এক চিলতে রোদ পর্ব-৪৩+৪৪

0
965

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_43

আমার ঠিক হতে দশ মিনিট চলে গেলো। আমি গলা জ্বলার জন্য পানি খাচ্ছি। যা ওই ছেলেটা এনে দিয়েছে।ছেলেটার নাম শামিম। ভাইয়া আমাকে পানি খাইয়ে দিলো। তারপর খুব আলতো ভাবে জিজ্ঞেস করলো,

‘ এখন ভালো লাগছে? ‘

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। এমন কাশি উঠলো কেন? আমি লজ্জায় নিচের তাকিয়ে আছি। সবাই কি ভাবছে আল্লাহ জানে।
দিনাদের খাবার খাওয়া শুরু হয়ে গেছে আমরা পরে খাচ্ছি। আমি খেতে পারলাম না ঠিক মতো। খালি কাশি পাচ্ছে আমার। কিন্তু বুঝতে দিলাম না ভাইয়াকে।
ভাইয়া আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে নিজেও খাওয়া অফ করে বললো,

‘ কি হলো খাচ্ছিস না কেন?’

আমি বললাম,’ আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।’

‘ কেন?’

‘ এমনি আপনি খান।’

ভাইয়া বললো ,’ সত্যি করে বল তোর কি এখনো খারাপ লাগছে?’

আমি ভাইয়া চিন্তিত মুখে দিকে তাকিয়ে না বললাম। ভাইয়া বিশ্বাস করছে না সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি ঢোক গিলে আছি।

ভাইয়া নিজে খাবার আমাকে খাইয়ে দিতে এলো। আমি আঁতকে আশেপাশে তাকালাম। কেউ অবশ্য আমাদের দিকে লক্ষ্য করছে না। সবাই নিজেদের খাবার নিয়ে ব্যস্ত। তবুও আমি বললাম,

‘কি করছেন? ‘

‘আমি খাইয়ে দেয় আমার হাতে খা।’

‘আমি খাব না আর। একটু খেয়েছি তো‌।”

‘ওই টুকুতে কিছু হয়নি খা বলছি।’

আমি হতাশ চোখে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়া নাছরবান্দা আমি এবার বলেই দিলাম।

‘আমার গলা জ্বলছে আমি খেতে পারবো না প্লিজ জোর করবেন না‌।’

ভাইয়া আর কিছু বললো না।
নিজে খাবার খেয়ে নিলো। ভাইয়া ও খুব একটা খেলো না কিছুটা খেয়ে উঠে দাঁড়ালো।সবার খাওয়া শেষে আরো দশ পনেরো মিনিট পর আমরা বের হলাম। গাড়িতে উঠে বসে আছি। ভাইয়া আমার হাত ধরে বসে আছে। আমি সামনে তাকিয়ে আছি।

কিছু দূর আসতেই একটা দোকানের কাছে ভাইয়া গাড়ি থামিয়ে নেমে গেলো আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,

‘ একি নামছেন কেন?’

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ দরকার আছে। তুই নামিস না কিন্তু!’

বলেই দোকানের দিকে চলে গেলো। আমি সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমাদের গাড়িতে দিনা নাই ওদের গাড়ি চলে গেছে। আমি গাড়িতে বসে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া ঠান্ডা জাতীয় জিনিস কিনছে‌।

সব নিয়ে আবার গাড়িতে এলো। আর আমার হাতে খাবার দিয়ে উঠে বসলো। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ এসব কেন?’

ভাইয়া বললো, ‘ দ্রুত এগুলো ফিনিশ কর।’

আমি চমকে উঠে বললাম,, ‘ মানে কি? এসব আমার জন্য এনেছেন?’

‘ তো আর কার জন্য আনবো?’

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,’ এসবের কি দরকার। আমি তো খাব না।’

‘ খাবি না কেন?’

‘এমনি আমার ভালো লাগছে না।’

‘ আমি এতো কথা শুনতে চাইনা।এসব খেতেই হবে তোকে‌।’

‘ আমি….

‘এসব খেলে গলায় জ্বালাপোড়া করবেনা। তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু কর।’

ভাইয়ার জরাজরির সাথে না পেরে খেতে হলো। তিন্নি আপুদের বাসায় এসে দেখতে পেলাম সবাই নাচানাচি করছে হলুদ নিয়ে দৌড়াচ্ছে। একজন আরেকজনকে লাগিয়ে দিচ্ছে। আমরা সেখানে গেলাম কিন্তু ভাইয়া আমাকে সবার সাথে আনন্দ করতে দিলো না হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

‘আমাকে যেতে দিন না।’

‘না তুই অসুস্থ।’

‘আমার কিছু হয়নি ওটা সামান্য বিষয়।’

‘যাই হোক তুই যেতে পারবি না। এখন ঘুমাবি চল এগারোটা বাজে।’

‘কিন্তু সবাই তো জেগে আছে আমি ও।’

কথা শুনলে তো টেনে আমাকে নিয়ে এলো। আর আমার মানে দিনার রুমে এলো ভাইয়া ও আমার সাথে। বিছানায় বসে আমাকে ফ্রেশ হতে বললো‌ আমি বাধ্য মেয়ের মত বললাম,

‘আপনি বের হোন আমি চেঞ্জ করবো।’

‘আমি বের হবো কেন? বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ কর!’

