এক চিলতে রোদ পর্ব-৪২ + বোনাস পার্ট

0
909

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_42

দিনা আমার দিকে ইয়া বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। আমি চাপা রাগ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ তোমাকে বলেছিলাম ভাইয়া মানবে না। দেখো এখন আমার কি অবস্থা।’

দিনা আমার কাছে এসে হাত ধরে বললো, ‘ সরি আমি ভাবিনি এমন করবে। আচ্ছা ভাইয়া কোথায় আমি গিয়ে সরি বলে আসি। তোমাকে কি বলেছে?’

আমি মাথা নেড়ে না বললাম।

‘ আচ্ছা আমি বলে আসি বকবে না। আমি তো জোর করছিলাম তোকে। এতে দোষ আমার।’

আমি কিছু বললাম না। মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে দাঁড়িয়ে আছি। দিনা চলে গেলো। আমি গোমড়া মুখে তাকিয়ে আছি সামনের স্টেজে যেখানে বরের গায়ে হলুদ হচ্ছে।

তখন গাড়িতে ভাইয়া আমার কাঁধের পিন খুলে দিলো। আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। তিনি কি করতে চাইছে। ভাইয়া আমার আঁচলের ভাঁজ খুলে ছেড়ে দিলো। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার হাত ধরে বললো,

‘ এভাবে থাকার মানে কি? তুই কি ভেবেছিলি আমি কি করবো?’

আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। হাত নামিয়ে নিলাম। ভাইয়া আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

‘এটাকে শাড়ি পরা বলে শরীরের অর্ধেক অংশ দেখিয়ে? তোকে আমি পরতে মানা করছিলাম তা তো শুনলিই না উল্টা এমন বিচ্ছিরি ভাবে শাড়ি পড়ে এসেছিস?’

ভাইয়ার কথায় আমি কুঁকড়ে ওঠে মাথা নিচু করে মিনমিন করে কিছু বলতে যাব। ভাইয়া আমার থুতনিতে নিজের আঙ্গুল স্পর্শ করলো। আমি চমকে মাথা তুলে তাকালাম। ভাইয়া রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

‘কককি হয়েছে এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?’

ভাইয়া হাত বাড়িয়ে আমার কপালে থেকে টিপ খুলে নিলো। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না তাও বললাম,

‘ দিনা টিপ দিছে আমি পরতে চাইনি‌।’

ভাইয়া কিছু বললো না সুন্দর ভাবে বাম হাতে ফেলে দিলো টিপ তারপর আমার দিকে তাকালো শান্ত ভঙ্গিতে। আমি ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছি। ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে।

‘সুন্দর করে সেজে গুজে শুধু আমার সামনে আসবি। এইখানে হাজার মানুষকে দেখানোর জন্য সাজাটা আমার পছন্দ না। আসার আগে ওই ছেলেটার সাথে কথা কথা বলছিলি?’

আমি বোকা চোখে তাকিয়ে ভাবছি। আমি আবার কোন ছেলের সাথে কথা বললাম। কার কথা বলছে?

‘কি হলো এ্যান্সার মি?’

‘আমি কখন কার সাথে আবার কথা বললাম।’

চিন্তা মুখ করে তাকিয়ে বললাম ভাইয়া কে।
ভাইয়া রেগে বললো,’ মিথ্যে বলা শিখে গেছিস?’

আমি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে ভাবছি মনে পরছে না।

ভাইয়ার কথায় বুঝতে পারলাম। ওই গেটের অসভ্য ছেলেটার কথা বলছে। আমি বললাম,

‘ ওই ছেলে তো নিজে কথা বলছিলো আমি কিছুই বলিনি।’

ভাইয়া রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো, ‘ আচ্ছা তুই বলিস নি ছেলেটা কি বলেছিলো? আর‌ তা শুনে তুই ফুল কেন দিলি?’

আমি বললাম, ‘ ফুল‌ই চাইছিলো।’

‘ কেন ফুল চাইলো?’

‘ আমি কি জানি?’

‘ ওই ছেলে তোকে..

বলতে গিয়ে ভাইয়া থেমে গেলো। আমি উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া থামতেই আমি বললাম,

‘ আমাকে কি বলেন?’

