ভালো লাগছে না দেখতে তাহলে এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?”

ভাইয়া ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি টেনে বললো, “আমার জিনিস সুন্দর লাগলেও আমি তাকায় থাকবো। না লাগলেও তাকায় থাকবো তোর কি?”

ভাইয়ার কথা শুনে থমকে চুপ করে গেলাম। ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিলো।

“দেখা শেষ হবে না আমার। তাই চল যাই‌।”

বলে হাত ধরে টেনে অনুষ্ঠানে এলো। তখন দিনা দৌড়ে এলো আর আমাকে আর ইহান ভাইকে টেনে নিয়ে বললো নাচতে। কিন্তু ভাইয়া নাচবে না না করছে। আমি জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নাচতে হলে লজ্জায় পারবো। এতো মানুষের সামনে আমি নাচতেই পারবো না। কিন্তু ভাইয়া রাজি হলে আমি না করতে পারবোনা।
আল্লাহ কে ডাকছি যেন রাজি না হয়। কিন্তু রাজি হলো তাও একা না ভাইয়া আর আমি আর ইমা আপু আর রিফাত ভাই‌ তাই ইহান ভাই রাজি হয়েছে।

একটা হিন্দি গান ছারলো আর শুরু হলো নাচ।আমি নাচতে পারিনা বলে চুপ করে কোনায় সরে দাঁড়িয়ে আছি।
রিফাত ভাই আর ইমা আপু নাচছে। আমাকে না পেয়ে ভাইয়া চলে এলো আমার কাছে।

‘চল। ”

“আমি নাচবো না। আমি নাচতে পারিনা।”

“তোর নাচতে হবে না। আমার সাথে খালি তাল মিলাবি”

“তাও পারবো না। এতো মানুষের মধ্যে আমি কিছু করতে পারবোনা।”

“চল।”

“না।”

ভাইয়া বিরক্ত হয়ে রেগে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো। আমি আঁতকে হাত ছারানোর চেষ্টা করছি পারছিনা।

ভাইয়া আমাকে কোমর জড়িয়ে ধরলো। আমি আশেপাশে তাকাচ্ছি। সবাই খুব ইনজয় করছে। কিন্তু কিছু মহিলা কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। গ্ৰামে এটা স্বাভাবিক।

চাচি আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি সবার দিকে।

নাচ শেষ হতেই আমি রেগে মেগে চলে গেলাম। ভাইয়া আমার পেছনে এলো।

“আপনি আমার আশেপাশে আসবেন না ছিঃ সবার সামনে আমাকে নাচিয়ে ছারলেন?”

“আমরা একা নাকি আপুরা ও ছিলো।”

‘তো কী তারা হাজবেন্ড ওয়াইফ আর আমরা?”

“আমরা ও হবো তো।”

আমি এই প্রথম ভয় চোখে না রাগী চোখে তাকালাম। তা দেখে ভাইয়া বললো,

“ও মাই গড তুই আমাকে ভয় পাচ্ছিস না উল্টা রাগ দেখাচ্ছিস?”

আমি রাগী চোখে তাকিয়ে আছি খুব রাগ লাগছে আমার।

ভাইয়া বললো,

“আমি তো এমন ঊষাকেই চাই। যে আমাকে ভয় পাবে না। যার চোখে থাকবে অফুরান্ত ভালোবাসা, যে আমাকে রাগ দেখাবে, রেগে গাল ফুলিয়ে রাখবে। আমি তার রাগ ভাঙাবো। তার ছোট ছোট আবদার পূরণ করবো। তাকে খুব ভালোবাসবো।

আমি রাগ ভুলে মুগ্ধ নয়নে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এসব তো আমার কল্পনা। আমি এমন একজন চাইতাম। ভাইয়া জানলো কি করে?

“কি ভাবছিস?”

হকচকিয়ে বললাম, কিছু না।

ভাইয়া আমাকে বললো, মেহেদী দিবি।

আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি?