‘ শাড়ি বাথরুমে চেঞ্জ করলে ভিজে যাবে। এখানে করতে হবে আপনি যান।’

‘ আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলে আমার সামনেই এটা করতে বলতাম কিন্তু হলো না বলে যাচ্ছি।’

বলেই উঠে দাঁড়ালো।

‘একি আপনি ওইদিকে কেন যাচ্ছেন? বাইরে যান।’

‘ রুমে বাইরে যাচ্ছি। সেটা বেলকনিতে গেলেও হবে।’

বলেই চলে গেলো আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। এরে আমি কোন কথা শুনাতে পারবো না।

শাড়ি খুলে অন্য ড্রেস পরে নিলাম। পুরোটা সময় আমি বারান্দায় দরজার দিকে তাকিয়েছি এই বুঝি ভাইয়া এসে পরলো। তাকিয়ে আছে এমনটা মনে হয়েছে।

‘এবার শুয়ে পর।’

বলতে বলতে ভাইয়া এগিয়ে এলো আমি বিছানায় কাছে দাঁড়িয়ে আছি।

ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁড়ালো একদম মুখ বরাবর। তার একহাত বাড়িয়ে আমার গালে রেখে বললো,

‘তোর কিছু হলে আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগে ঊষা। নিজের খেয়াল রাখবি প্লিজ।’

আমি চুপ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার কপালে গভীর চুম্বন দিলো। আমি চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করলাম। ভাইয়া আমাকে টেনে বিছানার শুয়ে দিয়ে আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আমার চোখের কোনা দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। এতো সুখে কান্না পাচ্ছে আমার।

ওইভাবে আমি ঘুমিয়ে পরলাম। ইহান ভাই আমার ঘুমিয়ে যেতে দেখে মাথায় দেখে হাত সরিয়ে নেয়। আমার ঘুমন্ত মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায়। গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পরদিন ঘুম ভাঙল সকাল সকালই কারণ জোরে গান বাজছে। আটটা বাজে তখন উঠে দেখি দিনা উঠে গেছে। আমাকে বললো,

‘আরে উঠে গেছো! আর কাল কোথায় ছিলে আসার পর আর দেখলাম না। রুমে এসে দেখি ঘুমিয়ে পড়েছো। তোমার কি অনেক খারাপ লাগছিলো।’

‘না তেমন না এমনি ঘুমিয়ে পরেছি।’

‘ওহ। কিন্তু বলতেই হয় ইহান ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসে।কাল কতোটা উত্তেজিত হয়েছিলো। এমন একজন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।’

আমি কিছু বললাম না কিন্তু আমি জানি এসব পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ভাইয়ার এই ভালোবাসা সব সময় থাকবে তো?

আমি কথা ঘুরিয়ে বললাম,

‘ দিনা আমাকে আশেপাশে ঘুরতে নিয়ে যাবা।’

‘ তুমি ঘুরতে চাও!’

‘হুম।’

‘আচ্ছা কিন্তু আজ তো বিয়ে। থাক গা এখন তো কিছুই নাই চলো আমরা ঘুরে আসি।’

‘আচ্ছা। আমি একবার ভাইয়ার রুমে থেকে আসি।’

‘আচ্ছা যাও।’

আমি ভাইয়ার রুমে এসে দেখলাম ভাইয়ার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাই আর ডাকলাম না। ঘুরে চলে এলাম।

দিনার সাথে আসার আগে ইমা আপুকে বলে এলাম। আমরা চারপাশের ঘুরতে লাগলাম। সবুজ এই প্রকৃতি। একটা পুকুর দেখলাম যেখানে হাঁস গোসল করছে ঘুরছে। আমি মুগ্ধ হয়ে সে দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। সকাল বলে মানুষ নাই রাস্তায় আমরাই আছি শুধু। দিনা একটা স্কুল দেখালো। এটা নাকি প্রাইমারি স্কুল এখানে ও পরেছে। সামনে মাঠ খুব বড় না হলেও ছোট না।

একটা বট গাছ দেখলো ইয়া বড় জিনিসটা অসম্ভব সুন্দর। গাছটা অনেকটা জায়গা জুড়ে আমি অবাক হয়ে বললাম,

‘এটা এতো বড় কেন?’

“জানি না গো। এই গাছটা শুধু ছড়িয়ে বড় হচ্ছে। দেখো কতো জায়গা দখল করে ফেলেছে আর ওইযে সামনের খেতে দেখছো ওইটা আমাদের। আর একটু গেলে ওইটাও দখল হয়ে যাবে।’

‘ও মাই আল্লাহ বলো কি? এটা কাটে না কেন?’