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোর ফুল দেওয়া ঠিক হয়নি। আর কখনো দিবিনা।’

আমি হতবুদ্ধি হয়ে বললাম, ‘ ছেলেটা কি আবার ফুল চাইতে আসবে তখন আমি মানা করে দেবো।’

ভাইয়া হতাশ চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ মাথা মোটা। চাওয়া জিনিস দিবি না। ছেলেটা তোর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য চেয়েছিলো তোর দেওয়া ঠিক হয়নি। ‘

‘ওহ।’

ভাইয়া পিন আমার হাতে দিয়ে কাঁধে আঁচল লাগাতে বললো।

‘ আমি কিভাবে?’

আমি পারিনা লাগাতে।

‘কিভাবে মানে পারিস না?’

আমি মাথা দুলিয়ে না বললাম। ভাইয়া নিজে পিন নিয়ে আমাকে টেনে কাঁধে পিন লাগাতে লাগলো। আমার বুকের ভেতরে টিপটিপ করছে। ভাইয়ার হাত আমার শরীরে স্পর্শ করছে। আমি চোখ করে আছি।
ভাইয়া লাগিয়ে দিয়ে আঁচল টেনে মাথা ডেকে দিলো। আমি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছি।

‘এইভাবেই থাকবি?’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।আর আমরা হাত ও ধরে আমাকে ও টেনে বের করে আনলো।

আমি মুখ কালো করে বললাম, ‘ আমাকে বিবাহিত লাগছে দেখতে ? ‘

ভাইয়া আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ বউয়ের মতো লাগছে। ইহানের ব‌উ।’

বলেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো। আমি গোমড়া মুখে বললাম,’ সবাইকে কতো সুন্দর লাগছে আর আমি এমন করে?’

‘সবাইতো আর তুই না।তোকে আমার এই ভাবেই ভালো লাগছে একদম পারফেক্ট। বর বউ এটাই সবাই বলবে। আর এটাই তো সত্যি তাই না।’

আমি মাথা উঠিয়ে ভাইয়ার উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকালাম। ভাইয়া হাত বাড়িয়ে আমার কাধ ধরে হাঁটতে লাগলো। অনেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
ভাইয়া ভেতরে এসে আমাকে দাঁড়াতে বলে ফোন কানে তুললো।
আমি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সামনে তাকাতেই দিনা এলো।

‘হাই মিস!’

অপরিচিত কারো আওয়াজ শুনতেই আতংকে উঠলাম। সামনের লোকটাকে দেখে আরো চমকালাম। সেই ছেলেটা আমার সামনে দাঁত বের করে হেসে তাকিয়ে আছে।

আমি তাকাতেই বললো,’ একি তুমি এমন বিবাহিত মেয়ের মতো সেজে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’

আমি চমকে উঠলাম কি অসভ্য ছেলেটা কেমন তুমি করে কথা বলছে? আমি কিছু বলতে যাবো আবার ভাবলাম ভাইয়া কথা বলতে মানা করছিলো থাক বলবো না।

‘ কি হলো কথা বলছো না কেন এমন বিবাহিত মেয়ের মতো ঘোমটা টেনে আছো কেন? ওই বাসায় তো ঠিক ভাবেই ছিলে?’

‘কারন ও বিবাহিত মেয়ে তাই এমন করে আছে।’

ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে আমি ও ছেলেটা চমকে তাকালাম। ভাইয়া তীক্ষ্ণ চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
ছেলেটা ভাবছে কে এই ছেলে?

ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো,, ‘ আপনি কে?’

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আমার কাছে এসে বললো,’ যাকে জিজ্ঞেস করলেন বিবাহিত কিনা। তার হাজবেন্ড!’

ছেলেটা চোখ কপালে তুলে তাকালো আমাদের দিকে।

‘কি হলো ভাই এমন করে তাকান কেন? খুব চমকাইছেন?’

‘এই মেয়ের বিয়ে হয়েছে?’

‘হুম। কেন সন্দেহ আছে নাকি?’

‘ নাহ তা না আসলে উনাকে দেখলে বিবাহিত লাগে না। তাই আরকি?’