‘হুম। মাথা নাড়িয়ে বললো।

“আমি কেন?

“আয় দিবি আর আমার নাম লিখবি।”

“কিন্তু?”

“কোন কিন্তু না চল।”

বলেই মেহেদী আর্টিস্টদের ডেকে নিজে আমার পাশে বসে পরলো আমাকেও চেয়ার টেনে বসিয়ে। তারপর তার ইচ্ছা মতো ডিজাইন বলে মেহেদী দেওয়া লো আমি নিরবে সব দেখলাম। আমার হাতের মাঝে ভাইয়ার নাম লেখালো।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_41

মানুষের গিজগিজ করছে বাড়ি জুড়ে। আজ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান তাই নিয়ে কতো শত আয়োজন। সকালের খাবারের পর আমি বসে আছি তিন্নি আপুর রুমে। তিনি আমাকে দিয়ে তার লেহেঙ্গার ফতুয়া সিলাই করাচ্ছে। যেখানে থেকে ফতুয়া বানিয়েছে তারা ঢিলা বানিয়ে দিয়েছে। সেটা করছি আমি। ড্রেস আনার পর এই অবস্থা দেখে চিন্তিত মুখে বসে ছিলো তিন্নি আপু। আসলে ড্রেসটা বানিয়ে আনা হয়েছে দূরে থেকে। এখন সেই ট্রেইলার্সের দোকানে যাওয়ার কেউ নাই কারণ সবাই এখন কাজে ব্যস্ত আর গেলেও লেট হবে।
তখন তাদের এই সমস্যার সমাধান ইমা আপু এসে দিলো। বললো আমি নাকি সিলাই পারি। তাই আমাকে দিয়ে করানো হচ্ছে। আমার অবশ্য খারাপ লাগছে না। আমি আগেও করেছি আমার জামা যখন এমন হয়েছে। তা আমি নিজেই সিলাই করেছি। সেটা নিয়ে আবার কাউকে বলে চাচির থেকে বকা খাওয়ার ইচ্ছে হয়নি তাই।

আমার কাজ শেষ হতেই তিন্নি আপুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,,,

‘ আপু হয়ে গেছে দেখেন তো ঠিকঠাক হয়েছে কিনা?’

আপু এগিয়ে এসে হাতে নিলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমার জন্য তোমার খুব কষ্ট হলো তাইনা?’

আমি বললাম, ‘ নাহ কষ্ট হবে কেন? এটা তো সামান্য কাজ। আমার ভালো লাগছে আপনার হেল্প করতে পেরে।’

তিন্নি আপু এগিয়ে আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বললো, ‘ তুমি খুব লক্ষ্মী মেয়ে তো। কি সুন্দর কথা বলো? এজন্য বুঝি ইহান ভাই তোমার জন্য এতো পাগল?’

আমি ইহান ভাইয়ের কথা শুনে লজ্জা পেলাম খুব। সবাই খালি ভাইয়াকে টানে কেন বুঝিনা। কথা বলা শুরু আমাকে দিয়ে হলেও শেষ হয় ভাইয়াকে নিয়ে। আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।

‘ আরে মেয়ে লজ্জা পেলে নাকি? লজ্জা পেয়ো না আমি এমনি মজা করলাম। আমি তোমার বোনের মতোন তো তাইনা মজা একটু করতেই পারি।’

আমি মাথা নাড়িয়ে হুম বললাম। আপু আরো কিছু বলবে তখন ভাইয়া কন্ঠ শুনে চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ইহান ভাই দরজা দাড়িয়ে আছে।

আমি তাকাতেই ভাইয়ের চোখে চোখ পরলো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ভাইয়া আমি তাকাতেই বললো,

‘আমার জন্য এক কাপ কফি করে নিয়ে আয় রুমে।’

বলেই পেছনে ঘুরে বড় বড় পা ফেলে সেকেন্ডে চলে গেলো। আমি হাঁ করে তাকিয়ে র‌ইলাম। তিন্নি আপু বললো,

