স্পর্শ পর্ব-২৩

0
824

#স্পর্শ
#পর্ব_২৩
#writer_nahida_islam

অতসী ফোনটা কানে নিতে ই চোখে পানি টলমল করছে। কেনো এমন হচ্ছে তা জানা নেই কিন্তু এটা মনে হচ্ছে নিজের কোনো এক অস্তিত্বের খুজ পেয়েছে।
স্পর্শিয়া হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কল কেটে দিলো। অতসী মাথা দুহাত দিয়ে চেপে ধরেছে। আবার মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। স্পর্শিয়া অতসীকে বেডে শুইয়ে দিলো। আর নানা কথা বলে অতসীর মনোযোগটা স্পর্শিয়ার দিকে করার চেষ্টা করছে।

স্পর্শ ফোন রেখে শুয়ে পড়েছে, থাক আর জালিয়ে লাভ নেই। এখন একটা ঘুম দেওয়া যাক।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ই ফ্রেশ হয়ে আশ্রমে গেলো। আশ্রমের রান্নাঘরে যেতে ই দেখলো মাত্র রান্না মাত্র শেষ হয়েছে কিন্তু খাবার খুব অল্প। বাচ্চাদের ই ভালো করে হবে নাকি তা সন্দেহ। তাই স্পর্শিয়া আর খাবার খেলো না। সোজা মায়ের কাছে দৌড়ে গেলো,

-মা এতোটুকু খাবারে বাচ্চাদের হবে।

সুমা চুপ করে দাড়িয়ে আছে, কী বলবে মেয়েকে কিছু ই মাথায় আসছে না। হাতে একটা টাকা ও নেই।

-আল্লাহ ই খাবারে বরকত দিবে তুই খেয়ে কলেজে চলে যা।

-আমার ক্ষুধা নেই মা। আসছি।

-স্পর্শিয়া খেয়ে যা তুই।

স্পর্শিয়া কোনো কথা বললো না, বাসায় এসে রেডি হয়ে কলেজে চলে গেলো।

স্পর্শ রাস্তায় দাড়িয়ে আছে হঠাৎ স্পর্শিয়াকে দেখে ইশারায় আসতে বললো,

-সমস্যা কী ডাকছেন কেনো?

-কালকে না বলে কল কেটে দিলে কেনো?

-আপনার জন্য আমার ভালো আন্টি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো আপনি আর কল দিবেন।

-স্পর্শ বেবি তুমি এইখানে।

নাবিলা পিছন থেকে এসে এই কথা বলতে ই স্পর্শ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

-আরে আম্মু আপনি?

-স্পর্শ আমি তোমার আম্মু হই।

স্পর্শিয়া মুখে হাসি টেনে বললো,

-এমন দামড়া ছেলেকে বেবি বললে তো আম্মু ডাক শুনতে হবে ই।

নাবিলা স্পর্শের সামনে এসে ন্যাকামো করে বললো,

-এই মেয়েটা তোমাকে দাড়মা বললো তাও কিছু বলবে না।

-এই ন্যাকামো করো না তো সামনে থেকে যাও।মনে রেখো তুমি আমার সিনিয়র।

-তুমি ফেইল করেছো নয়তো আমরা তো একই ক্লাসে ই ছিলাম।

-সে যখন ছিলাম তখন ছিলাম ই। এখন সামনে থেকে যাও।

-চলে যাবো তো বলো আমার কল রিসিভ করবে।

-যাও করবো।

নাবিলা চলে গেলো, পিছনে তাকিয়ে দেখলো স্পর্শিয়া নেই। স্পর্শ দৌড়ে ক্লাসে গেলো। কিন্তু আজকে স্পর্শিয়া যে বেঞ্চে বসেছে তার পাশে রুহিত বসেছে। রুহিতকে এখন এখান থেকে উঠিয়ে অন্য কোথাও বসানো বেশ কষ্টসাধ্য।

-রুহিত

-এই বেঞ্চ ফিলাপ হয়ে গিয়েছে তুই অন্য কোথাও বস।

-রুহিত ভাই আমার আমাকে তোর পাশে বসতে দিবি।

-কেনো?

-আসলে তোকে ছাড়া আমি একদম বসতে পাড়ি না।

-এহহ্ মিথ্যে বলছিস।

-তোর পাশে বসতে দে আমাকে প্লিজ।

স্পর্শিয়া পাশ থেকে বলে উঠলো।

-একটা কাজ করেন আপনি আমার জায়গায় বসেন আমি অন্যজায়গায় গিয়ে বসবো।

স্পর্শ আড়চোখে তাকিয়ে

-আমি মেয়েদের সাথে বসবো।

-রুহিতকে এতো ভালোবাসেন রুহিতের জন্য না হয় আজকে মেয়েদের সাথে ই বসলেন।

ওদের দুজনের কথা বলার মাঝখানে নৌশিন ক্লাসে ডুকলো। নৌশিন স্পর্শিয়ার সাথে জায়গা না পেয়ে পিছনে গিয়ে বসে সাথে সাথে রুহিত বলে উঠে,

-স্পর্শ তুই এখানে ই বস আমি পিছনে যাচ্ছি।

স্পর্শিয়া আর স্পর্শ দুজন ই রুহিতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যে ছেলেটা এতোক্ষণ যেতে রাজি হচ্ছিল না সে এখন নিজ ইচ্ছে তে পিছনে চলে গেলো।