‘ এই না বললেন বিবাহিত লাগছে।’

‘ লাগছে না তো। বিবাহিত দের মতো সেজে আছে তাই বলছিলাম। আচ্ছা সরি ভাই, সরি আপু আমি জানতাম না।’

‘আপু না ভাবি বলেন? আমাকে যেহেতু আমাকে ভাই বলেছেন। আমার ব‌উকে ভাবি বললেই খুশি হবো।’

‘ আচ্ছা ভাবি সরি।’

বলেই চলে গেলো দ্রুত গতিতে।

‘আপনি মিথ্যা বললেন কেন?’

‘ কি মিথ্যা বললাম?’

‘ ব‌উ।’

‘ এটা মিথ্যা না সত্যি হবু টা বলিনি‌।যাই হোক চল খেয়ে আসি।’

বলেই আমাকে নিয়ে খাবার টেবিলে আসলো। দিনারা সবাই বসে আছে।
আমরাও গিয়ে বসলাম। দিনার বান্ধবী রা আমাদের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আমি একনজর তাকিয়ে খেতে বসলাম।
ভাইয়া আমার পাশে বসলো। বিরিয়ানি এক লোকমা মুখে তুলতেই আমার গা কাঁপিয়ে কাশি উঠলো। আমি খাবার না গিলতে পারলাম আর না ফেলতে পারলাম। খুকখুক করে কেশে উঠলাম। বিরিয়ানি আমার নাক মুখ দিয়ে ঢুকে গেলো কাশির মাঝে আমার নাক জ্বলে উঠলো। কি এক বিচ্ছিরি অবস্থা। কোন দিকে খেয়াল নেই আমার। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে। শুধু ভাইয়া উত্তেজিত কথা শুনছি তিনি আমাকে জোর করে ধরে পানি খাওয়াচ্ছে।
সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে দিনা এসব দেখে ছুটে এসেছে।

আমার কাশি থামলেও গলা আর নাক জ্বলছে হঠাৎ এমন কাশি কেন উঠলো কেন জানে। আমি চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। ভাইয়া আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে আছে আলতো ভাবে। ভাইয়া খুব ভয় পেয়ে গেছে মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

চলবে~~~~

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#bonus_part

ঘুমের মাঝে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে জাপ্টে ধরে আছে। হাল্কা জাগানা হতেই কানের কাছে টিপটিপ শব্দ হলো। বাঁশির মতো অনবরত বেজেই যাচ্ছে আস্তে আস্তে আমার ঘুম ছুটে গেলো। আমি ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে ভাইয়া অস্তিত্ব পেলাম। ভাইয়া আমাকে দু’হাতে বুকে জরিয়ে আছে।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। মাথা তুলে ভাইয়ার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মুখের দিকে তাকালাম।
আজ প্রথম হলে এমন ভাইয়ার বুকে নিজেকে দেখে চিৎকার করতাম যেমনটা প্রথমদিন করেছিলাম।

কিন্তু আজ তো প্রথম দিন না ইদানিং প্রায় এটা হতেই থাকে। পড়া শেষ করতে করতে আমি এখানেই ঘুমিয়ে যায় আর সকালে উঠে এমনটা আবিষ্কার করি।
আমি হাত বাড়িয়ে ভাইয়ার হাত সরানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু এই লোকটা ঘুমের মাঝেও আমাকে এমন শক্ত করে ধরে রাখে যে আমি যেতে পারিনা। আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। খারাপ লাগছে না বরং ভালো লাগছে। ইদানিং এই অভ্যেস হয়ে গেছে। আমি আগে উঠে এইভাবেই ভাইয়াকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। হাত বাড়িয়ে দেয় নির্লজ্জের মতো তার খোঁচা খোঁচা দাড়িতে। আজকেও দিলাম। ভাইয়া জেগে যাবে ভেবে হাত সরিয়ে নিজেই লজ্জা পেতে লাগলাম।
তিন্নি আপুর বিয়ে থেকে এসেছি দের মাস হতে চললো। এখনো আমার সেই রাতে কথা ভাবলেই বুক কেঁপে উঠে। কি ভয়ংকর সেই রাত ছিলো ? আমার। গলা শুকিয়ে আসে। কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম।
সারা রাত আমরা বাড়ি ফিরতে পারিনি সকাল নয়টায় বাসায় আসি। আমি পাথর হয়ে বসে ছিলাম গাড়িতে। ভাইয়া গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। তারপর আমাকে টেনে বারিয়ে এনে ভেতরে নিয়ে আসে।