‘ কে কাটবে? আগে নাকি যারা কাটতো তাদের সমস্যা হতো তাই আর কাটে না এটা যত খুশি বড় হোক।’

‘ওহ!’

চলে আসার সময়। বাসার কাছাকাছি আসতেই ভাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। কপাল কুঁচকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।

দিনা আমার হাত ধরে বললো, ‘ দাঁড়িয়ে পরলে কেন?’

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললাম, ‘ ভাইয়া উঠে গেল।’

দিনাও ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে এগিয়ে গেলো আমাকে নিয়ে। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কোথায় গেছিলি?’

আমি বলার আগে দিনা বললো,’ ওই ভাইয়া আসলে ঊষা কে আমাদের গ্ৰাম দেখাতে নিয়ে গেছিলাম।’

আমি ভয়ার্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছি। এই বুঝি বকা খাবো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাইয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,

‘ আমাকেও নিয়ে যেতেন। আমিও না হয় গ্ৰাম দেখতাম।’

‘আপনিও দেখতে চান।’

‘ হুম।’

‘ আচ্ছা চলুন তাহলে।’

‘ চলেন।’

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার হাত ধরে বললো,’ চল ।’

‘ আমি তো গেছিলাম আপনি যান‌।’

‘ তো আমি একা যাব নাকি। গেছিলি আবার যাবি।’

বলেই এগুতে লাগলো। দিনা বললো,

‘ ভাইয়া আমাকে আপনি বলেন কেন? ‘

‘ এমনি।’

‘ আমাকে তুমি বলবেন প্লিজ নিজেকে বড় লাগে।’

‘ আচ্ছা চেষ্টা করবো।’

আবার এক জায়গা দিয়ে ঘুরতে হলো। ভাইয়া আমার হাত ধরে হাটলো। আর এখন মানুষের আনাগোনা রাস্তায় পেলাম।

সকালের খাবার খেয়ে বসে আছি সোফায় আমি একাই তখন চাচি এসে বসলো আমার কাছে। আমি কাচুমাচু করে বসলাম। চাচি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ তোমার কি কিছু লাগবে চাচি?’

চাচি বললো, ‘ কেন তোর কাছে সব আছে নাকি?’

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। চুপ করে গেলাম। তখন ভাইয়া এলো আর চাচির সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ আম্মু আমাকে আজকেই ঢাকা ব্যাক করতে হবে।’

‘কেন? বিয়ে তো শেষ হয়নি।’

‘হুম কাল একটা জরুরী মিটিং আছে। স্যার বললো এটেন্ট করতেই হবে।’

চাচি বললো আমাকে না বলে ইমাকে বল।
ভাইয়া চলে যাবে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আমার সাথে আয়।’

আমি উঠে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার পিছু ধরলাম। চাচি কটমট করে তাকিয়ে ছিলো।

কেউ মানতে না চাইলেও ভাইয়ার যেতেই হবে। যেখানে স্যার কল করে বলেছে না গেলে খারাপ দেখা যায়। তাই ইমা আপু বললো,

‘আচ্ছা যা কিন্তু এখন না বিকেলে।’

ভাইয়া তাই রাজি হলো কিন্তু সাথে আমাকেও নিয়ে যাবে বললো,

‘ কেন ওকে কেন?’

‘আমি না থাকলে ও থেকে কি করবে?’

‘ বিয়ে শেষ হলে আমার সাথে যাবেনি।’

‘ দরকার নাই‌। আমার সাথে ঊষাও যাবে।’

কারো কথা শুনলো না আমাকে নিয়েই যাবে। আমি আর কি বলবো? সব নিরব শ্রোতা হয়ে শুনলাম।

চাচির এনে দেওয়া ড্রেসটা পরলাম আজ। কিন্তু আনন্দ আমার হলো না যাওয়ার তারা। বিয়ে পরানো হবে সন্ধ্যায় আর ভাইয়া আগে যেতে চায়।

আমি ভাইয়া কাছে এনে মুখ কাচুমাচু করে বললাম,

‘ চলেই তো যাব বিয়েটা দেখে যাই প্লিজ।’

‘রাত হয়ে যাবে তাহলে।’

আমি গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। ভাইয়া ও কিছু বললো না।

কিন্তু ভাইয়া গেলো ও না। সন্ধ্যায় আগেই বিয়ে পড়ানো শুরু হলো‌ আমি থাকতে পেরে সেই খুশি‌। আপু যখন কবুল বলছিলে হায় কি কাঁদা। আমরাও কাদলাম।

বিয়ে পরানো শেষ এ বর কনেকে এক সাথে বসালো। সন্ধ্যায় আযানের আরো পর আটটার দিকে ভাইয়া আর আমি বেরিয়ে পরলাম। আমাদের গাড়িটা নিয়ে এলাম। রিফাত ভাই বলেছে তারা ম্যানেজ করতে পারবে আমরা এটা নিয়ে গেলে সমস্যা নাই‌‌।
কিন্তু কে জানতো এই গাড়ি আমাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে।

