#স্পর্শ
#পর্ব_২২
#writer_nahida_islam
-এই বজ্জাত মেয়ে তোমাকে এই কথা বলেছে কে।
-এই বজ্জাত ছেলে আমাকে এতো রাতে ফোন দিলেন কেনো?
-আমার ইচ্ছে হইছে তাই।
-তাহলে ও আমার ইচ্ছে হইছে তাই আমি বলছি।
-দাড়াও কালকে তোমার বাসায় আসতেছি।
স্পর্শিয়া এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিস।
-আরে মা নৌশিন।
-এই চুইংগাম আমাকে মেয়ে বানিয়ে দিলে।
-ভালো করেছি। চুইংগাম কাকে বললেন।
-যার গায়ে কথাটা লেগেছে তাকে ই বললাম।
-আপনি আমার সাথে কথা বলছেন।
– তাহলে তোমাকে ই বলেছি।
-আপনি একটা হাতি।
কথাটা বলে ই স্পর্শিয়া কল কেটে দিলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে এই ছেলেটা আমার নম্বর পেলো কোথায়। এখন তো আমাকে পাগল করে ছাড়বে।
স্পর্শ ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। বাইক স্টার্ট দিয়ে বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো।
ইফাজ রুমে থেকে বের হয়ে নীলুকে জিজ্ঞেস করলো,
-স্পর্শ এসেছে।
নীলু প্লেটে খাবার বেড়ে ইফাজের হাতে দিয়ো বললো,
-এসেছে খায়নি। এই যে নিন খাবার।
ইফাজ খাবার নিয়ে স্পর্শের রুমে গিয়ে দেখলো ঘুমিয়ে পড়ছে।ছেলে খাবার না খেলে ইফাজের ঘুম ই আসবে না। ইফাজ স্পর্শকে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো। স্পর্শের এটা অভাস হয়ে গিয়েছে। কতবার ইফাজ ছেলেকে এভাবে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাইয়ে দিয়েছে তাই হিসাব নাই। কখনো ছেলেকে বুঝতে দেয়নি যে মায়ের ভালোবাসার অভাব। তাও তো মা নেই এই অপূর্ণতা পূর্ণ করার মতো পৃথিবী কেউ ই নেই।
ইফাজ খাবার খাইয়ে দিয়ে, প্লেটটা টেবিলে রেখে নিজের রুমে চলে গেলো।
আজকে খুব ভয় পেয়ে পেয়ে স্পর্শিয়া কলেজে এসেছে। সামনে যেনো এই স্পর্শ এলিয়েনটা না পড়ে। স্পর্শ সামনে পড়লে ই ঝগড়া হবে এটা শিউর। স্পর্শিয়া আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো ক্লাস রুমে কোথাও স্পর্শ আছে কিনা,
-হ্যালো, আমাকে ই খুজছিলে বুঝি?
স্পর্শিয়া সাথে সাথে বই দিয়ে মুখ ডেকে নিলো। বইটা একটু ফাকা করে দেখলো স্পর্শ আছে কিনা। স্পর্শ আগের ন্যায় ই দাড়িয়ে আছে। দুহাত পকেটে দিয়ে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে বললো,
-রুহিত তোরা দাড়া আমি চুইংগাম বাহিরে ফেলে দিয়ে আসি।
-আমাকে ফেলবেন মানে আমি কী করলাম?
স্পর্শ ফিক করে হেসে বললো,
-ইউ চুইংগাম ।
স্পর্শিয়া স্পর্শের মুখের দিকে তাকিয়ে বোকা মতো তাকিয়ে থাকে। লে নিজে ই নিজেকে বাশ দিলো।
-আমি আপনাকে বলিনি।
-কাকে বলেছো?
-নৌশিনকে বলেছি। নৌশিন আমার কানে কানে বলতেছিলো আমাকে নাকি সে বাহিরে ফেলে দিবে।
স্পর্শ নৌশিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তোমার পাশে তো নৌশিন নেই।
স্যার ক্লাসে চলে আসায় স্পর্শ গিয়ে তার সিটে বসে পড়ে।
আইসিটি ক্লাসে স্যার অংক করাচ্ছে। স্পর্শ স্পর্শিয়া পাশের বেঞ্চে বসেছে। হঠাৎ স্পর্শিয়া পায়ে লাথি মেরলো,
স্পর্শিয়া আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
-লাথি মারলেন কেনো?