আমি পাথর হয়ে দরজার কাছে দাঁড়ায়। লতা দরজা খুলে আমাদের দেখে সে কি খুশি। আমার কোন দিক খেয়াল নেই।ভাইয়া লতার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ঊষার খেয়াল রাখিস। আমাকে এখন অফিস যেতে হবে আসতে রাত হতে পারে।’

লতা আমার দিকে থেকে কোন কথা বা ওর দিকে না তাকানোর জন্য ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ ওর কি হয়েছে?’

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে,’ কিছু না জোর করে খাইয়ে দিস।’

বলে আমাকে দরজার কাছে রেখেই উপরে ছুটলো। লতা আমাকে নিয়ে আমার রুমে আসে আর জিজ্ঞেস করতেই লাগে। অনেক কিছু। বিয়ে কেমন খেলাম। আগে কেন এলাম! আমি ওর মুখের দিকে একনজর তাকিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। ভাইয়া চলে গেছে তার এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।
এগারোটার সময় তার মিটিং আর এখন দশটা চল্লিশ বাজে।

ভাইয়া কোন রকম শাওয়ার নিয়ে ড্রেস আপ পরে রেডি হয়ে ছুটে গাড়িতে উঠে বসে।
রাতে বাসায় ফিরে! আর ফিরেই আমার কাছে আসে। ক্লান্তে ভাইয়ার মুখটা শুকিয়ে একটু খানি হয়ে গেছে। আমি বিছানায় গুটিগুটি মেরে বসি ছিলাম। তখন ভাইয়া এসে আমার পা মেলে আমার হাঁটুতে নিজের মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো। আমি হকচকিয়ে পা সরাতে গেলে ভাইয়া দূর্বল গলায় বলে,

‘প্লিজ ঊষা! আমি খুব ক্লান্ত! সারাদিন একটু ও রেস্ট নিতে পারিনি। মাথা টান টান হয়ে আছে! তোর নরম হাতে একটু ম্যাসাজ করে দে না।’

কথা বলতে ভালো লাগছে না। আর এসব ও ভালো লাগছে না। কিন্তু তার এই আকুতি ভরা গলার স্বর শুনে আমি কিছু বলতে ও পারছিনা।
আমার খুব মায়া হলো আসলেই আমি তো সারা দিন ঘুমিয়ে কাটালাম। কিন্তু ভাইয়া তাও পারলো না। আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার মাথায় হাত রাখলাম। ভাইয়া ক্লান্ত মুখে মুচকি হাসলো। আমার আরেক হাত বুকে চেপে চোখ বন্ধ করে র‌ইলো।
আমি অস্বস্তি নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

ভাইয়া অফিসে যা পরে গেছিলো তাই পরে আছে। তিনি যে ড্রেস ও চেন্জ করেনি । আমি তাই নিচু গলায় বললাম,

‘ আপনি ফ্রেশ হবেন না?’

‘ এখন না আমি খুব ক্লান্ত আগে ঠিক হয়ে নেই।’

‘কিন্তু আপনি তো ঘেমে গেছেন গোসল করলে ভালো লাগত।’

‘তোর কি আমার ঘামে ভেজা শরীরে দেখে ঘৃন্না লাগছে?’
ফট করেই তাকিয়ে বলে উঠলো।
আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। আমি তার ভালোর জন্য বলছিলাম। তিনি আমাকেই ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। ভুল বুঝছে। ভাইয়া কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।

আমি বললাম, ‘ আমি সেটা কখন বললাম। আমি তো জাস্ট আপনার ভালোর জন্য বলছিলাম।’

ভাইয়া কিছু বললো না চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমিও আর কিছু বললাম না। তিন ঘন্টা এক ঘুমে কাটালো আর হাঁটুতে ভাইয়া। আমিও ডাকলাম না ভাইয়া ও উঠলোনা‌।
উঠার পর আমার মনে হলো হাঁটু ভেঙ্গে গেছে। এতো সময় আমি নড়াতে পারছিলাম না এমন অবস্থা। ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমি শাওয়ার নেব। তারপর খাবো। অনেক খিদে পেয়েছে। খাবার রেডি কর।’