‘ওরে বাবা বিয়ের আগেই হুকুম করা শুরু হয়ে গেছে নাকি।’

আমি চুপ করে আছি। আপু আমাকে বললো,’ যাও কফি দাও গিয়ে। তোমায় হবু বর না হলে আবার রেগে যাবে। দেখলে না কেমন রাগ করে তাকিয়ে ছিলো।’

আমি উঠে দাঁড়ালাম। ভাইয়ার আবার রাগের কারণটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। আমি চিন্তিত মুখ করে বেরিয়ে এলাম। রান্না ঘরের দিকে যাব দিনা তখন আমাকে টেনে নিয়ে এলো ওর বান্ধবীদের কাছে। দুইটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে তাদের কাছে এনে বললো,

‘ এই হলো আমার নতুন ফ্রেন্ড ঊষা।’

হাই হ্যালো বলতে লাগলো। আমি চিন্তিত মুখে হাসার চেষ্টা করলাম।

‘এটা কে?’

‘আমার রিফাত ভাই আছেনা তার শালিকা।’

‘ও একটু আগে যে হ্যান্ডসাম ছেলেটা গেল তার বোন?’

আমি ভাবছি এই হ্যান্ডসাম ছেলেটা আবার কে? তখন দিনার কথা শুনে আমি বুঝে গেলাম এটা ইহান ভাই।

দিনা বললো, ‘না তার বোন না ব‌উ!’

দুজনে চরম অবাক হয়ে আমার দিকে বললো, ‘হোয়াট?’

তারপর একজন বললো, ‘ কি বলছিস? ব‌উ এটা কি করে সম্ভব ? তুই না বললি রিফাত ভাইয়ের শালি তাহলে তার শালার বোন না হয়ে ব‌উ হয় কেমনে?’

দিনা বললো, ‘ আরে আপন বোন না তো ঊষা চাচাতো বোন।’

এবার ক্লিয়ার হলো তাদের। তারা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

‘তোমাদের বিয়ে কবে হয়েছে?’

আমি মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না। সবাইকে এই সব বলার কি দরকার? আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।

দিনা বললো, ‘ ওদের বিয়ে এখনো হয়নি। এনগেজমেন্ট হয়েছে শুধু। বিয়েও খুব তারাতাড়ি হবে।’

বলেই আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,, ‘তাইনা রে ঊষা।’

আমি কথায় পাত্তা না দিয়ে।কথা ঘুরিয়ে বললাম,,,

‘ আমি যাই। আমাকে ভাইয়া কফি নিয়ে যেতে বলেছে।’

বলেই এক সেকেন্ড দাঁড়ালাম না। চলে আসতে নিলাম। পেছনে থেকে ওদের কথা আমার কানে এলো। ওই মেয়ে গুলো বলছে ভাই কাকে বললো?
দিনা বললো, ইহান ভাইকে। তা নিয়ে হাসাহাসি। আমার রাগ হলো ওদের হাসি শুনে। আমি রেগেই কফি করলাম। আমাকে তিন্নি আপুর মা বলেছিলো তিনি করে দিবেন। আমি না করে নিজে করেছি।

আমি কফি নিয়ে এসে দেখি ভাইয়া রুমে পায়চারী করছে। আমি যেতেই আমার দিকে একনজর তাকিয়ে বিছানায় বসে পরলো। আমি এগিয়ে কফি হাত বাড়িয়ে দিলাম। ভাইয়া কফি হাতে নিলে আমি চলে আসতে নেই‌।

ভাইয়া পেছন ডেকে‌ বলে, ‘ তোর সাথে ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।’

আমি দাঁড়িয়ে পরলাম থমকে,

আবার কি ইম্পর্টেন্ট কথা বার্তা বলবে। আমি ওরনায় আঙ্গুল পেছাতে পেছাতে ঘুরে দাঁড়ালাম। ভাইয়া কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,

‘আজ শাড়ি পরবি?’

আমি মাথা তুলে তাকালাম।

‘কি হলো বল?’