-এই চুইংগাম শোন।

-হাতি একটা।

-বেয়াদ্দপ মেয়ে আমি তোমার বড়।

-তো আমি কী করবো।

-সম্মান দিয়ে কথা বলবা।

-ফেইল করছে তিনবার আবার সাম্মান।

-আমি ফেইল করছি এটা তোমাকে কে বলেছে।

-শফিক

শফিক পিছন থেকে নিষেধ করছিলো কিন্তু স্পর্শিয়া খেয়াল করেনি।

-শফিক ভাইয়া আপনি কয়বার ফেইল করছে আমি বলবো।শফিকের বিচার পরে হবে আগে তোমার টা।

-আসসালামু আলাইকুম স্যার।

স্পর্শ মনে করেছে স্যার আসেনি এমনি স্পর্শিয়া মজা করছে। তাই আর সামনে তাকায়নি। স্পর্শিয়া দিকে তাকিয়েছিলো।

স্যার এসে কানে ধরে বসা থেকে উঠিয়েছে।

-কী দেখিস এমন মেয়েদের দিকে। ক্লাসে মনোযোগ বলতে কিছু নাই তোর।

-সরি স্যার কানটা ছাড়ুন।

-ছেড়ে দিলাম সারা ক্লাস দাড়িয়ে থাকবি।

-আচ্ছা স্যার কান টা ছেড়ে দিন।

স্পর্শ সারা ক্লাস কান ধরে ধারিয়ে থাকে। স্পর্শিয়া একটু পর পর স্পর্শ দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছিলো এটা দেখে বেচারা আরো রেগে গেলো।

তনু এবার ক্লাস টু তে পড়ে। খাবার খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো,

-মা স্পর্শ ভাইয়াকে বিয়ে দেওনা কেনো আমার ভাবি আনো না কেনো। আমার ফ্রেন্ড অলির ভাইকে বিয়ে দিয়ে সুন্দর ভাবি নিয়ে এসেছে।

ইফাজ ও খাবার খাচ্ছিলো তনুর কথা শুনে হেসে ফেললো,

-তনু মামনি স্পর্শ তো অনেক ছোট।

-কে বললো ছোট। ইয়া লম্বা। এটা কে কী ছোট বলে বাবাই।

তোর ভাই আসলে বলিস বিয়ে করেনা কেনো। সবাই তনুর কথা নিয়ে হাসাহাসি করছে।

টিফিন সাইমে স্পর্শিয়া ক্লাসরুমে বসে আছে। খুব ক্ষুধা পেয়েছে। মাথা নিচু করে বসে আছে আর ভাবছে আশ্রমের কী অবস্থা। সব সময় ই অনাথ বাচ্চাদের প্রতি একটা মায়া লাগা কাজ করে স্পর্শিয়ার। নিজের থেকে বাচ্চাদের কথাটা ই বেশি চিন্তা হয়। নিজের ক্ষুধা লেগেছে সেটা ভাবার বিষয় না কিন্তু বাচ্চারা রাতে কি খাবে তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। নানা ভাই মারা যাওয়ার পর জমানো টাকা দিয়ে ই আশ্রমের কাজ চলতো কিন্তু বসে বসে খেলে তো টাকা শেষ হবে ই। আজ তাই ই হলো।

-চুইংগাম।

স্পর্শিয়া বুঝতে পেড়ে ও মাথা উপরে তোললো না।

-মাথা উপরে তোলবা নাকি আমাকে কিছু করতে হবে।

স্পর্শিয়া সাথে সাথে মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-কী করবেন আপনি?

-তুমি ক্লাসে এভাবে একা বসে আছো কেনো?

-ইচ্ছে খাইছে তাই।

-এই তোমার জন্মের পরে কী তোমাকে মধু খাওয়াইনি। কথার মধ্যে কোনো মিষ্টি নাই।

স্পর্শিয়া রেগে গিয়ে বললো,

-আমার মধু আপনাকে খাইয়েছে তাই সব মিষ্টি আমার মুখের কথায়।

-একটু ভালো করে কথা বললে তো পারো, রাবিস।

-আপনাকে আমি ডেকে এনেছি।

-আমি তোমার কোলে বসেনি, আমি আমার জায়গায় বসে আছি। আর একটা প্রয়োজনে তোমার কাছে আসলাম।

-কী প্রয়োজন বলেন।

-ভালো আন্টি কে।

-সেটা জেনে আপনি কী করবেন।

-বলো প্লিজ।

-আমাদের আশ্রমে থাকে।

-তা আমার জন্য কেনো অসুস্থ হলো, আমি উনাকে কী করেছি।

-নাহ্ উনার এমনিতে ও একটু সমস্যা আছে, উনি কালকে আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।

-আচ্ছা আজকে আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো, আমি ওনাকে দেখতে যাবো আর কথা ও বলে আসবো।

-নাহ্, আমি আপনাকে কোনো নিয়ে যাবো।

-আরে বাবা বললাম তো আমি ও ভালো আন্টির সাথে দেখা করবো।

-আমি আপনাকে নিয়ে যেতে পারবো না।

স্পর্শ আর কেনো কথা বললো না। কলেজ শেষে স্পর্শিয়াকে ফলো করতে থাকে। স্পর্শিয়া যেখানে গিয়ে নেমেছে সেখানে স্পর্শ বাইক থামালো।স্পর্শিয়া চোখের আড়াল হওয়ার পর স্পর্শ লোকের কাছে জিজ্ঞেস করতে করতে আশ্রমে চলে গেলো।

ঠিক জায়গায় এসেছে কিনা তা জানার জন্য দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,

-আপনি স্পর্শিয়া নামে কাউকে চিনেন।

-হে, স্পর্শিয়া মামুনি তো সুমা খালম্মার মেয়ে।

-ও আচ্ছা তো স্পর্শিয়ার ভালো আন্টির সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিতে পারবেন।

-দারোয়ান স্পর্শকে ভেতরে নিয়ে গেলো। অতসীকে ডেকে বললো,

-উনি ই হলো স্পর্শিয়া ভালো আন্টি।

চলবে,

[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]