বলেই কোন দিক না তাকিয়ে চলে গেলো। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। আমার অবস্থা খারাপ করে দিয়ে এখন খাবার চাওয়া হচ্ছে।
কিন্তু তাও কিছু বললাম না খাবার রেডি করলাম।

তিনদিনের মাথায় চাচি এলো সাথে ইমা আপু ও আসলো। দুইদিন থেকে চলে গেলো। চাচি আমার সাথে এখন আর কথা না বলে থাকে না। আগের মতো কাজ দেয়। তা অবশ্য ভাইয়ার অবর্তমানে। সারাদিন ইচ্ছে মতো কাজ করায়।
আমি ভাইয়াকে কিছু বলিনা। এতো ঝামেলা পছন্দ না আমার। ভাইয়া আমার জন্য কলেজে ভর্তির জন্য কয়েকটা বই এনে দিলো । ভালো কলেজে তো পরিক্ষা দিতে হবে। তাই নিয়ে প্রতিদিন আমাকে রাতে এক ঘন্টা পড়ায়। এই সময়টা মাঝে মাঝে না পারলে অনেকটা সময় চলে যায় আর আমি ভুলে ঘুমিয়ে পরি।

প্রথম দিন ঘুমিয়ে পড়লাম। সেদিন সকালে উঠে আমি ভাইয়া বাহুডরে আবদ্ধ অবস্থায় নিজেকে পেয়ে একটা বড় সড় চিৎকার করে উঠি। আসলে এমন অবস্থা দেখে আমি চমকে ভয় পেয়ে গেছিলাম।

আমার চিৎকার শুনে ভাইয়া ধরফরিয়ে উঠে আর আমার মুখ চেপে ধরে। আমি উম উমমম করতে লাগি।

‘ রিল্যাক্স আমি, ভালো করে দেখ আমি তোর ইহান ভাই, চিৎকার করছিস কেন? সবাই কি ভাববে?’

‘ আপনি আমার রুমে কি করছেন? আর এভাবে জরিয়ে ধরে শুয়ে ছিলেন কেন?’

‘ আমি তোর রুমে না বরং তুই আমার রুমে!’

‘ কি?’

বলেই চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম এটা ভাইয়া রুম। রাতের কথা মনে পরে গেলো। আমি ঝিমুচ্ছিলাম আর পারছিলাম তখন কোনভাবে ঘুমিয়ে পরেছি। ভাবতেই লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেলাম। খুব অপ্রস্তুত বোধ করতে লাগলাম। এই ভাবে ভাইয়ার রুমে ঘুমিয়ে পরলাম। ভাইয়া কি ভাবছে?
আর না ডেকে এমন জরিয়ে ঘুমালো কেন? আমার মনে অন্য কিছু উঁকি দিতে লাগলো। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম ভাইয়ার দিকে,

‘ আপনি ওমন করে জরিয়ে কেন ঘুমালেন? আমি না হয় ভুলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমাকে আর ডাকলেন না কেন?’

ভাইয়া মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললো,’ তোকে ডাকলে আমার এতো সুন্দর ঘুম হতো নাকি? আর যা যা করেছি তা করতে পারতাম না আমি তো লোভ সামলাতে পারিনি।’

আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম কি সব বলছে ভাইয়া করেছে?
আমি বিস্মিত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,’ কি করেছেন আপনি?’

আমার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। ভাইয়া তা দেখে আমাকে আরেকটু ভয় পাইয়ে দিলো,

‘অনেক কিছু।’

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে চেয়ে আছি।
কেঁদে দেবো এমন একটা অবস্থা।ভাইয়াকে আমি পছন্দ করি মানে তো ভালোবাসি না। আমার সম্মতি ছাড়া এসব করলো ভাবতেই আমার ভেতরটা হু হু করে উঠলো।
ভাইয়া আমার এই অবস্থা দেখে হেসে ফেললো আর বললো,

‘তুই আমাকে এমন ভাবিস? আমি তোর ঘুমের সুযোগ নেবো আমাকে এতো খারাপ ভাবিস?’

