#স্পর্শ
#পর্ব_২১
#writer_nahida_islam
স্পর্শিয়া বসে মিটমিট করে হাসছে,
-কেমন লাগছে এখন, এতো বড় দামড়া দাড়িয়ে আছে তা দেখতে কিন্তু সেই লাগছে।
স্পর্শ রেগে গিয়ে বললল, দেখে নিবো তোমাকে, আজকে খালি ক্লাস শেষ হতে দেও।
অতসী হাতে থাকা গ্লাসটা বেডের পাশে টেবিলে রাখতে গিয়ে পড়ে যায়। বার বার হাজারো পুড়নো স্মৃতি হাতনাড়া দেয়। কতো কথা মনে করতে পেড়ে ও পারে না। আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে যতখন থাকে ততখন ভালো লাগে যখন নিজের রুমে একা থাকে তখন ই ভয়ংকর কিছু পিছু তাড়া করে।
গ্লাসটা পড়ে যাওয়ার শব্দে সুমা বেগম দৌড়ে আসেন। এসে ই দেখতে পায় অতসী মাথার চুলগুলো টেনে ধরে বসে আছে। সুমা গিয়ে অতসী পাশে বসতে ই অতসী সুমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে। সুমা মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে কিছুটা শান্ত করার চেষ্টা করলো। এ তো আজকে নতুন না।
বিশ বছর আগে,
সুমা যখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলো তখন ট্রেনে থেকে ঢাকায় নেমে ই দেখতে পেলো কতোগুলো মানুষ কিছু একটাকে ঘিরে রেখেছে। কৌতূহল নিয়ে সুমা দেখতে গেলে ই দেখলো একটা মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। সবাই শুধু দেখছে কেউ ধরার সাহস করছে না। সুমা সোজা মেয়েটাকে নিয়ে একটা হসপিটালে ভর্তি করে দেয়। কিছুটা সুস্থ হলে ই বুঝতে পারে আগের কোনো স্মৃতি ই মেয়েটার মনে নেই। এতো বছরের ভেতরে শুধু এটা ই বুঝতে পেড়েছে নামটা যে অতসী। গলায় একটা লকেট ছিলো যাতে অতসী নামটা লিখা ছিলো। এতো বছর কয়েকদিন পর পর অতসীর এমন সমস্যা হতো। কেউ নাকি অতসীকে ডাকে বাচ্চার কান্না নাকি শুনতে পায়। হয়তো অতীতটা ই অতসীকে পিছু ছাড়ে না। এই বিশ বছরে কখনো আশ্রমের বাহিরে যায়নি অতসী। অতসীর যা যা প্রয়োজন সব কিছু সুমা ই এনে দিয়। কখনো জোর করে ও আশ্রম থেকে বাহিরে বের করা যায়নি অতসীকে।
তানিয়া বেগম দূর থেকে ইফাজকে দেখে হাসছে। আমাকে অপমান করেছিলে নাহ্ দেখো তোমার সংসার আমি কীভাবে তসনস করে দিয়েছি। অতসীর জন্য আমার সব প্লান ভেসতে গেছে তাইতো তার স্বামী সন্তান থেকে আজও দূরে। বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে ই শুধু অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে। বাচ্চাকে দুচোখে দেখার ও সুযোগ পাওনি। এটা ঠিক যে আমার বিশ লাখ টাকা গিয়েছে ডক্টর প্লাস নার্সদের হাত করতে কিন্তু পেরেছি তো তোমাদের সবাইকে কষ্ট রাখতে। আমাকে কষ্টে রেখেছো আট মাস আর আমি তোমাদের কষ্ট দিচ্ছি বিশ বছর যাবৎ মৃত্যু আগ পর্যন্ত এই কষ্ট পেতে থাকবে তোমরা।
অতসীর যখন লেবার পেইন উঠে তখন ই আমি দৌড়ে সবার আগে হসপিটাল চলে যাই। ডক্টরদের হাত করে বলি অতসীকে মৃত বলতে। কিন্তু বাহিরে এসে যখন শুনতে পারি অতসী ফ্লোরে পড়ে গিয়েছিলো তখন মনে মনে রাজ্য জয় করা হাসি হেসে ছিলাম। কারণ আমার প্লানটা সাকসেস হবে ভেবে। স্পর্শ হওয়ার পর অতসীকে অজ্ঞান বানিয়ে ফেলে নার্সরা তারপর বলে মরে গিয়েছে। সবাইকে দূর থেকে দেখতে দেয় কাউকে কাছে যেতে দেই নাই। কিন্তু ইফাজ সব বাধা অতিক্রম করে ও অতসীর কাছে গিয়েছিলো কিন্তু বুঝতে পারেনি বলদ ছেলেটা যে অতসী বেচে আছে। দুই মিনিট ও অতসী কাছে থাকতে দেই নাই নার্সরা সব সামলে নিয়েছিলো। তারপর বাকি কাজগুলে আমি সামলে নেই। অতসীর বদলে অন্য কাউকে মাটি দেওয়া হয়েছিলো ইফাজ এতোটাই শকড হয়েছিলো যে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। দফন কাফন কেউ আর ঐ দিকে দায়িত্ব নেইনি। আমি দায়িত্ব নিয়ে সব সেরে দিয়েছিলাম। অতসীর মা আর নীলু শিমুকে বাচ্ছা দিয়ে ব্যস্ত রেখেছিলাম। কারণ অতসী মরে যাওয়াতে বাচ্চাটার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো, তাই ওনাদের অন্য হসপিটালে যেতে হয়েছিলো। আর ইফাজের জ্ঞান ফিরতে ফিরতে মাটি দেওয়া প্রায় শেষ ইফাজ গিয়ে শুধু কবরে কয়েকটা মাটি দিয়ে মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলো। অতসী মা আর বোনেরা ও পরে এসেছিলো।