গাড়িটাতে যে তেল কম আমরা জানবো কি করে? সেটা এমন একটা জায়গা গিয়ে থামলো না আছে দোকান পাট আর না আছে মানুষ জন। কেবল নয়টা বাজে এই সময়টা এই অবস্থা।কিন্তু গ্ৰামে এই সময়টা অনেক আমরা গ্ৰাম পার করতে পারিনি।
কিন্তু তিন্নি আপুদের থেকে দুই গ্ৰাম পেরিয়ে এসেছি
মানে একঘন্টা চলে এসেছি এগিয়ে।

ভাইয়া গাড়িতে থেকে নেমে গাড়িতে একটা লাথি দিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। কপালে আংগুল চেপে কিছু চিন্তা করছে। আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি। ভয়ার্ত মুখ করে চারপাশে তাকাচ্ছি। অন্ধকার ঘুটঘুটে অন্ধকার। আকাশে চাঁদ নেই না আছে জোসনা‌। শহর হলে এই সময় কেন রাত এ দিনের মতো কিন্তু এখানের অবস্থা আলাদা। আমি অন্ধকার রাস্তায় দিকে তাকিয়ে কাঁপছি। ভয় ভূতের ভয় আমি পা ফেলে গাড়িতে হেলান দিলাম। আস্তে আস্তে ভাইয়া গা ঘেঁষে দাঁড়ালাম। ভয়ে আমি ভাইয়া হাত না পেয়ে শার্ট খামচে ধরে আছি। ভাইয়া কপালে থেকে হাত সরিয়ে আমার দিকে অন্ধকার এ তাকিয়ে বললো,

‘কি হয়েছে?’

আমি ভয়ার্ত গলায় বললাম, ‘ আমার ভয় করছে এখানে থেকে চলুন!’

‘ এখন তেল কোথা থেকে পাবো। এখানে থেকে দোকান দেখছি না। আচ্ছা তুই ভেতরে গিয়ে বস আমি দেখছি পাওয়া যায় কিনা?’

আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,,’ না আমি আপনার সাথে যাব।’

ভাইয়া হতাশ হয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে ফোনের লাইট ধরে হাঁটতে লাগলো। আমি ভাইয়ার বাহু শক্ত হয়ে ধরে হাঁটছি। হুট করেই এলোমেলো ভাবে বাতাস আসতে লাগলো বৃষ্টি হবে নাকি?
বাতাসের বেগ বেড়ে চলেছে।
গুরিগুরি ফোঁটা গাড়ি এসে পরছে। তার মানে বৃষ্টি হবে।

‘ওই মাই গড ঝড় হবে মনে হচ্ছে। সারাদিন তো ভালোই ছিলো। এখন এমন হচ্ছে কেন?’

আমি ভাইকে আরো জরিয়ে ধরে বললাম,

‘ আজকে বের হ‌ওয়া ঠিক হয়নি।’

‘ এজন্য দিন থাকতে বের হতে চাইছিলাম। তোর তো বিয়ে দেখতে হবে।’

আমি মুখ গোমড়া করে ফেললাম।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_44

বার কয়েক ডেকে উঠলো ভাইয়া। আমি উওর দিয়ে চুপ করে আছি। এবার অধৈর্য হয়ে ভেতরে চলে এলো ভাইয়া। আর এসেই আমাকে এমন কাপড় গায়ে পেঁচিয়ে বসে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকালো।

‘ শাড়ি না পড়ে এভাবে বসে আছিস কেন?’

আমি অসহায় মুখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,’ আমি পারছিনা কিছুতেই। এটা পড়া আমার সম্ভব না।’

‘কোন রকম ও পারছিস না?’

‘ না‌। ‘ মুখ নিচু করে বললাম।

ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে। চিন্তিত হয়ে ভাবছে কি করা যায়? হুট করেই ফোন বের করে। আর ফোনের শাড়ি পরার ভিডিও বের করে। আর আমার হাতে দিয়ে বলে,

‘ ভালো করে দেখ ওই মহিলারা কেমন করে পরেছে! তারপর ট্রাই করবি।’

‘ তাও এটা পরতেই হবে।’

ভাইয়া গম্ভীর মুখে বললো, ‘ হুম পরতেই হবে।’

আমি হতাশ হয়ে ভিডিও দেখতে লাগলাম। ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আছে আমি ভিডিও দেখছি। শাড়ি পরার নিয়ম দেখে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললাম।

‘ দেখেছি কিন্তু একা আমি পারবোনা। কুচির নিচে ধরতে হবে। আজকে এটা বাদ দিন প্লিজ।’

ভাইয়া বললো, ‘ আমি কুচি ধরবো তুই কর।’

বলেই নিচে বসে পরলো আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে সরে গেলাম।

‘না না আপনাকে করতে হবে না।

বসা থেকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো ,,’আমি করলে সমস্যা কি?’

