তার শহরের মায়া পর্ব-৩৫

0
893

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৩৫
#Writer_Liza_moni

প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো।পশ্চিম দিকের আকাশে লাল , নীল হলুদ কমলা রঙের মিশ্রণ। গোধূলি বেলার আকাশ এত সুন্দর হয় কীভাবে ? বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সেই গোধূলির আকাশ মুগ্ধ চোখে দেখছে অনু।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে বোর হচ্ছে তূর্য। পায়ের জন্য ঠিক মত হাঁটা ও যাচ্ছে না।অনু এখন ও তূর্যর সাথে কথা বলেনি। তার নিজের ও ভাল্লাগছে না তূর্যর সাথে কথা না বলে থাকতে।

তূর্য বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো।পড়ে যেতে যেতে বেঁচে গেল। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে অনুর কাছে আসলো।অনু তখন আকাশ দেখতে ব্যস্ত। হঠাৎ তূর্য কে পাশে দাঁড়াতে দেখে অনু মুখ ফুটে বলে ফেললো,,
এই আপনি বিছানা থেকে নামছেন কেন?

কথা টা বলে দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বললো,,এই যা কথা বলে ফেলেছি।

তূর্য হাসলো। আমার বউ এর যে রাগ কমেছে তাতেই অনেক।অনু তূর্যর হাত ধরে রুমে আনতে আনতে বললো,,
কে বলেছে আমার রাগ কমে গেছে হুঁ? আপনার সাথে তো আমি ভুল করে কথা বলে ফেলেছি।

ভুল করে না হয় আরেক বার আমাকে ভালোবাসে ফেলো। ভুল করে কাছে এসে যাও,,,,

অনু থমকালো। তূর্যর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,,,শুনেন,,
আমি আর ভুল করে কাউকে ভালোবাসবো না। সত্যি জেনেই ভালোবাসবো। সত্যি সত্যি একজন সঠিক মানুষ কে ভালোবাসবো। ভুল করে তো মানুষ ভুল মানুষকেই ভালোবাসে।

অনু তূর্যকে আধশোয়া হয়ে বসিয়ে দিল বিছানায়।এখানে বসে থাকুন। এখন আপনার বসে থাকা আর শুয়ে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই।

আযান দিলে নামাজ পড়ে আমি মালাই চা বানিয়ে দিবো। অপেক্ষা করুন।

তূর্য খুব বেশি খুশি।অনুর সাথে এতক্ষণ কথা বলতে না পেরে যেনো তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
আমি তাহলে এই মেয়ের মায়ায় পড়ে গেছি। ভালোবেসে ফেলেছি ওরে।অনুকে ছাড়া এখন আমার চলবেই না। একদম না।
.
.
কিছুক্ষণ পর আযান দিলে অনু নামাজ পড়ে নিলো।
নামাজ পড়ে জায়নামাজটা গুছিয়ে রেখে রান্না ঘরে চলে গেল অনু। চুলায় গরম পানি বসিয়ে দিল।
এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে ।তাতে অনু খুবই বিরক্ত হয় ।
এই সময় আবার কে এলো ভাল্লাগেনা ।
অনু গিয়ে দরজা খুলে দেখে তনু হাতে একটা বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।অনুকে দেখে তনু দাঁত কেলিয়ে বলল ধর এটা তোর জন্য।

এটা কি আবার?

খুলে দেখ।

আচ্ছা তা না হয় পরে দেখবো ।আয় ভেতরে আয়।

না না,, আমার কাজ আছে অনেক। আমি যাচ্ছি।পরে আসবো ।

আচ্ছা।তনু চলে গেলে অনু দরজা বন্ধ করে বক্সটা খুলে দেখে তো অবাক।পাটি শাপটা পিঠা।অনুর খুব পছন্দের।

অনু মনে মনে তনু কে অনেক গুলো ধন্যবাদ দিল। কিছুদিন ধরেই মন চাইছিল পিঠা জাতীয় কিছু খাওয়ার জন্য।তনু সেই চাওয়াটা পূরন করে দিল।
তূর্য রুম থেকে চিল্লিয়ে বললো,,

কে এসেছে মেঘুপাখি?

তনু আপু।পাটি শাপটা পিঠা দিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিল। চলে গেছে।

অনু দুই জনের জন্য দুই কাপ মালাই চা বানিয়ে রুমে নিয়ে গেল।

বাহ্ গরম গরম মালাই চা আর পাটি শাপটা পিঠা। একদম জমে ক্ষীর।

এত কথা বলেন কেন? চুপ করে খান।

এত ধমকাউ কেন?সহজ সরল পেয়ে এই ভাবে ধমকাবে ?

আপনি সহজ সরল? সিরিয়াসলি,,

তূর্য ভাব নিয়ে নিজের চুল গুলো কে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে দিয়ে বললো অবশ্যই। আমি এত প্যাঁচ গোছ বুঝি না।

এক জন সি আই ডি অফিসার হয়ে বলেন আপনি প্যাঁচ গোছ বুঝেন না। আপনার পেটে জিলাপির প্যাঁচ আছে।

তুর্য পিঠার মধ্যে এক কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো,, অন্য সব প্যাঁচ বুঝলে ও তোমার এই মুড সুইং এর প্যাঁচ আমি বুঝি না।

এই শুনুন,,

হুম গো বলুন,,,

আপনি যদি আবার ও কাজে জয়েন করেন তাহলে সব মেয়েদের থেকে দূরে থাকবেন।যদি দেখছি কোনো মেয়ের হাতে আর খাইতে আপনার পেট ফাটিয়ে দিমু। চোখ গুলো খুলে কাক রে দিমু খাইতে। অনেক বড় অপরাধ করছেন আপনি। তার শাস্তি হিসেবে আমার একটা জিনিস চাই।

কী জিনিস?