কথাগুলো মনে করে তানিয়া বেগম মনে মনে হাসছে।
এতো কিছু করার একটা ই কারণ অতসীর জন্য আমাকে ইফাজ এতো অপমান করেছে আমার সাথে কুকুরের মতো ব্যবহার করেছে তাই তো জীবনটা নরক মানিয়ে ছেড়েছি।
কলেজ ছুটি হওয়ার পর স্পর্শিয়া গাল ফুলিয়ে বাসায় ফিরেছে। সুমা দৌড়ে এসে মেয়ের এমন রুপ দেখে ভয় পেয়ে গেলো।
-এমা এই কী অবস্থা করে বাড়ি ফিরেছিস।
-তুমি না অসুস্থ আমাকে দিয়ে সকালে এতো কাজ করালে রান্না করালে তো এখন তো দেখি পুরো সুস্থ।
-আগে বল এতো কাদা কোথা থেকে মাখিয়ে আসলি।
-রাস্তা দিয়ে আসছিলাম, রাস্তার সাইডে একটা গর্ত ছিলো গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ছিলো। একটা বাইক আসলো আর আমাকে ভুত বানিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
-হেটে আসতে গেলি কেনো।
-হেটে কী স্টেশনে ও আসবো না নাকি।
-আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে নে।
স্পর্শিয়া জানে বাইকটা স্পর্শের ছিলো। বদলা নেওয়ার জন্য এমন করেছে। কালকে কলেজে যাওয়ার পর দেখাবো মজাটা।
স্পর্শিয়া ফ্রেশ হয়ে আশ্রমের দিকে গেলো। বাসা থেকে বেশি দূর না। আশ্রমটা স্পর্শিয়ার নানাভাই করে দিয়ে গিয়েছিলো। মা এটা দেখাশোনা করে আর সাথে আছে আমার ভালো আন্টি। আমি ও একদিন এই আশ্রমের দায়িত্ব নিবো।
স্পর্শিয়া আশ্রমের ভেতর ডুকতে ই দেখলো অতসী বাচ্চাদের সাথে বসে আছে। স্পর্শিয়া গিয়ে অতসীকে জড়িয়ে ধরে,
-ভালো আন্টি।
অতসী স্পর্শিয়াকে আদর করে জিজ্ঞেস করলো,
-নতুন কলেজে কেমন লাগছে।
কথাটা বলতে ই স্পর্শিয়া মন খারাপ করে ফেলে। তা দেখে অতসী বললো,
-কী হলো মন খারাপ হয়ে গেলো কেনো।
-জানো ভালো আন্টি আমাদের ক্লাসে না একটা বদর ছেলে আছে, এক নম্বরের গাদা স্টুডেন্ট কিন্তু একনম্বরের ফাজিল। সব সময় আমার সাথে লেগে থাকে,
-এভাবে বলে না মামুনী। সবার ই মেধা আছে। কেউ শ্রম দিয়ে মেধাকে কাজে লাগায় কেউ কুড়ে হয়ে বসে থাকে।
-ভালো আন্টি ঐ ছেলেটা আজকে আমাকে পেত্নী বলেছে, ভালো তো আমি কী পেত্নী।
অতসী এক গাল হেসে বললো,
– নাহ্ তুমি তো অনেক সুন্দরী । ছেলেটাকে পেলে অনেক বকা দিয়ে দিতাম।
স্পর্শিয়া হেসে অতসী গালে চুমু খেয়ে চলে যায়। অতসী ও নিজের কাজে মন দিতে থাকে।
স্পর্শ বাসায় এসে খাবার খেয়ে বাবার রুমে চলে যায়। বাবা মাকে অনেক ভালোবাসতো তা তো কোনো সন্দেহ ই নেই। দেওয়ালের প্রতিটি কোনোয় কোনায় মায়ের ছবি। মায়ের ডাইরি মায়ের কলম। মায়ের কাপড় সব ই যত্ন করে রেখে দিয়েছে।
–বাবা
স্পর্শকে দেখে ইফাজ বুকে টেনে নেয়।
-কিছু লাগবে তোমার বাবা।
-কিছু টাকার দরকার ছিলো। ঐ তানিয়া বুড়িকে বলেছিলাম দেয়নি আমাকে।
-দাদিমা হয় তোমার বাবা এগুলো বলে না।
ইফাজ হাসি মুখে ছেলেকে টাকা দিয়ে দেয়। স্পর্শ খুশি হয়ে দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় বাইক নিয়ে। বন্ধদের নিয়ে ঘুরতে যায়, আড্ডা দেয়। সব সময় মজা করার মধ্যে থাকে। নিজের স্বাধীন মতো সব কিছু করে।
রাত প্রায় দশটা বাজে, স্পর্শিয়ার নম্বরটা আজকে জোগার করেছি। একটা কল দিয়ে দেখি। প্রথমবার কল দিতে ই কল রিসিভ করলো,
-হ্যালো কে।
-হায় পেত্নি।
-আপনি?
-আমি কে।
-এফ টু দি পাওয়ার থ্রি।
-এই বজ্জাত মেয়ে তোমাকে এই কথা বলেছে কে।
-এই বজ্জাত ছেলে আমাকে এতো রাতে ফোন দিলেন কেনো?
-আমার ইচ্ছে হইছে তাই।
-তাহলে ও আমার ইচ্ছে হইছে তাই আমি বলছি।
-দাড়াও কালকে তোমার বাসায় আসতেছি।
চলবে,