‘আপনি যান আমি একাই যা করার করবো।’

‘এই না বললি পারবি না।’

‘ আমি চেষ্টা করবো।’

‘ একবার তো চেষ্টা করতে গিয়ে এক ঘন্টা পার করছিস? বাসায় যাওয়ার টাইম হয়ে আসছে এদিকে তুই রেডি হতে পারছিস না।’

‘প্লিজ বাইরে যান। আমি এবার পারবো।’

ভাইয়া নরলো না। বললো আমার সামনে কুচি কর।
আমি থমকে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভাইয়া আমাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে দাঁড়ায়। আর বিছানায় থেকে ফোন নিয়ে নিজে দেখতে লাগে।

আমি কি করব বুঝতে পারছি না। ভাইয়া ফট করে ফোন রেখে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।

আমি হকচকিয়ে বললাম, ‘ কি হলো এদিকে আসছেন কেন?’

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে কিন্তু কথা বলছে না। আমি পেছনে যেতে গেলে হাত ধরে আটকে বলে,,

‘ নরবি না একদম। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি। ‘

আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘ কেন? কি করবেন আপনি?’

‘শাড়ি পড়াবো।’

আমি বড় চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ কি সব বলছেন?’

‘ ঠিকই বলছি। তোর মতো অকর্মার ঢেঁকি তো পারবি না। তাই আমাকেই করতে হবে।’

‘ আপনি পারবেন কি করে ?আপনি পারেন নাকি? আর পারলেও দরকার নাই! আমি নিজেই যা পারবো করবো।’

‘ আমি বলেছি মানে আমিই পড়াবো। কথা বাড়িয়ে লাভ নাই‌!’

আমি কি করে বুঝাবো। ভাইয়ার কাছে পরতে আমাকে লজ্জায় পরতে হবে।
ইহান ভাই এগিয়ে এসে আগে আমার আঁচল ধরে যা আমি বুকে চেপে ধরে আছি। আমি আঁতকে উঠি।

‘একি আঁচল ধরছেন কেন?’

ভাইয়া আমার ভীতু মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো,

‘ কথা বলতে মানা করছি। আমি যা করছি করতে দে।’

আমি আঁচল ছারছি না। ভাইয়া ছাড়ালো ও না। ওই ভাবেই পেছনে নিয়ে পিন আপ করে দিলো কাঁধে। আমার শরীর ঢেকে আছে ভালো করেই! এখন বুকে হাত না দিলেও আঁচল পরবে না। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,

‘ একি এইভাবে আটকে দিলেন?’

ভাইয়া তার হাত বাড়িয়ে আমার ঠোঁটে আঙুল দিলো আর মুখে চুপ করে দেখতে বললো। আমি ভাইয়ার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ নিজের ঠোঁটের উপর পেয়ে থমকে গেছি। আমার ধুক ধুক বেড়ে গেছে।

আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি আর অবাক চোখে আমার দৃষ্টি রেখেছি ভাইয়ার মুখের দিকে।তিনি হাত সরিয়ে নিয়েছে।তার দৃষ্টি আমার মুখে না আমার কুচির কাছে শাড়ি নিচে পরে আছে তার দিকে। তাকিয়ে গভীর ভাবে কিছু ভাবছে কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ ফেলে।
কেউ চিন্তা করলেও এতো সুন্দর লাগতে পারে ভাইয়াকে না দেখলে জানতাম না। আমি হাঁ করে তার চিন্তায় বিভোর হ‌ওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া হুট করেই এগিয়ে আমার কুচির শাড়ি নিজের হাতে নিয়ে নিলো। আর খুব চেষ্টা করতে লাগলো কুচি তোলার। আমি এমন মনোযোগ দেওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। অনেক চেষ্টার পর ভাইয়া কুচি করতে সফল হলো আর খুশি হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি তাকিয়ে ছিলাম তাই চোখাচোখি হয়ে গেল।

‘ধর।’

বলেই আমার হাতে কুচি করা শাড়ি দিলো।আর নিজে নিচে বসে পরলো।

আমি কুচির দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার ডাকে সম্মতি পেলাম।

‘ঊষা কুচি উপরে তোল।’
আমি চমকে উঠে হাত উপরে ওঠালাম। ভাইয়া বললো,

‘ এবার গুঁজে নে সাবধানে হয়ে গেছে‌।’

আমি তারাতাড়ি গুঁজে নিলাম। ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে আমার কাঁধে কাছে চলে এলো আবার‌।
আর পিন খুলে নিলো আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভাইয়া আঁচল ঠিক করে আবার পিন আপ করে দিলো।শেষ! ফাইনালি শাড়ি পড়া হয়েছে।আমি মাথা উপর নিচ করে দেখলাম। ভাইয়া ভালোই পরিয়েছে।খুব ভালো না হলে ও খুব খারাপ হয়নি। ছেলে হয়ে ও একবার ভালোই পরিয়েছে।আর আমি পারলাম না।
ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।

‘কেমন হয়েছে ঊষা?’

আমি বললাম, ‘ ভালো।’

‘এমন মন খারাপ করে বলছিস কেন?’