আমি ভাইয়ার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আমাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। এক হাত আমার দিকে বাড়িয়ে কপালে ছোট ছোট চুল কানে গুঁজে দিলো।

‘কাল শুধু তোকে একটা কিস করছি আর জরিয়ে ধরে তোর দিকে তাকিয়ে থেকেছি। তুই জানিস এতোটা সময় তাকিয়ে ছিলাম যে সকালের আযান পরে যায় তবু আমার মনে হয় আমি একটু সময় দেখলাম তোকে। তুই যদি আমার সামনে বসে থাকিস আমি তোর দিকে তাকিয়ে থেকে এই জীবন পার করে দিতে পারবো। কিন্তু এটা বলবো না আমার কিছু করতে ইচ্ছে হয়নি‌! হয়েছে খুব হয়েছে! যাকে আমরা ভালোবাসি তাকে সব ভাবেই নিজের করে পেতেই চাই! কিন্তু এখনো সময় হয়নি তোর আঠারো বছর না হ‌ওয়া পর্যন্ত আমি নিজেকে সংযত রাখবো। আর জানি একদিন আমার থেকেও বেশি তুই আমাকে ভালোবাসবি আমি সেই দিনের অপেক্ষা করছি।’

আর কথা বলিনি সেদিন! চলতে লাগলো সময়। আমার রেজাল্ট এর সময় ঘনিয়ে এলো আর বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়ে গেলো আমার বারবার মনে হতে লাগলো আমি ভালো করবো তো।
ভাইয়ার মুখ রাখতে পারবো তো। এই সময় আমার যতসব উদ্ভব চিন্তা ভাবনা হতে লাগলো। আমি প্রশ্ন কমন পরেছিলো লিখেছিও কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে আমি রোল নম্বর ভুল লিখেছি‌। কোড নাম্বার লিখিনি এসব বাজে চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে গেল। কিছুতেই চিন্তা দূর করতে পারছিনা। পর পর দুই রাত রুমে ঘুমাতে পারলাম না। একটু ঘুম আসলেও বাজে স্বপ্ন দেখি‌। আমি ফেল করেছি। চিন্তা আমি শেষ। এটা হলে আমি মুখ দেখাবো কি করে ভাইয়া কে।

হাত পা কাঁপছে আমি রেজাল্ট দেখতে যাইনি রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছি। নামাজে বসে আল্লাহকে বলছি আল্লাহ আমাকে ফেল করিও না। ভাইয়া কতো চেষ্টা করেছে এখন ফেল করলে মুখ দেখানোর যো থাকবেনা।
বাইরে চাচি আমাকে বকে যাচ্ছেন!

‘ঢং দেখলে বাঁচি না। ফেল করবে তো তাই ওমন দরজা আটকে মুখ ঢেকে বসে আছে। ছাগল দিয়ে কি আর হাল চাষ হয়।এবার আমার ইহান বুঝবে। গাধাকে ঘোড়া বানানো যায়না। ওর দ্বারা কিছু হবে না। খালি অন্যের ঘাড়ে উপর বসে খেতে পারে আর আমার ছেলের মাথা খেতে পারে।’

আমি শুনছি আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। চাচির কথা কি সত্যি হবে। আমি ফুঁপিয়ে কাঁদছি তখন ভাইয়ার গম্ভীর আওয়াজ কানে এলো আমি কেঁপে উঠলাম,
বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো। আমি কি ফেল করেছি।

দরজা খুলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি‌।মাথা তুলতে পারছি না।

‘এমন করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তাকা আমার দিকে?’

আমি তাকাচ্ছি না।

‘কি হলো তাকা?’

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,’ ভাইয়া আমি কি ফেল করেছি? আপনি কি আমাকে খুব বকবেন? বিশ্বাস করুন আমি চেষ্টা করেছি আর পরিক্ষাও ভালো দিয়েছি! কিন্তু কি করে এসব হলো?’

‘কি পাগলের মতো আবোল তাবোল বলছিস?’

আমি কিছু বলবো ভাইয়া ফোন আমার দিকে তুলে ধরলো,

যেখানে আমার নাম, রোল সব আছে নিচে লিখে A+ আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।

তাও মুখে বললাম,,’ কি?’