-নিজের খাতায় অংকগুলো তুলে আমার খাতায় ও তুলে দেও।
-ইসস নিজের খাতায় অংকগুলো তুলে আমার খাতায় ও তুলে দেও। আপনি আমাকে আদেশ করার কে হে।
-আদেশ কই করলাম। আমার কলম বাসায় ভুলে রেখে এসেছি।
-তো আমি কী করবো।
-অংকগুলো করে না দিলে কিন্তু তোমার পিছু নিয়ে তোমার বাসায় চলে যাবো। আর গিয়ে আন্টিকে বললো তুমি আমাকে প্রপোজ করেছো।
-ছিঃ আপনি এতো খারাপ।
-অংকগুলো সুন্দর করে খাতায় উঠিয়ে দেও নয়তো আরো বেশি খারাপ হবো।
স্পর্শিয়া হাজারো বিরক্তি নিয়ে স্পর্শের খাতায় অংকগুলো তুলে দিয়েছে। স্পর্শ মিটমিট করে হাসছে। স্পর্শিয়াকে রাগাতে কেনো এতো ভালো লাগে না নিজে ও জানে না। কিন্তু ভালো লাগে।
স্যার ক্লাস থেকে চলে যাওয়ার পর, স্পর্শিয়া স্পর্শের দিকে খাতাটা ছুড়ে মারে। স্পর্শের গায়ে লেগে খাতাটা নিচে পরে যায়।
স্পর্শ রাগি চোখে তাকাতেই স্পর্শিয়া দৌড়ে গিয়ে খাতাটা তুলে দিয়ে চলে আসে।
-আবার যদি আমার খাতা এভাবে ফেলে দিছো তাহলে তোমাকে ও আমি উঠিয়ে নিয়ে বাহিরে ফেলে দিবো।
স্পর্শিয়া বিরক্ত নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। জ্বালিয়ে শেষ করে ফেলবে এই ছেলেটা।
স্পর্শ কলেজ থেকে বের হতে ই দেখলো,তনু। তনু রোহান আর নীলুর মেয়ে। ভাইয়া বলে দৌড়ে এসে কোলে উঠলো।স্পর্শ সামনে তাকাতে ই ইফাজ কে দেখলো,
-বাবা তুমি এখানে কেনো এসেছো।
-এমনি তোর স্যারের সাথে কথা বললাম, কাল থেকে ইংরেজি আর আইসিটি প্রাইভেট পড়বি।
-জ্বি বাবা।
-এখন বাসায় চল।
স্পর্শিয়া বাসায় এসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কালকে তো বলেছিলো স্পর্শ বাসায় আসবে। এই জন্য এতোক্ষণ ভয়ে ছিলো যাক বাচা গেলো। বাসায় এসে খুজে কাউকে পেলো না, তাই ফ্রেশ হয়ে দৌড়ে আশ্রমে চলে গেলো। আশ্রমে যেতে ই দেখলো স্পর্শিয়া মা আর অতসী গালে হাত দিয়ে বসে আছে,
-মা কী এতো ভাবছো।
-ভাবছি বাচ্চাদের কী খাওয়াবো, আমার কাছে একটা টাকা ও নেই। তোর নানার মৃত্যুর পর যে টাকা ছিলো সব দিয়ে ই তো এতোদিন চলছে। আর মাঝে মধ্যে যে সহায়তা আসতো তা দিয়ে ই চলেছে। কিন্তু এখন তো আমার হাত শূন্য।
অতসী চুপ থেকে বললো,
-আমি তোমাদের জামেলাটা আরো বাড়িয়ে দিলাম তাই না।
-ভালো আন্টি তুমি এগুলো কী বলো, এখন তো আমি বড় হয়েছি আমি তো ইনকাম করতে পারবো।
অতসী হেসে স্পর্শিয়াকে বুকে টেনে নিলো,
-শুনো মেয়ের কথা, মাত্র তো করলি এসএসসি পাস এখন ই কিসের ইনকাম?
-করতে পারবো ভালো আন্টি,আমি তো টিউশনি করতে পারবো।
স্পর্শ রুমে একা একা বসে আছে, অনেক্ষন ফোন দেখেছে এখন আর ভালো লাগছে না। ভাবলো স্পর্শিয়াকে কল দিয়ে কিছুক্ষন জালানো যাবে।
স্পর্শ স্পর্শিয়াকে কয়েকবার কল দিলো, কিন্তু স্পর্শিয়া ধরলো নাহ্।
স্পর্শের এই জিনিসটা সব থেকে বিরক্ত লাগে কল দিলে কেউ না ধরলে। সাথে সাথে মেসেজ পাঠালো,
-হয় কল রিসিভ করবা নয়তো কালকে ক্লাসের সব গুলো নোট লিখে দিবা।
-অ ভালো আন্টি ছেলেটা আমাকে পাগল করে ছাড়বে, নেও তুমি কথা বলো।
অতসী হাসি মুখে বললো,
-তুই আগে কথা বল তারপর আমি দেখছি কী বলে।
মেসেজটা দেখার সাথে সাথে স্পর্শিয়া কল ধরলো,
-সমস্যা কী আপনার?
-তোমার সমস্যা কী?কল ধরো না কেনো?
-আপনার বিয়ে করা বউ আমি যে বলবেন আর কল ধরবো।
-ইয়াক তোমার মতো মেয়েকে আমি কখনো বিয়ে করবো না।
-আপনার কী মনে হয় এমন ফেইল মার্কা ছেলেকে আমি কখনো বিয়ে করবো।
-ফেইল মার্কা দিয়া কী বুঝাইছো চুইংগাম।
-আবার চুইংগাম বললেন।
অতসী বসে বসে হাসছে ওদের ঝগড়া শুনে।
-ভালো আন্টি তুমি এই ছেলের সাথে কথা বলো। বেয়াদব ছেলে একটা।
অতসী ফোন হাতে নিতে ই স্পর্শ কল কেটে দিলো।
-ছেলেটা কল কেটে দিয়েছে। এখন যা বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
-ভয় পেয়েছে, ভালো আন্টি।
-ভয় পেলে ই ভালো, কিন্তু ছেলেটা কে।
-আমাদের ক্লাসের ই একটা ছেলে। আমার তিন বছরের বড়।
-তোর মা শুনতে পারলে বকা দিবে থাক আর কথা বলার দরকার নেই।
অতসী কথাটা বলার সাথে সাথে আবার কল আসলো,
-দে আমাকে দে আমি কথা বলি।
-না থাক কল কেটে দেই।
স্পর্শিয়া যতবার কল কেটে দিলো স্পর্শ ততবার কল দিতে থাকলো, অবশেষে অতসীকে কল ধরলো,
–এই মেয়ে কালকে কলেজে আসলে না মুরগী বানিয়ে রেখে দিবো।কল না ধরার মজা তখন বুঝবে।
অতসী ফোনটা কানে নিতে ই চোখে পানি টলমল করছে। কেনো এমন হচ্ছে তা জানা নেই কিন্তু এটা মনে হচ্ছে নিজের কোনো এক অস্তিত্বের খুজ পেয়েছে..
চলবে,