‘আপনি পরিয়ে দিলেন কেন?’

‘ তুই পারতি না আমি জানি। দেখ তো পরিয়ে দিলাম। অনেক ভালো না হলেও খারাপ বলবে না কেউ।’

আমি কিছু বললাম না।ভাইয়া আমাকে কাছে টেনে বললো,

‘ তোকে আমি শাড়ি পড়া শিখতেই দেবো না। পারিস না ভালোই হয়েছে। আমার ব‌উকে আমি নিজে হাতে সাজাবো শাড়ি পাড়াবো।ভালো না।’

বলেই আয়নার সামনে নিয়ে বসালো আর শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে। সাদা নীল রঙের চুড়ি পরালো, কানের সাদা পাথরের ঝুমকা, সাথে সাদা রঙের গলার সিম্পুল একটা হার, কাজল আমি পরেছি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, আর মুখে ফেস পাউডার।‌আর চুল খোলা রাখলো।

হঠাৎ ভাইয়া নিচু হয়ে আমার পায়ে হাত দিলো।আমি তড়াৎ করে ছিটকে দূর সরে দাঁড়ালাম।

‘ আপনি পাগল হলেন নাকি? আমার পা ধরছেন কেন?’

‘তুই সরে গেলি কেন? আর আমার ইচ্ছা হয়েছে ধরেছি তোর সমস্যা কি?’

‘ আপনার ইচ্ছে হলেই আমার পা ধরবেন না। উঠুন।’

‘এদিকে আয়।’

‘ না।’

‘তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।’

‘ পায়ে আবার কিসের সারপ্রাইজ?’

ভাইয়া বিরক্ত হয়ে আমাকে টেনে আবার বসিয়ে দিলো আর নিজের হাঁটুর উপর পা রাখলো। আমি ছটফট করছি পা সরাতে ভাইয়া একটা কঠিন ধমক দিলো আমি থেমে গেলাম।

ভাইয়া আমার বাম পায়ে পায়েল পরিয়ে দিলো।এতো সুন্দর পায়েলটা আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া পরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি এখনো পায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।এটা আমার সারপ্রাইজ। আমার অনেক আগে একবার পায়েল কিনতে ইচ্ছে হয়েছিলো কিন্তু অনেক দাম তাই কেনা হয়নি।‌আজ সেই অপূর্ণ চাওয়া পূর্ন হলো। খুশিতে আমার চোখে জল এসে গেছে।

ভাইয়া এগিয়ে এসে বললো,

‘ কি হলো কাঁদছিস কেন? পছন্দ হয়নি।’

বলতে বলতে ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার চোখের পানি মুছে দিলো। আমার দিকে প্রশ্ন‌ত্তুক চোখে তাকিয়ে আছে।

আমি কান্নার মাঝে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,
‘ হয়নি মানে খুব হয়েছে। আপনি জানেন আমি একবার পায়েল কেনার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু টাকার জন্য কিনতে পারিনি। আমার কাছে তো দশ, বিশ টাকার উপর থাকে না। ‘

‘তাই! এখন আমি আছি না। তোর যা যা ইচ্ছে সব আমাকে বলবি। আমি তোর সব ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করবো।’

আমি উজ্জ্বল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।

ভাইয়া আমাকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ভাইয়ার হাত আমার পেটের উপর। আর তার থুতনি আমার কাঁধে।
আমি ঘন ঘন শ্বাস ফেলছি। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। ভাইয়া আয়নার দিকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ আমাদের কেমন মানিয়েছে দেখ তো ঊষা।’

আমি চোখ নামিয়ে ছিলাম ভাইয়ার কথায় মাথা তুলে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকে ভেতর ধুকধুক বেড়ে গেল। কি ভয়ংকর চাহনী আমি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। চোখ নামিয়ে নিলাম।
ভাইয়া ফট করেই ছেড়ে দিলো আমাকে আর আমার হাত ধরে বললো,

‘ না আর না। চল এবার ঘুরে আসি।’

বলেই আমার হাত ধরে বেরিয়ে এলো।

আমি নিঃশব্দে তার সাথে হেঁটে যাচ্ছি। গাড়িতে উঠার পর ও ভাইয়া একটু পর পর আমার দিকে তাকালো আমি একবার বলেই ফেললাম,

‘ বার বার এদিকে তাকান কেন? এক্সিডেন্ট করবেন তো?’

ভাইয়া আমার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে বললো,
‘ আমি ওতো বাজে ড্রাইভ করিনা যে এক্সিডেন্ট করবো‌। ‘

‘যত ভালোই করুন না কেন এমন করে তাকিয়ে থাকলে সবাই করবে।’

‘ এতে তোর দোষ!’

‘ আমার দোষ কিভাবে?’