অনু হাসলো।সময় হলে আমি নিজেই চেয়ে নিবো।

তাহলে তো তুমি আমার কাছ থেকে দুটো জিনিস পাও।

হুম।আর আমি যখন চাইবো আপনি তখন সেই দুটো জিনিস আমাকে দিবেন।

.
.
.
বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে তূর্য আর অনু।ভেপসা গরম পড়ছে। কারেন্ট ও নাই
রাত প্রায় ১১টা।
কারেন্ট নাই।অনু বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো।
এই কয়েক দিন ভীষণ গরম পরেছে ঢাকায়।
এই সময় কারেন্ট যেতে হলো?

অনু মোবাইল টা হাতে নিয়ে তূর্যর দিকে আলো দিয়ে দেখলো,, ঘুমিয়ে আছে।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ঔষধ এর রিয়েকশনে এই গরমে ও কী শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে দেখো,,

অনুর খুব অসস্থি বোধ হচ্ছে।দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গরমে।অনু বিছানা থেকে নেমে জানালা গুলো মেলে দিলো। একটু বাতাসের আশায়।

অনু গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালো।আহ একটু সস্থি। এতক্ষণ যেনো দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
.
.
অনু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকার এক পর্যায়ে চার দিক থেকে শো শো করে বাতাস বইতে লাগলো।আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।

আবহাওয়ার এত পরিবর্তন?যাক ভালোই হলো।এই বার শান্তি তে ঘুমানো যাবে।

অনু রুমে আসবে এমন সময় রিম ঝিম ধারায় বৃষ্টি পড়া শুরু করলো। রহমতের বৃষ্টি।বাহ্,,,, এই সময় দোয়া করলে নাকি দোয়া কবুল হয়,,,

অনু চোখ বন্ধ করে মনে মনে দোয়া করলো।
আল্লাহ দোয়া টা কবুল কইরো। আমার হাসব্যান্ড কে তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দাও।ওর এই অসুস্থতা একদম ভালো লাগছে না।
.
.
অনু গিয়ে তুর্যর পাশে শুয়ে পড়লো। ঘুমের ঘোরে তূর্য অনু কে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। শাড়ির নিচে অনুর পেটের উপর তূর্যর হাত পড়তেই অনু কেঁপে উঠলো। তূর্য কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

মনে মনে বলে,,
আপনি সুস্থ হয়ে গেলে যদি কাছে আসতে চান আমি আপনাকে একদম বাঁধা দিবো না তূর্য।
.
.
সকালে অনু কে নিজের বুকে আশটে পিশটে জড়িয়ে থেকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো তূর্য।অনু এখন ও ঘুমিয়ে আছে। শাড়ি এলোমেলো। একদম তূর্যর বুকের মাঝে মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে।অনুর গরম নিঃশ্বাস তূর্যর বুকে আছড়ে পড়ছে।

তূর্য অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো,,,
বউ,, সোনা বউ,,উঠো,, নামাজ পড়বা না?

অনু নড়েচড়ে উঠলো। আবার ও তূর্যর বুকের মাঝে মুখ গুজে ঘুমিয়ে পড়লো।

তূর্য আবারো ডাকলো,,
মেঘুপাখি,,,
উঠো,, ফজরের নামাজ পড়তে হবে তো। নামাজ পড়ে আবার ঘুমি ও।উঠো।

অনু চোখ পিটপিট করে তাকালো। তূর্য কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনু নিজের দিকে তাকালো। তড়িগড়ি করে উঠে শাড়ি ঠিক করে নিলো।

তূর্য হাসলো।
যা দেখার দেখা হয়ে গেছে।

অসভ্য লোক।

অনু চুলে খোঁপা করতে করতে ওয়াস রুমে চলে গেল। তূর্য বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাসছে।অনু কে লজ্জা দিতে তার ভালোই লাগে,,,,
.
.
অনু নামাজ পড়ে তূর্যর আর তার জন্য নাস্তা বানিয়ে এনে খেয়ে নিল।সব কিছু গুছিয়ে অনু তূর্যর কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দিলো তূর্যর দিকে।

কী,,?

হাত ধরে উঠে হাঁটার চেষ্টা করুন। পায়ের ব্যাথা এত দিন নেই। তূর্য অনুর হাত ধরে হাঁটতে লাগলো।

সারা ঘরে তূর্য কে ঘুরিয়েছে অনু। তূর্য এখন ভালোই হাঁটতে পারছে।

একা একা হাঁটুন,,,

তূর্য একা একা হাঁটতে থাকে।

বাহ্,, আপনি তো অনেক ভালো করেই হাঁটতে পারছেন।আগে থেকে অনেক সুস্থ।

তোমার সেবায়,,,

অনু হাসলো,, আপনি যেহেতু আমার হাসব্যান্ড সেহেতু সেবা করাই যায়। আপনি এক কাজ করিয়েন,,

কী কাজ?

অনু দাঁত কেলিয়ে বললো,,
আমার যখন বাবু হবে তখন আপনি আমার সেবা করিয়েন।তাহলে সব শোধ বোধ,,,,

তূর্য মাথায় হাত দিয়ে বললো,,
বাবুর মাকেই এখন ও কাছে পেলাম না,,আর বাবু তো দূরের কথা,,,,,,

চলবে,,,,, 🍁