আমি হকচকিয়ে বললাম, ‘ হুম দিনা বলছিলো সবাই এক রকম শাড়ি পরবে।’

‘তোর আজ পড়ার মতো ড্রেস আছে?’

আমি বললাম, ‘ শাড়ি তো পড়া হবে অন্য ড্রেস দিয়ে কি করবো?’

ভাইয়া শক্ত মুখে বললো, ‘ তোকে আমি যা জিজ্ঞেস করছি তাই বল।’

আমি চমকে উঠে বললাম, ‘আছে। ‘

‘ওকে আজ শাড়ি পড়বি না। এটা বলার জন্য ডেকেছিলাম। ‘

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বললাম, ‘ শাড়ি পড়বো না কেন?’

‘আমি মানা করেছি তাই।’

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আরো অনেক কথা বললো। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনলাম তারপর ভাইয়া বললো,

‘যা এবার। আমার কথা মাথায় থাকে যেন।’

আমি হতভম্ব হয়ে বেরিয়ে এলাম।

দুপুরে গোসল শেষে সবাই রেডি হচ্ছে আমি আর দিনা এক রুমে। দিনা নিজেই শাড়ি পরতে পারে খুব সুন্দর করে তাই একাই পরবে। আমাকেও পরাবে বলছে আমি বিছানায় চুপ করে বসে আছি।

দিনা এগিয়ে এসে বললো, ‘ এমন করে বসে আছো কেন? উঠো এই যে শাড়ি চলো তোমাকে আগে পরিয়ে দেয়।’

আমি নড়লাম না। দিনা বললো, ‘কি হয়েছে?’

আমি সব বললাম। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘তাই তুমি পরবে না ভাবছো? এমনটা ভেবো ও না। শাড়ি না পরলে তোমাকে সবার মাঝে কেমন লাগবে দেখতে ভাবো? ইহান ভাই যার জন্য না করুক না কেন? তুমি পড়ো পরে না হয় বুঝিয়ে বলো?’

‘শুনবে না। ভাইয়া খুব রাগী আমাকে বকবে অনেক।’

‘কি বলছো? তোমাকে বকবে আমার তো বিশ্বাস হয়না। সে তোমাকে খুব ভালোবাসে বকতেই পারবে না। যাও আমি তোমার সাথে গিয়ে তার কাছে বলবো আমি তোমাকে জোর করে পরিয়েছি।’

‘মানবে না‌!’

‘এতো ভয় পাও কেন? চলো তো। কিছু হবে না।’

দিনা আমার কথা শুনলো না। নানা ভাবে আমাকে বুঝিয়ে রাজি করালো। ভেতরে ভেতরে আমি ভয় পাচ্ছি। কিন্তু দিনার কথা শুনে রাজি হতে মন চাইছে। তাই তো রাজি হয়ে গেলাম। ও আমাকে খুব সুন্দর করে কুচি করে শাড়ি পরিয়ে দিলো। আঁচলেও কুচি উঠিয়ে। ও নিজে বাঙালি স্টাইলে শাড়ি পরলো। আমি চুল ছাড়লাম না। গরম আর ভাইয়া না করেছে চুল যেন ছাড়া না দেখি। শাড়ি না হয় পড়লাম। ওটা রাখি। দিনা আমাকে সাজিয়ে দিলো। গোলাপি রঙের শাড়ি, সোনালি ব্লাউজ, মাথায় গাজরা দিয়ে খোঁপা। হাতে আমি সোনালি আর গোলাপি রঙের চুড়ি পরলাম। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কপালে টিপ, চোখে মোটা কাজল। দিনা একটা গলায় নেকলেস আর কানে ঝুমকা পরিয়ে দিলো। সাজ কম্পিলিট করে আমি ভয়ার্ত মুখ করে বসে আছি। ভাইয়া আমাকে এই অবস্থায় দেখলে কি বলবে আল্লাহ জানে?