‘ তুই এতো সুন্দর হতে গেলি কেন? আমার তো মন চাইছে! শুধু আমার এই মিষ্টি ঊষারানীর দিকে মুগ্ধ চোখে হাজার বছর চেয়ে থাকি।’

ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম লজ্জায়। ভাইয়া বললো,

‘ একদম গাল লাল করে লজ্জা পাবিনা। তাহলে কিন্তু চুমু খেয়ে বসবো। আর আমি গাড়ি থেকে চোখ সরিয়ে তোর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবো। তখন এক্সিডেন্ট হবেই হবে।’

আমি লজ্জায় মুখ লুকিয়ে জানালার বাইরে তাকালাম। কি অসভ্যের মতো কথা বলছে? আমার যে লজ্জা মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তা কি বুঝছে না।

বিকেলটা এতো সুন্দর কাটলো যে আমার মনটা আনন্দে ভরে গেলো। আনন্দিত মুখে ভাইয়ার একহাত জরিয়ে বাসায় এলাম। ভাইয়া একহাতে আমাকে ধরে ছিলো। ড্রাইভার কাকাকে বলে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে এলো। দরজা খুলতেই আমি ভাইয়ার হাত ছেড়ে দিলাম। ভাইয়া তা দেখে আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শক্ত করে ধরলো।

চাচি সোফায় বসা ছিলো। এতো মিষ্টির প্যাকেট দেখে বললো,

‘এসব কেন? এতো মিষ্টি এনেছিস কেন?’

‘ ঊষার ভালো রেজাল্ট এর জন্য।’
আমার দিকে তাকিয়ে বলল।

চাচি ফুঁসে উঠলো। আর গমগম গলায় বললো,,

‘A+ পাইছে তো কি হয়েছে? তার জন্য এতো টাকা খরচ করে মিষ্টি আনার কি দরকার? এমন আদিক্ষ্যেতা করছিস যেন জীবনে এসব কেউ পায় নাই। তুই পাইছিস, আমার ইমা পাইছে, ইলাটা পায় নাই তো কি হয়েছে রেজাল্ট ভালো ছিলো একটুর জন্য পায় নাই‌।’

‘ আম্মু তোমাকে গুষ্টির হিস্টুরি শুনাতে বলা হয়নি। আর আমার বউ এতো ভালো করেছে তার জন্য তো মিষ্টি আনতেই হবে। সবাইকে জানাতে হবে না!’

আমি একটা দুঃসাহসী কাজ করে বসলাম। ভাইয়ার হাত ছাড়িয়ে মিষ্টির প্যাকেট খুললাম একটা। আর একটা বড় মিষ্টি বের করে ফট করেই চাচির হা করা মুখে ঢুকিয়ে দিলাম। চাচি মিষ্টি খুব পছন্দ করে এখন ঝামেলা করলেও মিষ্টি সে ফেলবে না খাবেই‌।

আমার এমন কান্ডে লতা, ভাইয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। চাচি তো চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় করে তাকিয়েছে আমার দিকে। কিছু বিচ্ছিরি কথা বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না আগে খাবার শেষ করতে হবে। উমমম করে মিষ্টি খেয়ে বলতে লাগলো,

‘ তোর এতো বড় সাহস আমাকে এইভাবে মিষ্টি খাওয়ালি?’

আমি ভয়ার্ত মুখ করে পিছিয়ে ভাইয়ার বাহু খামচে ধরলাম। আর মিনমিন করে বললাম,

‘ আমার খুশিতে আমি মনে মনে ভেবেছিলাম। তোমাকে সবার আগে নিজের হাতে মিষ্টি খাওয়াবো তাই….

চাচি কিছু বলতেছে আমাকে বকছে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলছে তখন বাস্তবেও ভাইয়ার কথার আওয়াজ পেয়ে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।

‘আমার দিকে ওমন কি ভাবিস?’

আমি কিছু বলবো ভাইয়া আবার বলে ,,

‘এসব করিস আমার ঘুমে তুই।’

আমি বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া তার গালে আমার হাতের উপর হাত রাখতেই চমকে উঠলাম। হাত তো সরিয়ে ছিলাম। আবার দিলাম কখন বোধহয় ভাবনার মাঝে।

আমি তারাতাড়ি হাত সরিয়ে উঠে বসলাম। ভাইয়া আমার হাত টেনে বললো,
‘ কি হলো বল?’

আমি ঢোক গিলে আমতা আমতা করতে লাগলাম। ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,

‘ আপনার না ব্যাগ গুচ্ছাতে হবে দেন গুচ্ছিয়ে দেয়।’

‘এখন না পড়ে‌। তুই আমার সামনে বসে থাক আমি তোকে দেখি মন ভরে। তিনদিন দেখতে পাবো না‌। আচ্ছা তুই আমাকে মিস করবি না।’

আমি চমকে উঠলাম আচ্ছা আমি কি মিস করবো ভাইয়াকে? আমার জানা নেই আমি চুপ করে আছি।

ভাইয়া তার হাত আমার গালে ডুবিয়ে দিলো, আমি কেঁপে উঠলাম। ভাইয়া মায়া জড়ানো কন্ঠে বললো,

‘আমি যদি আর না ফিরে আসি তুই কষ্ট পাবি।’