তুই জি পি এ ফাইভ পেয়েছিস।’

আনন্দে আমার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আমি এতো ভালো করেছি। আর কতো কিছু না ভাবছিলাম। নিজের উদ্ভব চিন্তা ভাবনার জন্য নিজেরই রাগ হচ্ছে।কি টেনশনে ছিলাম। উফ বুকের উপর থেকে যেন পাথর সরে গেলো।

ভাইয়া ফোনে কিছু করছে আমি ঝলমল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি এই সব কিছু পসিবল হয়েছে এই মানুষটির জন্য। তার কৃতিত্ব। আমি আচমকা একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেললাম।

আমি অতি আনন্দে উত্তেজিত হয়ে ভাইয়ার গালে চুমু খেয়ে বসলাম। ভাইয়া আমার হঠাৎ কাছে হতভম্ব হয়ে গেলো। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি নিজের কাছে নিজেই হতবাক হয়ে গেলাম।কি করে ফেললাম উত্তেজনায় বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা কাটা আমার।
আমি লজ্জায় দরজা আটকে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
ইশ কি লজ্জা কি করে ফেললাম আমি। ভাইয়াকে মুখ দেখাবো কি করে? এমন কাজ আমি কি করে করলাম? দশ মিনিট পর ভাইয়ার ডাকে আমাকে বের হতে হলো। আমি বের হতে চাইনি কিন্তু হতে হলো। ভাইয়া আমার লজ্জা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আমরা একটা জায়গায় যাবো দ্রুত রেডি হয়ে নে!’

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ছিলাম ভাইয়ার কথা শুনে চমকে তাকালাম,

‘কোথায় যাবো?’

ভাইয়া বললো, ‘ গেলেই দেখতে পাবি। তারাতাড়ি রেডি হ।’

আমরা একটা হোটেলে এলাম। আমি চারপাশে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বললাম,

‘ এখানে কেন?’

ভাইয়া কিছু বললো না। ভেতরে এসে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো শাড়ি। সাদা মধ্যে নীল জমিনে শাড়ি। আমি বোকার মতো শাড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,,

‘ এটা দিয়ে কি করবো?’

ভাইয়া বললো, ‘বেরাতে যাবো।’

‘তো রেডি হয়েই তো এলাম এখন আবার এসব কেন?’

‘ওই রেডি না আজ তুই আমার মন মতো সাজবি। আমি নিজে তোকে সাজিয়ে দিবো।’

‘আপনার সাজাতে হবে কেন?’

‘কারন তুই সাজতে পারিস না তাই।’

‘আপনি কি করে জানলেন ? যে আমি সাজতে পারিনা‌।’

‘জানি সব জানি।’

‘আপনি সাজাতে পারেন?’

‘পারিনা! তবে তোকে সাজিয়ে শিখে নেবো।’

‘শিখে কি করবেন?এসব তো বাড়িতেই করতে পারতেন?’

‘তোকে যাতে মন মতো সাজাতে পারি তাই। বাড়িতে পারতাম কিন্তু অনেক সিনক্রিট হতো। আমি তাতে তোয়াক্কা করিনা। কিন্তু তোর মন খারাপ হতো আমি চাইনা তোর তো খারাপ হোক।’

আমি চুপ করে গেলাম কতো ভাবে আমার জন্য।

‘কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারি না।’

‘চেষ্টা কর প্লিজ একটু্।’

‘হবে না‌ ভালো।’

‘ভালোর দরকার নাই! যেভাবে পারিস তাই পর। প্লিজ!’

আমার হাত ধরে অনুরোধ সুরে বললো আমি কিছু বলতে পারলাম না। এই অনুরোধ আমি ফেলতে পারবোনা।

ভাইয়াকে রুমে থেকে সরিয়ে শাড়ি পরার চেষ্টা করতে লাগলাম। অনেকটা সময় চেষ্টা করেও কুচি ঠিক করে পরতে পারলাম না। এক পাল দিয়ে করছি আরেক পাশ দিয়ে খুলে যাচ্ছে। শরীর ডেকে বিছানায় বসে র‌ইলাম।ভাইয়া ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করছে হয়েছে কিনা?

#চলবে