সবাই বের হলাম। এখন ছেলে পক্ষেরা হলুদ দিতে এসেছে। গেটের কাছে ফুল, চকলেট আরো নানান জিনিস নিয়ে দাঁড়াতে হলো। আমার হাতে গাঁদা ফুল ছেঁড়া একটা পাত্র। তা বর পক্ষের সবার মাথায় ছিটাতে হবে। আমি দাঁড়িয়ে আছি কাচুমাচু মুখ করে। আশেপাশে ভাইয়া নাই‌। সবাই চলে যাচ্ছে আমি হাতে নিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছি‌। হুট করেই কেউ আমার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরলো। আমি চমকে তাকিয়ে দেখি অচেনা একটা ছেলে। আমি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছি।

‘কি হলো ম্যাডাম আমাকে দিবেন না?’

আমি ঢোক গিলে ফুল দিতেই ছেলেটা হাসতে হাসতে চলে গেলো।
সবাই চলে গেলে আমরা ও এলাম। ইমা আপু তিন্নি আপু কে নিয়ে স্টেজে বসালো।

আর বাকিরা যারা ছেলের বাড়ি যাবে তারা গাড়িতে গিয়ে বসলো। আমাকে নিয়ে দিনা বসলো। তখন ইহান ভাইকে দেখলাম। তিনি গম্ভীর মুখ করে এগিয়ে আসছে। বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি পরেছে সবাই। ভাইয়া ও পরেছে। ভাইয়াকে গম্ভীর মুখে দেখেই আমার আত্না কেঁপে উঠলো।

ভাইয়া এগিয়ে এসে সুন্দর করে দিনাকে বললো,

‘ আমি এখানে বসতাম। আপনি একটু অন্য কোথাও ম্যানেজ করে নিন প্লিজ।’

দিনা মাথা দুলিয়ে উঠে গেলো। আমি বোকা চোখে তাকিয়ে আছি দিনার যাওয়ার দিকে। এভাবে একা রেখে চলে গেলো। আমার কাছে এসে ভাইয়া বসলো। ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার দিকে তাকালো ও না কথা ও বললো না। আমি অনেকক্ষন ভয় পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ উঠিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া সামনে তাকিয়ে আছে আবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। কথা বলবো নাকি বলবো না।
অনেক ভেবে চিন্তে কথা বলেই ফেললাম,

‘ ভাইয়া আমি আসলে…..

এমন ভাবে তাকালো যে আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। আমার কথা আপনাআপনি থেমে গেছে। ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি ভয়ার্ত চোখে। ভাইয়া তার সুন্দর ঠোঁট নাড়িয়ে শান্ত গলার বলা কথা শুনে আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।

ভাইয়া বললো, ‘ তোকে আমি বলেছিলাম শাড়ি না পরতে। আমার কথা অমান্য করা আমি পছন্দ করি না ঊষা। কাজটা ভালো করিস নি।’

আর কথা বললো না আমি কাঁপছি অসম্ভব রকমের। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কথা বলতে পারছিনা।

গাড়ি থেকে নামার সময় সবাই নেমে গেলো ভাইয়া নামছে না। তার জন্য আমিও নামতে পারছিনা সবাই চলে গেল। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। সবাই যেতেই ভাইয়া গাড়ির দরজা অফ করি দিলো আর নিজে আমার দিকে ঘুরে বসলো আমি এসবে ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললাম,

‘ দরজা আটকালেন কেন? যাবেন না। সবাই তো চলে গেলো? আম…..

ভাইয়া আমার কথার গুরুত্ব না দিয়ে। আমার দিকে তাকিয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে আমার কাঁধের কাছে শাড়ির আঁচল ধরলো। আমি চমকে উঠলাম। বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া কি করছে শাড়ি খুলছে কেন?

‘কি করছেন?’

আমার এই বিষ্ময়কর চোখ মুখের দিকে তাকালো না ভাইয়া। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তিনি পিন খোলার চেষ্টা করতে আমি আঁতকে উঠে হাত বুকে চেপে ধরলাম।

#চলবে