জানিনা কি হলো আমার বুক ধক করে উঠলো। আসবে না কে কি সব বলছে? আমি অসহায় মুখ করে চেয়ে আছি। ভাইয়া ফট করেই হেসে উঠলো তার মুখের সুন্দর সেই হাসি।গালে পরলো আমার অত্যন্ত প্রিয় সেই টোল আমি মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখছি। কিন্তু বোকাও লাগছে নিজেকে ভাইয়া হাসছে কেন? আমি বোকা চোখে তাকিয়ে আছি।

‘ভয় পাইছিস? আমি তোকে ছাড়া এক সেকেন্ড ও থাকতে পারবো না। আর আসবো না ভাবছিস? ‘

‘আপনি খুব ফাজিল লোক খুব খুব খুব।’

আমি ভাইয়াকে মারতে লাগলাম। যেটা আমার করা প্রথম কাজ ছিলো এমন কাজ কি করে করলাম কে জানে। ভাইয়া আমাকে দুহাতে থামিয়ে বুকে চেপে ধরলো। আমি তার বুকের উপর। ভাইয়া ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো,

‘ তুই আমাকে মারছিস ? এতো সাহস কি করে হলো?’

ভ্রু কুঁচকে বললো। আমি নিজের কাজে হতবাক।

‘ তোর ওই মলিন মুখ আমাকে কতোটা আনন্দ দিয়েছে জানিস ঊষা‌। আমি তোর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখছি।’

আমি বিস্মিত হয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছি। আমার চোখে ভালোবাসা। কিভাবে আমি কি ভালো বাসি ভাইয়াকে। নিজের মনে প্রশ্ন করছি?

‘তুই আমাকে ভালোবেসে ফেলেছিল ঊষা। আচ্ছা একবার ভালোবাসি বল না।’

আমি থমকানো চোখে তাকিয়ে আছি।

ভাইয়া বললো, ‘ ওই বল না।’
বলতে বলতে আমার এলোমেলো চুল গুলো কপালে থেকে সরিয়ে দিলো আমি চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফেললাম।

‘ছারুন আমাকে ।’

ভাইয়া আরো শক্ত করে ধরে বলে ,’ আগে ভালোবাসি বল!’

‘ ভালোবাসি না তো কি বলবো?’

‘ বাসিস কিন্তু বুঝতে পারছিস না। নো টেনশন খুব তারাতাড়ি বুঝতে পারবি।’

বলেই আমার গালে চুমু খেয়ে বসলো। আমি হঠাৎ কাজে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ভাইয়া আমাকে ঠেলে উঠিয়ে দিলো নিজেও বসে বললো,

‘যা ব্যাগ গুছা।’

বলেই ওয়াশ রুমে চলে গেল। আমি চুপিচুপি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সবার সামনে ভাইয়ার জন্য কফি করে এলাম ভাইয়ের রমে।

ভাইয়া চলে গেলো যাওয়ার আগে আমার কপালে গভীর চুম্বন করে গেছে। তার চলে যাওয়ার তিনদিন আজ এই তিন আমার কতোটা কষ্ট কেটেছে আমি জানি। প্রতিটা মুহূর্তে আমি তাকে মারাত্মক মিস করেছি‌। আমি একদমি এমন মিস করতে চাইনি‌। কিন্তু আমার মিস করা থামেনি। তিনদিন আমার তিন বছর মনে হয়েছে। তাকে যে আমি মারাত্মক ভাবে ভালোবাসি এই তিনদিন এ বুঝতে পারলাম। ভাইয়া তিনদিনে আসবে বলেও এলো চতুর্থ দিন সন্ধ্যায়। আমি ছটফট করছি অসম্ভব ছটফট কখন আসবে আমার অপেক্ষায় অবসান করে। আমি তার বুকের ঝাঁপিয়ে পরে ভালোবাসি বলবো যে।
অপেক্ষা এতো খারাপ আমি এই তিনদিন হারে হারে টের পেলাম। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আর আগমন না হ‌ওয়ায়। চিন্তায় মাথা ব্যাথা হয়ে আছে। একদিন পরে কেন এলো।দরজা খুলে আমি তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। বাসার কাউকে তোয়াক্কা করবো না আমি ভেবেই রেখেছি।
চাচি আমাকে দিয়ে কাজ করিয়েই নেই। আমি সব করবো কিন্তু আমি ভাইয়ার একজন হবো।সে আমাকে চায় আমিও চায়। তাহলে কেন তাকে আমি দূরে ঠেলবো। আমার একাকিত্ব, ভালোবাসা হীন এই অন্ধকারে ঘেরা এই ছোট জীবনে সে এসেছে এক চিলতে রোদ হয়ে। আমার ছোট জীবনটাকে আলোকিত করতে। ভালোবাসায় ভরপুর করতে। আমার সমস্ত আবদার পূরণ করে ছায়া হয়ে থাকতে। তাকে আমি কি করে ফিরিয়ে দেবো। পারবো না কিছু তেই তাকে আমি আর অবহেলা করতে পারবো না।

#চলবে